তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________63

0
563

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________63

পেরিয়ে গেছে তিন’টা দিন………….
আমেনা মাথা নিচু করে বসে আছেন নিজ রুমে । উনার চোখ দু’টো স্থির হয়ে আছে মেঝেতে । রুমে থাকা সিঙ্গেল সোফার উপর বসে ফরহাদ তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমেনার দিকে । আমেনার থেকে একটু দুরে দারিয়ে থাকা লিয়ার চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পড়ছে । আমেনার স্তব্ধতা লিয়া মেনে নিতে পারছে না । খুবে চেচিয়ে উঠলো লিয়া ।

:+যদি ওকে আমার সাথে বিয়ে নাই দেবে । তাহলে প্রমিজ করে ছিলে কেন ? কেন বলে ছিলে ও অন্য কাওকে আর কোনো দিন ভালোবাসবে না ? কেন বলেছিলে ওকে আমার সাথে বিয়ে দেবে ? কেন বলেছিলে আমার পড়াশোনা শেষ করতে ? কেন আমার মন নিয়ে খেললে তুমি ফুফি ?(লিয়া)

আমেনা মেঝে থেকে চোখ তুলে লিয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো । লিয়া চোখ ফিরিয়ে নিলো আমেনার থেকে । মেয়ে’টাকে এতো’টা আসা দেওয়া উচিত হয়নি আমেনার । এজন্য’ই মানুষ বোধহয় বলে, “সময়ের সাথে সব কিছু পাল্টে যায় । সময় মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় । অসময়ে সিদ্ধান্ত নিলে । পড়ে ভুগতে হয় ।” ফরহাদ শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো ।

:+এসব কি হচ্ছে আনু ।(ফরহাদ)

আমেনা ফরহাদের দিকেও অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো । ফরহাদ বসা থেকে উঠে লিয়ার কাছে আসলো । এরপর লিয়ার মাথা হাত বুলিয়ে বললো ।

:+কি হয়েছে মামুনি । আমাকে সব খুলে বল । আমি কিছু বুঝতে পারছি না ।(ফরহাদ)

ফরহাদের আদর মাখা কথা শুনে, লিয়ার কান্নার বেগ বেরে গেল । ফুফিয়ে ফুফিয়ে বলে উঠলো লিয়া ।

:+আজ সকালে যখন আমি বাসা থেকে বেরিয়ে নিদ্রদের ক্লাবে যাই । তখন সাব্বির আমাকে বললো, নিদ্র আর তৃপ্তির রিলেশনের কথা আমি যানি কি-না । কথা’টা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো । আমি সাব্বিরের দিকে খুদ্দ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি, একদম বাঝে কথা বলবি না । কিন্তু সাব্বির অবাক হলো মনে হয় আমার রাগ হওয়ায় । পরে সাব্বির আমাকে নিদ্রর সাথে কথা বলতে বললো এই বেপারে । আমার মাথায় প্রছন্ড রাগ ছিল । আমি সোজা বাসায় এসে নিদ্রকে বেপার’টা জিজ্ঞেস করি । নিদ্র প্রথমে আমতা আমতা করলেও । পরে শিকার করে । আমার দুনিয়া’টা যেন থমকে গিয়েছিল । মনে হচ্ছিল জীবন’টা দিয়ে দেই ফুফা ।(লিয়া)

কথা গুলো বলে ঠুকরে কেদে উঠলো লিয়া । ফরহাদ আমেনার দিকে তাকালেন । আমেনা মাথা নিচু করে নিলেন । উনার চোখ দু’টো ছলছল করে জ্বলছে । মনে হয় এখনি চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরবে । ফরহাদের বড্ড রাগ আর অভিমান হয়ে উঠলো আমেনার উপর । মানুষ’টার সাথে এক রুমে থাকছেন উনি । আর মানুষ’টা তাকে কিছু বললো না । ফরহাদ লিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো ।

:+ওর বিয়ে তোর সাথে’ই হবে । আমি দেবো বিয়ে । ও তোকে বিয়ে করতে’ই হবে ।(ফরহাদ)

