#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–২৫
তাড়াহুড়ো করে তৈরি হচ্ছে স্নিগ্ধা। রাতভোর আবরারের পাগলামিতে ঘুম থেকে উঠতে ভীষন দেরি হয়ে গেলো আজ। স্নিগ্ধা হন্তদন্ত হয়ে একবার বই গোছাচ্ছে অন্যবার নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছে।
এক পর্যায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাধতে নিলো স্নিগ্ধা। আচমকা পেছন থেকে এসে ওকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো আবরার। ঘুমের রেশ এখনও ছোটাছুটি করছে আবরারের মুখমন্ডলে। আবরার কে দেখে স্নিগ্ধা ব্যাস্ত গলায় বলে ওঠে,
— আবরার ছাড়ুন,,,,আমার দেরি হয়ে যাবে,,,
কথাটা শুনলেও মানলোনা আবরার ।উল্টে ঘুমঘুম চোখে নাক ঘষতে লাগলো স্নিগ্ধার গলাতে,,,স্নিগ্ধা শিউরে উঠে মৃদূ গলায় বলল,
— আবরার! প্লিজ,,,এখন এসব পাগলামি করবেন না।আমার লেট হয়ে যাবে।
আবরার নাক সরিয়ে এনে থুতনি রাখলো স্নিগ্ধার বাম পাশের কাধের ওপর। আয়নার দিকে স্নিগ্ধার ভেসে থাকা মুখের দিকে চেয়ে বাকা হেসে গেয়ে উঠলো,,
“”” তুমি নারী নাকি পরি,নিজে নিজেই করবে ভুল।
আমিতো হায় একটি মানুষ খুজে পাইনা কোনও কূল,,,
স্নিগ্ধা প্রথম দফায় অবাক হয়ে তাকিয়ে পরমুহূর্তে হেসে ফেললো। আবরার ছোট্ট করে স্নিগ্ধার গালে চুমু খেয়ে শান্ত গলায় বলল,
— আমি যাচ্ছিনা বলে রাগ করোনা। কনফারেন্স আছে বললাম না,, ও দিকটায় গেলে অফিসে ঢুকতে ভীষণ দেরি হয়ে যাবে।
উত্তরে স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে বলল,
— রাগ করবো যদি আমাকে নিয়ে আসতে না যান।
আবরার মুচকি হাসলো। স্নিগ্ধাকে আরেকটু শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে বলল,
— সেটা আপনি বললেও যাবো,,, না বললেও যাবো।
কথাটা বলে স্নিগ্ধার চুলে চুমু খেলো আবরার। স্নিগ্ধা প্রথমে হেসে আবারো ব্যাস্ততা নিয়ে বলল,
— এখন ছাড়ুন। তৈরি হচ্ছি!
এবার স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে সরে এলো আবরার। আপাদমস্তক একবার দেখলো ওকে। পরমুহূর্তে কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
— শাড়ির কুচি গুলো এলোমেলো কেন? ঠিক করোনি?
স্নিগ্ধা চুল বাধতে বাধতে বলল,
— নাহ।সময় পাইনি,
আফরার ছোট্ট একটা শ্বাস টেনে বসে পরলো হাটুমুড়ে। স্নিগ্ধা হাতের কাজ থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে নিচের দিকে তাকালো। আবরার কি করতে চাইছে বুঝে উঠলোনা।
আবরার হাত বাড়িয়ে একে একে স্নিগ্ধার কুচি গুলো সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে লাগলো। এতে যেন চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো স্নিগ্ধার। অবাক চোখে দেখতে লাগলো আবরার কে।
আবরার সব কিছু একেবারে ঠিকঠাক করে গুছিয়ে দিয়ে মুখ তুলে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,– এখন ঠিক আছে?
