তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________71

0
659

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________71

খুব ভোরে ফুফানোর শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমেনার । তৃপ্তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে তিনি ঘুমিয়ে গেছেন বুজতে পারেন নি । ভোরের আলো ফুটে উঠেছে । আমেনা ছোট ছোট চোখ করে তৃপ্তির দিকে তাকালো । মেয়ে’টা হেঁচকি তুলে ফুফিয়ে যাচ্ছে । আমেনা আস্তে করে তৃপ্তিকে নিজের সাথে জরিয়ে নিলো । তৃপ্তি ফুফিয়ে কেদে বলে উঠলো ।

:+সরি বড় আম্মু । আমি কিছু বুঝতে পারিনি । কি থেকে কি হয়ে গেল । তুমি আমাকে মাপ করে দাও ।(তৃপ্তি)

আমেনা তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ।

:+যা হয়েছে, তা ভুলে যা । দ্বিতীয় বার যেন এমন না হয় । সব কিছু বুঝে শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হয় । সময়কে একটু, সময় দিতে হয় ৷ নাহলে সে শুধরাবে কি করে ।(আমেনা)

তৃপ্তি চোখের পানি মুছে আমেনাকে জরিয়ে ধরে বললো ।

:+এ তোমাকে ছুয়ে কথা দিচ্ছি । জীবনেও আর তাকে আমি ভুল বুঝবো না । সে আমার সাথে যা ইচ্ছে করুক ৷ আর কখনো তাকে ছেড়ে যাবো না । সুধু একটি বার তাকে আমার কাছে এনে দাও বড় আম্মু । বিশ্বাস করো কখনো আর তাকে ছেড়ে যাবো না ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে আমেনা কোনো এক কারনে মুচকি হাসলেন । মানুষ দুরে গেলে তার মূল্য বোজা যায় । তৃপ্তিও এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে । আমেনা তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ।

:+আমার নানু ভাই যে আসছে । তা-কি তুই জানিস ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে তৃপ্তি অবাক হয়ে প্রথমে আমেনার মুখের দিকে তাকালো । আমেনা কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে । উনার মুখে এক টুকরো হাসি । তৃপ্তির ছোট মাথায় আর বুজতে বাকি রইলো না । যে আমেনা সব যেনে গেছে । তৃপ্তি লজ্জায় মুখ’টা আমেনার বুকে লুকিয়ে বললো ।

:+তিন দিন আগে যেনেছি ।(তৃপ্তি)

:+কিহহহ তিন দিন । আর আমাদের একটা কল করলি না ৷(আমেনা)

:+কল করেছিলাম, কিন্তু তোমাদের ফোন অফ পাচ্ছিলাম । শেষে কাল সকালে রাহুল ভাইয়ার ফোনে কল করে সব যানতে পারি । তাই আর দেরি না করে সোজা বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে আসি । আম্মু বাধা দিয়েছিল । আমাকে একা কোনো ভাবেই আসতে দেবে না । আমি আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে আসছি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে আমেনা তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো । কিছু সময় দুজনে চুপচাপ শুয়ে রইলো । এরপর আমেনা তৃপ্তিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো ।

:+দেখি আমাকে এখন উঠতে হবে । নাস্তা বানাতে হবে । কাল রাতে তো কিছু খাসনি । নামাজও পড়া হলো না আজ ।(আমেনা)

এই বলে আমেনা শোয়া থেকে উঠে বসলো । তৃপ্তি আমেনার বাম হাত খপ করে ধরে বললো ।

:+উনি ফিরে আসবেন তো বড় আম্মু । আমার ভয় করছে । ভুল বুঝবেন না তো আমায় ।(তৃপ্তি)

:+আমি থাকতে, আমার ফুলের মতো মেয়েকে কষ্ট পেতে দিবো না । ওকে শুধু এক বার হাতের কাছে পাই । তারপর দেখাবো মজা ।(আমেনা)