আমেনা চট করে মাথা তুলে ফরহাদ আর লিয়ার দিকে তাকালো । লিয়া মাথা নিচু করে ঠুকরে ফুফিয়ে উঠে বললো ।

:+লাগবে না ফুফা । আমি হয়তো এখন জোর করে ওকে বিয়ে করে নেবো । কিন্তু পড়ে এর পরিণাম বুঝতে পারছো না তুমি । আমি নিদ্রর থেকে সুধু অবহেলা পাবো । এর থেকে বেশি কিছু পাবো না । যে যাকে ভালোবাসে তাকে নিয়ে সুখে থাক । হ্যাঁ,,,আমি একটু দুষ্টুমি করি । কিন্তু পড়ে সবাইকে আবার এক করে দেই । এই যে দেখো না । তিন দিন আগে, নিদ্রর সব বন্ধুদের রিলেশন ভেঙে দিয়েছিলাম । আর গত পরসু আবার সবাইর কাছে ফোন করে, সরি বলে এক করে দিলাম । আসলে আমার কপাল’টা খুব খারাপ যানো ফুফা । ছোট বেলা থেকে যা চেয়েছি । সব হারিয়েছি । পোড়া কপাল আমার ।(লিয়া)

কথা গুলো বলে নিজের কপালে হাত দিয়ে থাপ্পড় মারলো লিয়া । লিয়ার লম্বা বক্তব্যে আমেনা ঠিক থাকতে পারলেন না । উনি সোজা গিয়ে লিয়াকে জরিয়ে ধরলেন । এরপর থমথমে কন্ঠে বলে উঠলেন আমেনা ।

:+আমাকে মাপ করে দে । আমি জীবনেও ভাবতে পাড়িনি এমন কিছু হবে ।(আমেনা)

লিয়া মুখে মৃদু হাসি এনে আমেনাকে জরিয়ে ধরে বললো ।

:+এখানে তোমার দোষ নেই ফুফি । মানুষ কখন, কাকে ভালোবেসে ফেলে নিজেও যানে না । হ্যাঁ,, তোমার উপর আমার অভিমান হয়েছে । কেন তুমি আমাকে এগুলো আগে বললে না । তাহলে আমি আর দেশে আসতাম না । তুমি দেশে এনে আমাকে কষ্ট দিলে ফুফি ।(লিয়া)

:+আমি ভেবেছিলাম, তুই দেশে আসলে নিদ্রকে কোনো ভাবে মানিয়ে নেবো ।(আমেনা)

ফরহাদ পাস থেকে রাগে গদগদ কণ্ঠে বলে উঠলেন ।

:+ওকে বিয়ে কতেই হবে । আমি এখনি যাচ্ছি নিদ্রর কাছে ।(ফরহাদ)

এই বলে ফরহাদ রুমে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বারালো । লিয়া তাড়াতাড়ি আমেনাকে ছেরে দিয়ে ফরহাদের হাত টেনে ধরে বললো ।

:+প্লিজ ফুফা তোমার পায়ে পড়ি । তুমি ওকে কিছু বলো না । ও যাকে নিয়ে সুখি থাকতে পারে । তার সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দাও । আমি দু’দিন পড় ফিরে যাবো লন্ডন । ও এখন যেমন এই বেপারে কিছু যানে না । পরেও যেন এই বেপারে কিছু না যানে । তোমাদের কাছে এটাই আমার শেষ রিকুয়েষ্ট ।(লিয়া)

এই বলে কাদতে কাদতে ফরহাদ আর আমেনার রুম থেকে বেরিয়ে গেল লিয়া । আমেনা ধপ করে মেঝেতে বসে পড়লেন । ফরহাদ সেদিকে তক্কা না করে ওয়াসরুমের দিকে চলে গেলেন ।

