সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️ #পর্বসংখ্যা-(১৮)

0
251

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(১৮)
_______________________________

প্রথমে সাধারণ কিছু নীতি উল্লেখ করছি।

📌১) সতর আবৃত করা।

🔸পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে। পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক,যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।”(সূরা আরাফ ২৬)

সুতরাং যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা যেন শরীয়তের দৃষ্টিতে পোশাকই নয়। তা নাজায়েয পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরী। যেমন পুরুষের জন্য হাফ প্যান্ট পরা। মহিলাদের পেট-পিঠ উন্মুক্ত থাকে এমন পোশাক পরিধান করা।

📌২) অধিক পাতলা বা আঁটসাট না হওয়া।

🔸যে পোশাক পরিধানের পরও সতর দেখা যায় কিংবা সতরের আকৃতি পোশাকের উপরে ফুটে উঠে তা-ও সতর আবৃত না করার কারণে নাজায়েয পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের পোশাক পরিধান করা হারাম।

📌৩) বিধর্মীদের পোশাক না হওয়া।

🔸বিধর্মীদের অনুকরণে পোশাক পরিধান করা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এসেছে,“নিশ্চয়ই এটি কাফেরদের পোশাক। তোমরা তা পরিধান করো না।”(সহীহ মুসলিম ৬/১৪৪,মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৯০)

অন্য এক হাদীসে এসেছে,“যে ব্যক্তি তাদের (বিধর্মী,যারা ইসলাম মানে না) পোশাক পরবে সে আমার দলভুক্ত নয়। (তবারানী আওসাত ৩৯২১,ফাতহুল বারী ১০/২৮৪)

📌৪)অহংকার-বড়ত্ব-রিয়া সৃষ্টিকারী পোশাক না হওয়া।

🔸এমন পোশাক পরিধান করা নিষিদ্ধ,যেগুলোকে শরীয়ত অহংকারীদের নিদর্শন সাব্যস্ত করেছে এবং তা পরিধান করতে নিষেধ করেছে। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। প্লাজু নামের পোষাকটি যেহেতু টিভি সিরিয়াল বা নায়িকার মধ্যে পরিস্ফুটিত,ফ্যাশন এবং অনুকরণ প্রিয় পোশাক,তাই এটি ত্যাগ করাই শ্রেয়! তোমরা মুসলমান নারী,তোমরা ফলো করো মা ফাতিমা,আয়েশা (রাঃ),খাদিজা,হযরত সুমাইয়া এদের পোশাক। তাহলে তোমরা অবশ্যই তাদের দলভুক্ত হবে! তাহলে কোন মুর্খ বিবেকে আমরা সবাই ঐসব মহিলাদেরকে অনুসরণ করবো? উত্তরটি প্রায় আমাদের সবার মাথাতেই আছে। একটু ভেবে দেখলেই আমরা উত্তরটা নিজেদের কাছ থেকেই পেয়ে যাবো। তাই নিজেদেরকে ইসলামের সঠিক শরীয়ত দিয়ে গড়ি। কোন বেহায়াদের অনুকরণ করে নয়!”

সব শুনে প্রভা বলল,”আচ্ছা সব মানলাম। আজ থেকে প্লাজু আর পরবো না। তবে মেয়ারা স্কাউট প্লাজু ও ধুতি এবং ছেলেরা ধুতির তৈরি কোন জামা-কাপড় পড়তে পারবে কি-না এই ব্যপারে ইসলাম কি বলে?”

“পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু নীতিমালা রয়েছে। সেগুলোকে অবশ্যই পালন করতে হবে।

১) পোশাক এতই সংক্ষিপ্ত হতে পারবে না যে,সতর তথা লজ্জাস্থানের কিছু অংশ খুলে থাকে। যেমন হাফ প্যান্ট পরলো,হাঁটুর উপরে উরুর কিছু অংশ বেরিয়ে থাকলো।

২) এতো পাতলা হতে পারবে না যে,বাহির থেকে ভিতরে সব নজরে আসে।

৩) এমন আঁটসাট হতে পারবে না যে,শরীরের ভাঁজগুলো বাহিরে ফুটে থাকে।

৪) বিধর্মীদের বিশেষ পোশাক ব্যবহার করা যাবে না। কাফির মুশরিকদের সাথে সাদৃশ্যতা বজায় রাখার জন্য কোন পোশাক ব্যবহার করা যাবে না।

৫) নারী পুরুষের পোশাক এবং পুরুষ নারীর পোশাক ব্যবহার করতে পারবে না।

৬) অহংকারের পোশাক পরিধান করা যাবে না। যেমন পুরুষের পরিধেয় বস্ত্র টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরলো কিংবা রেশমি কাপড় পরলো।

৭) পুরুষের জন্য লাল টকটকে কাপড় অথবা গেরুয়া কালার এবং কুসুম কালার ব্যবহার করা যাবে না।

প্রশ্নের বর্ণিত ধুতি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের বিশেষ পোশাক। এটি মুসলমানদের জন্য কিছুতেই প্রযোজ্য নয়।”

অতঃপর কেনাকাটা শেষে শপ থেকে বেরুতেই অপর পাশে হঠাৎ একটা কর্ণার দিয়ে আসতেই প্রভার চোখ আঁটকে গেলো একটি ড্রেসের উপর। উশখুশ করে বলল,”ওই দেখুন না ড্রেসটা কি সুন্দর!”

“পছন্দ হয়েছে আপনার?”

“হুম।”

ওরা শপের মধ্যে ঢুকলো। সেলসম্যানকে বলল,”ওই টু পিসটা একটু দেখান তো ব্রো।”

সেলসম্যান মৃদু হেঁসে বলল,”এটা তো পাঞ্জাবি স্যার।”

চোখ কপালে উঠলো দু’জনের।

“ইট’স ওকে লাগবে না এটা।”

“স্যার নিয়ে নিন এটা সমকামী ড্রেস। খুবই ইউনিক এবং নিউ মডেলের। এটা এই প্রথম বের হয়েছে। তাছাড়া এটা নারী-পুরুষ উভয় পরিধান করতে পারে।”

আরমানের ব্রম্মতালু উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। শক্ত চোখে সেলসম্যানের দিকে তাকিয়ে বলল,”নো নিড।”

ওরা বেরিয়ে এলো।

“পাঞ্জাবিটা নিলেন না কেনো? খুব সুন্দর তো!”

“আমাকে জাহান্নামে পাঠানোর ইচ্ছে হলো আপনার?”

মুখটা মলিন হয়ে গেলো প্রভার।

“তা কেনো হবে?”

“তাহলে নিতে বললেন কেনো?”

“সুন্দর তো! রেড কালারটায় আপনাকে ভীষণ মানাতো। পাশে আরেকটা ইয়েলো কালারও ছিলো। দুইটাই নিতে পারতেন।”

“বাই দ্যা ওয়ে,এটা জাহান্নামি ড্রেস। আর আমি রেড এবং ইয়েলো নয় হোয়াইট কালার পছন্দ করি পাঞ্জাবির ক্ষেত্রে। একটু আগে কালার সম্পর্কে আপনাকে কি বললাম?”

“এতো কিছু কেনো যেনো খুঁজেন। খুবই ইউনিক ছিলো ড্রেসটা।”

“হ্যাঁ ইউনিক আর নারীদের ড্রেস পরে আমি জাহান্নামে যাওয়ার পথ সহজ করি তাই না?”

“কে বলেছে নারীদের ড্রেস ওইটা?সেলসম্যান তো বললো পাঞ্জাবি।”

“এটাও তো বলেছে সমকামী ড্রেস। অর্থাৎ নারী-পুরুষ উভয় পরিধান করতে পারবে। এছাড়াও প্রথম দেখায় তো আমাদের দু’জনের মনে হয়েছিল এটা নারীর ড্রেস। আর এটা সমকামী ড্রেস অর্থাৎ জাহান্নামি ড্রেস। জানেন আমাদের নবী রাসূল (সা.) কাদের এবং কেনো অভিসম্পাত করেছেন?”

