দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #সূচনা_পর্ব

0
142

” আপু, ওই আপু কই গেলা? দেখো মাঝ রাস্তায় কে জানি এলাকার কয়েকটা ছেলেরে ইচ্ছামতো মা*রতেছে, আশেপাশে আরোও দশ কি বারো জন ছেলেপেলে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া মজা দেখতেছে, কেউ আটকাচ্ছে না কেনো! আহারে ছেলেডারে একেবারে আধম*রা করে ফেলতেছে রে ”

শেহরানের হাক ডাক আর আফসোসের বাক্য শুনে ভ্রু জোড়া কুঁচকে আড়চোখে এক পলক শেহরানের দিকে তাকালো শেহজাদ। বিরক্তি তে নাক মুখ কুঁচকে পুনরায় মোবাইলের দিকে মনোনিবেশ করলো। ছেলেটা যেন অতিরিক্ত ন্যাকামো করে!

ছোট ভাইয়ের ডাকে রুম পরিষ্কার করা খনিকের জন্য বন্ধ রেখে নাক মুখ বাধা অবস্থায় ই হাতে ঝাড়ুঁ নিয়ে বারান্দায় প্রবেশ করলো অরিত্রা।
এক পলক শেহজাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দৃষ্টি ঘুরালো শেহরানের দিকে।
খুব বেশি ঝাড়া মুছা করার জন্য শ্বাস নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তার। এমনিতেই ডাস্ট অ্যালার্জি তার উপর ধুলো পরিষ্কারের কাজে নেমেছে সে। নতুন বাসা নতুন সব কিছু, মা ও বাসায় নেই, টুকটাক বাজার করতে বাহিরে গেছেন। নাহিদা বেগম, পেশায় তিনি একজন স্কুল শিক্ষিকা। অরিত্রা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

হাতের ঝাড়ুটা দরজায় হেলান দিয়ে রেখে মুখ থেকে ওড়নার বাঁধন টা মুক্ত করে ঠোঁট গোল করে বড়ো বড়ো দুটো শ্বাস নিলো অরিত্রা।
বারান্দা দিয়ে সোজা নিচের দিকে তাকালো যেখান থেকে সরাসরি একটা গলির মোড় দেখা যায়। গলির শুরুতে ই তাদের চার তলা বিল্ডিং টা। সেই বিল্ডিং টার ই তিনতলায় নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে তারা গতকাল ই উঠেছে।
গলির মোড়েই উনিশ কি বিশ বছর বয়সের বেশ কয়েকজন ছেলে দাঁড়ানো তাদের মধ্যে ই সাদা রঙের শার্ট পরিহিত একজন ছেলের উপর নজর আটকালো অরিত্রার । ছেলেটা গাড়ির ডিকির উপর বসে আছে।

ছেলেটা আঙুল উঁচিয়ে সামনে থাকা ছেলেগুলো কে ভীষণ রকমের শা*সাচ্ছে । ঘামে ভিজে শুভ্র শার্ট টা যেন শরীরের সাথে আঁটসাঁট করে সেটে আছে, পেটের কাছে ছ” টা ভাজ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গরমের দরুন কিংবা রাগে কান, গাল আর নাকের ডগা লাল হয়ে আছে। কপালে থেকে চুইয়ে চুইয়ে ঘাম ঝড়ছে। অবাধ্য চুল গুলোকে আঙুলের সাহায্যে পেছনে ঠেলেছে বারংবার। গায়ের রং টা শ্যামসুন্দর বলে মনে হলো অরিত্রার।

পাশে থাকা হ্যাংলা পাতলা ছেলেটাকে কিছু একটা বলতেই ছেলেটা তার পকেটে খুঁজে সিগারেট এর প্যাকেট টা থেকে একটা সিগারেট বের করে লাইটার সমেত তার হাতে দিলো।

