অবরুদ্ধ_নিশীথ #তেজস্মিতা_মুর্তজা ৮.

0
92

#অবরুদ্ধ_নিশীথ
#তেজস্মিতা_মুর্তজা

৮.

সকাল থেকে মার্জিয়ার পায়ের সুঁতো ছিঁড়েছে। আজ তার চাচার বাড়ির লোকসকল আসছে। রাবেয়া বেগম নিজেও টুকটাক উৎসাহী। তাদের তো মেয়ের সাথে খুব বেশি দেবার সামর্থ্য হবে না। ছেলে ভালো হলে, আকদ করে রাখলেও নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। মার্জিয়া ওমন বলে তার সকলেই খারাপ হবে, এমন তো কথা নয়! আকদ হয়ে থাকার পরেও অন্তূ পড়তে পারবে, দরকার পড়লে পড়া শেষ হওয়া অবধি এ বাড়িতেই থাকল।

বিভিন্ন রকম রান্নার কারসাজি চলছে। বড়া-পকোড়া, নাস্তার ব্যবস্থা চলছে। শুধু মেয়ে দেখতে আসছে তা-ই নয়, বরং হাজার হোক ছেলের শশুরবাড়ির লোক বলে কথা! আমজাদ সাহেব বাজার গেছেন হালকা পাতলা দই-মিষ্টির ব্যবস্থা করতে!

অন্তূর বুক ভার হয়ে আছে। মুখ ছোটো করে টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে বইয়ে নজর বুলাচ্ছে। জানা নেই লোকগুলো কেমন হবে, তাদের সামনে বসার পর কী প্রশ্ন করবে, শেষ অবধি কী হবে! সে চায় আব্বুর মতো কোনো পুরুষ আসুক তার জীবনে! জীবনসঙ্গী হিসেবে পুরুষ ভাবতে গেলে আব্বুর মানসিকতা ছাড়া আর কখনও কিছু ভাবতে পারেনি সে। অবশ্য এটুকু ভরসা আছে, যেন-তেন কারও কাছে সম্বন্ধ করবেন না আমজাদ সাহেব। বই ছেড়ে উঠে পড়ল, পড়ায় মনোযোগ আসছে না।
অন্তূর ঘরটা খুব আলো-বাতাসপূর্ণ সুন্দর। বারান্দায় কিছু টব রাখা আছে। অ্যালোভেরা, পাথরকুচি, নয়নতারা, পাতাবাহার, নাম না জানা সাদা ছোট্ট ফুলের গাছ আছে সেখানে। ওগুলো আরও সুন্দর সতেজ আবহাওয়া তৈরী করেছে ঘরটাকে। বারান্দা থেকে আলো ঠিকরে আসছে রুমে। রুমের মাঝে কিছুক্ষণ পায়চারী করল। পরনে কালো সেলোয়ার-কামিজ। ওড়নাটা সিল্ক সুতির, গায়ে জড়ানো, যার আঁচল মাটি ছুঁয়ে ঝুলছে। চুলের বেণী খুলেছে অল্পক্ষণ, যে কারণে চুলগুলো এলোমেলো। ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া আসছে বারান্দার গ্রিল ভেদ করে খোলা দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরে। অন্তূ পায়চারী করতে করতে হঠাৎ-ই গেয়ে উঠল গুনগুনিয়ে,

~আজকে হাওয়া ছন্নছাড়া, আজকে হাওয়া বেবাগী..
আজকে সময় খোশমেজাজী, আজকে সময় সোহাগী

ওর ফর্সা দেহে কালো পরিচ্ছদ দারুণ চমকাচ্ছে, তার ওপর সূর্যরশ্মির প্রতিসরণাঙ্কন ঝিকিমিকি করে উঠছে মাঝেমধ্যেই! হঠাৎ-ই কানে এলো, বাড়ির দরজায় কেউ এসেছে। পায়চারী থামাল, আবার শুরু করল।

দরজা খুলতে এগিয়ে গেলেন রান্নাঘর থেকে রাবেয়া। আমজাদ সাহেব বাজার থেকে ফিরেছেন ভেবে দরজা খুলতে এসেছিলেন, কিন্তু দেখা গেল তিনটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। একজন হাসিমুখে সালাম দিলো সুন্দর করে, “আসসালামুআলাইকুম, আন্টি! আমি জয় আমির! মেম্বারের ভাগ্নে!ʼʼ

রাবেয়া পিছিয়ে দাঁড়িয়ে হাসলেন, “ওহহো জয়! আসো আব্বা দাঁড়ায় আছো ক্যান! ভিতরে আসো!ʼʼ

