তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৩৯

0
765

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৩৯

.
🍁
ফাদারের কথা মতো এক বুক কষ্টে ঝড়জরিত হয়ে রিদ খানকে আশ্রমের একটা ভিআইপি রুমে নিয়ে যায় আমি। আমি রিদ খানকে নিয়ে রুমে ঢুকতেই ঠাস করে পিছনে থেকে রুমের দরজার আটকিয়ে দেয় রিদ খান। দরজার শব্দের চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকাতেই রিদ খানকে রুমের দরজা লাগাতে দেখে ভয়ে দৌড়ে গিয়ে দরজায় ধাক্কাতে লাগি রুমের দরজাটি খুলার জন্য। নিজেকে বাঁচানো জন্য রিদ খান থেকে। আমার শত চেষ্টা ফলেও যখন দরজাটি খুলতে অসফল হয়। তখনই আমি ভয়ে আর কষ্টে কেঁদে উঠে দরজায় ধাক্কাকৃত অবস্থায়। আমাকে এমন করতে দেখে রিদ খান দরজা সামনে থেকে গিয়ে রুমের সোফায় আরাম করে বসে। দুইপা তুলে দেয় সামনে ট্রি টেবিলের ওপর। পরে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে মনোযোগ সহকারে আমার কান্ড দেখতে লাগে, যে আমি আর কি কি করতে পারি? এখান থেকে ছুটার জন্য। আমি দরজাটি খুলতে ব্যার্থ হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে পরি কান্না করতে করতে। আমাকে কান্না করতে দেখে রিদ খান আগের নেয় বসে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে……

.

—” কি ড্রামাডোল। ড্রামা করা শেষ আপনার। নাকি আরও কিছু বাকি আছে করার আপনার?…..

.

রিদ খানের এমন কথায় ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে চলছি আমি। আমার কোনো রকম হেলদোল না দেখে রিদ খান আবারও বলে উঠে……

.

—” তো ম্যাডাম আপনার যদি ড্রামা করা শেষ হয়ে থাকে তো আপনি আমার কাছে আসুন। আপনার সাথে আজ রাতে আমার অনেক কাজ। আর আপনার জন্যই তো আমার এতো কিছু করা। আপনি আমার লাইফে যদি না আসতেন তাহলে হয়তো আমিও আপনার লাইফে আসতাম না। কিন্তু কি আর করার বলুন আপনিই তো জোর পূর্বক চলে এলেন আমার লাইফে। তাই আমাকেও বাধ্য হয়ে আপনার সাথে থাকতে হচ্ছে। কি করবো বলুন হিসাব নিকাশ মিলাতে হবে তো আপনার সাথে আমার তাই না।

.

আমি বেশ ছোট হওয়ায় রিদ খানের এমন বেখেয়ালিপণার কথার মানে আমি তখন বুঝতে না পারলেও, এতটা অন্তত বুঝতে পেরেছিলাম যে আজকে রাতে আমার সাথে খারাপ কিছুই ঘটবে অনাহেষেই। যা এই রিদ খান আমার সাথে করে থাকবে। কোথায় থেকে কি হচ্ছিল তখন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কারণ একদিকে হঠাৎ করে ফাদারের এমন বদলে যাওয়াটা। সেই সাথে রিদ খান আমার জীবনে ঝড়ে মতো আসা সবকিছুই ছিল আমার কাছে একটা দোষ স্বপ্নের মতো। যা ঘুম ভেঙে গেলেই হয়তো সবটা ঠিক হয়ে যাবে এমন কিছু।

.

তখন একটা মূহুর্তের জন্য এতটা অস্থির হয়ে পরি যে কি করবো কিছু ভেবে না পেরে, হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পাশে থাকা ফুলের টপটা হাতে নিয়ে প্রাণপূণ শক্তিতে সাথে সাথে রিদ খানের দিকে ছুড়ে মারি। কারণ এই মূহুর্তে শুধু আমার মাথায় রিদ খানের আমার সাথে করা সব কান্ড গুলো মনে হচ্ছে। সেই সাথে উনার বলার আমাকে সমস্ত কথা গুলো। আমার আকস্মিক আক্রমণে রিদ খান খানিকটা ভরকে গিয়ে দ্রততার সঙ্গে সাথে সাথে পাশে ঝুঁকতে গিয়েও, উনার হাতের মধ্যে ফুলের টপটা লেগে যায় প্রচন্ড বাজে ভাবে। যার কারণে রিদ খানের খান হাতটা কেটে গিয়ে সেখান থেকে ঝরঝর করে রক্ত ঝরতে লাগে বিষণ ভাবে। রিদ খান নিজের কাটা হাতটা জেড়ে নিয়ে আমার দিকে তাকায় রক্ত লাল চোখে। যার মানে হলো আমার এমন কান্ড উনার মোটেও পছন্দ হয়নি উনার। কিন্তু আমার কি করার?

.

আমি উনার এমন লাল লাল চোখ অপেক্ষা করে। আবারও পাগলের মতো করে অন্য একটা ফুলের টপ নিয়ে, উনার দিকে ছুড়ে মারতে নেই, তার আগেই রিদ খান দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে এসে আমার হাত থেকে ফুলের টপটা ফেলে দিয়ে। সাথে সাথে আমাকে উনার কোলে তুলে নিয়ে বিছানার ওপর ছুড়ে মারে প্রাণপূণ শক্তিতে। আমাকে বিছানা ফেলার সাথে সাথে উনিও আমাকে ওপর চেপে ধরে শক্ত করে। যার কারণে আমি শত চেষ্টা করেও বিন্দু মাত্র নড়াচড়া করতে পারিনি রিদ খানের হাতে বাঁধা অবস্থায়। আমি নড়াচড়া করতে না পেরে শব্দ করে কান্না করে বসি। এতে করে উনি আমার দিকে ক্ষেপ্ত হয়ে তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে উঠে…….

