সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️ #আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️ #পর্বসংখ্যা-(০৮)

0
278

#সন্ধ্যারাতে_শালুক_ফোঁটে ❤️
#আদনীন_নিশাত_তারান্নুম_চৌধুরী ❤️
#পর্বসংখ্যা-(০৮)
_______________________________

(৩২)
সপ্তাহখানেক পার হয়ে গেলো অথচ আরমান প্রভার সাথে কথা বলে না। দূরত্ব বজায় রেখেছে। অথচ একই কামরা,একই বেড সবই ইউজ করছে। পাশাপাশি ঘুমাচ্ছে। একই ছাঁদের নিচে থাকছে। তবে তাদের মধ্যে কোনো আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেই। প্রতিটা রাত প্রভার চোখের পানির বন্যা বয়। আরমানের কোন রিয়েক্ট কিংবা কোনো রেসপন্স নেই। যখন যা লাগছে এনে হাজির করছে। আয়েশা মির্জার ভালো লাগলো না এইসব। বিয়ে-শাদী হয়েছে,সংসার করবে,বাচ্চা-কাচ্চা হবে,তা না দূরে দূরে রয়েছে ছেলে-মেয়ে দুটো। আরমানের কামরায় এলেন তিনি। উদাস হয়ে বসে রয়েছে প্রভা। আয়েশা মির্জা পাশে বসলেন।

“তোমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়েছে শশীপ্রভা?”

মাথা নেড়ে না বুঝালো।

“আরমান তোমার সাথে কথা বলে না?”

“না।”

তপ্তশ্বাস ফেললেন।

“ও না হয় বলছে না,হয়তো এখনো রাগ পুষে রেখেছে তোমার উপর। তুমি তো বলতে পারতে!এতো ইগো কিসের তোমার?”

মৌন রইলো প্রভা।

“তুমি যেইসব করেছো এইগুলো মাফ করে দেওয়ার মতো বলো? রাজপুত্রের মতো স্বামী পেয়েছো তোমার তো উচিত পায়ে পড়ে থাকা। তা না করে ইগো দেখাচ্ছো? কি ভাবো নিজেকে?”

মাথা নুয়ে রাখলো প্রভা। সে-তো সেদিন মাফ চেয়েছে। মানুষটারই তো নাকের ডগায় রাগ!

“ক্ষমা চেয়ে ঠিকঠাক করে নাও তোমাদের সম্পর্কটা। স্বামী তোমার,সংসার তোমার,সব তোমার। আমাদের তো কিছুই নেই। এসবের মধ্যে ইগো থাকলে সমস্যা। পুরুষ মানুষ রাগী,জেদী হবেই। পুরুষ পাথর হলে নারীকে নরম হতে হয়। সম্পর্ক টিকানোর জন্য মাঝেমধ্যে বেহায়া হতে হয়। এইভাবে ইগো ধরে রাখলে সম্পর্ক টিকে না। নিজের ভালোটা বুঝতে শিখো। এমন স্বামী জীবনেও পাবে না। তোমার অসুস্থতার কথা শুনতেই ছেলেটা বাংলাদেশে ফিরে গেলো। তোমাকে এখানে নিয়ে এলো অনেক ঝুট-ঝামেলা করে। উন্নত চিকিৎসা করালো। নয়তো ডক্টররা পর্যন্ত তোমার বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলো। বলেছিলো তুমি মেমোরি হারিয়ে ফেলতে পারো। ভাগ্যিস সেইসব কিছুই হয়নি। শুকরিয়া আদায় করো।”

কিছু বলতে পারলো না প্রভা। সবই তো ঠিক! মানুষটা কথা বলেনি জিদ চেপে। সে কেন বলেনি? তার কিসের এতো ইগো? যার জন্য তার অস্তিত্ব টিকে আছে!

