রাত্রীপ্রিয়া #পর্বঃ১২ লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

0
93

#রাত্রীপ্রিয়া

#পর্বঃ১২

লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী

মধ্যরাত। প্রাণীকূল সবাই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। সুখের নিদ্রা’কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, খোলা আকাশে’র নিচে একে অপরকে জড়িয়ে দোলনায় মৃদু মৃদু দোল খাচ্ছে, এক জোড়া কাপল।
চাঁদে’র এক ফালি আলো এসে আঁচড়ে পড়ছে তাদের গায়ে। সারা অঙ্গে জোছনা মেখে, জোছনা’র স্নিগ্ধ আলোয় ঘুমন্ত প্রেয়সীর মুখোপানে তাকিয়ে আছে, সানাম চৌধুরী।
কি সুন্দর! চোখ জুড়ে যাওয়ার মতো মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
দূর থেকে সেদিকে তাকাতেই চোখ জুড়ে গেলো পায়েলের। নিজের অজান্তেই অস্পষ্ট স্বরে মেয়েটা বলো উঠলো,

“মাশাআল্লাহ! তাদের দু’জনকে দারুণ মানিয়েছে।”

রাত্রী’র খোঁজেই মেয়েটা এসেছিলো এখানে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো তার। রাত্রীপ্রিয়া’কে এখনো রুমে না পেয়ে খানিকটা ভয়ই পেয়েছিলো, পায়েল। যদিও ভয় পাওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। এ বাড়িতেও চারপাশে পুলিশ ও সিকিউরিটি গার্ড পাহারারত অবস্থা রয়েছে।
তাছাড়া, ঢালস্বরূপ সানাম চৌধুরী থাকতে তার প্রেয়সী’কে নিয়ে অহেতুক ভয় পাওয়া অশোভনীয়ও বটে। তবুও মেয়েটা কোথায়, এখন রুমেই তো থাকার কথা তার। বিপদ-আপদ তো আর বলে কয়ে আসে না। মেয়েটার কোনো অসুবিধা হলো না তো? সেই সাজ রাতে সায়মন ভাইয়ে’র জন্য কফি করতে গেলো, রাত্রী। এখনো ফিরলো না কেনো? মেয়েটা কোথায়? একবার নিশ্চিত হতে তাকে খোঁজ করলো,পায়েল। চুপিচুপি উঠে কয়েকটি রুম ঘেঁটেও যখন মিললো না কাঙ্ক্ষিত মেয়েটার দর্শন। ঠিক ততক্ষণই ছাঁদে চলে আসলো, পায়েল। ছাঁদের দরজাটা খোলাই রয়েছে। চিলেকোঠার দরজার কাছাকাছি আসতেই, দোলনায় চোখ যায় তার। ভাই-ভাবী’কে এক সাথে দেখে স্বস্তি পেলো, মেয়েটা। এই মানুষ দু’টোকে যত দেখে ততটা মুগ্ধ হয় পায়েল। চমৎকার তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক। একে অপরের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা, সম্মান, মায়া, যত্নে’র খামতি নেই। এদের স্নিগ্ধ ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে। পায়েল মিনিট খানিক সময় নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো। কথা বলে, এদের সুন্দর মুহুর্তটাকে নষ্ট করতেও মায়া হলো তার।
পরমুহূর্তেই, কোনো সাড়াশব্দ না করে চুপিচুপি সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যাত হলো, পায়েল। এরিমধ্য সানাম চৌধুরী মৃদু আওয়াজে শুধালো,

“কে… কে ওখানে?”

পায়েল দাঁড়িয়ে গেলো। এতো সাবধানতা অবলম্বন করেও সানাম চৌধুরী’র শ্রাবণ শক্তি’কে উপেক্ষা করা গেলো না। সে ঠিকই ধরে ফেললো, কেউ এখানে রয়েছে। তাদেরকে দেখছে। চটজলদি উঠে দাঁড়ানো’র ও উপায়ন্তর নেই। ঘুমন্ত বউয়ের ঘুম’টা ছুটে যাবে।
মেয়েটার যেন ঘুমের অসুবিধা না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই দরজার দিকে একবার তাকালো সে। এরপর খুব হালকা স্বরে সানাম চৌধুরী পুনরায় বললো,

“আমি জানি, তুমি ওখানেই দাঁড়িয়ে আছো। কে তুমি? কথা বলছো না, কেনো?”