জয় ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “আপনি চেনেন আমাকে?ʼʼ

-“চেনবো না? রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার দেখি তো! হামজার পাশে তোমার ছবি দেখি!ʼʼ

জয় চমৎকার লাজুক হাসল। রাবেয়া আর কিচ্ছু বলার সুযোগ দিলেন না, বরং দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলেন বসার রুম থেকে। জয় বুঝল, নাস্তা আনতে যাচ্ছেন। তার মুখে ক্রূর হাসি ফুটে উঠল। সে জানে আরমিণের মা খুব লোকসুলভ মহিলা, কিন্তু এত ভালো! এদিক-ওদিক তাকিতুকি করল কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা পাবার আশায়। কবীর ও লিমনকে বলল, “মহাদেবের ভক্ত নাকি রে তোরা! আবার আলাদা করে বসার দাওয়াত দেব? বস..ʼʼ

অন্তূ রুম থেকে আবছা কোনো পুরুষালি কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। যারা তার মায়ের সাথে বেশ কথা জমিয়েছে। কৌতূহলে কেঁপে উঠল একবার। কে এসেছে? লোকগুলো চলে এসেছে? নাকি কোনো পাওনাদার এসে আম্মার সাথে বিবাদ বাঁধিয়েছে! অন্তূ খানিক মানসিক প্রস্তুতির সাথে চুলগুলো হাত দিয়ে একটু এদিক-ওদিক থেকে সরিয়ে দ্রুত কালো ওড়নাটি জড়িয়ে নিলো মাথা-দেহে। ওড়নার বর্ধিত এক প্রান্ত দ্বারা মুখটা ঢাকলো আলতো করে। বেরিয়ে এলো রুম ছেড়ে। এক পর্যায়ে দৌঁড়ে বসার রুমে উপস্থিত হলো।

সঙ্গে সঙ্গে দেহ-মন থমকে গেল, সাথে পা-দুটো। হাতের শিথিলতায় মুখের আবরণ সরে ঠোঁট ফাঁকা হলো সামান্য! জয় চেয়ে আছে ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে। যে দৃষ্টিতে বহুকিছুর সংমিশ্রণ। প্রথম যখন নজর দিয়েছে তাতে ক্রূর হাসি ছিল, সেটা এক সময় বিলীন হয়ে অভিভূত হয়েছে চোখদুটো, ধীরে ধীরে সময়ের আবর্তনে তাতে মিশেছে ক্রমশ মুগ্ধতা, এরপর দুজন কয়েক পল দুজনের চোখের দিকে চেয়ে রইল দুর্বোধ্য নজর মেলে। অবাক চোখে তির্যক দৃষ্টি মেলে চেয়ে রয় জয়।

হুটহাট খেয়াল ফিরে পেল অন্তূ! দ্রুত মুখের আবরণ তুলে নিলো। কয়েক সেকেন্ডের ব্যাবধানে ঘটে গেল এই অঘটন। শুধু চোখের থেকে জয় এবার পুরো মুখ দর্শণে সক্ষম হয়ে গেল আজ। অন্তূ তেজে উঠল, “আপনি? আপনি এখানে এসেছেন কেন? বাড়ি অবধি পৌঁছে গেছেন, আগে থেকেই চিনতেন আমার বাড়ি?ʼʼ

জয় নিজস্ব ভঙ্গিমায় নজর ফিরিয়ে নিলো। পায়ের ওপর পা তুলে বসল এবার। সোফার উপরিভাগে একহাত ছড়িয়ে অপর হাত নাকের নিচে ঘষল। তার ঠোঁটে কূটিল হাসি লেগে আছে। বেশ আরাম করে অন্তূর প্রশ্নের জবাব দিলো, “বাড়িতে অতিথি এলে এভাবে ট্রিট করো, আরমিণ! নট গুড!ʼʼ

অন্তূ সোজা হয়ে দাঁড়াল, “অতিথি ভেদে আচরণের রঙ ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়!ʼʼ

জয় এবার নিজেও সোজা হয়ে বসল, “ও আচ্ছা! তো আমাকে অতিথি হিসেবে একটু বেশিই পছন্দ হয়েছে! বেশ তো, হবারই কথা। আমি অতিথিই এমন, যেখানেই যাই লোকের তাক লেগে যায়!ʼʼ

অন্তূ মুখে কাঠামো শক্ত করে তুলল কিছু বলার উদ্দেশ্যে, সেই মুহুর্তে এক ট্রে নাশতা নিয়ে হাজির হলেন রাবেয়া। তার মুখে স্মিত হাসি। ততক্ষণে জয় নিজের ফর্ম চেঞ্জ করে ভদ্র ছেলে হয়ে উঠেছে। রাবেয়ার হাতের ট্রের দিকে চেয়ে বলল, “আরে আন্টি! এসব কী? দুটো কথা বলতে এসেছি, তা না শুনে কীসব আয়োজনে লেগেছেন!ʼʼ

