সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️ #পর্বসংখ্যা-(১০)

0
290

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(১০)
_______________________________

আচমকা মারইয়াম ইউজিওয়েল পুত্রের সামনে এসে দাঁড়ালেন। আরমান চমকালো। কঠোর গলায় বললেন,”এইসব কাহিনী করার জন্য তুমি বিয়ে করেছো তাই না?”

“আম্মিজান,আপনি আবার এইসবের মধ্যে কথা বাড়াতে এলেন কেন?”

“বাড়াবো না মানে?পেয়েছোটা কি তুমি?”

“মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে আম্মিজান।”

চোয়াল শক্ত করলেন তিনি।

“তোমাকে আগেই বলেছিলাম,লিয়ানাকে বিয়ে করো। ও তোমাকে বিয়ে করে মুসলিম হতে চায়। তোমার কথা মান্য করবে বলেছে। ঠিক যেমনটা তুমি চাও তেমনভাবেই চলাফেরা করবে বলেছে। তুমি বিয়ে করবে না। কারণ তার চারিত্রিক সমস্যা! দ্যাট’স ওকে। এরপর বিয়ে ঠিক করলাম আর্সেলের সাথে। ও তো খুবই ধার্মিক মেয়ে। তোমাকে ভালোবাসে ছোটবেলা থেকেই। এছাড়াও তুমি ঠিক যেমন মেয়ে চাও আর্সেল ও ঠিক তেমনটাই। সব গুণ ওর মধ্যে রয়েছে। তাও তুমি শুনোনি। বাংলাদেশ গিয়েছো,ভীনদেশী হয়েও দাদীমার পছন্দে বাঙালি মেয়ে বিয়ে করেছো। এখন আবার এইসব ঝামেলা কেন করছো বিয়ের মাস না পেরুতেই?যেখানে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি,ননদ,দেবর,ভাসুরেরা সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করে ; সেখানে স্বামী হয়ে তুমি করছো?”

