আশার_হাত_বাড়ায় |১৫| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
121

#আশার_হাত_বাড়ায় |১৫|
#ইশরাত_জাহান
🦋
ঘর অন্ধকার করে একা বসে অহনার ছবি নিয়ে কান্না করছে অহি।ছবিটা দেখতে দেখতে বলেন,”কেনো করলি পাপ?তুই যদি চুরি ডাকাতি করতি আমি মা হয়ে তাও তোর জন্য প্রতিবাদ করতাম। হ্যাঁ মানছি আমি যে তুই আমার থেকে ভালোবাসা পাসনি।তোর বাবা তোকে ভালোবাসেনি।কিন্তু ফারাজ তো তোকে সেই দুঃখ কষ্ট দূর করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলো।আমাদের অবহেলা আমাদের দেওয়া কষ্ট দেখলি কিন্তু যে স্বামী তোকে ভালোবেসে তোর মনের মত চলতে চায় তার ভালোবাসা কেনো দেখলি না?যে মেয়ে তোকে দিনের পর দিন মা মা বলে কাছে পেতে চায় তাকে কেনো আগলে রাখলি না।মনের ভিতর জেদ রেখে তো অন্তত আমাকে দেখিয়ে দিতে পারতি যে মায়েরা কত ভালো হয়।ভালো দিকটা দিয়ে তোর বাবাকে দেখিয়ে দিতে পারতি তুইও তার মেয়ে।তোর মূল্য আছে এই বাড়িতে।ফারাজ তো তোকে সেই মূল্য দিতে চেয়েছিলো।তাহলে কেনো ঠকালি ছেলেটিকে?তোর এই পাপের জন্য আজ ভুগতে হচ্ছে সবাইকে।ভুগতে হচ্ছে তোর নিজেকেও।”

বলেই হাউমাউ করে কান্না করছেন অহি।মনে তার অনেক কষ্ট।আজ যদি তার বাবা মায়ের বাড়িতে মাথা গোজার জায়গা থাকতো তাহলে অহনাকে নিয়ে এখানে থাকতেন না।মেয়ের অবহেলা তাকেও কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।সে না চাইতেও আজ দায়ী এসবের জন্য।আজ মেয়ে কাছে নেই বলে তার কষ্ট দ্বিগুণ হয়ে গেছে।অহির কান্নার মাঝেই ওর কোল থেকে এক ঝটকায় অহনার ছবিটি নিয়ে নিচে ছুড়ে মারলো তিহান।অহনার ছবিটি টুকরো টুকরো হয়ে যায়।অহি সেদিকে তাকিয়ে আতকে ওঠে।তিহান কর্কশ কন্ঠে বলেন,”এমন বাজারের মেয়ের কোনো চিহ্ন আমি আমার ঘরে রাখতে চাই না।যে কি না নিজের সংসার তো নষ্ট করেই আবার এক অসহায় মেয়ের সংসারেও আগুন লাগিয়ে দেয়।”

মুখ ফুটে কিছু বলল না অহি।তিহান আবারও বলেন,”দিনে রাতে কি করেছো বলোতো?মেয়েকে কি সঠিক শিক্ষা দিতে পারেনি?তাহলে আজ বড় ভাইয়ের সামনে আমার মাথা নত হতে হতোনা।”

এবার চুপ থাকতে পারলো না অহি।চোখের পানি মুছে বলতে থাকে,”আমি আমার মেয়েকে সময় দেওয়ার সুযোগ কখন পেয়েছি বলতে পারো?মনে পড়ে পুরোনো অতীত?যেখানে তুমি আর তোমার ছেলেই সব।আমার মেয়েটা মাত্র ছয় মাসের শিশু।সবে নরম করে রান্না করা ভাত খাওয়া শিখেছে।তোমার ছেলে আমার মেয়েটার প্লেট কেড়ে নিয়ে ভাত ফেলে দেয়।আমি সামান্য একটু বকা দিয়ে প্লেট নিয়েছিলাম বলে আমাকে কম অত্যাচার করোনি।আমার শরীরে মারের দাগ উঠেছিলো সেদিন।আমি আমার মেয়ের জন্য জামা কিনলে তোমার ছেলের জন্য কেনো কিনিনি এটা নিয়েও অনেক অভিযোগ তোমার।কিন্তু আলমারি খুললে তোমার ছেলের জন্য জামা রাখার যেনো জায়গা থাকেই না।তার জন্য তোমরা পুরো পরিবার মিলে আমাকে শুনিয়েছিলে সৎ মা কখনও নিজের সন্তান ছাড়া বোঝেই না।মানা করেছিলাম বাচ্চা নিতে।এগুলো আমাকে কতটা ক্ষত বিক্ষত করতো আমি জানি।তুমি বাবা হয়ে শুধু এক সন্তানের প্রতি ভালোবাসা এনেছো।আমাকেও সেভাবে থাকতে দিয়েছো।আস্তে আস্তে আমার মেয়েটা আমার থেকে দূরে সরে যায়।আমার সাথে মিশতে চায় না।ওর জগৎ গড়ে ওঠে বাইরে।তোমাদের দেখেই তো ও শিখেছিলো বাইরের সমাজ।কখনও বাবা হয়ে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওনি।কখনও বাবা হয়ে মেয়েকে ঈদে একটা ড্রেসও দেওনি। যা করেছি আমি চুরি করে করেছি।বাবা নামে কলঙ্ক তো তুমি।তোমার থেকে তো এখন সৎ বাবাও ভালো।”

