আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৫ Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
90

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৫
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

গাড়িটা পার্কিং লটে পার্ক করে এসে সুজানাকে দেখতে পেল না অভিক। অনা আর আবিদকে নিয়ে কোথায় চলে গেল?
তাদের খুঁজতে খুঁজতে একটি ছোটখাটো দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সে।
হ্যাংলা পাতলা একটা ছেলে কোথাথেকে যেন ছুটে এসে সালাম দিল।

আপনি কাউকে খুঁজছেন স্যার?

ছেলেটাকে দেখে অভিক মৃদু হাসলো। পিঠ চাপড়ে বলল…

লিমন। কি অবস্থা?

আমি এখানে পার্টটাইম চাকরি করি স্যার।

গুড। পড়াশোনা কেমন চলছে?

ভালো স্যার।

ওকে। এদিকে একটা মেয়েকে আসতে দেখেছ? কালো রঙের ড্রেস পড়েছে সাথে দুটো বাচ্চাও ছিল।

ছেলেটা সাথে সাথেই মাথা নাড়ালো।

হ্যা হ্যা দেখেছি। ওই ওইদিকে গিয়েছে। মাত্রই গেল।

ওকে। ভালো থেকো।

অভিক সে-ই দিকে এগিয়ে গেল। দোকানটা মাঝারি সাইজের। অনা আর আবিদ দোকানের জিনিস ধরে টানাটানি করছে। দুটো ছেলের তাদের পেছন পেছন ছুটছে। অভিক তাদের দেখে হাসলো। এই বিচ্ছু দুটোর এখানেও শান্তি নেই।
সুজানা দোকানদারের সাথে বেশ আন্তরিকতার সাথে কথা বলছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে হাসছে। অভিক দোকানটাতে চোখ বুলালো। সুই সুঁতো থেকে শুরু করে কাপড়চোপড়ের বিভিন্ন উপকরণ দোকানটিতে। অভিককে দেখে একজন যুবক এগিয়ে এল।

স্যার আপনার কিছু লাগবে?

না। আমি উনার সাথে এসেছি।

সুজানা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখতে পেয়ে ব্যস্ত গলায় বলল
একটু তাড়াতাড়ি প্যাকেট করেন আঙ্কেল।

দোকানদার প্রশ্ন ছুঁড়লো।

উনি কে? তোমার আত্মীয় নাকি?

সুজানা মিনমিন করে বলল..

আরেহ না। বাচ্চাগুলোর চাচা।

তারা বলতে বলতেই অভিক এসে দাঁড়ালো তার কিছুটা দূরে। বলল

এসব দিয়ে কি করবেন সুজানা?

সুজানা চমকে তাকালো। সুই সুঁতোগুলো দেখিয়ে বলল

এগুলো?

হুম।

মায়ের জন্য। মা সেলাই করে তো তাই।

ওহ।

কি কি সেলাই করে?

সুজানা বিড়বিড়িয়ে বলল

মুখ ও সেলাই করে।

সৌজন্যেতা রক্ষার্থে বলল

ওই যে জামাকাপড়। এই আর কি।

লেডিস অর জেন্টস?

লেডিস।

মাথা দুলিয়ে চলে গেল অভিক। কোলে করে অনাকে নিয়ে এল। অনেকটা উঁচুতে কালো পাথর মিশেল রঙের কিছু লেইস দেখিয়ে অনাকে বলল

ওগুলো নেবেন?

সুজানা বলল

ওগুলো দিয়ে কি হবে?

অভিক অনার গালে চুমু খেল। বলল

এগুলো আমার লিটেল মাদারের জন্য। আপনারও চায়?

সুজানা মাথা নামিয়ে দুলিয়ে বলল

নাহ।

অভিক লেইসগুলো কেনার পর বলল…

ওকে চলুন।

সুজানা বলল

কিন্তু আমি বাড়ি ফিরব।

অভিক ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালো। তারপর অনাকে বলল

মাদার কি খাব আমরা?
চিকেন বার্গার, এগ স্যান্ডউইচ, চিকেন স্যান্ডউইচ,চিকেন টোস্ট, চিকেন উইংস,স্প্রিং রোল??

অনা হাত দেখিয়ে বলল

সবগুলু খাবো।

অভিক হেসে বলল

কিন্তু আপনার টিচার পালাই পালাই করে কেন?

