#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪০
.
🍁
আমার এমন কথায় রিদ খান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করে উঠে বসে আমার কোলের ওপর মাথা দিয়ে শুয়ে পরে ঘাপটি মেরে। আর আমি রিদ খানের এমন আচরণ মূহুর্তেই পাথর মূতিই হয়ে যায় অতিরিক্ত শকটের কারণে……
.
বোবার মতো কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে বসে থেকে, হঠাৎ নড়েচড়ে ওঠি আমি, উনার আমার কোলে ওপর মাথা দিয়ে শুয়ার জন্য। নিজের কোল থেকে উনার মাথাটা সরানো চেষ্টা করতেই, উনি নড়েচড়ে ওঠে আমার পেটের মধ্যে নিজের মুখটা চেপে ধরেই, সাথে সাথে নিজের দুহাতে আমার কমড় শক্ত করে জরিয়ে ধরে নিষিদ্ধ কন্ঠে বলে উঠে।
.
—” উঁহুম, ডিস্টার্ব করো না তো। এমনিতেই লাস্ট কিছু দিন যাবত আমার ঘুমের সমস্যা হচ্ছে তোমার জন্য। আর এখন আবারও শুরু করছো। আমাকে ঘুমাতে দিবে না নাকি ঠিক করেছো?
.
উনার আমার পেটের মধ্যে মুখ গজাতেই আমি খিলখিল করে হেসে ওঠি কাতুকুতু জন্য। বড্ড বেশি কাতুকুতু লাগায়। আমি হাসতে হাসতে উনাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি……
.
—” আপনি কি করছেন? আমার কাতুকুতু লাগছে তো খারাপ মানুষ। আমাকে ছাড়ুন না বলছি…..
.
হাসতে হাসতে রিদ খানকে হালকা ধাক্কা দিতে দিতে কথা গুলো বলি আমি। আমার খিলখিল করে হাসি শব্দে শুনতেই রিদ খান নিজের মাথাটা তুলে আবারও আমার হাসি মাথা মুখের দিকে তাকায় করুন দৃষ্টিতে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর পরই করুন কন্ঠে বলে উঠে…..
.
—” আমাকে বারবার ঘাঁয়েল করে, তুমি যে ছাড় পাবে তা কিন্তু মোটেও নয়। তাই গাঁটা যত বেশি ঘাড়ো হবে, তার যন্ত্রণাটা ততই বেশিই বেদনা দায়ক হবে। আঘাত করবে আমাকে আর তার ব্যাথা ভোগ করবে তুমি। ছোট বলে যে ছাড় পাবে তা কিন্তু হবার নয় সোনা।
.
উনার এমন মার প্যাচ, বেখেয়ালি কথায় কিছুই বুঝতে পারিনি আমি। কোথায় থেকে কি বলছে সেটা বুঝতে না পেরে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকি উনার দিকে। আমাকে গোল গোল চোখে তাকাতে দেখে রিদ খান আবারও বলে উঠে……
.
—” কি যেন বললে তুমি তখন হুমম, আমি খারাপ মানুষ তাই তো। ঠিক বলেছো আমি ব্যাস খারাপ তোমার চিন্তা ভাবনায় বাহিরের খারাপ আমি। তাই তোমার এই খারাপ মানুষ নামটা আমি বেশ পছন্দ হয়েছে। তুমি এই নামে আমাকে ডাকতে পারো আমার কোনো সমস্যা হবে না ওকে। এবার আমাকে ঘুমাতে দাও। আর কোনো রকম ডিস্টার্ব চলবে না কিন্তু।
.
কথা গুলো বলেই আবারও আগের নেয় উনার মূখটা চেপে ধরে আমার পেটের মধ্যে। আর উনার আমাকে এমন করে চেপে ধরায় মূহুর্তেই আমি কেঁপে কেঁপে উঠছি উনার নিশ্বাসের গরম তাপে যাহ আমার পেটের মধ্যে উঠা নামা করছে বারবার। আমি কম্পিত অবস্থা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে…….
.
—” প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আমি বর্ষাও কেয়ার কাছে যাবো। আমি এখানে থাকবো না। আমার ভয় করছে এখানে।
.
—” এতটা ভয়ানক জায়গায় থেকেও তোমার ভয় করে না। আর আজকে তুমি সেইফ জায়গায় আছো সেটা তোমার ভয় করছে?
.
—” মানেহ?….
.
—” কিছু না, আপাতত এখানে থেকে যেতে পারবে না তুমি। তাই চুপচাপ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও আমি ঘুমাবো। এমনিতেই বেশ কয়েক দিন ঘুমাতে পারছিলাম না তোমার জন্য। আর এখন যখন একটু শান্তি ঘুমটা আসছে, সেটাতে তুমি ডিস্টার্ব কেন করছো? তোমার কি আমাকে সবকিছুতেই ডিস্টার্ব করাটা জরুরী হুমম? কেন এতটা জ্বালাও তুমি আমাকে?
.
—” কিহ?
.
ধমক সুরে বলে উঠে…………
.
—” এতো কি কি করো কেন পিচ্চি একটা? যাহ বলছি তা করো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও চুপচাপ। নয়তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। কথা না শুনলে কি হবে জানেই তো তুমি পিচ্চি…….
.
উনার এমন ধমক সুরের কথা শুনে মূহুর্তে চুপ করে যায় আমি। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারিনি উনার ভয়ে কারণে। আমি খানিকটা ইতস্ততা বোধ করতে করতে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকি ধীরে ধীরে। তীব্র ঘুমের তাড়নায় আমি একটা সময় উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আস্তে করে ঘুমিয়ে পরি উনার ওপর কপাল ঠিকিয়ে……
.
