#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৩৮
.
🍁
রিদ খান নামটি শুনার সাথে সাথেই মূহুর্তেই সবাই থমকে যায়। যেমনটা হয় মানুষের সামনে ভয়ানক কিছু উপস্থিত হলে মানুষ ভয়ে পাথর মূতি হয়ে যায়। ঠিক তেমনটা জিসান শেখ ও তার সাঙ্গু পাঙ্গুদের অবস্থা হয়েছে……
.
রিদ খান নামটা যেন একটা আতংক সবার জন্য এই মূহুর্তে। ভালো খারাপ দুই পক্ষই এই মূহুর্তে রিদ খানকে ভয় পাচ্ছে জোড়ালো ভাবে । জিসান শেখ ও তার দলবল ঠিক যতোটা না ভয় পাচ্ছে তার চেয়ে ও বেশি ভয় আমি পাচ্ছি। কারণ জিসান শেখের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি রিদ খানকে জরিয়ে ধরে আছি আল্লাহ। রিদ খান নামটা শুনার সাথে সাথে আমি ভূত দেখা মতো করে চমকে উঠি। অতিরিক্ত মাত্রই শকটের কারণে কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি রিদ খানকে জরিয়ে ধরা অবস্থায়। হুঁশ আসতেই ঝটপট করে দৌড়ে কিয়াকে জরিয়ে ধরি ভয়ে। আমার জরিয়ে ধরার পর পরই বর্ষাও আমাদের জরিয়ে ধরে হকচকিয়ে। আমার হঠাৎ এমন করাতে রেগে যায় রিদ খান। আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিজের দুহাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেই সাথে সাথে। হঠাৎ রিদ খানের রং বদল করার মানে তখন বুঝতে না পারলেও উনার এমন দৃষ্টির মানে বুঝতে পারি, যে আমার রিদ খানকে ছেড়ে দেওয়াটা মোটেও পছন্দ হয়নি হয়তো। তাই রেগে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আসিফরের উদ্দেশ্য চিৎকার করে বলে উঠে……..
.
—” আসিফ, আমার এই জায়গায়টা পরিস্কার চাই রাইট নাউ। এমপি ছেলে ও তার সহপাঠীদের কি করবি সেটা তোর বিষয়। I need a speech….
.
রিদ খানের চিৎকার করে বলার সাথে সাথে আসিফ নম্র সুরে বললো…..
.
—” জ্বিই ভাই। boys…..
.
আসিফ নামক লোকটি কথাটা বলার সাথে সাথে বডিগার্ড গুলোকে দিয়ে জিসান ও তাদের সহপাঠীদের একটা গাড়িতে উঠানো হয় ও তাদেরকে গাড়িতে করে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় সেটা জানি না তবে যেই ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাতে এতটা বুঝতে পারি সে জিসান শেখ ও তাদের সহপাঠীদের কপালের খারাপ কিছুই ঘটবে অনাহেষেই। এখানে ঘটে যাওয়া সবকিছু আমি কিয়াকে জরিয়ে ধরা অবস্থায় আড়চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম ঠিকই কিন্তু রিদ খান তখনো আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।
.
জিসান শেখ ও তাদের দলবলদের নিয়ে যাওয়াতে যেন সবাই হাফ ছেড়ে বাঁচল। সকলের জানে জান ফিরে আসতে কৃতজ্ঞতা জানতে লাগলো রিদ খানকে। রিদ খানের সেই দিকে কোনো ভ্রুঁক্ষেপ নেই। সে তখনো রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে সবাইকে এক পলক দেখে কিছু না বলে নিজের গাড়িতে উঠে চলে যায় নিজ গন্তব্যে।
.
উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। রিদ খান চোখের সামনে থেকে যাওয়াতে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। জিসান শেখ থেকে রিদ খান আরও ভয়ানক প্রাণী। রিদ খানের আসল রুপের সাথে আমি পূর্ব পরিচিত। তাই উনার সম্পর্কে আমার ভালো করেই জানা আছে। তবে এতো কিছুর মধ্যে এটা অন্তত বুঝতে পারি যে রিদ খানের মনে নারী সমাজের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সম্মালন আছে।
.
.
🍁
রাত দশটা ছুঁই ছুঁই রুমে পড়ার টেবিলে বসে মনোযোগ সহকারে পড়ছি আমি বর্ষাও কিয়া। আমাদের পড়ার মধ্যে দিয়েই হঠাৎ কেবল একজন আমার দরজা কড়া নেড়ে ওঠে। দরজা শব্দ কানে আসতেই চমকে উঠে দরজা দিকে তাকায় সবাই দরজার সামনে আশ্রমের কাশেম চাচাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেই দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আমরা তিন জনই। এতটা রাতে চাচা কি কাজ হতে পাড়ে সেটা ভেবে নিয়ে। কাশেম চাচা আমাদের উনার দিকে তাকাতে দেখে স্বাভাবিক বগিতে বলে, যে আমাকে নাকি ফাদার ডেকেছে তার রুমে বিশেষ কাজের জন্য। কথাটা শুনতেই আমাদের তিন জনেই কপাল কুচকে এলো। হঠাৎ এতো রাতে ফাদার আমাকে কেন ডাকবে কিন্তু কেন? যদি ফাদারের কোনো প্রয়োজন হয়, তো ফাদার নিজেই আমাদের রুমে এসে কথা বলে যায় তবুও আমাদের ডাকে না উনার কক্ষে। সাত পাঁচ কথা ভেবে নিয়ে চাচা পিছন পিছন যেতে থাকি ফাদারের রুমে কি জন্য ডেকেছে সেটা দেখার জন্য। আমার গায়ে সাদা একটা পাঞ্জাবি স্টাইলে লং ডেস পরা। চুল গুলো এলোমেলো অবস্থা খুপা করা।
.