অনা সুজানার দিকে তাকালো। বলল

টিচার খাবো খাবো। তুমি খাবে? মোজা মোজা।

সুজানা ডান হাতে বাম হাতের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল

আমি রেস্টুরেন্টে বসে খেতে পারব না। আশপাশে প্রতিবেশী আছে।

অভিক ফুঁস করে শ্বাস ছাড়লো। দু ঠোঁটের ফাঁকে বাতাস ছেড়ে বলল

ওকে। ওদের নিয়ে গাড়িতে বসুন। আমি আসছি।

কিন্তু আমি বাড়ি ফিরব।

আমি আপনাকে নামিয়ে দেব।

সুজানা চুপ করে থাকলো। উফফ তাকে ছেড়ে দিলে কি হয়?

অভিক তাদের রেখে চলে গেল। কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে এল হাতে করে বেশ বড় সাইজের কয়েকটা প্যাকেট নিয়ে। সুজানা অনা আর আবিদকে সামলাতে ব্যস্ত। অভিক আসতেই বলল

কিছুক্ষণের মধ্যে আজান পড়বে। আমি আসি।

অভিক প্যাকেটটা দেখিয়ে বলল

এসব কার জন্য এনেছি? খেয়ে যান।

সুজানা আবার সময় দেখতেই অভিক বলল

আপনার মা জানেন আপনি শপিংমলে এসেছেন। সো দেরী হলে জেরা করবেন না।

সুজানা গাড়িতে গিয়ে চুপচাপ বসলো। অভিক তিনজনকে তিন প্যাকেট দিল। বলল

খেয়ে নিন।
সুজানা আমি এখুনি গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছি। আপনাকে আজানের আগেই বাড়িতে পৌঁছে দেব।

আবিদ বলল

সুজান বাড়ি যাব।

সুজানা কিছু বলতে যাবে তখনি অভিক বলল

টিচার যেদিন বলবে সেদিন যাবেন।

সুজানা লজ্জিত হলো। মিহিস্বরে বলল

ওরা যেতে পারে।

অভিক গাড়ির সিটবেল্ট পড়ে বলল..

ওদের সাথে ওদের চাচ্চুও আছে ভুলে যাবেন না।

সুজানা মাথা নামিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে চিকেন উইংসে এক কামড় দিল। কি যেন ভাবছে চিন্তিত হয়ে।

অভিক মিররে তার চিন্তিত চেহারা দেখে হাসলো মনে মনে।

বাড়ির কাছে পৌঁছুতেই সুজানা গাড়ি থেকে নেমে গেল অনা আর আবিদকে আদর করে দিয়ে। অভিককে বলল

ওরা আমার সাথে আসতে পারে।

ওরা আপনাকে জ্বালিয়ে মারবে সুজানা।

সুজানা মাথা নামিয়ে নিল। অনা আবিদকে হাত নেড়ে টা টা দিয়ে চলে যাওয়ার সময় আবিদ বলল

সুজান বাড়ি কুথায়?

সুজানা মিষ্টি হেসে বলল

ওই যে তৃতীয় তলা। ওখানে টিচার থাকে।

অনা বলল

টিচার টা টা। সি ইউ। বাই বাই।

সুজানাও হাত নাড়ালো। গাড়ি চলে যেতেই সুজানা হাঁফ ছাড়ল। উফফ ঘরে কিছু নেই। নিয়ে গেলে কি খাওয়াতো তাদের। কালকেই তো মাসের বাজার হবে। কি জ্বালা!

_______________

ঘরে যেতে না যেতেই সাজিয়া বেগম বলল

কিরে তুই গাড়িতে চড়ে এলি?

সুজানা ব্যস্ত গলায় বলল

আর বলো না মা। বিচ্ছু দুটো আসার জন্য এমন বায়না ধরেছে। শেষমেষ ওদের শপিংমলে নিয়ে আসতে হলো। ওদের ছোট চাচা আছে না? উনি সামাল দিয়েছেন কোনেমতে।

ওহহ। সব এনেছিস তো?

হ্যা। সায়েম কোথায়?

এখনো বাড়ি ফেরেনি। আজ ফিরুক। পিঠের উপর কয়েক ঘা দেব। কাল দোকানদার করিমের বউ কাপড় দিতে এসে জানালো তোর ভাইকে নাকি এলাকার ছেলেদের সাথে সিগারেট টানতে দেখেছে।

সুজানা চুল খোঁপা করতে করতে বলল

কি বলো? সাইফ ভাইকে বলোনাই?