“ভাই আমি… আমি পায়েল।”

“তুই এখানে? এতো রাতে একা-একা ছাদে এসেছিস কেনো?”

“রাত্রী’র খোঁজে এসেছিলাম, ভাই। রাত্রীপ্রিয়া’তো আমদের কাছেই ছিলো। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। এতো রাতে বিছনায় ওকে না পেয়ে, ভয় পেয়ে গেছিলাম। তোমাদের একসাথে এখানে পেলাম, তাই আর ডাকিনি।”

“আচ্ছা। ভয় পাসনে বোন। তুই রুমে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়। আমরা এখানেই আছি। রাত্রী আমার সাথেই থাকুক।”

“আচ্ছা।”

পায়েল ছোট্ট করে জবাব দিলো। অতঃপর চলে গেলো নিজেদের রুমে। সানাম চৌধুরী, প্রেয়সীর স্নিগ্ধ মুখোপানে তাকিয়ে অল্পস্বল্প হাসলো। এই মুখটায় কতশত মায়া! তার সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। এই নারীটির প্রতি তার কখনো বিরক্ত আসে না। ইহজন্মে আসবেও না।
সানাম চৌধুরী ততক্ষণাৎ ঘুমন্ত বউয়ের গালে হালকা করে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিলো। মেয়েটার চোখে-মুখের উপর পড়ে থাকা ছোটছোট চুল গুলো সরিয়ে কানের পাশে কায়দা করে গুঁজে দিলো।
অতঃপর পুনরায় গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো, প্রেয়সীর মুখোপানে। মিনিট খানিক সময় পর সেভাবেই বলে উঠলো,
“কেউ মুগ্ধ হয় আকাশের নীল রঙে!
কেউ মুগ্ধ হয় পাহাড় দেখে!
কেউ মুগ্ধ হয় সমুদ্রের গ’র্জ’নে!
এসবের সবকিছু’কে উপেক্ষা করে, আমার মুগ্ধতা মিললো তোমার কাজল চোখের মায়াতে।”

নড়েচড়ে উঠলো, রাত্রীপ্রিয়া। তার ঘুম হালকা হয়ে আসছে।এরিমধ্যে পাশের ফ্লাটে’র কুকুরটা তীব্র আওয়াজে, ঘেউঘেউ করে উঠলো। সেই যে ডাকা শুরু করলো, থামা খামির নাম নেই। মেজাজ বিগড়ে গেলো, সানাম চৌধুরী’র। শা’লা’র কু+ত্তা! ডাকার আর সময় পেলো না। সানাম চৌধুরী’র ইচ্ছে করছে, ছাঁদ থেকে এক লাফে দিয়ে পাশের ফ্লাটে গিয়ে কুকুরটাকে ঠিকঠাক মতো কতক্ষণ বকাঝকা করে আসতে। অশিক্ষিত কুকুর! ম্যানার্স শিখে নাই কোনো। রাতভর ঘেউঘেউ করে ডাকাডাকি করে মানুষের ঘুম নষ্ট করছে।

সানাম চৌধুরী’র ভাবনা চিন্তার মাঝেই ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলো, রাত্রীপ্রিয়া। তার দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো সানাম চৌধুরী। জানতে চাইলো,

“ঘুম হলো, বউ?”

“হ্যাঁ। আপনি এতক্ষণ জেগেই ছিলেন, নেতা সাহেব?”

“হুঁ।”

যা শুনে, রাত্রীপ্রিয়া’র মন খারাপ হলো। নিজেকে বড় স্বার্থপরও মনে হলো। নিজে আরামসে ঘুমিয়েছে, আর লোকটা জেগে বসে কাটিয়েছে এতটা সময়। ততক্ষণাৎ রাত্রী মুখ গোমড়া করে বললো,

“আপনি এতক্ষণ বসে ছিলেন, আমায় ডাকলেন না কেনো?”

“তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।”

“তাতে কি হয়েছে? আপনি ডাকলেই পারতেন। রুমে যেতাম আমরা। শুধুশুধু আপনাকে এতক্ষণ কষ্ট করে বসে থাকতে হতো না।”

“কষ্ট হয়নি তো, বরং সুখেই ছিলাম।”

“আচ্ছা চলুন, এবার রুমে যাই আমরা।”

বলতে বলতে দোলনা থেকে তড়িতগতিতে উঠে দাঁড়ালো, রাত্রীপ্রিয়া। সানম চৌধুরীও আর কথা বাড়ালো না। দু’জন একসাথে নিচে নামলো।
_____________

সাজ ভোরে আজ ঘুম ছুটে যায় নয়নের। অজনা কারণেই বড় মনখারাপ হলো তার। বুকের ভিতরটা ফাঁকা ফাঁকা, শূন্য। সব থেকেও কোথাও যেন কেউ নেই। কি অদ্ভুত অসুখ! নিদারুণ এক সূক্ষ্ম যন্ত্রণা! এই যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে বিছনা ছাড়লো নয়ন। বাসার সবাই এখনো ঘুমাচ্ছে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করে, ততক্ষণাৎ ছাঁদে চলে এলো ছেলেটা।
বেচারা ছাঁদে এসে বারংবার পায়চারী করছে। ঘনঘন তাকাচ্ছে পাশের ছাঁদে। যেন সে কারো আসার অপেক্ষা করছে।
মনটাও বড়ো আশপাশ করছে ! কয়েকদিন ধরে পাশের ছাঁদ থেকে কাঙ্ক্ষিত মেয়েটা’কে দেখছে না সে। এই মুহূর্তে তাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। তার এই অদ্ভুত অসুখের কারণ কি তবে ওই মেয়েটা? তার মন বলছে, এক পলক মেয়েটাকে দেখলেই শান্ত হয়ে যাবে নয়নের যন্ত্রণা। কবে ফিরবে মেয়েটা? পরমুহূর্তেই নয়ন পাশের ছাঁদের দিকে তাকিয়ে গাঢ় কণ্ঠে শুধালো,

“তুমি বড্ড স্বার্থপর, মেয়ে! এক যুবকের মন কেঁড়ে নিয়ে, তুমি অন্য কারো সুখের আভাস। তবুও তোমাকে বোধহয় আমি ভালোবাসি!
কবে ফিরবে তুমি, কচি? তোমাকে ভীষণ মিস করছি আমি!

এরপরও নয়নের কিছু ভালো লাগছে না। কি করা যায়, কি করবে সে? সানাম চৌধুরীর পরিবার তাকেও বিয়েতে ইনভাইট করেছে। জরুরী কিছু কাজের জন্য যেতে পারেনি সে। গেলেই বোধহয় ভালো হতো। পরশের আশেপাশে থাকা যেতে ক’দিন। কাজ তো পরেও করা যেতো। এটা ভেবে আবারও মন খারাপ হলো ছেলেটার।

পরমুহূর্তেই কিছু একটা ভাবলো সে। চটজলদি ট্রাউজারের পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করলো নয়ন। ততক্ষণাৎ কল লাগালো, সানাম চৌধুরী’র নাম্বারে।

সারারাত বসে বউয়ের মান-অভিমান ভাঙিয়ে শেষরাতে এসে একটু ঘুমিয়েছে সানাম চৌধুরী। এরিমধ্যে বালিশের পাশের থাকা মুঠোফোনটা ক’র্ক’শ শব্দে বেজেই চলেছে। কাঁচা ঘুমটা ছুটে গেল, সানাম চৌধুরী’র। বিরক্তির অন্ত নেই তার। এতো ভোরে কে কল করলো? ইমারজেন্সী বোধহয়! তাই দ্রুতই হাতে নিলো ফোনটা। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে, হিটলার নামটা। বন্ধু নয়নের নাম্বারটাই এভাবে সেভ করে রেখেছে সে।
ভোর পাঁচটা। এতো ভোরে নয়নের কল। খানিকটা চিন্তিতই হলো, সানাম চৌধুরী। এতোকিছু না ভেবে দ্রুত ফোন রিসিভ করলো, ছেলেটা। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুধালো,

“হ্যাঁ, দোস্ত বল? কি হয়েছে তোর? তুই ঠিক আছিস,কোনো সমস্যা?”

