আগন্তুকের_আসক্তি #পলি_আনান [পর্ব সংখ্যা ১৩]

0
104

#আগন্তুকের_আসক্তি
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৩]

________
স্কুলে ড্রেস পরে আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে আছে ইতিকা।তার আজ মূল লক্ষ্য ইনানকে জব্দ করা।গত কয়েকদিন এই বাড়ির কোন দানাপানি মুখে তুলেনি সে।আর সবটা যে ইতিকার উপর রাগ দেখিয়ে করছে সেই বিষয়ে বেশ ভালোভাবে অবগত ইতিকা।ইতিকাকে বসে থাকতে দেখে বেশ রেগে গেলেন নাসরিন

– তোর সমস্যা কি? এইভাবে বসে পা দুলাচ্ছিস কেন?স্কুলের টাইম হয়ে যাচ্ছে।দ্রুত খাওয়ারটা শেষ কর।গরম গরম আলুপরোটা ঠান্ডা হলে ভালো লাগবে না।

– তোমার ছেলে কই আম্মা?

– আমার ছেলের দায়িত্ব কী এখন আমার হাতে নাকি?আমার ছেলেটাকে তো তোর ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিয়েছি।এবার সব ভালো মন্দ যা করার তুই করবি।

– কিন্তু তিনি আমার কোন কথাই রাখতে চায় না আম্মা।যদি আমি তার কথা না রাখি রাগ দেখিয়ে, জোর করে হলেও তা করিয়ে ছাড়বেন।

ইতিকা বিরক্ত মুখ নিয়ে কথা শেষ করলেও নাসরিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়ে যায় সে।

-তুমি মুখ টিপে হাসছো কেন আম্মা?

– হাসবো না কেন?আমার ছেলেটা তার বাপের মতই হয়েছে।তার বাবাও এই কিসিমের ছিল।

– মানে?তোমারদের বিয়েটা….

ইতিকা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে কি করবে না ভেবেই থেমে গেলো।নাসরিন আবারো হেসে নির্দ্বিধায় বলতে থাকে।

– তোর শশুড়কে ভয় পাবো না কেন?এলাকার বড় ভাই ছিলেন।শহরে পড়াশোনা করতেন, মাঝে মাঝে গ্রামে যেতেন আর যখন যেতেন সব এলাকার মেয়ে ছেলেদের শাসন করে বেড়াতেন।সবার ভুল ধরতেন।সবাই তাকে যমের মতো ভয় পেতো আমিও পেতাম।একবার হুট করেই শুনি আমাদের বিয়ে দিন তারিখ ঠিক।আমার কোন মত না নিয়েই বিয়ে হয়ে গেলো।তারপর এই মানুষটার সাথে মানিয়ে নিতে আমার বড্ড কষ্ট হয়েছিল।গল্পটি লেখনীতে পলি আনান।অবশ্য তিনি ছিলেন মিশুক প্রকৃতির আমার সবসময় যত্ন নিতেন।আমি ছিলাম ভীতু প্রকৃতির।আর এখন দেখ আমার কথার প্যাচে ফেলে তাকে কিভাবে ফাসাই।ধীরে ধীরে আমার ছেলেটাকেও কবজা করে দে দেখিনি।

নাসরিনের শেষ কথায় খিলখিল করে হেসে উঠে ইতিকা।

– তোমার ছেলেকে শাসন করবো তাও আবার আমি?আমাকে তুলে আছাড় দিবে।

কথাটা বলেই আবার হাসতে থাকে ইতিকা।

কাধের দুইপাশে দুটি বেনি পড়ে আছে।কপালের দিকটায় দুগাছি চুল লেপ্টে আছে।সাদার সাথে ছাই রঙা ইউনিফর্মটা যে তার সাথে মানানসই ভাবে এঁটে সেঁটে আছে সেটা কি বুঝতে পারছে ইতিকা?আর মুগ্ধ নয়নে ইনান উপর থেকে আড়ালে তাকিয়ে আছে শাশুড়ী বউমার দিকে।এদের ভাব দেখ মাঝে মাঝে ইনানের হিংসে হয়।কই ইতিকা তো কখনো তার সাথে এতটা মিশে হেসে খেলে কথা বলেনি।প্রতিবারি একটা ভীতু মুখ নিয়ে ইনানের সামনে এসেছে।

শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নেমে এলো ইনান।একবার ঘড়ির দিকে আরেকবার ইতিকার দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলো সে।

– কয়টা বাজে?আপনি এখনো খাওয়ার শেষ করেন নি কেন?

– একসাথে খাবো বলে অপেক্ষা করছি আপনিও আসুন।

ইতিকা আর ইনানের কথার মাঝে উঠে চলে যান নাসরিন।তিনি জানেন এখন একটা হালকা পাতলা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।

– আমি খাবো না ইতিবউ।আপনি খেয়ে নিন আমাদের হাতে সময় কম।

– আম্মা আমি খাবো না, গেলাম।

ইতিকা নাসরিনের উদ্দেশ্য কথাটি বলে ঝটপট উঠে পড়ে।ইনান তার কান্ডে কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ করে।

– সমস্যা কি?কোথায় যাচ্ছেন?খাওয়ারটা শেষ করে তবেই উঠবেন।

– আপনি যেহেতু খাবেন না আমিও খাবো না

– আজ আবার নাটক শুরু করেছেন আপনি?

– নাটকের কী দেখলেন?

– ইতিবউ কথা বাড়াবে না খেয়ে নিন।

– আপনি খান আগে।

ইনান বিরক্ত হয়ে ইতিকার পাশে বসে যায়।আলুপরোটা হাতে নিয়েই বিরক্ত ভঙ্গিতে মুখ বাঁকায়।

– সকাল সকাল এই তৈলাক্ত খাবার কেন খাবেন?মা ইতিকার জন্য সালাদ করতে বলো।

ইনানের কথায় তেতে উঠলো ইতিকা।

– আমি আম্মাকে বলেছি খাবো তাই তিনি নিজের হাতে করেছেন।আপনিও খাবেন আমিও খাবো।

ইনান তর্ক করলো না একটুকরো পরোটা মুখে তুলে ইতিকার দিকে তাকালো।

– একা একা খাচ্ছেন কেন ইতিবউ?আমাকেও খাইয়ে দিতে পারেন।

তৎক্ষণাৎ ইতিকার বিষম উঠে।কাশতে কাশতে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।ইনান তাড়াহুড়ো করে হাটু মুড়িয়ে বসে ইতিকার পাশে।পানির গ্লাস নিয়ে মুখে পানি তুলে দেয়।মিসেস নাসরিন এগিয়ে আসতে গিয়েও থেমে যান।ছেলে আর ছেলের বউকে দেখে তিনি মুচকি হেসে সরে যান।

– ইতিবউ এত তাড়াহুড়ো করে কেন খাচ্ছেন?

– আপনি কি বললেন?আপনার কথায় আমার বিষম উঠেছে।

– এই কথায় আপনার বিষম উঠেছে?হাউ ফানি।

ইতিকা জবাব দিলো না।ইনানের ফোন আসায় সে কিছুটা আড়ালে সরে আসে।

– হ্যা রাতুল বল।

– ‘ওয়াসিম হাসনাত’ আপনি যার ছবি দেখিয়েছিলেন আমায়।ওনি আজ সকাল থেকে ইতিকার ক্যাম্পাসের আশেপাশে ঘুরঘুর করছেন।

– তুমি শিওর লোকটা ওয়াসিম?

