রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া ২৭

1
1110

রিদ-মায়ার প্রেমগাঁথা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া

২৭
[ কপি করা নিষেদ্ধ ]

গ্রীষ্মকালীন তপ্ত রোদে গা জ্বলা ভাব। অল্পতে গায়ে আগুন লাগার মতোন তাপমাত্রা। যান্ত্রিক শহরের কর্মজীবি মানুষজন এতটাই ব্যস্ত যে তপ্ত রোদের প্রখরতা বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি তাদের ব্যস্ততায়। বরং চাকরিজীবী শুরু করে রিকশাওয়ালা পযন্ত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদের রোজকার কর্মে ব্যস্ত। এমন একটা কাঠফাটা তপ্ত রোদ মাথায় নিয়েই ঢাকা বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স শপিং মহলে সামনে উপস্থিত হলো আরিফ। সঙ্গ তার তিন-বোন। মুক্তা, মায়া, জুই। মূলত আজ মুক্তার বিয়ের শপিং। আর তার জন্য ফাহাদের পরিবার থেকে ডাক পরেছে ওদের। বিয়ের মাত্র আর পাঁচদিন বাকি। অথচ এখনো বিয়ের শপিং করা হয়নি বলে জরুরি তলবে মুক্তাকে নিয়ে ঢাকায় আসতে হয়েছে আরিফকে। প্রথমে ফাহাদ যেতে চেয়েছিল আশুগঞ্জ থেকে মুক্তাকে নিয়ে আসতে কিন্তু আরিফ বড়ভাই হিসাবে ফাহাদকে আসতে মানা করল সে নিয়ে যাবে বলে। আসল কথা বিয়ের কেনাকাটা কনে পক্ষের বাকি। এবার হাতে হাতে তারাও বিয়ের কেনাকাটা করে ফেলতে চাই আজ। আরিফ মলের বাহিরে পার্কিং এরিয়াতে আসতে দেখা পেল খান পরিবারের মানুষদের। ফাহাদের পরিবার হতে শুরু করে হেনা খান, আরাফ খান সকলেই উপস্থিত। তোড়জোড় করে যে সবাই চলে এসেছে শপিংয়ে সেটা বুঝতে বাকি নেই আরিফের। আরিফ হেনা খানদের উদ্দেশ্য এগিয়ে যেতে যেতে এক পলক তাকাল উপস্থিত সকল সদস্যের দিকে। খান বাড়ির মহিলা সদস্যদের মধ্যে সবাই উপস্থিত আছে কেউ বাদ পরেনি। শুধু ছেলেদের সংখ্যা কম দেখল গুটি কয়েক বডিগার্ড আর পাঁচজনের মতোন পুরুষ মানুষকে চোখে পরলো শুধু। তাদের মধ্যে আরাফ খান, বর হিসাবে ফাহাদ, বাকি তিনজন তাগড়া ছেলেদেরকেও আরিফ চেনে। চোখের দেখা দেখেছিল কয়েকবার ছেলেগুলোকে। এক দুইবার কথাও হয়েছিল। সোহাগ, সৌরভ আরাফ খানের বড় মেয়ের দুই ছেলে। তাঁরা জমজ আরিফের পাশাপাশি বয়স। বাকি একজন ফাহাদের ছোট ভাই সুমন। এবার অনার্স কমপ্লিট করে মাস্টার্সে পড়ছে। আরিফের দুই বছরের জুনিয়র। এছাড়া আরিফের আর কাউকে চোখে পরলো না। এমনকি রিদ, রিদের বাবা, মা, ভাইকেও না। আরিফ জানে রিদ খানের মতোন মানুষ কক্ষুনো এসব মেয়েলি শপিংয়ে আসবে না। কিন্তু রিদের মা আর ছোট ভাই রাদিফের অনুপস্থিতি কারণটা বুঝল না সে। তাঁরা তো আসতেই পারে নাকি? তাছাড়া আয়ন ভাইকে আশেপাশে কোথাও চোখে পরলো না আরিফের। কিন্তু আয়নের মা-বোনকে ঠিকই দেখা যাচ্ছে হেনা খানের পাশে। আরিফ খান পরিবারের সাথে মিলিত হতেই নম্রতা নিয়ে সকলের সঙ্গে কৌশল বিনিময় করল। মুক্তা পা ছুঁয়ে শশুর বাড়ির গুরুজনদের সালাম করলো এর মাঝেই। অন্তত খুশি মনে মুক্তাকে গ্রহণ করলো হেনা খান। মায়া জুইকেও বেশ আদুরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি। সবার যখন ভালো মন্দ কুশলাদি পর্ব শেষ হলো তখন সবাই একত্রে ঢুকলো মলের ভিতরে। হেনা খান, নিজের মেয়েদের নিয়ে মুক্তার জন্য একেকটা সেকশন থেকে একেকটা জিনিস কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পরলে আরিফ আরাফ খানকে জানিয়ে মায়া আর জুইকে নিয়ে আলাদা হয়ে গেল নিজেদের কেনাকাটা করতে। পরিবারে মা,বাবা ভাই, বোন, চাচা, চাচি, সঙ্গে আত্মীয়ধর মেয়েদের হলুদের শাড়ি গহনাপত্র সবকিছু আরিফ মায়া আর জুইয়ের পছন্দের কেনাকাটা করছিল ঠিক তক্ষুনি আরিফের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে করতে কোথা থেকে শপিং মলে হাজির হয় চেয়ারম্যান সাহেবের বড় ছেলে নাদিম। আরিফ আগে থেকে জানতো নাদিম আসবে। নাদিম নিজের স্কলারশিপের ভিসার দৌড়াদৌড়ি জন্য ঢাকা থাকছে নিজেদের ফ্ল্যাটে। সেজন্য আরিফের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই মূহুর্তে চলে আসল শপিংমলে। চলে আসল বলতে নাদিমকে আলাদা ভাবে দাওয়াত করা হয়েছে আরিফদের পরিবার থেকে। মূলত মুক্তার বিয়ের জন্য মায়ার পরিবার থেকে বিশেষ ভাবে চেয়ারম্যান সাহেবের পরিবারকে দাওয়াত করা হয়েছে। আর সেজন্য চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়ির মানুষজনের টুকটাক যাতায়াত বেড়েছে মায়াদের বাড়িতে। মায়া-জুই এসবের কিছু জানে না। আর না কেউ তাদের এসব বিষয়ে অবগত করেছে। নাদিমের সঙ্গে আরিফের মলের ভিতরে দেখা হতে নম্রতায় হাত মিলিয়ে সালাম দিতে দিতে নাদিম বলল…