এই বলে আমেনা তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ আর তৃপ্তি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো নিদ্রকে নিয়ে তার কাটানোর দিন গুলোর কথা । কতো সুন্দরই না ছিল তার দিন গুলো । একটু ভুলে সব এলো মেলো হয়ে গেল । সে যদি সেদিন এই বাড়ি থেকে না যেত । তাহলে সময়’টা এখন অন্যরকম হতো । ভেবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তৃপ্তির ভিতর থেকে ।

———————————————-

বেলা প্রায় ১১টা বাজে…………….
আমেনা তৃপ্তির মাথায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছেন । তৃপ্তি চুপচাপ বসে আছে । এমন সময় বাড়ির ভিতরে হুড় মুড়িয়ে প্রবেশ করলো জেক । জেককে দেখে আমেনা অবাক হলো । তৃপ্তি একবার চোখ তুলে জেকের দিকে তাকালো, এরপর মাথায় ওড়না টেনে নিলো । জেক বাড়ির ভিতরে এসে তৃপ্তিকে দেখে ঝাটকা খেলো । অবাক দৃষ্টিতে তৃপ্তির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বললো ।

:+তুমি কবে আসলে ।(জেক)

তৃপ্তি মাথা নিচু করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমেনা বললো ।

:+গত কাল সন্ধায় আসছে ।(আমেনা)

জেক সেদিকে আর গুরুত্ব না দিয়ে আমেনাকে বললো ।

:+আন্টি আপনাকে কিছু বলতে চাই । এদিকে আসুন ।(জেক)

:+কি বলবে, এখানেই বলো না ।(আমেনা)

:+না আন্টি, আপনি প্লিজ এদিকে আসুন ।(জেক)

এই বলে জেক সেখান থেকে সরে যেতে চাচ্ছিল । কিন্তু তার আগেই তৃপ্তি বলে উঠলো ।

:+বড় আম্মু, আমি রুমে যাচ্ছি । তোমরা কথা বলো ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি সেখান থেকে উঠে চলে গেল । ভুল বসতো তৃপ্তি ফোন’টা এখানে ফেলে গেল । তৃপ্তি চলে যেতেই জেক আমেনাকে বললো ।

:+আন্টি নিদ্রর খোজ পাওয়া গেছে । কুমিল্লায় আছে এখন ও ।(জেক)

:+কিহহহহ সত্যি ।(আমেনা)

জেকর কথা শুনে খুশিতে আন্তহারা হয়ে চেচিয়ে উঠলো আমেনা । জেক আসে পাসে তাকিয়ে বললো ।

:+হ্যাঁ আন্টি সত্যি । আমরা সবাই মিলে এখন ওকে আনার জন্য যাবো । আপনি আর কোনো টেনশন করবেন না ।(জেক)

:+বাবা আমি এখন ওর সাথে একটু কথা বলবো । ওর নাম্বার আছে তোমার কাছে ।(আমেনা)

:+নাম্বার তো আছে আন্টি । কিন্তু ফোনে বেলেন্স নেই ।(জেক)

জেক কথা শুনে আমেনার মন খারাপ হয়ে গেল । উনি দাড়ানো থেকে আস্তে করে সোফায় বসে পড়লেন । মাথা কাত করে বাম পাসে ঘুড়াতেই তৃপ্তির ফোন’টা দেখতে পেল আমেনা । তাড়াতাড়ি উনি তৃপ্তির ফোন’টা নিয়ে জেকর হাতে দিয়ে বললেন ।

:+এই নাও ফোন ৷ এবার কল করো ।(আমেনা)

জেক ফোন’টা হাতে নিয়ে দেখলো অয়েলপেপারে নিদ্রর ছবি । জেক ভাবলো হয়তো এটা আমেনার ফোন । সে একটা নাম্বার ফোনে তুললো । এরপর কল করলো । কিন্তু ওপাস থেকে কেও কল রিসিভ করছে না । বেশ কয়েক বার কল করলো জেক । কিন্তু কেও কল রিসিভ করলো না ।

