#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৫৮ (২য় ভাগ)||
১২১।
থমকে আছে মুহূর্ত। নিস্তব্ধ চারপাশ। কারো মুখে কথা নেই। আফিফকে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আফিফা বেগম দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন। আহি আফিফা বেগমকে দেখে সালাম করলো। তিনি সালাম নিয়ে আহিকে জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমি কে? তোমাকে আগে কোথাও দেখেছি!”
আহি আফিফের দিকে তাকালো। আফিফ ভেতরে ঢুকে গেলো। হাত কাঁপছে তার। অকারণেই ঘামছে সে। কপাল মুছে নিজের রুমের দিকে যেতেই রেনু বেরিয়ে এলো। সে আফিফকে জিজ্ঞেস করলো,
“কে এসেছে?”
আফিফের গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরুচ্ছে না। রেনু ভাইয়ের চোখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। বাইরে থেকে আহি বলল,
“ওয়াসিফের আম্মুর সাথে কথা বলা যাবে?”
রেনু আহির কন্ঠ শুনে দরজার কাছে যেতেই চমকে উঠলো। আহি রেনুকে দেখে ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“ওয়াসিফ ভুলে হয়তো আমার একটা ডায়েরী নিয়ে এসেছে। একটু এনে দিন। আমি চলে যাচ্ছি।”
আফিফ ওপাশে দাঁড়িয়ে আহির কথাগুলো শুনলো। এরপর রুমে ঢুকে ওয়াসিফের ব্যাগে আহির ডায়েরীটা ঢুকিয়ে দিলো। রেনু আফিফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আহির হাত ধরে তাকে ভেতরে ঢুকালো। আহিকে কিছু বলার সুযোগটাও দিলো না। আহি ইতস্তত ভাব নিয়ে বলল,
“আমাকে ডায়েরীটা দিয়ে দিলেই আমি চলে যাবো।”
রেনু আহির কথার তোয়াক্কা না করে তাকে বসার ঘরে নিয়ে সোফায় বসালো। আফিফা বেগম রেনুর কান্ড দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। রেনু এবার আহির পাশে বসে বলল,
“এতো ফর্মালিটি কেন, আহি?”
আহি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আফিফের মুখোমুখি হতে চায় নি সে। তবুও আজ তাকে আফিফের সামনে এসে দাঁড়াতে হলো। নিশ্চয় আফিফ বিরক্ত হয়েছে। মনটা খচখচ করছে আহির। রেনু আহির মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল,
“তোমার খোঁজ নিতে চেয়েছি। ভাইয়াকে কতোবার বললাম, তোমার সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু করলো না।”
আহি রেনুর দিকে তাকালো। মলিন হেসে বলল,
“আমার খোঁজ কেন নেবে? আমার জন্য তোমাদের জীবনে এতো ঝামেলা হয়েছে।”
আফিফা বেগম বলে উঠলেন,
“তুমিই সেই আহি? আমার এজন্যই তো তোমাকে চেনা চেনা লাগছিল, মা। তুমিই ওই মেয়ে যে মেয়েটা আমাকে ফোন করতো, আমার ছেলের খোঁজ নেওয়ার জন্য।”
আহি চকিত দৃষ্টিতে তাকালো আফিফা বেগমের দিকে। ওই মুহূর্তেই আফিফ ভেতর থেকে রেনুকে ডাকলো। রেনু উঠে চলে গেলো। আফিফা বেগম আহির পাশে এসে বসলেন। আহির হাত ধরলেন আলতো করে। চোখ চিকচিক করে উঠলো তার। কাঁদো কাঁদো মুখ। কাঁপা কন্ঠে বললেন,
“আমি কতো চেয়েছি তুমি আমার ছেলের বউ হও। এতো মিষ্টি লাগতো তোমার কন্ঠ। বয়স হয়েছে, তাও আধো আধো মনে পড়ে।”
আহি হালকা হাসি ফেরত দিলো। আফিফা বেগমের কথাগুলো বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে তার। ওদিকে রেনু আফিফের সামনে এসে দাঁড়ালো। আফিফ রেনুর হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“এখানে আছে হয়তো!”
রেনু ব্যাগটা একপাশে রেখে বলল,
“ভাইয়া, চলো। সত্যটা জানাও।”
“কি জানাবো?”