রাবেয়া কপট রাগ দেখালেন, “উমম! ছেলে বেশি কথা বলো। এনেছি, লক্ষী ছেলের মতোন খাবে, এত কথা কেন?ʼʼ

জয় কথা বলল না। এদিকে অন্তূর চেহারা কঠিন হয়ে উঠেছে মায়ের আদিক্ষেতায়। কেন যে রাবেয়া এত যুবক প্রিয়। যেকোনো যুবক-যুবতীকে এত পাগলের মতো খাতির করেন। আর বলেন, মহানবী যুবকদের ভালোবাসতেন। তাদের ভালোবাসা নবীজির সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। অন্তূর মুখের কাঠামো শক্ত। মার্জিয়া ডাল ও সুজি দুরকমের বরফি বানিয়ে রেখেছিল। সেগুলো প্লেটে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে। জয় একপিস তুলে দাঁতের আগায় ছোট্ট কামড় দিয়ে রাবেয়ার চোখ বাঁচিয়ে অন্তূকে চোখ মারল। তার মুখে শয়তানী হাসি শোভা পাচ্ছে। রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করল, “আজ কোনো আয়জন আছে নাকি বাড়িতে? গমগম করছে বাড়ি কেমন?ʼʼ

রাবেয়া হাসলেন, “হ বাপ! আমার ছেলের শশুরবাড়ির লোক আসবে, সাথে অন্তূরে দেখতে আইতেছে।ʼʼ

জয় ভ্রু উচিয়ে হাসল, “আচ্ছা!ʼʼ

অন্তূ মায়ের ওপর বিরক্তিতে দাঁতে দাঁত খিঁচল। রাবেয়া জিজ্ঞেস করলেন, “কেন আসছিলা, বললা না তো!ʼʼ

জয় একটু ইতস্তত করে হাসল, “আসলে আন্টি! ক্লাবের চাঁদা নিতে এসেছিলাম। জোর জবরদস্তি নেই কোনো, ইচ্ছে হলে..

রাবেয়া উঠে দাঁড়ালেন, “এমনে বলতেছ ক্যান! পাড়ার ক্লাব তো আমাদের সুরক্ষা, হামজা, তুমি এরা তো সুনার ছেলে। দাঁড়াও..ʼʼ

রাবেয়া উঠে যেতেই জয়ের মুখভঙ্গিতে নিজস্বতা চলে এলো। মুখ বেঁকে উগ্র হয়ে একপেশে হয়ে উঠল ক্রমশ। অন্তূকে অশিষ্ট কণ্ঠে বলল, “আম্মাজান তো ভালোই! তুমি এমন ক্যাটক্যাটে ক্যান? কালিবিল্লি!ʼʼ

অন্তূ ঝাঁজিয়ে উঠল, “দুর্ভাগ্যবশত আম্মা আপনার প্রকৃতি জানে না। কেন এসেছেন সেটা বলুন! আপনাদের ওই জাহিল, শয়তানের ঘাটি ক্লাবের জন্য চাঁদা চাইতে আসতে লজ্জা করল না? আর কাকেই বা কী বলছি? লজ্জা আর আপনি শব্দ দুটোই তো একসাথে কেমন বেমানান! কী উদ্দেশ্যে এসেছেন?ʼʼ শেষের দিকে চিবিয়ে উঠল অন্তূ।

জয়ের মুখের অবয়ব শক্ত হলো, মাড়ি শক্ত করে বকে উঠল। চাপা স্বরে বলল, “বাড়ি বয়ে এসে যদি থাপড়ে যাই, ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে না, আরমিণ? চুপ করো, নয়ত তোমার মা টা মানবো বলে মনে হয় না, থাপড়ে চারটে দাঁত উপড়ে দেব। পুঁচকে মেয়ে, কথা বলো, মেপে বলো না? বাড়ি চলে এসেছি কেন বুঝতে পারছো না? বাড়ি অবধি যখন চলে এসেছি, তোমার টুটি চেপে ধরে দম আঁটকে মারতে কতক্ষণ?ʼʼ

অন্তূ চুপসে গেল। জয় আবার শান্ত হয়ে গেল, তার নিজস্ব একপেশে হাসি হাসল, “তো আজ দেখতে আসছে মেডামকে?ʼʼ

