আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_১৯ Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
75

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_১৯
Writer #প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

সুজানা ওড়নার কোণায় মুখ মুছতে মুছতে বাড়ির ভেতরে পা রাখলো। হাত ধুঁতে সাহায্য করলো বলে পানির ছিটে মারতে হবে? আজব!
অনা আর আবিদ ফ্লোরে বসে খেলা করছিল। সুজানাকে দেখে দুজনেই হাততালি দিল।

আসসালামু আলাইকুম সুজান। গুড ইভিন।

ওয়ালাইকুমুস সালান। গুড ইভিনিং।

ইভননি।

ইভিনিং। যাইহোক পড়ার ঘরে যান।

মমতাজ বেগম ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন। সুজানা সালাম দিতেই সালামের জবাব দিয়ে বললেন

তুমি এসেছ বোন? তোমার কথায় বলছিলাম এতক্ষণ। তোমার মা ভাই ভালো আছে?

জ্বি দাদু। আপনি ভালো আছেন?

আল্লাহ ভালো রেখেছেন।

সুজানা অনা আর আবিদকে তাড়া দিল।

এই আপনারা চলেন চলেন।

ওরা দুজনেই দৌড়ে দৌড়ে চলে গেল। সুজানা ও ওদের পেছন পেছন গেল।

ওদের পড়াতে পড়াতে একসময় আনিকা এল। বলল

সুজানা অভি বলেছে যাওয়ার সময় দেখা করে যেতে।

আমাকে?

হ্যা। কালও নাকি বলেছে কিন্তু আপনি দেখা করে যাননি।

একদম ভুলে গিয়েছিলাম।

আচ্ছা আজ মনে করে দেখা করে যাবেন। নইলে স্যার বলে কথা দেখবেন পানিশমেন্ট দিতে ভুলবেনা।

অনা গালে হাত দিয়ে ফিক করে হেসে উঠে বলল

অভি সুজানকে মার দিবে?

সুজানা গাল টেনে দিয়ে বলল

পড়ার সময় কোনো কথা না। ঠিক আছে?

ওকে সুজান।

আনিকা ছোট্ট একটা বাক্স বের করলো ওড়নার নিচ থেকে। আকাশী রঙা মিনিবক্স। তারউপর চকচকে একটা গোলাপফুল। সুজানার সামনে রেখে বলল

আপনার পারিশ্রমিক সুজানা।

সুজানা লজ্জায় পড়ে হাসলো। বলল

আজকে তো ২৮ তারিখ।

তাতে কি হয়েছে? ওদের পাপা বলেছিল গতকালকেই দিতে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

আবিদ বক্সটা ঠেলে দিয়ে বলল,

সুজান সুজান পাইশশমিক নাও।

আনিকা আর সুজানা একসাথে হেসে উঠলো। আনিকা বলল

হয়েছে আপনাকে আর পাকনামি করতে হবেনা।
আর হ্যা, সুজানা ছোটমা আর আমার সব কাপড়গুলোতে কত বিল এসেছে ওটার স্লিপটা এনেছেন?

না, ওটা তো আনা হয়নি।

এটা কোনো কথা? আমি ভাবছিলাম আজকেই পে করে দেব। আচ্ছা বিকাশ,নগদ যেকোনো একটা থাকলে সুবিধা হতো। আপনার নাম্বারটাতে পাঠালে হবে।

হুম ওটাতে বিকাশ করা আছে।

তাহলে ঠিক আছে। আর একটা কথা আপনার আম্মা তো খুব ভালো কেক বানাতে পারে। অনা আর আবিদের জন্য একটা কেক নিয়ে আসবেন পরশু দিন। পারবেন না?

উম উম কেকক? মোজা মোজা হবে।

দুজনেই মাথা দুলালো। সুজানা বলল

লিখুন। আচ্ছা আনব ম্যাডাম।

আনিকা সুজানার চেয়ারটা ধরে একটু নিচু হয়ে ফিসফিসিয়ে বলল

ম্যাডাম ট্যাডাম বাদ দেন। আপু ডাকার অভ্যাস করেন। কেমন?
আমি কফি পাঠাচ্ছি।

আনিকা চলে গেল। সুজানা মাথায় হাত চেপে বসে রইলো। অনা আর আবিদ লিখতে লিখতে মাথা তুলে তাকালো। আবিদ বলল

সুজান অচুখ?

