প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৬

0
101

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৬

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

নিজেও ওর এই টুকু ট্রিটমেন্ট করতে পারতো কিন্তু সে মহিলা ডাক্তার পাঠিয়ে দিয়েছে, তাহসিনের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মালো মেঘার। মহিলার কথায় মেঘা ঘুরে বসলো, মহিলা পরিপক্ত হাতে মেঘার জামাটা পিছন থেকে তুলে ঔষধ লাগাতে শুরু করলেন। মেঘা প্রথম দিকে ইতস্তত করলেও মহিলা তাকে বুঝালো। লোহার আঘাতে ঐ জায়গায় ইনফেকশন হতে পারে। যেহেতু মেঘাও ডাক্তারি পড়ছে সে বুঝলো বিষয়টা। মহিলা কথার পিঠে ঔষধ লাগতে লাগাতেই বলল – তুমি ডাক্তার তাহসিনের কি হও?

– কেন?

– না তাকে কখনও এভাবে কোনো মেয়েকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে দেখিনি। আসলে উনি খুব স্বল্পভাষী, আমাদের সাথে তেমন কথাও বলে না। উনাকে বরাবর মেয়েদের থেকে দূরে থাকতেই দেখেছি সেখানে আজ তোমাকে নিয়ে এলো আবার আমাকে ডেকে নিয়ে এলো তোমার চিকিৎসার জন্য।

– আরে না আমি উনার কিছুই হই না। লাইব্রেরীতে অসাবধানতাবশত পিঠে লোহার আঘাতে লাগলে উনি ওখানে ছিলেন। হয়তো উনি একজন ডাক্তার বিধায় মায়া হয়েছে আমার উপর তাই নিয়ে এসেছে।

কথা বলতে বলতেই “আহ” করে আর্তনাদ করলো মেঘা। পিছনের মহিলাটি বললেন – কি হলো জ্বলছে?

মেঘা মিনমিনে কন্ঠে বললেন – একটু।

মহিলাটি অভয় দিয়ে বললেন – এই তো হয়ে গেছে।

মহিলার কাজ শেষ হলে মেঘাকে ঠিক হয়ে বসতে বলল। মহিলার দিকে ফিরে বসলো মেঘা, মহিলার মুখে এখনও হাসি বিদ্যমান। মহিলা দুই ঠোঁটে হাসি বজায় রেখেই বললেন – তোমার নামই তো জানা হলো না , নাম কি তোমার?

– মেঘা, সানজিদা সুলতানা মেঘা।

– বাহ , সুন্দর নাম। আমি মারিয়া , ডাক্তার মারিয়া।

এতক্ষন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো যখন ডাক্তার মারিয়া ইঞ্জেকশন বের করলেন। তার হাতে ইঞ্জেকশন দেখেই গলা শুকিয়ে এলো মেঘার, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো – এটা দিয়ে কি করবেন?

মারিয়া বোধহয় মেঘনার মুখ দেখেই তার ভয়টা আদাজ করতে পারলেন, তিনি বললেন – ইঞ্জেকশনে ভয় পাও তুমি?

মেঘা ছোট করে বলল – হু।

– দেখো যেহেতু তোমার আঘাতটা লোহার সেহেতু তোমার ইঞ্জেকশন নিতে হবে।

মেঘা জানে কেন তাকে ইঞ্জেকশন নিতে হবে, কিন্তু সে বলে তো আর তার ইঞ্জেকশনের প্রতি ভয় কমবে‌ না। ছোট বেলা থেকেই ইঞ্জেকশন, র’ক্ত, কাটা ছেঁড়ায় ভয় বেশি। ডাক্তারি পড়তে আসার আগেও সে এ কথা মা বাবাকে অনেকবার বুঝিয়েছে কিন্তু তারা বোঝেনি উল্টো মেঘাকে ধমকে চুপ করিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে এখানে এসে দেখতে দেখতে সব ঠিক হয়ে যাবে। মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরিক্ষাও দিতে চায়নি মেঘা, মা বাবা জোর করে দিয়েছেন। মারিয়া ইঞ্জেকশন নিয়ে মেঘার কাছে যেতেই চেঁচিয়ে উঠলো মেঘা, বলল – আমি ইঞ্জেকশন নেব না।

– ইঞ্জেকশন না নিলে তোমার ইনফেকশন হতে পারে ।

– হবে না, আমি ইঞ্জেকশন নিব না।

– ইঞ্জেকশনে এত ভয় কেন মেয়ে? তুমি চোখ বন্ধ করে বসো দেখবে এখনই হয়ে যাবে। একটুও ব্যথা পাবে না।

