প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১৫

0
63

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১৫

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

জীহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভেজালো মেঘা, বলল – স্যার একটা কথা ছিল।

– কি?

– আমার একটু ছুটি লাগবে।

ভ্রু কুঁচকালো তাহসিন, বলল – কেন?

– কাজ আছে।

– কি কাজ?

– অতিথি এসেছে বাসায়।

তাহসিন সরু দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার দিকে, বলল – ঠিক আছে ছুটি দিলাম। কিন্তু রোজ রোজ কিন্তু এভাবে তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হবে না।

– ঠিক আছে স্যার।

মেঘা আর দাঁড়ালো না। টেবিল থেকে নিজের ব্যাগটা তুলে বেরিয়ে গেল। মুহিত ভাই আর মুন্না নির্ঘাত অপেক্ষা করছে তার জন্য। মুন্না বায়না ধরেছে মুহিতের সাথে ঘুরতে বের হবে। এই সুযোগে মুহিত মেঘাকেও কল করেছে একসাথে তারা তিনজন ঘুরবে বলে। ঘুরবে ফিরবে ফুচকা খেয়ে বাসায় ফিরবে। ফুচকার কথা শুনে আর লোভ সামলাতে পারলো না মেঘা তাই তো তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। মেঘা কেবিন থেকে বের হতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তাহসিন দ্রুত চলে গেল জানালার কাছে। জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। একটু পরই দেখা মিললো মেঘার। ঐ তো হেলে দুলে গেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সে। মেঘাকে অনুসরন করে সামনের দিকে তাকালো সে অমনি বুকটা আবার জ্বলে উঠলো এটা তো সকালের সেই ছেলেটা। এই ছেলেটা আবার এসেছে? কে এই ছেলেটা? তাহসিনের বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ছ গেছে। অস্থির লাগছে তার। ঐ তো মেঘা এগিয়ে যাচ্ছে ছেলেটার দিকে। ছেলেটা হাসিমুখে কি যেন বলছে। না না আর দেখবে না তাহসিন। জানালার কাছ থেকে দ্রুত সরে এলো। কিন্তু দেখবে না বললেই কি না দেখে পারা যায়? তাহসিনের অস্থিরতা ক্ষনে কর্ষনে বাড়ছে। সে আবার গেল জানালার কাছে। জানালা গলিয়ে বাইরে চোখ মেললো গেলো কোথায় মেঘা আর সেই ছেলেটা? এই টুকু সময়ের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেল?

তাহসিনের অস্থির লাগছে খুব। কোথাও শান্তি পাচ্ছে না সে। আবার ছুটে চলে যেতেও পারছে না মেঘার কাছে। তাহলে হয়তো বিষয়টা অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে। তাছাড়া তাহসিনের অস্থিরতার আরও কারন রয়েছে। সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না কিছু। রাতে ঘুমালে স্বপ্নে সেই মাস্ক পরিহিত মুখশ্রী ভেসে ওঠে আর দিনে মেঘা কাছে এলে শান্তি শান্তি লাগে। এ কেমন কথা? একটা মানুষের মনে দুজন কিভাবে থাকে? তাহসিনের কেন যেন মনে হয় এই দু’জন ব্যক্তি এক জনই কিন্তু নিশ্চিত হতে পারছে না। ইদানীং নিজের চরিত্র নিয়ে নিজেরই সন্দেহ লাগছে তার। সেও কি তাহলে চরিত্রহীনের খাতায় নাম লেখালো? তার এতদিনে গড়া কালিহীন চরিত্রে কালি লেগে গেল? আর ভাবতে পারছে না তাহসিন। এর থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়া ভালো। রোগীর চাপও আজ কম। তাহসিন বেরিয়ে পড়লো দ্রুত। গেটের বাইরে এসে গাড়িতে চড়ে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি চালনা শুরু করল। মিনিট পাঁচেক পরই তাহসিন চিল্লিয়ে উঠলো – গাড়ি থামান! গাড়ি থামান!

