আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_১৭ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
82

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১৭
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

অভিক উচ্চস্বরে হো হো করে হেসে উঠলো ঘর কাঁপিয়ে। বলল

এটা কমেন্ট ছিল সুজানা।

সুজানা লজ্জিত মুখ ফিরিয়ে নিল। দরজা ঠেলে আনিকা ভেতরে এল। অভিক আর সুজানা দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আনিকা বলল

সুজানা যাওয়ার সময় ছোটমা আপনাকে দেখা করে যেতে বলেছে। আপনার মা তো অনেক ভালো টেইলারিং জানে। ফুল হাতা ব্লাউজ সেলাই করাতে দেবে নাকি। আমারও কিছু থ্রিপিছ আছে। ওগুলোও নিয়ে যাবেন। কোনো সমস্যা হবে?

সুজানা মাথা দুলিয়ে বলল

না সমস্যা হবে কেন? নিয়ে যাব।

অভিককে মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনতে দেখে আনিকা বলল

হা করে কি দেখছিস? তোকে তোর ভাই ডাকছে।

কেন? কখন ডেকেছে?

আমি কি জানি? বলল অভিকে ডেকে দাও।

অভিক চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। যেতে যেতে বলল

সুজানা যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে যাবেন।

ও চলে যেতেই আনিকা চেয়ারটা টেনে বসে বলল

ওরা মা ছেলে পেয়েছে আপনাকে।

সুজানা হাসলো। অনা আর আবিদ একবার আনিকা আরেকবার সুজানার দিকে তাকালো। বলল

আম্মু সুজান অভি বুন্ধু বুন্ধু?

আনিকা ফিক করে হেসে উঠলো। বলল

অভি সুজানের টিচার।

দুজনেই ঠোঁট গোল চোখ গোলগোল করে বলল

ওহহহহহহ টিচাররর?

হুমম।

অনা বলল

অভি সুজানকি মারে?

সুজানা হেসে উঠলো। আনিকা গাল টেনে দিয়ে বলল

সুজান দুষ্টুমি করেনা তাই মারেনা।

সুজানা বলল

কেন আমি কি আপনাদেরকে মারি?

আবিদ পেন্সিল থামিয়ে বলল

সুজান বোকা দাও।

আমি বকা দিই?

হু সুজান বোকা দিছে।

আনিকা বলল

বাবারে বাবা আমি যাই। আমি থাকলে একটা পড়াও পড়বে না।

চলে যেতে গিয়ে আবারও একটু থামলো আনিকা। বলল

সুজানা আপনাকে থ্যাংকস। খুব ঠান্ডা মাথার একটা টিউটর খুঁজছিলাম আপনার মতো। অভি সত্যি মানুষ চেনে।

সুজানা হাসলো। আনিকা চলে গেল। আবিদ বলল

সুজান টু নাই।

সুজানা তার খাতা দেখলো। ঘোড়ার ডিমের মতো লেখাগুলো দেখে হেসে বলল

টু লিখলেই তো থাকবে। লিখুন।

আচচা নিখি ।

সুজানা গালে হাত দিয়ে দু’জনের দিকে তাকিয়ে ভাবলো তার কাছেও দুটো প্রশ্নের উত্তর নেই। আম্মা সেলাই কাজ করে উনাদের কে বললো? সে তো বলেনি। তাহলে সাইফ ভাইয়ের সাথে কি স্যারের ডিল হয়েছিল? বাপরে বাপ তাকে আগে থেকে চিনে এই লোক আর সে শাড়ি পড়ে সেগুনবাগিচায় ঢং করতে গিয়েছিল। ছিঃ ছিঃ।

পড়ানো শেষে নীচে গেল সে। আজ দু ছেলের সাথে আজাদ সাহেব আর আজীম সাহেব দুই ভাইয়ের দেখা পেল সুজানা। দু ছেলের সাথে জমিয়ে চায়ের আড্ডা দিচ্ছে। সাথে উনাদের মা জননী তো আছেনই। সুজানাকে দেখে উনাদের খোশগল্পে ভাটা পড়লো। অনা আর আবিদ সুজানার পেছন থেকে দৌড়ে এসে উনাদের কোলে গিয়ে বসলেন। সুজানাকে বলল

