অসম্ভবেও আমার তুমি নুসরাত সুলতানা সেজুথি পর্ব–২৬

0
64

#অসম্ভবেও আমার তুমি
নুসরাত সুলতানা সেজুথি
পর্ব–২৬

বিরিয়ানি খেতে গিয়ে এলাচ দানা দাঁতে পরলে অনুভূতি যেমন হয়,, ঠিক তেমন মুখ করে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে মৃনাল। মেঘ মুখ কাচুমাচু করে ক্ষনে ক্ষনে নিচের দিকে তাকাচ্ছে তো আবারো চোখ তুলে দেখছে মৃনাল কে।
মৃনাল এবার তীব্র বিরক্তি নিয়ে বলল,

— তোর আমার সাথে কিসের শত্রুতারে?

মেঘ মুখ তুললো,ঠোঁট উল্টে বলল,

— আমি কি করলাম?

— আমি স্নিগ্ধার সাথে কথা বলেছি,,,হ্যা বলেছি! কিন্তু ওর সাথে প্রেম করতে কি গিয়েছিলাম? এসব মাকে বলার কি দরকার ছিলো তোর?

মেঘ মুখ ছোট করে বলল,
— মা-ই তো জানতে চাইলো। তাই বললাম। মাতো রোজই জিজ্ঞেস করে আমায়,তুমি কি করছো ভার্সিটিতে,,মারামারি করছো কিনা ঠিকঠাক ক্লাশ করছো কিনা। আমিতো রোজই মাকে বলি তাহলে আজ এটা কেন বাদ যাবে বলো? মা তো তোমার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে আমি সেই দায়িত্ব পালন করবোনা নাকি?

মৃনাল বিরক্তি নিয়ে সুর দিয়ে বলল,

— কি বাধ্য মেয়ে আমার মায়ের! নিজের ব্যাপারে তো কিছুই জানাস না মাকে।সব লয়ালিটি শুধু আমার বেলায়,,

মেঘ কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেলো।মৃনাল এগিয়ে গিয়ে বসে পরলো বিছানায়। দু হাতে ভর দিয়ে এগিয়ে বিছানার সাথে আধশোয়া হয়ে বসলো। বালিশের পাশ থেকে হাতে ফোন উঠিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো স্ক্রিনের দিকে।

মেঘ কপাল কুঁচকে খানিক ক্ষন ভাইকে দেখলো।পরক্ষনে বলল,

— আমি কি চলে যাবো?

মৃনাল স্ক্রিন থেকে মুখ না তুলেই বলল,
— এখনও যাসনি?

মেঘ গাল ফুলিয়ে উল্টো ঘুরে হাটা ধরলো।দরজা ছেড়ে বেরোতে ধরবে পেছন থেকে আবারো ডেকে উঠলো মৃনাল।

— মেঘ শোননা!

মৃনালের নরম গলা শুনে কৌতুহল নিয়ে পেছনে তাকালো মেঘ। ভ্রু কুঁচকে বলল,

— কি?

মৃনাল উদ্বেগ নিয়ে বলল,
— স্নিগ্ধা মেয়েটার কন্টাক্ট নম্বর আছে তোর কাছে?

কথাটা শুনতেই মেঘ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। এরুপ দৃষ্টিতে মৃনাল থতমত খেয়ে বলল,

— না মানে,এমনি আর কি!

মেঘ মুখ ভেঙচে বলল,
— থাক আর বলতে হবেনা আমি সব বুঝে গেছি।

মৃনাল কৌতুহল নিয়ে বলল,
— কি বুঝেছিস?

মেঘ দু কদম এগিয়ে এসে কোমড়ে হাত ঠেকিয়ে বলল,
— আপনি যে স্নিগ্ধাকে লাইন মারতে চাইছেন সেটা বলবো মাকে?

মৃনাল উদ্বেগ নিয়ে উঠে এসে বলল,

— না আদরের বোন আমার।এই কাজ ভুলেও করিস না।তোর কি চাই? বল আমায়,

মেঘ ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলল,

— এইতো লাইনে এসেছো। ঠিক আছে মাকে না হয় এবারের মত বলবোনা।তবে আমি যা যা চাই তাই তাই কিনে দিতে হবে কিন্তু…?? নাহলে?

মৃনাল নাক মুখ কুঁচকে নিয়ে বলল,

— থাক আর বলতে হবেনা। বুঝতে পেরেছি! কিনে দেবো। তবে আমার কিন্তু স্নিগ্ধার নম্বর চাই…

মেঘ ভাব নিয়ে বলল,

— ফোন নম্বর কেন? চাইলে তোমার লাইন টাও পাকাপোক্ত করে দেবো একবারে। তুমি শুধু আমার কথা রাখো ,বাকিটা আমি দেখছি।

মৃনাল নিশ্চিন্তে একটা নিঃশ্বাস নিলো। পরমুহূর্তে ঈষৎ সন্দেহে ভ্রু কুঁচকে বলল,

— তোকে দ্বারা হবেতো?

