#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________58
নভেম্বরের ২৮ তারিখ / বিকেল ৫টা বাজে………..
গুনতে গুনতে পেয়িয়ে গেছে কয়েক’টি মাস । এই কয় মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে । তৃপ্তি সুদু বাইক চালানোই নয়, সে এখন কার(গাড়ি) প্রর্জন্ত চালানো শিখে গেছে । নিদ্র অনেক বিরক্ত এতে । সে তো সাফ না করে দিয়েছিল কোনো ভাবেই গাড়ি চালানো শিখাবে না । কিন্তু তৃপ্তি ফরহাদ আর আমেনাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পটিয়ে নিয়েছে । যার কারনে নিদ্রকে বাধ্য হয়েই শিখাতে হয়েছে । আর আজ এই বিকেলে তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে যানে । ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল পরিক্ষা শেষ তৃপ্তির । এখন ফলাফলের অপেক্ষা । বাইক হাওয়ার বেগে চালাচ্ছে তৃপ্তি । পিছন থেকে নিদ্র, তৃপ্তিকে জরিয়ে ধরে পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে । এই মেয়ের হাব ভাব নিদ্র কিছু বুঝতে পারছে না । কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তাকে । বাইক চালানো শিখিয়ে ভুল করেছে । নিদ্র এবার হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে । যখন তখন চাবি নিয়ে, হুট হাট করে নিদ্রকে টেনে বাইকের পিছনে বসিয়ে বাইক চালানো সুরু করে দেয় তৃপ্তি । আর তাকে জরিয়ে ধরতে বলে । নিদ্রর ইচ্ছে না থাকা শর্তেও জরিয়ে ধরতে হয় । নাহলে মহারানী তালে বেগুলে জ্বলে উঠে । এদিকে তৃপ্তি হেলমেটের ভিতরে ঠোঁট কামড়ে হাসছে । কারন আজ তার সব চাইতে খুশির একটা দিন । আজ তার একটা সপ্ন পুরোন হয়েছে । প্রিয় মানুষ’টি তাকে জরিয়ে ধরে বসে আছে । আর সে বাইক চালাচ্ছে । এমন মুহূর্ত কয়’টা মেয়ের কপালে হয় । শ্যামলী শিশু পার্কের সামনে এসে বাইক দার করালো তৃপ্তি । নিদ্র তৃপ্তিকে ছেরে দিয়ে ঠিক হয়ে বসলো । শিশু পার্কের সামনে বাইক দার করিয়েছে দেখে নিদ্র বিরক্তি কর ভংঙিতে বললো ।
:+সমস্যা কি তোর । এখনে বাইক দার করছিস কেন?(নিদ্র)
তৃপ্তি বাইকের চাবি, বাইক থেকে খুলে হাতে নিয়ে বললো ।
:+এখনে একটু ঘুরবো । জুইর কাছ থেকে শুনেছি ভিতর’টা নাকি অনেক সুন্দর ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে, নিদ্র আবারো বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বললো ।
:+ঢাকা শহরে কি পার্কের অভাব পড়ছে । যে তুই আমাকে শিশু পার্কে নিয়ে আসলি ।(নিদ্র)
তৃপ্তি এবার দাঁত কটমট করে বলে উঠলো ।
:+কথা কম বলে বাইক থেকে নামো । আমার মন চেয়েছে এখানে ঘুরতে । তাই এখানে আসছি । তোমার ভালো না লাগলে, তুমি যেতে পারো । আমি ভিতর’টা ঘুরে দেখবে ।(তৃপ্তি)
নিদ্র এবার আর কিছু বললো না । সোজা বাইক থেকে নেমে দারালো । তৃপ্তি বাইক থেকে নেমে বোরখা’টা একটু ঠিক করলো । এরপর মাথা থেকে হেলমেট খুলে হিজাব ঠিক করে, পার্স থেকে নিকাব বের করে তা পড়ে নিলো । নিদ্র সুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তৃপ্তিকে । এই প্রর্যায় তৃপ্তি নিদ্রর এক হাতে হেলমেট ধরিয়ে দিলো । আর আরেক হাত নিজের দু’হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বললো ।
:+এবার চলো । আমার অনেক দিনের সখ এখানে ঘুড়ার ।(তৃপ্তি)