———————————————

আরো গোটা একটা দিন পেরিয়ে গেলো । লিয়া এখন সুধু রুমে বসে থাকে । রুম থেকে বের হয় না । সারাদিন দুষ্টুমি করা মেয়ে’টা একেবারে শান্ত হয়ে গেছে । আজকের রাত টুকু’ই আছে লিয়া বাংলাদেশে । কাল সকাল ৯টায় চলে যাবে সে দুর দেশে । আর হয়তো কোনো দিন আসা হবে না এই বাংলায় । জন্ম লন্ডনে হলেও । নিজ পিতা মাতার জন্ম সাস্থান বেশ ভালো লাগে লিয়ার । মানে বাংলার মাতৃভূমি লিয়ার বেশ পছন্দ । ভেবেছিল নিদ্রর সাথে বিয়ে হলে, সারাজীবনের জন্য থেকে যাবে বাংলাদেশে । নিদ্রর সাথে ঘুরে বেরাবে বাংলাদেশের বিখ্যাত বিখ্যাত যায়গা গুলোতে । কিন্তু তা আর লিয়ার কপালে ছিল না । তৃপ্তি নিজ রুম থেকে গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে আসলো । রুম থেকে বেরিয়ে আসে পাসে তাকালো সে । রাত বাজে একটা,,। এখন কেও যেগে নেই তৃপ্তি ভালো করে’ই যানে । ধির পায়ে লিয়ার রুমের সামনে এসে দারালো তৃপ্তি । রুমের দরজা’টা হালকা ভেজানো । দরজার ফাক দিয়ে ভিতরে উকি দিলো তৃপ্তি । ড্রিম লাইটের আলোয় বেডের উপর, দুই হাটু’তে মুখ গুজে বসে আছে লিয়া । তৃপ্তির বুকের ভিতর অজানা চিনচিন ব্যথা অনুভব হলো । দরজা’টা হালকা ঠেলে রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো তৃপ্তি । এরপর আবার দরজা’টা আবছা লাগিয়ে পিছনে ঘুরে লিয়ার দিকে তাকালো । লিয়া একই ভাবে বসে আছে । হঠাৎ লিয়া বলে উঠলো ।

:+আজ হঠাৎ এতো রাতে এই রুমে কি করে । আমার সাথে তো কখনো কথা বলতে চাওনি তুমি । সব সময় আমাকে এরিয়ে গেছ । আজ কি মনে করে এলে ।(লিয়া)

লিয়ার কথা শুনে, তৃপ্তি থমথমি খেয়ে দারিয়ে গেল । এদিকে তৃপ্তির চোখের আড়ালে,হাটু’র ভাজ থেকে লাল বেনারসি শাড়ী বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেললো লিয়া । তৃপ্তি গলা খাদে নামিয়ে, মাথা নিচু করে বললো ।

:+তোমাকে কিছু বলবো আপি ।(তৃপ্তি)

লিয়া হাটু থেকে মুখ তুলে তৃপ্তির দিকে তাকালো । মুখে মৃদু হাসি এনে লিয়া বললো ।

:+আমি যানি তুমি কি বলবে । আসলে কি যানো । ভালোবাসা’টা কখন, কার উপর কাজ করে কেও যানে না । তুমি নিশ্চিতে থাকতে পাড়ো । আমি তোমাদের মাঝে আসবো না ।(লিয়া)

তৃপ্তি চট করে লিয়ার দিকে তাকালো । লিয়া তাকিয়ে ছিল তৃপ্তির দিকে । চোখাচোখি হতে লিয়া চোখ ফিরিয়ে নিলো তৃপ্তির থেকে । তৃপ্তি ধির পায়ে লিয়ার বেডের পাসে এসে বসলো । এরপর রিনরিনিয়ে বলল ।

:+আমি যানতাম না নিদ্র ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । যদি যানতাম, তাহলে কখনো নিদ্র ভাইয়ার লাইফে আমি আসতাম না । যখন আমি যেনেছি, তোমার সাথে ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । ততখনে ভাইয়া আমার উপর দুর্বল হয়ে পড়ছে । আর আমি তো সেই তিন বছর আগ থেকে তার প্রতি দুর্বল হয়ে ছিলাম ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে লিয়ার ঠোট দু’টো ফাক হয়ে গেল । থমথমে চোখে তৃপ্তির দিকে তাকালো লিয়া । তৃপ্তি মাথা নিচু করে নিলো । লিয়া ডান হাত দিয়ে নিজের দু’চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো ।

:+কিহ,,,তুমি তিন বছর ধরে নিদ্রকে ভালোবেসে আসছো ।(লিয়া)

