অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৫৯।

0
451

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫৯।

রাতের খাবার খেতে বসেছে সবাই। টেবিলে সব নিজের পছন্দের খাবার দেখে দিলরুবা বেগম চমকালেন। বললেন,

‘তোর এখনো আবার প্রিয় খাবারগুলো মনে আছে?’

লুৎফা বেগম হেসে বললেন,

‘তোকে এবং তোকে ঘিরে সবকিছু আমি কখনো ভুলব না। এবার খেয়ে দেখ তো, রান্নাটা আগের মতোই পছন্দ হয় কি-না।’

লুৎফা বেগম বেশ যত্ন করে বান্ধবীর পাতে খাবার বেড়ে দিলেন। প্রিয়তাও বাকি সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। নীহাল তরকারির বাটিটা হাতে নিয়ে মৌমির সামনে দাঁড়ায়। বলে,

‘নিন, আমি বরং আপনাকে একটু বেড়ে বেড়ে খাওয়ায়। আমি আবার মেহমানদের বেশ যত্ন নেই।’

মৌমি ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বলল,

‘থাক, আপনার আর যত্ন নিতে হবে না। আমার জন্য প্রিয়তা আপু আছে।’

‘না না, আপনি হলেন আমাদের স্পেশাল মেহমান, তাই আপনার খাতিরদারির জন্য প্রিয়তার পাশাপাশি আমিও আছি।’

মৌমি সরু চোখে তাকায়। লোকটার হাবভাব মোটেও সুবিধার না। নীহাল মৌমির প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়। প্রিয়তা বলে,

‘ভাইয়া, তুমিও বসে যাও।’

দিলরুবা বেগম বললেন,

‘তোমরা সবাই বসে যাও। আমরা নিজেরা নিয়ে খেতে পারব।’

লুৎফা বেগম বললেন,

‘তোরা খা, আমি আর প্রিয়তা পরে খাব।’

‘কেন আন্টি, আমাদের সাথে বসে যান না।’

মৌমি বলল। পুনরায় প্রিয়তার দিকে চেয়ে বলল,

‘প্রিয়তা আপু, বসো না।’

প্রিয়তা বলল,

‘তুমি খাও। আমি একটু পর বসছি।’

লুৎফা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,

‘রান্না কেমন হয়েছে, রুবা?’

দিলরুবা বেগম ভরা মুখে বললেন,

‘বরাবরের মতোই অসাধারণ।’

জবাব পেয়ে লুৎফা বেগমের অন্তস্তল তৃপ্ত হয়। দিলরুবা বেগম লুৎফা বেগমের হাত টেনে বললেন,

‘তুই আমার পাশে বস তো। এতদিন পর দেখা, একসাথে খাব তা না বলে কি-না পরে খাবে। প্রিয়তা মা, তুমিও বসো তো।’

দিলরুবা বেগমের জোরাজুরিতে লুৎফা বেগম বসলেন। বসল প্রিয়তাও। একসাথে খেল সবাই। খাওয়ার মাঝেই নীহাল বারবার মৌমির প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। মৌমি একবার ভাত শেষ করতেই নীহাল তাকে আবার ভাত বেড়ে দেয়। প্রথমবার দেওয়ায় সেটা চুপচাপ খেয়ে নেয় মৌমি। আশ্চর্য! পরেরবার ঠিক একই ঘটনা ঘটে। মৌমির ঠিক বরাবরই নীহাল বসা। সে তার দিকে চেয়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘আমাকে কি আপনার রাক্ষস মনে হয়?’

নীহাল ঠোঁট চেপে হেসে বলে,

‘কী বলেন, আপনি রাক্ষস হবেন কেন? আপনি তো হবেন রাক্ষসী। জেন্ডারে ভুল করলে কী করে হবে?’

মৌমি গলা উঁচিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। ভাতগুলো নষ্ট হবে দেখে জোর করে খেয়ে নিল সে।

______________

বড়োরা বসার ঘরে গল্প করছে। নীহালের রুমে নীহাল, ফারজাদ, প্রিয়তা আর মৌমি। প্রিয়তা সবার জন্য কফি বানিয়ে এনেছে। নীহাল কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

‘তা ফারজাদ, আপনার পরবর্তিতে আর কোনো সমস্যা হয়নি তো?’

ফারজাদও কফিতে চুমুক বসাল। জিজ্ঞেস করল,

‘কী সমস্যা?’

‘ঐ যে আপনার কে ক্ষতি করতে চেয়েছিল।’

কফির কাপটা রাখল ফারজাদ। বলল,

‘আর বলবেন না সেই কথা। কী যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।’

প্রিয়তা উদ্বিগ্ন সুরে বলল,

‘কেন? জারা কি আবার কিছু করেছেন?’

‘আর কিছু করার বাকি রাখেননি উনি। সুই’সাইড করতে চেয়েছেন। এখন প্যারালাইজড হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।’

প্রিয়তা হকচকিয়ে উঠল। বলল,

‘কী? সুই’সাইড?’

ফারজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘জি।’

প্রিয়তা রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল। বুকটা ভারী হয়ে উঠল যেন। ভালোবাসার জন্য যে মানুষটা আত্মহ’ত্যার পথ বেছে নেয়, নিঃসন্দেহে সেই ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই।

ফারজাদ বলল,

‘হুজুর বলেছেন আমি এখন সম্পূর্ণ বিপদ মুক্ত। আর এও বলেছেন যে, আমার উপর যে জাদু করতে চেয়েছিল, সেই জাদুর প্রভাব না-কি এখন তার উপরেই পড়েছে।’

প্রিয়তা অবাক হয়ে বলল,

‘তাহলে কি এটার প্রভাবেই জারা এমন একটা কাজ করেছেন?’

