প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১৬

0
69

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১৬

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

কানের কাছে নিয়ে বলল – হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম। কে বলছেন?

ওপাশ থেকে উত্তর এলো না কোনো। শুধু শোনা গেল কারো নিঃশ্বাসের ধ্বনি। তনু বিরক্ত হলো, বিরক্তপূর্ন কন্ঠে বলল – কথা বলছেন না কেন? কে আপনি?

এবারও কোনো উত্তর এলো না ওপাশ থেকে। তনু তেতে উঠল, ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – ফাজলামো পেয়েছেন? এত রাতে কল দিয়ে কথা….

কথাটা পূর্ণ করতে পারলো না সে। ওপাশের ব্যক্তিটি কল কেটে দিয়েছে। তনু মোবাইলটা কানের কাছ থেকে নামানো, বিরক্ত নিয়ে বলল – কেটে দিলো? কোথা থেকে যে আসে এসব উটকো ঝামেলা।

____________________________________

সকাল থেকে ব্যস্ত পায়ে দৌড়ে চলছে মেঘা। একটু বসার সময় পর্যন্ত পায়নি। হাসপাতালে আজ রোগীর চাপ বেশি। তাহসিনের পরপর আজ ওটিও আছে। মেঘাকে আবার এখান থেকে কাজ শেষ করে ক্লাসেও যেতে হবে। তাহসিনের কড়া নির্দেশ সামনে একটা ক্লাসও মিস দেওয়া যাবে না। দৌড়াতে দৌড়াতে মেঘার জীবন যায় যায় আর এনি আছে ক্লাস নিয়ে। তাহসিনের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটলো মেঘা। কিছু রোগীর ফাইল দেখছিল তাহসিন। ফাইল দেখতে দেখতেই বলল – ভেংচি কেটে লাভ নেই। ফাঁকিবাজি আমি একদম পছন্দ করি না সো ক্লাস মিস দেওয়া চলবে না।

মেঘা অবাক হলো। এই লোক তো ফাইল দেখছে তাহলে তাকে কিভাবে দেখলো? বড়ই ধুরন্ধর লোক। ঘড়ির দিকে তাকালো মেঘা, বলল – স্যার ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে। এখন তাহলে ক্লাসে যাই আমি?

তাহসিন ফাইলের দিকে চোখ রেখেই বলল – আচ্ছা।

মেঘা কাঁধের ব্যাগটা ঝুলিয়ে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা ধরলো। দরজা পর্যন্ত যেতেই পিছু ডাকলো তাহসিন, বলল – শুনুন!

পিছু ঘুরলো মেঘা, বলল – কি?

তাহসিন ড্রয়ার খুলে একটা পানির পট বের করলো, মেঘার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল – এটা নিন।

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা। তাহসিনের হাত থেকে পানির পটটা নিতে নিতে বলল – এটা কি?

– গ্লুকোজ। ভীষন গরম পড়েছে আজ। আপনার প্রয়োজন হবে এটা।

মেঘা অবাক হলো কিন্তু মুখে কিছু বলল না। পানির পটটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

ক্লাসে গিয়ে বসতেই স্যার ঢুকলো ক্লাসে। একটু শান্তি নেই কোথাও। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো মেঘা। ক্লাসে স্যার নতুন তথ্য দিলেন বললেন দুই একদিনে কাছে পিঠে ক্যাম্পিং এ যাওয়া হবে। সাথে কয়েকজন শিক্ষার্থীও যাবে। ক্লাসের অনেকেই ইচ্ছে প্রকাশ করলো যাওয়ার কিন্তু স্যার জানালো এটা তারা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিবে কাকে কাকে নিয়ে যাবে। মেঘা চুপ রইলো যেহেতু তাহসিন যাবে সে তাহসিনের এসিস্ট্যান্ট অবশ্যই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই এখানে আর কথা বাড়ালো না সে। মনে মনে ভীষণ খুশিও হলো। যাক তাহসিনের এসিস্ট্যান্ট হয়ে একটা ভালো কিছু তো হলো। এই সুযোগে তার একটু ঘোরাও হবে।

মিটিং বসেছে ডাক্তারদের। এখানে সিনিয়র জুনিয়র উভয় ডাক্তাররাই রয়েছে। মিটিং এর মূল আলোচ্য বিষয় ক্যাম্পিং এ তারা কি কি চিকিৎসা দিবে, কতজন যাবে, কোন কোন শিক্ষার্থীকে নিবে, ওখানে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা কি হবে? তাদের সম্ভবত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকতে হবে। গরীব, দুঃস্থ, দিনমজুরদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেওয়া হবে। সবার মধ্য থেকেই একজন জুনিয়র ডাক্তার মেহেদী তাহসিনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল – স্যার আপনার এসিস্ট্যান্ট মেয়েটাও কি যাবে?

