ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো (৭৫)

0
858

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৭৫)

“আমাদের শ্রীমঙ্গল যেতে হবে রেডি হয়ে নাও। ”

” ভাইয়া আপু এই সিচুয়েশনে আর আমরা বেড়াতে যাব?”

” ব্যাপার না।”

“আপনার কষ্ট হচ্ছে না? ভাইয়ের কষ্টে আপনার একটু ও কষ্ট হচ্ছে না?”

” তুমি কষ্ট পাচ্ছো?”

তানভীর লাবিবার দিকে ঘুরে তাকালো। লাবিবা মাথা নিচু করে নিলো। ভীষন ইমোশনাল মেয়েটা। কারো কষ্ট সহ্য করতে পারেনা।
” এসব আমার জন্য নতুন কিছু না। একটা কাজে যাচ্ছি। একদিনেই চলে আসবো। রেডি হয়ে নাও। ”

” মামুনি বুকিং ক্যান্সেল করে দিয়েছে। ”

” আমি রিনিউ করছি। হাফ আউয়ারের মধ্যে নিচে আসবে। কুইক। ”

হুকুম দিয়ে তানভীর বেরিয়ে যায়। লাবিবা ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়েও দুবার বসে পরে। তার কিছুই ভালো লাগছে না। রোজীর জন্য মন কেমন করছে। তানভীরের হটাৎ কিসের কাজ পরে গেলো তাও আবার শ্রীমঙ্গলেই? লাবিবা বুঝে উঠতে পারছেনা। হাফ আউয়ার অনেক আগেই শেষ। লাবিবার ফোন বেজে উঠলো। তানভীর রিতীমতো কল দিচ্ছে। লাবিবা ধরলো না। তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিচে নামলো। গাড়িতে তানভীর বসে আছে। সোহানা ওদের এগিয়ে দিতে এলো। ভীষন স্বাভাবিক লাগছে তাকে। নিত্য দিনের মতোই দামী শাড়ি, জুয়েলারি,মেকআপে আগাগোড়া সুন্দরী একজন মহিলা। বয়সের ছাপ পড়েছে কিন্তু সৌন্দর্য কমেনি। হলপ করে বলা যায় এই নারী যৌবনে নির্দিধায় ছিলেন লাস্যময়ী। বুদ্ধিমতী,ক্ষমতাধারী। নিজের ছায়ায় জড়িয়ে নিতে সদা প্রস্তুত। লাবিবা শ্বাশুড়িকে আদর্শ হিসেবে মানে। লাবিবাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সোহানা হাসে। যে হাসিতে কোনো প্রাণ নেই। লাবিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
” সাবধানে থেকো। তানভীরের খেয়াল রেখো।”

বলার সময় কন্ঠ যেনো ভেঙে এলো। লাবিবা ঝটপট গাড়িতে উঠে পড়লো। বিন্দুমাত্র সময় ব্যয় করলো না। যেসব ব্যাপারে মানুষ ইমোশনাল হয়ে পড়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা এড়িয়ে যাওয়াই উচিত।

