তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৪৭

0
626

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪৭

.
🍁
—” আমি কি চাই সেটা আমিতে সীমাবদ্ধ। সময়টা আমি ঠিক করি আর সবাই আমার ঠিক করা সময়ে চলে। তাই আমাকে আপাতত তোমার না বুঝলেও চলবে তুমি শুধু আমাকে ফিল করো সেটাই তোমার প্রধাণ কাজ। আর তার জন্য আমিই তো আছিই। আর তার শুরুটা আজ থেকেই করা যাক……….

.
কথা গুলো বলে উনি আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে হাত ধরে টেনে উনার বেড রুমে নিয়ে যায়। উনার রুমের ভিতরে চারপাশে শুধু উনারই বিভিন্ন রকমের ছবি জুলিয়ে রাখা ছিল। সব কয়টার ছবিই ছিল অ্যাটিটিউট সাথে তুলা, উনার কোনো ছবিই হাসউজ্জল ছিল না কেমন একটা ঘুমড়া মুখে তুলা। তবে ঘুমড়া মুখে ছবি হলে কি বান্দাটার মধ্যে হেবি ভাব আছে বলতে হবে। মারাত্মক সৌন্দর্যে অধিকারী পুরুষ। আমার দেখা প্রথম পুরুষ যাবে দেখেই ফিদা হওয়ার মতো। মাঝে মধ্যে ইচ্ছা তো করে এই বান্দার কপালে একটা নজর ঠিকা দিয়ে দেয় যাতে আমারই নজরই না লাগে। উফ কিযে সুন্দর ভাষায় কিভাবে প্রকাশ করি। উনার মধ্যে সবচাইতে সুন্দর যেটা তা হলো উনার পাগল করা চোখ জুড়া উফফফ। আর হাসিটা তো তার চেয়েও কাতিল, জান নেওয়ার মতো। আমার প্রথম দিনই উনাকে বেশ পছন্দ হয়, কিন্তু উনার রাগ আর গুন্ডামীর কারণে উনি আমার অপছন্দের তালিকায় চলে যায়। পরে যখন আমাদের তুলে নেওয়া হয় আর বর্ষার সাথে বন্ধ দরজা ভিতরে থেকেও বর্ষাকে কিছুই করেনি তখন থেকে আবারও আমার সেই পছন্দ তালিকায় চলে আসে রিদ খান । আর আজকেও উনাকে আমার বেশ ভালো লাগছে বিশেষ করে যখন উনার মুখ থেকে শুনি যে আমি উনার আপন জন। তখন থেকে যেন উনার প্রতি ভালো লাগাটা স্হানীয় হচ্ছে আমার মনে। তাই আমি উনার সেই ভালো লাগার সাথে চলছি এখন পযন্ত। উনার প্রতিটা ছবি আমি হা হয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছি আর হালকা হাতে স্পর্শ করছি উনার প্রতিটা ছবি আমার অনেকটাই ভালো লাগছে উনাকে। আমি যে উনাকে এমন করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছি আমার এটা মনেই নেই যে উনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আমার সাথে খুব কাছে। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর আমার কান্ড গুলো দেখছে। আমার এমন করার মধ্যে দিয়ে উনি কিছুটা এগিয়ে এসে আমার পিছনে থেকে দেয়ালে দুহাত দিয়ে কিছুটা ঝুকে এসে পিছন থেকে কানের কাছে আস্তে করে কাতর কন্ঠে বলে উঠে…….

.

—” ছবিতে কি আছে? তুমি চাইলে আমাকে সামনের থেকেই ফিল করতে পারবো তোমার হালকা স্পর্শে। আমি কিন্তু প্রস্তুতই আছি।

.

উনার এমন হঠাৎ কান্ড ভরকে যায় আমি। উনার হঠাৎ এমন কান্ডের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি। উনি আমার পিছন থেকে দেয়ালে দুহাত রেখে ঝুঁকে আসায় উনার নিশ্বাস পড়ছিল আমার ঘাড়ের ওপর যাতে করে আমি বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম। আর আমি এতক্ষণ যাবত কি করছিলাম উনার ছবির সাথে সেটা বুঝতে পেরে লজ্জায় সিটিয়ে যাচ্ছিলাম মূহুর্তেই। কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে আস্তে করে সামনের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আমাকে লজ্জা পেতে দেখে উনি মূহুর্তেই বাঁকা হেঁসে আরও কিছুটা ঝুঁকে এসে আমার মুখ বরাবর হয়ে বলে উঠে……

.

—” তোমাকে লজ্জা পেলে বউ বউ লাগে। আর কোনো মেয়ে নাকি কোনো ছেলে সামনে এই ভাবে লজ্জা পেতে থাকলে সেই মেয়ে নাকি সেই ছেলেকে নিয়ে কিছু ফিল করে মানে প্রেমে পড়া টাইপ। তোমার ক্ষেত্রে ও কি তাই?

.