চোখমুখ শক্ত করে শেষের কথাগুলো বলে অহি। অহির এই তেজ দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যেই অহিকে মারতে যাবে ওমনি তিহানের হাত ধরে ফারাজ।ফারাজকে দেখে অহি মাথা নিচু করে নেয়।সবাইকে অসহ্য লাগলেও ফারাজের সামনে তিনি নিজেকে নিম্ন স্তরের মানুষ মনে করেন।কারণ তার মেয়েই যে এই মানুষটিকে ঠকিয়েছে।কণ্ঠে রাগ মিশিয়ে ফারাজ বলে,”কথায় কথায় বউ পেটানোকে কখনও আদর্শ পুরুষ বলে না।ওদেরকে বলে কাপুরুষ।বস্তির লোকেরাও এখন তোমার থেকে ভালো।ওরা অন্তত বউ শব্দটার মূল্য দেয়।কাকি আজ যেগুলো বললো এগুলো যদি আমি ওই সময়টাতে জানতাম তো তোমাকে নারী নির্যাতনের কেসে ঢুকিয়ে দিতাম।আর সেই পাওয়ার আমি আর আমার বাবা ধরে রাখি।”

ফারাজের কথায় কোনো উত্তর করে না তিহান।কিন্তু ফুঁসে আছেন তিনি নিজেও।ফারাজ এবার অহির দিকে তাকিয়ে বলে,”যতদিন বাঁচবে মাথা উচু করে বাঁচবে। যারা তোমাকে মূল্য দিবে না তাদেরকে মূল্যহীন বানিয়ে দেখিয়ে দিতে হয় যে তুমিও কোনো অংশে কম না।পৃথিবীতে জন্ম যখন হয়েছে পথ একটা না একটা হয়েই যায় কিন্তু অবহেলায় থাকলে জীবনে বেদনা থেকে যায়।যারা তোমাকে আজ মূল্য দিবে না নিরবে জীবন ভাসিয়ে দিলে মৃত্যু পর্যন্ত তোমাকে তারা মূল্য দিবে না।”

অহি এবার মাথা উচু করে তাকালো ফারাজের দিকে।ফারাজ সাহস দেখিয়ে বলে,”যতটুকু সময় বাঁচবে নিজের জন্য বাঁচবে।পারলে তোমাকে অবহেলা করা মানুষকে তার স্থান দেখিয়ে দিবে।দেখবে সেও তোমার কাছে মাথা নত করে থাকবে।”

এবার তিহান চেঁচিয়ে বলে ওঠেন,”ফারাজ!”

