#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ৫৫
.
🍁
আমার এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝে হঠাৎ করে কিচেন রুম থেকে বর্ষার উচ্চ শব্দের চিৎকার ভেসে ওঠে আমাদের কানে। চিৎকারের শব্দ কানে আসতেই ঝটপট করে আমি ও কেয়া দ্রুততা সঙ্গে দৌড়িয়ে কিচেন দিকে যায় যে কি হয়েছে সেটা দেখার জন্য। কিন্তু আমি ও কেয়া কিচেন রুমের পৌঁছাতে চোখে সামনে যাহ দেখলাম তা জন্য আমি বা কেয়া মোটেও কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। এতটা ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মূহুর্তেই পাথর মূতিই রুপ হয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে পরি ভাবহীন চোখে………
.
চোখের সামনে বর্ষার নৃশংস দেহটা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়তে দেখে মূহুর্তে জমে যায় আমি ও কেয়া। বর্ষা নিজের মাথাটা দু’হাতে চেপে ধরে ফ্লোরে লুটিয়ে পরে কাতরাচ্ছে ব্যাথায়। বর্ষার রক্তে কিচেনের ফ্লোর ভেসে যাচ্ছে রক্তে মূহুর্তেই। বর্ষার এমনত অবস্থা দেখে আমি আর কেয়া জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি শকট খেয়ে। আমি আর কেয়া এতটা শকটে চলে যায় যে বর্ষাকে কে এই অবস্থা করলো তা দেখতেই ভুলে গেছি দুজনেই। আমাদের ঘুর ভাঙ্গে বর্ষার কাতরানো শব্দে শুনে। চিৎকার করে ফ্লোরে বর্ষার সামনে বসে বর্ষাকে আমার কোলে নিতেই, পাশ থেকে কেউ জোরে আমার মাথায় লট দিয়ে আঘাত করে শক্ত করে। লডে ভারি খেয়ে ফ্লোরে ছিটকে পড়তেই কেয়া বুক ফাটা চিৎকার শুনার জায় আমার জন্য। আমি ফ্লোরে আহ শব্দ করে উপুড় হয়ে পরে পিছন ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ল মাদারকে। মোটা লড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রক্ত লাল চোখে আমাদের তিন জনকে মারার জন্য। পুরো এলোমেলো অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে উনি কিছু সাথে যুদ্ধ করে এখানে পৌঁছায় আমাদের কাছে মারার জন্য। আর এখন মাদার আমার মাথায় আঘাত করেই কেয়াকে আঘাত করতে যাবে তার আগেই ভাগ্যবশত কিছুটা ঝুঁকে যেতেই কেয়া আর মাদারের সেই লটের ভারিটা লাগে কেয়া বাম পায়ের ওপর। আমাদের মতো কেয়াও সাথে সাথে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে। আমাদের তিন জনকে একসাথে ফ্লোরে লুটিয়ে পরতে দেখে মূহুর্তে তৃপ্তির ছেয়ে গেলো মাদারের চোখে মুখে। তিনি রাগে রি রি করতে করতে আমাদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললো………
.
—” তোদের তিনজনের জন্য আজ এত বছরের সাধনা আমাদের নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের তৈরি করা সব প্লেনিং নষ্ট করেছিস তোরা তিনজনই।
.
কথাটা বলেই আবারও উনার হাতে থাকা লডটা দিয়ে আঘাত করে আমাদের তিনজনের ওপর। আমরা ব্যাথায় চিৎকার করছি কিন্তু কোনো বডিগার্ড এগিয়ে আসছে না আমাদের দিকে। আমাদের তিনজনের বুক ফাটা চিৎকার শুনে মাদার আরও তৃপ্তিতা নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……..
.