কটেজে পৌঁছে লাবিবা ধপ করে বসে পড়লো। বসা থেকে শুয়েও পড়লো। তার উঠতে ইচ্ছা করছে না। কিচ্ছুটি ইচ্ছা করছে না। মনের উপর জোর দিয়ে এতোদূর পর্যন্ত এসেছে। এতোক্ষন যাবৎ তানভীরের নিরবতা সহ্য করেছে। যে মানুষটার সাথে ব্যবধানে চার হাত দূরত্ব থাকার পরেও তার কাপড়ের একটা অংশ হলেও মুঠোয় রাখে। সে মানুষ টা এতোক্ষন পাশে থাকার পরেও যেনো ছিলোই না। এতোটা নিশ্চুপ হয়ে গেছে। তানভীর লাগেজ থেকে টি শার্ট আর একটি হাফ কোয়ার্টার প্যান্ট বের করে পড়ে নিলো। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। ততোক্ষনে অনেক টুকু সময় চলে গেছে। তানভীর টাওয়েলে মাথা মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিয়ে রুম ছেড়ে বারান্দায় চলে গেলো। যাবার সময় একবার লাবিবার দিকে চোখ বুলিয়ে গেলো। লাবিবা তাকিয়ে আছে সিলিং এর দিকে। কটেজটা পুরোটা কাঠ দিয়ে তৈরী। বাইরে থেকে দেখে মনে হবে এটা কারো নিজস্ব বাড়ি। পুরো স্ট্রাকচার কাঠ এবং বাঁশ দ্বারা তৈরি হলেও আভিজাত্যে ভরপুর। ঝাড় বাতির বদলে উপরে ঝুলছে শামুক দ্বারা তৈরী ফুলের আকারে তৈরী। লাবিবা এটার নাম দিলো ঝাড়ফুল। তানভীর কথা শেষ করে এসে দেখে লাবিবা আগের মতোই শুয়ে আছে। তানভীর এগিয়ে গিয়ে প্যান্টের পকেটে হাত রেখে দাঁড়ালো। লাবিবা তখন আনমনে ঝুলন্ত শামুক গুনতে ব্যস্ত।
” তুমি কি ঠিক করেছো এভাবেই পড়ে থাকবে ?”

লাবিবা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তানভীর পুরো হিরো স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছে। দু কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ায় হাঁটুর নিচ থেকে ভেজা লোমগুলো ফর্সা পায়ের উপর লেপ্টে আছে। মারাত্মক ভাবে আকর্ষন করে লাবিবাকে। দৃষ্টি সেদিকেই আবদ্ধ হয়ে গেছে। তানভীর ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার পায়ে কি দেখার আছে এমন ভাবে ? হুট করেই লাবিবা দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললো।
” হ্যায় ম্যা তো মার যাওয়া ” বলে উল্টে ঘুরে গেলো। আর কোনো সাড়া শব্দ নেই। তানভীর বুঝে উঠতে পারলো না। এর আবার কি হলো?

” উঠো। চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

” উহু উঠবোনা। আপনি এতো সুন্দর কেন? ”

” প্রশ্ন না করে শুকরিয়া আদায় কর। ”

” কেন?”

” আমি সুন্দর বলেই আমার অংশ হিসেবে তুমি সুন্দরী হয়ে জন্মেছো। এবার উঠো। ড্রেসে ধুলো আর জীবাণু লেগে আছে। গাড়িতে জানালা খুলে রাখতে হয়েছে তোমার জন্য। ”

” আরেকটু পরে। এখন না। ”

” তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ তোমার ডাস্ট এলার্জি আছে। আমি তিন পর্যন্ত গুনবো। এরমধ্যে উঠবে নয়তো আমি উঠাবো।”

” আমি তো চাই আপনি উঠান। ”

তানভীর বুঝলো এ কথা শোনবে না। লাবিবার হাত ধরে টান দিল। জোর করেও উঠাতে পারলো না। শেষমেষ কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে এগুলো।

লাবিবা বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে তানভীর লাগেজ খুলে হট পিংক কালারের একটা নেটের শাড়ি আর সিকুয়েন্সের হুয়াইট শাড়ি বের করে রেখেছে। শাড়িটা হাতে নিয়ে লাবিবা মুচকি হাসলো। এই শাড়িটা তাকে তার মামাশ্বশুড় গিফট করেছে বিয়েতে। স্টোনের কারুকাজে ভীষন সুন্দর তবে হালকা ভারী শাড়িটি। লাবিবা এতোদিনে শাড়ি পড়া মোটামুটি শিখে গেছে। তবে কুঁচি ঠিক করে দিতে একজন লাগে। লাবিবা কুঁচি ধরে তানভীরকে ডাকলো। তানভীর নেই।‌ কোথায় গেলো? চেয়ার টেনে বসে লাবিবা কুঁচি ধরে তানভীরের জন্য ওয়েট করতে লাগলো। দরজা খুলে তানভীর দেখলো লাবিবা শাড়ি ধরে ঠোঁট উল্টে বসে আছে। লাবিবা দেখা মাত্রই ডাকলো। তানভীর এগুলো না। বরং দু কদম পিছিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো। কাকে যেন বললো, ” এখানেই রাখো। ”
কি রাখবে? দেখার জন্য লাবিবা কুঁচি সমেত ধরে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তানভীরের পাশেই রাখা খাবার ট্রলি। আর একজন লোক বেরিয়ে যাচ্ছে পায়ে হেঁটে। তানভীর খাবার ট্রলিটা ভেতরে নিয়ে এলো। লাবিবা না বলতেই কুঁচি ধরে সামনে বসে পড়লো। একটা একটা কুঁচি আরেকটার সাথে সমান করতে লাগলো। তানভীর ভীষণ চুপচাপ। লাবিবা জিজ্ঞেস করল, ” আপনার কি কাজে এসেছেন এখানে ?”