লোলুপ নজর ঘুরিয়ে পুরো আপাদমস্তক উপর-নিচ করে দেখল জয় অন্তূর। তার নজর অন্তূর পুরো শরীরে বিচরণ করছে। অন্তূ সেই নজর লক্ষ্য করে জমে গেল যেন। বাড়ি বয়ে এসে লোকটা বদনজরে দেখে যাচ্ছে, আল্লাহ পাক কবে পিছু ছাড়াবেন এই শয়তানের থেকে? রাবেয়া উৎফুল্ল পায়ে রুমে ঢুকলেন। তার হাতে জড়ানো, মুচরানো দুটো শ টাকার নোট। সেটা এনে জয়ের কাছে দিতে গেলে জয় ইশারা করল কবীরকে দিতে। কবীরের হাতে টাকা দিয়ে জয়কে বললেন রাবেয়া, “চলবে এতে?ʼʼ

টাকা জয় দেখেইনি। তার নজর ছিল অন্তূর দিকে। তবুও বেশ মাথা হেলিয়ে বলল, “খুব চলবে, আন্টি। সমস্যা নেই, দিয়েছেন এ-ই খুশি।ʼʼ

আমজাদ সাহেব ভেতরে ঢুকে একটু অবাক হয়ে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গে সালাম দিলো জয়, “আসসালামুআলাইকুম, কাকা! ভালো আছেন?ʼʼ

আমজাদ সাহেব অবুঝের মতো একটু হেসে জবাব দিয়ে বললেন, “কী ব্যাপার?ʼʼ

জয় বলল, “এইতো কাকা, বিশেষ কিছু নয়!ʼʼ

আমজাদ সাহেব ভেতরে ঢুকে গেলেন। অন্তূ ভেতরে গেল না, সে শুনতে চায় জয় আম্মুকে কী বলে? রাবেয়া জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার মা-বাবারা সব ভালো আছে?ʼʼ

জয় ঠোঁট কামড়াল, “তারা কেউ নেই তো!ʼʼ

আঁতকে উঠলেন রাবেয়া, “সেকি! কেউ নেই?ʼʼ

জয় জবাব দিলো না। অন্তূ এই প্রথম জয়ের মুখটা কিঞ্চিৎ শুকনো দেখল, মনে হলো। রাবেয়ার মায়া হলো তাগড়া ছেলের ওমন নীরব অপারগ মুখ দেখে। সস্নেহে কাছে গিয়ে বসে চুলে হাত বুলালেন, “একা থাকো বাড়িতে?ʼʼ

জয় মাথা নাড়ল, “উহু! মামার কাছে থাকি। বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে, মাঝেমধ্যে যাই, এইতো!ʼʼ

অন্তূ ভ্রু কুঁচকাল, জয় অনাথ? মা-বাবা কেউ নেই! মামার বাড়িতে থাকে!

জয় উঠে দাঁড়াল। রাবেয়া বলল, আবার আসবে। মাঝেমধ্যেই আসবে কিন্তু। জয় বলে ফেলল, “আচ্ছা, আম্মা! আসব।ʼʼ ভুলেই বলল অথবা ইচ্ছে করে বোঝা গেল না। সাথে সাথে আবার ভুল সংশোধন করে নিলো, “সরি, আন্টি!ʼʼ

রাবেয়া রাগ করলেন, “সরি কীসের? আম্মা বললে পাপ হবে নাকি? বলতে মন চাইলে বলবে!ʼʼ

অন্তূর ইচ্ছে করল, হাতের কাছের ফুলদানিটা সজোরে আছড়ে ভাঙতে। মানুষ এত সরল-সহজ হবে কেন? তার মা-টাকেই এত সরল হতে হবে কেন? দুনিয়ার কোনো খবর রাখেন না এই অবলা মহিলাটি! জয় লাজুক হেসে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে পেছন ঘুরে তাকাল অন্তূর দিকে। তার ঠোঁটের কোণে বাজে হাসি। কোনো নীরব চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে যেন সেই হাসি! অন্তূ চোখ নামিয়ে নিলো। জয় না বেরোতেই দুটো পাড়ার মহিলা ঢুকল বাড়িতে। জয় সহ কবীর, লিমনকে ঘুরে ঘুরে দেখল তারা। আবার অন্তূর দিকে তাকাল, সে সংকুচিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দৃষ্টি লক্ষ্য করে অন্তূর বুক কাঁপল, ওই দৃষ্টি ভালো কথা বলছে না। বাঁকা নজর, বাকা চিন্তাধারা মহিলাদের! না-জানি কোথায় গড়ায় এই নীরব দৃষ্টি। জয় বেরিয়ে গেল দুজনকে নিয়ে। অন্তূ দ্রুত সেই ঘর ছেড়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল, তার কেন জানি ভয় ভয় করছে। কীসের ভয় জানা নেই, তবে ভয় করছে।