– না তবুও আমি ইঞ্জেকশন নেব না।

ব্যর্থ হলো ডাক্তার মারিয়া। সাথে একটু বিরক্তও হলো, এত বড় মেয়ে নাকি ইঞ্জেকশনে ভয় পায়। বিরক্তি নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেল মারিয়া। মেঘা ভেবেছে তার উপর রাগ করে বোধহয় ডাক্তার মারিয়া বের হয়ে গিয়েছে। একটু খারাপ লাগলো তার, কিন্তু কি করবে? পৃথিবীতে আর কিছু ভয় লাগে না মেঘার। এই মেয়েরা নাকি তেলাপোকা ভয় পায়, কিন্তু মেঘা পায় না। তেলাপোকাকে হাতের তালুতে নিয়েও নাচতে পারে সে। কিন্তু কেন যেন এই ইঞ্জেকশনকে দারুন ভয় পায় সে। কেন এই ভয়? মেঘা অনেক বার নিজের ভিতর থেকে এই ইঞ্জেকশন ভীতি দূর করতে চেয়েছে কিন্তু পারেনি। সে যখনই ইঞ্জেকশনের ঐ সুচালো সুইয়ের দিকে তাকায়, তখনই তার কল্পনাতে চলে আসে যে ঐ সুচালো সুইটা পুচ করে তার মাংস ভেদ করে শরীরে ঢুকে গেছে। সাথে সাথে ভয়ে আঁতকে ওঠে সে। মেঘা বার কয়েক উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো ডাক্তার মারিয়া কোথায় গেলেন? একেবারে চলে গেলেও তো বলে যাবেন তাহলে ও বাড়ি চলে যাবে। এভাবে একদম কিচ্ছু না বলে যাওয়াটা কেমন হলো? আসলে এই হাসপাতালের ডাক্তারগুলোই ভালো না। একজন তো বদ, অভদ্র আর একজনের বিন্দু মাত্র কমনসেন্স নেই। মেঘার ভাবনার মধ্যেই মারিয়া তাহসিনকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। মেঘা চোখ তুলে তাকালো, তাহসিনকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার। তার মানে এই ডাক্তারনী এই লোককে ডাকতে গিয়েছিলেন। তাহসিন গিয়ে দাঁড়ালো মেঘার সামনে, চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বিরক্ত সে। বিরক্তি ভরা কন্ঠেই তাহসিন বলল – শুনলাম আপনি নাকি ইঞ্জেকশন ভয় পান? এই সাহস নিয়ে আপনি ডাক্তারি পড়তে এসেছেন?

মাথা নুইয়ে রেখেছে মেঘা। কি বলবে সে? এটা বলবে যে আমি এই ডাক্তারি ফাক্তারি মোটেই পড়তে চাইনি, বাবা মা জোর করে পাঠিয়েছে? বিষয়টা হয়তো ভালো হবে তখন তার থেকে চুপ থাকাটাই শ্রেয়। মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে তাহসিন ঠোঁট বাঁকালো, বলল – আপনার মতো অভদ্র মেয়েরা আবার চুপ থাকতেও পারে? মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর কোনো আশ্চর্য জিনিস দেখছি আমি।

তেতে উঠল মেঘা, অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তাহসিনের দিকে। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – আমি অভদ্র নাকি আপনি অভদ্র? অভদ্র ডাক্তার একটা।

– কি বললেন আপনি? আমি অভদ্র? চেনেন আমাকে আপনি?

– আপনি চেনেন আমাকে?

– হ্যা চিনি তো চোখের সামনে দেখছি। ডাক্তারি পড়তে এসে ইঞ্জেকশন ভয় পাচ্ছেন। এভাবে চললে আপনি রোগীকে ইঞ্জেকশন কিভাবে দিবেন? পরে দেখা যাবে আপনি রোগীর না রোগী আপনার চিকিৎসা করছে।

– দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন।

– মান আছে আপনার যে অপমান করবো?

তাহসিন আর মেঘার ঝগড়ার মধ্যেই মারিয়া ইঞ্জেকশনটা পুশ করে দিল মেঘার শরীরে। কাজ শেষ হতেই হাসি মুখে বলল – কাজ শেষ ডাক্তার তাহসিন।

তাহসিনও হাসলো, মেঘা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো দুজনের দিকে। এর মধ্যে ইঞ্জেকশন দেওয়া শেষ? কই সে তো টেরই পেল না। ডাক্তার মারিয়া তাকালো মেঘার দিকে, তার পাশে বসে কোমল কন্ঠে বলল – তুমি মেডিকেল স্টুডেন্ট। তোমার এইসব ভয় মানায় না মেয়ে। একজন ডাক্তারের পেশা খুব মহৎ পেশা। যখন একজন ডাক্তার হবে তখন বুঝতে পারবে। বুঝতে পারবে কত মানুষের হাসি কান্না, সুখ দুঃখ, কষ্ট তোমার হাতেই রয়েছে। ভয়টা কাটাও, একজন ভালো ডাক্তারের এই দেশে খুব অভাব। একজন ভালো ডাক্তার হও, মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করো । ভয়টা জয় করো নয়তো দেখবে অকালেই ঝড়ে পড়তে হবে তোমাকে।

