#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্বঃ অন্তিম পর্ব ।(শেষ)
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে ১টা বছর । সকাল ৬টা বাজে । লন্ডনের বেড রুমে শুয়ে আছে নিদ্র । আর তার ডান পাসে ছোট একটা কিউট বেবি শুয়ে হাত পা নেড়ে খেলা করছে । আর বাম পাসে থেকে তৃপ্তি নিদ্রর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে । নিদ্র আস্তে করে তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । বিয়ের এক সাপ্তাহর মাথায় ফরহাদ, নিদ্র আর তৃপ্তিকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়, নিদ্রর মামার কাছে । মানে লিয়াদের এখানে । বিয়ের আগে মেয়ে প্রেগন্যান্ট ছিল । এটা সমাজের মধ্যে কানা খুসো হক । এটা চান না ফরহাদ । তাই তিনি বুদ্ধি করে নিদ্র আর তৃপ্তিকে লন্ডন পাঠিয়ে দেন । এই ১ বছর ধরে লন্ডনে আছে নিদ্র আর তৃপ্তি । ফোনের শব্দে ধেন ভাঙলো নিদ্রর । বাম পাসে হাত বারিয়ে ফোন’টা হাতে নিলো সে । তৃপ্তি একটু নড়ে চড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে গেল । নিদ্র ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আমেনা কল করছে । মুখে হাসি ফুটে উঠে নিদ্রর । কল রিসিভ করতেই ফোনের স্কিনে আমেনার মুখ’টা ভেসে উঠে ।
:+এখনো শুয়ে আছিস । ৯টায় ফ্লাইট তোদের, ভুলে গেছিস ।(আমেনা)
:+ওহ, MOM..এখানে এখন ৬টা বাজে । আর এয়ারপোর্ট তো কাছেই । মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগবে যেতে ।(নিদ্র)
আমেনার অবাক হওয়ার মুখের ভঙি দেখে বলে উঠে নিদ্র । নিদ্রর কথা শুনে আমেনা বললো ।
:+আচ্ছা বুঝলাম । এখন আমার নানু’ভাইকে দেখা তো ৷ কি করছে, একটু দেখি ।(আমেনা)
:+হুম, দেখো দেখো । সারখন আমাকে জ্বালিয়ে মারছে তোমার নানু’ভাই । ওর মাম্মামের তো কিছুই যায় আসে না । মহারানী সারাদিন ফোন দেখবে, আর পরে পরে ঘুমবে । খাওয়া’টা প্রর্যন্ত আমাকে খায়িয়ে দিতে হয় । ও নিজের হাতে খাবার খাবেই না । এদিকে বেবির ডায়াপার হতে যাবতীয় যত কাজ আছে, সব আমাকে দিয়ে করাচ্ছে । মানে রানীর হালে আছেন উনি । এদের মা ছেলের টর্চারে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি । পেটে থাকা কালিন অনেক নালিশ করেছি ওর মাম্মামের নামে । সেটারই প্রতিশোধ নিচ্ছে এখন বাহিরে এসে ।(নিদ্র)
বকতে বকতে বেবির সামনে ফোন ধরলো নিদ্র । আমেনা ছেলের কথা শুনে হেসে উঠলেন । ছেলে উনার বেবি আর বেবির মাম্মামকে সামলাতে সামলাতে শেষ ।
:+ওলে আমার নানু ভাই । কি করছে আমার নানু ভাই’টা । বাবাইকে অনেক জ্বালাচ্ছে বুঝি ।(আমেনা)