কিছু বলতে পারলো না আরমান।

“তোমার ভালোর জন্যই আর্সেলকে নিয়ে এলাম। তুমি গুরুত্ব দিলে না। আমি আর্সেলকে কালই পাঠিয়ে দেবো মিশরে। অহেতুক আমি কেন শত্রু হবো তোমার জন্য? তোমারটা এখন থেকে তুমি বুঝে নিবে যেহেতু তুমি চাও না তোমার জীবন নিয়ে আমি ইন্টারফেয়ার করি। কারণ এখন তুমি বড় হয়ে গেছো। এখন আর তোমার বাবা-মায়ের প্রয়োজন নেই। আর এতো রাগ কিসের তোমার? কথায় কথায় কিসের রাগ দেখাও তুমি? তুমি না রাসূল (সা.) কে ফলো করো? তাহলে তিনি তো এমন ছিলেন না! তিনি তো খুবই বিনয়ী এবং কোমল ছিলেন। সন্তানের ভালোর জন্য বাবা-মা সব করতে পারে। তেমনি আমিও। তুমি তো আমার পদে পদে ভুল বুঝেছো। শোনো ভয়,কঠোরতা এবং চুক্তি দিয়ে কখনো সংসার এবং ভালবাসা হয় না। কাছের মানুষকে এমনভাবে ট্রিট করো না যেন সে তোমাকে ভয় পাওয়া শুরু করে। অতিরিক্ত রাগী,অতিরিক্ত ডমিনেটিং এবং অতিরিক্ত এটেনশন চাওয়া মানুষ ভালবাসা পায় না। বোকা হওয়ার কারনে অনেক সময় সে বুঝে না যে কাছের মানুষটিকে সে হারিয়ে ফেলেছে। এরপর যা রয়ে যায় তার নাম মানিয়ে নেয়া ভালবাসা নয়। ভালবাসা পাওয়ার জন্য স্পেস দিতে হয়,ট্রাস্ট করতে হয়। সেলফিশ টু মাচ পসেসিভ এবং শুধু নিজেরটা বোঝা মানুষরা ভালবাসা পায় না। সংসারে প্রকৃত সুখ ঠিক তখনই উপভোগ করা যায়,যখন জীবনসঙ্গীর আচরণ হয় বন্ধুসূলভ এবং সাপোর্টেড মাইন্ডের! দাম্পত্য জীবন সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে পুরোটাই নির্ভর করে জীবন সঙ্গীর আচরণ এবং ব্যবহার। সঙ্গীর প্রতি যে মানুষটার আচরণ হয় বন্ধুসূলভ,সেই মানুষটার কাছেই শান্তি এবং সুখ মিলে। সাধারণত এ ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি পুরুষদের একটু সদয় হওয়া উচিত।কেননা নারীরা বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতেই সারাজীবন থাকে! এখন শ্বশুরবাড়ির অন্য সবার ভালোবাসা যেমন একজন নারীর জন্য প্রয়োজন,ঠিক তার থেকে বেশি প্রয়োজন তার হাজব্যন্ডের সাপোর্ট এবং আন্তরিকতা। কেননা একজন নারী স্বামীর পরিচয়েই শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় পায়,স্বামীর পরিচয়েই সে আমৃত্যু শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করে। স্বামী যদি সাপোর্টেড মাইন্ডের হয়,স্বামীর যদি বন্ধুসুলভ আচরণ থাকে,তবে সেই নারীর শ্বশুর বাড়ির আর কোনো সুখ লাগে বলে আমার মনে হয় না। আর যে স্বামী আচরণ তার স্ত্রী’র প্রতি বন্ধুসুলভ এবং আন্তরিক,সেই স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ও সদয় হতে হয়। স্বামীর চাওয়া পাওয়া,পছন্দ,ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিতে হয়। পরস্পরের মন খারাপে কিংবা বিষন্নতা কিংবা হতাশায় পরস্পরকেই মানসিক সাপোর্ট দিতে হয়,সাহস দিতে হয়। পরস্পর পরস্পরের প্রতি এমন যত্নশীল না হলে,একতরফা কোনো স্যাক্রিফাইস কিংবা অন্য কোনো কিছুতেই দাম্পত্য জীবন সুখী করা যায় না! তবে দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি,একজন যত্নশীল আচরণের জীবনসঙ্গী পাওয়া নিতান্তই ভাগ্যের ব্যপার! আর একজন যত্নশীল আচরণের মানুষই পারে সম্পর্ক এবং সম্পর্কের মানুষটার প্রতি যথেষ্ট যত্নবান হতে! তবে এমন যত্নশীল আচরণের সঙ্গী পেলে অবশ্যই তার প্রতিও যত্নশীল হতে হয়,তবেই দাম্পত্য জীবন সুখের হয়। তবে হিতের বিপরীত ঘটলে সংসারে কেবল অশান্তিই বাড়ে,একতরফা স্যাক্রিফাইজ আর মানিয়ে নিতে নিতে দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠে নরকের ন্যায়! সংসার হল সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদের জায়গা,যখন ধর্মীয়ভাবে বিয়ের মাধ্যমে আলাদা আলাদা মানুষ একত্রিত হয় তখন তাদের মাঝে সমস্ত দূরত্ব কমিয়ে একজন আরেকজনের সঙ্গী হয়ে ওঠা বিশাল একটা ব্যাপার। এটা অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার একটা আশীর্বাদ।”

রাগে দপদপ করছে আরমানের উত্তপ্ত মস্তিষ্ক। মায়ের কোন কথায়-ই শুনতে ইচ্ছে করছে না। প্রভাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে তুললো।

“দেখেছো মারইয়াম,তোমার ছেলে কতোটা ঘাড়ত্যাঁড়া হয়েছে! এইসব কি শিক্ষা দিলে তুমি?”

হতাশ শ্বাস ফেললেন তিনি। ছোট থেকেই ছেলেটা মারাত্মক রাগী! বিয়ে করার পর থেকে আরো বেশি। চিন্তায় মাথা ব্যথা শুরু হলো ওনার।