রক্তচক্ষু করে তাকালো ফারাজ।সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।মাত্র বাসায় ফিরেছে সে।কিন্তু এসেই এই ঝগড়া ঝামেলা কানে ভেসে আসে।সকালে অহির কথার মাঝে কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে ফারাজ।তাই এখন ছুটে ভাঙ্গা কাচের সাথে চিল্লানীর শব্দ পেয়ে আসে অহি ও তিহানের আলাপ শুনতে।ফারাজ এবার তিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,”নিজেকে অমানুষের কাতারে নামাতে আমার সাথে লাগতে আসবে না কাকা।আমি চুপ থাকার লোক না।জীবনে অনেক কিছু ফেস করে এসেছি।কিন্তু তোমার মত অমানবিক পুরুষ হতে পারিনি।আরে স্ত্রীর মন না পেলেও তাকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা অনেক চালিয়েছি।যখন দেখলাম জল গড়াতে গড়াতে বহু দূরে যায় তখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় আমার।মেয়ের দিকটা ভেবে আমি স্টেপ নেই।কিন্তু তোমার মতো বউ পেটানো স্বভাবটা রাখিনি।কারণ কি জানো?কারণ আমি কোনো অমানুষ নই।আমার যেনো কোনো সময় এটা মনে না হয় যে আমিও এক অপরাধী।আর যেখানে দোষ তোমার সেখানে কাকিকে কেনো কথা শোনাচ্ছো?তুমি কি তোমার বউকে সম্মান দিয়েছো?তুমি কি লোক সমাজে দ্বিতীয় বউকে মূল্য দিয়েছো?তুমি কি তোমার আপন সন্তানকে যে তোমার রক্ত তাকে স্বীকৃতি দিয়েছো?আমার একটা কথা উত্তর দেও তো অহনা যদি তোমার প্রথম স্ত্রীর তরফ থেকে হতো তাহলে কি তুমি পারতে অহনাকে অবহেলা করতে?তোমার কি উচিৎ ছিলো না যাকে তিন কবুল বলে নিয়ে এসেছো তাকে একটু মূল্য দেওয়া?তার স্থানটা তোমার হৃদয়ে রাখা।তোমার তূর্যকে যেমন আগলে রেখেছো সেভাবে কি অহনাকে আগলে রেখেছো?রাখোনি কখনও।এটা কাকির অভিযোগে স্পষ্ট বোঝা যায়।এই যে এতগুলো বছর পার করেছো জীবনে অনেক অভিজ্ঞতা পেলেও দিন শেষে তুমি এক অসহায় মায়ের নিরব অভিশাপ কুড়িয়ে নিলে।তোমার মেয়ে যতই নোংরা হোক না কেনো তার তরফ থেকেও তোমার উপর অভিশাপ এসেই গেছে।সময়ের অপেক্ষা শুধু।দেখবে একদিন তুমি তোমার কর্মফল পেয়ে গেছো।কেউ থেমে থাকে না।একদিন না একদিন প্রকৃতি তার প্রতিশোধ নিয়েই নেয়।”

ফারাজের কথায় চুপ হয়ে যায় তিহান।কোনো কথা বলার মুখ নেই তার।ফারাজ বিচক্ষণ মানুষ।যখন যা বলে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বলে।তার উপর কোনো যুক্তি চলে না।ফারাজ যেতে নিলে আবার ঘুরে দাঁড়ায় অহি আর তিহানের দিকে।অহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার জীবনে যেটা লেখা ছিলো ওটাই হয়েছে।ভালোবাসার দুর্বলতাকে জীবনের একটা আলাদা শিক্ষা হিসেবে আমি এই ঠকে যাওয়াটা নিয়েছি কাকি।তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তুমি একা কিভাবে আর পথ আগাবে।কিন্তু জীবনের বাকি পথ আমি তোমার সাথে আছি।তোমার এই ছেলে তোমার রাস্তা গড়ে দিবে।যদি নিকৃষ্ট ব্যাক্তির কাছে থাকতে না চাও তাহলে তোমার মিমি আছে।সে কিন্তু তার নানীকে অনেক ভালোবাসে।তার কাছে থাকতে পারো।আমি তোমার ইচ্ছার বাইরে কিছু করতে বলব না।শুধু বলব যাকে দেখলে রুচি মরে যায় তার নিকটে না থাকাটাই শ্রেয়।”

অহি এবার জোরে এক নিশ্বাস নেয়।তারপর ফারাজের দিকে এগিয়ে এসে হাত দুটো এক করে ক্ষমা চাওয়ার ইঙ্গিত করে।মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।কিন্তু চোখের পানি আর ঠোট চেপে রাখা দেখে বোঝা যায় সে কান্না আটকানোর চেষ্টায় আছে।ফারাজ আলতো হেসে বলে,”মেয়ের জামাই না আপন ছেলে হিসেবে দেখো আমাকে।আমি অন্যায়কে শাস্তি দেই কিন্তু তার নিকটবর্তী ব্যাক্তিকে না।যে দোষী না তার প্রতি ক্ষোভ এনে নিজেকে বিবেকহীন বানাতে পারব না।”

অহি চোখের পানি মুছে বেড়িয়ে যেতে নেয়। ফারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আমার জামা কাপড়গুলো সার্ভেন্ট দিয়ে মিমির ঘরে পাঠিয়ে দিবি বাবা।আমি এই ঘরে থাকতে চাই না।এই লোকের মুখ দেখলে আমার এখন ঘৃণা লাগে।”

বলেই চলে যায় অহি।ফারাজ একবার তিহানকে দেখে চলে যায় নিজ ঘরে।ঘরের ব্যালকনিতে এসে নিজ মনে তাকিয়ে আকাশ দেখতে থাকে ফারাজ।জীবনের হিসাব মিলাতে থাকে সে।অবশেষে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে আসে ঘরে।