বাইরে বেরিয়ে রোদচশমা চোখে লাগিয়ে পা ফাঁক করে দাঁড়াল জয়। তার চোখ-ঠোঁট হাসছে। কবীর বলল, “ভাই! আমাদের ক্লাবের চাঁদার জন্য তো আগে এদিকে আসা হয়নি! আর গতকালের পিকনিক আজ আছে, সেইজন্য টাকা নিলেন?ʼʼ

জয় ঠোঁটে বিরক্তির হাসি রেখে চোখ জড়াল, “তোর মনে হয়, আমাদের পিকনিক এসব টাকায় হয় বা হবে? এ ব্যাপারে আর প্রশ্ন করিস না।ʼʼ

কবীর জিজ্ঞেস করল, “কী করব এই টাকার?ʼʼ

জয় হাসল, “কত দিয়েছে?ʼʼ

-“দুইশো!ʼʼ

জয় হেসে ফেলল আবার, “যা, আর কিছু লাগিয়ে এক প্যাকেট ব্যানসন এণ্ড হ্যাজেস নিয়ে আয়। পিকনিকে যতক্ষণ রান্না শেষ না হয়, চলবে।ʼʼ


ক্লাবের পেছনে বিশাল খোলা মাঠ। সেখানে ব্যাডমিন্টনের তারজালি টানানো, লাইট লাগানো হয়েছে, কোট আঁকানো হয়েছে। কেউ কেউ র‌্যাকেট দিয়ে শার্টল কর্ক টুকাচ্ছে সেখানে। তার পাশেই দোতলা মরিচা ধরা বিল্ডিং, অর্থাৎ ক্লাবঘর। দোতলার ওপরে পেছনের দিকে, মাঠের ওপরে খোলা বারান্দা বা ছাদ অথবা সিঁড়িঘরের মতো। সাত-আটজন ছেলেরা দাঁড়িয়ে-বসে আছে সেখানে। তার মাঝখানে অর্ধেক কার্নিশের ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আপনমনে সিগারেটের ধোঁয়া গিলছে জয়। দৃষ্টি তার দূর অন্ধকার আকাশে। পার্থিব খেয়াল নেই বোধকরি সেই চোখে। এই সময় সে গা গরম রাখতে ব্যাডমিন্টনে নেমে পড়ে। জম্পেশ পিটিয়ে যায় হাতের র‌্যাকেটে ফেদারটাকে। ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে যায় শরীর। আজ অল্প একটু খেলে রান্নার কাছে না গিয়ে বরং উদাস চোখে ওপরে উঠে এসেছে গিটারটা কাধে নিয়ে। তারপর থেকে একটা করে সিগারেট জ্বালাচ্ছে, আর তাকিয়ে আছে ওই দূর আকাশে।

হামজা ঢুকল সেখানে। সকলে একযোগে দাঁড়িয়ে সালাম ঠুকল। তাতেও নির্বিকার ভাবে নিজের দৃষ্টিনন্দনে মগ্ন জয়। হামজা গিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী ভাবছিস?ʼʼ

জয় ওভাবেই না তাকিয়ে জবাব দেয়, “ভাবছি না।ʼʼ

-“কী হয়েছে, কোনো সমস্যা?ʼʼ

-“কী হবার আছে?ʼʼ

-“হবার তো কত কিছুই থাকতে পারে। আমার সাথে হুঁশিয়ারী করবি না, চড়াব ধরে।ʼʼ

-“হয়নি কিছু।ʼʼ

-“সিগারেটটা দে।ʼʼ

জয় দিলো না, তার মাঝে সে খেয়াল দেখা গেল না। নিজে টান দিলো হামজা, কেঁড়ে নিলো সিগারেটটা জয়ের ঠোঁট থেকে। তাতে টান দিয়ে এদিক-ওদিক চাইতে চাইতে বলল, “ভাবুক হয়ে আছিস কেন?ʼʼ