সুজানা হাসলো। থুঁতনি ধরে আদর করে বলল..

না অসুখ না। লেখা শেষ করেন। আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

আচচা তাতারি নিখি।

হুমম নিখেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে মর্জিনা কফি আর কিছু নাশতা নিয়ে এল। বলল

হ্যা গো তোমাকে এই কফি খাওয়া শেখালো কে? বাবু না হয় ওসব বিদেশে খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়েছে তাই খাচ্ছে তুমি কেন খাও এসব তেঁতো জিনিস। কত সুন্দর করে বানায় কিন্তু খেয়ে দেখলাম নাউজুবিল্লাহ।

সুজানা হাসলো। বলল

আপনার বাবুই শিখিয়েছে।

অ্যাহ?

হ্যা।

মর্জিনা চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর ফিসফিস করে বলল

শুনো আমি যা শুনছি তা কি ঠিক? এই বাড়ির কথা তো এই ঘর থেকে ওই ঘরও পৌঁছায় না ভালো করে। যা কথা চাপা রাখতে জানে ওরা। বলছিলাম কি তোমার সাথে নাকি বড় বউয়ের মামাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে। এগুলো কি ঠিক কথা?

অনা বলল

মজি দাদু তুমি সুজানকি কি বোলো?

মাগোমা এই ফাজিলগুলোর জ্বালায় কিছু বলাও যায় না। হ্যা গো বলো এসব সত্যি? তাহলে তো তুমি ছক্কা মেরে দিয়েছ।

সুজানা কিছু বলতে চাইলো না কিন্তু কিছু না বললে এই মহিলা এখান থেকে নড়বে বলে মনে হচ্ছেনা তাই বলল

এই বাড়িতেই তো থাকেন। সব জানবেন সময় হলে।

মাগোমা তোমারও এই বাড়ির রোগে ভালোভাবে ধরছে। সোজা কথা বলেনা কেউ। হুহ ঢং।

উনি চলে যেতেই সুজানা কফির মগটা শেষ করলো দ্রুত। কি বাজে রোগে ধরেছে আজকাল। তেঁতো জিনিসও ভালো লাগে।

আপনাদের লেখা শেষ? বাকিটুকু লিখে তারপর উঠবেন কেমন? সুজান আসছে আজ। কেমন?

ওকে ওকে সুজান। টা টা। চি ইউ টুমুরু।

সুজানা হেসে বলল

চি ইউ আফটার ঠোমারো বাবু সোনা। টা টা।

দুজনেই ওর পেছন পেছন বেরিয়ে গেল চুপিচুপি। আবিদ অনাকে বলল

বুন বুন আচতে আচতে যাবো কিমন? সুজান দিখি ফিলবে। খুব বোকা দিবে।

আচচা আচতে আচতে যাবো।

যেতে যেতে সুজানার মনে পড়লো স্যার তাকে দেখা করতে বলেছিল। স্যারের ঘর কোনটা?

মর্জিনাকে কফির মগ নিয়ে যেতে দেখা গেল। সুজানাকে উঁকিঝুঁকি দিতে দেখে বলল

কি গো কি খুঁজছ তুমি?

স্যার কি বাড়িতে আছে নাকি বাইরে গেছেন। আমাকে না দেখা করে যেতে বললেন।

তুমি দেখছ না কফির মগটা আনতে গেছি। কাপড় ঢলতেছে দেখি। যাও। ওই শেষের বারান্দা আছে না? তার আগের ঘরটা। বাত্তি জ্বলতেছে।

সুজানা মাথা নাড়ালো। বলল

আচ্ছা।

ধীরপায়ে ওই ঘরের দিকে পা বাড়ালো সে। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। ঘরটার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে। উঁকি দেবে দেবে করে যখন গলা বাড়ালো দেখলো অভিককে। আবারও চেপে গিয়ে দম নিয়ে উঁকি দিতেই দেখলো কোমর সমান আইরন টেবিলে শার্ট কি পাঞ্জাবি আইরন করছে। ঘরের দেয়ালো কয়েকটা ব্লু রঙের পেইন্টিং। ঝুলানো আর্ট পিস, একটি সাদা বুকশেল্প, বুকশেল্পের খালি তাকে রঙের বাক্স, তুলি। আরও রঙবেরঙের জিনিস। দেয়ালের গায়ে ইনডোর প্ল্যান্টের লতা দেয়াল বেয়ে বেরিয়ে গেছে জানালার উপর দিয়ে। জানালা সাজানো ড্রিম ক্যাচার, ছোট ছোট ফুল, রঙিন রিবন দিয়ে। বেডের দুপাশে দুটো গোল বেডসাইড টেবিলে দুটো টেবিল্যাম্প। ড্রেসিং টেবিল। বসার জন্য চেয়ার। পড়ার জন্য টেবিল। টেবিলের উপর কালো ল্যাপটপ, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, হেডফোন, চার্জার, পাওয়ার ব্যাংক আরও কতকিছু। সুজানা বিড়বিড়িয়ে বলল, ধুর যাব কি করে?