তাহসিন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো মেহেদীর দিকে, গম্ভীর কন্ঠে বলল – হ্যা।

– সে কি আপনার সাথেই যাবে?

মিটিং এ সবাই বাসে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিলেও বেঁকে বসলো তাহসিন। সে নিজের গাড়িতে যাবে, তাছাড়া ক্যাম্পিং এর স্থান তো বেশি দূরে নয় এখান থেকে ঘন্টাখানেকের পথ। সবাই তাহসিনকে অনেকবার বাসে যাওয়ার কথা বললেও শুনলো না সে। আর কেউ ঘাটালোও না তাকে। তাহসিন যে বরাবরই নিশ্চুপ, একা থাকতে পছন্দ করেন তা এই হাসপাতালের কারোরই অজানা নয়। তবে এ জন্য তাহসিন খারাপ নয় সে যথেষ্ট ভদ্র মার্জিত এবং ডাক্তার হিসেবেও খুব ভালো। নিজের কাজে কখনও হেরফের করে না সে আর হেরফের বিষয়টা পছন্দও করেন না। তার সব কাজ নিয়মমাফিক করে। তাহসিন মেহেদীর দিকে তাকিয়েই থমথমে কন্ঠে উত্তর দিল – যেহেতু আমার এসিস্ট্যান্ট আমার সাথেই যাবে।

মেঘা বিরস মুখে বসে আছে তাহসিনের কেবিনে। তাহসিন সেই কখন মিটিং এ গিয়েছে এখনও আসছে না। এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে আসছে, সে চলে যাবে এটা অন্তত তো তাহসিনকে বলে যাওয়া উচিৎ। তাছাড়া তাহসিন মিটিং থেকে ফিরলে অন্তত জানা যেত সে যাবে কিনা। তাকেও নিয়ে যাওয়া হবে কিন্তু। মেঘা বিরক্ত হয়ে দরজা থেকে উঁকি ঝুঁকি মারছে। তাহসিনকে মিটিং রুম থেকে বের হতে দেখেই কেবিনে ঢুকে চেয়ারে বসলো। একটু বাদেই কেবিনে ঢুকলো তাহসিন , মেঘাকে এখনও এখানে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাকই হয়েছে। অবাক সুরেই বলল – আপনি যাননি এখনও?

– না আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

তাহসিন হাত উঁচিয়ে ঘড়ি দেখলো, বলল – এখন বাসায় চলে যান রাত হয়ে আসছে।

– আচ্ছা।

আচ্ছা বললেও মেঘা গেল না। উঠে দাঁড়িয়ে রইল তাহসিনের সামনে। অপেক্ষা করছে যদি তাহসিন তাকে ক্যাম্পিং এ যাওয়া নিয়ে কিছুই বলল না। নিরাশ হলো মেঘা। তাহলে তাকে কি নেওয়া হবে না ক্যাম্পিং – এ? মেঘাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাহসিন, বলল – যাচ্ছেন না কেন?

– যাচ্ছি।

আর দাঁড়ালো না মেঘা। একরাশ হতাশা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো সে।