“কাদের?”

“রাসূল (সা.) সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন,যারা নারীদের পোশাক পরে এবং সেইসব নারীকে অভিসম্পাত করেছেন যারা পুরুষের পোশাক পরিধান করে।(আবু দাউদঃ হা/৪০৯৮)

অতএব এই ড্রেস অভিসম্পাতের। এটা পরিধান করলে আমরাও অভিসম্পাত হবো। এই বিষয়ে হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,“নবী করীম (সা.) আমাকে একজোড়া রেশমী কাপড় দিলেন। আমি তা পরিধান করলাম। তাঁর মুখমণ্ডলে গোস্বার ভাব দেখতে পেয়ে আমি আমার মহিলাদের মাঝে তা ভাগ করে দিয়ে দিলাম।”(বুখারিঃ ২৬১৪,ইঃফাঃ ২৪৩৯,আহমাদঃ ১১৭১)

অপর এক হাদিসে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,আমি রাসূল (সা.) কে দেখেছি,তিনি ডান হাতে রেশম ধরলেন এবং বাম হাতে সোনা। অতঃপর বললেন,“আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এ দু’টি বস্তু হারাম।”(আবু দাউদঃ ৪০৫৭,নাসায়িঃ ৫১৪৪,ইবনে মাজাহঃ৩৫৯৫)

রাসূল (সা.) আরও বলেন,“আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে,যারা ব্যভিচার,রেশম,মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।”(সহীহ বুখারীঃ ৫৫৯০)

পুরুষদের জন্য লাল,হলুদ এবং গেরুয়া রঙের জামা পরার ব্যপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। লাল ও হলুদ রঙ পুরুষদের জন্য এই কালারের পাঞ্জাবিও এড়িয়ে চলতে হবে। রাসূল (সা.) আলী (রা.) কে দুইটি হলুদ রঙয়ের কাপড় পরা অবস্থায় দেখলেন। তখন তিনি বলেন,“এই রঙ কাফেরদের জন্য,এই রঙের কাপড় পরিধান করো না।”(মুসলিমঃ ২০৭৭)

এছাড়াও উমার (রা.) বলেন,“রাসূল (সা.) আমাদেরকে লাল রঙের পোশাক পরতে নিষেধ করেছেন।”(মুসনাদে আহমাদ,ইবনে মাজাহঃ ৩৫৯১)

তবে শুধু এক কালারের লাল না হয়ে যদি লালের মাঝে অন্য রঙের স্ট্রাইপ/চেক থাকে তাহলে সেটা পরা জায়েজ আছে। অন্য রঙের স্ট্রাইপ/চেক থাকলেও তাকওয়ার খাতিরে লাল রঙ এড়িয়ে চলাই উত্তম। তন্মধ্যে লাল রঙের বিষয়ে প্রাধান্যপ্রাপ্ত হুকুম হলো,অমিশ্রিত নিছক লাল রঙের পোশাক পরিধান করা পুরুষের জন্য হারাম,কেননা তাতে নারী ও অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্য বিদ্যমান। (সহীহ বুখারী,হা/৫৮৮৬,আবু দাউদ,হা/৩৫৭৪,নাসাঈ,হা/৫২৮৩)

অতএব পোশাকের ব্যপারে আমাদেরকে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।”

অতঃপর মন ভার করে বেরিয়ে গেলো ওরা। তিন তলায় আসতেই জুতার কালেকশন চোখে পড়লো। প্রভাকে ধরে লিফট থেকে নামলো আরমান। প্রভার সবগুলো জুতো প্রায় সেমি হিল। এখন তো এইসব পড়া যাবে না। তাই ভাবলো কয়েক জোড়া প্ল্যাট জুতা নিবে। জুতা চুজ করতে লাগলো আরমান। আগ্রহী হয়ে প্রভা জুতাগুলো ধরে নেড়েচেড়ে দেখছে। প্রভার দিকে তাকালো আরমান। প্রভা এখনও ম্যাচিউরড হয়নি। ইমম্যাচিউরড বলা যায়। বয়স কতো হবে? সবে ১৯/২০ হবে বোধহয়! বয়স হিসেবে ম্যাচুরিটি এখনও আসেনি। ম্যাচিউরিটি আসলে এমনটা করতো না। বোকার মতো কথা বলতো না। তপ্তশ্বাস ফেললো। আচমকা চোখ পড়লো একজোড়া লাল টুকটুকে হাই-হিলের উপর। ভীষণ পছন্দ হয়ে গেলো প্রভার। আরমানের হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো।