নিদ্র আর মুখ খুলে কিছু বললো না । তৃপ্তিকে নিয়ে পার্কের মধ্যে প্রবেশ করলো ।
★
:+লিয়া,,, এই লিয়া,,, উঠ,,,।(লুবনা)
:+উহু,,,MOM….ঘুমোতে দাওনা । কেন ডিস্টার্ব করছো ।(লিয়া)
লিয়ার কথা শুনে, লিয়ার আম্মু লুবনা বেগম, লিয়ার গায়ের উপর থেকে কম্বল টান মেরে সরিয়ে নিলো । লিয়া চোখ মুখ কুঁচকে তার মায়ের দিকে তাকালো । লুবনা বেগম চোখ রাঙিয়ে বললেন ।
:+মার্কেটে যাওয়ার কথা ছিল তোর । আর তুই এই ভর দুপুর বেলা পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস ।(লুবনা)
লিয়া হাই তুলে শোয়া থেকে উঠে বসলো । এরপর বেডের পাসে পা দু’টো নামিয়ে বললো ।
:+এই দুপুর বেলা মার্কেটে যাবো না । বিকেলের দিকে যাবো ।(লিয়া)
:+তাই বলে খাওয়া দাওয়াও করবি না । এই দুপুর বেলা কেও ঘুমোয় ।(লুবনা)
লুবনা বেগমের কথার যবাব না দিয়ে, লিয়া তার গায়ের টি-শার্ট খুলে ফেললো । এরপর ওয়াসরুমের দিকে হাটা ধরলো । লুবনা বেগম চোখ দু’টো নামিয়ে ছি ছি করে পিছন থেকে বলে উঠলেন ।
:+তোর কি লাজ লজ্জা নেই লিয়া । এতো বড় দামড়া মেয়ে হয়ে, আমার সামনে এমন করতে তোর লজ্জা করে না ।(লুবনা)
লুবনা বেগমের কথা শুনে, লিয়া পিছনে ঘুরে লুবনা বেগমের দিকে তাকিয়ে, হেসে উঠে বললো ।
:+এখানে লজ্জার কি আছে MOM…..আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন তো তুমি,,,,,,,,।(লিয়া)
লিয়াকে থামিয়ে দিয়ে লুবনা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন ।
:+তখন তুই ছোট ছিলি । তাই তোকে খায়ি’য়েছি । শাওয়ার করিয়েছি । এটা প্রতেক’টা মায়েরই কর্তব । কিন্তু এখন তুই বড় হয়েছিস । MOM… এর সামনে নগ্ন হতে তোর লজ্জা করে না । আমরা বাঙালি মেয়ে । আমাদের কিছু কালচার আছে । আমাদের তা মেনে চলতে হবে । ফরেনার মেয়েদের মতো চলা ফেরা করলে আমাদের হবে না । আমরা মুসলিম,,,,,,,,।(লুবনা)
লুবনা বেগম আরো কিছু বলার আগেই, লিয়া মুখ ভেংচি কেটে বললো ।
:+আমরা মুসলিম যাতি, আমাদের এভাবে চলা ফেরা যাবে না । সব সময় বোরখার ভেতর থাকতে হবে । পরপুরুষের সামনে নিজেকে আড়াল করে রাখতে হবে ।,,,এই কথা গুলোই তো বলতে চাইছো তুমি । শুনো MOM…এটা লন্ডন । এখানে তোমার কথা শুনে চলা ফেরা করতে পারবো না । আর আমি তো বাহিরের কারো সামনে এমন ভাবে যাই না । সুধু তোমার সামনে এমন করি । পরপুরুষ তো দুরের কথা । আর আমার সপ্নের পুরুষ আছে । আমি অন্য কারো সাথে,,,,,,।(লিয়া)
:+আমার সামনেও এমন করতে পারবি না । কারন এটা পাপ । আমি শেষ বারের মতো তোকে বলছি । নিজের চলা ফেরার ধরন পাল্টা । এতে তোর সুন্দর একটা জীবন হবে । নাহলে বাহিরের নর হিংস্র পুশুরা তোর এই সুন্দর দেহ টাকে চিঁড়ে খাবে । আমি, আমার বড় মেয়েকে হাড়িয়েছি । তোকে হাড়াতে চাই না মা । নিজেকে আড়াল কর ।(লুবনা)
এই বলে লিয়ার গায়ে টি-শার্ট’টা জরিয়ে দিয়ে, লিয়ার রুম থেকে চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন লুবনা । লিয়া ডান হাতের তালু দিয়ে, ডান চোখের কোনের পানি মুছে নিলো । এরপর ওয়াসরুমে চলে গেল । কারন সে এখন শাওয়ার নিবে । এরপর খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিয়ে বিকেলের দিকে মার্কেটে যাবে শপিং করতে ।
——————————————–
রাত ১০টা বেজে ২৮ মিনিট…………..