হঠাৎ ড্রাইভার তাহসিনের চিৎকার শুনে ভরকে গেলেন। ব্রেক কষলেন গাড়িতে। তাহসিন চোখ বড় বড় করে বাইরের দিকে তাকালো। মেঘা ফুচকা খাচ্ছে সাথে সেই ছেলেটা আবার একটা ছোট ছেলেও আছে। তাহসিনের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। এর জন্য তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে চলে এসেছে মেঘা? বাসায় নাকি অতিথি এসেছে। এই তার অতিথি? এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে ফুচকা খাচ্ছে। এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না তাহসিন , রেগে মেগে বেড়িয়ে পড়লো গাড়ি থেকে সে। ধপধপ পা ফেলে গিয়ে দাঁড়ালো মেঘার সামনে। মেঘা এখনও খেয়াল করেনি তাকে। ফুচকা খাওয়ায় ব্যস্ত সে। তাহসিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল – এই আপনার বাসার অথিতি?

চমকে উঠলো মেঘা। সামনে তাকিয়েই নজরে এলো তাহসিনের জ্বলন্ত মুখখানা। আঁতকে উঠলো সে, আমতা আমতা করে বলল – হহহ হ্যা।

– কোথায় অতিথি দেখছি না তো।

মেঘা ফিরে তাকালো মুহিতের দিকে, বলল – এই যে আমার ফুফাতো ভাই, মুহিত ভাই।

মুহিত হাত বাড়িয়ে দিল তাহসিনের দিকে, হাসিমুখে বলল – আমি মুহিত।

তাহসিনও ভদ্রতার খাতিরে হাত বাড়িয়ে দিল। হাত মেলালো মুহিতের সাথে, বলল – আমি ডাক্তার তাহসিন তালুকদার।

একটু শান্ত হলো তাহসিন। বিরবিরিয়ে বলল – ওহ এই ব্যাটা তাহলে উনার ফুফাতো ভাই তবুও ফুফতো ভাইয়ের সাথে এত ঢলাঢলি কিসের? ফুফাতো ভাই বলে কি সে পুরুষ মানুষ না নাকি?

– কিছু বললেন স্যার?

ঠোঁট বাঁকালো তাহসিন, বলল – আমি ভেবেছিলাম আপনি মিথ্যা বলেছেন। এমনিতেও এই বিষয়ে আপনি খুব পারদর্শী কিনা।

তেতে উঠল মেঘা, বলল – একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি মিথ্যা বলি না।

– সে আমার জানা আছে এখন আমি আপনার সাথে পাবলিক প্লেসে ঝামেলা করতে চাইছি না।

মেঘা চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখলো। আসলেই এখানে অনেক মানুষ তাই চুপ করে রইলো সে। মেঘার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাহসিন, বলল – ওয়েট ওয়েট আপনার না গ্যাস্টিকে প্রচুর সমস্যা তারপরেও আপনি এই ছাই পাশ খাচ্ছেন?

পাশ থেকে মুন্না লাফিয়ে উঠলো। সে বোনকে হেনস্তা করার সুযোগ পেয়েছে কেবল। এই সুযোগ কি আর হাত ছাড়া করা যায়? মুন্না বলল – আমি আপুকে অনেক বার বারন করেছিলাম এসব খেতে আপু শোনেনি।

তাহসিন চোখ ঘুরিয়ে তাকালো মুন্নার দিকে। ছিপছিপে গড়নের শরীর, উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের বর্ন। চোখে আবার গোলগোল চশমা ঝুলছে। তাহসিন মুন্নার পা থেকে মাথা অবধি পর্যবেক্ষণ করলো অতঃপর বলল – তুমি কে?

মেঘা মিনমিনে কন্ঠে উত্তর দিল – ও আমার ভাই মুন্না।

তাহসিন ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। মুন্নার দিকে তাকিয়ে বলল – তুমি ছেলে হয়ে এত ফর্সা তোমার বোন মেয়ে হয়ে কালো পেত্মীর মতো কেন?

ফুঁসে উঠলো মেঘা। কিন্তু স্থান কাল পাত্র ভেদে উত্তর দিল না কোনো। তবে এর শোধ সে তুলবেই । এক মাঘে শীত যায় না। তবে তাহসিনের কথায় বেশ খুশি হলো মুন্না, বলল – আমিও তাই ভাবি এটা আমার বোন? মনে তো হয় না। নিশ্চই মা বাবা ছোট বেলায় কোথাও থেকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে।

মেঘা চোখ গরম করে তাকালো মুন্নার দিকে চুপ হয়ে গেল মুন্না, তাহসিন বলল – ঠিক বলেছো একদম। আমাদের হাসপাতালের পুরোনো রেকর্ড চেক করতে হবে এমনও হতে পারে তোমার মা বাবা তোমার বোনকে আমাদের হাসপাতাল থেকে নিয়েছে।

এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না মেঘা, ফুঁসে উঠে বলল – একদম বাজে কথা বলবে না। আমার মা বাবা আমাকে কোনো হাসপাতাল থেকে নেয়নি।

হেঁসে ফেললো মুহিত, মেঘার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল – আরে রাগছিস কেন? উনারা তো তোকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলছেন। আমি তো তোর বড় তাই না, তবে হ্যা মামা মামী তোকে হাসপাতার থেকেও নিতে পারে আমি শিওর নই।

– ভাইয়া তুমিও! থাকবোই না আমি এখানে চললাম আমি।

মেঘা গটগট করে হাঁটা ধরলো সামনে। পিছনে পিছনে তাহসিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দৌড় লাগালো মুহিত, বলল – দাঁড়া, আরে দাঁড়া আমরা তো মজা করছিলাম তোর সাথে।

মুহিত আর মেঘা সামনে যেতেই তাহসিনের পাশে দাঁড়ালো মুন্না, কন্ঠটা একটু খাদে নামিয়ে বলল – স্যার!

– হুম।

– আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।

তাহসিন তাকালো মুন্নার দিকে, বলল – এইটুকু সময়েই কেন ভালো লেগে গেল আমাকে?

– মানুষ ভালো লাগাতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয় নয়। জ্ঞানী ব্যক্তিরা অল্প সময়েই চিনে নিতে পারে অন্য মানুষকে।

তাহসিন অবাক হলো। এইটুকু ছেলে কেমন বড়দের মতো কথা বলছে। ছেলেটাকে দেখলে বড়জোর নবম দশম শ্রেণীর মনে হচ্ছে। মুখেও কেমন বাচ্চা বাচ্চা ভাব। তাহসিন অবাক কন্ঠে বলল – এসব কথা তুমি কার কাছ থেকে শিখেছো?

– আপুর কাছ থেকে।

তাহসিন অবাক হয়েই একবার তাকালো মেঘার চলে যাওয়ার পানে। মেঘা এখনও রেগেমেগে হাঁটছে আর তার পিছনে পিছনে মুহিত যদিও এই দৃশ্যে গা জ্বলে যাচ্ছে তাহসিনের। ইচ্ছে করছে গিয়ে মুহিতকে এক আছাড় মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিতে। ফুফাতো ভাই ফুফাতো ভাইয়ের মতো থাকবি বয়ফ্রেন্ডের মতো আচরণ করছিস কেন? তাহসিন চোখ ঘুরিয়ে আবার মুন্নার দিকে তাকালো, বলল – তোমার বোন কি আদও জ্ঞানী?

একটু হাসলো মুন্না, বলল – আপনার সাথেই তো থাকছে আমার বোন। আস্তে আস্তে বুঝে যাবেন। এখন আসছি নয়তো বোনের রাগে আগুন জ্বলে যাবে চারদিকে।

তাহসিন হাসলো। সেও জানে মেঘার ভীষন ছটকা রাগ। অল্পতেই রেগে যায় সে। কিন্তু এই মুহিত, এইটাকে নিয়ে কি করা যায়? একটু অতিরিক্তই করছে না সে? পরক্ষনেই ভাবলো করলে করুক তার কি? মেঘা তার কি হয় যে এত ভাবছে সে মেঘাকে নিয়ে? ভিতরে ভিতরে জ্বলছে সে। ধক করে উঠল তাহসিনের বুকটা। সত্যিই তো মেঘা তার কি হয়? কি নাম এই সম্পর্কের?

_____________________________________

রাত প্রায় বারোটা। চারদিকের পরিবেশ বেশ নিস্তব্ধ নীরব। শুধু মাঝে মাঝে কিছু নিশাচর প্রানীর ডাক শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ তনুর ফোনটা প্রবল ঝংকার তুলে বেজে উঠলো। তনু অবশ্য এখনও ঘুমায়নি। পড়ছিল সে। আর তাছাড়া তার রাত জাগার অভ্যাস রয়েছে। টেবিলের উপর বইয়ের পাশেই মোবাইলটা রাখা ছিল তার। মোবাইলের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে এলো তনুর। অপরিচিত নাম্বার, তাও এত রাতে? কে হতে পারে? আর সাত পাঁচ না ভেবে কলটা রিসিভ করলো সে। কানের কাছে নিয়ে বলল – হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম। কে বলছেন?

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here