“তুমিও ভালোবাসতে আহিকে।”
“না। কখনো না।”
“ভাইয়া, আহি তোমাকে এখনো ভালোবাসে।”
“তোকে কে বলেছে?”
“তুমি ওর চোখের দিকে তাকাও নি? যদি সত্যিই ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে কেন এতো লুকোচুরি? তোমাকে আবার হারিয়ে ফেলার ভয় কেন ওর চোখে?”
“তুই জানিস না, আহি কি করে। ও অনেক ভালো ছেলে ডিজার্ভ করে। আমি ওর যোগ্য না।”
আফিফের চোখে অশ্রু টলমল করছে। সে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
“আমি আহিকে কোনো মানসিক চাপ দিতে চাচ্ছি না। এই মুহূর্তে আহি যদি জানে আমি ওকে ভালোবাসি, খুব স্বার্থপর শুনাবে কথাটা। যখন ওর আমাকে প্রয়োজন ছিল, তখন আমি কোথাও ছিলাম না। আর এখন ওর সব আছে। আমার এই মুহূর্তে ওর সামনে দাঁড়ানোরও যোগ্যতা নেই।”
“ভালোবাসায় যোগ্যতা দেখে না, ভাইয়া। তুমি যদি আহির ভালোবাসা বুঝতে এই কথা বলতে না। সব মেয়ের ভালোবাসা পদ্মের মতো না। কিছু মেয়ে স্বার্থহীন ভাবেও ভালোবাসে। যেমন আহি। এখন মনে হচ্ছে, আসলেই আহিকে বোঝার সেই যোগ্যতা তোমার নেই।”
আফিফ রেনুকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। এরপর দেয়ালে হেলান দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“তুই বুঝবি না, রেনু। বুঝবি না আমার মধ্যে কি যাচ্ছে। আমি কতো বড় অপরাধী। আমি ওর পাশে ছিলাম না, যখন ওর একমাত্র আশ্রয় আমি মানুষটা হওয়া উচিত ছিলাম। শুধুমাত্র আমার জন্য, আমাকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে মেয়েটা এতো কষ্ট পেয়েছে। আমিই তো সব সমস্যার মূল। এখন তো আহি লিনাশাকেও পেয়েছে, ওর মা আছে। ক্ষমতা আছে ওর। যা ওর কাছে সেই সময় ছিল না। এই মুহূর্তে আমি ওর সামনে এসে যদি বলি, ভালোবাসতাম। স্বার্থপর শুনাবে কথাটা। অবশ্যই আমাকে বলবে, তখন কোথায় ছিল সেই ভালোবাসা? তখন কেন একলা ফেলে চলে গিয়েছিলাম? কেন পদ্মকে বিয়ে করে সংসার বেঁধেছিলাম? আহি কি বিশ্বাস করবে আমি সেই মুহূর্তে কতোটা অসহায় ছিলাম? যদি মনে করে মিথ্যে বলছি। আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। আর পদ্ম কি কখনো আহিকে বলবে, সে কতো বড় অন্যায় করেছে? পদ্ম না বলা পর্যন্ত আহি কি শুধু আমার কথায় বিশ্বাস করবে, আমি সেই মুহূর্তে কোন অবস্থায় গিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম?”
(***)
রেনু আহির সামনে এসে ব্যাগ থেকে ডায়েরীটা বের করতেই আহি সেটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। রেনু বলল,
“একটু বসো।”
আহি ভেতরের দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,
“না, আমি কাউকে বিরক্ত করতে আসি নি। আমি তো জানতামও না, এটা পদ্মের স্বামীর বাড়ি। ভালো থাকবেন আপনারা।”
রেনু আহির পথ আটকে দৃঢ় স্বরে বলল,
“এটা পদ্মের স্বামীর বাড়ি না।”
আহি ভ্রূ কুঁচকে বললো, “মানে?”
“তুমি জানো না, পদ্ম আর ভাইয়ার পাঁচ বছর আগে তালাক হয়ে গেছে?”
কথাটা শুনে আহি ভীষণ অবাক হলো। বিষ্ময়ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”
রেনু তার গলার উড়না সরিয়ে দিলো। আহি রেনুর ঝলসে যাওয়ার বুকের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কীভাবে হলো এটা?”
“তুমি কি বিশ্বাস করবে আমার কথা?”
“কেন বিশ্বাস করবো না?”