ড্রইংরুমে সোফার উপর বসে টিভি দেখছে তৃপ্তি । তার পাসে আমেনা বিরক্তি-কর মুখ নিয়ে বসে আছে । পার্ক থেকে ঘুড়া ফেরা করে সাত’টার দিকে বাড়িতে ফিরে আসে তৃপ্তি । তৃপ্তিকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে নিদ্র আবার বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় । তৃপ্তির মন’টা আজ বেশ ফুর ফুরে । যাই হোক,,। কিছুখন পর পর আড়-চোখে আমেনাকে দেখছে তৃপ্তি । আমেনা চোখ মুখ কুঁচকে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে । উনার খুব বিরক্তি লাগছে । কয়দিন ধরে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখা সুরু করেছেন তিনি । এই সময়’টাতে একটা নাটক দেয়, নাটক’টা দেখতে উনার ভালোলাগে । কিন্তু আজ তৃপ্তি টিভিতে কাটুন চালিয়ে বসে আছে । আমেনা এবার তৃপ্তির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ।
:+দে না সিরিয়াল’টা,,, নাটক’টা শেষ হয়ে যাবে তো ।(আমেনা)
তৃপ্তি টিভির দিকে তাকিয়েই, আনমনা হয়ে বলে উঠলো ।
:+এসব নাটক দেখে? আমাকে পড়ে রশ বার করবে তুমি । আমি চাই না, আমার শা,,,,,,,।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা গুলো আবছা কানে বাঝতেই, আমেনা চোখ বড় বড় করে তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ।
:+কিহহহহহহ ।(আমেনা)
আমেনার কিহহ,শব্দে তৃপ্তির হুস ফিরে । সে আমতা আমতা করে মাথা চুলকে বললো ।
:+আব, ব, আ,,ব,,। না মানে,, বলছিলাম, নাটক দেখলে মানুষ খারাপ হয়ে যায় । আমার আম্মু বলছে কখনো ওসব নাটক দেখতে নেই । ও গুলো নাকি, পরিবারের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করে ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে, আমেনা চোখ দু’টো ছোট ছোট করে বললেন ।
:+ওই আমি কি গাধা,,আমি কিছু বুঝি না না-কি । যে মূরখো দের মতো ঝামেলা করবো । এই নাটক’টার মধ্যে বৌ, শাশুড়ীর ঝগড়া আমার সেই লাগে । তাই এই নাটক’টা একটু দেখি । এখন তাড়াতারি চট পট সিরিয়াল দে ।(আমেনা)
আমেনার কথা শুনে, তৃপ্তি অন্য দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো ।
:+এই বৌ, শাশুড়ীর ঝগড়ার জন্যই তো,,, ওই সিরিয়াল আমি দেবো না । এগুলো শিখে আমাকে পড়ে সায়েস্তা করার ধন্দা ।(তৃপ্তি)
আমেনা তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করে বলে উঠলেন ।
:+এই কি বিরবির করছিস তুই । তাড়াতাড়ি সিরিয়াল দে । আজকে শাশুড়ী বৌকে একটা চড় মারবে । তারপর কয়েক’টা বাজ পড়বে বৌয়ের মাথায়,, বৌ মাথা ঘুরে পড়ে যাবে । শাশুড়ী মুখ ভেঙচি কেটে সেখান থেকে চলে যাবে । তাড়াতাড়ি সিরিয়াল দে,, সিন’টা চলে যাবে তো ।(আমেনা)