—” আরও জোরে চিৎকার কর তোরা। তোদের চিৎকারে আমার শান্তি শান্তি লাগছে বড্ড। তোদের বাঁচানো জন্য একটা মানুষ আসবে না এগিয়ে, কারণ আমিতো রিদ খানের সব কয়েকটা বডিগার্ডকে অজ্ঞান করে এসেছি এখানে তোদের মারতে। যাতে আমার তোদের মারতে কোনো রকম সমস্যা না হয়। রিদ খানের চোখে পাকি দিয়ে এখানে বহু কষ্টে পৌঁছিয়েছি আর এতো সহজই তোদের ছেড়ে দিব হুমমম। তোদের মেরে আমি আমার স্বামী আত্মাকে শান্তি দিব।
আমার শান্তি চাই কারণ তোদের জন্য ঐ রিদ খান আমার স্বামী ও আমাদের সাথে থাকা সব পার্টনারদের মেরে ফেলেছে। আমাদের এত বছর ধরে করা আসা কালো ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে ঐ রিদ খান সব পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে প্রোফ সহ। তাই আমিও রিদ খানকে এত সহজে জিদতে দিব না। আমি যখন সব হারা হয়েছিল তখন রিদ খানকেও তোদের হারাতে হবে। বিশেষ করে এই পৃপ্তীকে। (আমাকে উদ্দেশ্য করে) রিদ খান তো তোকে ভালোবাসে তাই নারে পৃপ্তী। হুমম তাই আমি আরও আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তারপর কিছু বলেনি কারণ ভেবেছিলাম রিদ খান আমাদের পক্ষে আছে তাই যা খুশি করুক আমাদের কি? কিন্তু এখন যখন আমার সবশেষে রয়েছে তখন রিদ খানকেও তার ভালোবাসা হারাতে হবে।
.
কথাটা বলেই পর পর কয়েকবার আঘাত করে আমার শরীরের জোরে জোরে। আমি চিৎকার করছি আর ফ্লোরে কাতরাছি। কারণ ফ্লোর থেকে উঠতে পারছি না কিছুতেই আমার মাথায় আঘাত করার কারণে অনেক বেশি রক্ত ঝরছে মাথা দিয়ে। তাই বেশ একটা নড়াচড়া করতে পারছি না। আমার অবস্থা এবার বর্ষা ও কেয়া চেয়ে বেশ খারাপ হয়ে দাঁড়িয়ে। মাদার যখন ক্ষিপ্ত হয়ে লাগাতার আমাকে আঘাত করছিলো। কেয়ার অবস্থা আমার ও বর্ষার চেয়ে বেশ ভালো থাকায় তখন কেয়া কোনো রকম ভাঙ্গা পা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কিচেন থেকে ছোট সিলিংটা বুতল নিয়ে পিছন থেকে জোরে আঘাত করে মাদারের মাথায়। ভারি মারার সাথে সাথে চিৎকার করে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো মাথা চেপে ধরে। মাদার ফ্লোরে লুটিয়ে পরতেই কেয়া দ্রুত এসে আমাকে ধরে নিজের কোলের উপরে মাথাটা রাখে। কান্না করতে করতে আমাকে বলতে থাকে……….
.
—” পৃপ্তী তোর কিছু হবে না। আমি আছি তোর সাথে ভাইয়া এখুনি আসবে আমাদের তিনজনকে বাঁচাতে।
.
