#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৪
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
সেদিন কলেজের প্রথম দিন ছিল বিধায় বেশ শান্ত ভূমিকা পালন করেছিল মেঘা। এখন সে নিজের রূপে ফিরে এসেছে। কলেজে বেশ হাসি খুশি ভাবেই এসেছে সে। তনুর সাথেও মিলেছে বেশ, দুজনই চটপটে চঞ্চল। তাদের সম্পর্কটা তুমি থেকে তুই তে চলে আসছে। এর মধ্যে তাদের আরও একজন বন্ধু হয়ে গেছে, গৌরব। ছেলেটা হিন্দু, তবে বড্ড চুপচাপ। এই দুইজন বকবকানির মধ্যে সে নীরব শ্রোতা। মেঘা যতটা সম্ভব এরিয়ে চলেছে তাহসিনকে। সে কিছুতেই ঐ লোকের সামনে পড়তে চায় না। আজ ক্লাসেও মাস্ক পড়ে মুখ ঢেকে বসেছিল। কিন্তু লোকটা বারবারই তাকাচ্ছিলো ওর দিকে। মেঘা তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিল। ও ভেবেছিল তাহসিন বোধহয় ওকে ধরে ফেলেছে। কিন্তু শেষে যখন ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল মেঘা যেন প্রান ফিরে পেল।
কলেজে ক্লাস শেষ। আজকের মতো বিদায় নিবে তারা। গৌরব মাঝ খানে, তনু আর মেঘা দুই পাশ থেকে বক বক করতে করতে হাঁটছে। হঠাৎ মেঘার খেয়াল হলো গৌরব কিছু বলছে না। গৌরবের দিকে ফিরে তাকালো সে, বলল – এই তুই কিছু বলছিস না কেন?
গৌরব ছোট করে বলল – কি বলবো?
তনু ভ্রু কুঁচকালো, বলল – এই যে আমরা এত এত কথা বলছি আর তুই মরা মানুষের মতো হেঁটে যাচ্ছিস?
গৌরব ছোট ছোট চোখ করে তাকালো তনুর দিকে, বলল – মরা মানুষ হাঁটতে পারে?
– ওটা কথার কথা। আমার কথার মধ্যে একদম ভুল ধরবি না।
– বারে তুই ভুল বলতে পারবি আর আমি ভুল ধরতে পারবো না?
– থাক ভাই তুই এতক্ষন চুপই থাক। কথা বলে আর আমার কথার মধ্যে ভুল ধরতে হবে না তোকে।
মেঘা হেসে ফেললো গৌরব আর তনুর কথায়। হাসতে হাসতেই সে গিয়ে পড়লো কারো উপরে। ভয়ে চোখ মুখ খিচে নিল। খামচে ধরলো সামনের ব্যক্তির শার্ট। সেকেন্ড দুয়েক পর পিট পিট করে চোখ খুলল মেঘা। চোখ খুলতেই যেন আঁতকে উঠলো সে। তাহসিন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো আছে। বোধ হয় এখনও চিনতে পারেনি। চিনলে এখনও তো চুপচাপ থাকার কথা না। মেঘা ঢোক গিলল, চট করে ছেড়ে দিল খামচে রাখা তাহসিনের শার্টের অংশ। দ্রুত পায়ে উল্টো হাঁটা শুরু করলো। কিন্তু ভাগ্য বুঝি তার সহায় হলো না। পিছন থেকে ডাক দিল তাহসিন , বলল – আপনি সেই অভদ্র মেয়েটা না?
ফুঁসে উঠলো মেঘা। সে অভদ্র? তবুও সে দাঁতে দাঁত চেপে নিয়ন্ত্রণ করে নিল নিজেকে। এটা কলেজ আর এখানে ঐ অভদ্র ব্যাটা মেঘার শিক্ষক আর সে ছাত্রী। এখানে শিক্ষকের সাথে ছাত্রীর ঝামেলা করা মোটেই দৃষ্টিনন্দন হবে না। তাহসিন পিছন থেকে আবার ডাকলো মেঘাকে, বলল – আপনি সেই অভদ্র মেয়েটা না?