মেঘা অপরাধী চোখে তাকালো মারিয়ার দিকে। মারিয়া হাত বুলিয়ে দিল মেঘার মাথায় অতঃপর চলে গেল। পড়ে রইলো তাহসিন আর মেঘা। মারিয়া যাওয়ার পরই তাহসিন কিছু ঔষধ দিলো মেঘাকে, বলল – ঔষধগুলো নিন।

লোকটা আসলেই খুব ভালো। না হয় এভাবে একটা মেয়েকে চিকিৎসা করায় আবার ঔষধও কিনে দেয়। মেঘা কৃতজ্ঞ হলো, তাসহিনের হাত থেকে ঔষধগুলো নিতে নিতে বলল – এসব আবার কেন করতে গেলেন। আমি বাইরে থেকেই তো কিনে নিতে পারতাম।

তাহসিন তাকালো মেঘার দিকে, ভাবলেশহীন ভাবে বলল – ঔষধগুলো পড়ে ছিল আমার কেবিনে। দেখলাম এখনও ভালো আছে ঔষধগুলো, ডেট আছে। দুদিন পর ফেলে দেব তাই আপনাকে দিয়ে দিলাম, দান করলাম আপনাকে। আমার আবার দয়ার শরীর।

এত বড় অপমান? রাগে শরীর রি রি করে উঠলো মেঘার। হাতের ঔষধগুলো ছুঁড়ে ফেললো পাশের ছোট্ট টেবিলটার উপরে। তাহসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল – লাগবে না আপনার ঔষধ। আপনার ঔষধ আপনিই রাখুন, পানিতে গুলিয়ে গুলিয়ে খান।

তাহসিনকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিল না মেঘা, হনহন করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তাহসিন হতবাক, সে রেগে যাওয়ার মতো কি এমন বললো। সে তো শুধু সত্যি কথা বলেছে। এতে রাগের কি আছে? নির্ঘাত এই মেয়ের মাথায় কোনো সমস্যা আছে। যখনই দেখবে তেজের গোডাউন নিয়ে ঘোরে। কোনো ম্যানার্স নেই। নিজের শিক্ষককে অবধি সম্মান দেয় না। তাহসিন বিরবিরিয়ে বলল – অভদ্র মেয়ে।

______________________________________

চারদিকে সূর্যের মিষ্টি আলোয় ভরে গেছে। গাছে গাছে নানা রঙ, নানা বর্ণের ফুলে ভরপুর। মেঘা ক্লাসরুমে বসে আছে আর সামনে ক্লাস করাচ্ছে তাহসিন। মেঘা অধীর আগ্রহে বসে আছে কখন ক্লাসটা শেষ হবে আর কখন তাহসিনকে একটা ধন্যবাদ জানাবে। যত যাই হোক গতকালকের জন্য তাহসিনের একটা ধন্যবাদ প্রাপ্প। কম করেনি ওর জন্য তাহসিন। ক্লাস শেষ হতেই তড়িঘড়ি করে তাহসিনের পিছু পিছু বের হলো মেঘা। একটু এগিয়েই ডাক দিল, বলল – স্যার! স্যার!

পিছু ফিরে তাকালো তাহসিন। মেঘাকে দেখেই ভ্রু কুঁচকে এলো তাহসিনর, বলল – কি সমস্যা?

মেঘা আমতা আমতা করে বলল – ধন্যবাদ!

– কেন?

– কালকের জন্য।

তাহসিন ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো, বলল – বাহ আপনার মতো অভদ্র মেয়ে দেখেছি ধন্যবাদও দিতে পারে যদিও আমি আপনার থেকে ধন্যবাদের আশা করিনি।

মেঘার রাগ উঠানোর জন্য এই টুকুই যথেষ্ট। যেচে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিল সে। যদি জানতো তাহসিন এইভাবে তাকে অপমান করবে তাহলে কোনো দিনই তাকে ধন্যবাদ জানাতো না। আসলে এই লোক সম্পর্কে ভালো কিছু ভাবাই বেকার। মেঘা ফুঁসতে ফুঁসতে বলল – আসলে আমারই ভুল। কাকা কিভাবে মানুষের ধন্যবাদের মানে বুঝবে? সে তো জানবে শুধু তার কর্কশ কন্ঠ দিয়ে কা কা করতে।

– আপনি আমাকে কাক বললেন?

– কাককে কাক বলবো না তো কি বলবো?

– আমি কাক হলে আপনি কি? আপনি তো কাকনী।

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা, বলল – কাকনী কি?

– কাকের ফিমেল ভার্সন।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here