“শশীপ্রভা বলতে হয় তোমার রাজকপাল। যার জন্য তুমি এমন ছেলে পেয়েছো! তপস্যা করেও এমন ছেলে পাওয়া দুষ্কর! সেখানে তুমি কতো ইজিভাবে পেয়ে গেছো। এজন্যই মূল্য বুঝছো না। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ইগো কিসের? বার-বার তুমি যেইসব করেছো এইসব মাফ করে দেওয়ার মতো? স্বজ্ঞানে নিজেই তো বিয়ের রাতে শর্তনামায় সাইন করেছো। জোর করে তো কেউ করায়নি।”

কিছু বলতে পারলো না প্রভা।

“তুমি কেমন?তোমার পরিবার,তোমার স্ট্যাটাস তোমার পরিবারের ব্র্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি এইসব কেমন একটু ভাবো। তোমার থেকেও সুন্দরী রূপবতী মেয়েরা আরমানের জুতা সাফ করে। সেটা তো নিজের চোখে দেখেছো। সেখানে তো তুমি রাজরানী! অত্যন্ত আরাম আয়েশে আছো তো তাই স্বামীর মূল্য বুঝতে পারছো না। আমি ভাবলাম মহলেও তুলবে না তোমাকে। এখন তো দেখলাম খুব আদরে আছো মা-ছেলে। তোমার জন্য আমার মানসম্মান সব নষ্ট হয়ে গেলো আমার ছেলে,ছেলের বউ আর নাতীর কাছে। বড়মুখে বড় শখ করে তোমাকে বিয়ে করিয়ে এনেছিলাম তুমি ছোট করে দিলে। এমনটা আশা করিনি তোমার থেকে। এখনও ঢের সময় আছে শুধরে যাও শশীপ্রভা।”

দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো প্রভার গাল বেয়ে। আয়েশা মির্জা ইচ্ছে করেই এইসব বলছে। নাতীর দ্বারা হবে না কারণ নাতী তো প্রচণ্ড জেদী। এখন যদি প্রভার দ্বারা হয় কিছু। ঠিক তো প্রভার বুঝতে হবে সে কি? কোথায় এসেছে? কার বউ হয়েছে?কেমন স্বামী পেয়েছে?এতো ইগো থাকবে কেন? তাই গায়ে লাগিয়েই বলেছেন। যদি শুধরায়। সব ঠিক হলে তাদেরই তো ভালো। এখানে তো ওনার কোনো কিছু নেই।

“কাল মহলে মারইয়ামের মামাতো বোনের মেয়ে আসবে। আরমানের সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে মারইয়াম। গোপন সূত্রে জানতে পারলাম আজ।”

কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো প্রভার। চট করে চোখ তুলে তাকালো।

“মানে!?”

“মা ছেলের কথপোকথন থেকে জানতে পারলাম।”

“কি বলেছেন ওনারা?”

“জেনে কি করবে তুমি? তার চেয়ে বরং ডিভোর্স নিয়ে দেশে ফিরে যাও। ছেলেটার তো বিয়ে দিতে হবে। সংসার সন্তান লাগবে।”

কথা বলতে পারলো না প্রভা।

“কাল আসবে মেয়েটা। তারপর বিয়ে। তবে মেয়েটা অত্যন্ত সুন্দরী! পরহেজগার! আরমানের সাথে বেশ মানাবে। মেয়েটা অত্যন্ত পর্দাশীল। রূপে-গুনে,টাকা-পয়সায়,ধনসম্পত্তি,ক্ষমতা,অর্থসম্পদ,ঐশ্বর্য সবদিক দিয়ে উপরে। সেই হিসেবে তুমি কিছুই না! আরমান মনে হয় বিয়ে করে ফেলবে।”

প্রভার শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”মেয়েটা কি জানে না উনি ম্যারিড?”

“সবই জানে। তবে মেয়েটার কোনো আপত্তি নেই। কারণ আরমানকে ছোট থেকেই নাকি ভালোবাসে মেয়েটা। তাই একটু না হয় সাক্রিফাইজ করলো। তাছাড়া আরমানের মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার! সবাই তো এর কদর করতে পারে না। যেমন তোমার মতো মেয়েরা।”

চোখ বুজে ফেললো প্রভা। আয়েশা মির্জা তাকে অপমান করে কথা বলছে। আসলে সে এইসবেরই যোগ্য। সত্যি তো তার কি আছে? টাকা-পয়সা গাড়ি-বাড়ি নাকি সাম্রাজ্য? নাকি রূপ-গুণ? কিছুই তো নেই। প্রভার মাথা ঘুরছে। ওই মেয়েটা আসলে বিয়ে হবে। আরমানেরও কি তবে সায় আছে এই বিয়েতে? তাহলে তার কি হবে? বর্ষার ভরা বিলের মতো জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো ডাগর ডাগর চোখজোড়া। দাদীমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,”দিদিমণি আমার তাহলে কি হবে?”