:+আন্টি আপনি টেনশন করবেন না । নিদ্রর সাথে আমার কথা হয়েছে । আমি নিজে ওর সাথে কথা বলেছি । আপনি কিছুখন পর আবার চেষ্টা করবেন । দেখবেন নিদ্র ঠিকই কল রিসিভ করবে । হয়তো এখন ও খাওয়া দাওয়া করতে গেছে । কিছুখন পর রুমে আসলে কল রিসিভ করবে ।(জেক)

আমেনার মন খারাপ দেখে জেক শান্তনা দিয়ে বললো । আমেনা জেকের হাত থেকে ফোন’টা নিয়ে সোফার উপর বসে বললো ।

:+কোথায় আছে এখন ও ।(আমেনা)

:+কুমিল্লা লালমাটি । একটা ফটো শুট গ্রুপের সাথে আছে নিদ্র । ওই গ্রুপের একটা মেয়ে আমাকে আজ কিছুখন আগে ফেসবুকে নক করে যানিয়েছে । এবং নিদ্রকে ভিডিও করে আমাকে পাঠিয়েছে মেয়ে’টা । মেয়ে’টার নাম ঝুমু ।(জেক)

জেকের কথা শুনে আমেনা বসা থেকে আবার দাড়িয়ে বললো ।

:+কৈ দেখি ভিডও’টা ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে জেক মেসেঞ্জারে গিয়ে ভিডিও অপেন করলো । আমেনা গভির ভাবে ভিডিওতে দেখলো । নিদ্র খাবার খাচ্ছে । মুখের দাড়ি গুলো বেশ লম্বা হয়েছে । দেখে মনে হচ্ছে সেভ করে না । মাথার চুল গুলো একটু এলো মেলো । ঘুম ঘুম ভাব নিদ্রর মাঝে । ভিডিও’টা দেখে আমেনার কলিজা শীতল হয়ে হেল । তিনি জেকের দিকে তাকিয়ে বললেন ।

:+আমিও তোমাদের সাথে যাবো । আমি আমার ছেলেকে ফিরিয়ে আনবো ।(আমেনা)

:+না আন্টি, আপনার যাওয়ার দরকার নেই । এতোদুর যার্নি করে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন । আপনি বরং বাসায় থাকুন । আমরা গিয়ে ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে আসবো । আর এখন তো তৃপ্তি বাসায় ফিরে আসছে । আমাদের জন্য না হোক । তৃপ্তির জন্য হলেও নিদ্র ফিরে আসবে । আমরা বেলা ২টার দিকে রওনা দেবো ।(জেক)

আমেনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে জেক চলে গেল । আমেনা ধপ করে সোফায় বসে পড়লো । এমন সময় তৃপ্তি আবার আমেনার কাছে আসলো । আমেনা চোখের পানি মুছে তৃপ্তির দিকে তাকালো । তৃপ্তি অবুঝের মতো বলে উঠলো ।

:+জেক ভাইয়া কেন আসছে বড় আম্মু ।(তৃপ্তি)

আমেনা বিষয়’টা এড়িয়ে গিয়ে বললো ।

:+এমনি আমাদের খোজ নিতে আসছে ।(আমেনা)

তৃপ্তির “ওওও” বলে নিজের ফোন হাতে নিলো । এরপর আমেনার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+বড় আম্মু, আমি রুমে গেলাম । ঘুম আসছে । তুমি কি করবে এখন ।(তৃপ্তি)

:+আমি শাওয়ার নেবো ।(আমেনা)