পিটিয়ে সোজা করে দেবে বললে তাই বলিনি। পড়ার জন্য তো কম মাইর বকুনি খায় না। কিন্তু তাতে ওর হচ্ছে?

মা মেয়ের কথার ফাঁকে বারান্দার দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। সুজানাকে আটকে সাজিয়া বেগম নিজেই এগিয়ে গেল দরজার পাশ থেকে মোটা পাটিবেত নিয়ে। সায়েম ক্রিকেট ব্যাট হাতে নিয়ে দাঁড়ানো ছিল। সাজিয়া বেগম দরজা খোলার সাথে সাথে দু ঘা লাগিয়ে দেবেন খেয়াল করেনি সে। ছিটকে কয়েক পা পিছিয়ে যেতেই সাজিয়া বেগম বলল

আসবি না তুই বাড়িতে। বোনের পিছুপিছু বাড়ি ফেরা হচ্ছে? হ্যা? তোর ভাত নাই এই বাড়িতে।

সায়েম গোলগাল চোখ করে মায়ের পেছনে বোনের দিকে তাকালো। সুজানা নাক ফুলিয়ে বলল

ভাই তুই নাকি সিগারেট টানছিস?

সায়েম অবকান্বিত গলায় বলল

কে বললো?

সাজিয়া বেগম চেঁচিয়ে উঠে বললেন…

হারামির বাচ্চা তোর বাপ নাই তুই জানোস না? তুই এতিমের বাচ্চা এতিমের মতো চলবি। তুই রাস্তাঘাটে গুন্ডার মতো চলবি আর মানুষ সেটা আমর কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান করবে। আমি কারো খাই না কারো পড়ি? যে মানুষের কথা শুনবো? হ্যা? আমি এত কষ্ট কাদের জন্য করতেছি? কাদের মানুষ করার জন্য?

বন্ধুদের সাথে মজা করে একটা ধরিয়েছিলাম আম্মা। আর করব না।

না তুই বের হ। তুই নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি। সাইফ আসুক। তোর পিঠের চামড়া ছিলে নিতে বলব আমি।

সুজানা সাজেদা বেগমকে টেনে নিয়ে গেল। সায়েমকে ইশারায় বলল

যা না। নিচে গিয়ে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক। যাহ যাহ। বলেই চোখ টিপলো ভাইকে।

সায়েম দোতলা থেকে নামার সময় গুনগুন করে গান গেয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসা একটা মেয়েকে দেখলো। ডানপাশে চুল ফেরানো। গায়ে লাল রঙা ফ্রক। সায়েমকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। যেন ব্যঙ্গ করছে মায়ের মার খেয়েছে তাই। সায়েম চোখ রাঙিয়ে ব্যাড দেখিয়ে বলল

এক লাতি দিবো যাতে নিচে গিয়ে পড়োস।

রোজা আঙুল বাড়িয়ে বলল শাটআপ। তোমার মতো স্মোকারের সাথে কোনো কথা নাই। হুহ।

সায়েম দাঁতে দাঁত চেপে বলল

রোজার বাচ্চা বোঝা।

সায়েম ভাই!!

রোজার চিৎকারে রাহেলা দরজা খুলে উঁকি দিলেন। সায়েম দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে দেখে বললেন

কিরে তোরা আবারও ঝগড়া করছিস? হ্যা রে আজও বকুনি খেলি নাকি?

সায়েম উত্তর দিল না। পা নাচাতে নাচাতে নিচে নেমে দাঁড়িয়ে থাকলো। রোজা তিনতলার রেলিঙ ধরে উঁকি দিয়ে চিল্লিয়ে বলল

সায়েম ভাই কান ধরতে বললো আন্টি। এমনি দাঁড়িয়ে থাকলে হবেনা।

সায়েম হাতের মুঠো খুললো আর বন্ধ করলো। কাছে পেলে ঠাস ঠাস করে দিয়ে গাল লাল করে দেবে বেয়াদবকে।

সাজেদা বেগম একটু শান্ত হতেই সায়েমকে নিয়ে এল সুজানা । হাত মুখ ধুঁয়ে এসে পড়তে বসলো সায়েম । সুজানা চা করে এনে দিল। অভিকের দেয়া প্যাকেটের খাবারগুলো দিয়ে বলল

মায়ের রাগ ভাঙবে না আজ।

সায়েম বলল

তো কি করব আমি?