শার্ট ফোল্ড করে বিছানার উপরে রাখার সময় দরজার কাছে সুজানার ওড়নার কোণা দেখে ভুরু কুঁচকালো অভিক। আবারও কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল

ভেতরে আসুন সুজানা।

সুজানা ভড়কে গিয়ে বলল

ওমা আমাকে দেখেছে?

হ্যা দেখেছি। ভেতরে আসুন।

সুজানা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পা রাখলো ঘরের ভেতর। ঢোক গিলে বলল

আমাকে তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে তো তাই তাড়াতাড়ি বললে ভালো হয়।

অভিক তাকাতেই সুজানা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওরেবাবারে তার কেমন কেমন লাগছে। অভিক ওয়ারড্রব খুলে কিছু কালো আকাশীরঙা একটি শপিংব্যাগ বের করলো। ব্যাগ থেকে কালো আর ছাইরঙা ট্র্যাকসুইট বের করলো। বলল

এটা নিয়ে যান।

অ্যাহ?

এইটা।

এইটা আমি কি করব?

লুজ হয়, ফিটিং করবেন।

সুজানা ওড়নার কোণা মোচড়ে বলল

আচ্ছা।

অভিক আবারও ব্যাগে ভরতে গিয়ে বলল

আপনি করবেন।

অ্যাহ?

আপনি করবেন কাজটা, আপনার মা নন।

আমি করিনা।

তাতে কি? করবেন।

আমার ভুল হবে।

হোক।

আচ্ছা। একটা সাইজ লাগবে।

দিয়েছি। নিন। পরশু নিয়ে আসবেন।

সুজানা ব্যাগটা নেয়ার জন্য এগিয়ে গেল। চট করে কেড়ে নিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওড়নায় টান পড়তেই চট করে ঘাড় ফেরালো। অভিক কৌতুহলী চোখে চাইলো। জুতোর সেলফের লৌহনির্মিত ছোট কাঁটার সাথে পেঁচিয়ে গিয়েছে। সুজানা লজ্জায় একটান দিতেই ওড়নার লেইস ছিঁড়ে গিয়ে কাটায় লেগে রইলো।

দ্রুতপায়ে হেঁটে চলে গেল সে। অভিক এগিয়ে গিয়ে লেইসের ছেঁড়া অংশ তুলে নিয়ে রঙতুলির বাক্সে রেখে দিল। আসবাবপত্রগুলোও তাকে আটকাতে চায়।

________________

দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে ঘরে হৈচৈ শুনতে পেল সুজানা। রেলিঙ ধরে নীচে তাকাতেই দেখলো গাড়ি। ওহ শিট তারমানে ওরা চলে এসেছে?

ঘরের দরজা খোলা। সে ভেতরে পা রাখতেই সবাই হৈহল্লা করে ছুটে এল। মেহুল আর শান্তার গায়ে শাড়ি। দু’জনকেই ভারী মিষ্টি লাগছে। আহির আর জায়িন সায়েমের সাথে একসাথে বসে টিভিতে মজে আছে। রাশেদা বেগমকে দেখে সুজানা হেসে বলল

আহ ছেলেবউকে দেখতে চলে এসেছ?

মেহুল লাজুকমুখে তাকালো। রাশেদা বেগম হেসে বলল

তোরও এরকম শ্বাশুড়ি হবে। সুজানার হাসিমাখা মুখ মিইয়ে গেল। মেহুল ঠেলে বলল

আরেহ যাহ। ফ্রেশ হয়ে আয়। আমরা বেরোবো তো।

শান্তা বলল

হ্যা। আমরা সবাই মিলে শাড়িও চুজ করে রেখেছি তোর জন্য।

কার শাড়ি। আন্টিই তো দিল।

মায়ের দিকে একপলক তাকিয়ে চলে গেল সুজানা।

শান্তা আর মেহুল দুজনে মিলে ওকে রেডি করে দিল। চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে সুজানা বলল

নিহাত যাচ্ছে না কেন?