সকালে ঘুমের ভাঙ্গতে আমি নিজেকে কাও বুকের ওপর আবিষ্কার করি। প্রথমে আমি বুঝতে না পেরে স্বাভাবিক বগিতে নড়েচড়ে ওঠে আবারও তাঁকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরি বর্ষা ভেবে। বর্ষার শরীরের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত ও বড় মনে হওয়ায় কঁপাল কুঁচকে ঐ অবস্থায় ব্যাক্তিটি ওপর হাত বুলাতে থাকি আর ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠি……
.
—” মেঘবর্ষা(বর্ষাকে ভেঙ্গ করে ডাকি) তুই হঠাৎ করে এতটা বড় আর শক্ত হলি কিভাবে রে? এতটা শক্ত কেন তুই? যেমনটা ছেলে ছেলে ভাব হুমমম……
.
আমার কথায় রিদ খান ককর্শ কন্ঠে বলে উঠে….
.
—” আমার বুকে সারা রাত ঘুমিয়ে সকালে উঠে মেঘবর্ষা হয়ে গেছি ওয়াও।
.
রিদ খানের কন্ঠে শুনে মূহুর্তেই ভুলে যাওয়া বিষয় গুলো একে একে মনে হতেই, তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠে বসি উনার বুকের ওপর থেকে। সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরে সাথে সাথে নিজের চোখ নামিয়ে নেয় উনার ওপর থেকে। কি করবো বুঝতে না পেরে ইতস্তত বোধ করতে থাকি উনার সামনে বসা থাকা অবস্থায়। আমাকে ইতস্তত বোধ করতে দেখে উনিও আমার সাথে সাথে উঠে বসে। আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কপাল কুচকে বলে উঠে……
.
—” আপনাকে আমার সেবা করার জন্য এই রুমে এনেছিলাম আমি। আপনি আমার সেবা না করে উল্টো আমাকে নিজের সেবাই নিয়জিত করে রেখেছেন সারারাত। তাহ কি আপনি জানেন?
.
উনার এমন কথায় আমি কৌতুহল চোখে তাকায় উনার দিকে। উনি আমার কি সেবার করেছেন সেটা জানার জন্য। নিজের মাথা নাড়িয়ে অসুমতি জানায় যার অথ না আমি জানি না। আমাকে মাথা নাড়িয়ে অসুমতি জানাতে দেখে উনি আমাকে ভেঙ্গ করে বলে উঠে….
—” ওয়াও তা জানবেন কেন আপনি। আর কথা ছিল আমার ঘুমানোর পর আপনি সারা বসে বসে আমার সেবা করবেন লাগাতার। আপনি সেটা না করে উল্টো নিজেই ঘুমিয়ে পরেছেন আমার ওপর। আচ্ছা ঘুমানোটা পযন্ত না হয় ঠিক ছিল। কিন্তু ঘুমের মধ্যে কেউ এতটা নড়াচড়া করে সিরিয়াসলি। আচ্ছা তুমি কি রাতে বেঁটের ওপর ঘুমাও নাকি যুদ্ধ করো হুমমম? একদিনেই আমার নাজেহাল অবস্থা করেছো তুমি বাকি দিন গুলো কি করবে তুমি আমার সাথে। কতটা লাটি ঘুষি খেতে হয়েছে আমাকে তোমার থেকে এক রাতে উফফ। একবার বেঁটের এই মাথায় তো অন্যবার বেঁটের ঐ মাথায়।
.
উনার এমন বেদনা দায়ক কথা গুলো শুনে, আমি অপরাধের দৃষ্টিতে তাকায় উনার দিকে। কারণ আমি জানি উনি সত্যি বলছে এর আগে বর্ষা, কেয়া, মাদার আমাকে রোজ রোজ বলতো আমি নাকি ঘুমের মধ্যে অনেক বেশি নড়াচড়া করি। কিন্তু আমি তাদের কথা কখনো তেমন একটা গুরুত্ব সহকারে নেই কিন্তু আজ রিদ খানের কথায় মনে হচ্ছে কেন যে আগে ওদের কথা বিশ্বাস করেনি তার জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে। আমি আপরাধের দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাতে তাকাতে আস্তে ধীরে বেট থেকে নেমে পরি। পরে উনার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে উনার কোনো কথা উত্তর না দিয়ে চুপচাপ দরজার দিকে হাটতে থাকি বাহিরের যাওয়ার জন্য। কিন্তু দরজাটা বন্ধ থাকায় দরজার সামনে দাড়িয়ে পরি মাথা নিচু করে। আমার সকল কর্মকান্ড এতক্ষণ যাবত রিদ খান শুক্র চোখে দেখছিল আমি করতে চাইছি সেটা দেখার জন্য। সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরে বেঁটের ওপর থেকে ওঠে এসে দাড়ায় দরজা সামনে, কিছুক্ষণ চুপচাপ আমাকে দেখে নিয়ে কিছু একটা ভেবে চুপচাপ দরজাটি খুলে দেয় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে। দরজাটি খুলা পেয়েই কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে দিকে দৌড় লাগায় চোখ মুখ হিচকে। আমাকে রিদ খানের রুম থেকে বের হতে দেখে অনেকই। তারা সবাই আমার দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে……….
.
.
.
.
চলবে……….