এই বলে আমেনা বসা থেকে দাড়িয়ে গেল । তৃপ্তি আর কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে হাটা ধরলো । আমেনাও তৃপ্তির পিছু পিছু এসে নিজের রুমে চলে গেল । তৃপ্তি নিজ রুমে এসে একটা কাগজে কিছু লিখলো । এরপর তৈরি হয়ে কাগজ’টা আমেনার রুমে বেডের উপর রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো । অতপর তৃপ্তি গাড়িতে উঠে ফোন থেকে নাম্বার নিয়ে ট্রেগ করলো । তারপর গাড়ি স্টাড দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাত্রা শুরু করলো সেই ট্রেগ করা লোকেশনে । এদিকে আমেনা শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখলো । তার বেডর উপর একটা কাগজ । আমেনা বেডের কাছে এসে কাজগ’টা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো ।

কাগজের লেখা ।
সরি বড় আম্মু । আমাকে মাপ করে দিও । তোমাকে না যানিয়ে যেতে হচ্ছে । তোমাকে যানালে হয়তো আমাকে যেতে দিতে না । জেক ভাইয়ার মুখে উনাকে পাওয়া গেছে শুনে, নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না । আমি না গেলে উনি ফিরে আসবেন না । তা আমি যানি । তুমি আমাদের বিয়ে জন্য সব রেডি করো । আমি আমার বরকে আনতে যাচ্ছি ।

কাগজের লেখা গুলো পড়ে আমেনা হাসবেন না কাদবেন বুঝতে পারছেন না । মেয়েটা যে পাগলামি করবে তিনি আগেই যানতেন । তাই তো বিষয়’টা এড়িয়ে গেছেন । কিন্তু এই মেয়ে আড়াল থেকে ঠিকই সব শুনে ফেলেছে । এখন সঠিক ঠিকানা মতো যেতে পারলেই হলো । দীর্ঘশ্বাস ফেলে আল্লহ আল্লহ করতে লাগলো আমেনা ।

———————————————–

প্রায় সন্ধা হয়ে গেছে । এমন সময় দোতলা একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দার করালো তৃপ্তি । লোকেশন এখানে এসে থেমে গেছে । ফোন’টা হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো সে । এরপর আসে পাসে তাকালো । রাস্তা দিয়ে অনেক মানুষ হেটে যাচ্ছে । সামনে তাকাতে গেটের পাসে একজন বয়স্ক লোককে দেখতে পেলো তৃপ্তি । গেটের পাসে টুলে বসে সিগারেট ফুকছেন তিনি । তৃপ্তির আর বুঝতে বাকি রইলো না, যে ইনি গেটের দারোয়ান । ফোন থেকে নিদ্রর একটা ছবি বের করে গেটের দারোয়ানের কাছে এগিয়ে গেল তৃপ্তি । ভিতরে ভিতরে অনেক ভয় পাচ্ছে সে । কিন্তু উপরে তা প্রকাশ করছে না । নিজেকে যথা সম্ভব শক্ত রেখেছে । দারোয়ানের সামনে গিয়ে তৃপ্তি দাড়াতেই দারোয়ান বলে উঠলো ।

:+কি চাই এখানে ।(দারোয়ান)

তৃপ্তি আমতা আমতা করে নিজের ফোন’টা দারোয়ানের দিকে বারিয়ে দিয়ে বললো ।

:+উনি কি এখানে থাকেন । একটু ভালো করে দেখে বলুন তো ।(তৃপ্তি)

দারোয়ান তৃপ্তির হাত থেকে ফোন নিয়ে ভালো করে নিদ্রর ছবি’টা দেখলো । এরপর আবার তৃপ্তির হাতে ফোন ফেরত দিয়ে দারোয়ান বললো ।

:+কি দরকার উনার কাছে ।(দারোয়ান)

দারোয়ানের কথা শুনে তৃপ্তি স্থীর নিশ্বাস ছাড়লো । তার মানে সে ঠিক যায়গায় আসছে । তৃপ্তি দারোয়ানকে বললো ।