“ওই দেখুন কি সুন্দর! এটা নিন।”

“বেলাডোনা একটা কথা বললে মন খারাপ করবেন?”

“কি কথা?”

“নারীদের জন্য হাই-হিল জুতা পরা জায়েয নয়।”

“কেনো?”

“কেননা তাতে তার গোপন সৌন্দর্য প্রকট হয়ে পড়ে। আল্লাহ বলেন,“নারীরা যেন এমনভাবে চলাফেরা না করে,যাতে তাদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে।”(সুরা নূর-২৪/৩১)

“কোথায় যে পান এতো হাদীস-কোরআন?যেটাই পছন্দ হয় সেটাতেই নিষেধাজ্ঞা! যান কিনবোই না আর কিছু।”

বিরক্ত হলো প্রভা। তপ্তশ্বাস ফেলে আরমান বলল,”শুধু তাই নয়,এছাড়া এতে পড়ে গিয়ে যেকোন সময় আহত হতে পারেন। তবে সাধারণভাবে দৃষ্টি আকর্ষক নয় এমন উঁচু জুতা পরিধানে বাঁধা নেই। (উছায়মীন,ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২/০২,ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা,ফতওয়া-১৬৭৮)

যেমন আপনার জন্য সেমি হিল নিয়েছি।”

“এখন আমার কথা শুনুন,ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরা হাই-হিল জুতা পরতে পারবে,নাকি পারবে না সেটা বলুন?”

“মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানুষের বংশধারা অব্যাহত রাখার জন্যে মানুষকে নারী ও পুরুষ বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি প্রত্যেকের জন্যেই দিয়েছেন আলাদা বিধান,আলাদা আয়োজন। দৈহিক গঠন থেকে শুরু করে নারী ও পুরুষের প্রাকৃতিক তারতম্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। ইবাদত-বন্দেগিতে নারী ও পুরষের পদ্ধতিতে রয়েছে পার্থক্য। কাজের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের অবস্থান আলাদা। নারীদের প্রধান দায়িত্ব ঘরে ও পুরুষের জন্যে বাইরের দিকটা সামাল দেয়া প্রধান দায়িত্ব। তাই নারীদের জন্যে এমন কিছু করা উচিত নয়,যা তার গঠন-প্রকৃতি ও ইসলাম সমর্থন করে না। সাধারণত নারীরা কোমল দেহবিশিষ্ট ও নাজুক গঠনের হয়ে থাকে। তাই নারীদের চলাফেরা ও পোশাকের ক্ষেত্রেও এমন পোশাক নির্বাচন করতে হবে এবং এমনভাবে চলাফেরা করতে হবে,যা তার শরীরের জন্যে উপকারী এবং চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটাবে না। আজ-কাল নারীরা যে হাই-হিল জুতো পরে,তার ক্ষতিকর বিষয়টি ফুটে ওঠে। নারীরা হাই-হিল পরে রাস্তায় চলাফেরা করে,অথচ বাস্তবিক অর্থে তা নারীদের কোমল গঠনের জন্যে উপযোগী নয়,ফলে তারা পড়ে গিয়ে আহত হবার আশঙ্কা থাকে শতভাগ। এবং রাস্তাঘাটে অহরহ তেমন বিব্রতকর ঘটনা ঘটতেও দেখা যায়। এজন্যেই ইসলাম নারীদের হাই-হিল পরার বিষয়টি সমর্থন করে না কেননা,ইসলাম সাধারণ অর্থে আমাদের নির্দেশ দিয়েছে,যেনো আমরা আশঙ্কাজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,“তোমরা তোমাদের নিজদেরকে ধ্বংসে নিপতিত করো না।”(সুরা বাকারা,আয়াত-১৯৫)

