প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৯

0
68

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৯

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

ভয়ে ভয়ে বাসার কলিং বেল বাজালো মেঘা। মা নিশ্চই ভীষণ রেগে আছে, রেগে থাকারই কথা সেই দুপুরে ফেরার কথা ফিরেছে সন্ধ্যায়। তারপর একটাবার বাসায় কল করে অন্তত সবটা জানানো উচিৎ ছিল কিন্তু ওদিকের চিন্তায় চিন্তায় এই কথা তার মাথায়ই আসেনি। মা কয়েকবার কল করেছিল তাও ফোন সাইলেন্ট থাকায় শুনতে পায়নি। আজ সুফিয়া বেগম ওকে ঝাঁটা পেটা করে বাড়ি থেকে বের না করে দিলে হয়। প্রথম বার কলিং বেলে দরজা খুললো না কেউই। আবার কলিং বেল বাজালো মেঘা, অমনি দরজাটা খুলে গেল। দরজার সামনে মেঘার বাবা মামুন সাহেব দাঁড়ানো। ঢোক গিললো মেঘা বাবাও চলে এসেছে? এ তো যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। মা তো ঝাঁটা পেটা করবে তাও না হয় সহ্য করে নিবে। মায়ের কথা এমনিতেও গায়ে লাগে না তার কিন্তু বাবার গম্ভীর কন্ঠ শুনেই তো তার রুহ কেঁপে ওঠে। মামুন সাহেব গম্ভীর কন্ঠে শুধালো – কোথায় ছিলে?

– না মানে।

– ভিতরে এসো।

গুটি গুটি পায়ে ভিতরে গেল মেঘা। মামুন সাহেব গম্ভীর কন্ঠে শুধালেন – তোমার ফিরতে এত দেরী কেন? দুপুরে ফেরার কথা সেখানে সন্ধ্যা হয়েছে। কোথায় ছিলে এতক্ষন?

– আসলে বাবা

মেঘা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগে সত্যিই সুফিয়া বেগম ঝাঁটা হাতে তেড়ে এলেন, চেঁচিয়ে বললেন – বেশি বড় হয়ে গেছিস? কোথায় ছিলি দুপুর থেকে? এই তোর বাড়িতে আসার সময় হলো? কতবার কল করেছি একটা কলও ধরিসনি।

মেঘা দৌড়ে গিয়ে বাবার পিছনে লুকালো। মুন্না ঠোঁট টিপে হাসছে। বোনকে ঝাড়ি খেতে দেখলে ভীষণ মজা লাগে তার। মেঘা চোখ গরম করে মুন্নার দিকে তাকালো, চুপসে গেল মুন্না। মুন্না মেঘার এক মাত্র ছোট ভাই, নবম শ্রেণীতে পড়ছে এবার। সুফিয়া বেগম আবার তেড়ে গেলেন , বললেন – দুই দিন হলো মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিস, এর মধ্যে বড় হয়ে গেছিস? এখন আর বাবা মাকে কিছু জানানোর প্রয়োজন পড়ে না? সাপের পাঁচ পা দেখেছিস? আজ ঝেঁটিয়ে তোর সাপের পাঁচ পা দেখা বের করে দেব।

মেঘা মামুন সাহেবের পিছন থেকে উঁকি মারলো, মিনমিনিয়ে বলল – আসলে মা একটা সমস্যা হয়ে গিয়েছিল।

– কি সমস্যা যার জন্য একবার কল করেও সেটা বলা যায় না?

মামুন সাহেব তার গম্ভীর কন্ঠে বললেন – কি হয়েছিল যার কারনে তোমার ফিরতে দেরী হয়েছে?

মেঘা একে একে সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলল, তাহসিনের জ্ঞান হারানো থেকে এই পর্যন্ত সব ঘটনা। সবটা শুনে শান্ত হলেন সুফিয়া বেগম। একটু আগের রাগ যেন কমে গেল মুহুর্তেই। সেখানে জায়গা করে নিল এক রাশ কোমলতা। অস্থির হয়ে পড়লেন সুফিয়া বেগম , বললেন – সে কি এখন কি অবস্থা তোর স্যারের?

– এখন ভালো।

– এখন কে আছে তার সাথে? রাতে কে থাকবে?

– গৌরব আছে।

– ও ছেলে মানুষ কি করবে? সে কি তোর স্যারের সুবিধা অসুবিধা বুঝবে?

– ওহ মা তুমি এত চিন্তা করো না তো। উনি ওখানকার ডাক্তার সেই হিসেবে উনার প্রতি সবাই একটু বেশি যত্মশীল হবে। নার্সরা আছেন তাছাড়া গৌরবও আছে।

সুফিয়া বেগম তাকালেন মামুন সাহেবের দিকে, বললেন – হ্যা গো মেঘার বাবা, তুমি কাল গিয়ে মেঘার স্যারকে একটু দেখে এসো তো।

মেঘা বোকা বোকা চোখে তাকালো মায়ের দিকে। বাবা যাবে স্যারকে দেখতে? মেঘা কি এখনও সেই প্রাইমারি বা হাই স্কুলের স্টুডেন্ট? যে স্যাররা অসুস্থ হলে স্টুডেন্টের বাপ মা ফলমূল নিয়ে দেখতে যাবে?