তৃপ্তি মাথা নিচু করে’ই মুখে হুম আওয়াজ করলো । লিয়া মনে মনে বলে উঠলো ।

:+তিন বছর । আর আমি দুই বছরের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি । এতো আমার থেকেও এগিয়ে ।(লিয়া)

মনে মনে এই বলে, লিয়া মুখে বললো ।

:+নিদ্রকে যানাও-নি তিন বছর আগে । যে তুমি নিদ্রকে ভালোবাসো ।(লিয়া)

তৃপ্তি মাথা দুই দিকে দুলাল । যার মানে সে যানায়-নি । লিয়া তৃপ্তির ডান হাত’টা ধরে বললো ।

:+এখন যানিয়ে দাও । নাহলে আমার মতো কষ্ট পাবে । ছেলে মানুষের মন । কখন কার উপর কাজ করে বলা যায় না ।(লিয়া)

:+অন্য কারো উপর মন’ই যেতে দেবো না ।(তৃপ্তি)

বলতে বলতে মাথা তুলে লিয়ার দিকে তাকালো তৃপ্তি । লিয়া ফিক করে হেসে উঠলো । তৃপ্তির সিনায় ধাক্কা মের বললো ।

:+তোমাকে দেখে মনে হয় না, তুমি চনচল মেয়ে । কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি তুমি কেমন ।(লিয়া)

লিয়ার কথায় শুনে তৃপ্তি ভ্র-নাচিয়ে বললো ।

:+কেমন ?(তৃপ্তি)

:+আচ্ছা বাদ দাও । তোমার কাছে আমার একটা রিকুয়েষ্ট আছে,, রাখবে ।(লিয়া)

লিয়া তৃপ্তির ডান হাত’টা আবার নিজের দু’হাতের মধ্যে নিয়ে বললো । লিয়ার কথা শুনে তৃপ্তি প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে লিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+কি রিকুয়েষ্ট ।(তৃপ্তি)

লিয়া বালিশের নিচ থেকে লাল লেহেঙ্গা’টা বের করে তৃপ্তির দিকে বারিয়ে বললো ।

:+এটা আমি এনেছিলাম লন্ডন থেকে । ভেবেছিলাম,,,,,। আচ্ছ, এটা তুমি রেখে দাও ।(লিয়া)

:+এটা কি করে হয় আপি । তুমি কতো কষ্ট করে নিয়ে এলে এটা । তোমার বিয়েতে লাগবে । তুমি রেখে দাও ।(তৃপ্তি)

:+আমার আর বিয়ে,,,।(লিয়া)

কথা’টা বলে লিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বললো ।

:+তুমি এটা রাখো । ভেবে নাও তোমার বড় বোন তোমাকে গিফট করেছে ।(লিয়া)

তৃপ্তি নিতে চাইলো না । কিন্তু লিয়া জোর করে দিয়ে দিলো । লেহেঙ্গা’টা অনেক সুন্দর । তৃপ্তি একটু উল্টে পাল্টে দেখে বললো ।

:+তোমার পছন্দ খুব সুন্দর আপি । আমার অনেক পছন্দ হয়েছে ।(তৃপ্তি)

:+প্রথমে তো নিতে’ই চাচ্ছিলে না । এখন বলছো পছন্দও হয়েছে ।(লিয়া)

তৃপ্তি ফিক করে হেসে উঠলো । লিয়াও হাসলো । হঠাৎ তৃপ্তি চিন্তিত ভঙি হয়ে উঠলো । লিয়া তা দেখে বললো ।

:+কি হয়েছে ।(লিয়া)

:+আসলে আপি । আমি তোমার সাথে যেমন সাভাবিক ভাবে কথা বলছি । এই বাড়ীর অন্য লোকদের সাথে এমন ভাবে কথা বলি না ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা কিছু বুঝতে না পেরে লিয়া বললো ।

:+মানে ।(লিয়া)

:+আসলে আমার মাঝে একটা বাচ্চা বাচ্চা সভাবের একটর কাজ করে । আর আমি সেই ভাবে’ই সবার সাথে কথা বা চলা ফেরা করি । সবাই আমার সিরিয়েস ফেস কখনো দেখেনি । সবাই ভাবে আমি কিছু বুঝি না । এমনকি আমার আপন আম্মুও কখনো বুঝতে পারেনি এই বিষয়’টা । আমার এই দিক’টা সুধু আমার বেস্টফ্রেন্ড’রা যানতো । এছারা আর কেও যানতো না । আর আজ আমি তোমার কাছে শেয়ার করলাম ।(তৃপ্তি)

লিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তৃপ্তির দিকে । তৃপ্তি জোরে নিশ্বাস ছেরে, হেসে বলে উঠলো ।

:+আচ্ছা আপি তুমি’ই বলো । এখন কার মানুষ কখনো বোকা হয় । আর বিষেস করে পড়া লেখা করা ছেলে বা মেয়ে’রা কখনো’ই বোকা হতে পারে না । যারা ভাবে তারা বোকা, কিছু বুঝে না । আসলে তারা নিজেরাই বোকা । ওই মানুষ টাকে তারা চিনতে ভুল করছে ।(তৃপ্তি)

লিয়া আবুলের মতো তাকিয়ে আছে তৃপ্তির দিকে । তৃপ্তি অন্য দিকে তাকিয়ে নিশ্বাস ছারলো । লিয়া বলে উঠলো ।

:+অনেক রাত হয়েছে । এবার গিয়ে ঘুমাও । তোমার কথার আগা মাথা, কিছু আমার মাথায় কাজ করছে না ।(লিয়া)

:+কাজ করবে । আজ তো আমাকে এমন দেখলে । কাল সকালে আমাকে দেখো । তখন আমার প্রতি’টা কথার মানে বুঝতে পারবে ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি বসা থেকে উঠে দারালো । লিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ।

:+শেষ একটা রিকুয়েষ্ট করবো রাখবে ।(লিয়া)

তৃপ্তি পিছনে ঘুরে লিয়ার দিকে তাকালো । লিয়া আগের ভঙ্গিতে’ই বলে উঠলো ।

:+তোমার আর নিদ্রর বিয়ের সময় এই লেহেঙ্গা’টা পড়ো প্লিজ । আর নিদ্রকে কখনো দুরে সরিয়ে দিও না ।(লিয়া)

লিয়ার কথা শুনে, তৃপ্তি আবার বেডের পাসে এসে লিয়ার ডান হাত ধরে বললো ।

:+যতদিন বেচে আছি । কখনো তার হাত ছারবো না আপি । কিন্তু সে যদি আমাকে ভুল প্রামন করে । যে সে আমাকে ভালোবাসে না । বা অন্য কিছুতে সে ভুল প্রমান হয় । তাহলে তাকে ছেরে যেতে দ্বিতীয় বার আমি ভাবো না আপি । আমার এখনো তাকে পরিক্ষা করা বাকি আছে । আর তোমার এই লেহেঙ্গা? সেটা তুমি নিশ্চিতে থাকো । আমাদের বিয়ের দিন’ই তোমার এই লেহেঙ্গা আমি পড়বো ।(তৃপ্তি)

লিয়া তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো । তৃপ্তি লিয়ার রুম থেকে হাতে লেহেঙ্গা নিয়ে বেরিয়ে গেল । লিয়া বেডের উপর টান টান হয়ে শুয়ে চোখ বুঝে নিলো । চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো । তৃপ্তি কথা গুলো লিয়ার মাথায় খেলা করতে লাগলো । কি বলে গেলো মেয়ে’টা এগুলো । লিয়া কিছু বুঝতে পারছে না । কাল সকালের অপেক্ষা । তার পর’ই তৃপ্তিকে বুঝতে পারবে লিয়া ।

———————————————-

সকাল ৭টা বাজে…………….
সুজন তরি ঘড়ি করে নিদ্রদের বাসার মধ্যে প্রবেশ করলো । ডাইনিং টেবিলে আমেনা খাবার বারছেন । সুজনকে এতো সকালে দেখে, তিনি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সুজনের দিকে । ছেলে’টাকে কেমন যেন এলোমেলো লাগছে আমেনার কাছে । আমেনা একটু এগিয়ে গিয়ে গেলেন সুজনের দিকে । আমেনা কিছু বলার আগে’ই সুজন বললো ।