এটা তো দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে,হাই-হিল পরার কারণে একজন নারীকে বাস্তবের তুলনায় অধিক দীর্ঘকায় দেখায় এবং তাদের অন্যতম লজ্জাস্থান নিতম্ব মানুষের চোখে অধিক দৃশ্যমান হয়ে ধরা পড়ে। অবশ্যই এটা এক ধরনের প্রতারণা। একই সাথে হাই-হিল পরার কারণে নারীর এমন সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে,যা ইসলাম তাকে ঢেকে রাখতে বলেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,“আর আপনি মুমিন নারীদের বলুন,তারা যেনো তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। আর যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পেয়ে তা ছাড়া তারা যেনো তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেনো তাদের ওড়না দিয়ে তাদের বক্ষদেশ ঢেকে রাখে। তারা যেনো তাদের স্বামী,পিতা,শ্বশুর,নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে,ভাই,ভাই এর ছেলে,বোনের ছেলে,আপন নারীগণ,তাদের ক্রীতদাস,অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে না দেয়। আর তারা যেনো আপন সৌন্দর্য প্রকাশের তাড়নায় সজোরে পদচারণা না করে।”(সুরা নূর,আয়াত-৩১)

এছাড়া হাই-হিলের কারণে নারীরা সামনের দিকে অনেকখানি ঝুঁকে থাকে। এর কারণে তাকে হেলেদুলে প্রলোভন জাগানো ভঙ্গিতে চলাফেরা করতে হয়। তাতে কোরআনে যেসব নারীদের ব্যপারে সতর্কবাণী এসেছে,এদের বেলায়ও তা পূর্ণভাবে মিলে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বক্তব্য অনুসারেও হাই-হিল নারীর পিঠের ক্ষতি সাধন করে। তাছাড়া হাই-হিল থেকে একপ্রকার টক-টক আওয়াজ উচ্চকিত হয় যা পুরুষকে আকৃষ্ট করে। সুতরাং এমন ক্ষতিকর ও মন্দকাজের প্রতি আহ্বানকারী পোশাক কিছুতেই নারীর জন্যে শালীন হবে না এবং তাই ইসলামও সমর্থন করবে না। (ফতোয়া লাজনাতুদ দায়িমাহ,৯/৪৬)

অতপর প্রভার জন্য বেশ কয়েকজোড়া জুতা কিনে ওরা গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামতেই প্রভার চোখ পড়লো বিউটি স্যালুনের দিকে।

“শুনছেন?”

“হুম।”

“ওই দেখুন স্যালুন।”

“দেখেছি।”

উশখুশ করে প্রভা বলল,”আজ কতোদিন হয়েছে আমি ভ্রু প্লাক করি না,চুল কালার করি না। আগে প্রতি সপ্তাহে করতাম। এখন দেখুন ভ্রু গুলো দেখতে কেমন বিশ্রী হয়ে গেছে। চুলের কালারটাও কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। একটা কড়া কালার দেওয়া দরকার। এদিকে আপনিও ক্লিনসেভ করেন না। এই বয়সে কিসের চাপদাঁড়ি রাখতে শুরু করেছেন। চলুন না দু’জনে স্যালুনে যাই।”

“আপনি কি করবেন?”

“আমি ফেসিয়াল আর ভ্রু প্লাক করবো আর ততক্ষণে আপনি ক্লিনসেভ করে নিয়েন। ক্লিনসেভ করলে আপনাকে দারুণ লাগবে। আর আজ চুল কেটে কালার করার সময় নেই। অন্যদিন করে নিবো।”

“এখন দারুণ লাগে না?”

“লাগে তো!”