কথাটা বলেই কেয়া আঝোরে কান্না করতে থাকে আমাকে কোলে নিয়ে। কাতরানো অবস্থায় কেয়াকে বলছি বর্ষাকে দেখার জন্য। আর আমাকে ধরে অজোরে কান্না করছে কেয়ার এমন কান্নায় মধ্যে দিয়ে পিছন থেকে মাদার উঠে দাঁড়িয়ে সিলিংটা বুতলটা দিয়ে জোরে আঘাত করে কেয়ার মাথায়। কেয়াও ছিটকে পরলো ফ্লোরে আমার সাথে। আমি চিৎকার করে কেয়া ডাকতে ডাকতে মাদারের কাছে প্রাণ বিক্ষা চাচ্ছি আর বলছি কেয়াকে ছেড়ে দিতে আমাদের ছেড়ে দিতে। মাদারের মাথাটা ফেটে রক্ত ঝরছে কেয়ার ভারি মারাতে তারপর মাদার উঠে দাঁড়িয়ে সিলিং এর বুতল দিয়ে আঘাত করে কেয়ার মাথায়। মাদার রক্ত ঝরা মাথা নিয়ে রাগে বশবতী হয়ে আবারও এগিয়ে যেতে থাকে কেয়া মারার জন্য। কেয়ার দিকে মাদার এগিয়ে যেতে আমি উনার পা চেপে ধরি শক্ত করে যাতে কেয়াকে মারতে না পারে। আমার মাদারের পা চেপে ধরাতে আরও রেগে যায় মাদার তিনি আমার পেটের ওপর লাতি মেরে নিজের পা ছুটিয়ে নেন। আমি চিৎকার করে কেয়াকে পালাতে বলতে থাকি কিন্তু তার আগেই মাদার নিজের পা ছাড়িয়ে নিয়ে কেয়াকে আঘাত করতে যাবে তার আগেই বর্ষার পাশে ফ্লোরে পরে থাকা মাদারের হাতে লটটা দিয়ে ভারি মারে মাদারের পায়ে ওপর। মাদার আবারও ফ্লোরে লুটিয়ে পরতেই কেয়া রক্ত ঝরা মাথাটা নিয়ে উঠে বসে আমার পাশে। বর্ষার মাথায় রক্তে সারা শরীর ভেসে যাচ্ছিল তারপর আমাদের বাঁচাতে উঠে দাঁড়ায় লট হাতে। মাদার ফ্লোরে লুটিয়ে পরার পর বর্ষা পর পর কয়েকবার আঘাত করে মাদারের মাথায় সেই লটটা দিয়ে। আর চিৎকার বলতে থাকে……….
.
—” তোর মতো ডাইনি রাক্ষসী জন্য আজ আমাদের মতো নিস্পাপ মেয়েরা কলংক্ষিত। তোরা যুগে যুগে মেয়েদের দেহ নিয়ে ব্যবসা করে এসেছিস কখনো চিন্তা করেছিস কি যে সেই মেয়েটার কেমন লেগেছিল তোদের এমন করাতে। কখন চিন্তা করেছিস সেই মেয়ে গুলো এতো সাজানো গোছানো স্বপ্ন গুলো তোরা দিনে শত বার নষ্ট করেছিলি। পতিতালয় তাকা মানে বুঝতে চেয়েছিস কখনো কেমন ছিল একটা জন্য। নিজের দেহটা রোজ রোজ বাবার বয়সে লোকেরা ছিঁড়ে যাবে সেটা কেমন লাগে একটা মেয়ে জন্য কখনো ভেবে দেখেছিস হারামজাদি। তুই কে অন্যের জীবন নিয়ে খেলা করার হ্যাঁ তোদের জন্য কি আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছিল ঐ হারামজাদি।
.
কথা গুলো বলতে বলতে উড়াধুরা এলোপাতাড়ি মারতে থাকে বর্ষাকে। এতদিনের রাগটা যেন আজ কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না বর্ষা। নিজের ভিতর পুষে রাখা রাগটা সব এক সাথে বের হচ্ছে মাদারের ওপর। আর মাদার শুধু ফ্লোরে উপুড় হয়ে পরে চিৎকার করে লাগাতার। বর্ষার কথা গুলো শেষই কেয়া বর্ষাকে সাপোর্ট করে বলে উঠে………
.
—” বর্ষা থামিস না আজ। মার এই ব্যাটিকে মারতে মারতে মেরে ফেল এই মহিলাকে। তুই কান্ত হলে আমাকে বলবি আমি তোর হয়ে বাকিটা মারবো। তারপর ব্যাটিকে ছাড় দেওয়া যাবে না।
.
কেয়ার এমন কথায় তখন আপাতত আমাদের কিছু বলার ছিল না তবে আমি কোনো রকম কাতরাতে কাতরাতে কেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠি……..
.
—” আমি মারবো একে। আমার মারটা কে মারবে এই মহিলাকে কেয়া…..
.
মার এমন কথায় বর্ষার কোনো রকম ভাবান্তর না হলেও কেয়া বেশ চিন্তায় পড়ে যায় আমাকে নিয়ে যে আমার এতটা খারাপ অবস্থায় কি করে মারবো মাদারকে। আর যায় হোক একে তো মার হবে তাই না কারণ এই মহিলা আমাদের সবার সাথে খারাপ করেছে। কেয়া আমাকে উঠে বসিয়ে চিন্তিত চোখে ওপর থেকে নিচ পযন্ত দেখে নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…….
.
—” তোর অবস্থা তো বেশ খারাপ রে পৃপ্তী। কি করে তুই মহিলাকে মারবি হুমমম। আচ্ছা তোর সমস্যা নেই তোর হয়েও আমি এই মহিলাকে মেরে দিব কেমন। তুই চিন্তা করিস না।
.
কেয়া এমন অবুঝ কথায় তখন আমায় বড্ড শান্তি দিচ্ছিল কারণ আমিও মাদারকে মারতে পারবো তাই। আমিও কেয়ার এই কথায় সহমত পোষণ করে নিজের মাথা নাড়িয়ে সুমতি জানিয়ে বলে উঠি……
.
—” আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে তুই আগে আমার অংশেটা মারবি তারপর তোর অংশের টা কেমন।
.
আমার কথায় মূহুর্তে কেয়াও সহমত প্রকাশ করে। বর্ষা ও কেয়া এই মাদারকে পর পর আঘাত করতে করতে একটা সময় মাদার অজ্ঞান অবস্থায় ফ্লোরে পরে থাকে। মাদারকে নড়াচড়া করতে না দেখে থেমে যায় ওরা। হাতে থাকা লডটা কেয়া ফেলে দিয়ে আমাকে ধরে দাঁড় করায়। পিছন ফিরে এক পলক মাদারের দেহটা ফ্লোরে দেখে নিয়ে আমাকে ধরে ধরে কেয়া রুমে দিকে যেতে থাকে। কেয়ার মাথাটা ফেটে গেছে তারপরও তেমন এটা একটা গভীর হয়নি। আমার ও বর্ষা মাথা গভীর ভাবে ফেটেছে তাই এখনো রক্ত ঝরে থাকে। কেয়া ও আমার পা ও ভেঙেছে। তাই কেয়া ভাঙ্গা পা নিয়ে কোনো রকম আমাকে ধরে ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে তুলছে আর বর্ষা নিজে নিজেই কষ্ট করে জীমোতে আমাদের সাথে উঠছে। পিছনে ফিরে আর একটা বারের জন্য মাদারের দেহটার দিকে তাকায় নি যদি তাকাতাম তাহলে হয়তো আবারও বিপদের হাত থেকে বেঁচে যেতাম।
.