উনার এমন সব কথায় তুমুল গতিতে লজ্জা পাওয়ার ভাবটা যেন আরও বেশি বেড়ে যায় আমার। লজ্জায় সিটিয়ে যাওয়া অবস্থায় নিচু মাথা আরও নিচু করে ফেলি মূহুর্তেই। উনি আমাকে এমন করতে দেখে মূহুর্তে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে। আমি উনার খিলখিল করা হাসির শব্দ কানে আসতেই দ্রুত তাকায় উনার দিকে। উনাকে মুক্ত হাসতে দেখে সব ভুলে গিয়ে হা হয়ে তাকিয়ে থাকি সেই দিকে কারণ আমি উনাকে কখনোই এই ভাবে হাসতে দেখিনি। উনার হাসিটা যেন ভবন ভুলানো মূহুর্তে আমি সবকিছু ভুলে যায়।

.

উনি খিল খিল করে হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চুপ করে যায়। পরে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার দুই গাল আঁকড়ে ধরে উনার দুই হাতে পরে আমার কপালে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে রাখে কিছুক্ষণ। হালকা কিছু সময় পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার কপালে কপাল টিকিয়ে খুশি মনে বলে উঠে।

.

—” তুমি আমার জন্য সুখ বয়ে আনো। আমার সুখের ঠিকানা তুমি। তোমাকে আমি সবকিছু থেকে আঁকড়ে রাখবো। তুমিটা চাই আমার…….

.

কথা গুলো বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও আমার কপালে আলতো চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় অন্য একটি রুমে নিয়ে যায় আমাকে। সেখানে গিয়ে আমাকে দু’জন মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যারা উনার আপনজন হয়। মানে উনার দাদা দাদী। দাদা আরাফ খান, দাদী হেনা খাঁন। উনার মা বাবা মারা যাওয়ার পর উনারা কিভাবে রিদ খানকে বড় করেন সেই সবটাই আমাকে বলেন। সাথে এটাও বলে উনার কোনো বউ বাচ্চা নেই। আমি উনার সব কথা গুলো মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম চুপ করে। আমার আজ উনাকে বিরক্ত বোধ লাগছে না এক অন্য রকম ভালো লাগছে উনার সম্পর্কে জেনে।

.

সেইদিন আমি সারাদিন উনার সাথেই ছিলাম। রাতের দশটা দিকে উনি আমাকে আশ্রমে নিয়ে আসে। রাতে খাবারটাও আমরা একসাথে খাই। উনি আমাকে এতো রাতে আশ্রমের নিয়ে আসেন সবার সামনে দিয়ে এতে করে কেউ কিছু বলেনি আমাদের না ফাদার -মাদার বলেছে না অন্য কেউ এমন কি বর্ষাও একটা বারের জন্য জিজ্ঞেসা করে নি যে আমি সারাদিন রিদ খানের সাথে কি করেছিলাম বা কেন গিয়েছিলাম উনার সাথে। সবচাইতে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো ফাদার নিয়ে উনি আমাকে রিদ খানের সাথে দেখে আরও বেশি খুশি হয়েছিল। যেমনটা ফাদারই চাইছিল যে আমি যেন রিদ খানের সাথে থাকি এমন কিছু।

.

ঐদিন বর্ষা আমাকে কিছু জিজ্ঞেসা না করলেও কেয়া ও আশ্রমের বাকি সদস্যদের থেকে ছাড় পাইনি আমি। কেয়া আমাকে একের পর একে প্রশ্ন করেই গেছে যে সারাদিন রিদ খানের সাথে কোথায় ছিল? কেন গিয়েছিলাম? কি করেছি? ইত্যাদি আর আশ্রমের সদস্যরা আমাকে ঐ দিনের পর থেকে আরও বেশি কথা শুনাতে শুরু করে রিদ খানকে জরিয়ে। রিদ খানকে নিয়ে আমার শুরুতে সমস্যা থাকলেও ঐদিনের পর থেকে কোনো রকম সমস্যা হয়নি। এখন কেউ কোনো কিছু বললেও আমার কিছু জায় আসে না উল্টো ভালোই লাগে উনাকে নিয়ে কিছু বললে।

.

ষোল বয়সে বাচ্চা প্রেম বলতে পারেন যার সবকিছুতেই ভালো লাগতো। আমারও ভালো লাগতো সবকিছুতে উঠতে বসে শুধু উনাকেই সবকিছুতে খুজে বেড়াতাম। আর উনিও আমাকে রোজ রোজ নিয়ে যেতো উনার সাথে। বেশ গল্প করতো আমার সাথে, বেশ সুন্দর সুন্দর মূহুর্তে কাটাতাম উনার সাথে এটা যেন আমার রোজকার রুটিন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। একদিন যদি উনি একটু দেরি করে আসতো তাহলে আমি গাল ফুলিয়ে বসে থাকতাম, উনার সাথে বেশ রাগ করতাম, উনিও আদুরে সহিত আমার রাগ ভাঙ্গাতো সবকিছুই ভালোই চলছিল আমাদের মধ্যে। এই ভাবে টানা ছয়টা মাস চলে যায় আমাদের জীবনের এই ছয়টি মাস খুবই সুন্দর ছিল আমাদের জীবনের। মানুষ বলে না সুখের দিন গুলো খুবই দ্রুত পুড়িয়ে যায়। আমাদের সাথেও ঠিক তাই হয়েছিল বিশেষ করে আমার কেয়ার ও বর্ষার জীবনের কাল হয়ে এসেছিল সাত নাম্বার মাসটি আর এই মাসটিই ছিল রিদ খান ও কেয়া, বর্ষার সাথে থাকা শেষ দিন গুলো আমার………..

.

.

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here