আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে #পর্ব_৪২ #লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

0
441

#আমায়_রেখো_প্রিয়_প্রহরে
#পর্ব_৪২
#লেখনীতে_প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে সুজানা টের পেল সবার ছোটাছুটি। সবেমাত্র মুখহাত ধুয়েছে সে। মা কিছু আগেই শান্তাকে দিয়ে শাড়িটা পাঠিয়েছে। আর দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে বলেছে “শাড়িটা যাতে পড়ে নেয় “।
সুজানা শাড়িটা হাতে নিয়ে রুমে পায়চারি করতে করতে শুনতে পেল অনা আবিদের গলা।

সুজান কুথায়? সুজানের কাছি যাবো।

সাথে সাথে আনিকার গলাও ভেসে এল।

সুজান আসবে। এখন অভির কাছে যাও।

নামটা শুনতেই বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করে উঠলো সুজানার। সত্যি এসেছে?

শাড়িটা বুকের সাথে চেপে ধরে চুপটি করে রইলো সে।

চোখ খুললো দরজায় ঠোকা পড়ায়। কাঁপা গলায় জানতে চাইলো

কে?

রোজা উত্তর দিল।

আমি আপা। শান্তা আপু বলল শাড়িটা পড়ে নিতে। নাশতার প্লেট সাজানো শেষ হলে আসছে।

আচ্ছা।

সুজানা শাড়িটা পড়ে নিল কোনোমতে। যদিও সে শাড়ি পড়তে বেশ পটু। বহুবার সে শাড়ি পড়েছে। কিন্তু আজ কোনো কাজে মন বসছে না। অদ্ভুত কারণে সবকিছু হালকা হালকা লাগছে।

বেশ সময় নিয়ে শাড়িটা পড়ে নিল সে। তারপর দু’হাতে চুড়িগুলো। চুড়ির ঝনঝন শব্দগুলো শুনতেও আজ ভালো লাগছে। যেন এর চাইতে সুন্দর সুর বুঝি আর নেই। প্রেমে ভেসে গেলে বুঝি এমন অনুভূতি হয়?

তারপর শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সময় নিয়ে দেখলো । নিজেকে বোধহয় এমন করে আর কখনো দেখেনি সে।
হয়ত সে ” তার ” চোখে সবকিছু দেখে বলে নিজেকে এত সুন্দর লাগছে? এই যে গালের দুপাশে লাল খয়েরী হয়ে শুকিয়ে রইলো ব্রণগুলো এগুলোও খারাপ লাগছে না। সে নিখুঁত নয় জেনেও তো অভিক ফারদিন কাউকে না দিয়ে তাকে মন দিয়েছে। তাই সে নিখুঁত হতে চাইবে না এবং তার প্রয়োজনও নেই। ভালোবাসার সংজ্ঞা যদি খুঁত নিখুঁতের মাপকাঠিতে দিয়ে হতো তাহলে ভালোবাসা লুপ্ত হতো সেই কবে। জগতে অমন নিখুঁত মানুষও কোথায়?

দরজায় আবারও ঠোকা পড়লো। সুজানা চিরুনি হাতে নিয়েছিল সবে।

কে বলে ” চিরুণিটা চুলে লাগিয়ে দরজা খুলতেই আনিকা আর জিনিয়াকে দেখে ভড়কে গেল।

খোলা চুল ঢাকতে শাড়ির আঁচল টেনে নিয়ে সালাম দিতেই আনিকা সালাম নিল। সুজানাকে ভালো করে পরখ করে একটু মৃদু হাসলো। বলল

আমাদের তো ভেতরে যেতে বলছেন না।

সুজানা আমতাআমতা করলো। জিনিয়ার দিকে বারবার তাকালো। কে মেয়েটি? কখনো তো দেখেনি?

সে বিছানার উপর থেকে তার সেলোয়ার-কামিজ, সাজগোজের জিনিসগুলো সরাতে সরাতে বলল,

আসুন না। আমি মাত্রই চেঞ্জ করলাম তো তাই সব এলোমেলো।

আনিকা বলল

থাক। ব্যস্ত হবেন না। সমস্যা নেই। ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই। ও জিনিয়া। ফুপীর মেয়ে। সিজানের বোন।

জিনিয়া সালাম দিল। সুজানা সালাম নিয়ে কুশল বিনিময় শেষে বলল

উনারা কবে এসেছেন?