“কি আর হবে? ইগো নিয়ে বসে থাকো। তোমার স্বামীকে আরেক মেয়ে এসে তোমার সামনে দিয়ে নিয়ে যাক! আমার নাতীটারও সংসার করার দরকার। তোমার জন্য কুমার থাকবে নাকি?”

নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলো প্রভা। সারা-শরীর কাঁপছে!

“এখন কি হবে?”

“আমি কি জানি? আমার হাতে কিছু নেই। আরমানেরও মনে হয় এই বিয়েতে মত আছে। মায়ের কথা ছেলেটা আবার অমান্য করে না। একবার করে তো পস্তালো।”

আয়েশা মির্জা ভালোই ডোজ দিলেন প্রভাকে। ওনার অপমান গায়ে মেখে যদি মেয়েটা একটু নরম হয়। ওদিকে সাপের মতো ফণা তুলে আছে মারইয়াম। অপেক্ষা করছে ছেলের বিয়ে দেওয়ার। আকস্মিক ভারসাম্য হারিয়ে বসা থেকে পড়ে গেলো প্রভা। আয়েশা মির্জা ঘাবড়ে গেলেন। ভালোর জন্য বলতে গিয়ে তবে কি খারাপ করে ফেললো? খুব খারাপ লাগলো ওনার। এমনভাবে না বললেও পারতেন। আরমান অফিস থেকে বাসায় ফিরলো সবে। প্রভাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে দৌঁড়ে এলো। ঘাবড়ানো গলায় জিজ্ঞেস করলো,”দিদিভাই কি হয়েছে ওনার?”

“বুঝতে পারছি না। হঠাৎই বসা থেকে পড়ে গেলো।”

পাঁজাকোলে তুলে বেডের উপর শোয়ালো প্রভাকে। হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। আরমান অস্থির হয়ে গেলো। হাত-পায়ে তেল মালিশ করতে লাগলো। গাল চাপড়ালো কয়েকবার প্রভা রেসপন্স করলো না। দাঁত-মুখ খিঁচে রেখেছে। আরমান ডক্টরকে কল করলো। তিনি এসে চেক-আপ করে জানালেন অতিরিক্ত টেনশনে প্রেসার লো হয়ে গেছে। সারারাত আরমান ঘুমাতে পারলো না। প্রভার পাশে বসে রইলো। শেষ রাতের দিকে প্রভার সেন্স ফিরলো। আরমানকে নিজের পাশে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে প্রভা ইমোশনাল হয়ে পড়লো। জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে অনেক কাঁদলো। কিন্তু পাষাণ হৃদয়ের মানুষটা বিন্দুমাত্র রেসপন্স করলো না,শান্তনা দিলো না,তাকে একটু জড়িয়ে ধরলো না। পাথরের মতো শক্ত হয়ে বসে রইলো।

(৩৩)
দুটোদিন কেটে গেলো। আর্সেল আসলো মিশর থেকে। ভীষণ সুন্দরী মেয়েটা! প্রভার জেলাশফিল হলো। আরমান দেখলে নিশ্চয়ই প্রেমে পড়ে যাবে। দেখেছেও হয়তো। নিজের রূপ নিয়ে প্রভা ডিপ্রেশনে চলে গেলো। হীনমন্যতায় ভুগতে লাগলো সারাক্ষণ! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল খামচে ধরে প্রভা কাঁদে। কেন সে এতো সুন্দর হলো না। আরমান অবশ্য টের পায়নি কিছুই। আজও প্রভা ওমন করে কাঁদছিলো। আয়েশা মির্জা কামরায় আসতেই দেখলেন নিজের চুল খামছে ধরে কান্না করছে প্রভা।

“এইসব কি শশীপ্রভা?”