স্থির ভাবে চেয়ে থেকে স্নিগ্ধা হ্যা বোধক মাথা নাড়লো শুধু। মুখে কোনও কথা আসছেনা তার।
আবরার উঠে দাড়িয়ে স্নিগ্ধার এক গালে হাত ছুইয়ে ঠোঁট এগিয়ে চুমু খেলো ওর কপালে।
পরক্ষনে সরে আসতে চাইলেও পারলোনা।ইতোমধ্যে স্নিগ্ধা আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে ওকে। আবরার বেশি না ভেবে নিজেও হাত ঠেকিয়ে ধরলো স্নিগ্ধাকে। পরক্ষনে বাকা হেসে বলল,
— এখন বুঝি দেরি হচ্ছেনা?
কথাটায় স্নিগ্ধা মৃদূ হাসলো।কিন্তু মুখ তুললোনা আবরারের বুক থেকে।
একজন স্ত্রীর কাছে পৃথিবীর সব থেকে শান্তির জায়গাই যে তার স্বামীর প্রসস্থ বুকটা!
__________________________________________
“”এই মেয়ে শোনো??
পেছন থেকে পুরুষালি গলার আওয়াজ পেয়ে দাঁড়িয়ে পরলো স্নিগ্ধা।জিজ্ঞাসা নিয়ে ঘুরে তাকালো। মৃনাল কে দেখে কপালের ভাঁজ মিলিয়ে স্বাভাবিক হয়ে এলো তার মুখ চোখ। ওপাশ থেকে মৃনাল এগিয়ে এসে দাড়ালো স্নিগ্ধার সামনে।
— তোমার নাম স্নিগ্ধা না?
উত্তরে ওপর নিচ দুবার মাথা ঝাকালো স্নিগ্ধা।
মৃনাল খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ টা নামিয়ে নিলো।পরমুহূর্তেই আবারো ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— আমাকে চেনো?
এবারও ওপর নিচে মাথা ঝাকায় স্নিগ্ধা।ব্যাপারটায় মৃনাল ভ্রু কুঁচকে বলল,
— তুমি কি কথা বলতে পারোনা? কাল তো খুব কথা বলছিলে!
স্নিগ্ধা মুখ কালো করে বলল,
— কাল তো মেঘ ছিলো,আজ…
মৃনাল মাঝপথে কথা থামিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
— আজ? আজ মেঘের ভাই আছে,একই তো!
স্নিগ্ধার খুব বিরক্ত লাগলো কথাটায়,,,কিন্তু প্রকাশ না করে চুপ করে রইলো। একবার চোখ ঘুরিয়ে এদিকে ওদিকে নজর দিলো মেঘ কে খুঁজে পাওয়ার আশায়৷ বিষয় টা চোখে পরলে মৃনাল চোখ সরু করে বলে ওঠে,
— কাউকে খুজছো?
স্নিগ্ধা মৃনালের দিকে তাকিয়ে না বোধক মাথা নাড়লো, পরমুহূর্তে ব্যাস্ত গলায় বলল,
— মেঘ আসেনি ভাইয়া?
” ভাইয়া ” শব্দ টা বোধহয় খুব একটা পছন্দ হলোনা মৃনালের।নাক মুখ কুচকে নিয়ে বলল,
— আমি তোমার ভাইয়া কবে হলাম?
স্নিগ্ধা বেশ সহজ ভাবে বলল,
— কেন? আপনি তো মেঘের ভাই তাহলে..
— মেঘের ভাই তাই বলে তোমার নই।ওকে? আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে নাহ।
স্নিগ্ধা বোকা চাহনী দিয়ে বলে ওঠে,
— কি বলে ডাকবো তাহলে?
মৃনাল মুখটা সিরিয়াস করে বলল,
— ডাকবে কিছু একটা, তবে ভাইয়া নয়।
স্নিগ্ধা খানিক ক্ষন ভাবুক ভঙিতে তাকিয়ে থাকলো,,,কিছু একটা মাথায় আসতেই চট করে বলল,
— তাহলে কাকা বলে ডাকি?আমার বাবা একাতো,আমার একটা কাকার খুব শখ ছিলো! ডাকবো?