আমেনার কথা শুনে, তৃপ্তি শুকনো ঢোক গিলে টিভি অফ করে দিলো । আজ তো আমেনাকে কোনো ভাবেই এই সিরিয়াল দেখতে দেবে না তৃপ্তি । রিমোট থেকে বেটেরি গুলো খুলে হাতে নিয়ে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো সে । আজ আমেনাকে এই সিন দেখতে দেবে না তৃপ্তি । নাহলে ভবিষ্যৎতে যে তার কপালে দুঃখ থাকবে ।
★
:+কেমন আছেন শাশুড়ী মা ।(মেয়ে)
ফোনের অপর পাসের মেয়েটির কথা শুনে, আমেনার কপালে ঘাম যমা হলো । বাড়ির সবাই ঘুমে বিভোর । রাত প্রায় এক’টা বাজে । নিজের রুমের বারান্দায় কানে ফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমেনা । ডান হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছে আমেনা বললো ।
:+আমি ভালো আছি । তোরা কেমন আছিস ।(আমেনা)
আমেনার কথা শুনে, মেয়েটি মৃদু হেসে উঠে বললো ।
:+আমিও ভালো আছি । সবাইও ভালো আছে । শাশুড়ী মা,, সবাই কি ঘুমিয়ে গেছে ।(মেয়ে)
আমেনা চোখ দু’টো বুঝে নিলেন,। এরপর বললেন ।
:+হ্যাঁ,,, ঘুমিয়ে গেছে ।(আমেনা)
:+ওকে কি বলেছেন,,,,যে আমি কাল আসছি ।(মেয়ে)
আমতা আমতা করে বললো মেয়েটি । মেয়েটির কথা শুনে, আমেনা চট করে চোখ খুললেন । কাল তো ২৯ তারিখ । উনি এটা ভুলে গেছেন । হালকা ঠান্ডা পড়া কুয়াশার মাঝে দাড়িয়ে আমেনা ঘামছে । ফোনের অপর পাসের মেয়েটিকে তিনি বললেন ।
:+না,,, এখনো যানানো,,হয়নি । কাল কখন রওনা দিবি ।(আমেনা)
মেয়েটি একটু সময় চুপ থাকলো । এরপর বললো ।
:+সে আমি সময় মতো বললো । তবে এতোটুকু যেনে রাখো । কাল সন্দায় ওকে এয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দেবে । রাত ৮টা নাগাদ হয়তো আমি পৌছে যাবো ।(মেয়ে)
মেয়েটির কথা শুনে, আমেনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ।
:+ঠিক আছে । এখন রাখছি তাহলে । ঘুম আসছে ।(আমেনা)
মেয়েটি খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বললো ।
:+আচ্ছা ঘুমোও । রাত তো আর কম হলো না । তোমার শরীরে যত্ন নিয়ো । ভালো থেকো,,,বায় ।(মেয়ে)
:+হুম,,তোরাও ভালো থাকিস ।(আমেনা)
এই বলে কান থেকে ফোন সরিয়ে চোখের সামনে নিয়ে আসলো আমেনা । মেয়েটি কল কেটে দিয়েছে । টু টু টু করে কয়েকটা আওয়াজ হয়েছে । আমেনা চোখের কোনের পানি মুছে বলে উঠলেন ।
:+আমি কি করবো এখন বল । তোর মন যে আমি ভাঙতে চাই-নি । আমাকে মাপ করে দিস । আমি ভেবে ছিলাম আমার ছেলে আর কারো উপর ভালোবাসার অধিকার ফেলবে না । কিন্তু আমি কেমন বোকা দেখ । মানুষের যে দ্বিতীয় ভালোবাসাও হয়,, এটা আমার যানা ছিল না । আর দ্বিতীয় ভালোবাসা, প্রথম ভালোবাসার থেকে এতো’টা যে গভির হয়,, আমি যানতাম না । মাপ করে দিস আমায় ।(আমেনা)
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
[।কপি করা নিশেদ।]
[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]