প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_৭

0
71

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৭

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

– কাকের ফিমেল ভার্সন।

মেঘা গোল গোল চোখে তাকালো। কাকের আবার ফিমেল ভার্সন আছে? ঠোঁট বাঁকালো সে, বলল – যেমন উদ্ভট মানুষ, তেমন উদ্ভট কথা।

– আমি উদ্ভট? তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্রস করছো।

মেঘা ভেঙিয়ে বলল – তুমি কিন্তু তোমার লিমিট ক্রস করছো।

– অভদ্র মেয়ে।

– অভদ্র ডাক্তার।

– শাট আপ।

– আপনি শাট আপ।

তাহসিন রাগে ফোঁস ফোঁস করছে। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে এখনই মাথায় তুলে একটা আছাড় মারতে। যখনই দেখা হবে তখনই দেখা যাবে এই মেয়ে তার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে। বাচাল মেয়ে একটা। তাহসিন মুখ খুললো আবার কিছু বলবে তার আগেই মেঘা হাত উঠিয়ে থামিয়ে দিল তাকে, বলল – শুনুন আপনার এই কর্কশ কন্ঠে কা কা শোনার আর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। চললাম আমি।

তাহসিনের কোনো কথা শুনলো না সে। হাঁটা শুরু করলো গেটের দিকে। তাহসিন পিছন থেকে গলা একটু উঁচিয়েই বলল – অভদ্র কাকনী।

কথাটা বলে আবার আশেপাশে তাকালো তাহসিন। আশেপাশে কাউকে না দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল সে। আশেপাশে কেউ থাকলে এখন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। ইদানীং তাহসিন যে আচরণ করছে এগুলো মোটেই তাহসিনের চরিত্রে ছিল না। কিন্তু এই মেয়েটা সামনে আসলেই সব বদলে যায়। স্বল্পভাষী তাহসিনও তখন বকবক করতে শুরু করে, পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে। তাহসিন বরাবারই মনে করতো ” তর্ক করা জ্ঞানী লোকের কাজ নয়। ” সেই তাহসিন আজ তার এক ছাত্রীর সাথে ক্ষনে ক্ষনে তর্কে জড়াচ্ছে। এও বিশ্বাসযোগ্য? নিজের আচরনে নিজেই মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যায় তাহসিন। সব দোষ এই বাচাল মেয়ের। নিজেও বাচাল আর তার সামনে আসলে তাকেও বাচাল করে দেয়।

_____________________________________

আকাশ কালো করে চলে এলো বৃষ্টি। হঠাৎ করেই যেন মেঘ এসে জমা হলো আকাশে, আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝুপ করে নেমে পড়লো। সাথে মেঘের তর্জন গর্জন তো আছেই। কেউই হয়তো হঠাৎ এই বৃষ্টির আগমনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। মেঘাও ছিল না, ছাতা আনেনি সে। ক্লাস শেষে দাঁড়িয়ে ছিল বারান্দায়, পাশে দাঁড়ানো তনু আর গৌরব। গৌরব ছেলেটা আগে থেকেই চুপচাপ ছিল, ইদানিং যেন আরও চুপচাপ হয়ে গেছে। কি যেন ভাবতে থাকে সারাদিন। তনু তার পাশে দাঁড়িয়ে বকবক করে যাচ্ছে এক মনে। মেঘা একটু সরে গেল ওদের কাছ থেকে। বরাবরই বৃষ্টিপ্রিয় মানুষ মেঘা। কতদিন পর সে এই বৃষ্টির ছোঁয়া পেল সে? একটু আধটু বৃষ্টি বিলাস করলে ব্যাপারটা কেমন হয়? মেঘা একটু ফাঁকা জায়গায় গেল। বৃষ্টির মধ্যে পা উঁচিয়ে নিজের মুখটা বাড়িয়ে দিল বাইরে। ছোট ছোট বৃষ্টিকনা ছুঁইয়ে দিচ্ছে মেঘার গোলগাল শ্যামবর্না মুখমন্ডল। চোখ বন্ধ করে নিল মেঘা, অনুভব করতে লাগলো বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাকে।

