#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪৮
.
🍁
রোজকার মতো আজও অপেক্ষা প্রহর গুণছি আমি উনার। কবে উনি আসবে? আর কবে যাবো আমি উনার সাথে ঘুরতে? উনার জন্য রোজ রোজ অপেক্ষা করাটাও আমার এক প্রকার পাগলামো। আর সেই পাগলামোটা বারবার করতেও বিষণ ভালো লাগে আমার। আজও তার বিতিক্রম নয় ঠিক আগের দিনের মতো করেই স্বাভাবিক অবস্থায় বসে আছি আমি। তবে অন্য দিয়ে দিনের তুলনায় আজ একটু বেশিই সেজেগুজে বসে আছি। আজ মন একটু ভালো বেশ ফুরফুরে মেজাজ আমার। তাই একটু বেশি সাজা আরকি উনাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। আনন্দে সহিত পা ঝুলিয়ে বসে আছি নিজের রুমে বিছানার উপর ঠোঁট উলটিয়ে বারবার দরজার দিয়ে বাহিরের দিকে তাকাচ্ছি কখন আসবে? কখন আসবে? অন্য দিনের তুলনায় আজ একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে কিন্তু মহাশয় এখনো আসার নাম নেই। গাল ফুলিয়ে জেদ্দ ধরে বসে অপেক্ষা করতে থাকি উনার। আর মনে মনে শপথ করলাম আজ আমাকে নিতে আসলে একটু বেশিই বকে দিব উনাকে হুহহহ। কেউ একটা মেয়েকে কি এতটা অপেক্ষা করায় নাকি হুমম। মনে মনে ভাবনাটা ঠিক করে নিয়ে আবারও দরজা দিকে তাকিয়ে থাকি আমি উনার অপেক্ষার প্রহর গুনে।
.
আমি গাল ফুলিয়ে কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকার পর রাগে বিছানা ওপর থেকে নেমে গিয়ে হনহনিয়ে হেঁটে বের হয়ে যায় নিজের রুম থেকে। রাগে গজগজ করতে করতে আশ্রমের বাগানের দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ করে চোখে পড়ল উনার (রিদ) তিনটি কালো গাড়ি গুলো যাহ আশ্রমের গেটের একপাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করানো। আর সেই গাড়ি গুলোর সামনে দুটো বডিগার্ড ও দাঁড়িয়ে আছে স্টং হয়ে। উনার গাড়ি আশ্রমের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে এলো আমার। উনার গাড়ি গুলো যদি এখানে থাকে তাহলে উনিও নিশ্চয় আশ্রমের মধ্যেই আছে। উনি এই মূহুর্তে আশ্রমের আছে কথাটা ভাবতেই আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠি সাথে সাথে। খুশি মনে গাড়ি গুলো দিকে এগিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায় হঠাৎ করে। কারণ এটা ভেবে যে উনি যদি এখন আশ্রমের মধ্যে হয় তো আমার সাথে এখনো অবধি দেখা করেনি কেন? তাহলে কি উনি (রিদ) আজ আমার জন্য আশ্রমে আসেনি অন্য কোনো কারণে আশ্রমে এসেছে? হয়তো ফাদার ডেকেছে উনাকে এমনটাই হবে এই কথা ভেবে সাথে সাথে মন খারাপ হয়ে যায় আমার যে উনি আজ আমার জন্য আসেনি আশ্রমে। আমি মন খারাপ ভাবটা নিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যেতে থাকি নিজের রুমে দিকে। রুমে ঢুকার আগেই হঠাৎ মনে হলো যে উনাকে একটা নজর লুকিয়ে দেখে আসি কি করছে ফাদারের সাথে। আজ যেতে পারিনি তো কি হয়েছে দেখতে পারবো উনাকে একটা নজর কথা গুলো ভেবে আমি মনোস্থির করালাম ফাদারের পারসোনাল অফিস রুমে দরজা দিয়ে উঁকি মেরে উনাকে দেখবো।
.