হুটহাটুই অকপট স্বীকার করল জয়, “আজ আরমিণকে দেখলাম।ʼʼ

-“নতুন কিছু?ʼʼ

-“হু, নতুন কিছু।ʼʼ

কৌতূহলি দৃষ্টি মেলে চোখ জড়িয়ে তাকায় হামজা। জয় স্বগতোক্তি করে, “চেহারা দেখেছি আজ ওর। ভাই, বিশ্বাস করো, এত সুন্দর মাইয়া হয় না। মানে বহুতই তো দেখছি, এত ভালো লাগে নাই কাউরে দেইখা! একদম যারে কয় মাশাল্লাহ টাইপের সুন্দরী! কী চোখ, নাক, ঠোঁট, মাইরি! তাক লাইগা গেছিল আমার, সিরিয়াসলি। আগে বহু মাইয়া দেখছি, বাট আমারে বিশেষভাবে আকর্ষণ করবার পারেনাই। আগেও ওর চোখ দেখছি, কিন্তু সেই রকমভাবে খেয়াল করি নাই। আমি দেখার পর একদম থাইমা গেছিলাম। কিছুক্ষণ খালি ভ্যাবলার মতো চাইয়া দেখছি। ছ্যহ! এমনিই যে ভাব শালির, আবার যদি এমনে ঠুটকা খাই তাইলে তো ভাবের চোটে ডানা লাগাইয়া আসমানের পানে চাইব। ইচ্ছে করে কানের নিচে চাইর খান বাজাই!ʼʼ

কথা শেষ করে ঢোক গিলল, যেন কথা ফুরায়নি তবুও থামল জয়। হামজা হাসল, “এরপর?ʼʼ

জয় হাসফাস করে উঠল, “এরপর থেকে শান্তি লাগতেছে না। জ্বালাচ্ছে খুব। আকাশের দিক তাকায়া আছি, মাঝেমধ্যেই ফর্সা মুখটা ভাইসা উঠতেছে। মানে এত ফর্সা!ʼʼ নিজের হাতের পিঠ দেখিয়ে বলল, “মানে আমার গায়ের রঙের সাথে মিলবে না। হিংসা হচ্ছে সিরিয়াসলি, আমার সাথে দাঁড়ালে আমারে কালা লাগবো দেখতে। হাতটাত কালা জামার ভিতর দিয়া সেই দেখা যাইতেছিল..ʼʼ

হামজা হেসে ফেলল, জয়ের আর সব ফিউজ হয়ে গিলেও সে জীবনে নিজের ভাব নষ্ট করে কারও তারিফ করে না। জীবনে একটা প্রেম করেনি এই জন্য, যে গার্লফ্রেন্ডের নাকি কথা মানতে হয়, তারিফ করতে হয়, রাগ মানাতে হয়! অথচ বিয়ে বিয়ে করে ঢোল পিটিয়ে বেড়ায়। সেই লোক আজ কী সব বলছে। জয় নিজেও কপালে হাত রেখে চোখ বুজে হেসে ফেলল। ধপ করে চেয়ারে বসে হাসিমুখেই ঘাঁড়ে হাত ঘষে আকাশের দিকে চোখ বুজে মুখ তুলে আড়মোড়া ভাঙল। হঠাৎ-ই বলে উঠল, “আরমিণকে লাগবে আমার!ʼʼ

হামজা সিগারেট ফেলে দিলো, “লাগবে মানে কী? গ্রোসারি শপের জিনিস নাকি, যে লাগবে?ʼʼ

-“ভাই, জ্বালানোর জন্য হইলেও লাগবে। আমার তো এই টুকুও সহ্য হইতেছে না, আমি ছাড়া কেউ ওরে দেখবো! কারও হক নাই ওর ওপর, ভাল্লাগছে যতক্ষণ দেখছি, শান্তি লাগছে দিলে। মানে খালি আমি দেখব। আজ নাকি কোনো শালার ছেলে দেখতে আসছিল ওরে, ওই শালারে পোন্দাতে মন চাইতেছে। এই শালা কবীর আর লিমনও দেখছে। এই শালা, তোরা তাকাইছিস ক্যা? চোখ সংযত রাখতে পারো না শালা? কিলবিল করে, না? আর দেখবি না কোনোদিন, মাটি দিয়ে রাখব একদম।ʼʼ

কবীর জিজ্ঞেস করল ইতস্তত করে, “ভাই আপনে কি মাইয়ার প্রেমে…

গলা কাঁপিয়ে হাসল জয়, “প্রেম আর আমি? হহাহা!ʼʼ চেয়ারের পিঠে হেলান দিয়ে বসল চোখ বুজে, “ওসব আমার সিলেবাসের নাই হে! প্রেম হচ্ছে একটা কামিটমেন্ট, মানে আঁটকে থাকা। আর জয় আমির কোথাও কখনও কামিটেড হতে পারে না। মেয়েবাজি আলাদা বিষয়, কিন্তু ওসব কাব্যিক প্রেম-পিরিতি আমার লেভেলেই নাই! ছোটোলোকি কারবার। আরমিণরে দেখছি, যতক্ষণ চাইয়া ছিলাম পুরুষ মনে একটা প্রশান্তি ছিল যেইডারে কয় রেস্টফুলনেস! ওই শান্তিটা খুব জ্বালাচ্ছে আমায়। আর এটুকুই যথেষ্ট আরমিণকে বুকড দেবার জন্য, যে ও আমার জন্য বরাদ্দ। এখন থেকে ওকে যেটুকু হোক, যেভাবে হোক দেখব, ওইটুকু সময় সুখ লাগবে। তোরা কেউ দেখবি না, ব্যাস!ʼʼ