সিগারেট এর মাথায় আ*গুন জ্বা*লিয়ে প্রথম টান দিয়েই লাইটার টা ফিরিয়ে দিলো পাশের ছেলেটাকে।

ভ্রু কুঁচকে সেদিকে ই তাকিয়ে আছে অরিত্রা এই বাসায় সে নতুন হলেও এলাকায় সে মোটেও নতুন না, প্রায় এক বছর হয়ে উঠলো এই এলাকায়। এই ছেলেকে কখনো দেখেছে কি না মনে করতে পারছে না।

এসব ভাবনার মধ্যে দিয়েই হঠাৎ ছেলেটার চোখে চোখ পড়তেই ভড়কে গেলো অরিত্রা, ছেলেটা তাদের বারান্দার দিকেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে ছেয়ে আছে অবাকতা। সিগারেটে আরেকটা টান দিয়েই নিচে ফেলে পা দিয়ে পিশে ফেলল।

” আপু এলাকার মধ্যে গু*ন্ডামী করতেছে কিন্তু কেউ তো কিচ্ছু বলতাছে না! এটা কি ঠিক? ”

শেহরানের কথায় সৎবিত ফিরলো অরিত্রার। শেহরানের কথার ভিত্তিতে কিছু বলতে নেবে তার আগেই শেহজাদ ফোনটা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে সামনে এগিয়ে এসে বলল,

” না বুঝে কথা বলবি না শেহরান, অযথা একটা মানুষের নামে বাজে কথা বলা ঠিক না, উনি মুনতাসিম মাহমুদ ”

অরিত্রা চমকে উঠলো, মনে মনে বার দুয়েক নাম টা আউড়ে নিলো,

” মুনতাসিম মাহমুদ ” নাম টা কেমন যেন চেনা চেনা ঠেকছে। কোথায় যেন শুনেছে নামটা!
অরিত্রা শেহজাদ কে কিছু বলতে পিছনে ঘুরবে, কিন্তু শেহজাদ ততক্ষণে চলে গেছে । বিরক্তি তে নাক মুখ কুঁচকালো সে, তার এই চৌদ্দ বছর বয়সের ভাইয়ের হাবভাব দেখলে মনে হয় তার নিজেরই বড় ভাই। কেমন গম্ভীর আর ঘাড় ত্যা*ড়া! রাগটা যেন নাকের ডগায় থাকে, বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত ম্যাচিউর সে। ঠিক তার অরিত্রা বাবা যেমন ছিলেন রাগী আর গম্ভীর তার ভাইটাও বাবার মতো। বাবা যেমন মেয়েটাকে আগলে আগলে রাখতো শেহজাদ ও ঠিক বোনকে আগলে আগলে রাখার চেষ্টায় থাকে।

কথাটা মনে হতেই চোখ জোড়া ভিজে উঠলো অরিত্রার। গত চার বছর যাবত সেই চিরচেনা মুখ টা দেখতে পায় না অরিত্রা। একটা বিশাল বড় কোম্পানী তে ড্রাইভারের চাকরী করতেন তিনি। হঠাৎ একদিন ঝড়ের রাতে খবর এলো অ্যা*ক্সিডেন্টে স্পট ডে*থ তার। সেদিন তার মা একটুও কাঁদে নি কিন্তু অরিত্রা বাবার শিয়রের কাছে বসে হাউমাউ করে কেঁদে ছিলো সেদিন।

অরিত্রার মা বাবার প্রনয়ের সম্পর্কের জন্য নানু বাড়ি কিংবা দাদির বাড়িতে কখনো পদধূলি পড়ে নি তার। মেনে নেয় নি কেউ তাদের এমনকি অরিত্রার বাবার মৃ*ত্যুর পর ও কোন আত্নীয় মানুষ কে দেখে নি সে।

ওড়না দিয়ে চোখ মুছে এক পলক রাস্তার দিকে তাকালো, লোকটা এখনো এই বারান্দায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে, কেমন এলোমেলো দৃষ্টি তার অথচ লোকটাকে অরিত্রা আজই না প্রথম দেখলো।