যে ভাবা সেই কাজ আমি খুশিতে গদগদ হয়ে হাজির হয় ফাদারের পারসোনাল অফিস রুমের সামনে। আমি রুমের সামনে হাজির হতেই শুনা জায় বেশ কিছু মানুষের কথা বলার শব্দ হয়তো তারা কিছু একটা নিয়ে বেশ ঝামেলা হচ্ছে। আমি সেই ঝামেলা মন না দিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে দরজার পর্দা ভিতর থেকে উঁকি মারতেই চোখে পড়ল উনাকে সহ আর বেশ কিছু মানুষ জনকে। এখানে রিদ খান ছাড়াও জিসান শেখ ও তার বাবা মীর্জা শেখ উপস্থিত রয়েছে রিদ খানের সামনে। ফাদাদের সাথে মাদারও একপাশে বসা। আসিফ সহ উনার চারজন বডিগার্ড উনার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধ ভাবে। দশ সদস্য এই বিশেষ মিটিং এর কিছুই বুঝতে পারিনি আমি কিছু এই মূহুর্তে জিসান শেখ উনার সামনে দেখে মূহুর্তে চমকে উঠলাম আমি। জিসান শেখ ও তার বাবা মীর্জা শেখ এর সাথে উনার বা ফাদার ও মাদারের কি সম্পর্ক হতে পারে কথায় ভেবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সেই দিকে। আমার এমন দৃষ্টি মধ্যে দিয়েই মীর্জা শেখ বিনিময় সুরে বলে উঠে উনাকে উদ্দেশ্য করে………
.
—” মিস্টার খান, আপনি চাইলে আমরা আপনার সাথে একটা সাময়িক চুক্তি করতে পারি। যেমটা আপনার চাহিদা অনুযায়ী হবে।
.
মীর্জা শেখের কথা কপাল কুচকে এলো আমার কি এমন চুক্তি করতে চাই উনার সাথে এই লোকটা। বাকিটা জানার জন্য গভীর মনোযোগ নিয়ে সেই দিকে তাকিয়ে থাকি। মীর্জা শেখের কথায় রিদ খান স্টং হয়ে বসে একটা বল ঘুরাতে ঘুরাতে বলে উঠে…….
.
—” মিস্টার শেখ, আপনার বা আপনার ছেলের কারও স্বাদ নেই রিদ খানের সাথে সাময়িক চুক্তি করার। আর রিদ খানের যাহ পছন্দ তার ওপর কারও হাত তো দেওয়া দূর থাক সেই দিকে কারও নজরটাও পছন্দ নয়। আপনার ছেলে আমার পছন্দ করা জিনিসে নজর দিয়েছে সেটাই ওর প্রথম ভুল আর ওর দ্বিতীয় ভুলটা হলো ওহ আমারি পছন্দ করা জিনিসে হাত বাড়াতে চাইছে আর তার জন্য আপনি ও আসছেন উকালতি করতে। আপনাদের বাপ ছেলের মনে হয় পাওয়ার ও জানের ভয় নেই তাই না মিস্টার শেখ।
.
উনার এমন কথায় কিছুই বুঝতে পারিনি আমি কিন্তু মূহুর্তেই মীর্জা শেখ ঘেমে জবজব হয়ে যায়। হাত ঢুকিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের বিন্দু ঘাম মুছে নিয়ে উনার দিকে তাকায় ভয়াৎ দৃষ্টিতে। মীর্জা শেখ কিছু বলতে যাবে তার আগেই জিসান শেখ রাগান্বিত ফেস করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে………
.
—” আমি উনাকে ভয় পায়না মিস্টার রিদ খান। আপনার যাহ খুশি করতে পারেন। আপনি আমাকে হুমকি বার্তা শুনালেও আমি চুপ করে বসে থাকবো না। এতে যদি আপনি আমার বাবার ক্ষমতা চলে যায় তো যাক তবুও আমার ওকে চাই-ই চাই । আমার লাগবেই পৃপ্তীকে আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। আপনি শুধু শারীরিক চাহিদা জন্য ফাদার থেকে কিনে নিয়েছেন পৃপ্তীকে আর তার জন্য ছয় মাস ধরে ব্যবহার করছেন ওকে। এখন আর কি চাই আপনার আপনি ওকে ছেড়ে দেন এবার আমি ওকে নিয়……….
.
জিসান শেখ বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই রিদ খান উঠে দাঁড়িয়ে সাথে সাথে পাশে থাকা বন্দুকটা নিয়ে জিসান শেখের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে চেপে ধরে শক্ত করে। রিদ খানের চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে টগবগিয়ে উঠে রাগে। উনি রাগে রি রি করতে করতে জিসান শেখকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠে……..
.