কথাটা শুনে মৃনাল হতভম্ব হয়ে গোল চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো স্নিগ্ধার মুখের দিকে।পরক্ষনে মৃদূ ধমকে বলল,
— এই মেয়ে? ফাজলামো করছো আমার সাথে? কোন দিক থেকে আমাকে কাকার মত দেখতে?
স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে বলল,
— বারে আপনিই তো বললেন,ভাইয়া বাদে যে কোনও কিছু ডাকতে!
কথাটা বলে মুখ টিপে হাসলো স্নিগ্ধা। বিষয় টা খেয়াল করতেই মৃনাল তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। স্নিগ্ধা যে মজা করছে সেটা বেশ ভালোভাবেই বোধগম্য হলো তার। হা করে কিছু বলতে ধরলে ওপাশ থেকে স্নিগ্ধার নাম ধরে ডেকে ওঠে মেঘ,,
— স্নিগ্ধা!
ডাক শুনে মৃনাল স্নিগ্ধা দুজনেই সেদিকে ফিরলো। মেঘকে দেখে উদ্ভাসনায় হাত উচু করে ক্ষীন আলাপচারিতা সাড়লো স্নিগ্ধা। অন্যদিকে বোন কে দেখামাত্রই মুখটা কালো করে নিলো মৃনাল। মাথা চুলকে স্নিগ্ধার দিকে ফিরলো।
মেঘ ততক্ষনে এগিয়ে এসে দাড়ালো ওদের মাঝখানে। মুখে হাসি মেখে বলল,
— কেমন আছিস?
স্নিগ্ধা মাথা নেড়ে বলল,
— আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
— ভালো!
কথাটা বলে মেঘ মৃনালের দিকে তাকায়।সাথে সাথে ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে,
— তুমি এখানে কি করছো?
মৃনাল প্রথমে থতমত খায়।পরমুহূর্তে তুতলে বলে ওঠে,
— এএম..নি! কাল বললিনা তোর বন্ধু এই মেয়েটা তাই একটু,,
মেঘ খানিকক্ষণ চোখ ছোট করে তাকিয়ে থাকলো মৃনালের দিকে। মৃনাল অস্বস্তিতে এদিক ওদিক চোখ ঘোরায়। পরক্ষনে মেঘ স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,-
—- চল ক্লাশে যাই!
স্নিগ্ধা আর মৃনালের দিকে তাকালো নাহ।মেঘের কথায় মাথা নেড়ে হাটা ধরলো ক্লাশরুমের দিকে।
মৃনাল আহত হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। নিজের সাথে বিড়বিড় করে বলল –এই মেঘ আসার আর সময় পেলোনা…?
ততক্ষনে পেছন থেকে সুমন এসে দাড়ালো ওর পাশে।মৃনালের চোখ অনুসরন করে নাক বরাবর তাকালো।মেঘ আর স্নিগ্ধাকে দেখে তেমন কিছুই বোধগম্য হলোনা তার। মৃনালের কাধে হাত ঠেকিয়ে উদ্বেগ নিয়ে ডাকলো,
— এই মৃনাল?
ধ্যান ভাঙলো মৃনালের,ঘাড় কাত করে সুমনের দিকে তাকিয়ে বলল,
— তুই কখন এলি?
— এলাম তো অনেকক্ষন।তোকে খুজে পেতে সময় লাগলো তার থেকে দ্বিগুন ।তা তুই ফার্স্ট ইয়ারের গ্যালারিতে কি করছিস?
মৃনাল চোখ সরিয়ে ঠোঁট কামড়ালো।কিছু একটা ভেবে বলে উঠলো,
— আচ্ছা সুমন,তোর বন্ধুর একটা বউ দরকার তাইনারে? অনেক তো হলো একা একা! আর কত?
সুমন বাধ্য ছেলের মত ওপর নিচে মাথা নেড়ে বললো,
— হ্যা।কিন্তু তোরতো কোনও মেয়েই পছন্দ হয়না!
