#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৯
__________________
” আসবো ছোট মা? ”
মুনারা আক্তার বিছানায় বসে কুরআন পড়ছিলেন। ঘড়ির কাটা ঘুড়ে রাত তখন প্রায় ১০ টা বাজতে চলল। খাবারের পর রাতের এই সময় টা অবসর ই থাকেন তিনি তাই প্রায়ই কুরআন নিয়ে বসেন।
হঠাৎ দরজার বাইরে মুনতাসিমের কন্ঠ শুনতে পেয়ে আয়াত শেষ করে চোখ তুলে তাকালেন মুনারা আক্তার । সাথে বেশ অবাকই হলেন তিনি কারণ মুনতাসিম সচরাচর কাজ ছাড়া কারোর রুমেই আসে না। তাদের রুমে তো ভুলেও না। আজ হঠাৎ!
” আসো মুনতাসিম ”
মুনতাসিম মুচকি হেসে রুমে ঢুকলো। মুনারা আক্তার কুরআন শরীফ বন্ধ করে মুচকি হেসে বললেন,
” কি ব্যাপার আব্বা? আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো আপনি আমার ঘরে! ভুলে চক্করে চলে এলেন না তো? ”
কথা গুলো মুনারা বেশ রসিকতা করে ই বলল। মুনতাসিম মুচকি হেসে বিছানায় বসলো,
” না ঠিক তেমন কিছু না।”
কথাটা বলেই আশেপাশে তাকালো, ” মেহের কোথায় দেখছি না তো। ”
” তোমার বোন গুলো কি আর আমার কথা শুনে? যা একটু তোমাকে ই ভয় করে। মিনুটা ও কথা শুনে না আর ছোট টা মেহের এটা তো শুনেই না। ওই যা একটু বাধ্য হলো মেধা। ”
” মেধা আসে নি? ”
মুনারা হতাশ কন্ঠে বলল,
” মেয়েটা আমার কতদিন যাবত বাড়িতে আসে না। ছুটির কথা ছিলো এই সপ্তাহে কিন্তু ওটা ক্যান্সেল করে পরের সপ্তাহে নিয়ে গেলো। মনে হয় পরের সপ্তাহে আসবে। আর মেহের গেছে ওর নানুর বাসায়, কাল চলে আসবে। ”
মুনতাসিম মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো। মুনারা আক্তারের কথা শেষ হতেই মুনতাসিম গলা পরিষ্কার করে এক ভ্রু উঁচু করে চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” তুমি তো মেহেরের জন্য নিউ টিউটর খুঁজছ তাই না ছোট মা? ”
মুনারা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” হ্যা। তোমার বোনের আবার টিউটর পছন্দ হওয়া লাগে নয়তো পড়বে না। তাসফিকে নাকি তার ভালো লাগে না তাই ওকে বাদ দিতে হয়েছে কি একটা যন্ত্রণা বলো তো! এখন নিউ টিউটর পাবো কোথায় ক্লাস এইটের জন্য! ”
” ওই টিউটর কে মাসিক কত দিতে? ”
” সাড়ে আট হাজার দিতাম, কেনো বলো তো ”
মুনতাসিম গলা পুনরায় পরিষ্কার করে বলল,
” আমার খোঁজে একজন টিউটর আছে। আমি ওনার সাথে কথা বলে দেখি। আমার মতে ভালোই পড়ান ওনি। তবে মাসিক ১০ হাজার দিতে হবে ”
” ও সমস্যা নেই, তোমার বোনের পছন্দ হলেই হলো ”
” আমি কথা বলব মেহেরের সাথে আশা করি আমি বললে মানা করবে না ”
মুনারা আক্তার হাসলেন। মুনতাসিমের কথায় সায় জানিয়ে বললেন,
” মানা করবে কি টু শব্দ ও করবে না যদি শুনে তুমি টিউটর দিয়েছো! ”
মুনতাসিম মাথা নাড়িয়ে উঠে দাড়ালো।
” ঠিক আছে ছোট মা বিরক্ত করলাম, আসি! ”
বলেই কাল বিলম্ব না করেই শব্দ যুক্ত পায়ে ঘর ত্যাগ করলো। মুনারা আক্তার মুনতাসিমের যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো, তার কোথাও না কোথাও গিয়ে খটকা লাগছে বয় কি! মুনতাসিম তো কখনো এসব কোন বিষয়ে মাথা ঘামায় না আর না ওকে পই পই করে বলেও কিছু করানো যায়। সেই ছেলে যেচে এসে টিউটরের খবর জানালো ব্যাপার কি? রহস্য তো আলবাত আছে। তার আগে কথা হচ্ছে টিউটর কি ছেলে? নাকি মেয়ে?