পিছু ফিরে তাকালো মেঘা, বলল – কিসব বলছেন স্যার? আপনি আমাকে চেনেন? আপনার সাথে আমার আগে কখনও দেখা হয়েছিলো?
কপালে ভাঁজ পড়লো তাহসিনের। মেঘার দিকে তাকিয়ে বলল – আপনি তো দেখছি শুধু অভদ্রই না মিথ্যাবাদীও বটে। আমার স্মৃতিশক্তি অতও দূর্বল নয় যে আমার সাথে কেউ অভদ্র আচরণ করবে আর আমি তাকে ভুলে যাব।
মেঘা কিছু মনে করার ভঙ্গিমা করলো, একটু পর বলল – ওহ হ্যা হ্যা মনে পড়েছে আপনি সেই ডাক্তারটা না যে হৃদপিন্ডের ডাক্তার হয়ে আমার পেটে হাত দিয়েছিলেন। ভুলেই গিয়েছিলাম আমি।
তাহসিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল – আমি আপনার চিকিৎসা করতে সেদিন যাইনি। জাস্ট কান্না থামাতে গিয়েছিলাম। কেঁদে কেঁটে তো হাসপাতালে অন্যদের থাকাই দায় করে দিয়েছিলেন?
– কাঁদলে কেঁদেছি, আপনি কেন আসবেন ,আসলে পেটের ডাক্তার আসবে।
– সেটাই তো ভুল হয়েছে। আপনার কুমিরের কান্নায় আমার ভোলা উচিৎ হয়নি।
– কি বললেন? আমার কান্না কুমিরের কান্না? আপনি তো একটা কাক, যখনই দেখা হয় কানের কাছে শুধু কা কা করেন।
– কি বললে তুমি আমি কাক?
– হ্যা আপনি কাক, শুধু কাক নয়। কাক সমাজের মহারাজ। তাই তো আপনার কন্ঠে রয়েছে একশত কাকের কর্কশ ধ্বনি।
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তাহসিনের, দাঁতে দাঁত চেপে বলল – অভদ্র মেয়ে।
– আমি অভদ্র? শিক্ষক দেখে কিছু বললাম না আপনাকে, সম্মান দিলাম।
চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তাহসিন, বলল – শিক্ষক মানে? আপনি এই কলেজের শিক্ষার্থী?
মেঘা বেশ ভাব নিয়ে বলল – হ্যা।
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো তাহসিন । ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘা। তাহসিন হাসতে হাসতেই বলল – আপনার মতো অস্বাস্থ্যকর মেয়ে মেডিকেল কলেজে চান্স পেলো কিভাবে? নিশ্চই ভর্তি পরীক্ষায় নকল টকল করেছিলেন?
রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো মেঘার। কত বড় অপমান। ও নাকি নকল করে পাশ করেছে। এই অপমান আর মানা যায় না। মেঘা আঙ্গুল উঠালো তাহসিনের সামনে। আঙ্গুল ঝুলিয়ে বলল – একদম বাজে কথা বলবেন না, খুব খারাপ হবে কিন্তু।
ক্ষেপে গেল তাহসিন, রেগে বলল – তোমার এত বড় সাহস আমার সামনে আঙ্গুল তুলে কথা বলছো? বলেছি বেশ করেছি আরও বলবো কি করবেন আপনি?
তাহসিন মেঘার দিকে এগিয়ে এলো দু কদম, মেঘা পিছিয়ে গেল। তনু আর গৌরব বুঝলো পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তারা দ্রুত মেঘার হাত টেনে নিয়ে এলো। তারা দুজন এতক্ষন হা করে তাহসিন আর মেঘনার ঝগড়া দেখছিল। কথা বলতে যেন ভুলেই গিয়েছিল ওরা দুজন। এই কয়েদিনে তাহসিনকে তারা যতটুকু দেখেছিল তাতে ভেবেছিল তাহসিন গম্ভীর, রাগচটা, স্বল্পভাষী কিন্তু এখন কি দেখছে। সেই গম্ভীর লোক এখন ছাত্রীর সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে। এটাও বুঝি ওদের দেখার ছিল?
