তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৩৫

0
601

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৩৫

.
🍁
একটা ব্যাক্তি কতটা খারাপ হলে এমনটা করতে পারে সেটা অন্তত আমার জানা নেই। তাই আমি উনার (রিদ) দিকে ঘৃণিত চোখে তাকায় বষার পিছন থেকে। উনি তখনো শান্ত দৃষ্টিতে সামনে দিকে তাকিয়ে ছিল স্থির ভাবে….

.

এতটা অস্থির পরিবেশে, রিদ খানকে দেখে আমার মনে হচ্ছে এই মূহুর্তে এখানে কিছুই হচ্ছে না। সবিই ঠিকঠাক আছে। শুধু চারপাশের লোক গুলো খামোখা রাস্তা মাঝখানে উনার আশেপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভীড় জমিয়ে রেখেছে জোর তালে। সেই সাথে আমরাও আছি তিন বান্ধবী। সব কয়টার আজাইরা পাবলিক। আমার এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝেই সামনে থেকে আসিফ নামক লোকটি, রিদ খান নামক ভয়ানক গুন্ডাবাসি লোকটি কাছে এগিয়ে গিয়ে আদিত্যক্ষেতা স্বরুপ বিনিত সুরে বলে উঠে……

.

—” ভাই তারপরও ব্যাটা মুখ খুলছে না। জিদ্দি একটা। কি করবো একে…

.

কথা বলে নিচে পড়ে থাকা রক্তাক্ত ব্যাক্তিটিকে আসিফ নামক লোকটি আংগুলের ইশারায় দেখাই। রিদ খান সাইকোদের মতো করে নিজের ঘাড় খানিকটা বাঁকা করে তাকায় নিচে পড়ে থাকা ব্যাক্তিটি দিকে। এক পলক রক্তাক্ত ব্যাক্তিটি অবস্থা দেখে মূহুর্তে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরে স্টং হয়ে। আসিফকে এক পলক দেখে নিয়ে অ্যাটিটিউড সাথে নিজের সানগ্লাসটি চোখে পড়তে পড়তে স্বাভাবিক বগিতে বলে উঠে…..

.

—” আপাতত কিছুই করার নেই। ওর দুটো হাত পা কেটে প্যাকেট করে ওর বাসায় পৌছিয়ে দেয় ওর ভাইদের কাছে। সাথে ছোট করে কাগজে ওপর লিখে দিবি, শ্রদ্ধিয় ভাই মহোদয়রা আপনাদের জন্য রিদ খানের ভরপুর ভালোবাসা রইলো।

.

কথাটা শুনার সাথে সাথে নিচে পরে থাকা রক্তাক্ত ব্যাক্তিটি চিৎকার করে মাটিতে পড়া অবস্থায় বলে উঠে…..

.

—” রিদ খান আমি সব বলবো। হ্যাঁ আমি সব বলবো।

.

রক্তাক্ত ব্যাক্তিটির বুকা ফাটা কান্না আমাদের সবার কান অবধি পৌঁছালেও রিদ খানের কান অবধি পৌঁছাতে পারেনি। রিদ খান অন্তত নির্দয়ে সাথে গম্ভীর কন্ঠে বললো…….

.

—” no need. প্রয়োজন বোধ নেই আর, এতক্ষণ যাবত মার খাওয়ার পরও যখন মুখ খুলিস নি। তাই এখন আপাতত আমার সময় বা প্রয়োজন, কোনোটাই নেই তোর মুখ খুলার জন্য । সো বাই।

.

কথাটা বলে আসিফ নামক লোকটিকে রেখে সাথে সাথে রিদ খান অ্যাটিটিউড সাথে নিজের গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়িটি সাহ সাহ করে চলতে থাকে আপন গতিতে। আর পিছনে রইয়ে যায় রক্তাক্ত ব্যাক্তিটি বুক ফাটা চিৎকার ও আতনাৎ। আমি এই সবকিছু দেখে আবারও বর্ষার পিছনে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে ওঠি কষ্টে আর ভয়ে। কারণ সকালের মতো এই লোকটাকেও হয়তো মেরে ফেলবে রিদ খানের লোক গুলো। কথাটা পাবতেই কষ্টটা যে আমার আকাশ ছুঁই ছুঁই। আমার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠার শব্দ শুনতেই বর্ষাও কেয়া দ্রুত পিছন ফিরে আমাকে জরিয়ে ধরে দুজন একসাথে। পরে বর্ষা সকালের ঘটনা গুলো মনে করেই আমাকে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পরে দুজনই। তাই সাথে সাথে আমাকে নিয়ে এখানে থেকে নিয়ে যায় আশ্রমের মধ্যে। বাকিটা শেষটা না দেখেই, তাই আমরা কেউ আর বলতে পারিনা রিদ নামক লোকটি রক্তাক্ত ব্যাক্তিটি সাথে কি করে ছিল পড়ে। লোকটি কি এখনো বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে।

.