.

—” আমাকে এমন কিছু করতে বাঁধ্য করো না সেটা আমি এখনো অবধি করিনি সেটা। আমাকে হিংস্রতায় নিয়ে যেও না পৃপ্তী। তাহলে সেই হিংস্রতা ভুক্ত ভুগি হবে তুমি নিজেই। নিজের মাথাটা চালিও না। তুমি আমার কাছে এখনো সেইফ আছো। কিন্তু আমার কথা মতো কাজ না করলে বেশিক্ষণ সেইফ থাকবে না। ট্রাস্ট মি, তোমার সাথে কিছু ঘটলে তোমার পাশে দাঁড়ানো মতো কেউ থাকবে না। কারণ তুমি যাদের ভালো মানুষ ভাবো তারাই দুনিয়ার সবচাইতে অমানুষ প্রাণী। তাই বলছি বেশি উড়াউড়ির করোনা। সেটা আমার পছন্দ না। কারণ আমি ভালো মানুষ না, তাই ভালো কিছু কখনোই আমার কাছে আশার করোও না। যাহ বলি সেটা শুনে থাকবে। যাহ করতে বলি সেটা করে থাকবে কোনো রকম কথা ছাড়াই…..

.

কথা গুলো বলে আমাকে ধাক্কা মেরে ছেড়ে দিয়ে বিছানার শুয়ে পরে স্টং হয়ে। আর আমি উনার এমন সব কথা বা কাজের মানে বুঝতে না পেরে জায়গায় শুয়ে থেকে ফুপিয়ে কেঁদে উঠি। আমাকে ফুপাতে দেখে উনি রাগে কটমট করতে করতে উচ্চ স্বরে বলে উঠে……..

.

—” মেয়েদের প্যাচ প্যাচ করে কান্নাটা কোনো কালেই পছন্দ না আমার। কান্নার হলে পড়ে নিজের রুমে বসে ইচ্ছা মতো কান্না করবে। কিন্তু আমার সামনে কখনোই কান্না করা যাবে না।

.

উনার এমন কথা মূহুর্তেই চুপ করে গিয়ে উঠে বসি। পরে ধীর গতিতে বিছানার থেকে নামতে যাবে তার আগেই রিদ খান নিষিদ্ধ সুরে বলে উঠে……

.

—” বিছানার থেকে একটা ও যাতে নিচে না যায় । যদি যায় তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। আমার পা টিপবে তুমি সারা রাত তাই তোমাকে এখানে আসা হয়েছে। চুপচাপ পা টিপ আমি ঘুমাবো।

.

উনার এমন কথায় আমি মূহুর্তেই চমকে উঠি তার মানে উনার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না আমার সাথে শুধু উনার সেবার করার জন্য আমাকে এখানে আসা হয়েছিল। আর আমি উনাকে আঘাত করলাম? কথাটা ভেবে আড়চোখে রিদ খানকে একবার দেখে নিয়ে আস্তে করে উনার পায়ে কাছে বসে পা টিপতে থাকে আস্তে আস্তে। আর উনি আবেশেই নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেই। তবে রিদ খানের পা দুটো অনেক বেশি সুন্দর। আমার চিন্তা ভাবনায় বাহিরের সুন্দর। আর সুন্দর হইবে না কেন? রিদ খান প্রাণীটাই যে অনেক বেশি সুন্দর।

.

আমার এমন সব চিন্তা ভাবনায় সাথে আমি মনোযোগ সহকারে উনার পা দুটো অনেকক্ষণ ধরে টিপতে থাকি। উনার পা টিপতে টিপতে আমার দুইহাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তবু থামতে বলছে না রিদ খান। আমি অসৈয্য হয়ে তারপরও টিপতে লাগলাম। আমি রিদ খানের পা টিপতে টিপতে উনার পায়ের ওপর থেকে কিছুটা প্রেন্ট ওপরে উঠে যায়। যার কারণে আমি উনার হালি পায়ের ওপর টিপতে গিয়ে, আমার কাতুকুতু লাগছে ভিষণ ভাবে যার কারণে আমি বারবার হেঁসে উঠছি। আর একহাত দিয়ে অন্য হাত বারবার ঘষা দিচ্ছি। আমার বারবার এমন করে হেঁসে উঠার কারণে হঠাৎ নড়াচড়া করে উঠে রিদ খান পরে ঘুম চোখে আমার দিকে কপাল কুচকে তাকাতেই আমি অপরাধী কন্ঠে বলে উঠি…..

.

—” আপনার পায়ে পশম তো অনেক বেশি। তাই তো আমার কাতুকুতু লাগছে বড্ড । সেই জন্যই তো আমি বারবার হাসছি।

.

আমার এমন কথায় রিদ খান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে উঠে বসে আমার কোলের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে পরে ঘাপটি মেরে। আর আমি রিদ খানের এমন আচরণ মূহুর্তেই পাথর মূতিই হয়ে যায় অতিরিক্ত শকটের কারণে……

.

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here