#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_২০
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী
হাতটা ঝেড়ে ঝেড়ে কিছুদূর এগিয়ে গেল সুজানা। হাতের তালু ছিঁড়ে গিয়েছে। জ্বালা করছে। মেহুল আর শান্তা হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে এল। বলল
আহির আর জায়িনের কান্ড দেখেছিস? ফাজিলের দল। তোর হাতে আবার কি হলো?
সুজানা হাতের তালু মেলতেই ওরা দু’জন খানিকটা বিস্ময় নিয়ে তাকালো।
এমা কি করে হলো?
পড়ে গিয়েছিলাম। তাও স্যারের সামনে। কত লজ্জায় পড়েছিলাম ভাবতে পারছিস? কোনো দরকার ছিল আমার পেছনে দৌড়ানোর?
শান্তা কপালে হাত দিয়ে বলল
আরেহ হ্যা আমিও দেখলাম স্যারকে। নাহিদ ভাইয়ের বন্ধু।
সুজানা হাতের ফুঁ দিতে দিতে ভাবলো তাই তো। অনা আর আবিদের বার্থডে’র দিন নাহিদ ভাইকে দেখেছিল না। বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। ওই বাড়ি থেকে কেউ কি আসেনি তাহলে? আসার কথা। একা একা বিয়ে খেতে আসার মানুষ স্যার নন। যদি ওনার মা আসেন তাহলে তো সুজানা শেষ। এত ভয় লাগে ওই মহিলাকে।
সুজানা মেহুল আর শান্তার সাথে ঘরের দিকে চলে গেল। হাতটা আসলেই জ্বালা করছে। কিছুক্ষণ পর নিখিল এল। বলল, কি রে তোরা এখানে বসে আছিস কেন? বসে বসে আঙুল চোষার জন্য এখানে এনেছি? আয়।
মেহুল বলল
সুজুর হাত নাকি ছিঁলে গেছে।
কি বলিস? আরেহ কখন হলো এসব? বেশি লেগেছে?
সুজানা বলল
তেমন কিছু না। মলম লাগিয়ে নেব আন্টির কাছ থেকে। তুই তোর কাজে যাহ।
না না আমার সাথে আয়। আয় তো। স্যার এসেছে দেখেছিস। দেখা হয়েছে?
শান্তা বলল,
সামনাসামনি আমাদের সাথে দেখা হয়নি। সুজুর সাথে হয়েছে।
ওহ আচ্ছা এখন আয় আমার সাথে।
ওরা নিখিলের জোরাজুরিতে উঠে পড়লো। নিখিল বলল
তোদের একটা জায়গায় নিয়ে যাব। দাঁড়া তার আগে মায়ের কাছ থেকে মলম নেই।
তারা নীচে যেতে যেতে নিখিল তার ভাইকে দেখামাত্র ডাক দিল। বলল
ভাই ওরা এখানে । রুমে গিয়ে বসেছিল। নিয়ে এলাম।
নাহিদের সাথে সাথে ওর বন্ধু আর সাথে থাকা মা ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো। অভিককে কিছুটা কাছাকাছি ফোনে কথা বলতে দেখে সুজানা শান্তার পেছনে, আর সুজানার পেছনে মেহুল দাঁড়ালো। নাহিদ তাদের দেখে হেসে বলল
এই যে তোমাদেরকেই তো খুঁজছি। কেমন আছ আপুরা ?
শান্তা মিষ্টি হেসে বলল
ভালো আছি ভাইয়া । আমরাও বরকে দেখার অপেক্ষায় ছিলাম।
সুজানা আর মেহুলও কথা বললো ছোট্ট করে। রাহাত হেসে বলল
তোর বান্ধবীরা তো লজ্জা পাচ্ছে নিখিল।
নিখিল মাথার পেছনে হাত বুলালো। বলল
এদের লজ্জা শরম বেশি।
নাজমা বেগম বলল
লজ্জা পাবেনা এখানে ওদের স্যার আছে তাই। আর ওর মিনিমাম লজ্জা শরম আছে? অভি তোমাকে বলছি একে কয়েকটা পিটুনি দিও। আমার কথা একদম শুনতে চায় না।
অভিক পকেটে ফোন পুরে বলল
কাকে আন্টি?