‘ ভাইয়া ভালো আছেন?
‘এইতো আলহামদুলিল্লাহ তুমি?
‘ জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ আছি। আব্বু পাঠাল আমাকে। বলল আপনারা এখানে এসেছেন, আপনাদের খেয়াল রাখতে। আসতে রাস্তায় কোনো অসুবিধা হয়নি তো ভাইয়া? আঙ্কেল আন্টি, বাসার সবাই ভালো আছেন?

সৌজন্য বজায়ে আরিফও হাসলো। নাদিম আরিফের চেয়ে বছর দুইয়েকের ছোট হবে। অথচ ব্যবহারের সে বরাবরই মুগ্ধ হয়। তবে আজ এখানে নাদিমকে আসতে অনুমতি দেওয়ার কারণ হলো সে ক্ষুতিয়ে দেখতে চাই নাদিম মায়ার জন্য কতটুকু ভালো হবে। তাছাড়া বিয়ে ঠিক হওয়া পর পাত্র হিসাবে আজকাল ছেলেমেয়েদের মতোন অশালীন হয়ে পরবে মায়ার সাথে নাকি সত্যি ভদ্রতা বজায় রেখে চলবে সেটার জন্যই আরিফ আজ সারাদিন নাদিমকে নিজেদের সঙ্গে রাখবে বলে ঠিক করলো। তাছাড়া আজকাল লোক দেখানো ভদ্রতা সবাই দেখায়। তবে চোখের দেখা ভদ্রতা যে সবসময় সঠিক হবে এমনটাও না। সে তার আদুরে বোনকে এভাবে কারও হাতে তুলে দিব না যতক্ষণ না পর্যন্ত আরিফের মনের খচখচ দূর হচ্ছে ততক্ষণ পযন্ত।

‘ আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে। তবে আমাদের আসতে রাস্তায় তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু তুমি এসেছো ভালো হয়েছে। চলো সামনে যায়। ওরা সবাই সামনের দোকানে আছে।
‘ জ্বি চলুন।
আরিফ নাদিমের সঙ্গে সামনে হাঁটতে হাঁটতে জানতে চাইল..
‘ তোমার পরিবার কেমন আছে নাদিম।
‘ জ্বি ভাইয়া,আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।
‘ তোমার স্কলারশিপের কি হয়েছে?
‘ ভিসা প্রসেসিং কাজ শেষ। আশা করছি সামনে মাসের দশ তারিখে ভিতরে ফ্লাইট পরবে।
আরিফ ঘাড় বেঁকে তাকাল নাদিমের দিকে। তীক্ষ্ণ গলা বলল…
‘ আজকে তো ষোলো তারিখ মনে হয়?
‘ জ্বি।
‘ তাহলে তুমি দেশে আর চব্বিশ দিনের মতো আছো?
‘ জ্বি আরও কম হবে।