সুজান সুজান আসো আসো চা খিতে আসো।

বৃদ্ধা মমতাজ বেগম শুরুতেই হাসলেন সুজানার সাথে।

সুজানাও প্রত্যুত্তরে হাসলো।

এসো এসো বোন। বসো।

না দাদু। আন্টি আমাকে দেখা করতে বলেছেন তাই।

অভিক মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে।

সালমা বেগম একটা চায়ের কাপ নিয়ে এলেন। আজাদ সাহেবের দিকে কাপ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন

দাদা আপনার চিনি ছাড়া।

আজাদ সাহেব কাপটা নিতেই উনি শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে সুজানার দিকে এগিয়ে এলেন। বললেন

চলো আমার ঘরে। তোমার মাকে বলবে ভালো করে সেলাই করতে ঠিক আছে? তোমার মা তো ভালো কেকও বানাতে জানে। তোমার মাকে বলো কেকের দোকান দিতে।

সুজানা ভারী অবাক হলো। সালমা বেগমের পেছনে যেতে যেতে বলল

আম্মা কেক মাঝেমধ্যে বানায়। ওটা তো আপনিও বানাতে পারেন।

আমার কেক খেয়ে অত প্রশংসা কেউ করবেনা।

কেউ আম্মার প্রশংসা করেছে?

শুনেছি বলেই তো বলছি।

সুজানা নিজেও বুঝে উঠতে পারছেনা কি হচ্ছে তার সাথে। এসব উনাদের কে বলেছে? প্রশ্নটা সরাসরি করাটা কি বেয়াদবি হবে? যে মহিলা বাবা! থাক আবিদের আম্মুর কাছ থেকে জেনে নেবে সে।

সালমা বেগমের পেছন পেছন উনার ঘরে গেল সুজানা। কি গোছানো রুমটা! ফ্লোরটা ঝকঝকে তকতকে। বিছানার চাদরটা একটুও কুঁচকানো নেই। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটাও পরিষ্কার। পাপশটাও অমলিন। আম্মা তাকে বলেছে ঘরের এই জিনিসগুলো যাদের পরিষ্কার তাকে তারা খুবই শুচিসুদ্ধ। এই মহিলাও তেমন।

সুজানাকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সালমা বেগম বললেন

কি হলো আসো।

সুজানা জুতো খুলে রুমে পা রাখলো। সালমা বেগম আলমিরা থেকে দুটো ব্যাগ বের করলেন। বিছানার উপর রেখে বললেন

বসো। সব বলে বলে করাতে হয় কেন?

সুজানা মাথা নামিয়ে নিল। ওকে এক নজর দেখে শপিং ব্যাগ থেকে ব্লাউজের কাপড় গুলো বের করলেন সালমা বেগম। বললেন

এখানে চারটা ব্লাউজের কাপড় আছে। একটা আস্তর দিয়ে আর তিনটা সুতির। দুটো ফুল হাতা আর দুটো ত্রি কোয়াটার। বুঝেছ? সেলাই করা একটা দিলাম ওটা থেকে মাফ নিতে বলবে। বেশি লুজ না বেশি টাইট না। সেম এই মাফের।

সুজানা মাথা দুলালো। উনি বললেন

তুমিও তোমার মা থেকে শিখে নিলে তো পারো।

আমি পারি আন্টি। পড়াশোনা আর এদিকওদিক দৌড়াদৌড়ির জন্য হয়ে উঠেনা।

বাহ তাহলে ভালোই। কেকও বানাতে পারো?

আম্মার মতো করে ডেকোরেশন করতে পারিনা। বেকিং করতে পারি।

আচ্ছা। অভির বিয়ের কেকটা তোমার মাকে দিয়ে করাবো আমি।

সুজানা মাথা নাড়ালো।

আচ্ছা।

আনিকা চলে এল কয়েকটা ব্যাগ নিয়ে। তার সাথে অনা আবিদও এসেছে। আনিকা ব্যাগগুলো বিছানায় রেখে বলল

ওমা এতগুলো ব্যাগ সুজানা নিয়ে যাবে কি করে?

কেন ও তো গাড়ি করে যাবে। এই মেয়ে পারবেনা নিয়ে যেতে?