এইতো তিনদিন আগেই এল। আপনি তো আমাদের খোঁজখবর নেন না আজকাল। শুধু একজনের খোঁজ রাখলে চলবে?

সুজানার চোখজোড়া লজ্জায় নত হয়ে এল। ওর কাঁচুমাচু ভাব দেখে জিনিয়া বলল

আহা ভাবি লজ্জা দিচ্ছ কেন? দেখো লজ্জা পেয়েছে।

সুজানা বলল

নাহ।

আনিকা বলল

আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি চুলটা বেঁধে নিন। আমরা আসি।

সুজানার মনে হলো আনিকা আগের মতো স্বাভাবিক স্বরে কথা বলছে না। তার ভালো লাগলো না।

জিনিয়া বলল

আমি হেল্প করি? আমি খুব সুন্দর করে চুল বাঁধতে পারি।

সুজানা মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিল।

শান্তা আর মেহুল এসে পড়লো তখুনি। শান্তার সাথে ওদের পরিচয় হয়েছে। শুধু মেহুলের সাথে হয়নি। মেহুলের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শান্তা বলল

ও মেহুল। আমরা তিন বান্ধবী।

চিনি আমি।

মেহুল সালাম দিয়ে বলল

ভালো আছেন?

আলহামদুলিল্লাহ। আপনি ভালো আছেন?

জ্বি। আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন না।

আনিকা বলল

সমস্যা নেই। আমি আছি।

জিনিয়া বলল

নতুন ভাবি আপনি বসুন। আমি চুল বেঁধে দিই। আরেহ আপনার চোখমুখ এত ফুলেছে কেন?

সুজানা আমতাআমতা করে বলল

কই? এমনি

নিশ্চয়ই কান্নাকাটি করেছেন। আমারও কাঁদলে চোখমুখ এরকম ফুলে যায়।

শান্তা আর মেহুল চোখের দৃষ্টি বিনিময় করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তাদেরকে সাজিয়া বেগম বলেছেন উনি বকাবকি করায় সুজানা সকাল থেকেই কেঁদেকেটে ভাসিয়ে ফেলেছে।

সবাই সবার সাথে টুকিটাকি গল্প করতে করতে সুজানার চুল বাঁধা হয়ে গেল। শাড়ির কুঁচিগুলো ভালো করে ধরে পিনআপ করে দিল জিনিয়া। বলল

এবার ঠিক আছে। কিন্তু মুখ গোমড়া করে রেখেছেন তাই ভালো লাগছেনা। আরেহ হাসতে কোনো টাকা লাগে না।

সুজানা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।

জিনিয়া বলল

আমি মামীদের বলে আসি আপনি রেডি হয়েছেন। জিনিয়া বেরিয়ে গেল। শান্তা আর মেহুল বলল

আচ্ছা আপনারা কথা বলুন।

আনিকা মাথা দুলালো।

ওরা যেতেই সুজানা বিছানার চাদর ঠিক করতে করতে বলল

আপনি বসুন না। বাচ্চারা কোথায়?

ওরা অভির কাছে।

ওহহ।

আপনি এই সম্বন্ধে রাজী আছেন সুজানা?

চাদরে হাত থেমে গেল সুজানার। ফিরে তাকাতেই দেখলে আনিকা ওর দিকে উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে।

সুজানা মহা মুশকিলে পড়ে গেল।

আনিকা বলল,

না আমার মনে হচ্ছে আপনি কেঁদেছেন। তাই জানতে চাইলাম।

সুজানা মাথা নামিয়ে রাখলো। বলল

শুরু থেকেই আমায় চেয়ে বসা মানুষটাকে ফেরানোর সাধ্যি আমার কখনো হবে না। কারো শখ, আহ্লাদ, আনন্দ আর ভরসার জায়গা হতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের। আমি কখনোই না করতে পারতাম না।