🍁

রাতের সন্ধ্যা তারায় মহলে জমজম আমেজের সাথে শান্তি প্রিয় পরিবেশ ঘুমন্ত একটা পাটিতে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর দুই বান্ধবী কেয়া ও বর্ষা। চুপচাপ পার্টিটি হচ্ছে মূলত একটি বিশাল বড় বাড়ির বাগান এড়িয়য়াতে। আর সেখানে আমরা যে শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি সেটা কিন্তু নয়, এই মূহুর্তে আমরা মহা চুপচাপ টাইপ রোবট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, ফাদার মাদারের পাশা পাশি। মাদারের দেওয়া একিই রকম ডেস চুড়িদার জামাগুলো পড়েছি আমরা তিনজনই। পিংক কালারের মধ্যে। আমাদের সাথে আরও আমাদের আশ্রমের দশজন বয়স্ক মহিলা ও পুরুষ এসেছে পার্টিতে। পাটির মধ্যে সবাই নিরবতা সহিত বিভিন্ন ধরণে ডিংকস পান করছে আর হালকা পাতলা কথা বলার চেষ্টা করছে হয়তো। কারণ সবাইকে আমি গুনগুন করতে শুনছি শুরু থেকে চারপাশে। এখন তারা গান গাইছে নাকি আস্তে করে কথা বলছে সেটা মূলত তাঁরাই বলতে পারবে। আমি না।

.

চারপাশে ভরপুর লাইটিং মুগ্ধ পরিবেশ, সবকিছুই যেন রুলস মাতাবেক চলছে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ যদি এইসব রোলস না মেনে চলে তো তাকে হয়তো ভয়াবহক শাস্তি স্বরুপ কিছু দন্ড মিলবে। সবার এতো এতো রোলস মানতে দেখে পাগল টাইপ হয়ে যাচ্ছি আমি। কারণ আমার কাছে কিছুক্ষণ চুপ থাকা অস্বাধ্যকর কিছু। তাই এতক্ষণ যাবত ফাদারের ভয়ে চুপ থাকতে পারলেও এখন আর থাকতে পারছি না আমি। তাই মাদারকে ওয়াশরুমের নাম করে বর্ষাও কেয়াকে সাথে নিয়ে বাড়িটির ভিতরে ঢুকে পড়ি সাহসিকতার সাথে। বাড়িটি ভিতরে ঢুকে আমি সহ বাকি দুইজন হা হয়ে যায় বাড়ির ভিতরে পরিবেশটা দেখে। সবকিছুই রাজকীয় স্টাইলে।

.

বাড়িটির দেখে বুঝা যাচ্ছে এই বাড়ির মালিক পক্ষ কতটা সুখীন মানুষ হবে। আমি আকাশ পাতাল চিন্তা করতে করতে চারপাশে পরিবেশটা দেখতে দেখতে কখন যে বর্ষা আর কেয়ার থেকে আলাদা হয়ে গেছি সেটা নিজেও বুঝতে পারিনি। হয়তো বর্ষা আর কেয়াও বুঝতে পারিনি আমরা তিনজন যে একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে গেছি বেশকিছু আগেই। আমরা বাড়ির ভিতরটা দেখার এতটাই ব্যস্ত ছিলাম যে তিনজন তিন খন্ড দিয়ে ডুকে পরি নিমিষেই। আমি হাটতে হাটতে বড় একটা সুইমিং পুলের সাথে এসে থামি । সুইমিং পুলের মধ্যে নীল রঙের পানি দেখে খুশিতে হালকা ছুঁইয়ে দিয়ে আবারও আপন গতিতে চারপাশে হাটতে থাকি সুইমিং পুলের রাস্তা ধরে।

.

কোথায় যাচ্ছি সেটা আমি নিজেও জানি না। শুধু জানি একটু বাড়িটা ঘুরে দেখলে মন্দ নয়। আমি সামনে রাস্তা ধরে যখন সুইমিং পুলের জায়গায়টা থেকে বেড় হতে যাবো। তখনই কেউ আমাকে আকস্মিক ভাবে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে শক্ত করে। হঠাৎ এমন ঘটনায় আমি চমকিত হয়ে কেঁপে ওঠে সামনে দিকে তাকায়। কিন্তু চোখে সামনে কাউকে দেখতে পেয়েও তার চেহারাটা স্পষ্ট ফুটে ওঠছে না আমার চোখ অন্ধকারের জন্য। আমি ভয় পেয়ে থমকে গিয়ে হঠাৎ হুশ ফিরে আমার। তাই সাথে সাথে প্রাণপূণ চেষ্টা করতে থাকি ছায়া মূর্তির মতো চেপে ধরে রাখা ব্যাক্তিটির থেকে বাঁচার জন্য। আমি আমার চেষ্টা চালিত অবস্থায় রেখে কান্না জরিত কন্ঠে বলে ওঠি……

.