এই রকম আরো অনেক কথা বলতে লাগলো আমেনা । নিদ্র বেবির সামনে ফোন ধরে রাখছে । আমেনা বেবির সাথে ফোনের মধ্যে দুষ্টুমি করতে লাগলো । বেবি’টা হাত পা ছুরে ফোন’টা ধরার চেষ্টা করছে, আর খিল খিল করে হাসছে । বেবির বয়স ৬ মাস হয়েছে । তৃপ্তি তার ছেলের নাম “মুগ্ধ” রেখেছে । এদিকে নিদ্র নাম রেখেছে “পূর্ণ” । আমেনা রেখেছে “অনিক” । সালমা রেখেছে “রুদ্র” । মানে সবাই নিজেদের মন মতো বেবির নাম রেখেছে । আমেনা ফোন দিয়ে অনিক অনিক বলে ডাকে । সালমা ফোন দিয়ে রুদ্র রুদ্র বলে ডাকে । মানে সবাই নিজেদের দেওয়া নাম দিয়ে বেবিকে ডাকছে । কিন্তু তৃপ্তির সাফ কথা । জন্ম নিবন্ধনে তার ছেলের নাম মুগ্ধ হবে । এছারা অন্য নাম দিলে । সে জন্ম নিবন্ধন পুরিয়ে দেবে ৷ আমেনার সাথে কথা শেষ করে কল কেটে দিলো নিদ্র । এরপর ফোন’টা পাসে রেখে তৃপ্তির দিকে তাকালো । দেখলো, তৃপ্তি নিদ্রর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে । নিদ্র অবাক হয়ে গেল । এই মেয়ের ঘুম ভাঙলো কখন । এখন তার কান যালা ফালা করে দিবে । নিদ্র কিছু বলার আগেই, তৃপ্তি দাঁত কটকট করে বলে উঠলো ।
:+আম্মুর কাছে আমার নামে নালিশ দেওয়া হচ্ছিল তাই না ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে নিদ্র আমতা আমতা করতে লাগলো ।
:+আরে না না । আমি তো এমনি আম্মুর সাথে কথা,,,,।(নিদ্র)
:+এই চুপ, মিথ্যা কথা বলবে না । আমি সব শুনেছি । আমি বসে বসে খাই । তুমি বেবি আর আমাকে সামলাও । তাই না । তুমি তো সুজুক খুচ্ছিলে । কখন আমি ঘুমবো, আর কখন তুমি আম্মুর কাছে কল করে আমার নামে নালিশ করবে । এখন নালিশ করেছো । শান্তি হয়েছে তো । নাকি এখনো মন ভরেনি । আরো কিছু বলার আছে । আমি যেগে থাকলে তো কিছু বলতে পারো না ৷ তাই আমার ঘুমনোর অপেক্ষা করছিলে ।(তৃপ্তি)
এই রকম আরো অনেক কথা বলতে লাগলো তৃপ্তি । নিদ্র দু’হাত দিয়ে নিজের কান চেপে ধরে চোখ বুঝে নিলো । এখন কিছু বললে, আরো অনেক কথা শুনতে হবে তাকে । এই ১বছরের সংসার জীবনে জ্বালিয়ে মেরেছে নিদ্রকে মেয়ে’টা । হঠাৎ তৃপ্তি নিদ্রর হাত কামড়ে ধরলো । নিদ্র তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তৃপ্তির থেকে নিজের হাত ছারালো । নিদ্র কিছু বলার আগেই, তৃপ্তি বলে উঠলো ।
:+নালিশ দেওয়ার সময় মনে ছিল না । যে আমাকে তো পরে অনেক কথা শুনতে হবে । এখন হাত দিয়ে কান ধরে রাখছো কেন । শুনতে ভালো লাগছে না ।(তৃপ্তি)
