দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_১০

0
74

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_১০
________________

” হেই অরিত্রা! ”

পিচ ঢালা রাস্তার পাশ ধরে আনমনে হেঁটে যাচ্ছিলো অরিত্রা। মাত্র ই ভার্সিটি থেকে ফিরছে। মাথার উপরে বসে থাকা সূর্য টাও তাপ দিয়ে একটুও কার্পন্য করছে না। রোদের তাপে চেহারা লাল হয়ে আছে। কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। হঠাৎ পিছন থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে ডান হাতের মুঠোয় থাকা ওড়নার কোনা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফিরে তাকালো সে।

পিছনে ফিরতেই ইফতেখারের হাস্যোজ্জ্বল মুখ টা নজরে এলো । ইফতেখার কালো রঙের একটি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো অরিত্রা এগিয়ে গেলো সে দিকে। ততক্ষণে ইফতেখারের পাশে এসে দাড়ালো কেউ অরিত্রার নজর গেলো সেই দিকে।

এই তপ্ত দুপুরে কেউ কালো মাস্ক আর চশমা পড়ে রাখে নাকি। পরক্ষণেই ভাবলো হয়তো তার মতোই ডাস্ট অ্যালার্জির সমস্যা হবে। সবাই তো আর মতো বেখেয়ালি না। প্রতিদিন রাতে কাশতে কাশতে দম বেরিয়ে যাবার জোগার হয় তবুও মাস্ক পড়তে মনে থাকে না। নাহ্ এবার থেকে রেগুলার ইউজ করতে হবে নয়তো অসুস্থ হওয়া মানে টাকার জলাঞ্জলি দেওয়া।

অরিত্রার নজরের দিকে খেয়াল হতেই ইফতেখার বলে উঠলো,

” ও আমার জানে জিগার দোস্ত মু…”

অরিত্রা তাকালো ইফতেখারের দিকে। ইফতেখার তড়িৎ বেগে তাকালো মুনতাসিমের দিকে। কালো চশমার আড়ালে বাজ পাখির চোখ টা ঠিক ই নজরে এলো তার। ইফতেখার দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,

” হে হে হে, মুর পরানের দোস্ত ও”

অরিত্রা ছোট করে বলল,

” ওহ ”

” ভার্সিটি থেকে মাত্র ই ফিরলে নাকি? ”

ইফতেখারের কথায় মাথা নাড়িয়ে হাসলো। সাথে হাসলো ইফতেখার ও।

” তা এই রোদে হেটে যাচ্ছো? রিকশা নিতে! ”

” না সমস্যা নেই। আমি অভ্যস্ত এই তো সামনেই বাসস্টপ। বাসে করেই যাবো ”

ইফতেখার মাথা নাড়ালো। অরিত্রা মুচকি হেসে বলল,

” তা কোথাও যাচ্ছিলেন ইফতেখার ভাই? ”

” তোমার কাছেই আসছিলাম ”

” আমার কাছে! ” অরিত্রা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।

” হ্যা আসলে হয়েছে কি! আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বোনের জন্য একজন ভালো টিউটর খুঁজছিলো, আজ বলল আমাকে। আমি ভাবলাম তোমাকে একবার বলে দেখি তোমার যদি সময় থাকে তাহলে একটু পড়া বুঝিয়ে দিতা আমার বোনটা কে। ”

অরিত্রা ভাবলো মিনিট দুয়েক। ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,

” কোন ক্লাসে পড়ে? ”

” ক্লাস এইট ”

” ওহ, কিন্তু ভাইয়া আমার কাছে সকালে ছাড়া তো আর সময় নেই। ওনারা যদি সকালে পড়াতে ইচ্ছুক হয় তাহলে আমি যেতে পারি।”

অরিত্রার সংকোচ বিহীন কথা।

” তা নিয়ে তুমি ভেবো না। সকাল, দুপুর, রাত তুমি যখন ই সময় পাও তখন ই পড়াবে। তবে একটা কথা..

অরিত্রা ভ্রু কুঁচকালো,

” কি কথা ইফতেখার ভাই? ”

” আসলে আমার বন্ধুর ফ্যামিলি অনেক স্ট্রিক তো তাই নতুন টিউটর রাখলে এক বছরের আগে কোন মতেই পড়ানো অফ করে দেওয়া যাবে না”

” সে না হয় বুঝলাম। ঠিক আছে পড়াবো। উনাদের জানিয়ে, ডেট টা আমাকে জানিয়ে দিয়েন আর লোকেশন টা মেসেজে সেন্ড করে দিয়েন ভাইয়া ”

ইফতেখার তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো,

” না তুমি বরং কাল থেকে ই পড়াতে আসো। যেহেতু মেহেরের স্কুল ১০ টায় তুমি বরং ৮:৩০ থেকে পড়াও ওকে।

পরক্ষণেই পাশে তাকিয়ে বলল,

” কোন সমস্যা হবে ভাই ? ”

মুনতাসিম এতক্ষণ কালো চশমার আড়ালে অরিত্রাকেই পর্যবেক্ষন করছিলো। ইফতেখারের কথা শুনে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” না”

কন্ঠ টা বেশ পরিচিত ঠেকলো অরিত্রার কাছে। আপাতত এসব বিষয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তার হাতে। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ইফতেখার কে বলল,

” তাহলে আজ আসি ভাইয়া। হাতে একদম সময় নেই। আম্মুর শরীর টাও ভালো না ঔষধ কিনতে হবে ”

” কি হয়েছে চাচিমার? ”

অর্ধপরিচিত উতলা কন্ঠ শুনতে পেয়ে কপাল কুঁচকে তাকালো অরিত্রা। অরিত্রার দৃষ্টি লক্ষ্য করে মুনতাসিম সরাসরি তাকালো অরিত্রার দিকে যদিও অরিত্রার থেকে তার দৃষ্টি আড়ালেই রয়ে গেল।

অরিত্রা তেমন কিছু বলল না শুধু ধীর কন্ঠে বলল,

” তেমন কিছু না। হার্টের একটু সমস্যা। বুকে ব্যথা! ”

” অরিত্রা চলো তোমাকে আমি পৌঁছে দেই! ”

ইফতেখার অরিত্রার দিকে তাকিয়ে ই কথাটা বলল।

অরিত্রা মুচকি হাসলো,

” না ভাইয়া। আমি বাসেই যাবো, ওসব বড়ো গাড়ি তে আমার অভ্যাস নেই। ”

কি সাবলীল ভাবে কথা টা বলল সে। অথচ অরিত্রা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারলো না তার এই সামান্য কথা সোজা কারো বুকে আঘাত করলো।

কথা টা বলে অরিত্রা আর থামলো না পিছনে ফিরে চলে এলো সেই জায়গা থেকে।

অরিত্রার প্রস্থানের পরই চোখ থেকে চশমা খুলে ফেলল মুনতাসিম। ঘাড় ঘুরিয়ে ইফতেখারের দিকে তাকাতেই দেখলো ইফতেখার চোখ দুটো ছোট ছোট করে তার দিকে ই তাকিয়ে আছে।

” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? ”

” ব্যাপার কি বল তো? তুই কি অরিত্রাকে চিনিস? আমার তো মনে হয় না তুই জীবনে ওকে দেখেছিস! তাহলে হঠাৎ ওর প্রতি তোর এতো ইন্টারেস্ট কেন? আর এতো খবর নিলিই বা কেন? তোর পরিচয় গোপন ই বা রাখলি কেন? ”

মুনতাসিম তীর্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ইফতেখারের দিকে। ইফতেখার খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বলল,

” এভাবে তাকাস কেন? আমি কি তোকে ভয় পাই নাকি? তুই সন্দেহ জনক কাজ করতে পারবি আর আমি জিজ্ঞেস করলেই দোষ! ”