:+লিয়া কোথায় আন্টি ।(সুজন)

আমেনা কিছু বুঝতে না পেরে বললেন ।

:+ও রুমে’ই আছে । একটু পড় চলে যাবে । কেন বলো তো ।(আমেনা)

:+পড়ে বলবো আন্টি ।(সুজন)

এই বলে সুজন সিরির দিকে হাটা ধরলো । আমেনা পিছন থেকে জোরে নিশ্বাস ছেরে নিজের কাজে চলে গেলেন । সুজন লিয়ার রুমের সামনে এসে দারালো । রুমের ভিতরে লিয়া নিজের সব কিছু গোছাচ্ছে । সুজন রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ধপ করে দরজা লাগিয়ে দিলো । লিয়া চমকে উঠে পিছনে ঘুরে সুজনের দিকে তাকালো । ছেলে টার চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে । ঠিক মতো ঘুমাই না মনে হয়ে । সুজন লম্বা পা ফেলে লিয়ার সামনে এসে দারিয়ে বললো ।

:+চলে যাচ্ছিস ।(সুজন)

লিয়া নিজের কাজে মন দিয়ে মুখে হুম আওয়াজ করলো । সুজন লিয়াকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরালো । এরপর লিয়ার দুই বাহুতে শক্ত করে ধরে বললো ।

:+আমার কি হবে তাহলে । আমাকে প্রমিজ করেছিলি, আমি যা চাইবো তাই আমাকে দিবি । আমাকে সেটা না দিয়ে’ই চলে যাবি ।(সুজন)

সুজন শক্ত করে লিয়ার বাহু ধরায় ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো লিয়া । এরপর চোখ মুখ কুঁচকে বললো ।

:+ছার সুজন ব্যথা পাচ্ছি তো । তুই কি চাইবি বল । আমি দিচ্ছি ।(লিয়া)

সুজনের চোখে মুখে খুশির ঝলক মেরে উঠলো ।

:+সত্যি দিবি ।(সুজন)

:+হুম বল কি চাই তোর ।(লিয়া)

:+তোকে চাই লিয়া । দিবি আমাকে । কথা দিচ্ছি । খুব যন্ত করে সাজিয়ে রাখবো ।(সুজন)

সুজনের কথা শুনে, লিয়া ভাবান্তক হলো না । কারন লিয়া যানতো সুজন এমন কিছু’ই বলবে । সুজনের কিছু কিছু ব্যবহারে লিয়া বেশ বুঝতে পেরেছে ।

:+এটা কোনো দিনও সম্ভব নয় সুজন । আমি একবার কষ্ট পেয়েছি । আর পেতে চাই না । সারাজীবন একা’ই কাটিয়ে দেবো আমি ।(লিয়া)

লিয়ার কথা শুনে, সুজন লিয়ার বাহু আবার শক্ত করে ধরে বললো ।

:+একটা বার সুযোগ দে । সুধু একটা বার । কষ্ট কি জিনিস । কোনো দিন তোকে বুঝতে দেবো না ।(সুজন)

লিয়া মৃদুস্বরে হেসে উঠে বললো ।

:+এখনি তো আমাকে এভাবে ধরে রেখে কষ্ট দিচ্ছিস ।(লিয়া)

সুজন চট করে লিয়াকে ছেরে দিলো । এরপর লিয়ার ডান হাত’টা নিজের দু’হাতে মধ্যে নিয়ে বললো ।

:+প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিস না । দুই বছর ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি । পরসু যখন শুনলাম তোর সাথে নিদ্রর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে । নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলাম না যানিস । এই দুই রাত তোকে ভেবে ভেবে কাটিয়েছি । কিন্তু গত কাল রাতে যখন যানতে পেরেছি । তুই দেশ থেকে চলে যাবি । নিদ্রর সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে না । খুশিতে কান্না করে দিয়েছি যানিস । আর আজ সকালে ছুটে এসছি তের কাছে । প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিস না ।(সুজন)

কথা গুলো বলে সুজন হাটু মুরে ফ্লোরে বসে লিয়ার দুই পা এক সাথে জরিয়ে ধরলো । লিয়া সুজনের কাধে ধাক্কা মারতে মারতে বললো ।