চুপচাপ পড়। তোর সামনে এইচএসসি ভাই। সারাক্ষণ খেলা খেলা করলে হবেনা।

আমি ক্রিকেটার হবো আপা। জানিস আজকের ম্যাচে..

উফফ পড়ে শুনবো। আগে খেয়ে নে। এগুলো আম্মাকে দিয়ে আসি।

এগুলো কে দিল?

ওই অনা আর আবিদ আছে না? ওদের চাচ্চু। রেস্টুরেন্টে খাব না বললাম তাই প্যাকেট করে দিল।

সুজানা চলে যাওয়ার সময় সায়েম ডেকে বলল

আপা আমার পরীক্ষার পরে তোকে টিউশনি করতে হবে না। আমি করব।

সুজানা হাসলো।

আগে ভার্সিটির এডমিশনের জন্য প্রস্তুতি নে। আমি রাতদিন পড়েছিলাম। আম্মা জানে।

সায়েম খেতে খেতে বলল

আচ্ছা রোজার বাচ্চা এখানে কেন এল আপা?

সুজানা থেমে গিয়ে বলল

কি রোজার বাচ্চা? ওকে আমি এগুলো খেতে ডেকেছি।

কেননননন?

আরেহ আস্তে। ও আমার আরেকটা বোন তো ভাই।

ও আমার বোন না।

তোর না আমার। ওকে তোর বউ বানাবো।

সায়েম চিল্লিয়ে উঠার আগেই কানে দু আঙুল ঢুকিয়ে রাখলো সুজানা।

______________

তোর মতই আমি একটা বন্ধু চাই
যার ইচ্ছে বানাবে স্বপ্নে রঙমহল
তোর মতই আমি একটা বন্ধু চাই
তুই অল্প হলেও আমার সঙ্গে চল
ওই তোর নামে, হ্যাঁ তোর নামে
দেখ তোর নামেই, এ সময় থামে

শহীদ মিনারের চত্বরে ঝড়াপাতা আর ধুলো ঝেড়ে পা টেনে বসেছে বন্ধুমহল। বুট বাদামের খোসা ছড়েছে অনেক জায়গায়। হালকা রোদ আর পিনপিনে বাতাসের রোমাঞ্চকর পরিবেশে বসেছে গানের পশরা। খোলা গলায় গানের আসরে মেতে উঠেছে বন্ধুরা। প্রায় তিনদিন পর ভার্সিটির হলে পা রেখেছে সুজানা। এসেই দেখলো আগের মতোই মেতে আছে বন্ধুরা। তাকে দেখে সাইডে সরলো সবাই।

আরেহ আরেহ আমরা ভাবলাম তোর আর মেহুর মেজবান খাইতে যামু।

যাহ মজা ছাড়। কেমন আছিস তোরা?

পুরোনো তারের গিটারটির উপর আঙুল চালিয়ে সুর তুললো নিখিল। বলল

আমার মন ভালা নাই।

সবাই একসাথে হেসে উঠলো। শান্তা বলল

তোরে আর মেহুরে এ দুদিন খুব মিস করেছি জানু।

খুব প্রেশারে ছিলাম। আমাদের অনেক নোট কিন্তু বাদ পড়েছে। নোটগুলো দিবি।

ক্লাসে দিবো।

সবাই কথা বলছিল এটা ওটা নিয়ে। তার ফাঁকে শান্তা দাঁড়িয়ে পড়লো। গলা খাঁকারি দিয়ে হাতের মুঠো মুখের সামনে দিয়ে বলল

গাইস আমার কথা শুনো সবাই।

সবাই তার দিকে তাকালো। শান্তা বলল

গাইস আগামী রোজ শুক্রবার আমাগো মেহুর বিয়া। শুক্রবারের পরের দিন তোমরা চইলা আইসো মিয়া।

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। মেহুলও হেসে উঠলো।
পেছন থেকে ধপাস করে কেউ একজন ব্যাগ দিয়ে মারলো তাকে। শান্তা টাল সামলাতে না পেরে সুজানার সামনে এসে মুখ থুবড়ে পড়লো।

রেগেমেগে তাকাতেই ছেলেটা ক্রুর হেসে বলল

তোর বিয়া হয় না ক্যান ভাই? তোর মতো অশান্তি থাকা আস্ত একটা যন্ত্রণা।

শান্তা দাঁতে দাঁত চেপে বলল…

আহিরের বাচ্চা। তোর কত্ত বড় সাহস তুই আমাকে?