“তোমার বান্ধবী পদ্ম আমাদের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে।”
পদ্ম কীভাবে ছল করে আফিফকে বিয়ে করেছে। কীভাবে রেনুকে নিয়াজীর সংসারে আটকে রেখেছিল। কীভাবে তাজওয়ারের সাথে মিলে আফিফ আর আহিকে আলাদা করেছে, সবটাই জানালো রেনু। আহি সব শুনে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। রেনু আহির পায়ের কাছে বসে বলল,
“আমার ভাইয়া আমার সামনে কাঁদে নি। মানুষটা এতোটা চাপা স্বভাবের। সব চুপচাপ সহ্য করে গেছে। আমাকে, মাকে কিছু জানায় নি। তোমার বিশ্বাস হবে না হয়তো আমার কথা। পদ্ম তোমার ছোটবেলার বান্ধবী। তাই ভাইয়া ভয় পায়। তুমি বিশ্বাস করবে না। তাই তোমার সামনে যায় নি। কতোবার বলেছি চট্টগ্রাম গিয়ে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে। আমি অসুস্থ, নয়তো আমিই যেতাম। তোমার ফোন নম্বর ভাইয়ার কাছে আছে। তোমার কলের অপেক্ষায় ছিল। তুমি হয়তো ফোন দেবে। গত পাঁচ বছরে সিমটা চেঞ্জ করে নি ভাইয়া।”
আহি চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। রেনু বলল,
“আমার ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে, আহি।”
আহি দ্রুত পায়ে বাসার বাইরে বেরিয়ে এলো। আহি চলে যেতেই রেনু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মিনমিনিয়ে বলল,
“হয়তো আমিই ভুল ছিলাম।”
(***)
আহি সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো। ঘোরের মধ্যে হাঁটছে সে। বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো ডায়েরীটা। নিচে নেমে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আফিফ। আহি হুট করে চার তলার বারান্দার দিকে তাকালো। আফিফ সরে গেলো সাথে সাথেই। আহি বারান্দার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমাকে বিশ্বাস করবো না আফিফ? কীভাবে ভাবলে তোমাকে বিশ্বাস করবো না? যখনই ভালোবাসার সংজ্ঞা জেনেছি, তোমাকেই ভালোবেসেছি। আর ভালোবাসার মানুষকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছি। তোমাকে জেনেই তো তোমার প্রেমে পড়েছি। কীভাবে অবিশ্বাস করবো তোমাকে? আমি পদ্মকে জিজ্ঞেস করবো, কেন কেঁড়ে নিয়েছে আমার কাছ থেকে আমার প্রিয় অলকানন্দকে। আমি জিজ্ঞেস করবো। ওকে আমার অপ্রিয় বর্ষার রাতের প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। যেই পদ্ম আফিফের অপ্রিয়, সে আমার প্রিয় কখনোই না।”
১২২।
আহি বাসায় ফিরতেই পুষ্পকে দেখে অবাক। পুষ্প আহির গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আন্টি আর নানু কক্সবাজার এসেছে ভাবলাম দেখা করতে আসি।”
“হুম। ভালো করেছিস।”
“আমি একা আসি নি। উজ্জ্বল ভাইয়া আর চাচীও এসেছে।”
আহি থতমত খেয়ে গেলো বেশ। ভেতরে ঢুকেই উজ্জ্বলকে দেখে মুচকি হাসলো। এরপর সে মায়ের দিকে তাকালো। সালমা ফাওজিয়ার ঠোঁটে রাজ্য জয়ের হাসি। নিশ্চয় মা বিয়ের জন্য আজ তাকে পীড়াপীড়ি করবে। আহি এসব পরিস্থিতিতে পড়তে চায় না। সে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। ব্যাগ বের করে গুছিয়ে নিলো। তিন দিনের যাত্রা। উদ্দেশ্য, পদ্মের বাড়ি যাওয়া। লিনাশাকেও মেসেজ করে দিলো। লিখলো,