:+কি করছিস সুজন পা ছার ।(লিয়া)

:+না,,,, ছারবো না । যতখন না তুই আমাকে মেনে নিবি । ততখন আমি তোকে ছারবো না ।(সুজন)

:+সুজন এটা হয় না ।(লিয়া)

:+কেন হয় না । তুই কি অন্য কাওকে ভালোবাসিস ।(সুজন)

:+না মানে,,,।(লিয়া)

লিয়াকে থামিয়ে দিয়ে সুজন বললো ।

:+না থাকলে আমাকে মেনে নিতে সমস্যা কি । মেনে নে না ইয়ার । কখনো তোকে কষ্ট পেতে দিবো না প্রমিজ করছি তো ।(সুজন)

লিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না । এই পাগলকে কি করে থামাবে । এই পাগল তো একে বারে উঠে পড়ে লেগেছে । লিয়ার ভাবনার মাঝে সুজন বলে উঠলো ।

:+এতো ভাবার কিছু নেই । আর তুই যত’ই ভাবিস না কেন । তোকে আর আমি ছারছি না । এক হয় তুই আমাকে মেনে নিবি । আর নাহলে । এটা ধর, এটা দিয়ে আমাকে শেষ করে দিয়ে, তারপর যাবি ।(সুজন)

এই বলে পিছন থেকে একটা ছুরি বের করে লিয়ার সামনে ধরলো সুজন । লিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না । সুজন একে বারে পাগল হয়ে গেছে । এখন ভুল ভাল ডিসিশন নিলে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে । লিয়া আস্তে করে সুজনের হাত থেকে ছুরি’টা নিয়ে নিলো । এরপর দুরে ফেলে দিয়ে বললো ।

:+পা ছেরে উঠে দারা ।(লিয়া)

:+না আগে বল তুই আমাকে মেনে নিবি ।(সুজন)

লিয়া নিজের ঘার ডলতে ডলতে লাজুক হেসে রিনরিনয়ে বললো ।

:+ঠিক আছে মেনে নিলাম ।(লিয়া)

কথা’টা শুনে সুজনের দুনিয়া যেন কিছু সময়ের জন্য থমকে গেল । ভিতরে লাড্ডু ফুটতে সুরু করলো সুজনের । তবুও সুজন নিজের খুশি বাহিরে বের না করে বললো ।

:+এভাবে বললে হবে না । আমি আই লাভ ইউ বলবো । আর তুই আই লাভ ইউ টু বলবি ।(সুজন)

:+সুজন এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে ।(লিয়া)

লিয়া কিছু’টা রাগি গলায় বললো । সুজন ভবান্তক হলো না, সে আগের ভঙ্গিতে’ই বললো ।

:+রাগ দেখিয়ে লাভ নেই । আমি বললো আর তুই রিপ্লাই দিবি । নাহলে তোকে ছারবো আমি আজ ।(সুজন)

লিয়া অসহায় ফেস করে সুজনের দিকে তাকালো । কিন্তু লাভ হলো না । সুজন মাথা নিচু করে লিয়ার পা জরিয়ে বসে আছে । লিয়া মনে অজানা একটা অনুভুতি কাজ করছে । সে হেসে উঠে বললো ।

:+যা বলার তাড়াতড়ি বল । আমার পা দু’টো জরিয়ে ধরে ভেঙে ফেলবি মনে হচ্ছে ।(লিয়া)

:+ I LOVE YOU লিয়া ।(সুজন)

:+ I LOVE YOU TO . এবার খুশি তো । এবার পা ছার ।(লিয়া)

:+না,,,, ছারবো না । তোর বলা হয়-নি । তুই বলবি । I LOVE YOU সুজন । আমি তোমাকে ভালোবাসি ।(সুজন)

সুজনের কথা শুনে লিয়ার রাগ উঠে গেল । এটা একটু বেশি’ই করছে সুজন । তবুও লিয়া নিজেকে কিছু’টা শান্ত রেখে বললো ।

:+ ওকে বলছি । I LOVE YOU TO সুজন । আমিও তোমাকে ভালোবাসি ।(লিয়া)