এইতো নিখিলের কথা বলছি।
অভিক হাসলো। বলল
কেন ও তো ভালো স্টুডেন্ট। পেছনের গুলো ফাঁকিবাজ।
শান্তা মেহুল আর সুজানা লজ্জায়। জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো ।
নিখিল গর্ব করে হাসলো। বলল
আমি জানতামই না ভাইয়ের বন্ধু আমাদের স্যার। বলেনি কখনো। আমি তো প্রথমে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি।
নাহিদ তার মাথায় চাপড় দিয়ে বলল
তুই আমার সাথে বসে দুটো কথা কবে বলেছিস মনে আছে? তাছাড়া অভির সাথে আমার আজকের পরিচয় না। বহুদিনের বন্ধুত্ব। এই ছয় বছর পর এই বাড়িতে দ্বিতীয় বার এল।
নিখিল আবারও মাথার পেছনে হাত বুলালো। বলল
ভালোই হলো। সারপ্রাইজ তো পেলাম। না? আচ্ছা আমরা এখন এক জায়গায় যাব। আম্মা আগে মলমটা দাও তো। সুজুর নাকি হাত ছিঁলে গিয়েছে।
নাজমা বেগম বলে উঠলেন
হাত ছিঁলে গেল কিভাবে? এটা কোনো কথা?
নাহিদ বলল
মলম লাগিয়ে নাও সুজানা। কিভাবে ব্যাথা পেলে?
সুজানা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলল
তেমন কিছু না।
অভিক এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। পেছন থেকে সাফিন অভিককে ডাক দিল।
ব্রো ওরা এসে গেছে। জলদি আয়।
অভিক দ্রুতপায়ে সেদিকে চলে গেল। নাহিদ মাকে বলল
আন্টিকে নিয়ে এসো মা।
নাজমা বেগম ওদিকে পা বাড়ালেন। সুজানা বলল
স্যারের মা এল নাকি?
নিখিল মাথা দুলালো। বলল
হুমম।
মেহুল বলল
বাবারে আমি আর নেই। আমাকে দেখলে চিনে ফেলবেন উনি।
নিখিল সন্দিহান হয়ে তাকাতেই মেহুল আমতাআমতা করে বলল
কোথায় নিয়ে যাবি বলছিলি না? চল চল।
নিখিল বলল
আয়।
নিখিলের পেছন পেছন যেতেই সুজানার পা থেমে গেল ছোট্ট বাচ্চাদের ডাকে।
সুজান সুজান আমরা ইদিকে।
সুজানা থমকে গেল। মেহুল বলল
ওরেবাবা আমি আর নেই। নিখিল চল। সুজু থাকুক।
শান্তাকে টেনে নিয়ে চলে গেল মেহুল। সুজানা অনা আর আবিদের দিকে এগিয়ে গেল। বলল
বিয়েতে এসেছেন? বাবাহ কি সুন্দর লাগছে।
অনা হেসে বলল
সুজান কি সুন্দুল লাচচে।
থ্যাংকিউ সোনামণি। আর কে কে এসেছে?
ওরা সুজানার আঙুল ধরে টেনে নিয়ে গেল। অভিককে দেখে ওদিকে আর যেতে চাইলোনা সুজানা। সালমা বেগমকে গাড়ি থেকে হাত ধরে নামাচ্ছে অভিক। সালমা বেগম এদিকওদিক তাকিয়ে নাহিদের সাথে হেসেখেলে কথা বলে কুশলাদি বিনিময় করলেন নাজমা বেগমের সাথে। সুজানা সরে পড়ার আগেই সালমা বেগমের চোখ পড়লো তার দিকে। আর সরতে পারলো না সুজানা। দাঁড়িয়ে রইলো অনা আর আবিদের সাথে। সালমা বেগম তাকে আগাগোড়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে চোখ সরিয়ে নিলেন।
সুজানা আর কাউকে দেখলো না। তারমানে আর কেউ আসেনি।
দাদু দাদু দিখো সুজান ইখানে।
সবাই ফিরে তাকালো এবার। অনা আর আবিদ মুখ তুলে সুজানার মুখ দেখার চেষ্টা করলো। সুজানা হেসে ফেলল তাদের কান্ড দেখে। সালমা বেগম ধীরেধীরে হেঁটে এলেন। সবুজ রঙা শাড়িতে উনাকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। নাজমা বেগমের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে এগিয়ে এলেন তিনি। সুজানার সামনে এসে দাঁড়ালেন । বললেন
বিয়েতে আসবে এজন্যই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলে আজ?