শান্তা বলল

তুই পাগল! ও নিখিলের বাড়িতে বিয়ে খেতে যাবে। সাপে নেউলে বন্ধু হয় কখনো?

সেটা ঠিক। তবে ওকে আমার ভালোই লাগে। ওকে উপরে যেমনটা মনে হয় ও সেরকম না।

হুমম।

সুজানা কালো শাড়িটা পড়ে নিল। পাড়ে সোনালী আর লাল পুরু কাজ করা। লাল ব্লাউজের পাড়ে কালো সোনালী কাজ করা। শাড়িটা ভীষণ সুন্দর এবং সুজানার ভীষণ পছন্দের। তার মায়ের শাড়ি। সাজিয়া বেগম দূর থেকে একপলক দেখে মৃদু হেসে চলে গেলেন। দেখতে দেখতে চোখের সামনে মেয়েটা কতবড় হয়ে গেল।
আহির আর জায়িন তাড়া দিল। আহির হাঁকিয়ে বলল

বইনরে তোদের ময়দামাখা শেষ হয়ছে? নাকি চলে যামু?

শান্তা বলল

ময়দা কাকে বললি?

চুপ থাক। সত্যি বললে জ্বলে।

সুজানা শান্তার হাত ধরে রাখলো।

ঝগড়া পরে করিস।

সাজিয়া বেগম সবার জন্য চা নাশতা নিয়ে এলেন। আহির আর জায়িন নাশতা খেতে খেতে বলল

আন্টি তোমার হাতে জাদু আছে সত্যি।

উনি হাসলেন। বললেন

সত্যি ভালো হয়েছে। আরও নাও।

শান্তা আর মেহুল ভাগ বসিয়ে বলল

সব ওরা খাবে নাকি।

সুজানা তাড়া দিল এবার।

অ্যাহ খাওয়ায় মজে গিয়েছিস? চল দেরী হয়ে যাচ্ছে।

সায়েম বলল

আপা আমিও রেডি।

সুজানা বলল

তুই?

আহির সায়েমের পিঠে ধুপধাপ চাপড় বসিয়ে বলল

নিখিলের আদেশ ওকে সাথে নিয়ে যেতে হবে।

আম্মা তুমি তাহলে বড় আন্টির সাথে থাকো।

বলেই মায়ের দিকে তাকালো সুজানা। সাজিয়া বেগম চোখ সরিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন অন্য কাজে।
ওরা বেরিয়ে পড়লো সবাই মিলে।

আহির গাড়ি ঘুরিয়ে বলল

মা কি বলছে জানিস? রাতে খেয়েদেয়ে চলে আসবি আহির। আমি বললাম ক্লাব থেকে বিরিয়ানির ঢেকচি আসবে রাত একটায়। বিরিয়ানি না খেয়ে ফেরা যাবেনা।

সবাই হেসে উঠলো। শান্তা বলল

মাম্মাস বয়।

আহির চটে গিয়ে বলল

একচড়ে বেহুশ কথাটা শুনছোস কখনো? নাকি সবাইকে দেখামু?

শান্তা ভেংচি কেটে বলল

আহ মরণ।

বিয়ে বাড়ির গেইট পার হতে হতে দেখা গেল অনেক অনেক মানুষ, আত্মীয় স্বজন আর বাচ্চাকাচ্চার ছোটাছুটি। ওদের গাড়ি দেখে নিখিল ছুটে এল। বলল

কোনো অসুবিধে হয়নি তো? সব ঠিকঠাক?

আহির আর জায়িন বলল

ইয়েস ব্রো। আগে বল বল সুন্দরী মেয়ে কোনদিক দিয়া গেলে পাব।

শান্তা বলল

টেলেন্টেড লুইচ্চা।

নিখিল হাসলো। বলল

এরেহ সায়েম এসেছিস ভাই আমার।

হ্যা চলে এসেছি।

আহ আমি ভারী খুশি হয়েছি। এই বান্ধবী তোরা ঠিকঠাক?