নেমে গেল গিটারটা কাধে করে খোলা ছাদ থেকে। পেছন থেকে চেয়ে রইল ক্ষণকাল হামজা। এরপর সে নিজেও নেমে এলো জয়ের পিছু পিছু। বেশ ঠান্ডা পড়েছে, অথচ একটা স্লিভলেস শার্ট গায়ে জয়ের। কালো জ্যাকেটটা ঝুলছে কাধের ওপর। এখন ওটা রেখে র‌্যাকেট টুকতে দাঁড়াবে নিশ্চয়ই!

বেশ কিছুক্ষণ একটানা টেনে টেনে চাপ খেলল। গা ঘেমে প্যাকপ্যাকে হয়ে উঠল। চিৎকার করল মিউজিক বক্সের পাশে বসা থাকা ছেলের ওপর, “গানের সাউন্ড বাড়া! ভাত খাও নাই শালা, দুপুরে! এনার্জি ড্রিংক কিনে এনে দেব একটা?ʼʼ

ধুম-ধারাক্কা গান বাজছে–ডেসি বয়েজ। জয় একাধারে র‌্যাকেট পিটিয়ে গেল। শার্টল কর্ক সামনে আসছে তো গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে পিটিয়ে যাচ্ছে। একবারও মাটিতে পড়ার সুযোগ দিলো। এমনভাবে দাঁত খিঁচে খিঁচে পিটিয়ে আঘাত করছে যেন কোনো চাপা ক্ষোভ ঝারছে ওই পেটানোতে।

এই পথ আগেরই মতোন, ঠিক তেমনই আছে
এই রাত সেই রাতের কত কথা বলে..
চলে যাওয়ার বিষাদ সুর, এখনও হৃদয়ে বাজে
তারপরেও কেন যেন এইখানেই ফিরে আসে
সব ভুলে গিয়ে আবার হারাতে চাই…

তারপরেরটুকু আর গাইল না। আবার নতুন সুর তুলল গিটারে। এবারে ঝাঁজাল সুর উঠছে। ছেলেরা বিমোহিতের মতো ঢুলছে তালে তালে। এসব দিয়েই বোধহয় কবে কবে কেমন করে যেন এত সব দলবল কামিয়েছে জয়। যারা কেমন এক নেশায় আটকে থাকে শয়তান ছেলেটার। তারা এটাকে এভাবে বর্ণনা করে,জয় আমিরের মাঝে আছে কিছু, যেটা ভাল্লাগে। হাততালির সাথে সাথে ঢুলছে সবগুলো। জয়ের গানের গলা অদ্ভুত সুন্দর। কেমন এক গা ছমছমে মাথায় কেঁপে ওঠে গলাটা! যখন সে গলা ছেড়ে ব্রান্ড পার্টির মতো মাথা নাড়িয়ে পাগলের মতো গান ছাড়ে। জয় আবার গাইল,

মেঘলা হলে দিন, একলা পোড়ে মন
কাটতে না চায় রাত, করি কী এখন..
চাইলে চলে যা যদি, না থাকে উপায়…
সুঁতোয় বাঁধা জীবন ছেড়ে পালাবি কোথায়..

সকলে বিমোহিতের মতো চেয়ে রয় জয়ের বোজা চোখ দুটোর পানে। গলা ছেড়ে, মনের গভীর থেকে গান গাইছে। একমাত্র বোধহয় গান গাওয়ার সময় জয় মনের গভীরে ডুব দেয়, অন্যথায় তাকে কখনও সিরিয়াস বা ইমোশোনাল হতে দেখা যায় না। অথচ এই গিটার তার বহিঃপ্রকাশ, অল্প একটু সত্যতা আর পরম স্নেহের ধন। আবারও অন্য সুর তুলে গলা বাজিয়ে চেঁচিয়ে গাইল,

শোনো ওরে মন, তোমারে বলি…
আনন্দে কোহরে কারিগরি..
চঞ্চলও মন আমার, শোনেনা কথা…
চঞ্চলও মন আমার শোনেনা কথা…