“আপনার নাতী স্বাভাবিক হচ্ছে না দিদিমণি।”

মন ভার হলো উনার। এমন কেন নাতীটা! প্রভাকে বেডের উপর বসিয়ে রয়ে-সয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”তোমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয়েছে শশীপ্রভা?”

“না।”

তিনি চমকালেন।

“এটা কেমন কথা? বিয়ের এতোদিন হলো এখনও বাসর হলো না!”

প্রতিত্তোরে কি বলবে প্রভা,ভেবে পেলো না।

“আজ রাতে সেজেগুজে ওর সামনে যাবে। নিজের স্ত্রীর অধিকার চাইবে।”

“উনি তো কথাই বলে না স্ত্রীর অধিকার পাওয়া তো বিলাসিতা!”

“ওহ মেয়ে! সব শিখিয়ে দিতে হবে?”

চোখ তুলে তাকালো প্রভা।

“সুন্দর করে সেজেগুজে ওর সামনে নিজেকে উপস্থাপন করবে। ক্ষমা চাইবে। একটা বাচ্চা হলেই দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়েটা তো ঠেকানো দরকার। কেন মেয়ে বুঝো না।”

প্রভা ভাবলো আসলেও তাই। এই বিয়ে ঠেকাতে হলে একটা বাচ্চার প্রয়োজন। বাচ্চার কথা শুনলে মানুষটা হয়তো স্বাভাবিক হবে।

“সকালে যেন সুসংবাদ পাই শশীপ্রভা।”

আয়েশা মির্জা চলে গেলেন।

(৩৪)
ডিনারের পর প্রভা টুকটাক সাজগোজ করলো। কামরায় এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো আরমান। প্রভার মন ভার হলো। এমন কেন মানুষটা? একটাবার তার দিকে তাকালো না অব্ধি! বেডের উপর শুয়ে পড়লো। প্রভার কড়া পারফিউমে আরমানের নাক বন্ধ হয়ে এলো। তবুও চোখ বুজে শুয়ে রইলো। প্রভার ভয় লাগছে। দাদীমার কথায় কিভাবে সে নিজের স্ত্রীর অধিকার চাইবে? তবুও মনে সাহস রাখলো। আরমানের গায়ের উপর হাত রাখলো। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আরেকটু চেপে এসে আরমানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। দপ করে চোখ মেলে তাকালো আরমান। নাক-মুখ ঘষতে লাগলো পিঠে। আরমান জমে রইলো। প্রভা এবার উঠে এপাশে এসে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো। আরমান দাঁত চেপে রইলো। আচমকা প্রভাকে দূরে সরিয়ে বলল,”সমস্যা কি ঘুমাতে দিচ্ছেন না কেন?”

সাহস করেই প্রভা বলল,”আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন,কিন্তু স্ত্রীর অধিকার দিচ্ছেন না কেন?”

এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলো না আরমান। শান্ত গলায় বলল,”ঘুমান। বিরক্ত করবেন না। সকালে উঠতে হবে।”

বুক ফেটে কান্না এলো প্রভার।

“আর কতদিন এমন করবেন?”

“ঘুমাতে বলেছি।”

“আপনার কাছে ক্ষমা চেয়েছি না?”

“বলেছি না ঘুমাতে।”

“স্ত্রীর অধিকার চাই।”

“সময় লাগবে। এবার চুপচাপ ঘুমান বলছি। নয়তো ভালো হবে না।”

“ডিভোর্স দিন আমাকে। করবো না আপনার সংসার।”

রাগে প্রভা কাঁপছে। আরমান উঠে বসলো। প্রভার চোয়াল চেপে ধরে বলল,”বলেছি না সময় লাগবে। তাও এতো জিদ কিসের? আপনি কি চান আপনাকে ভালোবাসাহীন স্পর্শ করি? পারবেন সহ্য করতে? শারিরীক মিলনের মাঝে কখনো ভালোবাসা থাকে না।”

“ভালোবাসতে না পারলে ডিভোর্স দিন।”

“একে তো অপরাধ করেছেন আমার কথা অমান্য করে,শর্ত ভঙ্গ করে। ফের আবারও অপরাধ করেছেন আমার অনুমতি ব্যতীত বাসার বাইরে গেলেন,হ’ত্যা চেষ্টা করলেন,নিজে সু’ই’সা’ই’ড করার চেষ্টা করলেন। আপনাকে ক্ষমা করতে গিয়েও আবার করতে পারলাম না। এই নিয়ে কয়বার আপনি আমার নিয়ম ভঙ্গ করছেন মনে নেই?”

