আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৪ Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
564

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

পড়ানো শেষ হতেই আনিকা ঘরে ঢুকে এল। বলল

সুজানা আপনার যদি পড়ানো শেষ হয় তাহলে আমার সাথে একটু আসুন।

সুজানা কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলো।

কোথায়?

ওই মা আর কাকির কাছে। আপনার সাথে নাকি কিছু কথা আছে।

সুজানা শুকনো ঢোক গিললো।

আমার সাথে? কিন্তু আমার সাথে কিসের কথা?

তেমন কিছু না। মেহুলকে নিয়ে কিছু কথা বলবে।

সুজানা মনেমনে বিরক্ত হলো।

এখানে পড়ানোটাই তার কাজ। কারো খোঁজখবর দেয়া না।

আবিদ কলম গালে রেখে সুজানার দিকে তাকালো। বলল,

টিচার তুমি এখুন চলি যাবে?

সুজানা মিষ্টি হেসে বলল

হু। আপনাদের হোমওয়ার্ক দিচ্ছি। সুন্দর করে করবেন। ঠিক আছে?

ওকে টিচার।

অনা বলল

টিচার তুমি কালকে আমাদের মতো বসবে।

সুজানা হেসে আনিকার দিকে তাকালো। আনিকা রুক্ষ গলায় বলল

একদম চুপ। টেবিল কি বসার জায়গা? সুজানা আপনি কিছু না বললে ওদের এসব বাজে আবদার দিনদিন বেড়েই যাবে।

এভাবে পড়তে না দিলে ওরা পড়বেনা ম্যাডাম। থাক। চলুন। আমার শেষ।

আবিদ আর অনা একসাথে চিল্লিয়ে বলল

টিচার আমরাও যাব।

আনিকা বিরক্ত হয়ে তাকালো। বলল

অভির কাছে যাও। একদম দুষ্টুমি করবেনা।

দুজনেই বেরিয়ে গেল।

আনিকার সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল সুজানা। মর্জিনা বেসিনে কিছু ধুঁতে ধুঁতে বকবক করছেন। সুজানাকে দেখে আনজুমা বেগম কিছু একটা বললেন সালমা বেগমকে।

সালমা বেগম সুজানকে একপলক দেখে বলল,
বৌমা মেয়েটাকে বসতে দাও।

সুজানা বলল

না না দরকার নেই। আমার একটু তাড়া আছে। বেরুতে হবে।

সবাই একে অপরের দিকে তাকালো। চোখাচোখির পর সালমা বেগম শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বললেন,

ওই তোমার বান্ধবী সম্পর্কে কিছু কথা জানার ছিল। বৌমা অভিকে একটু ডাক দাও তো।

আনিকা মাথা দুলিয়ে চলে গেল। সুজানার বুকটা তখন কাঁপছে অল্পস্বল্প। এরা চাইছেটা কি?

মন্থর গতিতে হেঁটেহেঁটে রান্নাঘরে পা রাখলো অভিক। সুজানা মাথা ফেরাতেই সুজানাকে ইতস্তত অবস্থায় দেখে ভুরু কুঁচকালো সে ।

কোনো সমস্যা?

সালমা বেগম ক্ষিপ্ত গলায় বললেন

অবশ্যই সমস্যা। তুই কোথা থেকে জেনেছিস যে মেহুলের অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে? হ্যা? এই মেয়েটা তো মেহুলের সাথে পড়ে। তুই এই মেয়ের মুখ থেকে শোন।

এই মেয়ে বলোতো ওর কারো সাথে সম্পর্ক-টম্পর্ক আছে? সত্যি করে বলো।

সুজানা চোখ তখন মেঝেতে নিবদ্ধ। অভিক আঁড়চোখে তাকালো।

এই মেয়ে কথা বলতে লজ্জা কিসের? বলো।

সুজানা আগপাছ না ভেবে বলল,

আছে।

সাথে সাথে সবার কপালে ভাঁজ পড়লো। অভিকের কপালের ভাঁজ আরও গাঁঢ়।

ওর পরিবার হয়ত জানেনা এখনো। কিন্তু ছেলের পরিবার জানে। আমি এটুকু জানি।

ওমা কি বলে এই মেয়ে?