জ্বি। আমার বন্ধুরা এসে বসেছিল তো।
ভালোই। আমি ভেবেছিলাম তুমি কিছুই জানোনা। এখন দেখছি সুন্দর করে শাড়িও পড়তে জানো।
সুজানা মৃদু হাসার চেষ্টা করে মাথা নামিয়ে নিল। নাজমা বেগম বললেন
ওহ সুজানাকে চেনেন বুঝি।
হ্যা নাতি নাতনি দুটোকে পড়ায়।
ওহ আচ্ছা আচ্ছা খুব ভালো।
উনারা চলে যেতেই গাড়ি থেকে অনা আর আবিদের কাপড়চোপড়ের ব্যাগ, মিষ্টি নাশতার কার্টুন গুলো নিয়ে যাওয়ার সময় অভিক সুজানার খানিকটা পেছনে থেমে গিয়ে বলল
আপনি কিছুই জানেনা নাকি? মাকে বলব আমি বিয়ে ভাঙতে জানেন।
সুজানা আহত চোখে তাকালো।
অভিক হাসলো। বলল
উহু বলব না। আপনার হাতে না জানি কি হয়েছে। দ্রুত ওই ঘরে আসুন।
কোন ঘর?
যেখানে মা আর বেবিরা আছে।
কেন?
বলেছি তাই আসবেন।
কিন্তু।
আপনার বান্ধবী মেহুল এসেছে না?
সুজানা শাড়ির আঁচলের কোণা আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে জবাব দিল।
হুমম ।
তাহলে উনাকে পাঠিয়ে দিন।
সুজানা চমকে উঠলো। অভিক ততক্ষণে চলে গিয়েছে। হুমম মেহুকে পাঠাবে কেন? পাঠাবে না।
______________
বন্ধুদের আর দেখা পেল না সুজানা। কোথায় চলে গেল তা ভাবতে ইতোমধ্যে প্রকান্ড উঠোনটা আর ব্যাকইয়ার্ড ঘুরে নিল সে। কারো দেখা নেই।ফাজিলের দলের সাথে কোথাও গেলে এই সমস্যা। না বলে না কয়ে কোথায় চলে যায়। সায়েম তো পুরাই বাদশা। কলেজের বন্ধুটন্ধু পেয়ে যাওয়ায় একেবারে রাজা হয়ে গেছে। বোনের কথা মনেই নেই। পেলে জোরে আজ কানটা মলে দেবে।
পায়চারি করার সময় নিখিলের ছোট ফুপীর মেয়েটা এসে বলল
আপু তোমাকে মেঝ মামি মানে নিখিল ভাইয়ার আম্মু ডাকছে। এখনি যেতে বলছে।
কোন ঘরটা?
মামির ঘরে গেলেই হবে।
সুজানা মাথা নাড়ালো। গুটিগুটি পায়ে সেদিকে হেঁটে গেল। ওই ঘরে যদি স্যারের মা থাকেন। সুজানার গলা শুকোতে লাগলো। এক পা এক পা ফেলে ওই ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে নাজমা বেগমের সাথে দেখা হলো। উনার হাতে মলমের কৌটো। সুজানাকে টেনে ঘরে ভেতর নিয়ে গিয়ে বলল
মলম না লাগিয়ে ঘুরছ কেন মেয়ে? বেড়াতে এসে হাত ছিঁড়ছ এসব কোনো কথা? তোমার মা কি বলবে?এই ঘরে বসে মলমটা লাগিয়ে নাও। লাগিয়ে নিতে পারবে তো?
সুজানা মাথা দুলালো। ঘরের ভেতরে অনেক মানুষ। নীচে ফ্লোরে অনেকে বসেছে। পালঙ্কে সালমা বেগম, রাহান আর সাফিনের মা। আরও অনেক মুরব্বি একসাথে বসে গল্পগুজব করছে। সুজানাকে দেখে সালমা বেগম ডাক দিলেন। বললেন
কি হয়েছে?