“আরেহ্, রিলাক্স দোস্ত! আমি একদম ঠিক আছি। ঘুম আসছে না, তাই ভাবলাম একবার তোর খোঁজ-খবর নেয়। কি করছিস?”

খুব শান্ত স্বরে বললো, নয়ন। যা শুনে অশান্ত হয়ে উঠলো, সানাম চৌধুরী। মানে, ভাই! সিরিয়াসলি? সাত-সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে জিজ্ঞেস করছে, কি করছিস? ততক্ষণাৎ সানম চৌধুরীর মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“এইতো সদরঘাটে বসে জুতা বিক্রি করছি। এক দাম একশো, এক দাম একশো! যেইটা ধরবেন একশো, ছোট-বড় একশো!”

“আরেহ্ বাহ! দেশে এ-কি দু’র্ভি’ক্ষ লাগলো, ভাই! মন্ত্রী সানাম চৌধুরী পার্লামেন্ট রেখে এখন জুতা বিক্রি করছে…. এই দিন দেখার জন্যই কি বেঁচে আছি আমরা!”

দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো, নয়ন। যা শুনে সানাম চৌধুরী বন্ধু’কে কিছু রহস্যময়ী গা’লি দিলো। এরপর মুখের ওপর ফোন কেটে দিয়ে, ফোনটাই বন্ধ করে ফেললো। শেষরাতে এসে সায়মনের পাশেই শুয়ে ছিলো, সানাম চৌধুরী।
এদের দুই বন্ধু’র যন্ত্রণায় সায়মনের ঘুমটাও নষ্ট হলো। সে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে শুধালো,

“কি সমস্যা তোর, সানাম?”

“সমস্যা আমার না, নয়নের।”

বলতে বলতে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে, চোখ বন্ধ করলো সানাম চৌধুরী। এরিমধ্যে তাকেও কল করলো, নয়ন। কিছু রহস্যময়ী কথা শুনানোর জন্যই সায়মন কলটা সাথে সাথে রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে নয়ন দুষ্ট হেসে বললো,

“কিরে, সায়মইন্না! কি করছিস, ঘুমাচ্ছিস না-কি?”

সায়মন অত্যান্ত বিনয়ী ভঙ্গিতে বললো,

“না ভাই, ঘুমাচ্ছি না তো। আমি তো বসে-বসে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। আপনি কি বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন, দাম্পত্য জীবনে অসুখী, বিশেষ মুহূর্ত দুর্বল? আর নয় চিন্তা, আর নয় ভয়। আপনাদের জন্য আমরা নিয়ে আসলাম, কলিকাতা হারবাল। ইহা এক ডোজই যথেষ্ট। আপনার লাগবে না-কি ভাই? একদম ফ্রি’তে দিবো। বয়স তো আর কম হয়নি, বিয়েসাদী এবার সেড়ে ফেলুন। ওসব নিয়ে ভয় পাবেন না, আপনার জন্য রয়েছে কলিকাতা হারবাল।”

যা শুনে নয়ন খুকখুক করে কেশে উঠলো। বিনাবাক্যে ততক্ষণাৎ কল কেটে দিয়ে বুকে হাত দিলো। অতঃপর ধপ করে বসে পড়লো মেজেতে। এই ছেলেটাকে কেন যে কল দিতে গেলো সে, এখন নিজের ইজ্জত বাচানোই মুশকিল হয়ে পড়লো।

চলবে…….

[আমার পেজের রিচটা একবারে ডাউন হয়ে গেছে। আপনারা যারা গল্প পড়েন, কাইন্ডলি লাইক কমেন্ট করবেন। কম হলেও আজকে সবাই দুই/চারটা স্টিকার কমেন্ট কইরেন। যারা এখনো আমার পেজটি ফলো করেননি, দ্রুত পেজে লাইক/ ফলো দিয়ে ফেভারিট করে রাখুন। ]”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here