********
আজ রিমলির ফোনে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে।শিহাব হাসান থেকে। রিমলি একবার ভাবছে একসেপ্ট করবে তো একবার ভাবছে একসেপ্ট করবে না।এভাবে করতে করতে মনের আবেগে ডান হাতের বুড়ো আঙুলটা কনফার্মে টাচ লেগে যায়।নিজ মনে একসেপ্ট হয়ে যায় শিহাব হাসান আইডি।এর ঠিক কিছুক্ষণ পর শিহাব আইডি থেকে এসএমএস আসে,”এত তাড়াতাড়ি আমাকে একসেপ্ট করে নিলেন!আমি তো ভেবেছিলাম লেখিকা ম্যাম আমাকে ঝুলিয়ে রাখবে।”

ম্যাসেজটি দেখে রিমলি কিছু একটা ভাবে।তারপর আলতো হেসে উত্তর দেয়,”কেনো আপনি কি খাটো।যে ঝুলিয়ে রেখে আপনাকে লম্বা বানাবো?

সিন দেখাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসে,”খাটো না আমি। এনাফ লম্বা আছি।একজন পুলিশ অফিসার হতে যতটুকু লাগে।”

রিমলি কোনো উত্তর না দিয়ে গুগল সার্চ দিয়ে দেখতে থাকে।ওর কোনো কিছু নিয়ে কনফিউশন থাকলে আগে দৌড় দিয়ে গুগলে।পুলিশ অফিসারের কিছু বর্ণনা দেখে ভালো লেগে যায় রিমলির।কিন্তু আইডি ফ্যাক হতে পারে তাই আর রিমলি কোনো উত্তর দেয় না।তারউপর রাত জাগা রিমলির অভ্যাসে নেই।সে তো গল্প পোস্ট করেই কিছু কমেন্ট দেখে ঘুমিয়ে যায়।

********
নিজেকে একটি নরমাল সালোয়ার কামিজ দিয়ে তৈরি করছে শ্রেয়া।মুখ ফুলিয়ে খাটে বসে দেখছে রিমলি।সৃষ্টি বেগম রান্না শেষে ওদের কাছে এসে রিমলির এমন অবস্থা দেখে জিজ্ঞাসা করেন,”কি রে তোর কি হয়েছে?”

চ শব্দ করে রিমলি বলে,”তোমরা মেয়ের গেটাপ দেখো।যেনো মিটিংয়ে না ভিক্ষা করতে যাচ্ছে।”

ঘুরে দাড়ালো শ্রেয়া।সৃষ্টি বেগম চোখ রাঙিয়ে বলেন,”চুপ কর ঠোঁটকাটা মেয়ে কোথাকার।”

হা হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে রিমলি বলে,”সত্যি কথাই তো বলেছি।ওর এক্স শশুর বাড়ি নাহয় বড়লোক নামের খয়রাতি ছিলো।তাই ওকে কিছু দিতো না।কিন্তু তুমি তো অনেক সুন্দর সুন্দর জামা বানিয়ে দিতে।ওগুলোর মধ্যে একটা পড়ে যাবে।কিন্তু না কি পড়ে যাচ্ছে!একদম মনে হবে হ্যান্ডসাম কোনো ছেলের পাশে তার বাসার কাজের বুয়া এসেছে।মানে একটু প্রটেকশন দিতে আর কি।”

সৃষ্টি বেগম ফোঁস করে শ্বাস নিয়ে বলেন,”তোর মুখ চলতেই থাকবে।জন্মের পর তোকে তেতো খাওয়ালে ভালো হতো।”

বলেই শ্রেয়াকে দেখতে থাকে সৃষ্টি বেগম।শ্রেয়াকে দেখে নিজেই ছোটখাটো একটা স্ট্রোক করলো।বলেন,”বোন তো ভুল কিছু বলেনি।আর এগুলো তো আমি তোকে বাসায় মেহমান আসলে পড়বি তাই বানিয়ে দিয়েছি।বাইরে যাওয়ার জন্য ভালো যে সেট দিয়েছি ওটা পর।”

নিজেকে দেখে শ্রেয়া বলে,”কিন্তু মা এই জামায় তো সুন্দর কাজ করা আছে। আর ওড়না সুন্দর লাগছে।নতুন তো এই জামা।”

সৃষ্টি বেগম শ্রেয়ার কাছে এসে বলেন,”সিনেমায় দেখিস না অফিসে কি সুন্দর সুন্দর জামা পরে।এটা যশোর না যে কলেজ কোচিংয়ে যাচ্ছিস যেকোনো একটা পরলেই হবে।এটা ঢাকা শহর।তোর যে ভালো জামা নেই এমন তো না।একটু ভালো জামা পর মা।”

