#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪৫
.
🍁
ক্লাস রুমে বসে আছি আমি। এই মূহুর্তে আমি ক্লাস রুমে ক্লাস করার জন্য বসে থাকলেও কোনো ভাবে ক্লাসে মনোযোগ হতে পারছি না আমি। আর তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে বটে মনোযোগ হতে না পারার। কারণ কাল যখন আমি, বর্ষা ও কেয়া আশ্রমে আসি আসিফে সাথে রিদ খানের পাঠানো গাড়ি দিয়ে, তখন থেকেই আশ্রমের লোকজন আমাদের নিয়ে নানান সব বাজে ইংগিতের উপাধি প্রদান করছে লাগাতার। প্রথম প্রথম সেটা ইশারা ইংগিতে প্রকাশ করলেও আজ সকাল থেকে সবাই প্রকাশেই আমাদের কথা শুনাচ্ছে রিদ খানকে নিয়ে। কিন্তু রিদ খানকে নিয়ে আমাদের এসব বাজে কথায় না বর্ষা কিছু বলছে না অন্য কেউ প্রতিবাদ করছে। প্রথম প্রথম সবার এসব কর্ম কান্ডে আমি আর কেয়া গোর প্রতিবাদ জানাতে চাইলে উল্টো বর্ষাই আমাদের থামিয়ে দেয় একান্ত ভাবে কিছু বলতে না দিয়ে। তাই আর কারও কোনো কথা কানে না নিয়ে, না শুনার ভান ধরে চুপচাপ কিছুই না বলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি আমরা তিন জনই। আর তার জন্যই এখন সবাই আমাদের মুখে মুখে বলে বেড়াচ্ছে সরাসরি। আর সেই জন্যই আমি এই মূহুর্তে ক্লাস করতে পারছি না আমি ও কেয়া চারপাশে সবার গুণজনে। সবার এত সব কথা গুলো আর সয্য করতে না পেরে ক্লাস না করে স্যারকে বলে নিজের রুমে চলে আসি আমি। রুমে ডুকতেই দেখতে পাই বর্ষাকে ওহ কিছু একটা কাগজ নিয়ে মনোযোগ সহকারে কিছু করার চেষ্টা করছে। আমি রুমে ঢুকতেই দরজার উচ্চ শব্দে বর্ষা তাড়াতাড়ি ওঠে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে হাতে থাকা কাগজটি লুকিয়ে ফেলে পিছনে। আমি বিষয়টি লক্ষ করে ও তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি এই বিষয়ে। কারণ রাগ তখন আমার মাথা চেপে বসেছিল যার কারণে অন্য কিছু আর চোখেই পড়েনি কোনো রকম। আর চোখে সামনে বর্ষাকে দেখা যেন রাগটা আর ধরে রাখতে না পেরে রাগে গজগজ করতে করতে দ্রুত সামনে দাড়িয়ে পড়ে কমড়ে দুহাত দিয়ে নাক মুখ লাল করে বলে উঠি……..
.
—” তোর কি মনে হয় না বর্ষা তুই বেশি বেশি করছি?
.
আমার কথার মানে বর্ষা বুঝতে না পেরে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠে…….
.
—” কোনটা বেশি বেশি করছি আমি?
.
বর্ষাকে ভ্রুঁ কুঁচকাতে দেখে আমি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে উঠি…..
.
—” তুই কি আমার কথা গুলো বুঝতে পারছিস নাহহহ। নাকি বুঝেও না বুঝার ভান ধরে আসে আছিস চুপচাপ হুমমম। কাল থেকে তুই কি শুরু করেছিস তোর মতো মেয়ে রিদ খানকে সাপোর্ট করছে তাও আমার বিরুদ্ধে। এটা কি এখন আমাকে মানতে হবে বর্ষা?
.
—” না মানার কি আছে। যেটা স্বাভাবিক সেটাই তোকে মানতে হবে তাই না।
.
—” মানে তুই কি এখন রিদ খানের হয়ে কথা বলবি।আমি কেয়া তোর কাছে কিছুই না। রিদ খানেই সব তোর কাছে।
.