—” তোর কি মনে হয় একটা পাগল বসে রয়েছি তোর সামনে। এতো সোজা সবকিছু হুমমম। আমার পারসোনাল লাইফে কি করবো সেটা কৈফিয়ত কি রিদ খান তোকে দিবে। জানে ভয় নেই তোর হ্যাঁ এখন মেরে দেয় তোকে তোর বাবার সাথে। তারপর বাপ ব্যাটা মিলে ওপারে গিয়ে করিস রিদ খান রিদ খান। শালা তোর কি মনে হয় আমি ওকে ব্যবহারের জন্য রেখেছি। হারামী বাচ্চা নিজের জিনিসে কারও নজর পছন্দ হয় না আচ্ছিস আমার জিনিস ছিনিয়ে নিতে। এবার জানটা হারা কেমন লাগে দেখ। আর হ্যাঁ আমি পৃপ্তীকে কিনে নিয়েছি এই আশ্রম থেকে। হারামীর বাচ্চা তোরা তো নারী পাচার করেই থাকিস এই আশ্রম থেকে তাহলে আবার আমার সাথে টক্কর নিস কিভাবে হুমমম?
.
উনার এমন কথা শুনে মূহুর্তেই মাথা গুড়িয়ে ওকে আমার। তার মানে আশ্রমের নারী পাচার হয়। আর এখন আমাকে পাচার করা নিয়ে কথা হচ্ছিল এতক্ষণ যাবত। তার মানে রিদ খানও আমাকে কিনে নিয়েছে এখান থেকে। উনি ফাদার মাদারও মীর্জা শেখ সাথে নারী পাচারে সামিল রয়েছে যৌথ ভাবে। রিদ খান শুধু আমাকে নিজের চাহিদা জন্য ব্যবহার করছে কথা ভেবেই কান্না ভেঙ্গে পরি আমি। আমার কান্না শব্দ যেন ওদের কানে পযন্ত না যায় তার জন্য নিজের দুহাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরি নিজের মুখ তারপর আস্তে করে দেয়াল ঘেঁষে বসে পরি জায়গায় কান্না করতে করতে। আমার এমন করা মধ্যে দিয়ে মাদার ওঠে দাড়িয়ে বলে উঠে……
.
—” শান্ত হন মিস্টার খান। আমরা দেখছি কি করা যায় এই মীর্জা শেখদের সাথে। মীর্জা শেখ আপনার ছেলে জন্য নাহয় পৃপ্তী সাথে দুটো মেয়ে কেয়া ও বর্ষার মধ্যে কাউকে নিতে পারেন আপনি।
.
মাদারের এমন কথায় উনি রাগে ঘুরে দাঁড়িয়ে মাদারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……
.
—” আমার কাজে এন্টাফেয়ার করা আমার মোটেও পছন্দ নয় মিসেস এথেন্স। আমাকে কি করতে হবে সেটা অবশ্যয় আপনি শিখাবেন না। আপনার কাজ হলো আমার পৃপ্তীকে দেখে রাখা আর সেটা পযন্ত আপনি সীমাবদ্ধ থাকুন। আমাকে অথযা আপনার ফালতু জ্ঞান দান করতে আসবেন না।
.
কথা বলে উচ্চ স্বরে চিৎকার করে বলে উঠে….
.
—” আসিফ, এই হারামী বাচ্চাটাকে নিয়ে দূর হ আমার চোখে সামনে থেকে। এর ব্যবস্হা আমি আজই করবো। এই বাপ ব্যাটা দুটোকে নিয়ে বিদায় হ সামনে থেকে।
.
কথাটা বলার সাথে সাথে মীর্জা শেখ ও জিসান শেখকে আসিফ ও বাকি চারজন বডিগার্ড মিলে ধরে নিয়ে যেতে চাই নিজেদের সাথে এতে করে জিসান শেখ ও তার বাবা রিদ খানের কাছে নিজেকে বাঁচানো জন্য চিৎকার করতেই থাকে আর রিদ খান তখনো রাগে গজগজ করতে থাকে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে। আসিফ ও বাকি সব বডিগার্ড যখন ওদের নিয়ে দরজা দিয়ে বের হতে নিবে তার আগেই আমি পর্দার আড়ালে থেকে ওঠে দাড়িয়ে দৌড়ে চলে আসি নিজের রুমে। কোনো রকম রুমে ঢুকে বুক ফাটা কান্না কান্না ভেঙ্গে পরি হাউমাউ করে। যাদের এতটা বিশ্বাস করেছি তারায় আমাদের নিয়ে ব্যবসা করে তার আবার এতটা জগন্না একটা কাজ করে কিভাবে? আর উনি উনাকে তো আমি ভালোবাসতে শুরু করে ছিলাম শেষ পযন্ত উনি আমাকে কিনেছেন ফাদারের থেকে টাকা দিয়ে নিজের শারীরিক চাহিদা মিটানোর জন্য………..
.
.
.
.
.
চলবে……….