মুনতাসিম মুনারা আক্তারের রুম থেকে বের হতেই সামনে পড়লো মিনু। মিনু এই রুমের দিকে ই আসছিলো। হঠাৎ মুনতাসিম কে দেখে খানিকটা থমকে গেলো সে। এক ধ্যানে তাকালো মুনতাসিমের শুভ্র মুখোশ্রী তে। মুনতাসিমের গায়ের রং টা অনেক টা শ্যাম শুভ্রের মাঝামাঝি তে। পরনে নেভি টি শার্ট আর কালো রঙের টাওজার । চুল গুলো এলোমেলো হয়ে কপালে সেঁটে আছে। দেখতে বেশ এট্রাক্টিভ লাগে মিনুর কাছে। যদিও মুনতাসিমের সকল রুপই তার কাছে একেক রকমের সুন্দর মনে হয়। আমরা যাদের ভালোবাসি তাদের সবকিছু ই আমাদের ভালো লাগে ব্যাপারটা ঠিক এমনই।
মুনতাসিমের চোয়াল শক্ত হলো তৎক্ষনাৎ, বোন হিসেবে যথেষ্ট ভালোবাসে সে মিনুকে কিন্তু মেয়েটার বেহায়ামি দিন কে দিন বেড়েই চলেছে।
” কোন কাজ ছিলো মুনতাসিম ভাই? ”
মিনুর হাস্যোজ্জ্বল মুখ মুনতাসিম শক্ত কথা বলার জন্য মুখ খুলতেই পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবেই দমে গেলো।
” না”
বলেই মিনুকে পাশ কাটালো। মুনতাসিম শব্দ যুক্ত কদমে স্থান ত্যাগ করলো। মিনুর চোখে জল নিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো মুনতাসিমের যাওয়ার দিকে ঠিক যতক্ষণ না পর্যন্ত তার কায়া অস্পষ্ট হলো।
মুনতাসিম অদৃশ্য হতেই জলকণা গাল গড়িয়ে মাটিতে পড়লো ঠিক যেন রাতের আকাশে তারকারাজি খসে পড়ে। ভেতর থেকে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো।
” আফসোস হয় জানো মুনতাসিম ভাই? তোমাকে যদি একটু কম ভালোবাসতাম? যদি তোমার জন্য মায়া আরেকটু কম কাজ করতো? যদি নিজের এই বিচ্ছিরি মন টা রে আরেকটু সামলাতে পারতাম? আর একটু সামলাতে পারলেই কষ্ট একটু কম লাগতো বোধহয়!”
মিনু পুনরায় পা ঘুরিয়ে নিজের রুমের দিকে এগুলো।
___________
ঘড়ির কাটায় রাত তখন প্রায় দশটা ছুঁই ছুঁই। অরিত্রা হাতের কাজ শেষ করে ভাইয়েদের রুমে উঁকি দিয়ে মায়ের রুমের দিকে এগুলো। মায়ের রুমে দরজায় কিছু ক্ষন উঁকি ঝুকি মেরে ও মায়ের কোন হদিস পেলো না সে। কি আশ্চর্য! এই মহিলা গেলো কোথায়! অরিত্রা সোজা রুমে ঢুকে বারান্দায় গেলো, ওখানে ও নাই। সেখান থেকে ড্রয়িং রুম থেকে টিভির আওয়াজ আসতেই অরিত্রা দ্রুত পায়ে ড্রয়িং রুমে গেলো।
নাহিদা বেগম এক ধ্যানে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে যেন পলক ফেলতেও ভুলে গেছে। চোখ দুটো ছলছল করছে। অরিত্রা কিছু ক্ষন মায়ের দিকে তাকিয়ে ও বিষয়টার আগামাথা কিছু ই বুঝলো না। অরিত্রা টিভির দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে খবর চলছে, বিশিষ্ট ব্যবসায়িক এবং শিল্প পতি আনোয়ার পাশা নতুন গার্মেন্টস উদ্ভোদন করছে যেখানে বড়ো বড়ো করে তার নাম লেখা “এন. এ. গার্মেন্টস এন্ড ফ্যাক্টরি ” লোকটা অনেক বড়লোক সেটা তার বেশ ভুসা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অরিত্রা অনেক বার লোকটাকে দেখেছে টিভিতে এবং নাম ও শুনেছে অনেক। কিন্তু নাহিদা বেগম কি দেখছে সেটাই বুঝতে পারছে না।
” আম্মু শুনছো? ”
নাহিদা বেগম চমকে উঠলেন। অরিত্রার উপস্থিতি তিনি টের পান নি। চোখ মুখ স্বাভাবিক করে বললেন,
” ঘুমাস নি এখনো? সারাদিন তো কম দৌড়াস না এখন একটু ঘুমা গিয়ে ”
” সেটা তো কথা না, তুমি খবর দেখে কাঁদছো কেন সেটায় কথা! ”
নাহিদা বেগম ভড়কে গেলেন, আমতা আমতা করে বললেন,
” ককি বলছিস! কাদব কেন? আজব! তুই বেশি দেখিস। যা ঘুমা গিয়ে অরি ”
অরিত্রা চোখ ছোট ছোট করে মায়ের দিকে তাকালো, সে বুঝতে পারছে তার মা এসব বিষয়ে বলতে অনিচ্ছুক তাই আর জোর করলো না, কিছু কিছু জিনিস নিজের মধ্যে রাখাই ভালো হয়তো নাহিদা বেগম কথাটা নিজের মাঝে ই রাখতে চাইছে।
অরিত্রা এগিয়ে গিয়ে মায়ের হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বলল,
” আমি তো ঘুমাবো, তুমিও চলো আর খবর দেখতে হবে না ”
নাহিদা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
” তুই যা, আমি আসছি। রাতে আবার মোবাইল ঘাটিস না ঘুমিয়ে যাবি। তোর ঘুমের দরকার আছে। ”
অরিত্রা উঠে দাড়ালো, মুচকি হেসে বলল,
” ঠিক আছে গেলাম। তুমি বেশিক্ষণ থেকো না কিন্তু ”
বলেই অরিত্রা চলে গেলো। নাহিদা বেগম হাসলেন। মেয়েটা একদম ওর বাবার মতো খুব দায়িত্ববান আর যত্নশীল ।
চলবে…
[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু ]