#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৭৩
🍁
—” দেখ ভাই! আমার সাথে আর যায় হোক পাওয়ার পাওয়ার খেলতে আসবি না। তুই তো আমাকে চিনিস! নিজের ভাইয়ের সাথে আর যায় হোক আমার পাওয়ার দেখাতে ভালো লাগবে না অবশ্যই। বউয়ের জন্য সর্বোচ্চ করতে পারি তারপরও বউ নিয়ে চুল পরিমাণ ছাড় পছন্দ নয়।
.
কথাটা বলেই এ্যাটিটিউটের সাথে রুদ্রের দিকে তাকায় রিদ। চোখে মুখে এক রহস্যময় তৃপ্তিতা চেয়ে আছে। কোনো কিছু হাসিল করার তৃপ্তিতা। রিদের কথায় রুদ্র একেবারে দমে না গেলেও ঘায়েল প্রেমিকের মতো তাকিয়ে ছিল মায়ার দিকে। মায়া কি বলে সেটা জানার জন্য? আর মায়া রিদকে ধরে মাথা নিচু করে কেঁদে যাচ্ছিল। হয়তো নিজের অপরাধ বোধটা এতটাই বেড়ে গেছে যে নিজেকে রুদ্রের সামনে তুলে ধরতে পারছিল না । নিজের মনে কথা গুলো পরিবার বা রুদ্রের সামনে বলতে পারছে না। আর না পারছে সবাইকে নিজের অতীত সম্পর্কে কিছু বলতে। এই মূহুর্তে মায়া ও রিদ কেউ তাদের অতীত সম্পর্কে পরিবারকে কিছু বলছে না। মায়া নিজের পরিবারেকে কিছু বলতে পারছে না এই জন্য যে, মায়া ধারণা মায়া পরিবার জানে মায়া তার অতীত সম্পর্কে কিছুই অবগত নয়। এবং তার পরিবার তাকে সেইফ রাখার জন্য তাঁকে তার অতীত থেকে দূরে রেখেছে এতোদিন ধরে যাতে মায়ার ব্রেন কোনো রকম চাপ না পড়ে তাই। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এখন যদি সবাইকে বলে যে সে তার অতীত সম্পর্কে সবকিছু জানে। তাহলে সেটা তার পরিবার জানতে চাইবে কিভাবে জানে? মায়া যদি সবাইকে সবটা খুলে বলে যে, তাঁকে রিদ তার অতীত সম্পর্কে সবকিছু বলেছে। কিন্তু মায়ার সৃতিশক্তি ফিরে আসেনি একেবারেই তাহলে সবাই রিদকে মিথ্যা বলে দাবি করবে।
.
কারণ রিদ অতীতে মায়ার জন্য মিথ্যা মা-বাবা বানিয়ে পাঠিয়েছিল মায়ার পরিবারের সামনে। আর তারা বলেছিল যে তাদের সাথেই ছিল মায়া বিঘত পাঁচ বছর ধরে। তাই সেটা ধরেই সবাই এখন রিদকে মিথ্যাবাধী বলে দাবি করবে। আর এখন সবাইকে সবটা প্রমাণ করতে গেলেও অনেক কিছু প্রোব করা প্রয়োজন হবে। যার কিছু এই মূহুর্তে রিদের কাছে থাকবে না মায়ার জানা মতে। মায়া ধারণা অনুযায়ী মায়ার অতীতে থাকা আশ্রমটিতে সে ছিল এমন কোনো রকম রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ মাদার ও ফাদার যেহেতু মেয়ে বিক্রি করে দিতো সেহেতু সেখানকার মেয়েদের সব রেকর্ড আগে থেকেই ফাদার ও মাদার সরিয়ে ফেলতো যাতে কোনো রুপ সমস্যা না হয়। সমস্যা হলে যাতে বলতে পারে সবাইকে যে এই নামে মেয়েরা কখনো এই আশ্রমে ছিলই না। আর এখন তো ফাদার ও মাদার কেউ জীবিত নেই কারণ রিদ নিজেই মেরে ফেলেছে সেটা মায়া নিজেই ডাইরিতে পড়েছে। তারা জীবিত থাকলে হয়তো রিদ তাদের ভয় দেখিয়ে পরিবারকে প্রমাণ করতে পারতো যে মায়ার সাথে তার একটা অতীত ছিল। মায়া কোনো প্রকার পরিবারের ছিল না একটা আশ্রমের ছিল। বর্ষা ও কেয়া কেউ জীবিত নেই যে যার মাধ্যমে রিদ প্রমাণ করবে এসবকিছু। মায়া সবটা আগে থেকে ভেবেই চুপ করে আছে এই মূহুর্তে পরিবারের সামনে তাদের অতীত সম্পর্কে না বলে। মায়া চাই না রিদকে তার পরিবারের সামনে ছোট করতে। তাদের ভালোবাসাকে পরিবারের সামনে মিথ্যা বানাতে। এখান যদি মায়ার সৃতিশক্তি ফিরে আসতো তাহলে মায়া এখানে সবাইকে নিদ্বিধা সবটা বলতে পারতো সাহসীকতার সাথে। কিন্তু না থাকায় চুপ থাকতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু রিদ? রিদ কি জন্য চুপ করে আছে সেটা একমাত্র রিদই বলতে পারবে! রিদ অজানা রহস্য নিজের মধ্যে সংযম রেখে সবার সামনে স্বাভাবিক বগিতে দাঁড়িয়ে আছে। আর রুদ্র মায়া দিকে ঘায়েল হওয়া বগিতে তাকিয়ে আছে। মায়া নিচের দিকে তাকিয়ে হিচকি তুলে কান্না করতে করতে রিদের একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠে……..
.
—” আমি উনার (রিদ) থেকে কোনো ডির্বোস চাই না। আমি উনার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই। কারণ আমিও উনাকে ভালোবাসি।
.
মায়ার এমন কথায় সাথে সাথে রুদ্র মায়ার চেপে ধরা হাতটা ছেড়ে দেয়। কারণ মূহুর্তে যে রুদ্রের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে যদি অন্য কারও নাম থাকে তাহলে সেখানে নিজের নামটা লিখা অর্থহীন। রুদ্র মায়ার হাতটা ছেড়ে দেওয়া সাথে সাথে মিসেস আয়েশা রাগে ফেটে পড়া ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে মূহুর্তেই আবারও একটা ঠাসসস করে চড় বসাই মায়ার গালে। আকস্মিক ঘটনায় আবারও সবাই চমকে উঠে। এবারও কেউ প্রস্তুত ছিল না এমন কাজের জন্য। পর পর দুই দুইবার মায়ে হাতে চড় খাওয়াতে হু হু শব্দ করে কেঁদে ওঠে মায়া। মায়া জানে মায়া এখানে উপস্থিত সবার অপরাধী সবচেয়ে বড় অপরাধী হচ্ছে রুদ্রের। কিন্তু মায়া নিজেও বা কি করবে? নিজের ভয়ানক অতীতে কথা তো কিছু মনে নেই তার। রিদ বা রিদের ভালোবাসাও তো কিছুই মনে নেই। তাই রিদকে দ্বিতীয় বারের মতো নতুন করে ভালোবাসতে দেরী হয়ে গেছে মায়ার। নতুন করে ভালোবাসাতে সময় সবার লাগে। বললেই ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসতে মন লাগে। আর যদি মায়া আগের থেকে সবকিছু জানতো তাহলে হয়তো কখনোই রুদ্রকে স্বপ্ন দেখাতো না। এখানে মায়াও তো নিরপায় ছিল। কিভাবে বুঝাবে মায়ার অসহায়ত্ব কথা গুলো? মিসেস আয়েশা রাগে বর্ষে মায়াকে চড় মারতেই ক্ষেপ্ত হন রিদ। পরপর দুই দুইবার মায়াকে আঘাত করাতে মোটেও পছন্দ হয়নি রিদের। রিদ সবার সামনে মায়াকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে নিজের লাল লাল চোখে তাকাই মিসেস আয়েশা দিকে। পরে নিজেকে সংযম রেখে শক্ত গলায় মিসেস আয়েশা বলে উঠে……
.
—” আমি আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ রেসপেক্ট করি। তারমানে এই নয় আপনি আমার বউকে যখন তখন মারবেন।৷ আমি আমার বউকে মারার প্রারমিশন কাউকে দেয়নি। আপনাকেও নয়। আমার বউ আপনার মেয়ে ছিল আমার বিয়ে করার আগে। সে এখন আমার স্ত্রী। আমাদের নিয়ে সমস্যা আপনাদের সবার আমাদের নয়। তাই আমি আমার বউকে নিয়ে চলে যাচ্ছি। আমরা যাওয়ার পর হয়তো আপনাদের আর কোনো সমস্যা থাকবে না হয়তো আশা করি।
.