তিনজনই রুমে এসে বসি ফ্লোরের উপর। কেয়া ফাস্টেট বক্স এনে আমার কপাল পরিষ্কার করতে থাকে আর বর্ষা নিজের নিজেই নিজের রক্ত ঝরা বন্ধ করতে থাকে। আমার মাথা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হতেই তাকাই বর্ষার দিকে বর্ষা জীমাতে থাকে কপালে হাত রেখে। বর্ষাকে ডলতে দেখেই আমি আর কেয়া দ্রুত ধরে ফেলি বর্ষাকে। বর্ষার মাথায় বেন্ডেজ করতেই বিছানায় সাথে এলান দিয়ে ফ্লোরে বসায়। আমরা তিন জনই একিভাবে বসতেই আমার চোখে যায় টেবিলের ওপর আমার নীল ডাইরিটা ওপর। সেটা দেখেই কোনো রকম দুলতে দুলতে গিয়ে সেখানে বসে পরি আজকে ঘটনা গুলো লেখার জন্য। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে পর আর যদি লেখার সময় না পাই তো। সেটা চিন্তা ভাবনায় করে আজকে ঘটনা গুলো সবটা লিখে ফেললাম ডাইরিটাতে। আমার লেখার মধ্যেই আমার নাকের মধ্যে খুব তীক্ষ্ণ একটা গন্ধ লাগে খুব সম্ভবত গ্যাস ছাড়ার গন্ধ। আধা পনেরো মিনিট যাবত আমি ডাইরিটা লেখছি। আর এই পনেরো মিনিটের ভিতর হয়তো মাদার কিচেন রুমের গ্যাসের ছেড়ে দিয়েছে আমাদের পুরে মারার জন্য। আমি বিষয়টি বুঝতে পারার আগেই কেয়া ও বর্ষার বুঝতে পারে। তারা দ্রুততা সঙ্গে রুমে দরজা আটকিয়ে দিয়ে জালানা খুলে দিলে তাতে কোনো বিশেষ কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ সারাবাড়িতে আগুন লাগলে আমাদের রুটি এমনিতেই পুরে যাবে। আমরা তিন জনেই খুব ভয়াবহ কিছু সামনে দাড়িয়ে পেরেছিলাম তখন। কারণ আমরা এখন তিন তলার ওপর একটা রুমে আছি এখান থেকে নিচে নামতে নামতে নিশ্চিত মাদার আগুন লাগিয়ে দিব পুরো বাড়িতে। আর আমাদের তিনজনের পা ভাঙ্গা তাই দ্রুত গতিতে নিচেও নামতে পারবো না। আর এখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না কারণ গ্যাস সারাবাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে যেকোনো সময়ে আগুন লাগতে পারে। সবশেষে যদি এই তিন তলা থেকে লাফ দিতে যায় তাহলে তিন জনেই মারা পরবো কারণ আমার তিনজনেরই এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা এই অবস্থা লাফ দিলে নিসছিত মারা পরবো। আমি কথা গুলো চিন্তা করছি আর ডাইরিটাতে দেখছি রিদ খানের জন্য কারণ আমরা তিন জন মারা গেলেও যাতে উনি বুঝতে পারে আমাদের মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছে উনাকে কতটা মিস করছিলাম আমরা। আমার এমন চিন্তা করে উনার জন্য বুক চাপা কান্না করে খুব কষ্ট করে লেখি…….
.
—-” আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। নিজের চাইতেও অনেক বেশি আপনার জন্য বাঁচতে চেয়েছিলাম এই মাদারের সাথে লড়াই করেও। লাস্ট পযন্ত জানি না বাঁচতে পারবো কিনা। তবে আমি বেঁচে থাকতে আপনাকে জানাতে চেয়ে ছিলাম আমার এই ভালোবাসার কথাটা তা আর মনে কখনোই পারবো না। নিয়তির কাছে আমি হেরে গেছি। তবে আমার ডাইরিটা আপনার জন্য রেখে যাচ্ছি। আমার শেষ নিশ্বাস পযন্ত এখানে লেখা থাকবে। আপনার কাছে যেকোনো মূল্যেই আমি ডাইরিটা পৌছাবো কারণ নিয়তি নিশ্চয়ই আমার সাথে এতটা অবহেলা করবে না। আমাকে আপনার কাছে ফিরে না দিলেও আমার ভালোবাসার ডাইরিটা ঠিকই ফিরিয়ে দিবে। লাস্ট আপনাকে বলতে চাই ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি খুব বেশি ভালোবাসি আপনাকে।
……………..ইতি ভালোবাসার রিত………………
.