কোথায়? কিছু হয়নি আন্টি।
না তোমার হাতে কি হয়েছে বললো না?
সামান্য ছিঁলে গিয়েছে ।
ওহহ। সাবধানে চলতে পারো না? এতবড় মেয়ে যদি পড়ে গিয়ে হাত পা ছিঁড়ে লোকে কি বলবে? আজব মেয়েরে বাবা!
রাহাতের মা জানতে চাইলো।
মেয়েটা কে আপা?
ওই, বড় বউয়ের মামুর ছেলের সাথে সম্বন্ধ চলছে। ওদের পড়ায় এই খাতিরে চিনি। নাম সুজানা।
ওহ আচ্ছা। আমি ভাবলাম আপনার কেউ হবে?
সেটা কেন মনে হলো?
আপনি বকছেন তাই মনে হলো। মেয়েও তো চুপচাপ আছে।
আমি ভুলত্রুটি দেখলে সবাইকে বকি । কাউকে বাদ রাখিনা। আর এই মেয়ে তো পুরো ভুলে ভরা। হাঁটতে বসতে ভুল করে।
বিয়েশাদি হলে ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ের আগে সব মেয়েরাই ওরকম থাকে।
সুজানা মলমের কৌটোটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েই রইলো।
হুহ, কোথাকার বিয়ে টিয়ে! বললেই হলো নাকি।
তুমি হাতে মলমের কৌটায় নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছ? আজব ব্যাপার! দেখি কৌটোটা দাও তো দেখি।
সুজানা কৌটো দিতেই সালমা বেগম কৌটো খুলে মলম নিয়ে বলল
এদিকে এসে বসো। হা করো কি দেখছ? এসো।
সুজানা উনার পাশে গিয়ে বসে হাতের তালু মেললো। চামড়া ছিঁড়ে গিয়েছে। এতে মলম লাগালে আরও জ্বলবে কিন্তু পরিস্থিতি ওর হাতে নেই। হাতটা সালমা বেগমের হাতে। উনি আলতোভাবে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন
আহা দেখো তো কতখানি ছিঁড়ছে। মাংস দেখা যায়। কেমন মেয়ে তুমি? তোমার শ্বাশুড়িকে বদনাম শুনিয়ে তাহলে ভুল কিছু করিনি।
সুজানা চোখ তুলে উনার দিকে তাকালো। উনিও তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো। চোখ নামিয়ে নিয়ে সুজানা বলল
বদনাম?
হ্যা।
কি বলেছেন?
বলেছি তুমি বোকা, আদবকায়দা জানোনা, কিছু জানো না। তুমি কি আসলেই কিছু জানো?
আপনি শেখাবেন।
আমি?
হুমম। আপনার কাছ থেকে তো অনেক কিছু শিখেছি।
আমি কেন শেখাবো? ওই বাড়ির যোগ্য বউ হতে?
হুমম।
মলম লাগানো শেষ করে কৌটো ধরিয়ে দিলেন উনি সুজানাকে। বললেন
তোমাক শেখানো পড়ানের সময় নেই আমার হাতে। যাদের বাড়ি যাচ্ছ ওরা দেখে নেবে। আর তোমার মতো মেয়েকে আমার শেখানো পড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই।
সুজানা মলমের কৌটো নিয়ে হেসে বেরিয়ে এল। ক্ষণে ক্ষণে মুড পাল্টায় মহিলা।
ও বেরুতেই পাশের জন্য বলে উঠলেন
আমাদের অভির জন্য এরকম একটা পেলেই হতো আপা। তাই না?
থাক। যে মেয়ে আমার ছেলের কপালে আছে ওই মেয়ে এমনিতেই আসবে। ছেলেটা সহজসরল তাই আমি ভয়ে থাকি। একটা ভালো মেয়ের সাথে দেখা করিয়ে দাও খোদা। আমার আর তর সইছেনা।
তখনি অভিক ঘরে ঢুকে এল ফোন কানে । ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বলল
বাবা কথা বলতে চায়। বাইরে চলো।
মা ছেলে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সালমা বেগম কথা বলা শেষ করে ছেলের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলেন। অভিক মায়ের পান্ডুর মুখখানা দেখে হেসে বলল
কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? বিয়ে বাড়িতে এসেছ না? এরকম মুখ করে রাখলে ভালো লাগে?
