প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১৪

0
60

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১৪

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

– যাক অবশেষে আসলে তাহলে। তোমাকে কতদিন বলেছি আসতে তুমি আসোই না শুধু তারিখ দেও।

– এবার চলে এসেছি।‌ বেশ কিছু দিন থাকবো কিন্তু।

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা, বলল – এমনিও তোমাকে আমি এত তাড়াতাড়ি যেতে দিচ্ছি না।

– তা দেখা যাবে।

______________________________________

সকাল হয়েছে। চারদিকে কোলাহল বাড়তে শুরু করেছে। জনমানুষের সমাগম বাড়ছে। মেঘাও রেডি হয়ে বেরিয়েছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে কে জানে আজ কি অপেক্ষা করে আছে তার জন্য? ঐ তাহসিন নামক মানব তো আবার রোজ রোজ নতুন নতুন ফন্দি আঁটে তাকে জব্দ করার। আবার ভালোও আছে লোকটা। মাঝে মাঝে ভীষণ ভালো হয়ে যায়। মেঘা স্মৃতিতে ভেসে উঠলো কালকের ঘটনা। কতটা চিন্তা করছিলো তার জন্য? কিভাবে তাকে মাছ বেছে খাওয়াচ্ছিল তাহসিন। মেঘার চিন্তা ভাবনার মধ্যেই পাশে এসে দাঁড়ালো মুহিত। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল – কি ভাবছিস?

– কই কিছু না তো।

– তাহলে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?

– এমনি আচ্ছা আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, আসি আমি।

– দাঁড়া দাঁড়া আমিও ওদিকটায়ই যাব। চল একসাথে যাই।

মেঘা রাজী হলো। মুহিতের সাথেই বেরিয়ে পড়লো সে।‌ একটু পরই পৌঁছে গেল হাসপাতালের সামনে। দুজন হেঁটেই এসেছে এখানে। মেঘার বাসা থেকে হাসপাতাল কাছাকাছিই। তাছাড়া সকাল সকাল হাঁটতে ও ভালো লাগে। এ সময়টা খুব বেশি কোলাহল থাকে না। গাড়ির প্যা পো ধ্বনিটাও শোনা যায় না, বায়ু থাকে নির্মল। হাসপাতালের সামনে এসেই দাঁড়ালো তারা দুজন। মেঘা হাসি মুখে বলল – চলে এসেছি আমরা। কিন্তু তুমি এদিকটায় কোথায় যাবে?

– আমার একটা কাজ আছে আরও সামনে।

– এত ভোর বেলা?

– না তবে এই সময়টা যানযট কম থাকে তাই বেরিয়েছি।

– ওহ আচ্ছা, আমি আসি তাহলে।

– আচ্ছা যা। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরিস।

– চেষ্টা করবো।

মুহিতকে বিদায় জানিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকলো মেঘা। লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল কেবিনে। একহাতে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে পা রাখতেই অবাক হলো মেঘা। তাহসিন দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনেই জানালার পাশে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু দেখছে বাইরে। মেঘা যে কয়দিন চাকরি নিয়েছে এর মধ্যে প্রতিদিনই সে আগে অফিসে এসেছে। তাহসিন বরাবরই তার আসার পর এসেছে। আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলো তাই একটু
অবাকই হয়েছে মেঘা। অবাক সুরেই মেঘা বলল – আপনি এত সকালে?

তাহসিন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মেঘার দিকে চমকে উঠলো মেঘা কেমন জ্বলন্ত সেই দৃষ্টি। সকাল সকাল আবার এই বান্দার কি হলো এমন আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে দুই চোখে? নাকি ঘুম থেকেই উঠেছে এই জ্বলন্ত চোখ নিয়ে। তাহসিন থমথমে কন্ঠে উত্তর দিল – নাইট ডিউটি ছিল আমার। এখানেই থেকেছি রাতে।

– ওহ তাই তো বলি এত সকাল সকাল চলে এলেন কিভাবে?

– আপনি কখন এসেছেন?

– এই তো মাত্রই এলাম দেখলেন না আপনি?

– একা এসেছেন?

চারপাশে তাকালো মেঘা অতঃপর ভ্রু কুঁচকে বলল – হ্যা একাই এসেছি। আর কে আসবে?

