তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৩৭

0
740

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৩৭

.
🍁
আজ পনেরো দিন পর ডাইরিতে কিছু লিখতে বসেছি আমি। কারণ বিগত পনেরো দিন যাবত আমার লাইফে সবই ঠিক ঠাক চললেও, আজকে কিছু ভিন্ন ঘটেছে আমার লাইফে অন্য সব দিনের তুলনায়। হুমম রিদ খানের বাড়ির পার্টির থেকে আসার পর। বিগত পনেরো দিন আমি আশ্রম থেকে কোনো প্রকার ভের হয়নি। কারণ রিদ খানের সাথে আমার পর পর তিন তিনবার একই দিনের দেখা হয়। আর সেই সাথে থাকে আমার জন্য প্রচন্ড রকমের ভয় রিদ খানের পক্ষ থেকে। রিদ খান নামক প্রাণিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পদার্থের হলেও কিছুটা মনুষ্যত্ববোধ হয়তো রয়েছে উনার মধ্যে বিশেষ করে নারীদের নিয়ে। হঠাৎ করে রিদ খান সম্পর্ক গুণ গায়ছি সেটা কিন্তু মোটেও নয়। তারও একটা বিশেষ কারণ আছে। আর এই কথা একজন্য বলছি যে……

.

বিগত পনেরো দিন পর যখন আজ সকালে আমি আশ্রম থেকে বের হয় বৃদ্ধা পুরুষ ও মহিলাদের নিয়ে ওর্য়াক করানোর জন্য। উঁহুম একা বের হয়নি আমি। আমার সাথে কেয়া, বর্ষা ও সাথে আশ্রমের কিছু বড় সদস্যরাও বের হয়েছে বয়স্ক দাদা-দাদিদের নিয়ে। আমরা সবাই মিলের আশ্রম থেকে কিছুটা দূরে দুইমিনিট রাস্তা সামনের পার্কটা উদ্দেশ্য। প্রত্যেক সদস্য একজন করে বয়স্ক মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে সেই পার্কের উদ্দেশ্য। সেই সাথে আমিও একটা দাদিকে তার উইল চেয়ারসহ টেনে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে হাসি মুখে। সব মিলিয়ে আমরা প্রায় ত্রিশ জন সদস্য হবো। পনেরো জন্য সদস্যরা, বাকি পনেরো জন দাদা-দাদিকে উইল চেয়ারসহ বহন করছে।

.

আমরা এমন সারি বদ্ধ ভাবে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে, হঠাৎ করে আমার পথ আটকিয়ে দাঁড়ায় এই এলাকা এমপির ছেলে জিসান শেখ। বাবার ক্ষমতায় ও দাপটে জিসান শেখ হয়ে উঠেছে সমাজের উচ্চবর্গের গুন্ডা, লম্পট, ছেছড়া, যেখানে মেয়ে বাস, সেখানেই জিসান শেখ এর আবাস অনাহেষেই। আজও ঠিক তাই হয়েছে জিসান শেখ, নিজের ছেছড়ামি ধাপ অনুযায়ী আমাদের রাস্তা দিয়ে যেতে দেখে মূহুর্তে নিজের জ্বিপ গাড়িটি থামিয়ে দিয়ে আমাদের সামনের এসে দাঁড়ায় নিজের সঙ্গপঙ্গু নিয়ে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের সিনিয়র আপুদের লাগাতার ডিস্টার্ব করার পরও কেউ কিছু বলতে পারছে না জিসান শেখ এর ভয়ে। সবাই এক জায়গায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে পরে মাতা নিচু করে।

.

আমাদের সাথে মাদার থাকলে হয়তো জিসানের লোকজনরা কখনোই আমাদের এই ভাবে রাস্তায় আটকানোর সাহস জুগিয়ে উঠতে পারতো না। জিসান শেখের লোকেরা একে একে আপুদের সবাইকে রাস্তায় ভিন্ন ভাবে টিছ- মসকরা করেই চলছে। এমন করার মধ্যে দিয়ে হঠাৎ করে জিসান শেখ এর চোখে যায় আমাদের ওপর। আমাদের ওপর চোখ পড়তেই হাত থেমে যায় জিসান শেখ এর। ভ্রুঁ কুঁচকে আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে আসে আমাদের তিনজন বান্ধবীর দিকে।

.