” সময় হলে সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি। আর আমার পরিচয় দিলে কিংবা আমার পরিবারের পরিচয় দিলে অরিত্রা কখনোই আমার বাড়ি তে যাবে না সেটা জেনে রাখ। আর ভুলেও যেন আমার সার নেইম কিংবা মজুমদার নামটা ওর সামনে উচ্চারণ করা না হয়, মাইন্ট ইট! ”

বলেই মুনতাসিম পুনরায় চশমা টা চোখে দিয়ে গাড়ি তে উঠে বসলো। এক নাগাড়ে গাড়ির হর্ন বাজাতেই চমকে উঠলো ইফতেখার। এতো ক্ষন সে গভীর ভাবনায় ডুবে ছিলো। তৎক্ষনাৎ গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসতেই মুনতাসিম গাড়ি স্টার্ট করলো।

_______________

অরিত্রা বাসে উঠে দেখলো বাসে তেমন লোক নেই। এই মুটামুটি আর কি। অরিত্রা সামনের দিকে একজন মহিলার সাথে বসে পড়লো। এদিকে প্রাপ্তি একটার পর একটা কল মেসেজ করেই যাচ্ছে।

অরিত্রা কোলের উপর ব্যাগ টা রেখে মোবাইল বের করলো। পাবলিক প্লেসে মোবাইলে কথা বলা অরিত্রার ভালো লাগে না। তাই মেসেজ করলো প্রাপ্তিকে যে সে বাসায় গিয়ে তাকে কল ব্যাক করবে কিন্তু এই তাড় ছিঁড়া মেয়ে কি শোনবার পাত্রী!

একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে আর অরিত্রা রিপ্লাই দিচ্ছে তবে মোবাইলের স্ক্রিন লাইট লো তে দেওয়া সাথে সাইলেন্ট করা। তাই শব্দ হচ্ছে না তবে অরিত্রা অনেক ক্ষন যাবত খেয়াল করছে তার পাশে বসে থাকা মহিলা বার বার উঁকি ঝুকি দিচ্ছে অরিত্রার ফোনের দিকে। হয়তো অরিত্রা ফোনে কি করছে বা কাকে মেসেজ করছে দেখার জন্য।

অরিত্রা বেশ বিরক্ত হলো। এই দেশে নিজস্ব প্রাইভেসি বলতে কিছু নেই। এই যে এখন এই মহিলা এভাবে গোয়েন্দা দের মতো উঁকি ঝুকি মারছে দেখার জন্য!

শেষ পর্যন্ত অরিত্রা তুমুল বিরক্ত হলো। আরেকবার যখন মহিলা উঁকি দিলো অরিত্রা সাথে সাথে উনার দিকে তাকিয়ে মহিলার হাতে মোবাইল টা ধরিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,

” এতো উঁকি ঝুকি দেওয়ার কি আছে আন্টি। তার চেয়ে বরং আমি বলি আপনি লেখেন। এটাই বেটার কি বলেন? ”

মহিলা খানিকটা থতমত খেয়ে গেলো। হয়তো তিনি ভাবেন নি মেয়েটা এমন সাংঘাতিক কাজ করে বসবে। মহিলার মুখ থমথমে হয়ে গেলো। মোবাইল টা অরিত্রার ব্যাগের উপর রেখে সোজা হয়ে বসলো।

” কি ব্যাপার আন্টি রেখে দিলেন যে! আপনি তো এমনিতেই দেখছিলেন তার চেয়ে বরং আপনি ই লেখেন। আমার অযথা কষ্ট করা কোন মানে হয়!”

মহিলা অরিত্রার দিকে না তাকিয়ে সেই সিট ছেড়ে উঠে অন্য সিটে চলে এলেন। তা দেখে অরিত্রা ঠোঁট চেপে হাসল।

ভালোই শিক্ষা হয়েছে উনার। এই জীবনে মনে থাকলে আর ওসব রাস্তা ঘাটে গোয়েন্দা গিরী করবে না।

চলবে…

[ আজকের পর্বটা কেমন হ’য়েছে জানাবেন কিন্তু ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here