চেঁচিয়ে উঠলো আরমান।

“আপনার এতো ধরা-বাঁধা নিয়ম মানতে পারবো না আমি। ডিভোর্স চাই আমার।”

“ওকে পেয়ে যাবেন। আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে শ্রীঘ্রই বিয়ে করছি আর্সেলকে।”

কাঁপতে লাগলো প্রভা। আরমান শুয়ে পড়লো। বিড়বিড় করে বলল,”বউ গেলে বউ পাবো। অভাব হবে না। যে আমার সকল শর্ত পালন করতে পারবে তাকেই বিয়ে করবো। নিসন্দেহে আর্সেল আমার জন্য উপযোগ্য।”

ঘুমানোর চেষ্টা করলো আরমান। বুক ফেটে কান্না এলো প্রভার। সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। শীতে কাঁপতে লাগলো প্রভা। তা দেখে ঘুমাতে পারলো না আরমান। প্রভাও জিদ চেপে শুয়ে রইলো। আরমানও দাঁতে দাঁত চেপে রইলো।

(৩৫)
সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করার জন্য ডাক পড়লো দু’জনের। আরমান রেডি হয়ে একেবারেই বেরুলো। প্রভার দিকে তাকালো না। আরমান যেতেই প্রভা আরমানের পিছু পিছু গেলো। দেখলো টেবিলে আর্সেল ও আছে। সবার সাথে খুব হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। টেবিলের সামনে আরমান যেতেই প্রভা কামরায় ফিরে এলো। শত্রুর সাথে একসাথে বসে খাওয়ার ইচ্ছে নেই তার। মেয়েটাকে দেখলেই খুব হিংসা হয় তার। এখন তো মানুষটার সাথে হেঁসে কথা বলবে,খাবে। প্রভা সহ্য করতে পারবে না। তারচেয়ে বরং কামরায়ই থাকবে। কামরায় ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। নিজের হাত-মুখ ধরে খুব কাঁদতে লাগলো। এতো অসুন্দর কেন সে? আর্সেলের পেছন থেকে দেখতেই আরমান বাইরের দিকে হাঁটা ধরলো। মারইয়াম ইউজিওয়েল চেঁচিয়ে উঠলেন।

“ব্রেকফাস্ট করবে না আব্বু?”

“হ্যাঁ।”

“তো আসো। কোথায় যাচ্ছো?”

“অফিসে।”

“আরে একটুই তো! খেয়ে যাও।”

“লেট হয়ে গেছে। অফিসে করে নেবো।”

বারকয়েক ডাকলেন আরমানকে কিন্তু গুরুত্ব দিলো না। পর-নারীর সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া,ওঠ-বস করা তার বড্ড অপছন্দের। সেখানে আবার তার প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে খাওয়া-দাওয়া মোটেও সম্ভব না। আর্সেলের মন ভার হলো। আজ দু’দিন হলো সে এসেছে। অথচ আরমানের দেখা নেই,সাক্ষাৎ নেই,কোনো খোঁজ-খবর নেই। কেমন গা ছাড়া ভাব। মনে হয় যে সে তাদের কেউ-ই না। মারইয়াম ইউজিওয়েল মিষ্টি হেঁসে বললেন,”মন খারাপ করো না। অফিসে মিটিং আছে। জানোই তো ছেলে আমার কাজের অবহেলা করতে পছন্দ করে না। খুব কাজ পাগল আর দায়িত্ববান ছেলেটা।”

আর্সেল মৃদু হাসলো। সেইজন্যই তো মানুষটাকে তার ভীষণ ভালো লাগে। বউ থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করতে চাইছে। প্রভাকে না দেখে বলল,”আম্মা শশীপ্রভা ব্রেকফাস্ট করবে না?”