ধীর পায়ে ফাদারের অফিসের দিকে এগিয়ে যেতেই দরজার সামনে দাড়িয়ে আরও কিছু ব্যাক্তির কথা শুনছিলাম। হয়তো ফাদার ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন রয়েছে ফাদারের সাথে। সংকুচ বোধ করতে করতে ধীর গতিতে ফাদারের অফিসে দরজায় নক করি। আমার নক করার সাথে সাথে ফাদার ভিতর থেকে বলে উঠে….
.
—” কাম ইন পৃপ্তী…..
.
ফাদার হয়তো আমার অপেক্ষায় ছিলেন তাই তো আমার নক করার সাথে সাথেই ফাদার উত্তর আসলো।
আমি মাথা নিচু করে রুমে ভিতর ডুকে কোনো দিক না তাকিয়ে ফাদারের সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আস্তে করে বলে উঠি……
.
—” জিই ফাদার ডেকেছিলেন…..
.
—” হুমমম, তোমার সাথে কিছু কথা বলার জন্য ডেকেছিলাম। আজকে নাকি জিসান শেখ তোমাদের পথ আটকে দাঁড়িয়ে ছিল?
.
—” জিই ফাদার। ( মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানিয়ে)
.
—” হুমম, শুনেছি আমি। আচ্ছা আর ভয় পেতে হবে না তোমাদের। জিসান শেখ তার উচিত শিক্ষা পেয়েছে । রিদ খান তাদের শিক্ষা দিয়েছেন। সাথে রিদ খান আমাদের সঙ্গে বড় একটা ডিল ও ফাইনাল করেছে। আর এজন্যই আজ রিদ খান আমাদের আশ্রমে এসেছে।
.
রিদ খানের নামটি শুনার সাথে সাথে আমি ভয়ে চমকে উঠে পাশে তাকায়। রিদ খানকে চোখের সামনে পায়ে ওপর পা দিয়ে বসে থাকতে দেখে ভয়ে সিটিয়ে যায় আমি। উনার দিকে ভীতু চোখে তাকাতে চোখে পড়ল উনার ভয়ানক রাগী দৃষ্টিতে যাহ টেবিলের ওপর নিক্ষেপ করা। হয়তো কোনো কিছু নিয়ে প্রচন্ড রকম ভাবে রেগে আছে তাই তো দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বসে আছে রক্ত চক্ষু হয়ে। উনার এমন রাগের কার বুঝতে না পেরে আবারও ভয় ভয় নজরের তাকায় ফাদারের দিকে। আমার ফাদারের দিকে তাকাতেই ফাদার বলে উঠে……
.
—” যাই হোক। মূল কথায় আসি পৃপ্তী তোমাকে রিদ খানের জন্য ডাকা হয়েছে। আজ থেকে রিদ খান যাহ বলবে তোমাকে তাই শুনতে হবে। কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই। একটা সময় হলে তুমি তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে কিন্তু এখন তুমি অনেক ছোট বলে তোমাকে যাহ বলা হবে তাই করতে হবে তোমাকে।
.
ফাদারের এমন কথায় কলিজা সহ কেঁপে ওঠে আমার। যাকে এতটা ভয় পায় তার সামনে থাকবো কিভাবে। আর এই বাজে লোকটা তো আমাকে এবার মেরেই ফেলবে যদি আমাকে একা পাই তো…..
.
কথা গুলো ভেবে নিয়ে ভীতু গলায় বলি…..
.
—” কিন্তু ফাদার আমা…….
.
—” কোনো কিন্তু নয় পৃপ্তী। যাহ বলা হয়েছে তাই করতে হবে তোমাকে কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়ায়। সাথে তোম…….
.
ফাদারের বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই। রিদ খান স্টং হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠে…..
.
—” মিস্টার বার্ড, আপনার কথা যদি শেষ হয়ে থাকে তো, আমি এবার রুমে যেতে চাই। আপনার স্টুডেন্ট নিয়ে।
.
—” হ্যাঁ হ্যাঁ কেন নয় মিস্টার খান যান যান।
.
ফাদারের হঠাৎ এমন আচরণে থমকে যায় আমি। এই কোন ফাদারকে দেখছি আমি। ফাদার এতটা সহজেই একটা পর পুরুষে রুমে আমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে তাও কোনো রকম আপত্তি ছাড়াই। আজকে আমার এই ফাদারকে বড্ড অচেনা লাগছে। মনে হচ্ছে আমি যে ফাদারকে চিনি সেই ফাদার আমাদের চেনা ফাদার নয় সে অন্য কেউ একজন। মনে হচ্ছে আমি কোনো এক মিথ্যা জ্বালে ফেঁসে আছি ফাদার নামক ব্যাক্তিটির মাধ্যমে…..
.
( আপিরা ডাইরি অতীতটা তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টা করবো, একটু বড় হতে পারে কারণ গুছিয়ে না লেখলে তোমরাই কাহিনির মিল পাবে না। তার জন্য একটু বড় করতে হবে। তবে বেশি বড় হবে না)
.
.
.
চলবে……….