– পাক্কা শিওর।আপনার হোয়াটসঅ্যাপে আমি একটা ছবি পাঠিয়েছি লোকটার, চেক করুন।আমার মনে হচ্ছে সে ইতিকাকে খুঁজতে এসেছে।

– হ্যা তার মূল উদ্দেশ্য এটাই।ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ তোমায় রাতুল।

– শুকরিয়া ভাইয়া।

ইনান ফোন কেটে মোবাইলে কিছু একটা চেক করতে থাকে।ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে এগিয়ে আসে ইতিকার দিকে।

– আমার একমাত্র ছোট বউ!ইতিবউ আমার কিছু কথা ছিল।

ইনানের কথার সুর পালটে গেছে।অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসছে ইনান।ইতিকা পরোটা হাত থেকে রেখে ইনানের দিকে চোখ তুলে তাকায়।

– হ্যা বলুন।

– রুমে আসুন।

– স্কুলে যাবো না?দেরি হয়ে যাচ্ছে।প্রথম পিরিয়ডে আজ গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে।

– বিবাহীত মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস স্বামীর ক্লাস।সব ক্লাস বাদ আজ আপনি আমার ক্লাস করবেন।

কথা শেষ করেই ঝটকায় ইতিকার হাত টেনে দাঁড় করায় ইনান।মেয়েটিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়।

.

অকস্মাৎ একটা মানুষের ভাব পালটে যায় কি করে ভেবে পায় না ইতিকা।ইনান তাকে রুমে ডেকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।তার বেনুনির চুল গুলো ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে চুলের ঘ্রাণে মত্ত সে।ইতিকা গুটিয়ে চুপচাপ বসে আছে ভীতগ্রস্ত হয়ে।

– আ..আপনি এমন করছেন কেন?

– কেমন করছি ইতিবউ?

– কেমন যেন মাতাল মাতাল।

– যেখানে আপনি আমার জীবনে মাদকময় নেশা ছড়িয়ে রেখেছেন, সেখানে আমি একটু নেশা করে মাতাল হলে দোষের কি?

– এসব কি কথা বলছেন আবল তাবল?আমাকে স্কুল যেতে দেন নি কেন?

– দুঃখিত বউ এক্সামের আগে আপনার স্কুল যাওয়া বন্ধ।

ইনানের কথায় নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় ইতিকা।রাগ দেখিয়ে বাঘিনীর ন্যায় বুলি ফোঁটায় মুখে।

– মানে?

– কেন বুঝেন নি?সোজাসাপটা বলেছি।এত স্কুল গিয়ে কি হবে।আসুন আদর করি।

– আমার ভালো লাগছেনা আপনার এইসব নাটক।

ইনান প্রত্যুত্তর করলো না।পেছেন ঘুরে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফোন চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।ইতিকা রাগ দেখিয়ে ইনানের পিঠে ঘুষি মারতেই তীব্র ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে সে।
ইনানের আর্তনাদের থতমত খেয়ে যায় ইতিকা।

– কি হয়েছে আপনার?

– কিছু না।

– মিথ্যা বলছেন কেন?আমাকে দেখান আপনার কি হয়েছে?

– কিছু না ইতিবউ সরে যান।

ইনান পালিয়ে বাঁচার জন্য উঠে দাঁড়ায়।দ্রুত রুম থেকে বের হতে নিলেই ইতিকা তাকে বাধা দেয়।একে একে শার্টের সবকটা বোতাম খুলে পিঠের দিকে তাকাতেই আতঁকে উঠে।
কালশিটে দাগ ইনানের পিঠে ছড়িয়ে আছে।

– এসব কি করে হলো?

– সেদিন বাইকের ব্রেকে সমস্যা হচ্ছিল কিছুতেই কাজ করেনি।অতঃপর ছোট খাটো এক্সিডেন্ট।

– আমায় বলেননি কেন?

– আপনাকে কি বলবো ইতিবউ?আপনার চিন্তায় আমার রাত দিন সবটা এক হয়ে যাচ্ছে।অথচ আপনি আমায় পাত্তাই দেন না।

ইতিকা জবাব দিলো না চুপচাপ তাকিয়ে রইলো ইনানের পিঠের কালশিটে দাগের দিকে।

– একটা কথা বলবো ইতিবউ?