মেঘ মুখ ফুলিয়ে বলে ওঠে,

— দেখো ভাইয়া,আমাকে এতোটাও গাধা ভাবতে যেওনা। আমি তো একটা মেয়ে নাকি? আমি বেশ ভালো করেই জানি মেয়েদের মন কি কি করলে পাওয়া যায়।

মৃনাল দুই ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

— তাই? তা কি করে পাওয়াা যায় শুনি?

মেঘ অধৈর্য হয়ে এলো, বলল,

— তোমার যদি আমার ওপর ভরসা না থাকে তবে ঠিক আছে আমি পারবোনা।চাইনা তোমার শপিং,,নিজের কাজ নিজে করে নাও যাও।

মেঘ মুখ কালো করে হাটা ধরলে ব্যাস্ত হয়ে হাত টেনে ধরলো মৃনাল। উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলো,

— এই না না। লক্ষী বোনা আমার,রাগ করেনা।আমি কি সেসব বলেছি নাকি? আমিতো শুধু জিজ্ঞেস করছিলাম,

মেঘ ঠোঁট উল্টে বলল,

— তাহলে ঠিক আছে।

প্রত্যুত্তোরে মৃনাল বিরক্ত হলেও জোরপূর্বক মেঘের সামনে ঠোঁট প্রসারিত করলো। হুট করে মেঘের মাথায় এলো আজকে স্নিগ্ধার আবরারের হাত ধরার দৃশ্য টা। তাৎক্ষণিক মৃনালের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বলল,

— কিন্তু ভাইয়া স্নিগ্ধার যদি কোনও বয়ফ্রেন্ড থাকে?

কথাটা বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হলো মৃনালের। হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে পারলোনা সে। উত্তরে খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলো।পরমুহূর্তে গলায় দৃঢ়তা এনে বলল,

— গোল দেবো আর গোল কিপার থাকবে না তা হয় নাকি? তবে স্নিগ্ধাকে দেখে তো মনে হলোনা ওর এসবে আগ্রহ আছে। সাদামাটা মেয়েই তো মনে হলো!

মেঘ চিন্তিত ভাবে স্বায় মূলক মাথা নাড়লো। নিজে নিজে ভাবলো,

— হতেও পারে,তাছাড়া স্নিগ্ধার মত সাদাসিধে মেয়ের সাথে ওরকম একটা গুড লুকিং আর বড় লোক ছেলের প্রেম ঘটিত কোনও সংযোগ থাকবে
বলেও মনে হয়না। ওরকম একটা হ্যান্ডসাম ছেলেকে তো শুধু আমার সাথেই মানায়।

কথাটা ভেবে এক মুহুর্তের জন্যে আবরারের হাত পেচিয়ে হাটার দৃশ্যটা ভাবলো মেঘ। সাথে সাথে ঠোঁটে লাজুক হাসি এলে উঠলো তার।
মেঘের মুখে হাসি দেখে ভ্রু কোচকালো মৃনাল।

— ভুতের মত হাসছিস কেন?

মেঘ থতমত খেয়ে মুখ বন্ধ করে নিলো।সিরিয়াস হয়ে বলল,

— কিছুনা। ঠিক আছে তাহলে ওই কথাই রইলো,, ডিল ইজ ফাইনাল। ওকে?

মৃনাল উদ্বেজনা নিয়ে বলল,
— ওকে!

_____________________________________

_________________________

আপনার কি হয়েছে বলুন না??আমি কি কিছু করেছি..??

স্নিগ্ধার কথায় আবরার ভ্রুক্ষেপ না দেখিয়ে একিভাবে ড্রাইভ করতে থাকে ।মুখটা চূড়ান্ত পর্যায়ে গম্ভীর তার।

স্নিগ্ধা অসহায় চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো আবরারের দিকে । আবরার একবার দেখছেওনা তাকে।
প্রত্যেকবারের মত আহত হয়ে এবার ঘাড় ফিরিয়ে বাইরের দিকে চোখ ঘোরালো স্নিগ্ধা। সিটের সাথে মাথা এলিয়ে এলোমেলো ছুটতে থাকা গাছ গুলোকে দেখতে শুরু করলো গভীর মনোযোগে। মনে মনে ভাবতে লাগলো,,,

“” আবরারের হঠাৎ কি হলো? সকালেও তো ঠিক ছিলো,,,আমাকে শাড়ি পরতে কেন নিষেধ করলো ভালো করে বলল অব্দি নাহ! কি হবে শাড়ি পরে এলে? সকালে তো নিজেই আমার শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করে দিলো।তখনও তো কিছু বললনা।বললে আমি নিশ্চয়ই অন্য কোনও পোশাক পরে আসতাম। সেই তখন থেকে মুখটা রামগুরুরের ছানার মত করে রেখেছে।একটা কথাও বলছেনা আমার সাথে…!