________________________________________

সূ্র্য উঠেছে মাথার উপর। প্রতিদিনের তুলনায় যেন দ্বিগুন তেজ নিয়ে জ্বলে চলেছে আজ। সূর্যটা আজ রাগ করেছে নাকি নয়তো এত তেজ কিসের তার? মেঘা হাসপাতালের দিকে যেতে যেতে এটাই ভাবছিলো। আজ একটু তাড়াতাড়িই কলেজে চলে এসেছে মেঘা উদ্দেশ্য তাহসিনের কাছে যাবে তারপর ক্লাসে। রাতে কয়েকবার গৌরবের কাছে কল করে তাহসিনের খোঁজ খবর নিয়েছে যেন সে তাহহসিনের কাছের কেউ। হঠাৎ এত মায়ার কারন কি নিজেও জানে না মেঘা। তাহসিনের কথা ভাবতে ভাবতেই তাহসিন যে কেবিনে ছিল সেই কেবিনে ঢুকে গেল মেঘা। কিন্তু একি কেবিন তো ফাঁকা, গৌরবও নেই। গেল কোথায় দুজন? মেঘা কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করল – তাহসিন স্যার কোথায়?

– স্যার তো সকাল সকালই চলে গেছেন।

অবাক হলো মেঘা, অবাক কন্ঠেই বলল – সকালেই চলে গেছে?

নার্সটি ছোট করে উত্তর দিল – হুম।

মেঘা তাড়াতাড়ি ফোন বের করলো কল লাগালো গৌরবকে, ওকে না বলেই এই দুই ব্যাটা চলে গেল? মেঘা কল দিতেই রিসিভ করলো গৌরব, ওপাশ থেকে বলল – বল মেঘু।

– তোরা চলে গেছিস?

– হ্যা আর বলিস না। স্যার সকাল সকাল উঠেই চলে যেতে চাইলো।

– সুস্থ এখন উনি?

– এখনও সম্পূর্ন না তবে আগের থেকে ভালো।

– তাহলে যেতে দিলি কেন? আজকের দিনটাও থাকতো হাসপাতালে।

– আমি কি যেতে দিয়েছি নাকি? সে যাবেই। স্যার যেতে চাইলে তাকে বেঁধে রাখার আর কি সাধ্য আছে কারো। বাবা কি রাগী স্যার, এতদিন তো তাকে বেশ ঠান্ডাই দেখেছিলাম। সে যখন যাবে বলেছে যাবেই, চলেও গেল কারো কথা শুনলো না। উনার চাচা মানে আফজাল স্যারও কত বারন করলো শুনলোই না কারো কথা।

মেঘা বিরবিরিয়ে বলল – শুনবে কেন? অভদ্র লোক তো।

– কিছু বললি?

– না তেমন কিছু না। কলেজে আসবি আজ?

– না সারারাত ঘুম হয়নি, এখন একটু ঘুমাবো। স্যারের কাছে বলে এসেছি।

– আচ্ছা ঘুমা তাহলে, রাখছি আমি।

– আচ্ছা।

কল কেটে ক্লাসের দিকে রওনা দিল মেঘা। কিন্তু মাথার মধ্যে তাহসিনকে নিয়ে তার একরাশ চিন্তা। কি করছে লোকটা? আচ্ছা লোকটা কি একা থাকে? কাল বলল বাড়ির লোক নেই। একা থাকলে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে থাকবে কিভাবে? যদি কোনো সমস্যা হয়? স্যারের বাড়ির ঠিকানাও তো নেই। বাড়িতে একা একা যদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে দেখবে কে? এমন হাজার চিন্তা করতে করতে ক্লাসে বসলো মেঘা। ক্লাস এখনও ফাঁকা তেমন কেউই আসেনি। এত তাড়াতাড়ি আসবেই বা কে?