—” পৃপ্তী প্লিজ, বড় হওয়া চেষ্টা কর। অকারণে কোনো কথা বলা ঠিক না। কারণ আমাদের চারপাশে দুনিয়াটা এতটা সহজ নয়, যতটা তুই ভাবছিস। হয়তো তোর চিন্তা ভাবনার বাহিরে কঠিন এই দুনিয়াটা। তাই আমাকে আমার মতো থাকতে দে আর তুই তোর কাজ কর যাহ। আর শুন বেশি দূরে যাসনা।
.
বর্ষার ডাবল মিনিং কথার মানে বুঝতে না পেরে। রাগে কান্না চলে আসে আমার । এই স্বাথপর দুনিয়াতে একমাত্র বর্ষা আর কেয়া ছিল আমার আপন বলতে। এখন বর্ষা ঐ রিদ খানের জন্য আমার সাথে বেইমানি করলো আর শুধু বাকি আছে কেয়া। আমার জীবনে এখন আর কেয়া ছাড়া অন্য নেই আমি একা। কথা গুলো ভেবেই দু’হাতে চোখের জ্বল মুছতে মুছতে রুম থেকে বেড় হয়ে আশ্রমের মাঠের এক কোণায় দোলনায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়ি কান্না করতে করতে আর রিদ খানকে দোষ দিতে থাকি। আমার এমন কান্না মধ্যে দিয়েই কেউ একজন আমার পাশে বসে পরে আস্তে করে আমি কেয়া ভেবে তেমন একটা মনোযোগ দেয়নি কান্না করতেই থাকি। আমার এমন কান্নার মধ্যে দিয়ে হঠাৎ করে আমার পাশে বসে থাকা ব্যাক্তিটি বলে উঠে।
.
—” উফ তোমার এই কান্নাটা আমার এতটা কিউট লাগে যে ইচ্ছা করে আর দুটো থাপ্পড় দিয়ে সারাদিন কান্নায় বসিয়ে রাখি তোমায়। তোমার এই কান্নায় কিন্তু আমি মরেছি।
.
পাশ থেকে এমন সব কথা কানে আসতেই চমকে উঠলাম আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল রিদ খানকে। উনাকে এই মূহুর্তে আমার পাশে দেখে আমি ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেও কোনো রকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে চুপটি করে বসে থাকি জায়গায়। কারণ উনাকে কিছু বললেও কারও জায় আসবে না উল্টো আমিই বিপদে পড়বো আর এখন তো বর্ষাও উনার দলে আছে আমার সাথে তো কেউ নেই তার চুপচাপ বসে থাকি সামনে দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি আবারও বলে উঠে…….
.
—” কিহ পিচ্চি ম্যাডাম মন খারাপ নাকি…..
.
—” নাহহহহ….
.
—” তাই আপনাকে দেখে কিন্তু অন্য কিছু মনে হচ্ছে। তাহ পিচ্চি ম্যাডামের মন খারাপ কেন শুনি……
.
—” আপনার জন্য…….
.
উনি একটা ভ্রুঁ উঁচু করে বলে…..
.
—” আমার জন্য?
.
—” হুমমম আপনার জন্যই তো…..
.
—” তা আমি ম্যাডামের মন খারাপে কারণ কি করে হলাম শুনি…..
.
উনার কথা আমি বলে উঠি…..
.
—” আপনি বর্ষার সাথে এতো কিসে কথা বলুন যার জন্য ওহ আপনাকে এতটা পছন্দ করে। কই আপনি তো কখনো আমার সাথে ঠিক করে কথা বলুন না সবসময় রাগ দেখিয়ে চলুন……
.
আমার এমন কথা রিদ খান খুশি মনে বলে উঠে…….
.
—” বর্ষার সাথে আমার কিছুই নেই। যাহ আছে সব তোমার সাথে। বাকি রইল আমার রাগটা সেটা কিন্তু আমরা বেশি ভাগ আপন জনদেরই দেখিয়ে থাকি তাই না……
.
আমি উনার কথায় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় উনার দিকে উনার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে বলি……..
.
—-” তার মানে আমি আপনার আপন জন…….
.
আমার দৃষ্টিতে উনি নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে বলে উঠে….
.
—” হুমমমমম আমার আপন জন, আমার পিচ্চি ম্যাডাম…….
.
.
.
.
চলবে……….