নিদ্র তৃপ্তির থেকে মুখ সরিয়ে অন্য দিয়ে তাকিয়ে রইলো । বিয়ে মানে পেঁড়া, আগে যদি সে বুঝতো । যে সংসার জীবন অনেক কঠিন । তাহলে এই মেয়েকে কখনোই সে বিয়ে করতো না । ধারে কাছেও যেতো না । সুধু এই মেয়ে না । কোনো মেয়েরই ধারে কাছে সে যেত না । নিদ্রর কালো মুখ’টা দেখে তৃপ্তি ভিতরে ভিতরে হাসতে লাগলো । লোক’টাকে এমন দেখলে তৃপ্তির খুব মায়া হয়, আবার ভালোও লাগে । তৃপ্তি আস্তে করে একটু নিদ্রর থেকে সরে এলো । এরপর নিদ্রর মুখের দিকে এগিয়ে গেল । নিদ্রর মনে মনে লাড্ডু ফুটতে লাগলো । আজ দুই দিন ধরে কিছু পাচ্ছে না সে । এখন হয়তো কিছু একটা পাওয়া যাবে । কিন্তু না কিছু হচ্ছে না কেন । মাথা ঘুরিয়ে তৃপ্তির দিকে তাকালো নিদ্র ৷ দেখলো তৃপ্তির মুখ’টা একদম তার মুখের সামনে । নিদ্র খুশিতে দু’হাত দিয়ে তৃপ্তিকে জরিয়ে ধরতে নিলে, তৃপ্তি বলে উঠলো ।
:+কি ভেবেছো, কিস করবো । প্রশ্নই আসে না । আমার নামে নালিশ দেওয়ার আগে, ভাবা উচিত ছিল । আগামী দুই দিনেও কিছু পাবে না । এখন উঠে বারান্দা থেকে বেবির জামা কাপড় গুলো এনে লাগেজে পুরে নাও । আর সুন্দর দেখে জামা আর পেন্ট বেডের উপর রাখবে । বেবিকে পড়ানোর জন্য । আমি ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে যেন সব রেডি দেখি ।(তৃপ্তি)
এই বলে তৃপ্তি উঠে চলে গেল । নিদ্রর মুখ’টা ফেকাসে হয়ে গেল । সে বেবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ।
:+তোর মাম্মাম এমন কেন রে । একটুও আদর করে না । আদর করতেও দেয় না । নিজের ইচ্ছে মতো কাছে আসে । নিজের ইচ্ছে মতো আবার দুরে চলে যায় ।আমাকে,,,,,,,,,,।(নিদ্র)
:+এই তুমি গেলে, বেবির জামা কাপড় আনতে ।(তৃপ্তি)
ওয়াসরুম থেকে তৃপ্তির চিৎকার শুনে নিদ্র কপাল চাপড়ায় ।
:+যাচ্ছি ।(নিদ্র)
দাঁত কটকট করে বলে উঠলো নিদ্র । এরপর বেড থেকে নেমে বারান্দায় চলে গেল । বারান্দা থেকে নিজেদের আর বেবির সব জামা কাপড় এনে লাগেজে পুরে নিলো । তৃপ্তি ওয়াসরুম থেকে বেরোতেই, গদগদ পায়ে ওয়াসরুমে চলে গেল নিদ্র । তৃপ্তি সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো । এরপর বেবিকে তৈরি করে নিজে তৈরি হয়ে নিলো । এমন সময় লিয়ার আম্মু লুবনা বেগম সেখানে আসলো । তিনি এসে দরজা ঠক ঠক আওয়াজ করলেন । তৃপ্তি গিয়ে দারজা খুলে দিলো ।
:+গুড মনিং আন্টি ।(তৃপ্তি)
:+গুড মনিং মামুনি ।(লুবনা)
এই বলে লুবনা বেগম রুমের ভিতরে আসলেন । হাতে উনার সকালের নাশতার ট্রে । তৃপ্তি তা দেখে বলে উঠলো ।
:+আপনি এতো কষ্ট করতে গেলেন কেন আন্টি । আমরা নিচে গিয়ে সবাই এক সাথে খেতাম ।(তৃপ্তি)
লুবনা বেগম হাত থেকে নাশতার ট্রে’টা টেবিলের উপর রেখে দিলেন । এরপর তিনি বেবির কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললেন ।