আনিকা মৃদুমন্দ হাসলো। সুজানার টলমল করা চোখজোড়া দেখে গাল টেনে দিয়ে বলল

আপনি আমার এত কাছে চলে আসবেন এটা তো আমার জন্যও আনন্দের সুজানা।
যাইহোক যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, বাসনে বাসনে লাগলে টুংটাং আওয়াজ হয় কিন্তু। ছোট মা আর মায়ের মধ্যে মন কষাকষি হলে তারা একে অপরের সাথে কথা বলেনা ঠিক কিন্তু একে অপরকে ছেড়ে কখনো খাবার টেবিলে খেতে বসতে দেখিনি। সবাইকে খাইয়ে পাতিলের শেষের মাছের টুকরোটির এপিঠ ওপিঠ ভাগ করে খেতে দেখেছি। অসুস্থ হলে একে অপরের কাপড়চোপড় ধুঁয়ে দিতে দেখেছি। তাদের রোজ মন কষাকষি হয় কিন্তু সেসব ড্রয়িংরুম পর্যন্ত কখনোই যায় না। দিনশেষে বাসন দুটো তো আর আলাদা থাকতে পারেনা। তাদের একসাথে ভাঁজে ভাঁজে মানিয়ে থাকতে হয়। আপনার আমার সম্পর্কটাও তেমন হোক।

সুজানা চোখ জোড়া আরও টলমল করে উঠলো। যেন চোখের স্বচ্ছ জলে আনিকা নিজেকে দেখতে পাচ্ছে। সে বড্ড আলতো হাসলো। সুজানার থুঁতনি ছুঁয়ে বলল

আপনার ম্যান দেখলে বলবে তার ম্যাডামকে আমি কাঁদাচ্ছি। তবে এ সুযোগে একটু সুযোগ না নিলে কি চলে? বলেই আসি ” তোমার তাকে ভীষণ রকম কাঁদিয়ে এসেছি ভাইটি “।

সুজানা কান্নাজলে হেসে ফেলল। আনিকা হেসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।

_______________________

এশারের আজান পড়ায় বাবা চাচ্চুরা মসজিদে চলে যেতেই অনা আবিদকে জিনিয়া নিয়ে এল সুজানার কাছে। এতক্ষণ পর সুজানাকে দেখে তারা দুজনেই ভীষণ উত্তেজিত। আনিকা তখন সুজানাকে কানে দুল পড়াতে ব্যস্ত। ওরা দুজন এসে সুজানার কোমর জড়িয়ে ধরে ডেকে উঠলো

সুজান বউ?

আকস্মিক আক্রমণে সুজানা হতবিহ্বল। বলল

কেমন আছেন আপনারা? এতক্ষণ কোথায় ছিলেন?

অনা বলল

অভির কাছে। অভি বুলছে সুজান বউ।

সুজানা বলল

নাশতা করেছেন ?

ওকে কথা ঘুরাতে দিল না ওরা। বলল

সুজান বউ? অভির বউ?

সুজানা এবার হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নিল। সবাই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো ওদের কান্ড দেখে।

দরজার বাইরে থেকে নাজিয়া বেগম ডাক দিল সুজানাকে।

সুজু তোর হলো?

হয়েছে খালামণি।

এতক্ষণ লাগে? মানুষগুলো কি মনে করবে?

সুজানা আনিকার দিকে তাকালো। উনি বলল

সমস্যা নেই চলুন।

আগে আম্মার কাছে যাই।

ওকে।

সুজানা আগে মায়ের কাছে গেল। রাশেদা বেগম কাটা ইলিশ মাছ ধুচ্ছেন। সুজানা প্রশ্ন করলো।

ইলিশ মাছ কখন এনেছে?

সাজিয়া বেগম তেলের উপর পেঁয়াজ ছেড়ে মেয়ের দিকে আঁড়চোখে তাকালেন। রাশেদা বেগম জবাব দিলেন

তোর মায়ের মেয়ের জামাই।

সুজানা হতবিহ্বল চোখে তাকালো। গতকালকে সেগুন বাগিচায় উনি মজা করে বলেছিলেন আর সত্যি সত্যি নিয়ে এসেছে? এ কার পাল্লায় পড়লো সে? সবকিছুতে সিরিয়াস?

হবু শ্বাশুড়ির ইলিশ রান্না দিয়ে ভাত খাবে বলে আবদার? ভালো করে রান্না করতে হবে না? তুই উনাদের কাছে গিয়েছিস?

আম্মা কাছে এসেছি। আম্মা যদি…

সাজিয়া বেগম সাথে সাথেই জবাব দিলেন

কেন এখনো না গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে? আমি কি কোনো সোহবত শেখাইনি? বাড়িতে মেহমান এলে আগে গিয়ে দেখা করতে হয়। নতুন করে মায়ের অনুমতি নেয়ার কোনো মানে আছে?