ওরা মাথা দুলালো। ওরা গাড়ি থেকে নেমে যেতে যেতে নিখিলের মা ছুটে এল তাদের দেখে। বলল

ওমা তোমরা এসেছ? খুব খুব ভালো হয়েছে। সেই তখন থেকে বলে যাচ্ছে আমার বন্ধুরা আসবে, আমার বন্ধুরা আসবে। ওমা মেয়ে তো চারজন আসার কথা ছিল।

সবাই চুপসে গেল। জায়িন হেসে উঠে বলল

ও কোনো ব্যাপার নয় আন্টি। আগে বলুন আপনি কেমন আছেন।

আল্লাহ ভালো রেখেছে বাবা। তোমাদের মা বাবা ভালো আছে তো।

কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতরে গেল সবাই। নাশতা পানি খেয়ে জিরিয়ে পুরো বাড়িটা আর বাড়ির চারপাশটা ঘুরলো সবাই মিলে। নিখিল সবার সাথে বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিল। চারদিকে নানান রঙের আলোয় ঝলমল করছে। সাথে নানান রকম মানুষের ছোটাছুটি। বিশাল উঠোনে স্টেজ ও বসার আয়োজন করা হয়েছে।

মেহেদী সন্ধ্যা শুরু হবে তার আগেই সুজানারা সবাই বসা ছিল তাদের জন্য বরাদ্দ ঘরটাতে। ওখানে নিখিলের মামাতো ফুপাতো খালাতো বোনদের সাথে গল্প জমেছে তাদের। তবে গানের আওয়াজে তিন বান্ধবী স্টেজের কাছাকাছি চলে এল বাকিদের সাথে । দেখলো দলবদ্ধ হয়ে নাচছে অনেকগুলো ছেলেমেয়ে। তন্মধ্যে আহির জায়িন আর নিখিলও আছে। সায়েমকেও দেখে গালে হাত দিল সুজানা।

আকাশটা কালো, মাঝেমাঝে কয়েকটা তারা উঁকি দিচ্ছে। বড় বড় ফুলটবগুলো সরিয়ে একপাশে করে রাখা। কয়েকটা বড় বড় বাতি লাগানো বিপরীত পাশেই স্টেজের সামনে।
আলোয় ঝলমলে রাতের এই আনন্দ মুহূর্তে
যে যেরকম পারছে নাচছে মনের খুশিতে।

গান চলছে

চোগাদা তারা
চাবালা তারা
রাঙীলা তারা

রাঙবেরু জুতেরি ভাতরে, হেই..

চোগাদা তারা
চাবালা তারা
রাঙীলা তারা

মেহুল, শান্তাকে টেনে নিয়ে গেল ওরা। সুজানাকে টেনে নিয়ে যেতে আসবে তক্ষুণি উল্টো দৌড় দিল সে। তবে বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারলো না। খানিকটা এঁদো জায়গায় গিয়ে পড়ে গেল মুখ থুবড়ে। কেউ কেউ দেখলো তবে ছুটে এল না কেউ একজনকে এগোতে দেখে। সুজানার হাত ছিলে গেল বড় ফুল টবের সাথে লেগে। পড়ে যাওয়া টবটা তুলে নিল সৌম্যদর্শন একজন। আজকাল সবাইকে দেখতে অমন লাগে। হাত দেখে চোখ নামিয়ে নিয়ে হাত ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতে যাবে তখনি ফুলটবটাকে যত্নসহকারে দাঁড় করানো হলো। ধীরে ধীরে ওটা সরে যেতেই সৌম্যদর্শন লোকটাকে দেখে চোখ কপালে উঠলো সুজানার। ঢোক গিলে তাকিয়ে থাকলো। যেখানে সেখানে কেন উনাকে হাজির হতে হবে?এটা কেমন কথা?

কালো হালকা জ্যাকেট পরিহিত লোকটা হাঁটুভেঙে বসা। রসিকতা মিশ্রিত গলায় বলল

না মানে আপনি যেদিকে যান আমি সেদিকে যাই? নাকি আমি যেদিকে যাই আপনি সেদিকে যান?

সুজানা হাতের তালু অন্য তালুতে ঢলতে ঢলতে বলল

২ নাম্বারটা।

অভিক হেসে উঠলো। বলল

উহু, ইটস ডেস্টিনি সুজানা।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here