সুজানা পিছু ফিরে একপলক অভিকের দিকে তাকালো। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আবার সবাইকে একপলক দেখে বলল

আসি।

আচ্ছা মেয়ে শুনো।

সুজানা পিছু ফিরলো। সালমা বেগম এবার বিনয়ী গলায় বললেন

এইসব তোমার বান্ধবীকে আবার বলোনা যেন। তোমাকে ভালো মনে হলো তাই জানতে চাইলাম।

সুজানা উত্তরে মৃদু হাসলো শুধু। তারপর বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আবিদ আর অনা কোথা থেকে যেন ছুটে এল। সুজানার হাঁটু জড়িয়ে ধরে বলল

তোমাকে সুজান ডাকি?

সুজানা হাসলো। মাথা নিচু করে বলল

খুব শখ?

ডাকি? সুজান ডাকি?

সুজানা মাথা দুলালো।

তুমার সাথি যাবে আবি।

অনা লাফিয়ে উঠে বলল

অনা ও যাবে। টিচার অনা যাবে।

আনিকা এসে বলল

এই ছাড়ো। সুজানা আপনাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি।

সুজানা ওদের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল

না না ওদের এসব ভালো লাগে আমার।

আম্মু টিচার বাড়ি যাব।

আনিকা চোখ লাল করে তাকালো। সুজানা গাল টেনে দিয়ে বলল

কাল নিয়ে যাব । আজ তো টিচার শপিংমলে যাবে।

আবিদ মাথা দুলিয়ে বলল.

আবিও শুপিংমুলে যাবে।

আনিকা তাকে কোলে তুলে নিল। বলল

একদম চুপ। সবাইকে জ্বালিয়ে মারে। এখন তোমার পাপাকে ফোন দেব।

আবিদ ধস্তাধস্তি লাগালো কোল থেকে নামার জন্য। আনিকা অভিককে ডাক দিয়ে বলল

অভি একটু এদিকে আয় না। সুজানাকে বের হতে দিচ্ছে না। এক আছাড় মারব একদম।

আবিদ ইতোমধ্যে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। সুজানা বলল

বকবেন না। ছেড়ে দিন।

অনা ততক্ষণে সুজানার আঙুল ধরে দাঁড়িয়েছে।

ফিসফিস করে বলল

টিচার টিচার আমি তুমি চলি যায়। কেমন?

সুজানা চোখ বড় বড় করে চাইলো। এ কাদের পাল্লায় পড়লো সে?

আনিকা আবিদের গালে ইতোমধ্যে ঠাস ঠাস বসিয়ে দিয়েছে। সে ফ্লোরে গড়াগড়ি শুরু করে দিয়েছে।

অভিক দৌড়ে এসে কোলে তুলে নিল

সুপারম্যান এই অবস্থা কেন?

আবিদ নাক টেনে সুজানার দিকে আঙুল বাড়িয়ে বলল

সুজানের সাথি যাব।

তো যাবে। কাঁদতে হচ্ছে কেন?

আনিকা বলল

অভি লাই দিস না। মেয়েটাকে ছেড়ে দে। ও দেরীতে বেরুলে বাড়ি ফিরতে দেরী হবে। মেয়েমানুষের কত সমস্যা তুই বুঝবি না। ওদের দু’জনকে নিয়ে যা। অনা এসো। টিচারকে ছাড়ো।

অনা মাথা দুলালো। সুজানার পেছনে গিয়ে পা দুটো জড়িয়ে ধরে লুকিয়ে থাকলো। সুজানা কি করবে কি বলবে কিছু খুঁজে পেল না।

আনিকা বলল

টিচার বললো তো কাল নিয়ে যাবে। কাল যেও হ্যা? এখন টিচারকে ছাড়ো। শপিংমলে যাবে। ছাড়ো। আম্মুর কাছে এসো।

অনা মাথা দুলালো। সে আসবে না।

অভিক বলল

টিচারের বাড়ি না যাক। শপিংমলে তো যেতে পারে। অ্যাম আই রাইট মিস সুজানা?

সুজানা কপাল ভাঁজ করে তাকালো। চোখ সরিয়ে বলল

হুহ।

ওকে জিনিয়াস কান্না থামান। আমরা শপিংমলেই যাব। এবার ঠিক আছে?

টিচার যাবে।

হ্যা টিচারকে তো যেতেই হবে।

আনিকা বলল

তুই নিয়ে আসবি তোর সাথে করে। সুজানাকে তাহলে পৌঁছে দিস।

সিউর।

তারপর ভুরু উঁচিয়ে বলল..

মিস সুজানা আপনি রাজী?