” আমার বউটার মন ভালো করতে।”

” আমি বুঝতে পেরেছি। আর কি কাজ?”

” বউকে খুশি রাখা।”

” জায়গাটা ভীষন সুন্দর। আমি সত্যি খুশি হয়েছি। ইচ্ছে করছে এরকম একটা বাড়ি বানিয়ে থেকে যাই।”

” থেকে যাও।”

” সম্ভব নাকি?”

” তুমি চাইলে সম্ভব। বসো লাঞ্চ করে নাও। ”

লাবিবা হাত ধুয়ে খেতে বসলো। ভর্তা ভাত আর মুরগীর একটা তরকারী দিয়েছে। লাবিবা মুখে দিয়ে বললো,
” উমম, ভীষন টেস্ট। কে রান্নাটা করেছে? তার হাতে চুমু খেতে চাই। ”

” আকাশী খালা।”

” আপনি চিনেন? ”

” হুম। অনেক বছর থেকে রান্না করছে এখানে।”

” আপনার এবার নিয়ে কত বার হলো এখানে আসার?”

” ছোট থেকেই আসছি।”

” তাহলে এই রিসোর্টের বয়স কত?”

” টুয়েনটি ফাইভ। ”

লাবিবা চোখ পিটপিট করলো। মুখের খাবার টা গিলে প্রশ্ন করলো, “এই রিসোর্টের মালিক কি আপনার কোন রিলেটিভস অর পরিচিতদের কেউ ? ”

তানভীর মুচকি হাসলো। লাবিবা ঝটপট খাবার শেষ করে রুমের বাইরে ছুটে গেলো। তানভীর বাকী খাবারটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে খেতে লাগলো।

রিসোর্টের ভেতরে পুরোটাই ফুলের বাগান। বাইরেরটা চা বাগান। রিসোর্টটা পাহাড়ের উপর অবস্থিত। সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। কয়েক মিটার দূরত্ব রেখে কটেজ গুলো তৈরী করা হয়েছে। পুরো রিসোর্টে এগারোটা কটেজ। লাবিবা ঘুরে ঘুরে দেখলো। রিসিপশনের সাথেই কিচেন রয়েছে। সেখানেই খাবারের অর্ডার দিতে হয়। রিসিপশনের উপরে বড় করে লেখা
“সোহানা কটেজ। ”

লাবিবা তৎক্ষণাৎ দৌড়ে রিসোর্ট এর গেইটে চলে গেলো। সেখানে আরো বড় বোর্ড বসানো হয়েছে,
” SOHANA COTTAGE ”

লাবিবা যেমন অবাক হলো তেমন খুশিতে যেনো মুখ থেকে কথা আসছে না। দৌড়ে রুমে ফিরে এলো। তানভীর বিছানায় শুয়েছে একটু ঘুমোবে বলে। লাবিবার অপেক্ষাতেই ছিল। দরজা লক করে লাবিবা এক লাফে তানভীরের উপর উঠে এলো। বুকে মাথা রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তানভীর ঘুরে গিয়ে লাবিবাকে উপর থেকে নিচে নিয়ে এসে বালিশের উপর মাথা রাখলো। ঠোঁটের উপর চুমু দিয়ে বললো,
” য়্যা য়্যু সারপ্রাইজড ?”

