তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ৫২

0
655

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৫২

.
🍁
—” আমাদের সত্যটা মানতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় কেয়া। কিছুতেই মানতে চাই না আর সেটাও আজ তোদের হচ্ছে সেটা আমার সাথে হয়েছে ছিল প্রথমে…….

.

বর্ষার এমন কথায় আমি ও কেয়া এক সাথে সাথে বলে উঠি…….

.

—” মানেহহ? তোর সাথে হয়েছে? কি বুঝাতে চাইছিস……

.

আমাদের কৌতুহল ভরা দৃষ্টি দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে তাকিয়ে রই বর্ষা। মন্ত হয়ে খানিকক্ষণ বসে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হঠাৎ আমাদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে………

.

—” তোদের হয়তো মনে আছে রিদ খান এর আগেও আমাদের তিন জনকে ঠিক একিই ভাবে ধরে এনেছিল জোর করে। আর সেই দিন আমাকে তিন দুই ঘন্টা রিদ খানের সাথে একটা বন্ধ রুমের ভিতর থাকতে হয়েছি। সেদিন কি হয়েছিল ঐ বন্ধ রুমের ভিতর আমার সাথে তা তোদের দুজনেই অজানা।

.

বর্ষার এমন কথায় মূহুর্তে কপাল কুচকে আসে আমার ও কেয়া। বর্ষার দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমি বলে উঠি……..

.

—” মানে? কি হয়েছিল সেদিন?

.

আমার এমন প্রশ্নে আবারও বর্ষা বলে উঠে…..

.

—” সেদিন যখন রিদ খান আমাকে বন্ধ দরজা ভিতর আটকি রাখে একা উনার সাথে তখন আমি পাগলের মতো চিৎকার করছিলাম উনার থেকে বাঁচার জন্য। আর এটা সেটা উনার দিকে ছুঁড়ে মারছিলাম যাতে উনি আমার কাছে আসতে না পারে। আমি ভয়ে এটাই আতংকিত হয়ে ছিলাম যে আমি এটাই লক্ষ করতে ভুলে গিয়ে ছিলাম যে উনি কখনো আমার কাছে এসে দাড়ায় নি বরং আমার থেকে বেশ দ্রুরে দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। আমি যখন লাগাতার উনার দিকে এটা সেটা ছুটে মারছিলাম কোনো ভাবেই আমাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। তখন একটা সময় উনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে রাগে এক ধমক দিয়ে বসে জোরে দূর থেকেই। আমি উনার হঠাৎ ধমকে ভয়ো চমকে চুপ করে যায়। আর শান্ত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে বুঝায়। যে উনি আমার কিছুই করবে না আমাকে শান্ত হয়ে উনার কথা গুলো শুনতে। আমি প্রথমে উনাকে বিশ্বাস না করলেও খানিকক্ষণ পর আমি নিজ থেকে উনাকে বিশ্বাস করতে শুরু করি। কারণ রিদ খান আমাকে আমাদের আশ্রমের সকল রেকর্ড দেখিয়ে যাচ্ছিল। যেটা দেখে আমি সাথে সাথে স্তব্ধ হয়ে যায়। উনি আমাকে ভিডিও করা রেকর্ড গুলো দেয়া উনার রুমের টিভির মধ্যে। যেখানে দেখা যাচ্ছিল, ফাদার, মাদার, মীর্জা শেখ ও তার ছেলে জিসান শেখ সাথে ভিন্ন পলিটিক্স এর লোক নারী পাচারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে ও কিভাবে আরও মেয়েদের সংগ্রহ করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করছে, কোনো একটা পার্টিতে খুব সম্ভবত রিদ খানের পার্টি হবে এটা। কারণ রিদ খান তোকে যেদিন উনার সুইমিং পুলের পানিতে ফেলে দিয়েছিল সেদিন ঘটনা ছিল এটি। কারণ আমি তোকে আর কেয়া পার্টি শুরু হওয়ার আগেই নিয়ে সেদিন চলে যাওয়াতে আমরা তিন জন্যই বেঁচে গিয়ে ছিলাম সেই দিনকার মতো। কারণ আমাদের সাথে আসা বাকি মেয়ে গুলোকে সেদিন পার্টিতে কেউ না কেউ কিনে নিয়েছিল পার্টিতে। আমরা তিন জনই পার্টিতে কারও চোখে পড়েনি। কিন্তু পৃপ্তী পড়েছিল রিদ খানের চোখে তাই রিদ খান সেদিন আমরা চলে আসার পর পৃপ্তী সকল খবর বেড় করে লোক লাগিয়ে। আর সেইটা ছিল আমাদের তিন জনেরই সুভাগ্য কিছু।