আরিফ আর কথা বাড়াল না। হাঁটতে হাঁটতে ভাসা ভাসা চোখে সামনে তাকিয়ে দেখল দোকানে ভিতর মায়া আর জুই এক রকম দেখতে ড্রেস নিজেদের জন্য পছন্দ করছে। মায়া মুখের মুক্ত হাসিটা চোখে বিঁধল আরিফের। সবার ছোট বোন মায়া। ওকে তাড়াহুড়ো করে বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে আরিফের ছিল না। কিন্তু যদি সবকিছু ঠিকঠাক হয়। বা নাদিমের মধ্যে তেমন খারাপ কিছু চোখে না পরে, তাহলে হয়তো মুক্তার বিয়ের পর সাপ্তাহেই মায়ার বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় করবে চেয়ারম্যান সাহেব। ইতিমধ্যে আরিফকে রোজ কয়েকবার করে চেয়ারম্যান সাহেব কল দিয়ে সৌজন্যতা যোগাযোগ করে। খোঁজ খবর নেয়। আরিফ বেশ বুঝতে পারে মায়াকে ছেলের বউ হিসাবে উনাদের অনেক পছন্দ হয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি বিয়েটা করিয়ে রাখতে চান। শুধু যে চেয়ারম্যান সাহেবের পরিবারের মায়াকে পছন্দ হয়েছে এমনটা না। দ্বিতীয় সাক্ষাৎকারে নাদিমও আসিফকে আশ্বস্ত করে সে মায়াকে ভালো রাখবে। তার নিজেরও মায়াকে পছন্দ হয়েছে বেশ। সারাদিন পার করে রাত আটটা বাজল ফাহাদের বিয়ের শপিংয়ে ইতি টানতে টানতে। তবে মায়াদের শপিং বিকাল দিকেই শেষ হয়েছিল কিন্তু খান পরিবারের জন্য তাঁরা বসে ছিল ততক্ষণ। নাদিম নিজের সঙ্গে আনা গাড়িতে মায়াদের শপিং ব্যাগ গুলো গুছিয়ে রাখল হাতে হাতে। তারপর আরিফকে সঙ্গে নিয়ে মলের ভিতরে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো মায়াদের দিয়ে। ওরা চারজন খাওয়ার দাওয়া করে নিবে সেটা দৃষ্টিকটুর দেখায় বলে, খান পরিবারের সকলের জন্য খাবার প্যাক করলো নাদিম যারা শপিং রেখে খেতে আসতে নারাজ ছিল তাদের জন্য। বাকি ছেলেরা সবাই ঠিক আসল খেতে। আরাফ খান, ফাহাদ, সৌরভ, সোহাগ, সুমন, সেঁজুতি তারা সবাই আরিফের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে বসল। সখ্যতা বজায়ে দুই টেবিল নিয়ে সবাই একত্রে বসে খেল। চমৎকার বিষয় হলো নাদিমের প্রাণচাঞ্চল্যতার কারণ খান বাড়ির সকলেই অতি অল্প সময়ে মিশে গেল তার সাথে। আরাফ খানের তো সেই ভাব হলো নাদিমের সঙ্গে। ছেলেটাকে উনার বেশ মনে ধরেছে। বৃদ্ধ বয়সে তিনি মানুষ চিন্তে ভুল করে না। ছেলেটা আসলেই দারুণ। ফাহাদ সঙ্গেও জমিয়ে সখ্যতা দেখা গেল নাদিমের। আন্তরিকতা নিয়ে এটা সেটা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছে সে। যেহেতু মায়া, জুই সেঁজুতি মেয়ে মানুষ সেজন্য ওদের আলাদা টেবিলে বসানো হলো। নাদিম খাবার ফাঁকে ফাঁকে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন তাকাল। মায়াদের টেবিলে খাওয়ার দাওয়া হচ্ছে কিনা সেটাও খেয়াল করলো। আরিফ সবটা তীক্ষ্ণ নজর পরখ করলো। নাদিম খাওয়ার এক পযার্য়ের ওয়েটারকে ডেকে পাঠাল। আস্ত করে কিজানি বলল। কিন্তু তারপরই ওয়াটার তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে চলে গেল। তার একটু পরই ট্রে-তে আলাদা খাবার নিয়ে ফিরলো। অথচ সবার খাওয়া দাওয়া প্রায় শেষের দিকে, এখন আবার নতুন খাবার কে খাবে? আরিফের মনে প্রশ্ন জাগতে দেখল ওয়েটার মায়ার দিকে এগুচ্ছে। আরিফ তীক্ষ্ণ নজরে মায়ার প্লেটের দিকে তাকাল। তাদের সবার খাওয়াতে দাওয়া প্রায় শেষ দিকে কিন্তু মায়া তখনো বসে বসে খাচ্ছে। প্লেটের ভরপুর খাবার দেখে যেকেউ বলবে মায়ার আরও ঘণ্টা খানিক সময় লাগবে এই খাবার শেষ করতে। এর মাঝেই ওয়েটার ট্রে-তে করে মায়ার জন্য আলাদা খাবারটা নিয়ে এগিয়ে গেল। মায়ার মাংস ভাতের প্লেটটা হাত থেকে টেনে নিতে মায়া চোখ উঁচিয়ে তাকাল ওয়েটারের দিকে। বিনা শব্দে মায়া খাবার প্লেট ছেড়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে নিল। বেশ বুঝায় যাচ্ছে সে মাংস ভাত খেতে পারছে না। তবে নাদিমের পাঠানো আলাদা ট্রে-তে করে বাকি খাবার গুলো মায়াকে বেশ সাচ্ছন্দ্যে খেতে দেখা গেল। মায়ার সেই সাচ্ছন্দ্যবোধটুকু নজর কাটলো আরিফের। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মায়াকে এক পলক দেখে আরিফ খেতে খেতে তাকাল নাদিমের দিকে। খাবার পাঠিয়ে ছেলেটা আর মায়ার দিকে তাকায়নি। বরং এটা সেটা নিয়ে আরাফ খান ও ফাহাদের সঙ্গে হাস্যজ্জল মুখে কথা বলছে। মায়ার প্রতি নাদিমের নিশ্চুপ খেয়াল রাখাটা বেশ নজরে লাগল আরিফের। নাহ নাদিমকে ছেলেটা খারাপ না। খাওয়া দাওয়া পার্ট চুকিয়ে গেল সবাই। খাবার বিল দেওয়ার সময়ও নাদিমকে দেখা গেল। সে আরিফ বা ফাহাদ কাউকে বিল দিতে দেয়নি বরং নিজ দায়িত্বে সব বিলের ঝামেলা সে মিটিয়ে নিল। এই আন্তরিকতাটুকু আরিফের ভালো লাগল। বিয়ে হবে কিনা ঠিক নেই। অথচ সে তার আন্তরিকতা দেখিয়েই যাচ্ছে। দীর্ঘ আট ঘন্টা টানা শপিংয়ে পর খান পরিবার সকলের শপিং শেষ করেই ক্লান্তিতে সবাই গাড়িতে চড়ে বসল। মায়াও বেশ ক্লান্ত। আরিফ এই রাতে আশুগঞ্জ ফিরে যেতে চাইলে, হেনা খান বগল থাবা করে ওদের সবাইকে নিয়ে আসল খান বাড়িতে। নতুন আত্মীয় বলে কথা। রাতে খাবারের আগে অন্তত তিনি যেতে দিতে নারাজ। খান বাড়ির সঙ্গে আনা চারটি গাড়িতে সবাই যার মতো করে উঠে গেল। মুক্তাকে বসানো হলো ফাহাদের গাড়িতে শাশুড়ী সঙ্গে। মায়া, জুই, সেঁজুতি বসলো নাদিমের গাড়ির পিছনে সিটে। নাদিম ড্রাইভিংয়ে। আরিফ পাশের সিটে বসতে গাড়ি ছুটলো খান বাড়ির গাড়ির পিছন পিছন। যেহেতু নাদিম আরিফের সঙ্গে এসেছে তাই তারও দাওয়াত পরলো খান বাড়িতে রাতের ডিনারের। ডিনার শেষে সবাই একত্রে আবারও নাদিমের গাড়িতে করে আশুগঞ্জ ফিরে যাবে এমনটাই সিদ্ধান্ত। ক্লান্তিতে হৈচৈ করে সবাই বসে পরলো খান বাড়ির ড্রয়িংরুমে। ছোট বড় পঁচিশ সদস্যে ভরপুর ড্রয়িংরুম। গাড়ি থেকে নেমে মায়া জুই আর সেঁজুতি একত্রে খান বাড়ির ভিতরে পথে হাঁটছিল। মায়া বেশ অস্থির। বারবার ভয়ার্ত চোখ জোড়া এদিক সেদিক ছুটে যাচ্ছে রিদের ভয়ে। মায়া সাহস করে তো খান বাড়িতে ঢুকে পরলো এখন পাছে না আবারও রিদের মুখোমুখি হয়ে যায় সেই ভয় পেল। লাস্টবার দুজনের সাক্ষাৎকারটা খুবই ভয়ংকর ছিল। রিদের রাগের স্বীকার হতে হয়েছিল মায়াকে। এখন যদি পুনরায় এসব কিছু আবারও এখানে ঘটে তাহলে মায়ার আর সম্মান থাকবে না। ভয়ে ধুরধুর বুকে মায়া জড়সড় হয়ে হাঁটল জুইয়ের সাথে। ওদের সঙ্গ দিয়ে পিছু পিছু আরিফ আর নাদিমকেও হাঁটতে দেখা গেল। খান বাড়ির ড্রয়িংরুমে পৌঁছাতে মায়া অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মুখোমুখি হলো শশীর সঙ্গে। হেনা খানের সঙ্গে ডাইনিংয়ে দাঁড়িয়ে সবাই জন্য শরবতের গ্রাস ট্রেতে তুলে রাখছে। ঠোঁটে কোণে মিষ্টি হাসি। আরাফ খানের সঙ্গে মুক্তাকেও দেখা গেল ডাইনিংয়ের একটা চেয়ারে বসা। বাকিরা সবাই শরবত পান করেই যার যার রুমে অবস্থা করছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। হেনা খান মায়াদের ডাকল ডাইনিংয়ের বসতে। গুটি গুটি পায়ে সবাই সেদিকে গেল। একে একে চেয়ার টেনে বসে শরবতের গ্লাস গ্রহণ করলো। মায়া শরবতে গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বেশ কয়েকবার শশীকে দেখে নিলো। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শশীকে দেখা মায়ার। প্রথমবার যদিও মায়া এতো লক্ষ করেনি বিয়ের ঝামেলায়। কিন্তু শ্রেয়ার মুখে শশী নামটা শুনে মায়া এখন মনোযোগ দিয়ে শশীকে বেশ কয়েকবার পরখ করলো আড়চোখে। শশী মেয়েটা দেখতে দারুণ। যেমন লম্বা তেমন সুন্দর, ব্যবহারে ঠিক তেমনই ভদ্রতা। কাপড়-চোপড়েও বেশ শালীনতা রয়েছে। অশালীন কিছুই চোখে পরলো না। একটা টু-পিসের জামা পরে ওড়নাটা কাঁধের দু’পাশে দেওয়া। কথাবার্তায় বেশ স্মার্ট। কার কি লাগবে নাকি সেটাও সে নিজ দায়িত্ব দিচ্ছে। মায়া আরও একবার অকারণেই শশীকে দেখলো। মেয়েটিকে বেশ মনে ধরেছে মায়ার। রিদ খানের সঙ্গে মানাবেও ভালো। মায়া শ্রেয়ার মুখে শুনেছিল রিদ খান এই শশী মেয়েটির সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে রিলেশনে আছে। সামনে হয়তো বিয়ে করবে। মায়ার মনে হলো এই দুজনের বিয়ে হলে মন্দ হবে না বরং ভালোই হবে। দুজনকে মানাবে ভালো। তবে এতো সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড রেখে কেন যে রিদ খান মায়াকে পরকীয়ার মতোন এতো বাজে প্রস্তাব দেয় আল্লাহ জানে। এই লোকের আসলেই চরিত্রে সমস্যা আছে নয়তো সবসময় মায়ার সাথে কেন ঘেঁষাঘেঁষি করতে চাইবে এই লোক? ডাইনিংয়ে বসে সকলের হাল্কা পাতলা নাস্তা করার মধ্যে কোথা থেকে হুট করে আয়ন এসে ধুপ করে মায়ার মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসে পরলো ক্লান্তিতে। সকলে চমকে উঠে আয়নকে কিছু বলবে তার আগেই আয়ন শশীর হাত থেকে একটা শরবতের গ্লাস নিয়ে এক চুমুকে শেষ করল। ঠাস করে টেবিলের উপর গ্লাসটা রাখতে রাখতে সরকারি চোখ গেল মায়া আর জুইয়ের দিকে। চোখের পলকে আরিফ, নাদিমকেও দেখে নিল এক পলক। কিন্তু মায়া মুখোমুখি বসায় আয়ন হাতের গ্লাসটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলল…