(৪২)
বেশকয়েক ঘন্টা ড্রাইভ করার পর গাড়ির ব্রেক কষলো আরমান। ওরা কলারোডো আরমানের বাংলোতে পৌঁছালো। গাড়ি থেকে নেমে প্রভার হাত ধরে টেনে বাড়ির মধ্যে ঢুকলো। বাড়ির দোতলায় আসতেই আরমান চাবি দিয়ে বাসার ডোর ওপেন করলো। ফের প্রভার হাত ধরে বাসার ভেতরে ঢুকে একটি বেডরুমে নিয়ে প্রভাকে ছুঁড়ে মা’র’লো। হতভম্ব হলো প্রভা। আসার পথে মানুষটা একটা কথাও বলেনি। সারা মুখ টকটকে লাল বর্ণ হয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে ভালোই মেজাজ খারাপ! প্রভাকে তুলে চোয়াল চেপে ধরে বলল,”আপনার সাহস তো কম নয়! আমার পারমিশন ব্যতীত পরপুরুষের সামনে এসেছেন তাও আবার লাল টুকটুকে শাড়ি পরে। হাউ ডেয়ার ইউ!”

গর্জে উঠলো আরমান। মানুষটার ভয়ংকর চোখ-মুখ দেখতেই প্রভার গলা শুকিয়ে গেলো।

“বলুন কেন গেলেন ওদের সামনে?”

কম্পিত গলায় বলল,”দা..দাদীমা বলেছিলো।”

“দাদীমা বলেছিলো আর আপনিও ড্যাং ড্যাং করে ওদের সামনে এসে বসে রয়েছেন তাই না?”

কি মহাজ্বলায় পড়লো প্রভা! যা-ই করছে সবকিছুতেই মানুষটা দোষ ধরছে! এটা করলেও দোষ! ওটা করলেও দোষ! সে করবেটা কি? যাবেটা কোথায়?কেন যে বিয়ে হলো এমন মানুষের সাথে? বাঁচার সাধ ম’রে গেলো প্রভার। এরচেয়ে তখন ম’রে যেতো ভালোই হতো। র-য়ে র-য়ে এতো কৈয়িপত দিতে হতো না।

“আপনার নাম জানে কিভাবে ওরা?”

এবার প্রভার মাটির তলে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে! এতো খুঁত কেন ধরে মানুষটা?

“নাম জানলে কি হয়েছে?”

সাহস করে বললো প্রভা।

“জানলে মানে?”

চোয়ালে চাপ দিলো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো প্রভা।

“প্রত্যেক পুরুষের অহংকার তার স্ত্রী! তার গর্ব! তাহলে আমার স্ত্রীর নাম বেগানা পরপুরুষেরা কেন জানবে?কেন আপনার নাম ধরবে?কেনো আমার স্ত্রীকে পরপুরুষেরা দেখবে?”