.

—” তারপর..? ( কৌতুহল চোখে আমি)

.

—” রিদ খান সবসময় দেশ বিদেশে থাকেন। সিলেট কখনো আসা হয় না। কিন্তু এই যাত্রায় আসেন কোনো ব্যবসায়িক প্রোর্জোক্ট এর জন্য। কারও সাথে শত্রুতার রেশ ধরে আসে তাকে মারতে এখানে এসেই জানতে পারে সেই ব্যক্তি ভিন্ন অপকর্মে সাথে জড়িত এমন কি নারী পাচার ও। রিদ খান মেয়ে প্রতি কোনো রকম ভালোবাসা না থাকলেও নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল প্রথম থেকে। মেয়েদের সম্মান করায় ভাবেন ব্যক্তিকে মেয়ে ফেললে হয়তো সবঠিক হয়ে যাবে বা নারী পাচার ও বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু রিদ খানের ধারণা ভুল প্রমান করে দিয়ে জানতে পারে এটা কোনো ছোট খাটু গ্যাগ নই বরং সিলেটের নামি-দামি পলিটিক্স লিটারা জড়িত এই কাজে। রিদ খান একদিন সকালে সেই ব্যাক্তিটিকে মারতে গিয়ে জানতে পারে এসব কিছু। আর সেদিন সকালেই পৃপ্তী তুই গিয়ে হাজির হোস সেখানে আর রিদ খান সম্পর্কে তোর মনে একটা বাজে ধারণা সৃষ্টি হয়।রিদ খান সেদিনের পর থেকে সবার সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে রাখে আর সঠিক সময়ে আসলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিচ্ছে মৃত্যুদন্ড। আর কারা কারা এই কাজে জড়িত আছে জানতে রিদ খান ও তাদের সাথে হাত মিলাই। সবিই ঠিক ছিল কিন্তু তোকে ভালোবাসার পর থেকে রিদ খানের ভয়টা আরও জেঁকে বসে তোকে হারানোর আর তার রেশ ধরেই সিলেট থেকে কোথাও যাওয়া ছেড়ে দেয়। এবং সময় তোর আশেপাশে থাকার চেষ্টা করতো। তোর আশেপাশে যেন কোনো পুরুষ বিরতে না পারে তার দায়িত্ব নিয়েছে মাদারকে ও আমাকে। আমাকে সেদিন উনার সহযোগিতা হিসাবে রেখেছিল। আমি উনাকে ভিন্ন সময়ে আশ্রমের ভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকতাম গোপনে। বেশ হেঁসে কথা বলার চেষ্টা করতাম ফাদার ও মাদারের সামনে। যাতে ওরা মনে করে আমি পুরুষদের প্রতি আসক্ত। বা আমার পুরুষের নেশা আছে। কারণ তারা সেটা মনে করলে আমাকে সহজ ভাবে নিবে প আমাকে একা মুক্ত ভাবে ছাড়বে কোথাও সেজন। সেটাও আমাকে রিদ খান বলেছিল করতে। আমাদের আশ্রমের আঠারো বছরের পর মেয়ে গুলো আর খুঁজে পাওয়া যায় না কেন তারা কোথায় যায় আমরা কেউ জানি না। ফাদার ও মাদারকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তারা বলে তাদের নাকি এই আশ্রম থেকে বিয়ে দিয়ে দূরে পাঠানো হয় তাদের স্বামী সাথে কিন্তু আজ পযন্ত আমরা কেউ কোনো মেয়েকে বিয়ে পর স্বামী নিয়ে আসতে দেখিনি। কারণ তাদের সবাইকে বিক্রি করা হয় দেশের বাহিরে। আমার আঠারো বছর হওয়ার আমাকে ও সেদিন বিক্রি করা হতো কিন্তু পৃপ্তী অবস্থা খারাপ থাকায় চলে এসেছিলাম আমি। আজকেও রিদ খান তোকে সেইফ রাখার জন্য ঐ মীর্জা শেখ ও তার ছেলে জিসান শেখের সাথে ফাদারের রুমে বসেছিল। তাদের যাতে সন্দেহ না হয় তার জন্য উনি তোর সাপোর্টে কিছু বলতে পারছিল না ফাদার ও মাদার সামনে। কিন্ত একটা সময় ঝগড়া রেশ ধরে রিদ খান সেখান থেকে আসিফ দিয়ে মীর্জা শেখ ও তার ছেলে জিসান শেখকে বেড় করে আনে মারার জন্য কারণ তাদের দুজনকে মেরে দিলে হয়তো আর বাকি কেউ থাকবে না এই পলিটিক্স এর মধ্যে। শুধু ফাদার ও মাদার ছাড়া এতদিন আমরা সতকতার সাথে চলে এসেছি কিন্তু আজ তোর পাগলামিতে হয়তো মাদার কিছু বুঝতে পেরেছে। আর যদি কিছু বুঝতে পারে আমাদের সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে যাহ এতদিন ধরে প্লেন করে এসেছিল।