– বলুন

– চলেন না আমরা স্বাভাবিক ভাবে সংসার শুরু করি। প্রমিস করছি আপনাকে কখনো কষ্ট দেবো না।
– বাবার ব্যবসায় হাত লাগান আর রাজনীতি ছেড়ে আসুন। পারবেন?

ইতিকা এমন একটা শর্ত দেবে স্বপ্নেও ভাবেনি ইনান।ইনান রাগ দেখিয়ে ইতিকার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।হঠাৎ কি মনে করে ইতিকার কোমড় টেনে এনে তার সাথে মিশিয়ে নেয়।বন্দী করে তার বাহুডোরে।

– ইতিবউ আপনিও আমার হবেন।আর রাজনীতিও আমার জীবনে থাকবে একদম সমান সমান ভাবে।
___

ভার্সিটি ক্যাম্পাসে সুফিয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াসিম।সুফিয়া নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলেও জোর খাটালো না।ওয়াসিম তো তার ভালোবাসার মানুষ হোক সেটা একপাক্ষিক।

– প্লিজ সুফু তোর কথা ইনান শুনবে ইতিকাকে ছেড়ে দিতে বল।

– তুই পাগল হয়ে গেছিস?যে ছেলে ইতিকার জন্য বহু বছরের পুরোনো ফ্রেন্ডকে অপমান কর‍তে ছাড়েনা সে কী না ইতিকাকে ছাড়বে?

– আমি এত কথা জানতে চাই না ইতিকাকে আমার চাই।প্লিজ সুফিয়া তুই অন্তত আমার সঙ্গ দে।

সুফিয়া ঠোঁট বাকিয়ে বিশ্রি ভঙ্গিতে হাসে।

– একটা এডভাইস দিচ্ছি তোকে।ইতিকার কথা ভুলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নে।আমাকেও করতে পারিস তোকে আগেও প্রপোজ করেছিলাম রাজি হলি না।

সুফিয়ার সিরিয়াস মুডের কথায় তেতে উঠলো ওয়াসিম।ইনানের উপর সব রাগ যেন হুট করেই সুফিয়ার উপর চড়ে উঠেছে।কোন দ্বিধাবোধ ছাড়াই ইতিকার গালে বেশ জোরেই থাপ্পড় মারলো ওয়াসিম।
লাহমায় স্থির নয়ন যুগলে সিক্ত নোনা জলে ভরে গেছে।ওয়াসিম বিনাবাক্য স্থান ত্যাগ করে।

কয়েক মিনিট পর অলীদ সুফিয়ার সামনে দাঁড়ায় আগুনের চুল্লির মতো মুখ করে।

– কাজটা ভালো হলো না সুফিয়া।

অলীদের স্থির কন্ঠ।

– কি করেছি আমি?

– তোর বেহায়াপনার জন্য ওয়াসিমের হাতে চড় খেয়েছিস।আমি আংকেলকে সবটা জানিয়ে দিয়েছি।তিনি আসছেন।

অলীদের কথায় মুষড়ে উঠে সুফিয়া।

– তুই পাগল হয়ে গেছিস?বাবাকে কেন বললি সবটা?বাবা আমায় দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবে।তিনি সুযোগ খুঁজছিলেন আমায় কোন উচিলায় দেশের বাইরে পাঠানোর।এবার কি হবে?আমায় দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবে অলীদ তুই এটা কি করলি?

– আমি সবটা জেনে বুঝে করেছি।দেশের বাইরে চলে যা পড়াশোনা কর মাথা থেকে কুবুদ্ধি ঝেরে ফেল।

– আমি যাবো না।
– যেতে তোকে হবেই।

#চলবে…

সবগুলো পর্ব একসাথে – https://polyanan.com/tag/aguntuker-asokti/

®পলি আনান

❌কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ❌

[গল্পটি পড়লে অবশ্যই আপনার মন্তব্য জানাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here