:+সবাইর খাওয়া শেষ । তোমাদের আংকেল অফিসে চলে গেছে । জরুরী মিটিং আছে । যাওয়ার আগে বলেছেন তোমাদের বিদায় জানিয়ে দিতে । তোমাদের রুমের কাছে এসে দরজা লক পেয়েছেন উনি । আর লিয়া এখনো ঘুম থেকে উঠেনি ।(লুবনা)
লুবনা বেগমের কথা শুনে ছোট করে “ও” বললো তৃপ্তি । এরপর বেডের পাসে লুবনা বেগমের পাসে গিয়ে বসলো । লুবনা বেগম বেবির সাথে দুষ্টুমি করতে লাগলো । তৃপ্তি লুবনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ।
:+লিয়া আপুকে বিয়ে দিবেন না আন্টি । উনার বসয় তো আর কম হচ্ছে না ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে, লুবনা বেগম ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লেন । এরপর মেঝেতে চোখ রেখে লুবনা বেগম বলে উঠলেন ।
:+এই লন্ডনে মেয়েকে কার কাছে বিয়ে দেবো । ভয় হয় মেয়ে’টাকে নিয়ে । বড় মেয়ে’টা অকালে কিছু জঘন্য পশুর হাতে জীবন দিলো । বিচার পাইনি এখানে । খুজেই পাওয়া যায়নি পশুদের । এখন এই একটাই মেয়ে আমার । কার কাছে ওকে বিয়ে দিয়ে শান্তি পাবো । ছেলে’টা সকাল হলে ওর আব্বুর সাথে অফিসে চলে যায় । ফিরে অনেক রাতে । ভয়ে থাকি আমি সারাদিন ।(লুবনা)
তৃপ্তি খুব মন দিয়ে শুনছিল লুবনা বেগমের কথা গুলো । এই প্রর্যায় এসে তৃপ্তি লুবনা বেগমের বাম হাতের উপর নিজের ডান হাত রেখে বললো ।
:+আমার চেনা একটা ভালো ছেলে আছে আন্টি । আপনি দেখেছেন উনাকে । আপনি যদি সম্মতি দেন । তাহলে আমি ছেলের পরিবারকে বিষয়’টা জানাবো ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে, লুবনা বেগম অবাক হয়ে বলে উঠলো ।
:+আমি দেখেছি । কোন ছেলে ।(লুবনা)
:+ওই যে, কিছুদিন আগে উনার তিনজন বন্ধু আসছিল ।(তৃপ্তি)
:+কার বন্ধু আসছিল । ওহ নিদ্রর কথা বলছো ।(লুবনা)
:+হ্যাঁ, উনার কথা বলছি । উনার একটা বন্ধু আছে । নাম সুজন । এখনো ভাইয়া বিয়ে করেননি । বিয়ের জন্য ভাইয়ার পরিবার মেয়ে খুজচ্ছে । এখন আপনি যদি সম্মতি দেন । তাহলে আমি ভাইয়ার পরিবারকে বিষয়’টা জানাবো ।(তৃপ্তি)
:+কিন্তু,,,,,,,,,।(লুবনা)
:+আরে আন্টি, ছেলে একবারে খাটি সোনা । কোনো কিন্তু না । বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলে । ছোট একটা বোনও আছে । কিন্তু এখনো বিয়ে হয়নি । তবে কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যাবে । আপনি শুধু সম্মতি দিন । আমি আজই যাওয়ার আগে তাদের বিষয়’টা যানিয়ে দেবো । তারপর আপনারা নিজেদের মধ্যে দেখা শুনা, কথা বার্তা বলে নেবেন ।(তৃপ্তি)