রিদের এমন কথায় মিসেস আয়েশা রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো……
.
—” আমার এমন নষ্ট মেয়ের দরকার নেই।
.
মিসেস আয়েশা এমন উক্তিতে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে মায়া তারপর মাকে কিছু বলার চেষ্টা করে নি মায়া। আর রিদ যেন মিসেস আয়েশা এমন কথায় অপেক্ষা করছিল। মিসেস আয়েশা নিজের কথাটি শেষ করার সাথে সাথেই রিদ মায়াকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে মিসেস আয়েশা দিকে তাকিয়ে বললো…..
.
—” Thank you শাশুমা…..
.
রিদের এমন কথায় মূহুর্তে মিসেস আয়েশা সহ উপস্থিত সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রিদের দিকে। রিদ কি জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছে না বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকে। রিদ মিসেস আয়েশাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে যাবে পাশ থেকে দ্রততার সঙ্গে হেনা খান এগিয়ে এসে উত্তেজিত হতে রিদকে আটকানোর চেষ্টা করে বললো……
.
—” রি রিদদদ, আমা……
.
হেনার খানের সম্পূর্ণ কথাটি শেষ করতে না দিয়ে রিদ রিদ বিরক্তি নিয়ে বললো……
.
—” দাদী plzz, not this time plzzx. দাদী তোমার এই মূহুর্তে আমার পাশে নয় রুদ্রের পাশে থাকার দরকার। আমি ভালো আছি বাই……
.
কথাটা বলেই ভরা সদস্যের সামনে দিয়ে মায়াকে কোলে করে বেড় হয়ে যায়। পিছন ফিরে একটাবারও তাকানো প্রয়োজন মনে করেনি রিদ। আর মায়াও মায়ার কথায় কষ্ট পেয়ে রিদকে কিছুই বলেনি। রিদের সাথে পাড়ি দেয় অজানা পথে। আসিফ রিদকে কোলে নিয়ে মায়াকে বেড় হতে দেখেই দ্রততা সঙ্গে গাড়ি বের করে। যেন সবকিছু আগের থেকে রিদ রেডি করে রেখেছিল সবকিছু। রিদ মায়াকে নিয়ে পিছন সিটে বসতেই আসিফ গাড়ি চালাতে শুরু করে রিদের বাংলোর উদ্দেশ্য। রিদ আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে পিছনে সিটে বসে আছে চুপচাপ আর মায়া রিদের বুকের ওপর মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেই চলছে লাগাতার। রিদ মায়ার মাথায় আলতো করে ডীপলি একটা চুমু খেয়ে মায়ার মাথাটা শক্ত করে নিজের বুকের চেপে ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে বাহিরের দিকে তাকায়। চলমান গাড়ির জালানা দিয়ে বাহির দৃশ্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎই বাঁকা হেঁসে ওঠে রিদ। নিজের ঘাড় বাঁকা করে আসিফকে এক পলক দেখে আবারও বাহির দিকে তাকায়। রিদের বাঁকা হাসিতে ছিল তৃপ্তিতা। যাহ প্রকাশ করে সবকিছুই রিদের কথা অনুযায়ী কাজ হওয়াকে বুঝায়। রিদ বাহিরের দৃশ্য দেখতে দেখতে বাঁকা হাসি নিজের ঠোঁটের ওপর ঝুলিয়ে রহস্যময় ভাব নিয়ে নিজে নিজেই আপন মনে বলে উঠে……
.
—” লক্ষই ব্যাক্তির পথ ঠিক করে। তাই তুমিটা ছিলে আমার লক্ষ। বাকি সব ছিল মাত্র এক একেকটা পথ যাহ পেরিয়ে মঞ্জিল অবধি পৌঁছানোর একটা মাধ্যম। যদি তোমার (মায়াকে উদ্দেশ্য করে) ভাষায় বলি তো অবশেষে জয় bed King হলো। মানে it’s me!
.
কথা বলেই রিদ ডীপলি বাঁকা হেঁসে গাড়ির সিটের মধ্যে নিজের মাথাটা এলিয়ে দেয়। আর মায়া নিজের কান্নায় ও মন মানসিকতায় এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে রিদ কথা গুলো মায়ার কান অবধি পৌঁছাতে পারিনি। যদি শুনতে পারতো তাহলে হয়তো খানিকটা হলেও বুঝতে পারতো রিদের প্রতিটা কথার গভীরতা গুলো……
.
( কাল অবশ্যই দিব)
.
.
.
চলবে……….