অরিত্রা শেহরানের হাত টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

” আর বারান্দায় থাকতে হবে না, পড়তে বস, পড়া নেই কিচ্ছু নেই সারাদিন টইটই করে ঘুরে বেড়ানো, এবার যদি ক্লাস টেস্ট এ নাম্বার কম পাইছিস তাহলে সুরসুর করে আবার টু তে নামাই দিবো বলে দিলাম ”

শেহরান কাঁদো কাঁদো দৃষ্টি তে বোনের দিকে তাকালো, তার বোনটা এমন কেন? এমন শক্ত ধাঁচের মেয়ে মানুষ তার বোন ছাড়া আর কাউকেই দেখেনি।

_______________________

” ভাই মাহাবুব চাচ্চুর মতো না দেখতে মেয়েটা? একদম খাপে খাপ মিল! যদিও তা স্বাভাবিক! ”

সায়রের কথায় ভ্রু কুঁচকে সায়রের দিকে তাকালো মুনতাসিম, চোখে মুখে তার উপচে পড়া বিরক্তি! সায়র কথা বলতে বলতে ই মুনতাসিমের দিকে চোখ গেলো তার। তৎক্ষনাৎ ঠোঁট দুটো আপনাআপনি তালা বদ্ধ হয়ে গেলো, মনে মনে ভাবতে লাগলো, আচ্ছা সে কি কোন বে*ফাঁস কথা বলে ফেলেছে নাকি! তার ভাই এভাবে চোখ দিচ্ছে কেন?

কোন উপায় না পেয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

” হে হে ভাই! এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ভুল বললাম কিছু? আচ্ছা এই যে মুখে তালা দিলাম আর কিছু ই বলব না ”

মুনতাসিম চুপচাপ গাড়ির ডিকির উপর লাফ দিয়ে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” সায়র তোর কি মনে হচ্ছে না ইদানীং তুই একটু বেশি লাফালাফি করছিস? ”

সায়র মুখে আঙুল দিয়ে ভ্রু কুচকে ভাইয়ের দিকে তাকালো,

” গ*র্ধব কোথাকার! দিনে দিনে আহা*ম্মক হচ্ছিস না? কোথায় কি বলতে হবে কি করতে হবে এখনো আমার শিখিয়ে দিতে হবে? দিলি তো বিপক্ষ দলের একটার মাথা ফা*টিয়ে! পইপই করে বলে ছিলাম নির্বাচনের আগে কোন গন্ড-গোল চাই না! শুনলি কথা আমার? গ*বেট কোথাকার! ”

সায়র ইনোসেন্ট ফেস করে ভাইয়ের দিকে তাকালো, বোঝার উপায় নেই সে কাল মার*পিট করে একটার মাথা ফা*টিয়ে এসেছে!

মুনতাসিম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাশে একটাকে কাছে ডাকতেই ছেলেটা কাছে এগিয়ে এলো,

” কিছু বলবেন ভাই? ”

” আপাতত ভার্সিটির রোডে যাচ্ছি, কোন সমস্যা হলে ফোন দেবে জাহিদ ”

ছেলেটা মাথা নেড়ে চলে গেলো।

মুনতাসিম ডিকি থেকে নেমে ড্রাইভিং সিটে বসে হাক ছাড়লো,

” তুই কি আসবি নাকি রেখে চলে যাবো? ”

সায়র লাফ দিয়ে উঠে গাড়ি তে বসে পড়লো, বলা তো যায় না আবার রেখেও চলে যেতে পারে।

_____________

অরিত্রা ভাইকে পড়তে দিয়ে হাতের কাজ শেষ করে গোসলে ঢুকতে ঢুকতে এক পলক দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো, সবে বেলা ১০ টা। ১১ টায় একটা ইম্পর্টেন্ট ক্লাস আছে যেটা না করলেই নয়! নয়তো আজকে ভার্সিটি তে কোন ভাবেই পা রাখতো না সে।