:+উনি আমার স্বামী । রাগ করে বাসা থেকে চলে আসছেন ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে দারোয়ানের মুখ থেকে সিগারেট পড়ে গেল । দারোয়ান তাড়াতাড়ি সিগারেট মাটি থেকে তুলে হাতে নিলো । তৃপ্তির সিগারেটের ধোঁয়া সহ্য হচ্ছিল না । খুক খুক করে কয়েক বার কেশে উঠলো সে । দারোয়ান তা দেখে সিগারেট’টা মাটিতে আবার ফেলে পা দিয়ে পিষে নিলো । এরপর তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+আমি আজ প্রর্যন্ত বৌকে রাগ করে শশুড় বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি চলে যেতে দেখছি । কিন্তু আজ প্রথম শুনলাম জামাই রাগ করে বাড়ি ছেরে পালিয়েছে । আর বৌ তার খোজ করতে আসছে । যাই হোক,,, মা তুমি ঠিক যায়গায় এসেছো । উনি এখানে থাকেন । উনার সাথে আরো অনেকে থাকে । উনারা বাহিরে গেছে । এখনি চলে আসবে । তুমি ভিতরে যাও ।(দারোয়ান)

দারোয়ানের কথা শুনে তৃপ্তির মুখে হাসি ফুটে উঠে । কিন্তু তাও কেন যেন ভয় করছে তৃপ্তির । সে দারোয়ানকে বললো ।

:+না চাচা আমি এখানেই ঠিক আছি । উনি আসলে তারপর,,,,,,,,।(তৃপ্তি)

তৃপ্তি পুরো কথা শেষ করতে পারলো না । তার আগেই দারোয়ান বলে উঠলো ।

:+ওই তো উনারা চলে আসছে ।(দারোয়ান)

দারোয়ানের কথা শুনে তৃপ্তি ডান পাসে তাকালো । প্রায় ৮ জন হেটে তার দিকে আসছে । ৩ জন মেয়ে আর ৫ জন ছেলে । কিন্তু সবার এক পাস দিয়ে হাটা লম্বা ছেলেটাকে চিনতে তৃপ্তির বিন্দু মাত্র সময় লাগলো না । কোনো কিছুর তক্কা না করে দৌড় লাগালো তৃপ্তি । সবাইকে এড়িয়ে গিয়ে লম্বা ছেলেটার বুকে গুড়ি খেয়ে পড়লো । নিজের বাহুতে যত শক্তি আছে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলো । এরপর ঠুকরে কেদে উঠলো । হঠাৎ এমন হওয়ায় সবাই থেমে গেল । নিদ্র কিছু বুঝে উঠতে পারছে না । একটা মেয়ে এমন ভাবে দৌড়ে এসে তাকে জরিয়ে ধরে কাদছে কেন । নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো সে তৃপ্তিকে । কিন্তু তৃপ্তি আরো শক্ত করে নিদ্রকে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো ।

:+আমাকে খমা করে দেওয়া যায় না ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির গলার আওয়াজ শুনে কেপে উঠলো নিদ্র । এই মেয়ে এখানে কি করে এলো সে বুঝতে পারছে না । গায়ের সব শক্তি দিয়ে তৃপ্তিকে নিজের থেকে ছারালো নিদ্র । এরপর তৃপ্তির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো । তৃপ্তি হোছট খেয়ে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেয় । নিদ্র তৃপ্তিকে দোতলা বাড়ির, সে যেই রুমে থাকে সেখানে নিয়ে আসলো । তৃপ্তিকে রুমে ধাক্কা দিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো সে । তৃপ্তি ভয়ে কেপে উঠলো । নিদ্র হুংকার দিয়ে উঠলো ।

:+এখানে কেন আসছিস তুই । আমাকে তো ছেড়ে চলে গেছিস, তাহলে কেন আসলি এখানে । আমি না ধর্ষক, আমাকে কেন খুজতে আসছিস ।(নিদ্র)