“আমি গিয়ে দেখে আসি বরং।”

“না থাক। কাউকে পাঠাচ্ছি। ব্রেকফাস্ট করে মেডিসিন নিতে হবে তো মেয়েটার।”

“হ্যাঁ।”

বলেই উঠে গেলেন।

“শশীপ্রভা কে আন্টি?”

“আমার ছেলের বউ।”

মন ভার হলো আর্সেলের। বড় মির্জা সাহেব কথা বললেন না। সহ্য হচ্ছে না মেয়েটাকে। কোথ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। কখন আবার কোন কু-কাণ্ড ঘটায় সেই আতঙ্কে আছেন তিনি। সামনে যে বড়সড় যুদ্ধ হবে মা-ছেলের মধ্যে তা এখুনি আঁচ করতে পেরেছেন।

(৩৬)
আয়েশা মির্জা আরমানের কামরায় ঢুকতেই দেখলো সেদিনের মতো আজ আবারও প্রভা আয়নার সামনে চুল খামচে ধরে টানছে আর কাঁদছে আর বিড়বিড় করে কিছু বলছে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,”এইসব কি হচ্ছে শশীপ্রভা?”

“আমি এতো অসুন্দর কেন? আমার দিকে কেউ ফিরে তাকায় না কেন?”

“মানে?”

“আমি দেখতে সুন্দর না।”

আয়েশা মির্জার চোখে-মুখে বিরক্তি।

“কালরাতে যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছিলাম করেছো?”

“সব করেছি,লাভ হয়নি। আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।”

আয়েশা মির্জার রাগ হলো। ছেলেটা মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে মায়ের মতো। যেমন মা তেমন ছেলে। দুইজনই ঘাড়ত্যাঁড়া আর বাড়াবাড়িটা একদম মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ের। আস্ত একটা অসভ্য।

“কি বলেছে তোমাকে?”

“স্ত্রীর অধিকার চেয়েছি। বললো সময় লাগবে।”

স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সময় চেয়েছে আরমান তিনি বুঝতে পারলেন।

“তুমি কি ডাইরেক্ট অধিকার চেয়েছো?”

“হ্যাঁ।”

“ওরে বোকামেয়ে! তোমার মতো গাধা মেয়ে জীবনে দেখিনি।”

বোকার মতো তাকিয়ে রইলো প্রভা।

“বাঙালি মেয়েরা এতো বোকা হয় জানতাম না। বললেই তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিয়ে দিবে?তোমার আদায় করে নিতে হবে না?”

“কিভাবে করবো? তিনি তো কাছেই ঘেষতে দেয় না।”

“সব সময় সুন্দর করে সেজেগুজে,পরিপাটি হয়ে হাসিমুখে কথা বলবে। কফি বানিয়ে আনবে। টুকটাক কথা বলে আগে স্বাভাবিক হবে। তার মনে জায়গা করে নিবে। তারপর সুযোগ মত তুমি তোমার কথা বলবে। ধরেই এমন কথা বললে সে-তো এমন করবেই। কারণ সে এখনো স্বাভাবিক হতে পারছে না। তোমাকেই তাকে স্বাভাবিক করে নিতে হবে। আর আরমান যথেষ্ট বুদ্ধিমান! তোমার এতো কিছু করাও লাগতো না। তুমি বলার পূর্বেই সে নিশ্চয়ই তোমাকে আপন করে নিতো।”

প্রভা তার বোকামি বুঝতে পারলো। আগে তো মানুষটার সাথে ফ্রী হতে হবে। দু’জনকে স্বাভাবিক হতে হবে। তবেই তো একটা আবদার রাখা যায়।

“এরপর তুমি কি বলেছো?”

মিনমিন করে বলল,”ডিভোর্স চেয়েছি।”

আয়েশা মির্জা রেগে গেলেন প্রভার নির্বুদ্ধিহীনতায়।

“তার মানে এখন তুমি চাইছো তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে ও-ই মেয়েটাকে আরমান বিয়ে করুক তাই না?”

