প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৫

0
119

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৫

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

তাহসিন বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলল – স্টান্ড আপ!

মেঘা দাঁড়ালো না, কাঁপা কন্ঠে বলল – জ্বী আমি!

– হ্যা আপনিই।

ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালো মেঘা। এমনিই তো এই লোক প্রচুর ফল, এখন আবার কি করবে কে জানে? তাকে আবার কঠিন কোনো শাস্তি দিবে না তো? ঐ নাটক সিনেমায় যেমন হয়। মেঘা ভয়ে অনাবরত ঢোক গিলছে, তাহসিন গম্ভীর কন্ঠে শুধালো – কাল ক্লাসে আমরা কোন টপিক নিয়ে আলোচনা করেছিলাম বলুন এবং তার বর্ণনা করুন।

মেঘা হাঁফ বাঁচলো, গড়গড় করে বলে দিল কাল কি কি পড়ানো হয়েছিলো ক্লাসে। তাহসিন কিছুটা সন্তুষ্ট হলো। মেয়েটা এমনি যতটাই অভদ্র হোক পড়াশোনায় ভদ্র আছে। মেঘার বলা শেষ হলেই তাহসিন বলল – বসুন।

মেঘা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বসলো। মনে হচ্ছে এতক্ষন যেন সে বাঘের গুহায় বাঘের সামনেই ছিল আর এখন যেন বাঘের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছে। মেঘাকে বসতে বলেই তাহসিন এগিয়ে গেল সামনের দিকে আবার পড়ানো শুরু করলো।

আজ কলেজ শেষ করে একটু তাড়াতাড়িই বেরিয়েছে মেঘা। একটু বইয়ের দোকানে যেতে হবে নিজের কয়েকটা বই কিনতে হবে তাছাড়া ছোট ভাই কলেজ থেকে ফেরার পথে তার জন্য, রং পেন্সিল আর আঁকার জন্য খাতা নিয়ে যেতে বলেছে। ছোট ভাইয়ের চাওয়া জিনিসগুলো না নিয়ে যদি বাড়ি ফিরে তাহলে হয়তো আজ বাড়িতেই ঢুকতে দিবে না। মেঘার কলেজের পাশেই একটা বইয়ের লাইব্রেরী আছে তাই আর বেশি কষ্ট করতে হলো না তাকে। কলেজ থেকে বেড়িয়েই লাইব্রেরীতে ঢুকলো। নিঃশব্দে একটা একটা বই ওলট পালট করে দেখতে শুরু করলো। বইগুলো দেখতে দেখতে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত থেকে বইটা ছিটকে পড়লো। বিরক্ত হলো মেঘা। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই চমকে উঠলো, আবার তাহসিন? ধাক্কা খাওয়ার জন্য এই এত্ত বড় দুনিয়ায় কি এই একটা লোকই আছে? তাহসিনও ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেঘার দিকে। কিন্তু এই মুহূর্তে মেঘা না তার সাথে কোনোরূপ ঝগড়া করতে চাইছে আর না কোনোরূপ নাম ঝামেলা করতে চাইছে তাই তাহসিনকে পাশ কাটিয়ে সামনে চলে গেল সে। তাহসিনের কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আরও কুঁচকে গেল, পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল – আপনি দেখছি অভদ্র, মিথ্যাবাদী তার সাথে আদব কায়দাও কিছু শিখেননি। কারো সাথে ধাক্কা লাগলে যে স্যরি বলতে হয় জানেন না?

মেঘা তড়িৎ গতিতে পিছন ফিরে তাকালো। এই লোকের সামনে এলে সে যত চায় কোনো ঝামেলা করবে না, এই লোক তত সেধে সেধে ঝামেলা করবে, অভদ্র ডাক্তার একটা। মেঘা দাঁত কিড়মিড় করে এগিয়ে এলো তাহসিনের দিকে, দাঁতে দাঁত চেপে বলল – ধাক্কা তো আপনিও খেয়েছেন আপনি স্যরি বলেছেন আমাকে?

কুঁচকানো ভ্রু জোড়া টানটান হয়ে এলো তাহসিনের, বলল – ধাক্কাটা আপনি আমাকে দিয়েছেন তাই স্যরি আপনার আমাকে বলা উচিৎ ছিল।

– প্রমান কি যে আমি ধাক্কা দিয়েছি।

– প্রমান হলো আপনি অভদ্র আর আমি ভদ্র। অভদ্ররা সব সময় ভদ্রদের গায়ে পড়ে তেমনি আপনিও এসে আমার গায়ে পড়েছেন।

মেঘা চোখ বড় বড় করে তাকালো তাহসিনের দিকে, বলল – ওয়াও! কি সুন্দর লজিক। এই আপনাকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষক কে বানিয়েছে বলুন তো? নাকি বাপ দাদার বা টাকার জোরে এত বড় একটা কলেজের শিক্ষক হয়ে গেছেন?

চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তাহসিনের। এত বড় কথা, এই মেয়ে ওর মেধা আর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে? কত বড় সাহস এই মেয়ের। তাহসিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল – মুখ সামলে কথা বলবেন।

– বলবো না করবেন কি আমাকে?

তাহসিন রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে এদিক ওদিক তাকালো, দাঁতে দাঁত চেপে বলল – মাথায় তুলে আছাড় মারবো।

মেঘা ঠোঁট বাঁকালো, বলল – আপনি তো আমাকে তুলতেই পারবেন না।

তাহসিন দু কদম এগিয়ে গেল মেঘার দিকে, দাঁতে দাঁত চেপে বলল – কাছে আসুন, দেখিয়ে দেই আপনাকে আমি তুলতে পারি কিনা। ঐ তো পাঠ কাঠির মতো শরীর, ফু দিলেই উড়ে যাবেন।

দু কদম পিছিয়ে গেল মেঘা, কিন্তু তার মুখ থামলো না, বলল – আপনি আমাকে পাঠ কাঠির সাথে তুলনা করলেন? আমি ফু দিলেই উড়ে যাব? দিন ফু যদি না উড়ি তাহলে আপনার খবর আছে।

তাহসিন আরও দু কদম এগিয়ে গেল মেঘার দিকে, বলল – কি করবেন আমাকে?

দু কদম পিছিয়ে গেল মেঘা, এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা হাতুড়ি চোখে পড়লো তার। বইয়ের তাকগুলোর পাশে এক কোনে রাখা, চট করে সে বলল – ঐ হাতুড়ি দিয়ে আপনার মাথা ফাটিয়ে দেব।

তাহসিন আরও এগিয়ে গেল মেঘার দিকে, বলল – দিন ফাটিয়ে, দেখি আপনার কত বড় সাহস।

এবারও মেঘা পিছিয়ে যেতে নিল, কিন্তু এবার পিছিয়ে যেতেই ঘটলো বিপত্তি। মেঘা পিছিয়ে যেতে যেতে একদম একটা বইয়ের তাকের কাছে চলে গিয়েছিল। এবার পিছিয়ে যেতেই পিঠ ঠেকলো বইয়ের তাকের সাথে। বইয়ের তাকে ছোট একটা লোহার সুচালো প্রান্ত ছিল বাইরে বের হওয়া। ঝগড়া করতে করতে দু’জনের কারোরই খেয়াল হয়নি লোহার ঐ প্রান্তকে। হঠাৎ তাকের সাথে পিঠ লেগে গিয়ে ঐ লোহার সুচালো প্রান্ত ঢুকে গেল মেঘার পিঠে। “আহ ” করে ব্যথাতুর ধ্বনি করলো সে। ভ্রু কুঁচকালো তাহসিন। ব্যথায় চোখ ছলছল করে উঠেছে মেঘার, নড়ছেও না চড়ছেও না। ঝগড়া আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাহসিন অবাক হলো। একটু আগেই তো মেয়েটা ঠিক ছিল, হঠাৎ কি হলো? তাহসিন শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল – কি হয়েছে?

মেঘা ছোট করে উত্তর দিল – কিছু না।

তাহসিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘনার দিকে, হঠাৎই হাত টেনে তাকে সামনে আনলো, নিজে গিয়ে দাঁড়ালো মেঘার পিছনে। র’ক্তে লাল হয়ে গেছে মেঘার পিঠের কিছু অংশ। আজ ধূসর রঙের একটা জামা পড়ে আসায় র’ক্তটা বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে তার উপর থেকে। তাহসিন তাকালো বইয়ের তাকের দিকে। লোহাটা দেখে কপালের রগগুলো ফুলে উঠলো, রাগ যেন ধপ ধপ করে বেড়ে গেল তার। হাঁক ছেড়ে ডাকলো লাইব্রেরীতে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে। সম্পূর্ণ নীরব লাইব্রেরীতে ভয়ংকর শোনালো তাহসিনের কন্ঠস্বর। একজন যুবক তড়িঘড়ি করে এসে দাঁড়ালো তাহসিনের সামনে। নম্রভাবে বলল – জ্বী স্যার কোনো সমস্যা?

তাহসিন লোহার সুচালো প্রান্তকে দেখিয়ে বলল – এটা কি? আপনারা লাইব্রেরীতে আছেন কেন যদি এর সবদিক খেয়াল না রাখতে পারেন।

যুবকটি মাথা নিচু করে বলল – স্যরি স্যার। আমরা খেয়াল করিনি।

– আপনাদের এই খেয়াল না করার ভুক্তভোগী হতে হয় অন্য কাউকে। যদি খেয়ালই না করতে পারেন আপনার কর্মরত জায়গায় কোন স্থানে কোন সুবিধা আর কোন অসুবিধা রয়েছে তাহলে সেখানে কাজ করেন কেন?