পারব।

আনিকা ব্যাগটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল

তিনটা লিনেন ত্রিপিছ আছে এখানে। এগুলো বাসায় পড়ব। মাপেরটাও দিয়েছি। ওটার মতো করে সেলাই করলে হয়ে যাবে। আর সেলোয়ারের মুহুরী ৬ ইঞ্চি। ব্যস।

আচ্ছা।

আর শোনেন অভি কিছুদিন আগে কতগুলো লেইস কিনে নিয়ে এল। এগুলো আপনি নিয়ে যান আপনার মায়ের কাজে লাগবে।

সুজানা সেগুলো দেখে বলল

স্যার এগুলো অনার জন্য কিনেছে।

তো? এগুলো কি খেলনার জিনিস যে অনা এগুলো নিয়ে খেলবে।

সালমা বেগম কপাল চাপড়ে বললেন

দেখেছ, কিছুদিন পর নিজেই বাচ্চার বাপ হবে আমার এই ছেলেটার কান্ডজ্ঞান কখন হবে কে আল্লাহ মালুম। এগুলো খেলনার জিনিস!

সুজানা বলল

না, এগুলো তো কাপড়ে লাগানোর জন্য কিনে…

তুমি তোমার স্যারের হয়ে কথা বলোনা মেয়ে। ও আমার ছেলে বুঝেছ? ওকে আমি হাড়েহাড়ে চিনি। আমার কাছ থেকে দূরে ছিল তো। তাই এরকম হয়েছে। বাপে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে সুশিক্ষিত করছে। আর এদিকে মায়ের কাছ থেকে দূরে থেকে আমার ছেলেটা হাবাগোবা হয়ে ফিরে এসেছে।

সুজানার হাসি পেলেও সে হাসলো না। তবে আনিকা হেসে উঠে বলল

ছোটমা তোমার ছেলেকে দেখতে অমন লাগে। ও আসলে তেমনটা নয়।

কি বলতে চাইছো আমি ওকে বুঝিনা?

না না ছোটমা সেটা বলতে চাইনি। অভি যথেষ্ট চালাক কেন হাবাগোবা বলো আমি সেটাই বুঝিনা। তুমি মা তো মায়ের কাছে সব ছেলেমেয়েই হাবাগোবা বোকা এটা ওটা। আম্মাও তো আমাকে বলতো আমি কাজ পারিনা, করিনা, কথা শুনিনা। কিন্তু তুমি বলো আমি কি কাজ পারিনা? করিনা? কথা শুনিনা?

শুনো শুনো। তো? তোমার মা ভুল বলে আমিও ভুল বলব নাকি?

আনিকা এবার হতাশ হলো। বলল

আচ্ছা আচ্ছা তুমি ঠিক।

হ্যা। ভুল হব কেন? নইলে তোমার কাকার মতো বজ্জাত লোকের সাথে সংসার করতে পেরেছি?

হুমম বুঝতে পেরেছি।

আর শোনো আমার অভি অতটা হাবাগোবা নয়, আমি ওগুলো এমনিই বলি। ওগুলো শুনলে আমার ছেলে কষ্ট পাবে। ভাববে মা আমাকে এসব ভাবে!

বলেই উনি চলে গেলেন। উনি যেতেই সুজানা আর আনিকা হাঁফ ছাড়লো।

ছোটমার কথা বলবেন না সুজানা। সারাক্ষণ এভাবেই বলে। কিন্তু কাকাই এই পাগল মহিলাটাকে কতটা চোখে হারায় জানেন? ঘরও নাকি ছেড়েছিল। উনাদের বিয়ের আগে নাকি কি যুদ্ধ বাড়িতে।

কি বলেন?