সুজানার মুখখানা আরও গোমড়া হয়ে এল। শান্তা এসে সুজানার পেছনে দাঁড়িয়ে সবার মুখদর্শন করলো। রাশেদা বেগম বললেন

আহা মেয়েটাকে একটু ভালো করে বললে কি হয়? চোখের সামনে না দেখতে পেলে বুঝবে। এমন সোনা মেয়ে কারো আছে?

সুজানা মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। নাজিয়া বেগম এসে বলল

সুজু কোথায়? ওমা এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছিস?

শান্তাকে জিজ্ঞেস করলেন ” কি হয়েছে?

সে ছোট করে উত্তর দিল।

আন্টি বকাবকি করেছে মনে হচ্ছে।

উনি সুজানার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন

তোর মায়ের একার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব। তাই এমন করছে। আপা তুমি ওর উপর রাগ ঝাড়ছো কেন? কোথায় সেজেগুজে তোমার কাছে এল। মেয়েকে দোয়া করবে তা না করে বকছো। তুমিও পারো।

সুজানা ডুকরে উঠার শব্দে সাজিয়া বেগম বললেন

ওকে নিয়ে যাহ নাজু।

শান্তা এসে বলল

আরেহ বুদ্ধু চল। আরেহ তোকে কাঁদতে দেখলে উনারা কি মনে করবেন? সুজু! চল।

সুজানা নড়লো না। খালাম্মাকে জড়িয়ে মুখ লুকিয়ে রাখলো। রাশেদা বেগম বললেন

আহা সুজুর মা তুমিও পারো। এ সময়গুলোতে মেয়েদের সাথে নরম হয়ে কথা বলতে হয়। এসময় কত ভয়ভয় কাজ করে জানোনা। তুমিও বাপু কার রাগ কার উপরে দেখাও বুঝিনা।

শান্তা আনিকাকে সব বলে ডেকে আনলো। ও এসে
সুজানাকে ধীরেসুস্থে ছাড়িয়ে নিল নাজিয়া বেগমের কাছ থেকে। ফিসফিস করে বলল

না গেলে আপনার রাগী আন্টি নিজেই চলে আসবেন।

আনিকা তাকে জোর করে নিয়ে বেরিয়ে গেল রান্নাঘর থেকে। ও যাওয়ার সময় মায়ের দিকে তাকালো। আম্মা কি খুশি নেই?

___

সুজানার চুলের খোপার উপরে শাড়ির আঁচলটা তুলে দিল আনিকা। তাকে অমন কান্না কান্না মুখে দেখে সবাই খানিকটা কৌতূহলী চোখে তাকালো। সুজানা সবাইকে গিয়ে সালাম করলো। সালমা বেগম ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।

আনজুমা বেগমকে সালাম করতে যেতেই উনি বললেন

বসো বসো মেয়ে। কখন থেকে তোমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করে আছি। কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? আমরা এসেছি বলে মন খারাপ হয়েছে? খুশি হওয়ার কথা।

আনিকা ইশারায় কিছু বলতে উনি বললেন

এখন সালাম করেছ তাকে চিনতে পেরেছ?

সুজানা জেসমিন বেগমের দিকে তাকালেন। সেই বাড়ির সবার চেহারার ধরণের সাথে মিল আছে।

উনি অভির ফুপী।

জেসমিন বেগম হাসলেন সুজানার সাথে। বললেন

আমরা তো আজ নিয়ে যাচ্ছি না। এত কেঁদেকেটে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলতে হবে না।

সুজানা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলো। সরল মুখে সালমা বেগমের দিকে তাকাতেই উনি বললেন

তুমি এত শুকিয়েছ কেন? এটুকুনি মেয়ের এত কিসের চিন্তা?

সবসময় খ্যাঁকখ্যাঁক করে কথা বলা মানুষটা এত মমতা জড়িয়ে কথা বলছে দেখে সুজানার চোখদুটো বার-বার ঝাপসা হয়ে উঠছে।

সুজানা আসায় হৈচৈ বেড়ে গেল। জিনিয়া বলল

মামী মামাদের আসতে বলি?