হুট করে স্নিগ্ধার হাতে হাত রাখলো আবরার।ভাবনার সুতোতে টান পরতেই চট করে ফিরে তাকালো স্নিগ্ধা। আবরার সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করা অবস্থাতেই স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বেশ শান্ত স্বরে বলল,

— কাল তোমাকে বলেছিলাম তো,কোনও ছেলের সাথে কথা না বলতে। তুমি শুনলেনা কেন?

কথাটা শুনতেই এতক্ষন পর স্নিগ্ধার বোধগম্য হলো আবরারের গুমোট মুখস্রীর মানে। ব্যস্ত হয়ে ঘুরে বসলো আবরারের দিকে।উদ্বেগ নিয়ে বলল,

— আমি যেচে কথা বলিনি তো।উনি ডেকেছিলেন আমায়।

— ডাকলেই তুমি যাবে??

স্নিগ্ধা মুখ কালো করে বলল,

— ওটা মেঘের ভাই ছিলো তাই জন্যেই…

এটুকু বলে থামলো স্নিগ্ধা, পরমুহূর্তে চোখ ছোট করে বলল,
— কিন্তু এসব আপনি কি করে জানলেন??

এখনও আবরার তাকালোনা স্নিগ্ধার দিকে।সোজা তাকিয়ে থেকেই বলল,
— বউয়ের খোঁজ খবর রাখবোনা।তা আবার হয় নাকি??

স্নিগ্ধা সরু চোখ করে বলল,

— আপনি কি আমার পেছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছেন??

আবরার বাকা হেসে জবাব দেয়,
— রাখতে তো হতোই।সুন্দরি বউ বলে কথা!

কথাটায় আবরার স্নিগ্ধার প্রশংসা করলো কিনা ভাবলোনা স্নিগ্ধা। তবে সাথে সাথে চেহারায় ঘন কালো মেঘ এসে ভীড় করলো তার। মলিন হয়ে এলো মুখমণ্ডল।

“” আবরার তাকে একটুও বিশ্বাস করেনা? যে তাকে যাচাই করতে গোয়েন্দা রাখতে হলো শেষ মেষ!

স্নিগ্ধার দিক থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘাড় কাত করে তাকালো আবরার। ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,

— চুপ কেন?

উত্তরে স্নিগ্ধা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে ক্ষীন হেসে বলল,

— কিছুনা। একটু তাড়াতাড়ি চলুন।

আবরার কপাল কুঁচকে বলল,

— কেন? শরীর খারাপ লাগছে??

স্নিগ্ধা না বোধক মাথা নাড়লো দুদিকে।যার অর্থ লাগছেনা।কিন্তু উত্তর পেয়েও আবরার ক্ষান্ত হলোনা। এক হাত বাড়িয়ে স্নিগ্ধার কপালে ঠেকিয়ে ধৈর্য হীন গলায় বলে উঠলো,

— মাথা ব্যাথা করছে পরি?? মাথা ঘুরছে? বমি পাচ্ছে??

স্নিগ্ধা কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো। আবরার ব্যাস্ত হয়ে হাত দিয়ে স্নিগ্ধাকে টেনে আনলো নিজের দিকে। স্নিগ্ধার মাথাটা এক হাত দিয়ে
বুকের সাথে চেপে ধরে নরম গলায় বলল,

— চোখ বন্ধ করে রাখো। একটু ভালো লাগবে। সামনে কোনও স্টল পেলে মেডিসিন এনে দেবো।

স্নিগ্ধা খানিকক্ষণ আবরারের মুখের দিকে নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকলো। চোখ বন্ধ করে আবরারের বুকে মাথা রাখলো ঠিকই কিন্তু ভেতরটা ভীষণ অস্থিরতায় মেতে উঠলো তার ।

এত ভালোবাসা,যত্ন দিয়ে কি লাভ যদি বিশ্বাসের খুটিটাই নড়বড়ে হয়??ভরসায় ভর্তি থাকা থলে টা শূন্য হয়,,কি লাভ এতো ভালোবেসে? কোনও লাভ নেই তো! সন্দেহের মত মরিচিকা ভালোবাসায় প্রবেশ করলে সেই সম্পর্কে যে জং ধরে যায়,,ফাটল তৈরি হয় তার প্রত্যেকটা দেয়ালে।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here