ফারজাদ জবাবে বলল,

‘আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। জারা নিজ মুখে স্বীকার করা না অবধি তো আমি উনার উপর কোনোকিছুর দোষ চাপিয়ে দিতে পারি না।’

নীহাল বলল,

‘তবে আমার মনে হয়, জারা মেয়েটা মোটেও সুবিধার না। উনার মতো মেয়েদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।’

ফারজাদও সম্মতি জানাল এতে। মৌমি ঠোঁট উল্টে বলল,

‘এই এসব কথা রেখে ভালো কিছু বলো না।’

নীহাল বলল,

‘ভালো কিছু।’

মৌমি ভ্রু কুঁচকে বলল,

‘কী?’

‘আপনি না বললেন ভালো কিছু বলতে, তাই বলেছি, “ভালো কিছু”।’

মৌমি নাক ফুলিয়ে প্রিয়তার দিকে চেয়ে বলল,

‘এই প্রিয়তা আপু, এই লোকটাকে তোমার মা বাবা কোথ থেকে পেয়ে এনেছে বলোতো? উনি তোমার আপন ভাই হতেই পারে না।’

প্রিয়তা আর ফারজাদ হাসে তার কথা শুনে। নীহাল কফির কাপে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,

‘আপনাকে যেখান থেকে এনেছে আমাকেও সেখান থেকেই এনেছিল। আমরা একই জায়গায় বাসিন্দা ছিলাম।’

‘মোটেও না। আমাকে আমার আম্মি পেয়ে আনিনি। আমি আমার আম্মির নিজের মেয়ে। আপনাকে বোধ হয় রাস্তা থেকে কুঁড়িয়ে এনেছে।’

ফারজাদ এবার ক্ষীণ ধমকের সুরে বলল,

‘আহা মৌমি, কী শুরু করলি।’

নীহাল বলল,

‘থাক ফারজাদ, উনাকে কিছু বলবেন না। আমি ছোট বাচ্চাদের কথা এত ধরি না।’

‘কে বাচ্চা?’

গর্জে উঠল মৌমি। নীহাল হাসল কেবল, জবাব দিল না।প্রিয়তা বলল,

‘থাক তোমরা আর কেউ ঝগড়া করো না। তার চেয়ে বরং কোথায় কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়, সেই প্ল্যান করা যাক।’

মৌমিকে এবার উচ্ছ্বসিত হতে দেখা গেল। আগ্রহ সমেত বলল,

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি বলেছিলে আপু বাংলাদেশ ঘুরে দেখাবে, এবার দেখাতে হবে কিন্তু।’

প্রিয়তা হেসে বলল,

‘অবশ্যই।’

___________

সব শুনে লুৎফা বেগম বললেন,

‘এতকিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে কিচ্ছু জানালি না? আমার সাথে তো অন্তত একটু যোগাযোগ করতে পারতি।’

দিলরুবা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘অযথা আমার জন্য তোকে সমস্যাই ফেলতে চাইনি। আর সেসব কথা এখন আর আমি ভাবিও না। ছেলে মেয়েকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন ভীষণ ভালো আছি।’

‘মাশাল্লাহ, তোর ছেলেমেয়েগুলো ভালো শিক্ষায় বড়ো হয়েছে। দোয়া করি, তারা যেন আজীবন তোর ঢাল হয়ে থাকে।’

দিলরুবা বেগম এগিয়ে এসে লুৎফা বেগমের হাত ধরলেন। ইতস্তত সুরে বললেন,

‘আমার আরো একটা ঢাল লাগবে, লুৎফা।’

লুৎফা বেগম বুঝতে পারলেন না। বললেন,

‘আরো একটা মানে?’

‘আমার কোনো আবদার কোনোদিন তুই ফেলিসনি। আজও আমি একটা জিনিস চাইব, ওয়াদা কর দিবি।’

‘কী জিনিস?’

‘আগে বল, দিবি।’

‘আচ্ছা দিব। বল।’

‘ভাইজান, আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না তো?’

অলিউল সাহেব মৃদু হেসে বললেন,

‘আমাদের সামর্থ্যের ভেতরে হলে অবশ্যই আপনাকে খালি হাতে ফেরাব না।’

কিছুটা সাহস সঞ্চয় করলেন মনে। ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেললেন। তারপর তাকালেন লুৎফা বেগমের দিকে। বললেন,

‘তোর মেয়েটাকে আমায় দিবি?’

লুৎফা বেগম হকচকালেন। পলকহীন চোখে চেয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন কথাটার অর্থ। দিলরুবা বেগম নিজ থেকেই ফের বললেন,

‘আমার ছেলেটাকে সামলানোর জন্য তোর মেয়েকে আমার খুব প্রয়োজন, লুৎফা। আমাকে ফিরিয়ে দিস না, দয়া করে।’

লুৎফা বেগম নির্বাক হয়ে স্বামীর দিকে চাইলেন। অলিউল সাহেবও একই রকম অবাক হয়ে চেয়ে আছেন। দিলরুবা বেগম যে এমন কিছু চাইবেন তিনি সেটা আশা করেননি। তাঁদের দুজনকে নীরব দেখে ঘাবড়ালেন দিলরুবা বেগম। তবে কি তাকে খালি হাতেই ফিরতে হবে?

চলবে….

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here