মেঘার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তাহসিন, গম্ভীর কন্ঠে বলল – কেউ না, কাজে লেগে পড়ুন।

মেঘা সন্দিহান দৃষ্টিতে একবার তাকালো তাহসিনের দিকে। মাঝে মাঝে কি হয় এই বদ লোকের? মাথায় পোকা ওঠে নাকি?

______________________________________

কলেজে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। কেউ বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ কেউ বইয়ে মুখ গুজে আছে। কেউ কেউ ক্যান্টিনে বসে আছে। গৌরব আর তনু বসে আছে ক্যাম্পাসে ঘাসের উপর একটা গাছের নিচে বসে আছে। তনু বকবক করেই যাচ্ছে। মেঘার উপর বেজায় বিরক্ত সে। তাকে কতবার বলেছে এই চাকরির পাওয়ার খুশিতে তাদের একটা ট্রিট দিতে, কিন্তু সে তো সময়ই করতে পারছে না সে। মেঘার উপর হাজারো অভিযোগ ঝাড়ছে সে। গৌরব আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তনুর কথা শুনছে কিনা সন্দেহ। তনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো গৌরবের দিকে, বলল – এই তুই শুনছিস তো আমি কি বলছি?

তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লো গৌরব, আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল – আচ্ছা মানুষের এমন আলাদা জাতপাত ধর্ম কেন হয়? আমরা সবাই কেন এক ধর্মের নই? আমারা সবাই তো মানুষ। সবারই আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা আছে তবে কেন সৃষ্টিকর্তা এই ধর্ম নামক বেরিবাঁধ দিয়ে আঁটকে দেয় আমাদের?

তনু ভ্রু কুঁচকালো। মাথায় তার কিছুই ঢুকলো না। আর কেনই বা আজ হঠাৎ এভাবে ধর্ম নিয়ে কথা বলছে গৌরব, এতদিনে তো বলেনি তাহলে? তনু বলল – হঠাৎ এই কথা?

দীর্ঘশ্বাস ফেলল গৌরব বলল – এমনি মনে হলো তাই বললাম।

উঠে দাঁড়ালো গৌরব, বলল – চল ক্লাসে যাই। ক্লাস শুরু হয়ে যাবে, মেঘুও বোধহয় এতক্ষনে চলে এসেছে।

তনুও উঠে দাঁড়ালো গৌরবের পাশে কিন্তু তার মাথার ভিতরে ঘোরপাক খাচ্ছে গৌরবের বলা কথাগুলো। হঠাৎ গৌরব এমন কথা কেন বলল? কিছু কি হয়েছে নাকি গৌরব কিছু লুকাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। যদি লুকিয়েই থাকে তাহলে সেটা কি?

_____________________________________

দুপুরের তপ্ত রৌদ্র। একটু বৃষ্টি নামলে বোধহয় স্বস্থি পাওয়া যেত কিন্তু বৃষ্টিরও দেখা নেই। হবে কেন বৃষ্টি হবে না তো। সবাই এই মুহূর্তে শত্রুতা করছে মেঘার সাথে। এই বৃষ্টিটাও শেষ পর্যন্ত তার শত্রু হয়ে গেল। অসময়ে ঝপঝপ করে নামতে পারে আর সময়ে তার দেখা নেই। ক্লাস শেষ করে ঘেমে নেয়ে তাহসিনের কেবিনে ঢুকলো মেঘা। ঘর্মাক্ত মুখশ্রী তার‌। ডান হাতের উল্টো পিঠে বারবার মুখের ঘাম মুছে যাচ্ছে, আবার মাঝে মাঝে ওড়নার আঁচলে মুছে। তাহসিন কয়েকটা ফাইল চেক করছিলো মনোযোগ দিয়ে তাই এতক্ষন খেয়াল করেনি মেঘার দিকে। মেঘাও এসে কিছুই বলেনি তাহসিনকে। চুপচাপ নিজের কাজে লেগে পড়েছে সে। আসলে সে বিরক্ত করতে চায়নি তাহসিনকে নিশ্চই কোনো জরুরী ফাইল দেখছে সে। ফাইল দেখা শেষে মুখ তুলে তাকালো সে। মেঘাকে দেখে একটু অবাকই হয়েছে সে। কখন এলো এই মেয়ে? তাহসিন একটু অবাক সুরেই জিজ্ঞেস করল – কখন এলেন?