এখন কি বলবে প্রভা? সব তো দাদীমা করলো। আরমানকে ভয়ংকর লাগছে! তাকে নির্জন কোথায় এনে এমন শাঁসাচ্ছে! এখন যদি মে’রে ফেলে তাহলে প্রভা কি করবে?মে’রে ফেলার কথা ভাবতেই বোকা প্রভা এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। প্রভাকে ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো আরমান। কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো হুট করে। যাওয়ার পূর্বে মেইন ডোরে লক করে গেলো। আরমান যেতেই প্রভা ডোর খোলার জন্য বারকয়েক চেঁচামেচি করলো কিন্তু লাভ হলো না। মানুষটা চলে গেছে। এতো বড় নির্জন বাসায় ভয় পেয়ে প্রভা সত্যি সত্যিই কাঁদতে লাগলো। মনে হচ্ছে ভূত আসছে! প্রভা আবার জ্বীন-ভূতে ভীষণ ভয় পায়! এলোমেলো পায়ে প্রভা সারা বাসায় ঘুরলো। বের হওয়ার সিস্টেম নেই। মেইন ডোরেই তালা। প্রভার শ্বাস আঁটকে এলো। সে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আচমকা একরাশ হিমেল হাওয়া তার সারা শরীর নাড়িয়ে দিলো। ব্যালকনির বাইরে তাকাতেই দেখলো বিস্তর সবুজ একটা মাঠ। নরম ঘাসে ভরা। মাঠের মধ্যে সারি সারি ম্যাপেল,চেরিব্লসম সহ নানান অজানা-অচেনা গাছ। যেটা প্রভা জীবনেও দেখেনি। হঠাৎ তিনটে হরিণ বেরিয়ে এসে ঘাস খেতে লাগলো। প্রভার খুব ভালো লাগলো। সব ভুলে প্রভা হরিণগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। আচমকা বেশ কয়েকটা র‍্যাবিট এসেও হরিণগুলোর সাথে ঘাস খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। প্রভার ভীষণ আদুরে লাগলো। আশেপাশে তাকাতেই দেখলো খানিকটা দূরে অরণ্য রয়েছে। তারপাশ দিয়ে একটি লেক বয়ে গেছে। লেকের থেকে বেশদূরে দুধসাদা বরফ পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের গা বেয়ে জলপ্রপাতের ন্যায় বরফগলা পানিগুলো লেকের মধ্যে এসে মিশছে। প্রভা বিস্মিত হলো। টাউন ছেড়ে আরমান তাকে এ কোথায় নিয়ে এলো? গ্রামীণ গ্রামীণ লাগছে সবকিছু! অজস্র পাখপাখালি কিচির-মিচির শোনা যাচ্ছে। তবে প্রভার ভালো লাগছে। ব্যালকনিতে মাত্রাতিরিক্ত রোদ পড়তেই প্রভা কামরায় ফিরে এলো। বেডের উপর শুয়ে রইলো হাত-পা ছুঁড়ে। এর ঘন্টা দুয়েক পর হঠাৎ ডোর খোলার শব্দ হতেই প্রভা উঠে এগিয়ে এলো। ভাবলো আরমান এসেছে। জিজ্ঞেস করবে তাকে কেন এখানে নিয়ে এলো। কিন্তু আরমানকে দেখতে পেলো না। বরং একজন লোক বেশকয়েকটি প্যাকেট ড্রাইনিং টেবিলের উপর রেখে বিনাবাক্য ব্যয়ে চলে গেলো প্রভা কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই। প্রভা ধরলো না। শুধু তাকিয়ে রইলো। দেখে বুঝতে পারলো এগুলো খাবারের প্যাকেট। নিশ্চয়ই মানুষটা পাঠিয়েছে। প্রভার অবশ্য ভীষণ খিদে পেয়েছে। তবে জিদ করে খেলো না। কামরায় ফিরে শুয়ে পড়তেই অভিমানে দু-চোখ ভরে উঠলো জলে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে দু-চোখ ভেঙে এলো। রাজ্যের ঘুম এসে প্রভার চোখে ভীড় করলো।

(৪৩)
রাত বাজে প্রায় এগোরোটা। সবে ফিরলো আরমান। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখলো প্রভা ঘুমিয়ে আছে। চোখ পড়লো খাবারের প্যাকেটগুলোর উপর। যেভাবে পাঠিয়েছে ঠিক সেভাবেই রয়েছে। তপ্তশ্বাস ফেলে ফ্রেশ হয়ে বেডের উপর বসলো। নয়ন জুড়িয়ে প্রভাকে দেখতে লাগলো। চাঁদের মতো গোলগাল মুখটা থেকে যেন চাঁদের আলোর মতোই জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে! জাগাতে মন চাইলো না। তবুও জাগাতে হবে। কারণ না খেয়ে ঘুমাচ্ছে প্রভা।

“এ্যাই মেয়ে! এ্যাই! উঠুন!”

আরমানের ডাক শুনতেই ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো প্রভা।

“রিল্যাক্স! কিছু হয়নি।”

“আমাকে একা রেখে কোথায় গেলেন আপনি?”

“পাঁচ মিনিটের মধ্যে দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন। কুইক।”

মানুষটার যে গলা প্রভা আঁতকে উঠে বিনাবাক্য ব্যয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।

“ডিনার করবেন আসুন। লাঞ্চ করেননি কেন?”

মৌন রইলো প্রভা। কিছু বললেই তো ক্ষেপে যাবে। দু’জনে ডিনার করে নিলো। ততক্ষণে অনেক রাত গড়ালো। দু’জনে শুয়ে পড়লো। আরমান চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। অসময়ে ঘুমানোর ফলে প্রভার ঘুম আসছে না। উশখুশ করছে। এই নির্জন বাড়িতে তাকে নিয়ে আসার মানে কি! আচ্ছা তাকে কি মে’রে ফেলবে! আজেবাজে চিন্তা করতে লাগলো প্রভা। নীরবতা ভেঙে বলল,”এখানে কেন নিয়ে এলেন?”

“ইচ্ছে হয়েছে।”

“কেন ইচ্ছে হয়েছে?”