হ্যা সবার বিয়ে খাই আমি। তোর বিয়ে আমার আর দেখাও হবেনা, খাওয়াও হবেনা। তুই কি বিয়ে নিয়ে একটুও সিরিয়াস হবিনা অভি? আর কত! আমি তোর জন্য আর কোনো মেয়ে দেখব না ঠিক করেছি। যাকে মনে ধরে রাখি তার বিয়েশাদি ঠিকঠাক। এইবার তুই একটা পছন্দ কর। তোর কি কোনো মেয়েটেয়ে পছন্দ নেই? থাকলে বল আমি বাকিটা দেখে নেব।
মা মা আমার কথা শোনো। এতটা হাইপার হলে চলে? ধৈর্য ধরো।
বাপের মতো হয়েছে একদম। কথায় কথায় আমাকে ধৈর্য শেখাতে আসে। আচ্ছা সুদূর বিদেশ ঘুরে এলি তারপরও একটা মেয়েও তোর পছন্দের নেই? এরকম হলে তো চলেনা অভি।
আই হ্যাভ।
অ্যাহহ!
হুম।
সালমা বেগম দুহাত মুখের উপর চেপে রাখলেন। তারপর ছেলের মুখের দিকে কিয়ৎক্ষণ চেয়ে রইলেন চুপচাপ। খুশিতে চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে।
মিহি স্বরে জানতে চাইলো
কে সে?
সময় হলে বলব।
নাহহ অভি। এখন বলবি। মায়ের কাছ থেকে লুকোবি?
অভিক হেসে ফেলল মায়ের কথা শুনে।
তুমি একদম বাচ্চাদের মতো করো মা।
তুই আমার বাপ তাই।
অভিক আবারও হাসলো। বলল
লাইসেন্স পেয়ে গেলে তোমাকে সবার আগে বলব।
লাইসেন্স? কিসের লাইসেন্স। ধুর আমাকে বল আমি এখন গিয়ে কথা বলব। মেয়েটা কোথায় থাকে? দেখতে কেমন?
ওই মেয়ে আমার মনের মতো হবে তো অভি? আমার একটামাত্র ছেলের বউ? আনিকার মতো হবে তো?
ওসব অনেক দূরের কথা মা। একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে বিধায় মেয়েটারও ছেলেটাকে পছন্দ করতে হবে এমন কোনো কথা আছে? মা আমার সময় দরকার। বাড়িতে গিয়ে ওটা বাবা আর জেঠুকে বলে দেবে। ভাইকেও। যাতে কোনো মেয়ের কথা না বলে। ঠিক আছে?
সালমা বেগম ভুরু কুঁচকে চাইলেন।
আমি অতকিছু বুঝিনা অভি। বিয়ে এ বছরেই করতে হবে।
না। এটা সম্ভব না মা।
কেন সম্ভব না? তুই আমাকে ওই মেয়ের ছবি ঠিকানা দে। আমি আজই কথা বলব।
উফফ মা ওসব অনেক দূরের কথা।
কি দূরের কথা দূরের কথা লাগিয়েছিস? আচ্ছা আমাকে ছবিও দেখাবি না? আমি তোর মা তো।
তুমি মা বলেই তো তোমাকে সবটা বললাম।
আচ্ছা আচ্ছা মেয়েটা তোর মতোই মিষ্টি না? ওমা আমার তো ভাবতেই কেমন লাগছে অভি। আমার ছেলেটা তাহলে শেষমেশ বড় হলো। কি খুশির খবর! মেয়েটাকে দেখতে পেলে আরও ভালো হতো। কখন দেখাবি অভি?
লাইসেন্স পেলে।
ধুররর। লাইসেন্স পাইসেন্স। ছেলে আমাকে নতুন নতুন কথা শেখায়।
বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে রাখলেন উনি।
তন্মধ্যে সুজানার উপস্থিতি দুরকমের আবহে ভাসলো কয়েকটা নিস্তব্ধ মুহূর্ত। সালমা বেগম উত্তেজিত হয়ে বললেন
কি? কি চাও?