‘ আরের ছোট বিয়াইন যে। তা ভালো আছো?
মায়া বেশ উৎফুল্লতায় বলল…
‘ জ্বি ভাইয়া ভালো! আপনি কেমন আছেন?
‘ এইতো ঠিকঠাক! বোনের বিয়ের শপিং করা শেষ?
‘ জ্বি ভাইয়া শেষ।
‘ তাহলে তো বেশ বড়সড় ঝামেলা চুকিয়ে ফেলছ তোমরা! মেয়েদের শপিং, বাপরে সাংঘাতিক ঝামেলা।

আয়নের কথায় মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল। আয়নের চোখে লাগার মতো বিঁধল সেই হাসিটা। তারপরও সে কৌশলে চোখ সরিয়ে তাকাল মায়ার পাশে বসা জুইয়ের দিকে। মনোযোগ সহকারে ফল খাচ্ছে সে। আয়ন একে একে আরিফ নাদিমের সঙ্গেও কুশলাদি বিনিময় করলো। যদিও সে নাদিমকে চিনে না কিন্তু তারপরও যেহেতু আরিফের সঙ্গে বসা তারমানে মায়াদের কোনো আত্মীয় হবে ভেবেই সৌজন্য বজায় রেখে কথা চালাল আয়ন নিজের মধ্যে। আয়নের কথার ফাঁকে হেনা খান জানতে চেয়ে বলল…

‘ তুই এই সময়ে এই বাড়িতে? তোর না ডিউটি আছে রাতে?

‘ আছে নানু! কিন্তু তিনঘন্টার নিভ নিয়েছি।
‘ তুই কি একা এসেছিস? রাদিফ আসেনি?
‘ না রাফিস দেশে নেই। রিদকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি।
হেনা খানের আর কিছু বলার আগেই শশী পাশ থেকে উৎফুল্লতা দেখিয়ে জানতে চাইল…
‘ রিদ ভাই এসেছে বুঝি?
আয়ন এক পলক মায়াকে দেখল। বেশ স্বাভাবিক ভাবেই খাচ্ছে। শশী যে রিদের কথা জানতে চাইছে আয়নের কাছে সেটা নিয়ে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না মায়ার মধ্যে। আয়ন বুঝতে পারলো মায়া এখনো রিদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের অবগত নয়। আয়ন মায়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শশীর লাজুক মুখটার দিকে এক পলক তাকিয়ে উত্তর দিতে দিতে বলল…