এবার সুজন লিয়ার পা ছেরে সোজা হয়ে দারালো । লিয়া মাথা নিচু করে আছে । মেয়ে’টার চোখ ছলছল করছে । যাকে চেয়েছে তাকে পায়-নি । কিন্তু যে তাকে চেয়েছে । তাকে কেন ফিরিয়ে দিবে । না পাওয়ার কষ্ট’টা কতো লিয়া বুঝতে পারে । সুজন লিয়ার সামনে এসে লিয়ার দু’গালে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো ।

:+এই চোখে যেন আর পানি না দেখি । এতোদিন যার নাম মনে ছিল । তার নাম ড্রাস্টার দিয়ে মুছে ফেল । আর আমার নাম খোদাই করে মনে লিখে নে । যেন ড্রাস্টার দিয়েও মুছা না যায় ।(সুজন)

লিয়া ঠুকরে কেদে উঠলো । সুজন দু’বাহুতে আবদ্ধ করে নেয় লিয়াকে । এরপর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ।

:+আর কাদতে হবে না । আমি নিচে যাচ্ছি । রেডি হয়ে নিচে আয় । এয়ারপোর্ট প্রজন্ত যাবো ।(সুজন)

:+যাওয়া লাগবে না তোর ।(লিয়া)

ফুফিয়ে বললো লিয়া । সুজন লিয়াকে ছেরে দিয়ে বললো ।

:+সেটা আমি দেখবো । এবার তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয় ।(সুজন)

এই বলে সুজন লিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে গেল । সুজনের কাজ দেখে লিয়া হেসে ফেললো । ছেলে’টা লিয়াকে এতো ভালোবাসে । লিয়া এতো কাছে থেকেও তেমন বুঝতে পারেনি ।

———————————————-

ড্রাইনিং টেবিলে বসে সবাই সকালের নাস্তা শেষ করছে । লিয়া তৃপ্তিকে দেখে বেশ অবাক হয়েছে । গতকাল রাতে তার সাথে কতো স্টং ভাবে কথা বললো । আর আজ পুরো বাচ্চাদের মতো নেকামি ভাবে চলছে । লিয়া তৃপ্তির কথা গুলো এবার বুঝতে পারলো । বাসা থেকে সবাইর কাছে বিদায় নিয়ে । লিয়া, তৃপ্তি, নিদ্র আর সুজন আসলো এয়ারপোর্টে । লিয়া তৃপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে বললো ।

:+এমন সভাব পালটে ফেলো । তোমার স্টং থাকলে খুব ভালো লাগলে । এভাবে বাচ্চাদের মতো নেকামি ভালো মানাচ্ছে না ।(লিয়া)

ফিসফিস করে তৃপ্তিকে বললো লিয়া । তৃপ্তি মুচকি হাসলো । এরপর মাথা নেরে সাই দিলো । লিয়া নিদ্রর সামনে এসে দারালো । নিদ্র ভাবান্তক হয়ে বলে উঠলো ।

:+আসলি এক সাপ্তাহ হলো না । আবার চলে যাচ্ছিস ।(নিদ্র)

লিয়া মৃদু হেসে যবাব দিলো ।

:+যেটার জন্য আসলাম সেটা হলো না । তাই চলে যাচ্ছি । বাট অন্য কিছু পেয়ে গেছি । দেখি সে কতো’টা ভালো ।(লিয়া)

শেষের কথা সুজনের দিকে তাকিয়ে বললো লিয়া । নিদ্র কিছু বুঝতে পারছে না । কোনো ভাবেই অংক মিলছে না নিদ্রর । লিয়া সুজনের সামনে এসে দারালো । সুজন একটু ঝুকে লিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ।

:+খুব তাড়াতাড়ি আমি লন্ডনে বেক করছি লিয়াজান । সাবধানে থাকবেন । এই সুজন কিন্তু অনেক টেনশনে থাকবে আপনার জন্য । ফোন দিলে চটপট ফোটা ধরিয়েন ।(সুজন)

লিয়া লাজুক হাসলো সুজনের আপনি সমর্থন শুনে । এরপর সবাইর থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরে প্রবেশ করলো লিয়া । তৃপ্তি, নিদ্র আর সুজন সুধু তাকিয়ে ছিল ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিষেধ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here