ফের বোকার মতো তাকিয়ে রইলো প্রভা।

“ভালোই তো সুযোগ করে দিলে। ওহ শিট! এতো গাধা কেনো তুমি? মাথায় কি কিছুই নেই? ওদিকে মারইয়াম উঁৎ পেতে আছে কিভাবে ছেলের সাথে ওই মেয়েটাকে বিয়ে দিবে সেই কুমতলব নিয়ে। কিন্তু সুবিধা করতে পারছে না এখনও। বুঝো না তুমি কিছু? কতোবড় অসভ্য মেয়ে তুমি স্বামীর কাছে ডিভোর্স চাও। কাজেরটা পারো না অকাজটাই বেশি করেছো। সে যখন বলেছে সময় লাগবে। তো নিক। তোমার তো বাড়াবাড়ি করে ডিভোর্স চাওয়ার দরকার ছিলো না। আর কাল রাতেই যে অধিকার দিতে হবে এমন তো নয়। তুমি চেষ্টা চালিয়ে যেতে।”

রাগে গজগজ করতে লাগলেন তিনি। মেয়েটা সত্যিই বোকা। মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি একেবারেই নেই। মানসম্মান ইজ্জত সব বরবাদ করে দিলো এতো বড় গাধা মেয়েটা। এই গোবরে ভরা মাথা দিয়ে মেয়েটা আবার ঢাবিতে চান্স পেয়েছে। কোন পাগলে এই মেয়ের পরীক্ষার খাতা দেখেছে আল্লাহ জানে। নয়তো চান্স পায় কিভাবে?

“কেবল আমি অসুন্দর অসুন্দর বললেই হবে?তোমার বুঝে নেওয়া উচিত আরমান যদি সুন্দরকে ভালোবাসতো,তাহলে মহলের মেয়েগুলোকে দিয়ে তার চাহিদা মিটিয়ে নিতো। দেহ পেলেই যদি মনের তৃপ্তি মিটানো যেতো তাহলে ৫০০ টাকা দিয়ে সবাই ওই দেহটাই কিনতো। বিয়ে করতো না। আমার কথার উপর বিশ্বাস রেখে তোমাকে না দেখে বিয়ে করেছে। তোমার উচিত ছিলো আগে তার মন জয় করা। তারপর নিজের অধিকার দাবী করা। আমি বলেছি বলেই নিজের অধিকার চাইতে গেছো। বললেই হয়ে গেলো সব?”

কিছু বলতে পারলো না প্রভা। এবার তিনি শক্ত গলায় বললেন,”ডিভোর্স চাওয়ার পর কি বলেছে?”

মিনমিন করে বলল,”আমাকে ডিভোর্স দিয়ে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করবে বলেছে। আর মেয়েটা নাকি ওনার উপযোগ্য।”

“বাহ! বেশ ভালোই। সব সহজ করে দিয়েছো। কারজন্য করলাম আমি এতোকিছু?”

কামরায় ফিরে আয়েশা মির্জা আরমানের বন্ধুদের কাছে ফোন করলেন। এর একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়বেন তিনি।

(৩৭)
রাতে ডিনার করতে বসলো আরমান। আর্সেল থাকলেও প্রভা নেই। অফিস থেকে ফিরে প্রভাকে কামরায় দেখেনি। এখন ডিনারেও নেই। মারইয়াম ইউজিওয়েল জোর করেই ছেলেকে ধরে এনেছেন। এইসবে বড্ড বিরক্ত আরমান। প্রভাকে দেখতে না পেয়ে উশখুশ করলো। আয়েশা মির্জা বুঝতে পারলেও নির্বিকার রইলেন। স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো,”উনি ডিনার করবেন না?”

“তোমার দাদীমা খাইয়ে দিবে। শশীপ্রভা নাকি নিজের হাতে কম খায়।”

আর কিছু বললো না আরমান। আজহার শেখের একমাত্র মেয়ে শশীপ্রভা। বড় আদরেই রেখেছেন তিনি। বাবার সাথে টুকটাক কথা বলছে আর খাচ্ছে আরমান।
_______________

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here