‘ হ্যাঁ এসেছে তোর রিদ ভাই। গিয়ে দেখ বাহিরে পেয়ে যাবি।

আয়নের কথায় শশী এক গ্লাস শরবত তুলে দ্রততায় ছুটল বাহিরের দিকে রিদের উদ্দেশ্য। হেনা খান, আরাফ খান শশীর লাজুকলতার মুখটা দেখে হাসলো। আয়ন এতক্ষণে জুইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। আয়ন এসেছে পর থেকে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার জুইকে সে আড়চোখে পরখ করেছে। কিন্তু মেয়েটা সেই কখন থেকে মনোযোগ দিয়ে নাস্তা খেয়েই যাচ্ছে। আয়নকে চোখের দেখা পযন্ত দেখছে না। আশ্চর্য আয়ন যে এসেছে মেয়েটার ভাবান্তর নেই কেন? এমনটা তো হওয়ার কথা না। আয়ন যে আজ আসবে এই মেয়ে তো জানতো? আয়নের জন্য জুইয়ের অপেক্ষা করে বসে থাকার কথা ছিল তাহলে? আয়ন জুইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল…

‘ জুই আমাকে তরমুজ কাটা প্লেটটা দেনতো।

জুই চোখ তুলে সরকারি তাকাল আয়নের দিকে। লোকটার উপস্থিত সে দেখেছিল। কিন্তু তেমন পাত্তা দেওয়ার মতোন কিছু হয়নি বলে নিজের নাস্তা শেষ করছি। হঠাৎ আয়নের ডাকে সরাসরি তাকানোতে চোখাচোখি হলো দুজনের। আয়ন তখনো তাকিয়ে। জুই চোখ ঘুরিয়ে দেখল আয়নের হাতের কাছেই আরও একটা প্লেটে তরমুজ কাটা আছে। সেটা আয়ন চাইলেই নিয়ে খেতে পারে। অথচ আয়ন জুইকে দেওয়ার তরমুজের প্লেটটা চাচ্ছি। সৌজন্য বজায়ে জুই আস্তে করে নিজের ফল কাটা প্লেটটা এগিয়ে দিতে আয়ন সেটা নিজের কাছে টেনে নিলো। কাটা চামুচ লাগিয়ে মুখে তুলতে তুলতে আবারও জুইকে বলল…