“তাহলে চলুন,আপনি ভ্রু প্লাক করে আর আমি ক্লিনসেভ করে জাহান্নামের দিকে চলে যাই। এটাই বেটার হবে। চলুন।”

বলেই স্যালুনের দিকে টেনে নিয়ে গেলো প্রভাকে। প্রভা বুঝতে পারলো আরমান চায় না সে ভ্রু প্লাক করুক কিংবা ক্লিনসেভ।

“আরেহ! আরেহ! কি করছেন ছাড়ুন!”

“আপনাকে নিয়ে জাহান্নামে যাবো। যাবেন না? চলুন।”

“কথায় কথায় রেগে যাচ্ছেন কেনো?ছোট্ট একটা আবদারই তো করলাম। ভ্রু প্লাক করতে কত লাগবে না হয় ৫০/৬০ টাকা। ফেসিয়াল আর চুল কালার না হয় করলাম না। এতো হাড়কিপ্টে কেনো আপনি? সবকিছুতেই কিপ্টেমি করেন আর হাদীস বলেন। নিশ্চয়ই টাকা বাঁচানোর ফন্দি! আপনাকে দেখে তো ফকির বলে মনে হয় না। আপনার এতো টাকাপয়সা খাবে কে?”

“আমি তো জানি মেয়েরা হাড়কিপ্টে হয়।”

“মোটেও না! মেয়েরা হিসেবি হয়। কারণ মেয়েরা যদি হিসেবি না হতো তাহলে সঞ্চয় জিনিসটা ক’জনে বুঝতো?”

“তেমনি এটাও যদি নেকের কাজ হতো তাহলে ৫০/৬০ টাকা কেনো? হাজার টাকা হলেও করিয়ে দিতাম।”

“মোটা ভ্রু চিকন করবো এতে নেক-অ-নেকের কি আছে?”

“ইসলামে ভ্রু প্লাক করা সম্পূর্ণ হারাম। পাশাপাশি এটা আল্লাহর অভিশাপের মাধ্যম। এছাড়াও ভ্রু প্লাক ও নকশা আঁকার ব্যপারে ইসলামের নিয়ম হলো,স্বামী চাইলেও কপালের পশম চাঁছা ও ভ্রু প্লাক করা জায়েজ নেই। কেননা এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়,যা ইসলামে অনুমোদিত নয়। এভাবে মুখে বা হাতে সুই ফুটিয়ে নকশা আঁকা বা ট্যাটু করা বৈধ নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন,“আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ওই নারীদের ওপর,যারা দেহ-অঙ্গে উল্কি উৎকীর্ণ করে এবং যারা করায়,যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে ও যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির মানসে দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।”(বুখারি,হা/৪৮৮৬)

আবুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে তিনি বলেন,“আল্লাহ্‌ লানত করেছেন আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে পরিবর্তনকারী সে সব নারীদের যারা উল্কি অঙ্কনের কাজ করে,যাদের উল্কি করানো হয়,সৌন্দর্য চর্চা হিসেবে যাদের চোখের ভ্রু সরু করা হয়,যাদের দাঁত সরু করানো হয়। নবী কারীম (সা.) যাকে লানত করেছেন,আমি তাকে লানত করতে বাধা কোথায়?এটি তো আল্লাহ্‌র কিতাবেই রয়েছে। “রাসুল তোমাদের যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করো। বিরত থাকো সেই পর্যন্ত।”(সুরা হাশর,আয়াত: ০৭,সহীহ বুখারি,হা/৫৯৩১)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,“যে নারী পরচুলা লাগানোর কাজ করে,আর যে নারীকে পরচুলা লাগানো হয় ; যে ভ্রু সরু করানোর কাজ করে,যার ভ্রু সরু করানো হয়,যে উল্কি অঙ্কনের কাজ করে এবং যাকে উল্কি করানো হয়,কোন রোগ ছাড়া ; তাদের অভিশাপ করা হয়েছে।”(সুনানে আবু দাউদ,হা/৪১৭০,ফাতহুল বারি,হা/১০/৩৭৬)

আলেমগণ এই হাদিসগুলো দিয়ে দলিল পেশ করেছেন যে,ভ্রু উপড়ানো নিষিদ্ধ। এছাড়াও ফিকাহবিদগণ একমত হয়েছেন যে,দুই চোখের ভ্রু উপড়ানো এটি চেহারার লোম উপড়ানোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে।”(আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ : ১৪/৮১)