অনা আবিদকে নিয়ে যেতে পারব আমাদের সাথে? কাছেই যাচ্ছি বন্ধুদের সাথে।
যেখানে ইচ্ছে যাও। আমার নাতি নাতনিগুলোকে সামলে রাখলেই হবে।
আচ্ছা।
অভিক বলল
কোথায় যাচ্ছেন?
আমি সিউর জানিনা। নিখিল বলল কাছেই নাকি। কেক কাটার পূর্বেই চলে আসব।
ওকে। সাবধানে।
সুজানা অনুমতি নিয়ে চলে গেল।
সালমা বেগম বিড়বিড়িয়ে বললেন
তুমি এবার শ্বশুরবাড়ি যাও আর উচ্ছন্নে যাও, তোমাকে আর দরকার নেই আমার।
মা কি ভাবছ?
সালমা বেগম চমকে উঠলেন। বললেন
আমি?
হুমম।
এই মেয়েটার কথা ভাবছি।
মেয়েটার কথা কি ভাবছ?
আচ্ছা অভি এই মেয়েটা ওই মেয়েটাকে চেনে তো? মানে এই মেয়েটার বড় হবে নাকি ছোট হবে?
সমান সমান।
ও আল্লাহ কি বলিস? এই মেয়ে চেনে?
হুহ।
তাহলে আমি ওর কাছ থেকে জেনে নেব। পারব?
সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারবে না। অন্যভাবে পারো।
সালমা বেগম উত্তেজিত হয়ে উঠে বললেন
এইতো আমার ভালো ছেলে। তাহলে আমি যাই।
কোথায়?
সুজানার কাছে।
সুজানার কাছে কি?
ওই মেয়েটার ব্যাপারে জানতে চাইবো। আচ্ছা নামটা তো বল।
সুজানা কিছু জানেনা মা।
অভি খুব মারব কিন্তু। মশকরা করিস মায়ের সাথে?
মা আমি সুজানার টিচার। আমার প্রেস্টিজ নষ্ট হবে।
হ্যা তাই তো। এই মেয়ে যদি আবার সবাইকে বলে দেয় তখন? থাক বলব না। আচ্ছা অভি আমি ওর কাছ থেকে ইনিয়েবিনিয়ে তো জিজ্ঞেস করতে পারি। তাই না? তুই আমাকে কিছু বল তো এই মেয়ের নামে। মানে ক্লু দিবি আর কি?
উনার নাম সুজানা আফরিদা। সরিষাবাড়ির রাস্তার মোড়ে তিন তলায় থাকে। একটা ভাই আর মা নিয়ে ওনাদের পরিবার। সিইউ থার্ড ইয়ার, ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্ট।
সালমা বেগমের চোখ পাকানো দেখে অভিক থেমে গেল। উনি গালে হাত দিতেই অভিক স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল
তো? কোন মেয়ের কথা বললে সেটাই তো বুঝলাম না। এই মেয়ে বলতে আপাতত সুজানাকেই চিনি।
মেরে তক্তা বানাবো অভি। ওই মেয়ের কথা বলছি অভি। সুজানা নয়।
তাহলে আজ থেকে এই মেয়ে ওই মেয়ে নয়। সুজানাকে সুজানাই বলবে। ওকে? নইলে দেখা যাবে ওই মেয়ের বদলে এই মেয়ে মানে সুজানাই সব জায়গায় চলে আসছে।
হ্যা বুঝেছি। সুজানাই বলব। কিন্তু যে আমার ছেলের বউ হবে তার নাম জানিনা এটা কেমন না? আমি ওই মেয়ে বলতে থাকব?
তুমি আপাতত এই মেয়ে ওই মেয়ে বলে চালিয়ে যাও মা। টা টা।
মাকে দ্বিধাদ্বন্দে ফেলে চলে গেল অভিক। সালমা বেগমের কাছে হিসাব স্পষ্ট নয়। ওই মেয়ে মানে তো ওই মেয়ে। আর এই মেয়ে মানে সুজানা। তাহলে ওই মেয়েকে এই মেয়ে কি করে বলবে? ধুরর ছেলেটাকে বাপের রোগে ধরেছে। আজকাল মশকরা শুরু করেছে। ফাজিল ছেলে কোথাকার!
চলবে…..