জিসান শেখকে আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই আমি সাথে সাথে বর্ষাকে জরিয়ে ধরি ভয়ে। বর্ষাও আমাকে দুহাতে ঝাপটে জরিয়ে ধরে, কেয়াও সাথে সাথে আমাদের দুজনকে জরিয়ে ধরে শক্ত করে। আমাদের এমন করার মধ্যে দিয়ে জিসান শেখ এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায় শিশ বাজাতে বাজাতে। পরে আমাদের তিনজনকে পা থেকে উপর পযন্ত দেখে নিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে উঠে………

.

—” ওয়াও আমার এই তিন তিনটা কবুল জোড়া এত দিন কই ছিলে সোনারা। আরও আগে ধরা পড়নি কেন আমার খাঁচায় হুমমম……

.

কথাটা বলেই জিসান শেখ একহাত উঠিয়ে এক আংগুলে আমাদের তিনজনের গাল ছুয়ে ছুয়ে সাইড করতে করতে বলে উঠে…..

.

—“উফ এতো সুন্দর সুন্দর কবুতর জোড়া যে এমন একটা আশ্রমের মধ্যে থাকতে পারে সেটা তো আমার জানাই ছিল না। ব্যাপার না এখন জানতে পেরেছি তাই রোজ আসবো কবুতর জোড়া গুলোকে পোষণ করতে খাওয়ার জন্য।

.

জিসান শেখের এমন নুংড়া ইংগিতের মানে বুঝতে পেরে উপস্থিত সবাই কেউ কিছু বলছে না উল্টো নির্রবে দাঁড়িয়ে থাকে। আর আমরা তিন আরও ভয়ে সিটিয়ে যায়। আর বর্ষা জিসান এর কথায় রাগান্বিত চোখে তাকায় জিসানের দিকে। আর সাথে সাথে বলে উঠে…….

.

—” মিস্টার জিসান শেখ আপনি আপনার গুন্ডামী অন্য কোথাও গিয়ে দেখান আমাদের সামনে নয়। আমরা আজই গিয়ে আপনার নামে আমাদের ফাদারের কাছে বিচার দিব তিনিই দেখে নিবেন আপনার মতো লোকদের।

.

বর্ষার আংগুল দেখিয়ে কথা বলায় ক্ষেপে যায় জিসান। সে ক্ষেপ্ত হয়ে সাথে সাথে বর্ষাকে টেনে তার সাঙ্গু পাঙ্গু দিকে জুড়ে মারে আর বলে উঠে আজ রাতেরপাখি নাকি এটা ধরে রাখতে তাদের কাছে। বর্ষাকে নিয়ে যেতেই চিৎকার করে উঠি আমি আর কেয়া। জিসান শেখ পিছন ফিরে আমাদের দিকে তাকাতেই চুপ করে যায় সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে । আমার মূখটা এতক্ষণ যাবত বর্ষা বুকে চেপে ধরার কারণে জিসান শেখ হয়তো ঠিক করে দেখতে পারিনি কিন্তু বর্ষা প্রতিবাদী গলায় বলায় ও বর্ষাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমার সম্পূণ মূখটি দেখতে পারে জিসান শেখ।

.

আমাকে দেখেই এগিয়ে এসে আমার সামনে ঘাড় বাকা করে দাঁড়িয়ে পরে আমাকে দেখতে দেখতে। আমি জিসানকে এমন করতে দেখে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে কেয়াকে ভয়ে। আর সামনে থেকে বর্ষা ওদের হাতে আটকা থাকা অবস্থা চিল্লিয়ে বলে….

.