সুজানা দুপাশে মাথা নাড়ালো। হুহ যন্ত্রণা! আবার জিজ্ঞেস করে রাজী কিনা।

সুজানা মুখে বলুন রাজী কিনা।

সুজানা আনিকার দিকে তাকালো। আনিকা অভিকের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলল

মজা করছিস মেয়েটার সাথে?

রাজী কিনা জিজ্ঞেস করছি।

বললো তো।

আমি ইশারা বুঝিনা।

সুজানা ছোট করে বলল

রাজী। চলো অনা।

অভিকের দিকে কেমন করে তাকিয়ে তারপর অনাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। অভিক আবিদকে নিয়ে বেরুলো।

সুজানাকে পিছু ডেকে বলল

সুজানা গাড়ি ওদিকে।

সুজানা ঘাড় ঘুরালো।

কোনদিকে।

অভিক মুখ বাড়িয়ে বলল

ওদিকে।

সুজানা সেই বরাবর তাকালো। কিছু না দেখে চাহনিতে কাঠিন্যতা এনে বলল

আমি ইশারা বুঝিনা।

অভিক মৃদু হাসলো। ডানপাশে তাকান।

সুজানা ডান পাশে তাকিয়ে বলল

ওকে।

অনা আঙুল দেখিয়ে বলল

অভি অভি তুমি টিচারকে সুজান ডাকো।

অভিক ঘাড় মালিশ করলো।

জেল হতে পারে মাদার।

সুজানা তাকাতেই বলল…

আপনাকে কিছু বলিনি। গাড়িতে গিয়ে বসুন প্লিজ।

সুজানা গাড়ির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। অনা দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের কাছে দাঁড়ালো। সুজানাকে ডেকে বলল

সুজান কাম হিয়া’র।

সুজানা চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। ছোট্ট করে বলল

আমি পেছনে বসবো ম্যাডাম।

অনা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালো। বলল

ইখানে আম্মু বসে, ওখানে পাপা বসে। আমি পাপার কুলে বসি আবি আম্মুর কুলে বসে।

সুজানা তার কথা না বুঝে ভুরু কুঁচকে চেয়ে রইলো। আরেকবার ঘড়িতে সময় দেখে নিল। ততক্ষণে অভিক এসে সিটে বসলো। বলল

আপনাদের টিচারকে বসতে বলুন।

সুজানা পেছনের সিটে বসলো। অনাও নেমে পেছনের সিটে গেল। আবিদও পেছনের সিটে গিয়ে বসলো। অভিক ঘাড় ঘুরিয়ে বলল

সুপারম্যান সামনে আসুন।

অনা চেঁচিয়ে বলল

আবি অভির কাছি যাও।

আবিদ ওর চুল টেনে ধরলো।

চুপ চুপ পঁচা মিয়ে। আবি ইখানে বুসবে।

সুজানা ছাড়িয়ে বলল

কি হচ্ছেটা কি? কথায় কথায় ঝগড়া কেন? আবিদ এটা কেমন কথা?

আবিদ ফুঁপিয়ে তাকালো অনার দিকে।

সুজানা বলল..

আবি যাও সামনে যাও। অভির কোলে গিয়ে বসো।

কথাটা বলেই সাথে সাথে জিভ কামড় দিল সুজানা। চোখবুঁজে বিড়বিড়িয়ে বলল

আল্লাহ এরা আমায় পাগল বানিয়ে ফেললো নাকি? কি বলে ফেললাম?

সুজানার প্রতিক্রিয়া কিংবা বিড়বিড়ানি স্পষ্ট দেখার জন্য মিররটা আগেই তার দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছিল খুব সন্তর্পণে।

সুজানার কথায় আবির রেগে গিয়ে বলল

আবি বুসবেনা। তুমি বুসো অভির কুলে।

সুজানা কথাটা শুনে লজ্জায় ওড়না টেনে দিল মুখের উপর। মাথাটা একদম ঝুঁকিয়ে নামিয়ে নিল। অনেক্ক্ষণ পর সটান হয়ে বসে চোখ যেই খুললো, একদম সরাসরি মিররে চোখ পড়তেই কান গরম হয়ে উঠলো তার।
এলোমেলো ভাবে হাতড়ে ব্যাগ খুঁজে নিয়ে বলল

আমি রিকশা করে যাব। গাড়ি করে যাব না।

মিরর থেকে চোখদুটো ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল অভিক।

চলবে….

আজ একটুখানি দিলাম পাঠক। কাল থেকে বড় করে দেব।

ভালো লাগলে শেয়ার কমেন্ট। 🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here