অন্ধকার রুমে বসে আছে তাহসিন। অন্ধকারই যেন ভালো লাগছে তার। সকালে বাসায় এসেছে। একাই থাকে সে। নিজ বাড়ি থেকে হাসপাতাল দূরে হওয়ায় জ্যামে পড়ে সমস্যা হতো বেশিভাগ সময়ই তাই হাসপাতালের কাছাকাছি এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছে গত দুই মাস আগেই। তাছাড়া ঐ বাড়িতেও সে আর থাকতে চায়নি, একটু একাকিত্বের প্রয়োজন ছিল তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলল তাহসিন। মনে শান্তি পাচ্ছে না কিছুতেই। ক্ষনে ক্ষনে সেই বাসের মেয়েটার চোখ দুটো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। শুধু মাত্র সেই মেয়েটার একার চোখ ভেসে উঠতো একটা কথা ছিল। কিন্তু এখন ও মেয়েটার সাথে সাথে মেঘার মুখটাও ভেসে উঠছে। কেমন যেন ঐ মেয়েটার সাথে তাহসিন মিল খুঁজে পাচ্ছে মেঘার কিন্তু মানতে পারছে না। এখন তো তাহসিনের নিজের চরিত্রের উপর সন্দেহ জাগছে। যেখানে সে এত বছরে একটা প্রেম করতে পারলো না সেখানে আজ সে একই সাথে একই সাথে দুটো মেয়েকে কল্পনায় দেখছে। আচ্ছা সে তাহসিন তো? নাকি ঐ নাটক সিনেমার মতো হাসপাতালে কারোর সাথে তার রুহের পরিবর্তন ঘটেছে? গরম লাগছে তাহসিনের। চিন্তায় চিন্তায় গরম বেড়েছে হয়তো। এক টানে গায়ে জড়ানো ছাই রঙা টি শার্টটা খুলে ফেলল সে। বেরিয়ে এলো তার শক্তপোক্ত পুরুষালী দেহ। চওড়া ফর্সা কাঁধ, পেশিবহুল বাহু।

____________________________________

চিন্তিত চোখ মুখে ক্লাসে বসে আছে মেঘা। কে জানতো আজ তার জন্য এত বড় একা বিপদ ওত পেতে আছে। ছোট্ট একটা জীবন কিন্তু অশান্তির অভাব নেই। আর এই জীবনের সবচেয়ে বড় অশান্তি হলো এই তাহসিন। এই তাহসিন নামক অভদ্র লোকের সাথে দেখা হওয়ার পর জীবনে শান্তি নামক বস্তু হারিয়েছে সে। এখন আবার আরেক অশান্তি। ক্লাসের সব শিক্ষার্থীদের এক একটা দলে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক দলকে আবার এক একজন প্রফেসরের আন্ডারে ফেলা হয়েছে। ঐ দলের শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ঐ স্যারের। গৌরব আর তনু আলাদা আলাদা দলে পড়েছে। চিন্তাটা সেখানেও না, চিন্তাটা হলো মেঘা পড়েছে তাহসিনের আন্ডারে। যখন থেকে এই খবর মেঘার কানে এসেছে তখন থেকে চিন্তার শেষ নেই মেঘার। এত এত প্রফেসর থাকতে মেঘাকেই কেন তাহসিনের আন্ডারে পড়তে হবে? কপালের দোষ সব কপালের দোষ। মেঘাকে ভাবুক ভঙ্গিতে দেখে খোঁচা মারলো তনু, বলল – কি ভাবছিস?

– কিছু না।

তনু কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল – আমি কেন তাহসিন স্যারের আন্ডারে পড়লাম না?

মেঘা বিরক্তি নিয়ে বলল – আমি কেন ঐ অভদ্র তাহসিন স্যারের আন্ডারে পড়লাম?

– এই একদম আমার জানুকে অভদ্র বলবি না।

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা, বলল – তোর জানুটা আবার কে?

তনু চোখ মুখ একটু লজ্জালু ভাব নিয়ে বলল – তাহসিন হরতাল।

হো হো করে হেসে উঠলো মেঘা। ক্লাসে যে এর মধ্যেই স্যার এসে গিয়েছে খেয়াল করেনি ওদের দুজনের কেউই। পুরো নিস্তব্ধ ক্লাসে হঠাৎ মেঘার হাসি যেন বজ্রপাতের ন্যায় পড়লো। ক্লাসের সবাই গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। হাসতে হাসতে সামনের দিকে চোখ পড়তেই আতকে উঠলো মেঘা। ফারুক স্যার বড় বড় চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মধ্যবয়স্ক ফারুক স্যার,মাথায় কাঁচা পাকা মিলিয়ে চুল। মুখেও বয়সের ছাপ স্পষ্ট তবে বেশ রাগী। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই স্যারটা বেশ রসিয়ে রসিয়ে অপমান করে ক্লাসে। মেঘার কপালে যেন এখন কত অপমান আছে। হয়রে পোড়া কপাল। মেঘার হাসি আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল। ঢোক গিললো সে। সামনে থেকে ফারুক স্যার ভ্রু কুঁচকে বললেন – কি হলো আপনার হাসি বন্ধ হয়ে গেল কেন? আর একটু হাসুন, দেখতে তো ভালোই লাগছিলো।

মেঘা মিনমিনিয়ে বলল – স্যর স্যার।

– আহ স্যরি বলছেন কেন? আপনি হাসুন প্রান খুলে হাসুন। ক্লাসে তো আমি জোকস বলছি কিনা।

– স্যরি স্যার আর হবে না।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here