মুখ তুলে তাকালো মেঘা, বলল – এই তো একটু আগে।

মেঘার মুখের দিকে চোখ পড়লো তাহসিনের, আটকে গেল তার নজর। শ্যামবর্না মুখশ্রীতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এ যেন মেঘার নতুন রূপ। ঘামলেও কাউকে এতটা মায়াবী লাগতে পারে জানা ছিল না তাহসিনের। আচ্ছা এই ঘর্মাক্ত অবস্থায় মেঘাকে কি শুধু তার কাছেই মায়াবী লাগে নাকি অন্যদের কাছেও লাগে? সকালে ঐ মেঘার সাথে আসা ছেলেটা কে ছিল? সারারাত কাজ করে সকাল সকাল একটু হাওয়া খেতেই জানালাটা খুলে তার সামনে দাঁড়িয়েছিল তাহসিন। হঠাৎ তার চোখ গিয়েছিল গেটের দিকে। তাহসিনের কেবিন থেকে গেটের দিকটা স্পষ্টই দেখা যায়। মেঘার সাথে অন্য ছেলেকে দেখে অন্তর জ্বলে উঠেছিল তার। কিন্তু কেন এই অনুভুতি হয়েছিল তার মধ্যে আগে কখনও তো হয়নি। কারন জানা নেই তাহসিনের। কারনটা খোঁজেওনি সে। তার মনে শুধু একটা প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছিলো ছেলেটা কে? মেঘার বয়ফ্রেন্ড না তো? আচ্ছা মেঘার বয়ফ্রেন্ড আছে কি? জিজ্ঞেস করবে একবার? জিজ্ঞেস করার জন্য দুই ঠোঁট ফাঁকা করলো তাহসিন কিন্তু পারলো না। ভিতরকার কোনো এক অদৃশ্য শক্তি আটকে দিল তাকে। এই প্রশ্নে হয়তো মেঘা ভুল ভাববে তাঁকে। কি না কি মনে করে। তাই আর কথাটা জিজ্ঞেস করা হলো না মেঘাকে। তাহসিনের আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনার মধ্যেই প্রবল ঝংকার তুলে মেঘার ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করে উঠলো “মুহিত ভাই” তাহসিন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার মোবাইলের দিকে। মেঘা দ্রুত মোবাইলটা নিয়ে উঠে গেল, বলল – স্যার একটু আসছি।

উঠে কেবিনের এক কোনে গেল মেঘা। কান খাঁড়া করলো তাহসিন কি বলছে শোনার জন্য। ওপাশ থেকে কি বলল শোনা গেল না কিন্তু মেঘা কন্ঠটা একটু খাদে নামিয়ে বলল – আচ্ছা চেষ্টা করে দেখছি।

মেঘা তাহসিনের দিকে ঘুরে দাড়াতেই তাহসিন ঠিকঠাক হয়ে বসলো। একটা ফাইল হাতে নিয়ে পড়ার ভান ধরলো। মেঘা গুটি গুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়ালো তাহসিনের সামনে, বলল – স্যার

– হুম

– আপনি ফাইলটা উল্টো ধরেছেন।

থতমত খেল তাহসিন, আমতা আমতা করে বলল – আমি নিজেই উল্টো ধরেছি ফাইল।

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা, বলল – ফাইল কেউ উল্টো ধরে?

কপট রাগ দেখালো তাহসিন, বলল – সবসময় তো ফাইল ঠিকভাবে ধরেই দেখি আজ একটু উল্টো ধরে দেখছিলাম উল্টো ধরলে কেমন লাগে।

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল মেঘা। কেউ আবার ফাইল উল্টো করে দেখে নাকি যে উল্টো ধরলে কেমন লাগে। পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি এই লোক? যাক গে যা হয় হোক তো, তার কি? সে নিজের কাজে সফল হলেই হবে। জীহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভেজালো মেঘা, বলল – স্যার একটা কথা ছিল।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here