সালমা বেগম মাথা নাড়ালেন। আনিকাকে ডেকে কানেকানে কি ফিসফিস করে বলতেই আনিকা মাথা দুলিয়ে রুম থেকে চলে গেল।

জেসমিন বেগম টুকটাক প্রশ্ন জানতে চাইলো সুজানার কাছ থেকে। তার বাবা কোন স্কুলে মাস্টারি করতো। চাচা জেঠু ফুপু কয়জন? তার দাদার বাড়ি কোথায়? নানার বাড়ি কোথায়? কবে তারা এই শহরে এসেছে? এইসব।

সুজানা একটু স্বাভাবিক হলো উনার সাথে কথা বলতে গিয়ে। জানতে চাইলে দাদুকে নিয়ে আসেননি কেন?

উনি বললেন

মায়ের শরীরটা খারাপ যাচ্ছে। তাছাড়া তানিয়াও বাচ্চা নিয়ে আসতে পারবেনা তাই দু’জনকে রেখে এসেছি।

আনিকা সাজিয়া বেগমকে নিয়ে আসলেন। তারপর আজীম সাহেব আর আহনাফ প্রবেশ করতেই পিনপতন নীরবতা নেমে এল। সুজানা উঠে গিয়ে সালাম করতেই উনি মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

অভিক ফারদিন তো ওই ঘরে ভীষণ অধৈর্য হয়ে পড়েছে। কেউ তাকে দেখাও দেয়না, তাকে দেখতেও আসেনা। কি এক জ্বালা!

সবাই একসাথে হেসে উঠলো। সুজানা লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিল।

আজীম সাহেব অভিককে উদ্দেশ্য করে ডাকলো

অভিক ফারদিন।

কেউ একজন অভিককে বলল,তার বাবা ডাকছে। সে ফোন থেকে মনোযোগ সরিয়ে ড্রয়িরুম পার করে এসে বলল

জ্বি বাবা।

এদিকে আসা যায়।

অভিক এল। তবে ঘরে সবাইকে দেখে বাইরে দাঁড়ালো। ওখান থেকে সুজানাকে খানিকটা দেখা গেল। সেই খানিকটা দেখার মাঝে দু’জনের দৃষ্টি বিনিময় হলো। অভিককে সেই চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী ভুরু নাচাতে দেখে সুজানা হাসলো।

অভিক মাথা নিচু করে ঘরের দরজা পার হয়ে ভেতরে এল।

আজীম সাহেব সাজিয়া বেগমকে বললেন

মশাইয়ের সাথে আপনার আলাপ হয়েছে?

অভিক বলল

আমাদের অনেকদিনের আলাপ।

সাজিয়া বেগম মৃদু হাসলেন।

বাহ তাহলে তো ব্যাপার স্যাপার বহুদূর এগিয়েছে।

অভিক মাথা দুলালো। সালমা বেগম ব্যাগ থেকে ছোট সাইজের লাল রঙা একটা বাক্স বের করে দিলেন আজীম সাহেবকে। উনি সেটি খুলে সাজিয়া বেগমকে বললেন

বাকি কথা এটার পরেই হোক।

সাজিয়া বেগম সম্মতি জানালেন নীরবে। আজীম সাহেব অভিককে রিংটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল

এই নাও বৎস।

অভিক রিংটি তুলে নিয়ে সুজানার দিকে তাকিয়ে আবারও ভুরু তুললো। সুজানা চোখ ফিরিয়ে নিল অন্যদিকে। জিনিয়া তাকে টেনে এনে অভিকের পাশে দাঁড় করালো। সিজানের ক্যামেরাটা নিয়ে এসে বলল

ওয়েট ওয়েট নানুকে তো ছবি দেখাতে হবে।

আনিকা এসে সুজানার আঙুলটা তুলে অভিকের হাতে তুলে দিয়ে বলল

ধর।

অভিক আঙুলটা আলতোকরে ধরে বিড়বিড় করে বলল

আঙুলের মানুষটা দরকার।

সুজানা কেঁপে কেঁপে উঠলো তার আলতো স্পর্শে ।
অভিক সেটা পড়িয়ে দিতে দিতে বলল

সুজানা আফরিদা তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে?

হুম।

কি আর করার? আপনিটাকে একলা একা দেখার ভীষণ তাড়া আমার।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here