তাহসিনও বৃষ্টিতে আটকা পড়েছিল তার কেবিনে মেতে পারছিল না। দুই ভবনের মধ্যে খানিকটা দূরত্ব ছিল। যেভাবে ঝড়ঝড় করে বৃষ্টি পড়ছে তাতে এইটুকু গেলেই ভিজে যাবে সে তাই দাঁড়িয়ে রইলো ওখানেই আর পিয়নকে পাঠিয়েছিল ছাতা আনতে। পিয়ন কিছুক্ষণ পর ছাতা এনে হাতে দিল তাহসিনের। সে ছাতাটা খুলে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলো ঠিক তখনই নজর গেল বৃষ্টি বিলাসী এক রমনীর দিকে। নজর আটকে গেল তার দিকে। এই মুহূর্তে না তার কোনো রাগ লাগলো, না তার এই নারীকে দেখে ঝগড়ার ইচ্ছে হলো। বৃষ্টিতে ভীষণ স্নীগ্ধ লাগছে মেয়েটিকে। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে মেয়েটির চোখে মুখে, ঠোঁটে‌। বৃষ্টির ফোঁটা ফোঁটা পানি মেঘার ঠোঁট থুতনি বেয়ে গড়িয়ে নামছে গলায়। তাহসিন মেঘার গলার দিকে তাকিয়েই ঢোক গিলল। নজর সরিয়ে নিল সে। কিন্তু তার অবাধ্য নির্লজ্জ চোখ দুটো বারবার ওই দিকেই যাচ্ছে। রাগ লাগলো তাহসিনের। এই মেয়ের সমস্যা কি যখনই দেখা হয় ঝগড়া করে, তার চরিত্রের বহির্ভূত আচরন করতে বাধ্য করে। এখন আবার তার চরিত্রেও দাগ লাগাতে চাইছে? সব দোষ এই মেয়েটার। না এই মেয়েটা এখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস করতো আর না ওর চোখ নির্লজ্জের মতো আচরণ করলো। তাহসিন লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেল মেঘার দিকে। মেঘা তখনও চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি উপভোগ করছিলো। ধমক দিলো তাহসিন, বলল – এই মেয়ে এখানে কি করছেন?

হঠাৎ ধমকে হকচকিয়ে উঠলো মেঘা। পা দুটো আগে থেকেই উচু করা ছিল বিধায় পড়ে যেতে নিল। ভয়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্য খামচে ধরলো তাহসিনের বাহু। নিজেকে মুখ থুবড়ে পড়া থেকে তো বাঁচিয়ে নিল কিন্তু তাহসিনের হাত থেকে তাকে কে বাঁচাবে? তাহসিন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাহুর দিকে যেখানে মেঘা খামচে ধরে আছে। মেঘা চট করে ছেড়ে দিল তাহসিনের বাহু, মেকি হেসে বলল – স্যরি।

– এখানে কি করছেন? বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন?

– না মানে অনেক দিন পর বৃষ্টি হলো তো তাই আর কি

– তাই কি? অসুস্থ হলে দেখবে কে? অসুস্থ হয়ে কলেজ কামাই করার ধান্দা নাকি?

মেঘা হা হয়ে গেছে। সে তো বৃষ্টিতে পুরোপুরি ভিজেনি, জাস্ট মুখটা একটু বারিয়েছিল বাহিরে। এতেই অসুস্থ হয়ে পড়বে? এই লোকটা তখন থেকে এসে তাকে শুধু ধমকে যাচ্ছে। মেঘা ভ্রু কুঁচকালো। কিছু বলার জন্য উদ্ধত হলো কিন্তু বলতে পারলো না। তার আগেই তাহসিন তার হাতে থাকা ছাতাটা ধরিয়ে দিল, বলল – তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে যাও।

মেঘার উত্তর শোনার জন্য আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না সে। বৃষ্টির মধ্যেই দৌড়ে বেরিয়ে গেল। এতক্ষন বৃষ্টিতে ভিজবে না বলে দাড়িয়ে থেকে পিয়নকে দিয়ে ছাতা আনালো, এখন সেই ছাতাই অন্য কাউকে দিয়ে নিজে সেই ভিজেই অন্য ভবনে চলে গেল , মানুষ আসলেই বড় বিচিত্র।

______________________________________

আকাশে উজ্জ্বল সূর্য উঠেছে। চারদিকে তার তেজস্বী আলোয় ভরিয়ে দিচ্ছে। কাল যে মুষলধারে বৃষ্টি ছিল বোঝার উপায় নেই কোনো। শুধু জায়গায় জায়গায় একটু আধটু পানি জমে আছে। মেঘা ক্লাসরুমে ক্লাস করছে, আর সামনে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে ক্লাস করাচ্ছে তাহসিন। একটু পর পর আবার হাঁচি দিয়ে যাচ্ছে। ঠান্ডা বেশ ভালোই লেগেছে। এমনি তাহসিনের ঠান্ডার ধাত আছে। তার মধ্যে কাল আবার বৃষ্টিতে ভিজেছে। মেঘার খারাপ লাগলো, কাল তো তাহসিন তাকে ছাতাটা দিয়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে। ওহ হ্যা ছাতাটা তাকে ফেরত দিতে হবে। মেঘার কাঁধ ব্যাগটা থেকে তাহসিনের ছাতাটা বের করলো, নিয়ে এসেছিল আজ। চোখ ঘুরিয়ে চারদিকে তাকালো, না এখানে বসে ছাতা দেওয়া যাবে না। সবার সামনে দিলে সবাই কি মনে করবে তার থেকে ক্লাস শেষ করে দেওয়া যাবে। মেঘা করলোও তাই, ক্লাস শেষ হতেই দৌড়ে পিছু পিছু বেরিয়ে এলো। কিন্তু পেল না তাকে। এই সময়ের মধ্যে কোথায় উধাও হয়ে গেল লোকটা? মেঘা ছাতাটা নিয়ে গেল তাহসিনের কেবিনের দিকে। পিয়নকে ধরে অনেক কষ্টে তার কেবিনে ঢোকার অনুমতি পেল। কবিনের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিল মেঘা। ভিতর থেকে আওয়াজ এলো – আসুন।