:+আচ্ছা, ঠিক আছে । সে আমি একটু ভেবে তোমাকে যানাচ্ছি । এখন তুমি নাস্তা খেয়ে নাও । সুজি বানিয়ে এনেছি, নানু ভাইকেও খায়িয়ে দাও ।(লুবনা)
:+সে ওর বাবাই খায়িয়ে দেবে । এখন আমি যা বলেছি আপনি ভাবুন । আর চটপট আমাকে যানান ।(তৃপ্তি)
:+আচ্ছা ।(লুবনা)
এই বলে লুবনা বেগম বেবিকে তৃপ্তির কোলে দিয়ে একটু হেসে রুম থেকে চলে গেল । তৃপ্তি বেবিকে নিয়ে দুষ্টুমি করতে লাগলো । হঠাৎ বেবি’টা হাত পা ছুরতে ছুরতে তৃপ্তির গালে ঠাসসস করে চড় লেগে যায় । তৃপ্তি ইয়া বড়ো হা করে তাকালো বেবির দিকে । বেবি’টা খিল খিল করে হাসছে । এমন সময় নিদ্র ওয়াসরুম থেকে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসলো । তৃপ্তি নিদ্রর দিকে তাকিয়ে বেবিকে৷ কোল থেকে বেডের উপর শুয়িয়ে দিলো । এরপর দুই হাত মুঠি করে চোখ ডলতে ডলতে কাদো কাদো হয়ে বলে উঠলো ।
:+আমি এই বেবি রাখবো না । আমি এই বেবি রাখবো না । বেবি আমাকে চড় মেরেছে । বেবি আমাকে চড় মেরেছে । এই বেবি আমার কথা শুনবে না ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে নিদ্র অবাক হয়ে বেবির দিকে একবার তাকালো, এরপর আবার তৃপ্তির দিকে তাকালো । এই টুকু বাচ্চা কি করে কাওকে চড় মারতে পারে নিদ্রর মাথায় আসছে না । টেবিলের উপর নাস্তার ট্রে দেখে, নিদ্র হাত থেকে টাওয়াল’টা বারান্দায় গিয়ে মেলে দিলো । এরপর রুমে এসে বেবিকে কোলে তুলে নিয়ে বেডর উপর বসলো । তারপর দাঁত কটকট করে বললো ।
:+যতসব নাটক । ছেলেকে খাওয়াতে পারবে না । সেটা না বলে নাটক জুড়ে দিয়েছে ।(নিদ্র)
এই বলে নিদ্র সুজির বাটি থেকে চামচ তুলে বেবিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো । তৃপ্তি গোল গোল চোখ করে তাকালো নিদ্রর দিকে । লোক’টা তার কথা বিশ্বাস করলো না । তৃপ্তি ইনোসেন্ট মুখ করে বলে উঠলো ।
:+আমি সত্যি বলছি । বিশ্বাস করো । বেবি চড় দিয়েছে । এই দেখো, গালের এই খান’টায় চড় লেগেছে ।(তৃপ্তি)
গাল’টা এগিয়ে দেখালো তৃপ্তি । নিদ্র তৃপ্তির দিকে না তাকিয়ে বেবিকে চামচে করে সুজি তুলে নিয়ে একটু একটু খায়িয়ে দিচ্ছে । তৃপ্তি পাত্তা পাচ্ছে না দেখে, এগিয়ে গেল নিদ্রর দিকে । এরপর গোল হয়ে বসে ঠোঁট উল্টে আদুরে কন্ঠে বললো ।
:+বেবির মাম্মামকে খাইয়ে দিবে না । বেবির মাম্মামের খুব খিদে পেয়েছে । পেটের মধ্যে ঠাডা পড়ার আওয়াজ হচ্ছে । গুরুম গুরুম গুরুম ।(তৃপ্তি)
নিদ্র ঠোঁট টিপে কোনো মতে নিজের হাসি আটকালো । এরপর গম্ভীর মুখ করে তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে নিদ্র বললো ।