হুমম। লাভ ম্যারেজ।

বলেই ফিক করে হাসলো আনিকা।

সুজানা লজ্জা পেয়ে গেল।

এমা আপনি লজ্জা পাচ্ছেন, এই যা আর বলব না। আপনি এখনো আমার সাথে ফ্রি হতে পারেননি।

তেমনটা না।

আচ্ছা বাদ। লেইসগুলো নিয়ে যান। আন্টিকে দিয়ে দেবেন। দেখবেন উনি কাজে লাগিয়ে নেবেন।

সুজানা মাথা নাড়িয়ে বলল

আচ্ছা উঠি। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।

হ্যা।

________________

রাত দশটার ঘরে ঘড়ির কাঁটা। ভেতর রুম থেকে হৈচৈ আসতেই সাজিয়া বেগম কাপড় কাটা বাদ রেখে সেদিকে গেলেন। সুজানা রোজা আর সায়েম লুডু খেলছে। সুজানাকেও বাচ্চাদের মতো খেলতে দেখে সাজিয়া বেগম হাসলেন। সুজানা দরজার কাছাকাছি মাকে দাঁড়াতে দেখে বলল

কিছু বলবে আম্মা?

উনি মাথা নাড়ালেন দু’পাশে।

সুজানা হাসলো। বলল

আজ বকোনা। আর সাইফ ভাইকে বলোনা। শুধু আজকে খেলছি। নইলে ওদের পিটাবে।

ঠিক আছে। রুজু আজকে তোর আপার সাথে খেয়ে যাস। চিংড়ি রেঁধেছি।

সত্যি! উফ ভাইয়া আর মায়ের জন্য বাসায় চিংড়ি ও আনেনা আব্বা।

সায়েম বলল

তোর লালা পড়া শুরু হয়ে গেছে না? রাক্ষসী।

রোজা গাল ফুলিয়ে তাকালো। সুজানা বলল

এই চুপ। তোদের সারাক্ষণ ঝগড়া!

সাজিয়া বেগম বললেন

ওর সাথে ঝামেলা না করতে কতবার বারণ করেছি বাবু?

সায়েম মাথা নামিয়ে খেলায় মনোযোগ দিল।

খেলা শেষ হলে এদিক আসিস সুজু।

ওকে আম্মা। যাচ্ছি এক্ষুণি।

খেলা শেষ হতেই সুজানা মায়ের কাছে গেল। উনি কাপড় কাটছেন। সুজানা কুঁচকে যাওয়া কাপড়টা মেলে দিয়ে বলল

যার ব্লাউজ এনেছি উনি কি বললেন জানো আম্মা? বলেছেন তোমাকে কেকের দোকান দিতে।

সাজিয়া বেগম হাসলেন। সুজানা বলল

আচ্ছা আরেকটা কথা আম্মা। উনারা কি করে তোমার সম্বন্ধে এতকিছু জানেন? উফফ আমি এত কথা ভুলে যাই কেমনে। ওই বাড়ি থেকে জপে জপে আসছিলাম এই প্রশ্নটা। কেমনে চেনে আম্মা?

তোর খাতিরে চেনে।

আমার খাতিরে? কিভাবে? আমি তো বলিনি কিছু।

কেন বলিসনি। খারাপ লাগে?

মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সুজানা।

কিসব বলো আম্মা। তুমি আমার চোখে সেরার সেরা। আমি তো গর্ব করি তোমাকে নিয়ে।

উনি হাসলেন মেয়ের কথায়। হাত বুলিয়ে চুলে চুমু খেলেন। বললেন

হয়েছে।

না বলো কেমনে চেনে।

সময় হলে বলব।

কেন এমন করছ আম্মা। বলোনা বলোনা।

সুজানা অধৈর্য মানুষ আমার পছন্দ না।

এবার মাকে ছেড়ে দিল সে। পাণ্ডুর মুখটা দেখে মায়ের মন ব্যাথিত হলো বোধহয়। তাই বললেন

তুই যাদের পড়াস, ওদের মামার বাড়ি থেকে তোর জন্য সম্বন্ধ এসেছে।

সুজানা রুষ্ট ক্ষিপ্ত কান্নামুখর চোখে মায়ের দিকে চাইলো।

কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

সম্বন্ধ এল আর হ্যা বলে দিলে? ভালো। খুব ভালো। কাল থেকে পড়াশোনা চাকরি টিউশনি সব বাদ। শুধু বিয়ের পিঁড়িতে বসব আমি।

মায়ের কথা না শুনে হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করলো সুজানা।

চলবে…

রেগুলার হওয়ার চেষ্টায় আছি
ছোট হলেও রেগুলার পাবেন।
পরে রিচেক করব পাঠক।
ভালোবাসা ❤️❤️❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here