মেঘা গুটি গুটি পায়ে ঢুকলো কেবিনে। তাহসিন মাথা নুইয়ে কি যেন লিখছিল। মেঘা মৃদু স্বরে বলল – স্যার!

তাহসিন মাথা তুলে তাকালো। একদিনেই চোখ মুখ যেন শুকিয়ে গেছে। মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। লোকটার বোধহয় জ্বর এসেছে। মেঘা একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করলো – স্যার, আপনার কি জ্বর এসেছে?

তাহসিন উত্তর দিল না কোনো, শুধু বলল – কেন এসেছেন এখানে?

মেঘা ছাতাটা এগিয়ে দিলো তাহসিনের দিকে, বলল – এটা ফেরত দিতে।

তাহসিন তাকালো মেঘার দিকে, বলল – লাগবে না নিয়ে যান আপনি।

ভ্রু কুঁচকালো মেঘা, বলল – আপনার জিনিস আমি কেন নেব। কাল না হয় আমাকে সাহায্যের জন্য এটা দিয়েছিলেন আজ তো আর লাগবে না তাই আপনার ছাতা আপনিই রাখুন।

তাহসিনের আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না। এমনি শরীরটা অসুস্থ লাগছে। তাহসিন ছাতাটা নিল , শান্তভাবেই ছুঁড়ে ফেলে দিল ময়লার ঝুড়িতে। তার ডেস্কের একটু ওপাশেই ময়লার ঝুড়ি।

মেঘা অপমান বোধ করলো ভীষণ। মুহুর্তেই চোখ ভরে উঠলো তার। অতিরিক্ত হাসিখুশি, কথা বলা মেয়েদের মন নরম হয় বেশি। এরা একটুতেই কষ্ট পায়। মেঘারও হয়েছে তাই। সে না হয় ছাতাটা একটু নিয়েছিল তাই বলে ছাতাটা এভাবে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিবে? সে কি নোংরা করেছে ছাতাটা নাকি সে ধরেছে বলে নোংরা হয়েছে ছাতাটা? তাছাড়া ছাতাটা তো নিজে চেয়ে নেয়নি তাহসিনই দিয়েছিল তাকে । মেঘা একট কথাও বললো না। নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে।

মেঘা বেরিয়ে যাওয়ার পরই হুঁশ ফিরলো তাহসিনের। সে এতক্ষন অন্য মনস্ক হয়ে কাজ করছিল একটা। কাজ বলতে কাগজে আঁকছিল দুটো চোখ, সেই চোখ দুটো যা তার রাতের ঘুম হারাম করেছে। কিন্তু মেয়েটাকে সে দেখছে না কয়েকদিন ধরে, তবে কি মেয়েটা আর আসবে না। এই কয়দিনে পুরো ক্লাস মেয়েটাকে খুঁজেছে সে কোথাও পায়নি। কোথায় পাবে মেয়েটিকে। তাহসিনের কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। এই অসুস্থতাল মধ্যে ঐ চোখ দুটো যেন আরও বেশি জ্বালাচ্ছে। মেয়েটার সাথে একবার কথা বলা উচিৎ তার। একবার জিজ্ঞেস করা উচিৎ কেন তার এমন হচ্ছে? কিন্তু মেয়েটাকে তো সে পাচ্ছেই না‌। আবার মাঝে মাঝে কেমন যেন ঐ ঝগরুটে অভদ্র মেয়েটার মধ্যে খুঁজে পায় তার স্বপ্নে দেখা ঐ মেয়েটাকে। আচ্ছা এটা কি সত্যি? নাকি তার ভুল ধারনা? এইসব চিন্তা করতে করতে একটা কাগজ ময়লার ফেলতে চেয়েছিল সে কিন্তু ভুলবশত ছুঁড়ে ফেলেছে ছাতাটা। তাহসিন উঠে দাঁড়ালো, ঢুলু ঢুলু পায়ে এগিয়ে গেল ময়লার ঝুড়ির কাছে ঝুড়ি থেকে আবার উঠিয়ে নিল ছাতাটা। হাতের ছাতাটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here