মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৩)

0
323

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৩)

আমিরাকে কাছে টেনে বসিয়ে দিল সায়রা। গালে স্পর্শ করে বলল,”কাঁদছি না তো।”

“মিথ্যে,আমি স্পষ্ট দেখেছি।”

“ভুল দেখেছিস।”

কথাটি বলেই সায়রা মুখ ঘুরিয়ে নিল। যেন ব্যথা লুকানোর চেষ্টা। ও দুঃখের সময় কারো চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারে না। কেঁদে ফেলে। আমিরা ও চুপ রইল। তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। ও শুনেছিল, যারা ম রে যায় তারা আকাশের তারা হয়ে যায়। এটা মা বলত। সেটি মনে পড়ে গেল হঠাৎ। আকাশে আজ অনেক বেশি তারা দেখা যাচ্ছে। ওর মনে প্রশ্ন জাগে। এত তারার মাঝে মা কোনটা? আনমনেই ভাবতে বসে গেল আমিরা। ও আসলেই বুঝতে পারছে না মা কোনটা। হুট করেই ওর মৌনতা, মুখের কালো আঁধার সায়রার নজরে এল। সায়রা ওকে জাপটে ধরে শুধাল,”কী ভাবছিস?”

“ভাবছি, মা কোনটা। এত তারার মাঝে মা কোনটা মিমি? আমি তো বুঝতে পারছি না।”

সায়রার বুক ভে ঙে আসে। ও নিজেও এই ধরনের কথায় বিশ্বাস করে। আসলে ঠিক বিশ্বাস নয়, বরং ভাবতে ভালো লাগে। মনে হয় মানুষ গুলো আসলেই সার্বক্ষণিক সঙ্গে আছে। বেশ কিছু সময় পর সায়রার থেকে জবাব এল,”শোন, আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল যে তারা সেটাই হলো তোর মা।”

আমিরার ঠোঁটের কোণ একুটখানি প্রসারিত হলো। ওর ছোট্ট মস্তিষ্ক যেন তৃপ্ততায় মেখে আছে। এদিকে সায়রার হৃদয় ছটফট করছে। জীবন তাকে কি এক পরীক্ষায় ফেলে দিল!

টিউশনির প্রথম দিন। সায়রা নিজের পড়ানো নিয়ে সবসময় তৃপ্ত। ও নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। তাই কখনো চিন্তা হয় না। রনু নাশতা দিয়ে বেশ কিছু সময় পর ছেলেকে সাথে নিয়ে ফিরল। ছেলেটার স্বাস্থ্য ভালো। চোখে চশমা লাগানো। বয়সে আমিরার থেকে কিছু ছোট হবে। ক্লাসেও ছোট। থ্রি তে পড়ে। সায়রা হাত নাড়িয়ে বলল,”তোমার নাম কী বাবু?”

ছেলেটা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। কোনো উত্তর দিল না। সায়রা পুনরায় জিজ্ঞাসা করে ও কোনো উত্তর পেল না। রনুর চোখে মুখে অস্বস্তি।

“আসলে তোমাকে বলা হয় নি, ও কিছুটা স্পেশাল চাইল্ড।”

এ কথা বলেই রনু কেমন অস্বস্তিতে ভে ঙে পড়ল। সেটা দেখে সায়রার একটু খারাপ লাগল। তবে মুহূর্তেই ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে বলল,”এটা কোনো সমস্যা না আপু। আমি চেষ্টা করব সর্বোচ্চ।”

রনুর যেন বুকের পাথর নেমে এল। স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য স্পেশাল স্কুল আছে। টিউটর আছে। তবে রনুর হাসবেন্ডের এই ব্যাপারে ভীষণ অমত। সে জানে তার ছেলের সমস্যাটা অনেক বেশি না। ডাক্তার ও বলেছে মানুষ জনের সাথে একটু বেশি মিশলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে সমস্যাটি হচ্ছিল স্কুল আর টিউটর নিয়ে। বাচ্চাটি স্পেশাল চাইল্ড শুনেই অনেকে নাকোচ করে দিচ্ছিল। যারা ও পড়াতে আসে এক দুই মাস পড়িয়েই চলে যায়। সব মিলিয়ে ভীষণ চিন্তায় যাচ্ছিল। তখনই বান্ধবীর থেকে সায়রার খোঁজ মিলে। সায়রা ও তো প্রথমবার নাকোচ করে দিয়েছিল। যখন নিজ থেকে আসল তখন উত্তেজনায় কথাটি আর বলা হয় নি।

আরহামকে পড়াতে সায়রার আসলেই কষ্ট হচ্ছে। ছেলেটা কোনো কথাই বলতে চায় না। আধা ঘন্টা চেষ্টা করে ওর মুখ থেকে নামটি বলাতে পেরেছে সায়রা। সবশেষে দু একটা শব্দ বলেছে। তবে ভে ঙে ভে ঙে। বাচ্চাটির মুখেও বেশ জড়তা। এর কারণ হতে পারে মানুষের সাথে না মেশা। রনুর থেকে জেনেছে কোনো সুস্থ বাচ্চাই আরহামের সাথে মিশতে চায় না। বাচ্চার মায়েরা চোখ মুখ আঁধার করে রাখে। আড়ালে আলোচনা সমালোচনা করে। তাদের মতে একটি বাচ্চার কারণে স্কুল নষ্ট হয়ে যাবে। কি এক আশ্চর্য ভাবনা! সবটা ভাবতেই সায়রার মন খারাপ হয়ে যায়। দরজা খুলে বের হতেই একদল ছেলের দেখা মিলল। সবার হাতে মিউজিকের নানান সরঞ্জাম। এত গুলো ছেলে দেখে থেমে রইল ও। সামনে গেল না আর। তবে ছেলে গুলো সরছেই না। তারা কথা বলছে নিজেদের মাঝে। তাদের একজন কাউকে একটা কল করে বলছে,”অনুভব তুই সব সময় এমন কেন করিস? আমরা কত সময় ধরে অপেক্ষা করছি। কোথায় তুই?”

ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি কি বলল সায়রা জানে না। তবে এপাশে থাকা ছেলেটা এবার একটু নরম সুরে বলল,”প্লিজ দ্রুত আয়।”

তারপর দু মিনিটের মতন সময় পার হলো। সায়রা ঠায় দাঁড়িয়ে। ছেলে গুলো লিফ্টের সামনে এসেই ভীড় করেছে। এত গুলো ছেলের মাঝে যেতে ইচ্ছা করছে না ওর। কিংবা অস্বস্তি হচ্ছে। ও করিডোরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আরো কিছু সময় পর একটি কণ্ঠ শোনা গেল,”সরি দোস্ত। তোরা শুরু করে দিতেই পারতি।”

“ফর ইউর কাইন্ড ইনফর্মেশন চিলেকোঠার চাবি তুই সাথে নিয়ে গেছিস।”

কথাটা বলতেই অনুভব নামের ছেলেটা হাসল। লম্বা চুল গুলো হাতের সাহায্যে নাড়িয়ে বলল,”উফস, মনে ছিল না। এই নে।”

পকেট থেকে চাবি বের করে বন্ধুদের দিকে ছুড়ে দিল। তারপরই এপাশে তাকাল অনুভব। সায়রার সাথে চোখাচোখি হলো ওর। একটা অস্বস্তি এসে ভর করল মেয়েটিকে। অনুভবের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল ওর বন্ধুরাও। তবে সায়রা দ্রুত সরে যাওয়ায় অনুভব ছাড়া আর কেউ ই দেখল না মেয়েটিকে।

পর পর দুটো টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরল সায়রা। হাতে তার জিনিসপত্র। সব জিনিসপত্র নামিয়ে জুথিকে ডাকল।

“ভাবি, এগুলো একটু রেখে দাও তো।”

জুথি এল কিছু সময় পর। জিনিসপত্র গুলো দেখতে দেখতে বলল,”হরলিক্স কেন এনেছিস? লিস্টে তো এটা ছিল না। দাম দেখি, ৬৫০ টাকা!”

“আমার টাকা দিয়েই এনেছি।”

কথাটি বলতেই জুথির মুখে কিছুটা আঁধার ছেয়ে গেল। সে একটু আলগা সুরে বলল,”তুই কথাটা অন্যভাবে নিলি। আমি শুধু এমনিই জিজ্ঞাসা করেছি।”

সায়রা জানে জুথি কোন ভাবে বলেছে। কারণ আমিরা ছাড়া আর কেউ হরলিক্স খায় না। কোথায় কি খরচ হয়,এক একটা পয়সার হিসেব রাখে জুথি। অথচ সংসার চলে বাবার টাকাতেই। সত্যি বলতে সায়রার ইচ্ছা করে না তর্ক করতে। ও বিষয়টা এড়াতে বলল,”মাহিম আর জুঁই ফিরেছে?”

“হ্যাঁ। গোসল করছে।”

“ঠিক আছে। আমি ও তাহলে গোসল করে নিই। বুয়া কে বলো তো একটু আদা চা করে রাখতে। মাথাটা ভীষণ ধরেছে।”

কথা শেষ করে নিজের ঘরে এল সায়রা। আজ সে ফোন রেখে গিয়েছিল। সে কি এক কান্ড! ও দ্রুত ফোন চেইক করল। এক আকাশ সম আশা নিয়ে। তবে দেখল কোনো ম্যাসেজ বা কল আসে নি। ও হতাশ হলো। গোসল শেষ করে মাহিম আর জুঁইকে নিয়ে বসল।

“শোন তোরা। এটা খুবই সিক্রেট। আগে থেকে কেউ যেন না জানে।”

কথাটা বলতেই জুঁই আর মাহিমের মুখের উচ্ছ্বাস ভেসে এল। পিপির সাথে এ ধরনের রোমাঞ্চকর আলোচনায় ভীষণ আগ্রহ ওদের। সায়রা আশেপাশে দেখে বলল,”পরশু আমিরার জন্মদিন। আমরা ওকে ঠিক বারোটার সময় উইশ করব। আর কেক কাটিং ও করব।”

মাহিম আর জুঁই মাথা দোলাল। সায়রা আবার বলল,”মাহিম তোর দায়িত্ব কেক নিয়ে আসা। আর জুঁই তুই সাজানোর কাজ করবি। আমি আমিরাকে ঘরে রাখার ব্যবস্থা করব।”

“ঠিক আছে পিপি।”

তারপর ওরা হিসেব করতে বসল। অল্পবিস্তর সাজিয়ে একটা কেক আনতে গেলেও দুই হাজার টাকার মতন খরচ হবে। সায়রা টাকা দিয়ে বলল,”ভাইয়া আর ভাবিকেও বলার দরকার নেই। না হলে সব সারপ্রাইজ শেষ করে দিবে।”

সায়রা আরো কিছু বলতে নিচ্ছিল তখনই ওর মোবাইলটা বেজে ওঠল। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠল যেন। সায়রা চটপট ফোন হাতে নিল। হতাশ হলো। সাঈদ কল করে নি। কল করেছে ওর বান্ধবী অর্পা। অথচ বোকা সে ভেবেছিল মানুষটা বুঝি কল করেছে।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

| প্রিয় পাঠক, সবাই রেসপন্স করুন। আর পেজে ফলো দিয়ে রাখুন। |

পর্ব (৪)
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/396132019614365/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here