ছেলেটা মাথা নিচু করল, বলল – স্যরি স্যার।

তাহসিন চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা একটু সামাল দিল, বলল – নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল রাখবেন।

তারপরে ফিরে তাকালো মেঘার দিকে, বলল – আপনি আমার সাথে আসুন।

মেঘা ছোট করে প্রশ্ন করলো – কোথায়?

তাহসিন ধমক দিল , বলল – এত প্রশ্ন না করে আমার সাথে আসুন।

মেঘার আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস হলো না। এমনি যে পরিমাণ রেগে আছে। একটু আগে ঐ ছেলেটাকে যা ধমকালো। তাহসিনের পিছু পিছু মাথা নিচু করে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা শুরু করলো। একটু এগিয়েই হঠাৎ থামলো তাহসিন। মেঘা মাথা নিচু করে হাঁটছিল বিধায় খেয়াল করেনি, তার মাথা গিয়ে লাগলো তাহসিনের পুরুষালী পিঠে। ছিটকে পড়ে যেতে যেতে বাঁচিয়ে নিল নিজেকে। তাহসিনের রাগ বারলো আরও, বলল – এখন কি চোখ দুটোও নষ্ট হয়েছে নাকি?

ক্ষেপে গেল মেঘা, বলল – আমার না হয় চোখ নষ্ট হয়েছে। আপনি কেন খাম্বার মতো মাঝ পথে এভাবে দাঁড়িয়ে পড়লেন।

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো তাহসিন। এই মেয়ের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই। যা বলবে তার কথার পৃষ্ঠে একটা উত্তর দিবেই এই মেয়ে। তাহসিন মেঘার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো, হাতটা বাড়ালো মেঘার পিঠের ওড়নার দিকে কিন্তু ইতস্তত লাগছে তার। হাত বাড়িয়েও গুটিয়ে নিল। না, এভাবে একটা মেয়ের ওড়নায় হাত দেওয়া মোটেই তার চরিত্রের সাথে যায় না। তখন তো রাগের বশে মেঘার হাত ধরে টান দিয়েছিল। নয়তো মেয়েটা তাকে হয়তো কিছুই বলতো না। তখন রাগের বশে হলেও এখন তো পুরো সজ্ঞানে তাই ইতস্ততটাও লাগছে বেশি। গলা খাঁকারি দিল তাহসিন, বলল – ওড়না দিয়ে পিঠ ঢেকে নিন। র’ক্ত দেখা যাচ্ছে।

মেঘার হুঁশ ফিরলো। সত্যিই তো রাস্তায় এভাবে বের হলে তাকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। মেঘা দ্রুত ওড়না দিয়ে নিজের পিঠ ঢেকে নিল। তারপর আবার হাঁটা লাগালো তাহসিনের পিছনে।

মিনিট পাঁচেক পর তারা এসে পৌঁছালো হাসপাতালে। তাহসিন তাকে একটা রুমে বসিয়ে দিল। যদিও অবশ্য একবার মেঘা জিজ্ঞেস করেছিল – আমরা এখানে কেন এসেছি?

কোনো উত্তর দেয়নি, শুধু এটুকু বলছে – সাবধান এই রুম থেকে এক পা ও বাইরে ফেলবেন না।

তারপর বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তাহসিন বেরিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই একজন মহিলা এসে ঢুকলো রুমে। ঠিক মহিলাও বলা যাচ্ছে না, দেখে বিবাহিত মনে হচ্ছে । সাদা এপ্রোন জড়ানো শরীরে, নিশ্চই কোনো ডাক্তার হবে। মেয়েটি এক গাল হাসলো মেঘাকে দেখে। মেঘার কাছে গিয়ে বসলো, বলল – পিছন ঘুরে বসো।

মেঘা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো মেঘার দিকে, মেয়েটি বলল – ডাক্তার তাহসিন তালুকদার আমাকে পাঠালেন তোমার পিঠের ট্রিটমেন্ট করতে।

মেঘা এবার বুঝলো। এর জন্যই ওকে তাহসিন লাইব্রেরী থেকে নিয়ে এসেছিল। যাক লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিল লোকটা ততটাও খারাপ না। নিজেও ওর এই টুকু ট্রিটমেন্ট করতে পারতো কিন্তু সে মহিলা ডাক্তার পাঠিয়ে দিয়েছে, তাহসিনের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মালো মেঘার।

( রিচেক করার সুযোগ পাইনি। ভুলত্রুটি হলে একটু কষ্ট করে পড়ে নিবেন )

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here