“পদ্মের সাথে অনেক বোঝাপড়া বাকি। পাশে থাকলে তুই পুষ্পকে নিয়ে চলে আসিস। আমি ঠিকানা বলে দেবো।”
আহি উজ্জ্বলের সামনেই বেরিয়ে এলো। উজ্জ্বলের বেশ খারাপ লাগলো। একটু কথাও বললো না? গাড়িতে উঠতেই পুষ্পের কল। আহি রিসিভ করতেই বলল,
“আমাকে অপমান করলি তুই।”
“তুই আর তোর জামাই আমার বাসায় ওয়েলকাম। উজ্জ্বল সাহেবও ওয়েলকাম। কিন্তু ঘটক আর পাত্রদের আমি ওয়েলকাম করি না। আমার পথের কাঁটা এরা।”
কথাটা বলেই আহি কল কেটে দিলো। ড্রাইভারকে বললো ঠিকানা। কয়েক ঘন্টার পথ। আহি ফোনের স্ক্রিনে আফিফের নম্বরটির দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে,
“এতো অপেক্ষা কেন করেছো, এআর? আমার মতো একবার না হয় বেহায়া হয়ে দেখতে। আমি কিন্তু তোমাকে ফিরিয়ে দিতাম না।”
এদিকে আফিফ থম মেরে বসে আছে মেঝেতে। রেনু ধীর পায়ে ভাইয়ের রুমে এসে তার পাশে বসলো। আফিফ মলিন হেসে বলল,
“আমি বলেছি না, ও আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না। আর পদ্ম ওকে সত্যটা বলবে না।”
রেনু ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“মন মানছে না ভাইয়া। আহির চোখে তোমার প্রতি সেই ভালোবাসা এখনো কীভাবে আছে?”
“ভালোবাসা হয়তো পাঁচ বছর আগেই আমি হারিয়ে ফেলেছি। এরপর হয়তো আমাকে নিয়ে সে ভাবেই নি।”
পরক্ষণেই আফিফের মনে প্রশ্ন জাগলো, তাহলে ডায়েরীটা এখনো কেন যত্নের সাথে রেখে দিয়েছে আহি?
(***)
পদ্মের বাড়িতে এসে অবাক হলো আহি। বাড়িতে তোড়জোড় চলছে। সবাই ব্যস্ত। আহি উঠানে এসে দাঁড়াতেই পদ্মের আপাকে দেখলো। আহিকে দেখে বেশ অবাক হলেন তিনি। ছুটে এসে বললেন,
“আহি, তুমি?”
আহি আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“এতো আয়োজন? কোনো প্রোগ্রাম হচ্ছে?”
“তোমাদের সাথে তো কোনো যোগাযোগ রাখে নি পদ্ম। তাই হয়তো জানো না। পদ্মের আগের সংসার ভেঙে গেছে। আজ ওর দ্বিতীয় বিয়ে।”
আহি চমকে উঠলো। আপা বললেন,
“আজ সকালেই হ্যাঁ বললো। এরপর বাবা তাড়াতাড়ি আয়োজন করে ফেললেন। একটু পর আক্দ। তারপরই রাতে উঠিয়ে দেবে।”
আহি কিছু বলার আগেই পদ্মের আপা আফসোসের সুরে বললেন,
“মা হতে পারবে না, তাই আমার বোনটাকে ছেড়ে দিয়েছে।”
আহি ক্ষীণ কন্ঠে বলল, “শুধুই কি মা হতে না পারা?”
“আর নয়তো কি!”
“পদ্মকে জিজ্ঞেস করেন নি?”
পদ্মের আপা থমকে গেলেন। তিনি হয়তো জানতেন না, আহি সব সত্য জেনেই এসেছে। মাথা নিচু করে বললেন,
“তোমরা ওর ছোটবেলার বান্ধবী। তোমরা ওকে ভালো করেই চেনো। তোমার কি মনে হয়, পদ্ম কোনো খুনীর সাথে যোগাযোগ করবে? আমার বোনটা না-কি নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছে।”
“আপু, আপনি কিছু জানেন না হয়তো। আমি আক্দ শেষে পদ্মের সাথে দেখা করবো। আমি চাই না, ওর অতীত ওর সুন্দর মুহূর্তে এসে বাঁধা হয়ে দাঁড়াক।”
পদ্মের আক্দ শেষেই আহি তার সামনে এসে বসলো। পদ্ম আহিকে দেখে চমকে গেলো। আহি সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,
“আফিফকে কেন আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়েছিলি?”
পদ্ম চুপ করে রইলো। আহি আবার জিজ্ঞেস করলো,
“ছোটবেলার বান্ধবী আমরা। অনেক ভালোবাসতাম তোদের। তাহলে আমার ভালোবাসা কেঁড়ে নিয়েছিলি কেন?”