_________________________________________
ঋতু চক্রের পরিক্রমায় এখন বসন্তকাল। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রাকৃতি যেন আজ নতুন রূপে সেজেছে। গাছে গাছে নেচে বেড়াচ্ছে নানা রঙের, নানা জাতের পাখিরা। মাঝে মাঝে আবার সুমধুর কন্ঠে ডেকে উঠছে কোকিল। যদিও ততটা শোনা যায় না কোকিলের ডাক মাঝে মাঝে ছাড়া। শহরের এই বায়ুতে বোধহয় তারা সাবলীল নয় তাই তাদের দেখো কম। দুই একটা ভুলক্রমে এসে পড়ে হয়তো। মেঘা বসে আছে ক্লাসরুমে। মেঘা আজ মাস্ক পড়েনি। যার কাছ থেকে লুকাতে এ কয়দিন মাস্ক পড়েছে সেই তো দেখে নিয়েছে। এখন আর মাস্ক পড়ে লাভ কি? তার পাশেই বসে আছে তনু। গৌরব বসেছে সামনের দিকে। একে একে দুটো ক্লাস শেষ হয়েছে। এখন ক্লাসটা তাহসিনের। মেঘার এই ক্লাসটা করার কোনো ইচ্ছে নেই, কিন্তু ক্লাসটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাটা এমনি যেমনই হোক অভদ্র, খবিস পড়ায় ভালো। মেঘার চিন্তা ভাবনার মধ্যেই তাহসিন ঢুকলো ক্লাসরুমে। পুরো ক্লাসে চোখ বুলালো, নিজের অজান্তেই খুঁজলো সেই মাসিক পরিহিত মুখশ্রীকে কিন্তু পেল না। তবে সে কি আজ আসেনি? হঠাৎ তাহসিনের চোখ পড়লো মেঘনার উপর। সাথে সাথেই মেজাজটা বিগড়ে গেলো। বিরবিরিয়ে বলল – এই অভদ্র মেয়েটা এখানে কি করছে?
প্রতিদিনের মতোই ক্লাস শুরু করলো তাহসিন। হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু বুঝাচ্ছে আর পুরো ক্লাসের মেয়েরা তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মেঘা বিরক্ত হলো। মনে মনে বলল – এই অভদ্র ডাক্তারের মধ্যে এরা কি এমন দেখেছে যে এভাবে গিলে খাচ্ছে সব গুলো?
বিরক্তি নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই চোখ পড়লো তনুর দিকে। তনুও হা করে তাকিয়ে আছে তাহসিনের দিকে। মেঘা কনুই দিয়ে খোঁচা মারলো তনুকে, হকচকিয়ে উঠলো তনু। ভ্রু কুঁচকে মেঘনার দিকে তাকালো, বলল – কি হয়েছে?
– ওভাবে কি দেখছিস ওদিকে?
তনু গালে হাত দিয়ে তাকালো তাহসিনের দিকে, আহ্লাদী কন্ঠে বলল – দেখ কি কিউট?
– কিউট না ছাই।
– দেখ দেখ কি সুন্দর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে। আহ আমি বোধহয় হার্ট অ্যাটাক করবো।
– বেশরম মাইয়া। শোন, বাহিরের সৌন্দর্যের ভুলিস না বোইন। ভিতরে ভিতরে ঐ লোক আস্ত এক অভদ্র, পাজী। এক নাম্বারের বদ লোক।
– আপনি বুঝি আমার ভিতরে ঢুকে দেখেছিলেন?
পাশ থেকে এমন একটা বাক্য শুনেই হকচকিয়ে উঠলো মেঘা। চকিত দৃষ্টিতে পাশ ফিরে তাকালো। তাহসিন তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। এই লোক এখানে এলো কখন? একে তো মেঘা একটু আগেই সামনে দেখেছিল। নিশ্চই ওর কথা সব এই বদ লোক শুনে নিয়েছে? এখন যে কি হবে। নিজের উপর নিজেরই এখন রাগ লাগছে। ক্লাসে বসে এই লোকের ব্যাপারে কিসের জন্য কথা বলতে হলো ওকে? ঢোক গিললো মেঘা। তাহসিন বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল – স্টান্ড আপ!
চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