—” কে আপনি? আমাকে এই ভাবে চেপে ধরে রেখেছেন কেন? যেতে দিন আমায়।

.

আমার কান্না মিশ্রত কথা গুলো কান অবধি পৌঁছালো না ব্যাক্তিটি। তিনি চাপা সুরে আমাকে বললো…..

.

—” কে আমি সেটা এখানে আসার আগে ভাবা দরকার ছিল তোমার। যে কে এখানে হতে পারে। আর সে তোমাকে কি কি করতে পারে। সাথে কতটা ভয়ানক হতে পারে তোমার জন্য।

.

কন্ঠ ব্যাক্তিটিকে আমি এখন অবধি চেহারাটা ঠিক করে দেখতে না পারলেও তার কন্ঠটা আমার কাছে বেশ পরিচিত। কারণ আজ পর পর দুইবার এই ব্যাক্তির সামনাসামনি পড়তে হয়েছে আমাকে। তাই আমি ভালো করেই চিনতে পারছি কে এই লোকটি যে আমাকে এতটা শক্ত হাতে দেওয়ালে চেপে ধরে আছে। তিনি আর কেউ নয়, চরম গুন্ডা বিশিষ্ট লোক রিদ খান আমাকে চেপে ধরে রেখেছে দেওয়ালে। আর এই বাড়ির সাথে সাথে আজকে পার্টিটাও রিদ খানের দেওয়া। যেখানে আমরা সবাই অংশগ্রহণ করেছি।কথাটা ভাবতেই বুক ফাটা কান্না আসছে আমার। যেটার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাই সবসময় ঘুরেফিরে সেই আগের জায়গায় এসে দাড়িয়ে পরি আমি। সেটা আমার সাথে কেন হয় তা আমি নিজেও জানি না। আমার এমন কষ্টের মধ্যে রিদ খান আমাকে উদ্দেশ্য করে ক্ষেপ্ত সুরে বললো।

.

—” দেখে তো মনে হচ্ছে বয়স বেশি একটা হবে না। ষোল বা সতেরো সামথিং কিছু একটা তাই না। (একটা ভ্রুঁ উচুঁ করে) তারপরও এতোটা আধা ছেলেদের পাগল করার জন্য। ওয়াও ইন্টারেস্টিং, ছোট হলে কি হবে তোমার দম আছে বলতে হবে। কিন্তু মেইন পয়েন্ট হলো রিদ খান সেই দলের ছেলেদের পযার্য়ে পড়ে না। যারা তোমাকে দেখেই পাগল হয়ে যাবে এমন টাইপ কিছু । তাই তোমার মনে রাখার দরকার ছিল। যে রিদ খানের সামনে বারবার আসাটা তোমার জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে। না করা শর্তেও যখন এসেছো তখন তো তোমাকে তার ভুক্ত ভুগি হতেই হবে। তা বলে কিভাবে নিতে চাও তোমার অপরাধে শাস্তিটা, জেল নাকি ফাঁসি কোনটা চয়েস করবে তুমি। মনে রেখ জেল বা ফাঁসি দুটোই হবে তোমার বেঁচে থেকেও শত মৃত্যু সামিল।

.

উনার এমন ভয়ানক কথায় মূহুর্তে কেঁপে ওঠে আমি সাথে সাথেই হু হু শব্দ করে উনার সামনে কান্না করে ওঠি। উনার কাছে বন্দী থাকা অবস্থায়। আমি কান্না করতে করতে বলে ওঠি…..

.

—” প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আমি ইচ্ছা করে পড়েনি আপনার সামনে কখনো। সবসময় ভুল বশত এসে পড়েছি আপনার কাছে । আমি আর আসবো না আপনার সামনে কখনো। তারপরও আমাকে মারবেন না প্লিজ।

.

—” তোমার এই মন ভুলানো মায়া কান্নাটা অন্য কোনো ছেলের সামনে কাঁদলে হয়তো তার মন গলতে পারে। রিদ খানের তো মন নামক বিষয়টিই নেই তাহলে গলবে কি করে হুমমম।

গল্পের পেইজ লিংক
https://www.facebook.com/profile.php?id=100069402592136

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here