:+বেবির বাবাইয়েরও কিন্তু খিদে পায় । তখন কেও এসে আদর করে বেবির বাবাইকে খিয়ে দেয় না । সারাদিন বকর বকর করে বেবির বাবাইয়ের মাথা খেয়ে নেয় । তাকে দিয়ে বেবির সমস্ত কাজ করায় ।(নিদ্র)
:+খোটা দিচ্ছো ।(তৃপ্তি)
ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো তৃপ্তি । নিদ্র ফোঁস করে নিশ্বাস ছাড়লো । কাকে কি বলছে সে । এই মেয়ে সারাখন ঝগড়ার দিকে কথা টেনে নিয়ে যায় । নিদ্র চামচ হাত থেকে রেখে । নাস্তার প্লেট থেকে খাবার হাতে নিলো । এরপর তৃপ্তির মুখের সামনে ধরলো । তৃপ্তি মুখ অন্যদিকে ঘুড়িয়ে বলে উঠলো ।
:+খাবো না । আমাকে খোটা দেওয়া হয়েছে ।(তৃপ্তি)
:+না খেলে, আমি আর দ্বিতীয় বার খাবার তুলে ধরবো না ।(নিদ্র)
নিদ্রর কথা শুনে তৃপ্তি তাড়াতাড়ি সামনের দিকে ঘুরে খাবার মুখে পুরে নিলো । শুধু শুধু সকালের এই টুকু নাস্তার জন্য, সে হাত হলুদ করবে না । কতো কষ্ট করে স্বামীর হাতে খেয়ে নিজের হাত সুন্দর রেখেছে । সুন্দর হাত হলুদ করতে চায় না সে । নিদ্র ফোঁস করে নিশ্বাস ছেরে বেবি আর বেবির মাম্মামকে খায়িয়ে দিতে লাগলো ।
———————————————–
বিকেল ৩টা বাজে……………….
এয়ারপোর্টের সামনে দারিয়ে আছে ফরহাদ, বজলুর, আমেনা, সালমা, সজিব, জেক আর রাহুল । সবাই দারিয়ে নিদ্র আর তৃপ্তির জন্য অপেক্ষা করছে । এমন সময় বেবিকে কোলে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো তৃপ্তি । আর তার পিছনে নিদ্র বেগ পত্র নিয়ে আসতে লাগলো । সজিব তৃপ্তিকে দেখেই দৌড় দিলো । তৃপ্তি ভাইকে দৌড়ে আসতে দেখে বলে উঠলো ।
:+আস্তে আস্তে । তোর ভাগিনা ঘুমিয়ে আছে । এখন যেগে গেলে অনেক কান্না করবে ।(তৃপ্তি)
সজিব আস্তে করে এসে তৃপ্তির সামনে দাড়ালো । তৃপ্তি বেবিকে কোলে নিয়েই একটু ঝুকে ভাইয়ের কপালে অধর জোরা ছুয়িয়ে দিলো । সজিব হেসে বলে উঠলো ।
:+আমার কোলে দাও, আপু ।(সজিব)
:+তোকেই এখনো কোলে নিতে হয় । আর তুই রুদ্রকে কোলে নিবি ।(সালমা)
বলতে বলতে তৃপ্তির কাছে এসে দাড়ালো সালমা । সালমার পিছু পিছু সবাই এসে দারালো । সজিব গাল ফুলিয়ে নিলো মায়ের কথা শুনে । সে এবার ক্লাস SiX এ পরে । এমন’টা না বললেও পারতো ওর আম্মু । সবার সামনে লজ্জা দিলো । সজিবের দিকে তাকিয়ে সবাই হেসে উঠলো । এমন সময় বেবির ঘুম ভেঙে গেল । ঘুম ভাঙতেই কান্না করা শুরু করে দিয়েছে সে । এবার ঘটল এক বিপত্তি । বেবিকে কান্না করতে দেখে আমেনা আর সালমা দুইজনেই হাত তুলে বেবিকে নিজেদের কাছে দিতে বললো । তৃপ্তি পরে গেল দিধার মধ্যে । সে এখন কার কোলে প্রথমে বেবিকে দেবে । সবাই চাতকপাখির মতো তাকিয়ে রইলো তৃপ্তির দিকে । নিদ্র মনে মনে হাসতে লাগলো । জানু এবার আটকে গেছে ফাঁদে । কিন্তু তৃপ্তি ঘটিয়ে বসলো অন্য কিছু । সে আমেনা আর সালমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ।