“কোন কুয়েশ্চন নয়। ঘুমান।”

মনটা মলিন হয়ে গেলো প্রভার। খুব শীত পড়েছে। ব্ল্যাঙ্কেটের নিচে প্রভাকে বুকে টেনে নিলো আরমান। প্রভা জমে গেলো। আচমকা বলল,”আপনার সাথে ছোট্ট একটা টোনাটুনির সংসার সাজাবো এই নির্জন বাংলোতে তাই।”

আগ্রহী হয়ে মিনমিন করে প্রভা বলল,”সেটা তো ও-ই বাসায় ও করা যেতো।”

“যেতো না।”

“কেন যাবে না? বাঙালি মেয়েরা শ্বশুর-শ্বাশুড়ী,স্বামী-সন্তান,ননদ-দেবর-ভাসুর সবাইকে নিয়ে সংসার করে। সবার খেদমত করে। তাহলে আপনি কেন এখানে একা একা সংসার সাজাবেন?”

“ইচ্ছে হয়েছে তাই।”

“আপনার আম্মিজান যথেষ্ট ভালো মানুষ। পুত্রবধূ হিসেবে ওনার পাশে থাকা,ওনার খেদমত এবং ওনার সেবাশুশ্রূষা করা আমার একান্ত দায়িত্ব এবং কর্তব্য।”

“সেইসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আমার মায়ের সেবাশুশ্রূষা করার জন্য যথেষ্ট লোক আছে। ওনার সন্তান হিসেবে আমি আছি। আপনি বরং আমাকে নিয়ে ভাবুন কিভাবে আমাকে সুখী করবেন এবং এটাই আপনার প্রধান কাজ।”

“আপনাকে নিয়ে তো অবশ্যই ভাববো। তবে বাঙালি মেয়েরা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা-যত্ন করতে বাধ্য। আর আপনি সবার থেকে দূরে থাকলে সবাই ভাববে বিয়ে হতে না হতেই আমি আপনাকে আলাদা করে ফেলেছি! চলুন মহলে ফিরে যাই।”

“ওয়েট! ওয়েট! একটু আগে কি বললেন আপনি?”

“পুত্রবধূ শ্বশুর-শ্বশুড়ীর সেবা করতে বাধ্য!”

“মানে?”

“বাধ্যই তো! আমাদের দেশের সবাই তো শ্বশুর-শ্বাশুড়ির কিংবা শ্বশুরবাড়ির সকলের খেদমত করে বিনাস্বার্থে তাদের জীবন পার করে দেয়।”

“কোনো নারী তার স্বামী এবং তার বাবা-মা ব্যতীত অন্য কারো সেবাশুশ্রূষা করতে বাধ্য নয়। এবার সেটা শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কিংবা শ্বশুরবাড়ির যেকোনো সদস্য হোক না কেন!”

“এইসব কি বলছেন আপনি?”

লম্বা একটা শ্বাস ফেলে আরমান বলল,”আজ আপনাকে একটা বিষয় নিয়ে বলবো।”

“কি সেটা?”

“ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীর জন্য কি শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করা বাধ্যতামূলক?”

উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,”আসলেই কি তাই?”

“ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রী তার স্বামীর বাবা-মা,ভাই-বোন ইত্যাদি কারও সেবা করতে বাধ্য নয়।”

“কি বলছেন এইসব! যুগ যুগ ধরে তো আমাদের দেশে এমন নিয়ম মেনে আসছে সবাই। আর এমনটাই হচ্ছে।”

“মন দিয়ে শুনুন।”