এছাড়াও ত্বকের ইনফেকশন বিশেষজ্ঞরা জানান,ভ্রু প্লাক করার সময় সুতোর চাপে চোখের ওপরের ত্বকে প্রেসার পড়ে। এতে সেই ত্বক কেটে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। অ্যালার্জি হতে পারে,ভ্রু প্লাকের পর ত্বক লাল হয়ে যায়। চোখের ভেতরে ইনফেকশন ভ্রু প্লাকের পর জ্বালাভাবে কমাতে বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করা হয়।”

“আচ্ছা তা স্বামীর মনোরঞ্জনে ভ্রুপ্লাক করা কি জায়েজ?”

“এতোক্ষণ কি বললাম? মহিলাদের ভ্রু প্লাক করা সম্পূর্ণ অবৈধ (হারাম) হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ، وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ، وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ، الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ تَعَالَى، مَالِي لاَ أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ فِي كِتَابِ اللَّهِ ‏{‏وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ‏}‏‏.‏

হজরত আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’উদ) (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। আল্লাহ্‌র অভিশাপ বর্ষিত হোক সে সব নারীদের উপর যারা শরীরে উল্‌কি অঙ্কণ করে এবং যারা অঙ্কণ করায়,আর সে সব নারীদের উপর যারা চুল,ভ্রু তুলে ফেলে (ভ্রু প্লাক করে) এবং সে সব নারীদের উপর যারা সৌন্দর্যের জন্যে সম্মুখের দাঁত কেটে সরু করে,দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে,যা আল্লাহ্‌র সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। রাবী বলেন,আমি কেন তার উপর অভিশাপ করব না,যাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ করেছেন? আর আল্লাহ্‌র কিতাবে আছে “রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম) তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর।”(সূরাহ আল-হাশর ৫৯)

আর শরীরের অন্যান্য অঙ্গের লোম যেমন হাত বা পায়ের লোম পুরুষ এবং নারীদের জন্য একেবারে উপড়ে ফেলা বা মুণ্ডন করে ফেলা নিষেধ নয়। তবে অনুত্তম।

وفى حلق شعر الصدر والظهر ترك الادب، (رد المحتار، كتاب الحظر والاباحة، فصل فى البيع-9/583، طحطاوى على مراقى الفلاح-431.

অতএব,ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করে স্বামীকে খুশি করা শরীয়তে জায়েজ নাই। কেননা হাদিস শরীফে এসেছে,

إنما الطاعة في المعروف لا طاعة لمخلوق في معصية الخالق.

অনুগত্য কেবলই বৈধ কাজে। আল্লাহর (বিধানের) বিরুদ্ধাচারণ করে মাখলুকের অনুগত্য করা জায়েজ নাই।

فلا يجوز طاعة الأب، أو الزوج، الأمير، أو السلطان في معاصي الله، فإذا قال له السلطان، أو الأمير، أو أبوه، أو الزوج للزوجة اشربوا الخمر لا يطيعه في ذلك.

السؤال: غير شرب الخمر، إذا قال احلق لحيتك؟

الجواب: أو قال احلق لحيتك، أو سب أباك، أو سب أمك، أو لا تطع أباك، ولا تطع أمك، كل هذا.. لا يطيعه في ذلك، أو لا تُصَلِّ في الجماعة.

সুতরাং আপনি কিছুতেই ভ্রুপ্লাক করবেন না। আরেকটি বিষয় হলো,আপনি যাকে খুশি করার জন্য আজ আল্লাহর বিধান লঙ্ঘণ করবেন কাল তার কারণেই আল্লাহ তায়ালা আপনাকে অপমানিত করবেন। কাজেই সতর্কতা অবলম্বন জরুরী। আর একটু আগে বললেন না আমাকে ক্লিনসেভ করলে সুন্দর লাগবে মনে রাখবেন পুরুষের সৌন্দর্য দাঁড়িতে।”

__________

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here