বেশ কিছুক্ষণ গাওয়া-গাওয়ি করে হুট করে গিটার রেখে উঠে দাঁড়াল। রান্নার কাজে এসব দেখাশোনায় খুব পটু। রান্না যেখানে হচ্ছে সেখানে গিয়ে দাঁড়াল, এখনও শরীর ঘর্মাক্ত। হাতাটা হাতে নিয়ে মাংসে নাড়া দিলো কিছুক্ষণ। হামজা উঠে দাঁড়িয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলছে কারও সাথে ফোনে। দেখে মনে হয় সহ্য হলো না। দৌঁড়ে গিয়ে হামজার কাধে ওঠার চেষ্টা করে। হামজা তাল হারিয়ে পড়ে যেতে নিয়ে আবার ফোন-টোন রেখে মাঠের ওপারেই তেড়ে গেল জয়ের দিকে। জয় ছুটছে অন্ধকারের দিকে, পেছনে তেড়ে দৌড়াচ্ছে হামজা। এখন বেশ কিছুক্ষণ দুজন অন্ধকারে কাটাবে। মাঠের আঁলের ওপর বসে কীসের গল্প জমাবে। হামজার কাধে মাথা রাখবে জয়। অথচ দুজন দৌড়ে আবার ঘুথে এলো। হামজা হাঁপিয়ে গিয়ে বসল শিশির ভেজা মাঠের ওপর। খানিক বাদে কোত্থেকে দৌঁড়ে এসে হামজার কোলে মাথা রেখে ঠান্ডা ঘাসের ওপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল জয়। এই দৃশ্য বিরল। অথচ এই নেতাসাহেবকে খুব সহজে এই ছেলের সাথে মেনে নিতে দেখা যায়। জয়ের সামনে হামজা নেতৃত্ব ও গাম্ভীর্য কোনোদিন টেকে না। যত সিরিয়াস মুহুর্তই হোক, ওই জয়ের সাধ্যি আছে হামজাকে জ্বালিয়ে এক মুহুর্তে সব পণ্ড করার।


ভোটের হিরিক বেঁধেছে চারদিকে। শোরগোল লেগেছে এলাকা জুড়ে। পোস্টার লাগানোর ব্যস্ততা চলছে চারদিকে। এর মাঝে পিবিআই কার্যালয়ে নতুন ব্যস্ততা। আঁখির মর্গ-টেস্টের রিপোর্ট এসেছে। মুস্তাকিনের পূর্ব-ধারণা কাঁটায় কাঁটায় মিলেছে। তার সন্দেহ মাফিক কারও বিরুদ্ধেই কোনো প্রমাণ আসেনি রিপোর্টে। মুস্তাকিনের এখন ইচ্ছে করল রিপোর্ট তৈরী করা ডাক্তারের মুখের ভেতরে পিস্তলের নল ঢুকিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করতে, যে কারা আঙুল ঘুরিয়েছে রিপোর্ট অবাস্তব এবং স্ক্রিপটেড তৈরিতে!

বেশ কিছুক্ষণ রিপোর্ট দেখে সেটা ছুঁড়ে ফেলার মতো টেবিলে ছুঁড়ে ফেলল। এমন কিছুই রিপোর্টে নেই যা দ্বারা অপরাধী শনাক্ত করা যায় বা কোনো ক্লু পাওয়া যায়! পুরো নিরপেক্ষ একটা রিপোর্ট। যেখানে শুধু প্রকাশ পেয়েছে আঁখিকে মারা হয়েছে কীভাবে, তার দেহে কী কী ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গালি দিয়ে উঠল মুস্তাকিন, “গাঁজাখুরি রিপোর্ট তৈরি করে ঘটা করে পাঠিয়েছে শালারা!ʼʼ

লাশ আঁখির বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। মুস্তাকিন ভেবে নিলো, এখন আর ওদের বাড়িতে গিয়ে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া এই কেইস টানার এনাদার কোনো ওয়ে রইল না।

মুস্তাকিন বেরিয়ে এলো নিজের কেবিন থেকে। উদ্দেশ্য, বেরিয়ে যাবে কার্যালয় থেকে, বাইরে কিছু কাজবাজ রয়েছে। অথচ দেখা গেল বোরকায় আবৃত একটা মেয়ে এগিয়ে আসছে কার্যালয়ের ভেতরে। পা থামিয়ে দাঁড়াল মুস্তাকিন, ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইল। মেয়েটাকে চোখে পরিচিত লাগছে। মনে পড়ল, ভার্সিটি চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল, ধাক্কাও খেয়েছিল তার সঙ্গে এই মেয়েটাই!

চলবে..

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। শুরুতে অনেকেই পড়তে শুরু করেছিল, এখন দেখছি পাঠক কমেছে। থ্রিলারের পাঠক কম নাকি?😑]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here