মৃনাল মুচকি হেসে বলল, — এবার হয়ে গেছে!
সুমন অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— তাই? কাকে???
মৃনাল প্রথমে লাজুক হাসে। পরমুহূর্তে সুমনের চিবুকে হাত ছুইয়ে কৌতুক সুরে বলে ওঠে,
— তোকে!
কথাটা বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো মৃনাল।আর নাক মুখ কুঁচকে মৃনালের দিকে তাকিয়ে রইলো সুমন।
______________________________________
“”” ভাইয়া কি বলছিলো রে?
— ভাইয়া ডাকতে নিষেধ করছিলো!
বেঞ্চে বসতে বসতে উত্তর দিলো স্নিগ্ধা। মেঘ অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
— কিহ?
স্নিগ্ধা ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়,
— হ্যা।
অস্থিরতায় মেঘ মাথা নেড়ে বলল,
— স্নিগ্ধা আমার ভাইয়া এভাবে কখনও মেয়েদের সাথে কথা বলেনি! হ্যা মেয়েদের সাথে কথা বলেনি এমন নাহ,তবে আগ বাড়িয়ে নয়,আর সেখানে ভাইয়া তোকে….
স্নিগ্ধা বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলল,
— ওসব ছাড়! স্যারের পড়া হয়েছে তোর?
কথাটা শুনলেও মানলোনা মেঘ,স্নিগ্ধার হাত জাপটে তাড়াহুড়ো করে বলল,
— আচ্ছা আর কিছু বলেছে ভাইয়া?
স্নিগ্ধা বইয়ের পাতায় চোখ বোলাতে বোলাতে বলল,
— তেমন কিছুনা।নাম ধাম জানতে চাইছিলো,
মেঘ ঝটকা খেয়ে বড় চোখ করে বলল,
— ফোন নম্বর চেয়েছে?
স্নিগ্ধা এবার বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে তাকালো, বললো,
— কি শুরু করলি বলতো মেঘ? উনি কেন আমার থেকে ফোন নম্বর চাইবেন? এমনি কথা বলছিলো বললাম,,তারপরেও কিসব উল্টোপাল্টা বকছিস!
মেঘ দমে গেলো…. মুখটা কাচুমাচু করে বলল,
— আচ্ছা ঠিক আছে।এ নিয়ে আর কথা তুলবোনা।
মেঘের কথা শেষ না হতেই ক্লাশ রুমে একজন প্রফেসর প্রবেশ করলো।কথা থামিয়ে মুখ সিরিয়াস করে দাঁড়িয়ে পরলো সকলে।
তবে মেঘের মনোযোগ পুরোপুরি লেগে রইলো স্নিগ্ধা আর মৃনালের বিষয় নিয়ে।কেন মৃনাল স্নিগ্ধার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলল তদন্তে নামার সিদ্ধান্ত নিলো মনে মনে।
_____________________________________
আমি এই সময় চা খাই।আমাকে এক কাপ চা এনে দেয়ার ব্যাবস্থা করো আমিনুল!
কথাটা শুনতেই চমকে তাকালো আমিনুল। চৌদ্দ সিকের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা তোফায়েল কে উদ্দেশ্য করে অবাক হয়ে বলল,
— জেলের মধ্যে চা? তাও মার্ডারের আসামি কে? আমার চাকরি খোয়াতে নাকি?
কথাটায় দাঁত কড়মড় করে তাকালো তোফায়েল। ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
— খুব পিছলে গেলে তাইনা? ভুলে যেওনা এই প্ল্যানে তুমিও যুক্ত ছিলে!