” এতোদিন নিয়ে আসেননি কেন? কেন বলেননি আমাদের এরকম একটা জায়গায় রিসোর্ট আছে?”

তানভীর হাসলো, ”
এর থেকেও সুন্দর আরেকটা রিসোর্ট আছে।”

“কোথায়?”

” বান্দরবানে। পাপা তার ত্রিশতম এনিভার্সারিতে মম কে গিফট করেছে। ”

” আই ফিল সামথিং হেয়ার।”

” এই কটেজে একবার আমরা দীর্ঘ চারমাস ছিলাম। পাপা একটা মামলাতে ফেসে গিয়েছিলো। পাপা চেয়েছিলো একা থাকতে কিন্তু মম পাপাকে ছাড়া কিছুদিনেই মরিয়া হয়ে আমাদের দুজনকে নিয়ে পাপার কাছে চলে আসে। তখন মাত্র চারটা কটেজ ছিলো। মমের এই জায়গাটা বেশ ভালো লেগে যায় সেজন্য পাশের জমি গুলো কিনে রিসোর্ট টা বড় আকারে করা হয়। আমি এই কটেজের প্রত্যেকটা স্থানে মমের ছোঁয়া অনুভব করতে পারি। খান বাড়ি আমার দাদীর শাশুড়ির হাতে তৈরী। আর এই কটেজ আমার মমের হাতে তৈরী। এর প্রত্যেকটা ডিজাইন আমার মমের পছন্দে করা। আগে বেশ আসা হতো। এখনো সময় পেলে একদিনের রিলাক্সের জন্য চলে আসি ফ্রেন্ডসদের নিয়ে। ”

” নিজেদের রিসোর্টে বুকিং কেন লাগবে?”

” রিসিপসনে খোঁজ নিতে পারো। একটা কটেজ ও খালি নেই। সিজনে এমন ও হয় একমাস আগে বুকিং দিয়েও কটেজ পাওয়া যায়না। রোমান্টিক কাপলদের টাইম স্পেন্ড করার জন্য উত্তম জায়গা। সেখানে তো আগে ইনফর্ম করতেই হবে। ”

তানভীরের ফোনে কল আসে। স্কিনে স্বচ্ছ আকাশ নামটা শো করছে। লাবিবা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। তানভীর মুচকি হেসে রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দেয়। ওপাশ থেকে আকাশ বলে,
“ভাই গুগুল তো বলছে পাঁচ ঘন্টার রাস্তা। ”

” আংকেল আন্টিকেও আনিস। গার্ডিয়ান ছাড়া আমি আমার শালীকে দিব না। ”

” সিরিয়াসলি ভাই তুমিও না!”

” সাবধানে আয়। ”

লাবিবা যা বুঝার বুঝে যায়। তানভীর কে বলে,
” এটাই আপনার কাজ তাইনা? উর্মিলা কোথায়?”

” আকাশের সাথেই আছে।”

” হায় আল্লাহ!”

লাবিবার রিয়েকশন দেখে তানভীর লাবিবার কপালে ঠোঁট ছুয়ায়। আদুরে গলায় বলে, ” তিনটা দিন খুব মিস করছিলাম আমার এক্সপ্রেশন কুইন বউটাকে। পৃথিবীর যত দুঃখ সব আমার হোক। তোমার কিঞ্চিত সুখেই আমি প্রভাবিত। ”

রেসপন্স এতো কম কেনো?🤔 যাই হোক ফালতু একটা পর্ব দিলাম। হ্যাপি রিডিং।
( গল্পটি সম্পূর্ণরুপে কপি পোস্ট করা নিষেধ। তবে শেয়ার দিতে পারেন। অনান্য আইডি বা পেইজে কপি, ওয়েবসাইটে পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা থিম কপি করার অনুমতি নেই। )

চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here