তৃপ্তি হাও মাও করে কেদে উঠলো । নিদ্র রেগে রুমে থাকা একটা চেয়ারে বসে পরলো । তৃপ্তি ধিরে ধিরে এক পা এক পা করে নিদ্রর দিকে এগিয়ে গেল । এরপর নিদ্রর কোলে বসতে চাচ্ছিল । কিন্তু নিদ্র চোখ গরম করে তাকালো । তৃপ্তি ভয় পেয়ে সোজা হয়ে দারিয়ে গেল । নিদ্র নিজের চুল গুলো খামছে ধরে চোখ দু’টো বুঝে বললো ।

:+আমি চোখ খোলার আগে তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যা । আমি আর কারো মায়ায় জড়াতে চাই না ।(নিদ্র)

কথা গুলো তৃপ্তির বুকে লাগলো । কিন্তু সে বুঝে গেল । এই ছেলে এভাবে মানবে না । একে মানাতে হলে, অন্য প্রদত্তি অবলম্বন করতে হবে । তৃপ্তি প্রথমে নিকাব খুললো এরপর হিজাব খুললো, তারপর বোরখা খুলে রুমের ভিতরে থাকা টেবিলের উপর রাখলো । অতপর গায়ের জামার হাত গুটিয়ে নিদ্রর পিছনে গিয়ে দাড়ালো । নিদ্র কিছু বুঝে উঠার আগেই, তৃপ্তি নিদ্রর চুল দু’হাত দিয়ে খামছি মেরে চেয়ারের সাথে টেনে ধরলো । নিদ্র ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো । তৃপ্তি দাত কটমট করে বলে উঠলো ।

:+দোষ করবি তুই । আবার রাগও দেখাবি তুই । তাহলে আমি কি করবো । অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, কিন্তু আর না । একটু ভুলে আজ অনেক কিছু হয়ে গেছে । আমি তোকে আমার পিছনে আসতে নিষেধ করেছি । তাই বলে তুই আসবি না । আমার ভুল ভাঙাবি না । আমি নাহয় তোর কাছে আসার জন্য বাচ্চামো করেছি । কিন্তু এসেছি তো । তুই ই তো আমাকে তোর কাছে নিয়ে আসলি । তাহলে যখন চলে গেছি । এক বারো আমার খোজ নিলি না কেন । আর এখন আমি সেই ঢাকা থেকে এখানে আসলাম তোর জন্য । আর তুই আমাকে চলে যেতে বলছিস । সব কিছু ভুলে অচেনা যায়গায় তোর জন্য যুকি নিয়ে ছুটে আসলাম । আমাকে যদি তুই ভালোবাসতি, তাহলে এক বার হলেও আমার ভুল ভাঙানোর জন্য যেতি । কিন্তু তুই কি করলি,,,,,,, আজ তোকে তো আমি ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি নিদ্রর চুল ধেরে টানতে লাগলো । তৃপ্তির কথা শুনে নিদ্র শুকনো ঢোক গিললো । চেয়ার থেকে পড়ে যেতে নেয় নিদ্র । তৃপ্তি তাড়াতাড়ি চুল ছেড়ে দেয় । নিদ্র চট করে দাড়িয়ে ঠাসস করে চড় বসিয়ে দেয় তৃপ্তির গালে । টাল সামলাতে না পেরে মেঝেতে পড়ে যায় তৃপ্তি । নিদ্র সেদিকে খেয়াল না করে রাগে লম্বা পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল । রুম থেকে বেরোতেই ঝুমু সামনে পড়ে । নিদ্র পাস কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ঝুমু আবার সামনে এসে দাড়ায় । নিদ্র চোখ গরম করে তাকায় । ঝুমু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে, নিজের ফোন নিদ্রর সামনে ধরলো । নিদ্র ফোনের স্কিনে তাকালো । একটা মেসেজ লেখা ।