পদ্ম কাঁপা কন্ঠে বললো,
“মিথ্যে কথা। আমি কেন কেঁড়ে নেবো? আফিফ তো আমাকে ভালোবাসতেন। আমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছেন।”
“তাহলে তোকে ছেড়ে দিলো কেন?”
“তুই কি জানিস না উনার মা কেমন মহিলা? যখন জেনেছেন, আমি ধর্ষিতা তখন আমাকে মেনে নিতে চাচ্ছিলেন না। আফিফকে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। আফিফ বাধ্য হয়ে আমাকে ছেড়েছেন।”
“তোর কি মনে হয়, আমি সত্য না জেনে এসেছি?”
“তোর কাছে কোনো প্রমাণ আছে?”
“তাজওয়ার আমাকে বলেছিল।”
পদ্ম থতমত খেয়ে বলল,
“কখন? কখন বলেছে? ও তো মারা গেছে।”
“একটা রেকর্ড করেছিলো আমার জন্য। দু’দিন আগে পেয়েছি।”
পদ্ম থমকে গেলো। আহি পদ্মের বিমর্ষ মুখখানা দেখেই হাসলো। তার বানোয়াট কথা বিশ্বাস করে ফেলেছে পদ্ম। মেয়েটা আসলেই বোকা। বোকা প্রেমিকা যখন প্রেমে ভুলভাল কাজ করে, তখন তার জীবনের পরিণতি হাস্যকর হওয়ায় স্বাভাবিক। আহি বলল,
“এমনটা আমার সাথে না করলেও পারতি।”
পদ্ম ক্ষীণ কন্ঠে বলল,
“হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি। কিন্তু আমিও ভালোবেসেছি। আমার জায়গায় তুই হলে, এমনটাই করতি।”
“যদি আমি তোর মতো হতাম, আফিফ অনেক আগেই আমার হতো।”
“কখনোই হতো না, কারণ আমার সাথে উনি রেনুর জন্য আটকে ছিলেন।”
“আমার ক্ষমতা ছিল, রেনুকে বের করে আনার।”
“আফিফ ভিতু। উনি ভেবেছেন, তোকে পেতে চাইলে, তোর জীবনটা এলোমেলো করে দেবে তাজওয়ার। কারণ তাজওয়ার আফিফকে হুমকি দিয়েছে, সে যদি সরে না যায়, তাহলে তাজওয়ার তোর সাথে ঠিক তেমনই করবে, যেমনটা আফিফের বড় আপুর সাথে করেছে।”
“আমি আহি। আমি হেরে যাই না। হারিয়ে দেই। হারিয়ে প্রমাণ করেছি। শেষ জয়টাও আমারই হবে। আফিফকে পাওয়ার একমাত্র কাঁটা আমাকে সরাতে হয় নি, আল্লাহ নিজেই সরিয়ে দিয়েছেন। দেখ, কে কেঁড়ে নিয়েছে, আর কার ভাগ্যেই লেখা ছিল। তুই তো চুরি করেছিস। চুরির কোনো কিছুই হজম হয় না।”
পদ্ম আহির সামনে হাত জোড় করে বলল,
“ক্ষমা করে দিস। তোর এখন কোনো কিছুর অভাব নেই। আর আমার তো অভাবের শেষ নেই। আমার জন্য আফিফকে ছেড়ে দে।”
“যখন আমার জীবনে সবকিছুর অভাব ছিল৷ আমি নিঃস্ব ছিলাম। তখন কি তুই আফিফকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলি?”
“তখন আমি ওর স্ত্রী ছিলাম।”
“আর এখন তুই অন্য কারো স্ত্রী। আফিফ একা, আমার মতোই। আর দু’জন নিঃসঙ্গ মানুষ একে অপরের জন্য পারফেক্ট।”
“আমি ওই লোকটাকে ছেড়ে দেবো।”
“ছেড়ে দিস। ডিভোর্স হতেও তিন মাস সময় লাগে। মাত্র তো বিয়েই হলো। আর আমাদের এক হতে সময়ও লাগবে না।”
“আহি, প্লিজ। এমন করিস না।”
“কেন?”
“আমি ভালোবাসি আফিফকে।”
“আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসলে, আজ আফিফ তোরই থাকতো। খাদ ছিল, তাই হারিয়েছিস।”
চলবে-