আগ্রহী হয়ে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো প্রভা।

“শ্বশুর-শ্বাশুড়ি (অর্থাৎ স্বামীর বাবা-মা) এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ইত্যাদির কারও সেবা করতে বাধ্য নয় একজন নারী। তবে শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করা একদিকে যেমন স্বামীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ অন্যদিকে নেকির কাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কোন স্ত্রী যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বা তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খিদমত করে তবে আল্লাহ তাকে আখিরাতে পুরষ্কার প্রদান করবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে যে যত বেশি মানুষের উপকার করবে সে তত বেশি উত্তম। বিশেষ করে যখন রোগ-ব্যাধি শারীরিক অক্ষমতা,বয়োঃবৃদ্ধ হওয়া ইত্যাদি কারণে শশুর-শ্বাশুড়ির প্রতি যত্ন নেওয়ার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন কারণে মানুষ একে অন্যের সেবা কিংবা সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হয়। এক্ষেত্রে স্বামীদেরও উচিত,আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তার শ্বশুর-শ্বাশুড়িদের (অর্থাৎ স্ত্রীর বাবা-মায়ের) প্রতি যথাসম্ভব সুদৃষ্টি রাখা এবং প্রয়োজন দেখা দিলে যথাসম্ভব তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা। এতে তিনিও আল্লাহর কাছে পুরস্কৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ تَعَالَى أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ وَأَحَبُّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ تَعَالَى سُرُورٌ تُدْخِلُهُ عَلَى مُسْلِمٍ أَوْ تَكَشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً أَوْ تَقْضِي عَنْهُ دَيْنًا أَوْ تَطْرُدُ عَنْهُ جُوعًا, وَلأَنْ أَمْشِيَ مَعَ أَخِ فِي حَاجَةٍ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتَكِفَ فِي هٰذَا الْمَسْجِدِ – يَعْنِي مَسْجِدَ الْمَدِينَةِ – شَهْرًا وَمَنَ كَفَّ غَضَبَهُ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ كَظَمَ غَيْظَهُ وَلَوْ شَاءَ أَنْ يُمْضِيَهُ أَمْضَاهُ مَلأَ اللهُ قَلْبَهُ رَجَاءً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ مَشَى مَعَ أَخِيهِ فِي حَاجَةٍ حَتّٰـى يُثْبِتَهَا لَهُ أَثْبَتَ اللهُ قَدَمَهُ يَوْمَ تَزُولُ الأَقْدَامِ وَإِنَّ سُوَّء الْخُلُقِ لَيُفْسِدُ الْعَمَلَ كَمَا يُفْسِدُ الْخَلّ الْعَسَل.

“আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হলো সে ব্যক্তি যে মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকার করে। আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো,একজন মুসলিমের অন্তরে আনন্দ প্রবেশ করানো। অথবা তার দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা অথবা তার পক্ষ থেকে তার ঋণ পরিশোধ করা ও তার ক্ষুধা নিবারণ করা। আর আমার এই মসজিদে (মদিনার মসজিদে নববীতে) একমাস ব্যাপী ইতিকাফ করার থেকে আমার একজন ভাইয়ের কোনও প্রয়োজন মেটানোর জন্য তার সাথে গমন করা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করবে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন। যে ব্যক্তি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করবে অথচ সে ইচ্ছা করলে তা প্রয়োগ করতে পারতো,আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার অন্তরকে সন্তুষ্ট করবেন। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য তার সাথে গমন করবে এবং তা পূরণ করে দেবে,আল্লাহ সেদিন তার পদযুগলকে সুদৃঢ় রাখবেন,যে দিন মানুষের পা-গুলো পিছলে যাবে। আর মন্দ চরিত্র আমলকে নষ্ট করে যেমন সিরকা (ভিনেগার) মধুকে নষ্ট করে দেয়।”(সহীহ্ তারগীবঃ হা/২০৯০,সিলসিলা সহীহ্ঃ হা/৯০৬,সহীহুল জামেঃ হা/১৭৬)

এছাড়াও আমাদের সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করাকে একজন নারীর প্রশংসনীয় দিক বিবেচনা করা হয়। তাই সামাজিক এই সুন্দর রীতিটি বজায় রাখার ব্যপারে আমাদের সচেষ্ট হওয়া উচিৎ। তাছাড়া এটাও মনে রাখা দরকার যে,একজন মহিলার জীবনেও একদিন এমন সময় আসতে পারে যখন তার পুত্রবধূর সেবার প্রয়োজন দেখা দিবে। তাই সে যদি এখন সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তার শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করে তবে সে যখন শাশুড়ি হবে তখন আশা করা যায়,তার পুত্রবধূরা ও তার সেবা করবে।

❑ সৌদি আরবের ফতোয়া বোর্ডকে শাশুড়িকে সহায়তা করার ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন,

ليس في الشرع ما يدل على إلزام الزوجة أن تساعد أم الزوج ، إلا في حدود المعروف ، وقدر الطاقة ؛ إحساناً لعشرة زوجها ، وبرّاً بما يجب عليه بره.