অরিত্রা গোসল সেরে কালো রঙের পোশাকে নিজেকে আবৃত করলো। রান্না ঘরে গিয়ে লেবু চটকে এক গ্লাস শরবত বানিয়ে টেবিলে রেখে ব্যাগ হাতে ছুটলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

” কিরে অরি এত দেড়ি করলি কেন? কাল আসিস নি কেন হ্যা? তুই কি মনে করেছিস আমি প্রাপ্তি সবসময় এতো নরম থাকবো তুমি বলবা তোমাকে সব নোট’স দিয়ে দিবো! মোটেও না। তুই জানিস কালকে কি হয়েছে? তুই কত বড় একটা জিনিস মিস করছিস! হায় কপাল! ”

গেট দিয়ে ঢুকতে না ঢুকতে ই কোথ থেকে এই বান্ধবী নামক জীব পদার্থ এসে হাজির।

” তুই কথা না প্যাঁচিয়ে বল কি বলবি! আমার যদি ও এতো আগ্রহ নেই শোনার ”

কথাটা বলতে বলতে ই পা বাড়ালো ক্লাসের দিকে। প্রাপ্তি অরিত্রার পিছনে পিছনে যেতে যেতে মুখ গোমড়া করে বলল,

” আরররে কথা টা তো শোন। তোকে বলব বলে গত এক ঘন্টা ধরে পেটে হাত দিয়ে বসে আছি আর সেই তুই আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিস না ”

অরিত্রা হাত দুটো বুকের উপর বেঁধে পিছনে ফিরে তাকালো,

” হুম বল কি বলবি, এই যে দাঁড়ালাম ”

প্রাপ্তি হাসি হাসি মুখ করে বলল,

” জানিস দোস্ত কি হইছে! তোরে বলছিলাম না ভার্সিটিতে একটা ছেলে আছে না! ”

অরিত্রা বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,

” ভার্সিটিতে তো কত ছেলে ই আছে, কার কথা বলছিস? ”

” আররে ভার্সিটির বোর্ডে যে নাম্বার র‍্যাঙ্কে সবার উপরে যে ছেলেটার নাম আছে এখন পর্যন্ত ওই রেকর্ড কেউ ভাঙ্গতে পারে নি, সব টিচারা তো উনার প্রশংসায় পঞ্চ মুখ। এবার ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে আর কি। গত এক বছর যাবত ভার্সিটি তে আসে না কি কারণে যেন সেটা অবশ্য আমি জানি না, উনি নাকি আবার ব্যাক করেছে ভার্সিটি তে ”

অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

” যাস্ট এই কথা! এই আজাইরা কথার জন্য তুই আমাকে এভাবে জেঁকে ধরলি! ফালতু মহিলা কোথাকার! ”

প্রাপ্তি গলাটা খাদে নামিয়ে মিনমিন করে বলল,

” পুরা ভার্সিটির রত্ন সে, আর তুই যাস্ট বলছিস! ‘

অরিত্রা দাঁতে দাঁত চাপলো,

” না সামনে নিয়ে পূজা করবো ”

বলেই অরিত্রা হাটতে লাগলো, বদ মেয়ে মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।

পিছনে থেকে প্রাপ্তি চি*ল্লান দিয়ে বলল,

” তোর পূজা করা লাগবে না, সায়র মাহমুদ ভাইকে পূজা করার জন্য পুরো ভার্সিটির মানুষ ই আছে!”

অরিত্রা শুনলো কথাটা, ঠোঁট যুগল নাড়িয়ে বার দুয়েক উচ্চারণ করলো নাম টা,

” সায়র মাহমুদ ”

কোথাও যেন মিল পাচ্ছে নাম টায়!

চলবে..

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#সূচনা_পর্ব

[ কেমন লাগলো প্রথম পর্বটা? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here