.

বর্ষার শান্ত সুরে কথা গুলো শুনতে মূহুর্তেই হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পরি আমি। এতটা সত্য জানার পর আমার যেন কষ্টটা আরও দ্বিগুণ লাগছে। বুক ফাটা কান্না আসছে আমার উনার জন্য । কি করে পারলাম উনাকে নিয়ে সন্দেহ করতে। উনি আমার জন্য প্রতিনিয়ত কষ্ট করে আসছে আমার জন্য আর আমিই তাকে না জেনে কষ্ট দিলাম। কথাটা ভাবতে কান্না করে বসি আমি। আমি কান্না সিক্ত আঁটকে আসা কন্ঠে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি….….

.

—” উ উনি কোথায় এখন…….

.

আমার এমন কথায় বর্ষা নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে……

.

—” জিসান শেখ ও তার বাবাকে মারতে গেছে হয়তো……

.

কথাটি শুনে কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে বসে থাকি জায়গায়। তিন জনেই চুপ করে বসে থাকি জায়গায়। আমাদের কিছুক্ষণ মন্ত হয়ে বসে থাকার পর হঠাৎই কেউ হটহট শব্দ করে আমাদের রুমে দরজা কেউ খুলে দেয়। দরজা খুলার শব্দ কানে আসতেই চমকে উঠে সামনের দিকে তাকাতেই চোখে সামনে রিদ খানকে দরজা খুলতে দেখি। অনাকাঙ্ক্ষিত উনাকে দেখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে উনার কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি দৌড়ে গিয়ে উনার গলা জরিয়ে ধরি নিজের দুহাতে।আমার দুইপা ফ্লোর থেকে এক ফুট উচ্চতায় অবস্থান করছে। আমি এমন হঠাৎ জরিয়ে ধরায় উনি তাল সামলাতে না পেরে দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে একহাতে দেয়াল ধরে অন্য হাতে আমার কমর চেপে ধরে শক্ত করে………

.

( আর দুই তিন পর্ব মধ্যেই অতীত শেষ করে দিব)

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here