মুখ ভেংচি দিয়ে রিমলি বলে,”আদিখ্যেতা দেখো।আমার বেলায় চিল্লাতে থাকে।বড় মেয়ের বেলায় আদর করে বলে।যেনো ওই আপন আমাকে কুড়িয়ে পাওয়া হয়েছে।”

এই কথাগুলো বলে রিমলি নিজে একটি সুন্দর জামা দিয়ে বলে,”বাবা মারা যাওয়ার আগে এই জামা বানানো।এখনও সেই রকম আছে।তুমি কত যত্নশীল আপু।”

বোনের মুখে হাত রেখে শ্রেয়া বলে,”তুইও হবি এমন।”

“আচ্ছা এবার এটা পরে আসো।তারপর মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য আমি তোমাকে সাজিয়ে দিবো।”

শ্রেয়া যায় জামা পাল্টাতে।সৃষ্টি বেগম চোখ ছোট ছোট করে রিমলির দিকে তাকিয়ে আছে। রিমলি এটা দেখে দাত বেড় করে হাসে।তারপর বলে,”এভাবে তাকিয়ে থেকো না মা।তুমি যেটা চাও আমিও সেটা চাই।এখন ওদের ভাগ্যের উপর নির্ভর করে।”

বলেই ইউটিউবে দেখতে থাকে অফিসে যাওয়ার জন্য কিভাবে সাজালে সাভাবিক সুন্দর লাগবে শ্রেয়াকে।সৃষ্টি বেগম রিমলির কাছে এসে বলেন,”তোর মনে ভালো লেগেছে ওই ছেলেকে?”

ভিডিও টেনে টেনে কোনো রকমে দেখে নিয়ে ফোনটা পাশে রেখে সৃষ্টি বেগমের কানের পাশে মুখ এগিয়ে ফিসফিস করে রিমলি বলে,”আসলে আমি দেখেছি আপুর বস অনেক কেয়ারিং পারসন আর ওই যে মিমি মেয়েটি ও তো আপু বলতে অজ্ঞান।যখনই আসে আপুর কোলে থাকে।ভালো না লেগে থাকতে পারে বলো?”

কিছুক্ষণ খুশি থাকলেও আবার মুখটা শুকনো করে সৃষ্টি বেগম বলেন,”না রে এমনটা হয় নাকি।কোথায় ওরা বড়লোক আর কোথায় আমরা গরীব।এটা পুরো বেমানান হয়ে যায়।ওদিকে না তাকানোই ভালো।বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানো মানাবে না।”

ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ আসে। রিমলি বুঝতে পারে শ্রেয়া বেড় হবে।কোনো রকমে উত্তর দিয়ে বলে,”সেটা তোমার ইচ্ছা।আমার কাছে যেটা মনে হলো আমি তাই বললাম।”

বলেই শ্রেয়ার দিকে তাকালো।বের হয়ে এসেছে শ্রেয়া। রিমলি এখন শ্রেয়াকে সাজাতে থাকে।একদিক থেকে রিমলি সাজিয়ে দেয় শ্রেয়াকে।আরেকদিক থেকে সৃষ্টি বেগম আলু ভর্তা ভাত একটি গামলায় মাখিয়ে দুই মেয়েকে খাইয়ে দেয়।এটা ছোটবেলার অভ্যাস এদের। গাড়ির হর্ন বাজানোর শব্দ কানে আসে শ্রেয়ার।শ্রেয়া বুঝে যায় তার সময় হয়ে এসেছে।ঢকঢক করে পানি পান করে মা আর বোনকে বলে দৌড় দেয়।সৃষ্টি বেগম দরজার কাছে এসে দেখতে থাকেন।ফারাজ আর একটা ড্রাইভার সামনে বসা।শ্রেয়া পিছনে বসতে যাচ্ছে। রিমলি এসে সৃষ্টি বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”এই যাহ!আমি কোথায় ভাবলাম সিনেমার মতো আপু সোজা তার বসের পাশে বসবে।এটা তো দেখছি সিনেমার চিন্তাকে হার মানাবে।”

সৃষ্টি বেগম কিছু না বলে চোখ রাঙিয়ে ভিতরে চলে যান। রিমলি মাথা চুলকিয়ে বলে,”আমি লেখিকা হয়ে আমার গল্পের নায়ক নায়িকা মিলিয়ে দেই।এদেরটা আমি মিস করলাম।তারমানে কি এরা একে অপরের জন্য না?”

চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here