আমাদের কাছে না আসতে ও বর্ষাকে ছেড়ে দিতে। বর্ষা কোনো কথায় জিসান শেখের কান অবধি পৌঁছায় নি। কারণ জিসান এর মাথায় ঢুকছে অন্য কিছু তাই জিসান শেখ আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে আমাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। পরে নিজের একহাত বাড়িয়ে আমার বেঁনি করা চুল টেনে ধরে নিজের সামনে এনে দাঁড়া করায়। আমি ভয়ে কান্না করতে থাকি নিচে দিকে তাকিয়ে থেকে না জানি কি হয় এর পর? জিসান শেখ মতো বাজে লোকের নজরে পড়া মানে নিজের জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাওয়া। আমাদের কি হয় সেটা এই মূহুর্তে কেউ বলতে পারছে না কারণ সবাই আমার মতো করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে । আর শুধু বর্ষা লাগাতার চিৎকার করে বলছে আমাকে না ছুয়ার জন্য।

.

বর্ষার এমন চিৎকার উপেক্ষা করে জিসান আমার বেঁনি করা হাটু অবধি চুল গুলো নিজের হাতে পেঁচাতে পেঁচাতে আমাকে নিজের কাছে টানতে থাকে আর বিশ্ররি ভাবে বলতে থাকে……

.

—” সোনা তোমাকেই আমার প্রয়োজন। তোমাকে দেখেতো এই জিসান শেখ পাগল হয়ে যাওয়া টাইপ। এখন কি হবে বলো তো। এখন তো তোমাকে জিসান শেখ এর সাথে যেতে হবে তাই না। চলো তোমার বান্ধবীর সাথে সাথে তোমাকেও টাইম দিব মন ভরে। তবে তোমাকে শুধু আমি টাইম দিব অন্য কেউ নয়। কারণ তুমি আমার মন ছুইছো তাও লাইফের ফাস্ট টাইম কোনো মেয়ে সেটা করেছে। আজকে থাকা পর যদি কাল ভালো লাগে তো বিয়ে করে নিব তোমাকে সিম্পল। এখন চলো….

.

কথাটা বলে হাতটা বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরতে যাবে, তার আগেই কেউ পাশ থেকে জিসান শেখের হাতটা চেপে ধরে শক্ত করে। তারপর আমার সেই ব্যাক্তির পিছনে দিয়ে সে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় জিসানের হাতটা চেপে ধরায় অবস্থায়। আমি নিজের সামনে কাউকে দাড়াতে দেখেই কান্না করে দিয়ে ভয়ে ছুটে হিতা হিতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নিজের দু’হাতে সেই ব্যাক্তির দুই সাইডে র্কোট আঁকড়ে ধরি শক্ত করে আশ্রয় স্থালের জন্য। আমাকে এমন করতে দেখে বিন্দু মাত্র আমার সামনে থাকা ব্যাক্তিটি ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে এক পলক দেখে নিয়ে আবারও রাগান্বিত চোখে তাকায় জিসান শেখের দিকে পরে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে ক্রপে বলে উঠে……..

.

—” তুই ভুল জায়গায় তোর নজর ও হাত দুইটাই বাড়িয়েছি। এটার জন্য তোকে খুব বেশি ভুক্ত ভুগি হতে হবে আর সেটা কিভাবে সেটা তুই নিজেই বুঝতে পারবি……

.

আমার ধরে থাকা ব্যাক্তিটি এমন কথায় জিসান শেখ চুপ করে থাকলেও পিছন থেকে জিসানের সাঙ্গু পাঙ্গুদের মধ্যে একজন রেগে বলে উঠে…..

.

—” ঐ কেরে তুই….

.

পাশ থেকে অন্যজন্য বলে উঠে….

.

—” মনে হয় এই পাখিদের মধ্যে কারও বয়ফ্রেন্ড হবে হয়তো শালা। সেই জন্য তো মরার জন্য এতো বড় বড় লেকচার দিচ্ছে শালাকে এ….

.

বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই আমার জরিয়ে থাকা লোকটি মধ্যে থেকে একজন বলে উঠে……

.

—” রিদ খান উনি……

.

রিদ খান নামটি শুনার সাথে সাথেই মূহুর্তেই সবাই থমকে যায়। যেমনটা হয় মানুষের সামনে ভয়ানক কিছু উপস্থিত হলে মানুষ ভয়ে পাথর মূতি হয়ে যায়। ঠিক তেমনটা জিসান শেখ ও তার সাঙ্গু পাঙ্গুদের অবস্থা হয়েছে……

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here