‘ জুই আমাকে আমের প্লেটটাও দেন।

জুই এইবারও হাতে হাতে আয়নকে আমের প্লেট এগিয়ে দিল। আয়ন সেটা নিতে আবারও বলল…

‘ পানি গ্লাসটা দেন।

জুই এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়নের দিকে তাকিয়ে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল। লোকটার সাথে জুইয়ের যতবার দেখা হয় ততবারই জুইকে দিয়ে সে নিজের কাজ করায়। কিন্তু কেন? সেটা জানে না জুই। বাড়িতে আসা মেহমানকে দিয়ে যে কাজ করানো যায় সেটা আয়নকে না দেখলে হয়তো জুই জানতো না। আয়ন জুইয়ের থেকে পানি গ্লাসটা নিতে নিতে সবার অগোচরে জুইকে একটা চোখ মারলো। আয়নের হঠাৎ কান্ড হতবুদ্ধি হয়ে বসে রইল জুই। এই লোক হঠাৎ জুইকে চোখ মারলো কেন? জানা নেই জুইয়ের। শুধু স্তব্ধ নির্বাক হয়ে বসা রইল। তবে জুইয়ের মনটা বেশ পুড়ছে রাদিফের জন্য। ঢাকা আসার আগেই রাদিফের সঙ্গে জুইয়ের কথা হয়েছিল। রাদিফ বলেছিল আজ খান বাড়িতে আসবে জুইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। জুই যেন অপেক্ষা করে বসে থাকে তার জন্য। আর সেই থেকে জুই রাদিফের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে তাহলে এখন রাদিফ দেশের বাহিরের থাকে কিভাবে? কিছুক্ষণ আগেও তো দুজনের কথা হয়েছিল রাদিফ জুইকে বলেছিল সে রাস্তার জ্যামে বসে আছে। তবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। এখন জুইকে অপেক্ষা করিয়ে রাদিফ আসল না। উল্টো আয়নের মুখে শুনতে হচ্ছে রাদিফ দেশে নেই।
~
সকলের খাওয়াদাওয়া মধ্যে রিদ মেইন দরজা দিয়ে খান বাড়ির ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে করতে বেখেয়ালি চোখ পরলো ডাইনিংয়ে। সেখান থেকে বেশ কথাবার্তা আর হাসাহাসি শব্দ আসছে। রিদ প্রথমে গম্ভীর আর স্বাভাবিক নেয় তাকালেও কয়েক সেকেন্ড মধ্যে ভ্রুর কুঁচকে গেল মায়ার পাশে অপরিচিত ছেলে নাদিমকে বসে থাকতে দেখে। যদিও নাদিম বা মায়ার মধ্যে তেমন কোনো কথাবার্তা হচ্ছিল না। তারপরও মায়ার পাশে নাদিমের বসার বিষয়টি পছন্দ হয়নি তাঁর। ডাইনিংয়ের স্পেস বড়। মায়া অন্য কোনো একটা খালি চেয়ারে বসলেই হতো। কিন্তু তা না করে অপরিচিত ছেলে পাশাপাশি বসাটা রিদের অপছন্দের কারণ হলো।
রিদ সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই ডাইনিং থেকে হেনা খান রিদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে ডাকল রিদকে। রিদ সরু চোখে তাকাল হেনা খানের ব্যস্ত পথ চলার দিকে। তারপর চোখ ঘুরাল পুনরায় মায়ার দিকে। হেনা খানের ডাকে উপস্থিত ডাইনিং টেবিলের সকলে ঘাড় ঘুরিয়ে ততক্ষণে রিদের দিকে তাকিয়েছে। মায়াও হেনা খানের ডাকে চমকে উঠে তৎক্ষনাৎ পিছনে ঘুরে তাকাতেই চোখাচোখি হলো রিদের সাথে। মায়া ভয়ার্ত দৃষ্টি রিদ থেকে নামিয়ে নিতে গিয়ে চোখ পরলো রিদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা শশীর দিকে। তারপর তাকাল শশীর হাতে থাকা খালি শরবতের গ্লাসটার দিকে। রিদ শশীর দেওয়া শরবতটুকু পান করেছে সেটা বুঝতে পেরে, মায়া কি মনে করে আবারও রিদের দিকে তাকালে পুনরায় চোখাচোখি হলো দুজনের। রিদ তখন থেকেই ভ্রুঁ কুঁচকে চেয়ে আছে মায়ার দিকে। আর রিদের চেয়ে থাকার কারও হলো মায়ার পাশে বসে থাকা নাদিম। নাদিম মায়ার দিকে আম কাটা ফলের প্লেটটা এগিয়ে দিচ্ছে মায়ার অগোচরে খাওয়ার জন্য। কিন্তু মায়ার পিছন মুড়ে রিদের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য হয়তো সেটা লক্ষ করেনি। কিন্তু রিদের বাজপাখি নজরে সেটা মূহুর্তে ধরা পরলো। মায়া হঠাৎ করেই কেন জানি আরও একবার পরখ করলো রিদকে তাও মনোযোগ দিয়ে। রিদকে বড্ড ক্লান্ত দেখাল। চোখে মুখে বেশ ক্লান্তির ছাপ। কিন্তু তারপরও মুডি রিদ খানের এটিটিউড কমলো না। গায়ের কোর্ট বামহাতের ভাজে ফেলে ডানহাতটা ডান পকেটে গুঁজে মায়ার দিকে চেয়ে আছে বাজপাখির দৃষ্টিতে। যেন চোখ দিয়ে গুলি করবে মায়াকে। মায়া জড়সড় হয়ে দৃষ্টি সরিয়ে আবারও তাকাল রিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শশীর দিকে। রিদ আর শশীকে পাশাপাশি সুন্দর লাগছে। দুজনের হাইটে হাইটে মিলে যাচ্ছে। যদিও শশী রিদের মতোন অতো লম্বা নয় তারপর বেশ দারুণ লাগল মায়ার চোখে। লম্বা ছেলেদের লম্বা প্রেমিকায় মানায়। আচ্ছা শশীর হাইট কতো হবে? ৫’৬ নাকি ৫’৭? রিদকে দেখে হেনা খানের পাশাপাশি আরিফও নাস্তার টেবিল ছেড়ে এগিয়ে আসল রিদের সাথে কথা বলার জন্য। এর মধ্যেই শশী রিদকে উদ্দেশ্য করে রিন রিনিয়ে বলল…

‘ তোমাকে কফি করে দিব?
‘ দে!
‘ রুমে দিয়ে আসব নাকি এখানে…
‘ রুমে দে!