মেসেজ ৷।
নিদ্র আমি জেক । তোর ফোনে কল যাচ্ছে । তুই রিসিভ করছিস না কেন । আর শুন তৃপ্তি তোর কাছে গেছে । আন্টি বলেছে ওর শরীর ভালো না । আর একটা কথা । ও প্রেগন্যান্ট । প্লিজ ভাই,, ও তোর কাছে গেলে রেগে কিছু করিস না । তাহলে বড় দূর্ঘটনা ঘটে যাবে । ওর পেটে তোর বাচ্চা । আমরা কিছু সময়ের মধ্যেই তোর কাছে পৌছে যাবো ।

নিদ্র মেসেজ’টা দেখে ঝুমুর দিকে তাকালো । ঝুমু মুচকি হাসলো ।

:+তাহলে তুমিই ওদেরকে আমার খোজ দিয়েছো ।(নিদ্র)

:+হুম দিয়েছি । আর কতদিন এভাবে থাকবে বলো তো । আর এদিকে অর্ণবও চলে আসবে পরসু । তখন তো তোমার ছুটি হয়ে যাবে । তোমাকে আর আমাদের দরকার পরবে না । তাই ভাবলাম ওদের যানিয়ে দেই । তিন মাস তো আমাদের সাথে ঘুরলে । এবার বাড়িতে গিয়ে বৌয়ের সাথে সংসার করো । আমি চাইলে তিন মাস আগেই ওদের সবটা জানিয়ে দিতাম । কিন্তু তোমাকে দরকার ছিল আমাদের তাই যানাই নি । এখন দরকার শেষ, এবার ফুটো ।(ঝুমু)

এই বলে ঝুমু চলে গেল । নিদ্র ঝুমুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । হঠাৎ নিদ্রর মাথায় এলো জেকের মেসেজের লেখা । তৃপ্তি প্রেগন্যান্ট । নিদ্রর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো । নিজের মাথার চুল দু’হাত দিয়ে খামছে ধরে আবার রুমে আসলো নিদ্র । রুমে এসে সামনে তাকালো সে । তৃপ্তি ঘাপটি মেরে রুমের এক কোনায় মেঝেতে বসে কেদে যাচ্ছে । থাপ্পড়ের কারনে ঠোঁটের কোন ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে । নিদ্র আসতে করে গিয়ে তৃপ্তির পাসে বসলো । তৃপ্তি চোখ ভড়া জল নিয়ে নিদ্রর দিকে তাকালো । নিদ্র চোখ দু’টো বুঝে দেয়ালের সাথে হেলান দিলো ।

:+আমাকে কষ্ট দিতে তোমার ভালো লাগে তাই না । যেদিন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো । সেদিন বুঝবে ।(তৃপ্তি)

নিদ্রর দিকে তাকিয়ে ফুফিয়ে বলে উঠলো তৃপ্তি । নিদ্র চোখ খুলে তাকালো তৃপ্তির দিকে । এরপর পা দু’টো মেঝেতে টান টান করে মেলে দিয়ে আস্তে করে তৃপ্তিকে টেনে কোলে শুয়িয়ে নিলো । তৃপ্তি নিদ্রর কোলে মাথা রেখে নিদ্রর মুখের দিকে তাকালো । চোখ দু’টো দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো তার । নিদ্রর চোখ দু’টোও জ্বলজ্বল করছে । হয়তো এখনি কয়েক ফোটা পানি পড়বে । বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে নিদ্র । মুখের কথা কোথায় যেন হাড়িয়ে গেছে তার । বাবা হওয়ার অনুভুতি সব কথা তার কাছ থেকে কেরে নিয়েছে । শত শত মান অভিমান এক নিমিষে ভেঙে গুড়িয়ে গেছে । গায়ের শার্টের একটা কোন দিয়ে তৃপ্তির ঠোঁট থেকে থুতনিতে লেগে যাওয়া রক্ত ধিরে ধিরে মুছে দিতে লাগলো নিদ্র । তৃপ্তি গভির ভাবে নিদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে । খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে সে নিদ্রকে । নিদ্রও খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে তার প্রিয়সীকে ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিষেধ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here