______________________________________

দুপুরের তপ্ত রৌদ্র। আকাশের জ্বলন্ত সূর্যটা তীব্র রোদ ছড়াচ্ছে চারদিকে। সূর্যের এত তেজে জনজীবন যেন অতিষ্ঠ। মেঘা বিষন্ন মনে বসে আছে তাহসিনের কেবিনে‌। একটু আগেই ক্লাস শেষ করে এখানে এসেছে সে। কে কে কাল ক্যম্পিং এ যাবে ক্লাসে বলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গৌরব আর তনুর নামটা বলা হলেও মেঘার নামটা বলা হয়নি। হয়তো সিরিয়ালে তার নাম পিছনে তাই বলা হয়নি। আর তাহসিনও তো কিছু বলল না। হয়তো ক্যাম্পিং এ তাকে নেওয়া হবে না। মেঘার হৃদয়টা বিষন্নতায় ছেয়ে গেছে। গৌরব আর তনুও যাবে কিন্তু তাকে নেওয়া হবে না। মেঘার এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তাও পারছে না, এত মেয়ের নিশ্চই হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসাটা শোভা পায় না। তাহসিন অনেকক্ষন ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে মেঘাকে। চোখের সামনে ফাইল ধরে রাখলেও তার সম্পূর্ণ মনোযোগ মেঘাকে ঘিরে। মেয়েটার চেহারা কেমন বিষন্ন বিষন্ন লাগছে। কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করবে? জিজ্ঞেস করলেও ত্যারা ব্যাকাই উত্তর দিবে। এই মেয়ে তো আর সোজা কথার মেয়ে নয়। তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো তাহসিন, মেঘার দিকে তাকিয়ে বলল – কি ভাবছেন?

ঘোর কাটলো মেঘার, বিষন্ন কন্ঠে বলল – কিছু না।

তাহসিনের হাতের ফাইলটা বন্ধ করলো, নিঃশব্দে টেবিলের উপর রাখলো, বলল – কাল সকাল ৭ টার মধ্যে হাসপাতালে চলে এসো।

– কেন?

– তোমার তো জানার কথা। ক্যাম্পিং এ যাব আমরা।

চমকে উঠলো মেঘা। খুশি হলো ভীষন। সেও তাহলে যাবে ক্যাম্পিং এ ? তাহলে এতক্ষন সে এত দুঃখ বিলাস করছিল শুধু শুধুই? মেঘা উঠে দাঁড়ালো, হাসি মুখে বলল – আমিও যাব আপনাদের সাথে?

তাহসিন শীতল দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার দিকে, বলল – আপনি যেহেতু আমার এসিস্ট্যান্ট সেহেতু অবশ্যই আমার সাথে যাবেন।

কপট রাগ দেখালো মেঘা, বলল – আগে কেন বললেন না?

– আগে বললে কি হতো?

– আগে বললে কি হতো মানে? আমার একটা প্রস্তুতি আছে না, গোছগাছ আছে না?

ভ্রু কুঁচকালো তাহসিন, বলল – আপনি কোনো ট্যুরে যাচ্ছেন না ক্যাম্পিং এ যাচ্ছেন সেখানে গোছগাছের কিছু নেই।

– তবুও!

– এই তবুও রেখে এখন কাজে লেগে পড়ুন। অনেক কাজ আছে আজ। কাল হাসপাতালে থাকতে পারবো না আমি।

– আচ্ছা স্যার।

_______________________________________

ভোরের আলো ফুটেছে। সূর্য উঠেছে আকাশে। তবে এখনও তেজ দেখানো শুরু করেনি। রাস্তাঘাটও বেশ ফাঁকা, কোনো যানযট কোলাহল নেই। মাঝে মাঝে দুই একটা চায়ের দোকান খুলতে শুরু করেছে কেবল। মেঘা কথা মোতাবেক চলে এসেছে হাসপাতালে। সাতটার সময়ে আসার কথা থাকলেও তার আগেই চলে এসেছে সে। একে একে সবাই বাসে উঠছে। মেঘাও বাসে উঠতে যাবে তখনই পিছন থেকে ডাকলো হাশেম চাচা। পিছু ফিরে তাকালো মেঘা, বলল – জ্বী চাচা বলুন।

– আপনি বাসে উঠছেন কোথায়?

– কেন আমি যাব না? কিন্তু স্যার তো বলল….

– হ্যা আপনি যাবেন তবে হরতালের সাথে।

– স্যারের সাথে মানে?

– মানে স্যার বাসে যাবেন না, নিজের গাড়িতে যাবেন। আপনাকে ডাকছেন স্যার।

মেঘা তাকালো হাশেম চাচার দৃষ্টি অনুসরণ করে। তাহসিন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শক্তপোক্ত মেদহীন শরীরে কলো শার্ট জড়িয়েছে‌। ওবাবা চোখে আবার কালো চশমাও পড়েছে। মনে মনে ভেংচি কাটলো মেঘা। হাশেম চাচার দিকে তাকিয়ে বলল – আপনার স্যার বাসে না গিয়ে নিজের গাড়িতে যাবে কেন?

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here