শশীর কথার মাঝে রিদ অল্প কথায় উত্তর করলো। শশী হেনা খানকে পাশ কাটিয়ে বিনা বাক্যে হাঁটল কিচেনের দিকে। মায়া শুধু দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ নিশ্চুপ চোখে। রিদ শশীর কথাবার্তা আচার-আচরণে মায়ার মনে হলো দুজনের মধ্যে বেশ গভীর সম্পর্ক। এমনকি দুজন দুজনার সঙ্গেও অনেক ফ্রী। হয়তো রোজকার রুটিনমাফিক শশী এমন করেই রিদের হেয়াল রাখে। অন্তত রিদের স্বাভাবিক আচারের মায়ার তেমনই ঠেকল। রিদের ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকা মায়া মন হঠাৎ করেই যেন মন খারাপ হলো। উদাস মনে রিদ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে ঘুরে বসল। নাদিমের বাড়িয়ে দেওয়া আমের প্লেট থেকে আম তুলে কামড় বসাতে বসাতে ভাবল, আজ মায়ার নিখোঁজ স্বামীকে খোঁজে পেলে হয়তো মায়াও এমন খেয়াল রাখতো নিজের স্বামীর। সকাল বিকাল সেও শশীর মতোন করে নিজের ভালোবাসার মানুষকে কফি আর শরবত করে খাওয়াত। আসলে মায়ার কপালটায় খারাপ নয়তো স্বামীকে খোঁজে পেয়েও পাচ্ছে না কেন? কোথায় যে আছে মায়ার স্বামীটা আল্লাহ জানে।
~~রাত তখন দশটার ঘরে। আরিফ নাদিমকে নিয়ে আরাফ খানের সঙ্গে আড্ডা জমিয়েছে ড্রয়িংরুমে। মায়া এতক্ষণ সেখানে ছিল কিন্তু হঠাৎ করে মনে হলো মায়ার স্বামীকে একটা ফোন করা দরকার সেজন্য হাতের ফোনটা নিয়ে আস্তে করে উঠে এসে বসল খান বাড়ির বাগানে থাকা খোলা বাংলোতে। বাগানের ভিতর থাকা জায়গা জায়গায় কর্ডা লাইটিংয়ে কারণে রাতের অন্ধকার ভাবটা তেমন বুঝা যায় না। বেশ উজ্জ্বল আলোয় দিনের মতোই লাগছে পরিবেশটা। চারপাশে বেশ বডিগার্ডের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল মায়া বন্দুক হাতে। মায়া উদাস মনে খোঁজে খোঁজে স্বামীর নাম্বারে কল লাগাল। যদিও মায়া জানে লোকটা ওর ফোন রিসিভ করবে না তারপরও মায়া রোজ করে লোকটাকে কল দেয়। মান অভিমান কতো দিন করে থাকবে লোকটা মায়ার উপর? একদিন না একদিন ঠিকই ভেঙ্গে যাবে। মায়ার চেয়ারে বসে ফোনটা টেবিলের উপর রাখল। একগালে হাত রেখে ফোনের উপর ঝুকে মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে রইল স্ক্রিনের ডায়েলকৃত নাম্বারের দিকে। সেখানে রিদের নাম্বারে রিং হচ্ছে কিন্তু কোনো রেস্পন্স নেই। মায়ার মনোযোগে হঠাৎ বিঘ্ন ঘটে কারও উপস্থিতিতে টের পেয়ে। চোখ তুলে উপরে তাকাতে তাকাতে সেই ব্যক্তিটা ধুপ করে মায়ার মুখোমুখি একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো। আচানক কারও উপস্থিতিতে মায়া চমকে উঠতে চোখে পরলো আয়নকে। বেশ হাসিহাসি মুখে মায়ার ফোনের দিকে তাকিয়ে রিদের নাম্বার দেখে চিনতে পেরেও অপরিচিত মতোন করে বলল…

‘ তুমি কাকে ফোন করছো?

মায়া হড়ভর করে কল কেটে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে লুকাতে লুকাতে বলল…

‘ কাউকে না ভাইয়া।
‘ আমি কিন্তু জানি তুমি কাকে কল করছিলে। তবে তুমি চাইলে এই বিষয়ে আমার হেল্প নিতো পারো। আমি কিন্তু তোমার কলের ওপাশের মানুষটাকে খোঁজে দিতে পারি। আমি কিন্তু জানি সবকিছু।

মায়া চমকে উঠার মতোন করে অস্থির চিত্তের হড়ভর করে বলল…

‘ আপনি জানেন? আপনি কিভাবে জানেন? সেদিন রাতে কি তাহলে আপনি ছিলেন আমার সাথে? ঐ লোকটা কি তাহলে আপনি?

মায়া এই কথায় আয়নের চোখে মুখে হঠাৎই আফসোসের গ্লানি দেখা গেল। আয়নের কণ্ঠের তেজ কমে আসল ধীরেই। চাপা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে মোলায়েম গলায় শুধালো…

‘ সেদিন রাতে তোমার সাথে না থাকার আফসোস আমার ইহজীবনে শেষ হবে না মায়ু। কিছু আফসোস কখনো শেষ হয়না। সারাজীবন থেকে যায়। তারমধ্যে তুমি একটা।

মায়ার আয়নের গভীর কথার অর্থ বুঝল না। মায়ার মস্তিষ্ক এই মূহুর্তে উত্তেজিত। তাই অস্থির নেয় আয়নকে শুধালো মায়া। বলল।

‘ মানে? ঐ লোকটা আপনি না?
‘ যদি অপশন থাকতো তাহলে অবশ্যই হতাম।
‘ মানে?
আয়ন দীর্ঘশ্বাস গোপন করে নিজের কথা ঘুরিয়ে বলল।

‘ মানে কিছু না। তবে তুমি চাইলে আমি তোমাকে হেল্প করতে পারি তোমার কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে খোঁজে পাওয়ার। রিদ-তো তোমাকে হেল্প করলো না। তবে আমি তোমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিব না। ভয় নেই আমি তোমার থেকে কোনো টাকা-পয়সা বা কিডনি চাইব না রিদের মতোন। বিয়াই হিসাবে তো এতটুকু সাহায্য তো করতে পারি তোমার তাই না? এবার বলো কি লাগবে আমার হেল্প?

মায়া অস্থির চিত্তে আমতা আমতা করলো। ওর ছোট মাথা এলোমেল

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here