আমিনুল চেয়ার ছেড়ে উঠে এলো।এদিক ওদিকে তাকিয়ে পরক্ষনে তোফায়েলের দিকে চোখ ঘোরালো। ফিসফিসিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,
— আস্তে কথা বলুন।আর আমি মোটেও এই পরিকল্পনায় আপনার সাথে ছিলামনা।বরং আপনি সব পরিকল্পনা করে আমাকে জানিয়েছিলেন।
— সব জেনেও চুপ করে তো ছিলে।ওই একই তো হলো।
— না এক হলোনা।
আপনি মোটেও আমাকে ফাসাবেন না। মোটা টাকা দিয়ে এই চাকরি পেয়েছি, এত্ত সহজে খোয়াতে চাইনা আমি!
জবাবে তোফায়েল ভ্রু নাঁচিয়ে বলল
— আর এতদিন আমার থেকে যা টাকা গিললে? তার বেলা?
আমিনুল ভীষণ অপমানিত বোধ করলো,,,মৃদূ রাগ নিয়ে বলল,
— দেখুন একদম এভাবে বলবেন না। আমি এমনি এমনি আপনার টাকা নেইনি।কাজও করেছি তার বিনিময়ে।
তোফায়েল নাক মুখ কুঁচকে বলল,
— আসল কাজের কাজ তো কিছুই পারলেনা। তুমি থাকতেও আমি আর আমার মেয়ে হাজতের মধ্যে ঢু্কে গেলাম। আর তুমি কি করছো? আঙুল চুষছো?
আমিনুল উত্তেজিত হয়ে বলল,
— দেখুন।যা পারছি করছি,পোষালে হলো নাহলে যেটা ভালো হবে যার কাছে ভালো হবে তার কাছে যান।যত্তসব!
উত্তরে তোফায়েল হা করে কঠিন কিছু বলতে ধরলে পাশ থেকে তেঁতে উঠলো তনয়া। এগিয়ে এসে বলল,
— আপনারা প্লিজ থামবেন? একে অন্যের সাথে লড়াই করছেন কেন? নিজেদের মধ্যে তর্ক করে কোনও লাভ আছে বলুন তো?
কথাটায় তোফায়েল চুপ করে যায়। পাশ থেকে আমিনুল বিরক্তি নিয়ে বলল,,
— আমি কি করেছি? স্যারই তো উল্টাপাল্টা বলছেন তখন থেকে।আচ্ছা ম্যাডাম আপনিই বলুন তো,,এখানে কত পুলিশ কন্সটেবল,, অন্যান্য আসামি,, এদের সামনে কিভাবে আমি আপনার বাবাকে চা এনে দেই? তারওপরে ওই আবরার চৌধুরী আমাকে শাসিয়ে গিয়েছেন যে আমাকেও খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের সাথে ঢোকাবে জেলের ভেতর! এখন সব জেনে বুঝে নিজের পায়ে নিজে কি করে কুড়াল মারি বলুনতো?
জবাবে তনয়া উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
— আমি সবই বুঝতে পারছি। অফিসার,,দেখুন অন্তত এটা ভালো হয়েছে যে সবাই একই সাথে ফেসে যাইনি।আপনি বাইরে আছেন। এখন, আপনি বাবার সাথে তর্কে না লেগে এটা ভাবুন যে কিভাবে বাঁচাবেন আমাদের।আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।প্লিজ কিছু একটা করুন!
আমিনুল ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবলো।তনয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— দেখুন ম্যাডাম।চেষ্টা তো করছিইনা এমন নয়।কিন্তু সাক্ষী প্রমান সব হাতের মুঠোয় আবরারের। তার ওপরে মার্ডারের মত ইস্যু।কি করবো সেটাই ভাবছি!
আপনারা ভাববেন না! সবার অগোচরে হলেও আপনাদের আরাম আয়েসের দায়িত্ব আমার। আর যত তাড়াতাড়ি পারছি আপনাদের বেল এর ব্যাবস্থা আমি করছি।
আমিনুল আস্বস্তি দিলেও তনয়া আস্বস্তি পেলো কিনা বোঝা গেলোনা। মুখে চিন্তার ছাপ দূর হলোনা তার। বাবার পাশে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো এই মুহুর্ত টা থেকে পালানোর উপযুক্ত কোনও পন্থা।
________________________________________
আবরারের গাড়ি দেখেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরলো স্নিগ্ধা। এত সময় মেঘ আর সে ক্লাশ আওয়ারের পর বাদাম গাছের নিচে বসে আড্ডায় মেতে ছিলো।
স্নিগ্ধা কে দাড়াতে দেখে মেঘ ভ্রু কুঁচকে বলল,
— কি রে কি হলো?