উনার জন্য এই মেছেজটা লেখই উঠে দাড়ায়। ডাইরিটা বুকের সাথে জরিয়ে ধরে। আর মনে মনে ঠিক করি এই ডাইরিটা তিন তলার ওপর থেকে জালানা দিয়ে বাহিরের বাগানে ফেলে দিব। এমন মনো স্থির করে ওদের দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল বর্ষা ও কেয়ার খুবই অস্তির ফেস। ওরা কি করে এখান থেকে বের হবে সেই চিন্তায় দুইজনেই কান্না করছে। কেয়া উচ্চ স্বরে কান্না করলেও বর্ষা ঢুকে ঢুকে কান্না করছে যাতে আমি আর কেয়া বেশি একটা ভয় না পাই। বর্ষা ভেজা চোখে নিয়ে করুন দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে দেয় আমাদের উদ্দেশ্য। বর্ষার হাতটা ছাড়িয়ে দিতে আমি ও কেয়া গিয়ে ঝাপটিয়ে ধরে বর্ষাকে হাউমাউ কান্না করতে থাকি। আমাদের কান্না করার মধ্যে দিয়েই বর্ষা শান্তনা সুরে বললো……….
.
—” প্লিজ বোনরা আমার কান্না করিস না। জীবনের শেষ পথে এসে এই কান্নাটা সাথে যেতে চাই না। আমার তিন জন্য সবসময় একসাথে ছিল কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি আর আজ ভাগ্যটা দেখ মরার সময় আমরা তিন জন একসাথেই থাকবো। এর চেয়ে বড় পাওয়া কি আছে বল। প্লিজ জীবনের শেষ মূহুর্তে আমরা তিন জনেই একসাথে থাকতে চাই ।
.
বর্ষার এমন কথায় আমি ও কেয়া আরও গভীর ভাবে বর্ষাকে জরিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠি। হাতে থাকা ডাইরিটা দেখে বর্ষাকে বলে উঠে……
.
—-” আমার হাতে থাকা ডাইরিটা আমার জীবনের শেষ কথা গুলো উনার জন্য বন্দী করা। তাই আমার এই ডাইরিটা উনার কাছে পৌঁছাতে চাই। উনাকে আমার ভালোবাসা পৌঁছাতে না পারলেও এই ডাইরিটা পৌঁছাতে চাই। আমার জীবন বাকি কথা গুলো লেখে এই ডাইরিটা জালানা দিয়ে ফেলে দিব। আমি জানি কেউ না কেউ ঠিক এই ডাইরিটা পৌছাবে উনার হাতে।
.
আমার এমন কথায় টলমলে চোখে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বর্ষাও কেয়া। বর্ষা কান্না জড়িত কন্ঠে চোখের ইশারায় সুমতি জানিয়ে আস্তে করে বলে উঠে……
.
—-” হুমমমমম……..
.
বর্ষার সুমতি পেয়ে আমি এখানকার সব ঘটনা গুলো চিন্তা করে লেখতে থাকি। আমার লেখার মধ্যে দিয়েই পুরো বাড়িতে সাথে সাথে আগুন লেগে উঠে দাউদ দাউদ করে। আগুনের মধ্যে দিয়ে চিন্তা করি জালানা দিয়ে কোনো রকম ডাইরিটা ফেলে দিব কারণ আমাদের রুমে তেমন একটা আগুন ছিল না তখন রুমে জালানা খুলা থাকায় গ্যাস তেমন একটা ছাড়ায় নি তবে পাচ মিনিটে মধ্যে হয়তো সব পুড়ে যাবে সাথে আমরা ও। কারণ বাড়িতে যে পরিমাণ আগুন লেগেছে এখান কেউ আসলেও আমাদের বাঁচাতে পারবে না। চারদিকে শুধু আগুন আর আগুন দাউদাউ করছে। মৃত্যুটা নিজের খুব কাছ থেকে দেখতে ডাইরিটা বন্ধ করে জালানা দিয়ে ফেলে দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয়। আর তখন কেয়া আর বর্ষাও কান্না করছিলো অঝোরে……
.
.
.
চলবে……….