আহির গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বলল

তোর কাকের গলা তুই শুনেছিস কখনো? কাউ কাউ করে মানুষ হাসাচ্ছোস। তোরে ভাষণ দিতে বলছে কে?

শান্তা রেগেমেগে তাকাতেই সুজানা হাসি থামিয়ে বলল

প্লিজ তোরা আবার ঝগড়ায় লেগে পড়িস না। মেহুল কিছু বল।

শান্তা গাল ফুলিয়ে ম্লান মুখে সুজানার পেছনে গিয়ে বসে থাকলো। বিড়বিড়িয়ে বলল

ওরে কিছু করলে তোরা তো আমাকে কথা শোনাতি এখন। ওরে কিছু বলিস না। তুই আহিরের বাচ্চারে আমি দেখে নিমু।

আহির হাসতেই সুজানা বলল

তোরা থাক আমি আর মেহুল উঠি তাহলে। সারাক্ষণ ঝগড়া।

নিখিল গিটারে টুংটাং সুর তুলে গাইলো….

রাগ করেছে তনু মনা
চোখ করেছে লাল,
ঠোঁট ফুলেছে, চোখ ফুলেছে
ফুলছে দুটো গাল।

আহির হাসি চেপে শান্তার দিকে তাকালো। শান্তা মুখ ফিরিয়ে নিল অন্য দিকে। নিখিল বলল..

রাগ কোরনা মিষ্টি তনু
রাগ কোরনা আর,
মানছি আমি ভুলটা আমার
মানছি আমি হার।

ভুল হয়েছে, ঘাট হয়েছে
ধরছি আমি কান,
হাসো এবার মিষ্টি করে
ভাঙ্গো এবার মান

মেহুল শান্তার দিকে তাকিয়ে বলল

মান ভেঙেছে?

আহির বলল

আরেকটা দিলে ঠিক হয়ে যাবে।

শান্তা তেড়ে গিয়ে ব্যাগ দিয়ে ধপাস ধপাস মারা শুরু করলো। মারতে মারতে বলল…

আমার কি বলশক্তি নেই? বেডাগিরি দেখাস?

সুজানা আর মেহুল ছাড়িয়ে নিতে পারলো না। শেষমেশ আহির নিজেই ব্যাগটা কেড়ে নিল। শান্তার হাত মোচড় দিয়ে বলল

উইমেন…..

শান্তা কাতরস্বরে বলল

আহির হাত ছাড়।

পেছনে থেকে কেউ একজন বলে উঠলো।

এই স্যার স্যার। ঝগড়া বন্ধ কর।

আহির হাত ছেড়ে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়ালো। সুজানা আর মেহুলও ব্যাগ তুলে নিল। শান্তা বলল

টাকলু নাকি রে?

পাশ থেকে কে যেন প্রত্যুত্তর করলো।

আরেহ না। নতুন স্যার এসছেন গতকাল। উনিই।

শান্তা ছুটে ব্যাগ কাঁধে তুলতে তুলতে বলল

শুনছি। কিন্তু দেখিনাই কাল। আজ দেখমু। জানু মেহু চল।

সুজানা বলল…

আমাদের ডিপার্টমেন্টে?

জানিনা ভাই।

সুজানা ঠোঁট গোল করে বলল…

ওহহ।

গাড়িটা পার্কিং সাইডে গিয়ে থামতেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসা পুরুষ প্রতিভিম্বটি চেনা চেনা মনে হলো সুজানার। আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখলো নতুন স্যারকে । পড়নে ডার্ক ব্লু রঙা ইন করা শার্ট। হাতের মুঠোয় কিছু সাদা রঙের পেপার মোড়ানো। ব্যস্ত পায়ে হেঁটে পাশ থেকে আগত স্টুডেন্টদের সালামের উত্তর দিতে দিতে এগিয়ে গেলেন তিনি ডিপার্টমেন্টের দিকে।

সুজানা শুকনো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো

উনার নামটা…..

পাশের মেয়েটা বলল..

কালকে টাকলু স্যারের মুখে উনাকে ফারদিন ডাকতে
শুনেছি।

শান্তা আর মেহুল ড্যাবড্যাব করে সুজানার দিকে তাকালো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here