“শরিয়তে এমন কিছু নেই যা নির্দেশ করে যে,স্ত্রী স্বামীর মাকে সাহায্য করতে বাধ্য। তবে স্বামীর প্রতি ইহসান এবং তার প্রতি অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্যপরায়ণতার স্বার্থে যতটুকু সামাজিকতার সীমার মধ্যে পড়ে সেটা ভিন্ন কথা।”(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহঃ হা/১৯/২৬৪ ও ২৬৫)

▪️আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন (রাহ.) কে প্রশ্ন করা হয়,“স্ত্রীর উপর কি স্বামীর মা’র কোনও হক আছে?” উত্তরে তিনি বলেন,

لا ، أم الزوج ليس لها حق واجب على الزوجة بالنسبة للخدمة ؛ لكن لها حق مِن المعروف ، والإحسان ، وهذا مما يجلب مودة الزوج لزوجته ، أن تراعي أمه في مصالحها ، وتخدمها في الأمر اليسير ، وأن تزورها من حين لآخر ، وأن تستشيرها في بعض الأمور ، وأما وجوب الخدمة : فلا تجب ؛ لأن المعاشرة بالمعروف تكون بين الزوج والزوجة.

“না। খেদমতের ব্যপারে স্ত্রীর ওপর স্বামীর মায়ের কোনও হক নেই সামাজিকতা ও ইহসানের হক ছাড়া। এ জিনিসটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি যে,সে তার মায়ের প্রতি যত্ন নেয়,সাধারণ ছোটখাটো বিষয়ে সেবা করে,সময়ে-অসময়ে তার সাথে দেখা করে এবং তার বিভিন্ন বিষয়ে তার নিকট পরামর্শ নেয়। কিন্তু খিদমত আবশ্যক হওয়ার ব্যপারে কথা হলো,তা আবশ্যক নয়। কারণ সততা ও কল্যাণের সাথে দাম্পত্য জীবন হবে কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে।”(লিকাআতুল বাবিল মাফতুহ,পৃষ্ঠা নং ৬৮,প্রশ্ন নং ১৪)

❂❂ আমাদের সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে পরিবারগুলোর প্রতি বিশেষ বার্তাঃ

যদি পুত্রবধূ তার শ্বশুর-শাশুড়ির এতটুকু সেবা করে বা কোনোভাবে তার উপকার করে তাহলে তাদের কর্তব্য,তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং তার কাজের মূল্যায়ন করা। স্বামীর কর্তব্য,স্ত্রীর এ কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা আদায়ের পাশাপাশি তার প্রশংসা করা এবং তার প্রতি আরও বেশি আন্তরিকতা,যত্ন,সম্মান ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করা। মাঝেমধ্যে এ জন্য তাকে আলাদা উপহার দেওয়াও ভালো। এতে সে খুশি হবে এবং আরও বেশি সেবা দিতে উৎসাহবোধ হবে। স্বামীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাসূল (সা.) বলেন,
مَنْ لَم يَشْكُرِ اَلناسَ لَمْ يَشْكُرِ اللهِ.

“যে ব্যক্তি (উপকারী) মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করলো না,সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলো না।”(আহমদঃ হা/১১২৮০,তিরমিযীঃ হা/১৯৫৫,সহীহ্)

নবী করীম (সা.) বলেছেন,
تَهَادُوا تَحَابُّوا.

“তোমরা উপহার বিনিময় কর তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’’(বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদঃ হা/৫৯৪,সহীহুল জামেঃ হা/৩০০৪)

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে,আমাদের সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ি সহ পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি পুত্রবধূর পক্ষ থেকে সেবা পাওয়াকে ‘অধিকার’ মনে করা হয়। যার কারণে তার এহেন ত্যাগ ও সেবাকে যথার্থ মূল্যায়ন তো করা হয়ই না বরং তার কাজে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে তার সাথে নানা অপমান সুলভ আচরণ করা হয়,তার প্রতি নানাভাবে জুলুম-অত্যাচার করা হয় ও কষ্ট দেওয়া হয়। যা সামাজিক ভাবে যেমন অমানবিক আচরণ তেমনি শরিয়তের দৃষ্টিতেও হারাম। রাসূল (সা.) বলেছেন,

«الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَهُنَا» . وَيُشِير إِلَى صَدره ثَلَاث مرار بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ: دَمُهُ ومالهُ وَعرضه.

“এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। কোনও মুসলিম অপর মুসলিমের ওপর অবিচার করবে না,তাকে অপদস্থ করবে না এবং অবজ্ঞা করবে না। আল্লাহ ভীতি এখানে! এ কথা বলে তিনি (সা.) নিজের বুকের দিকে তিনবার ইঙ্গিত করে বললেন,“একজন মানুষের জন্য এতটুকু অন্যায়ই যথেষ্ট যে,সে নিজের মুসলিম ভাইকে হেয় জ্ঞান করবে। এক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের রক্ত,ধন-সম্পদ ও মান-সম্মান হারাম।”(সহিহ মুসলিম)

শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি অহংকার করা বা তাদের প্রতি কষ্টদায়ক আচরণ করা হারাম। এর বিপরীতেও আমাদের সমাজে আরেকটি কষ্টদায়ক চিত্র দেখা যায়। তাহলো,কতিপয় মহিলা শিক্ষা-দীক্ষা,জ্ঞান-যোগ্যতা,সৌন্দর্য বা বাবার বাড়ির অর্থ-সম্পদ বা বংশগত গৌরবের কারণে তার শ্বশুর-শাশুড়ি বা স্বামীর পরিবারকে অবজ্ঞা করে,তাদেরকে নানাভাবে অপমান সুলভ কথা বলে ও কষ্ট দেয়। এটিও হারাম। অনুরূপভাবে অনেক স্বামীও তার শশুর-শাশুড়ির সাথে অসদাচরণ করে বা তাদেরকে অপমান-অপদস্থ করে। এটিও হারাম। সর্বাবস্থায় শ্বশুর-শাশুড়ি সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়া হকদার। কেননা তারা বয়সে বড়। আর বয়োঃবৃদ্ধ,মুরুব্বি বা বড়দেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করা ইসলামি শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (সা.) বলেন,

ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺮْﺣَﻢْ ﺻَﻐِﻴﺮَﻧَﺎ ﻭَﻳُﻮَﻗِّﺮْ ﻛَﺒِﻴﺮَﻧَﺎ.

“যে ছোটদেরকে দয়া এবং বড়দেরকে শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”(তিরমিযী,সহিহুল জামেঃ হা/৫৪৪৫)

সুতরাং প্রতিটি মহিলার জন্য তার শ্বশুর-শাশুড়ি ও তার স্বামীর পরিবারের বড়দের প্রতি যথার্থ সম্মান-শ্রদ্ধা করা এবং ছোটদের প্রতি দয়া ও স্নেহশীল আচরণ করা আবশ্যক। কোন অবস্থায় কাউকে হেয় বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা,অহংকার প্রদর্শন,অসম্মান জনক আচরণ করা বা কষ্ট দেওয়া জায়েজ নেই। নারী-পুরুষ সকলের জন্য একই কথা প্রযোজ্য।

আরেকটা প্রশ্ন হলো,পুত্র সন্তানকে জীবিকা অর্জনের জন্য বাইরে থাকতে হয়। কন্যা সন্তানও বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে যায়। এ অবস্থায় পুত্রবধূও যদি শ্বশুর-শাশুড়িকে দেখাশুনা না করে তাহলে বৃদ্ধ মানুষগুলোকে কে দেখাশুনা করবে?

এর প্রতিত্তোর হচ্ছে,আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার সেবা করাকে তার সন্তানদের জন্য অপরিহার্য করেছেন ; পুত্রবধূর জন্য নয়। সুতরাং স্বামী পিতা-মাতার সেবা এবং তার জীবন-জীবিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে যদি তিনি তার এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন তাহলে এক্ষেত্রে একজন ভালো মনের দ্বীনদার স্ত্রী তার স্বামীর অবস্থা বিবেচনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং স্বামীকে সহায়তার স্বার্থে তার শ্বশুর-শাশুড়ির যথাসাধ্য সেবা দিবে। এতে আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুন এবং তাঁর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।”

সব শুনে প্রভা চুপ করে রইলো। একসময় দু’জনে ঘুমিয়ে পড়লো।

________________

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here