স্নিগ্ধা ওর দিকে তাকালো না।উদ্বেগ গলায় বলল,
— আমাকে যেতে হবে এখন!
বলতে বলতে আবরার নেমে এলো গাড়ি থেকে।সাদা রংয়ের কোর্টের মধ্যে স্কাই ব্লু রংয়ের শার্ট টা একটু বেশিই দাগ তুলেছে তার শরীরে। স্নিগ্ধা মুগ্ধ চোখে দেখলো কিছুক্ষন।
মেঘ স্নিগ্ধার ব্যাবহারের আগাগোড়া কিছুই বুঝলোনা।তবে স্নিগ্ধার চোখ অনুসরণ করে গেটের দিকে ফিরলো,,,আবরার কে দেখামাত্রই চোখ আটকে এলো তার।
উদ্বেজিত ধ্বনি নিয়ে বলল,
— কে রে ছেলেটা? কি হ্যান্ডসাম রে স্নিগ্ধা!
সাথে সাথে কপালে ভাঁজ নিয়ে তাকালো স্নিগ্ধা। তবে মুখে কিছু বলার আগে
মেঘ পুনরায় চকমকে মুখ নিয়ে বলে ওঠে,
— এই ও তো এদিকেই আসছে রে!
কথাটায় স্নিগ্ধাও চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনে তাকালো। আবরার ততক্ষনে এসে দাঁড়িয়েছে ওদের সামনে। মুখ হা করে তাকিয়ে আছে মেঘ।আবরার আশেপাশে না দেখে মৃদূ হেসে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল
—- ক্লাশ শেষ?
উত্তর না দিয়ে স্নিগ্ধা একবার মেঘের দিকে তাকালো, মেঘের মুখের অভিব্যাক্তি দেখে ভীষণ ক্রোধ অনুভূত হলেও মুখে প্রকাশ করলোনা সে। আবরারের এক বাহুতে হাত পেচিয়ে ব্যাস্ত গলায় বলল,
— চলুন।
স্নিগ্ধা কে আবরারের হাত ধরতে দেখে আগের থেকেও বেশি হা হয়ে আসে মেঘের মুখ। একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকায় সে,,, তো অন্যবার আবরারের দিকে।
স্নিগ্ধা মেঘের কৌতুহল না মিটিয়েজ মুচকি হেসে বলল,
— আসছি মেঘ,,
মেঘের উত্তরের অপেক্ষা না করে আবরারের হাত ধরে হেটে গেলো স্নিগ্ধা। দেখতে দেখতে গাড়িতে উঠে বসলো তারপর। আবরার ঘুরে এসে বসে পরলো ড্রাইভিং সিটে। স্নিগ্ধা কিছু একটা বলার জন্যে হা করলো,তার আগেই আবরার গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
— ভার্সিটিতে শাড়ি পরে আসবেনা আর!
স্নিগ্ধা হতভম্ব হয়ে মুখ টা বন্ধ করে নিলো। আবরারের দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক চোখে। একটু আগেই তো আবরার হাসলো তার সামনে, তবে এখন মুখটা এত গোমড়া হয়ে এলো কেন?? কি হলো ওনার?
চলবে,
গল্প অনিয়মিত দেয়ার জন্যে দুঃখিত। তবে একদিন পর পর দিলে আমার সুবিধে মোতাবেক হতো,আর যদি নিয়মিত দেই তবে পর্ব খুবই ছোট হবে।বাকিটা আপনাদের ইচ্ছের ওপর!