:+তোমাদের কারো কোলেই আমি বাবুকে দেবো না । আমার বাবু আমার কাছে থাকবে । তোমরা তোমাদের বাবুদের সামলাও ।(তৃপ্তি)
এই বলে তৃপ্তি মুখ বাকিয়ে তাদের সামনে থেকে সরে গাড়ির দিকে হাটা ধরলো । নিদ্র মাথা চুলকাতে লাগলো । কি করলো এই মেয়ে’টা, দুইজন মানুষকেই হতাশ করে দিলো । জেক এসে নিদ্রকে ধাক্কা মেরে বলে উঠলো ।
:+শালা এই ১ বছরে দেখছি, বিদেশে গিয়ে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছিস । ভাবি বুঝি অনেক আদর করেছে ।(জেক)
জেকের ফিসফিস করা কথা শুনে নিদ্র হতাশ ভঙিতে তাকালো জেকের দিকে । জেক ঠোঁট টিপে হাসছে । আমেনা এসে নিদ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন ।
:+কেমন আছিস বাবা ।(আমেনা)
:+দেখতেই পারছো কেমন আছি ।(নিদ্র)
নিদ্রর দিকে এতোখন যাবত কেও ঠিক মতো খেয়াল করেনি । কিন্তু এই প্রর্যায় সবাই নিদ্রর দিকে ভালো করে তাকালো । নিদ্রর দুই হাতে দুই’টা লাগেজ । ডান কাধে তৃপ্তির হাত বেগ ঝুলছে । জেক আর রাহুল উচ্চস্বরে হেসে গড়াগড়ি খেতে লাগলো একে অপরের গায়ের উপর । তার সাথে সাথে সবাই হেসে উঠলো । তৃপ্তি মুখ বাকালো । এতো হাসার কি হলো এখানে । স্বামী নাহয় স্ত্রীর একটু সেবা করছে । এর থেকে তো বেশি কিছু না । সামান্য একটা হাত বেগই তো কাধে নিয়েছে । এতে এতো হাসার কি হলো । ফরহাদ এগিয়ে গিয়ে নিদ্রর হাত থেকে একটা লাগেজ নিয়ে বললো ।
:+এখানে দারিয়ে সময় নষ্ট করার মানে হয় না । বাড়িতে গিয়ে সবাই কথা বলবে । এখন গাড়িতে উঠো ।(ফরহাদ)
ফরহাদের কথা মতো সবাই গাড়ির দিকে রওনা দিলো । অতপর গাড়িতে উঠে বসলো সবাই । তৃপ্তি, আমেনা, সালমা, নিদ্র আর সজিব একটা গাড়িতে উঠছে । আর ফরহাদ, বজলুর, জেক, রাহুল । অন্য একটা গাড়িতে উঠছে । নিদ্র গাড়ি ড্রাইভ করছে, আর তার পাসে সজিব গাল ফুলিয়ে বসে আছে । তৃপ্তি পিছনে মধ্যে খানে বসে আছে । আর তার দুই পাস থেকে আমেনা এবং সালমা দুই জনে বেবির সাথে দুষ্টুমি করছে । বেবি’টা এতো সময় কান্না করছিল । কিন্তু এখন হাসছে । বেশ অনেক’টা সময় পর বাড়িতে এসে পৌছালো সবাই । বাড়িতে আসতে আসতে বেবি’টা আবার ঘুমিয়ে গেছে । নিদ্র, তৃপ্তি আর বেবিকে রুমে পাঠিয়ে দিলো আমেনা । ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিতে । নিদ্র রুমে এসে ধপ করে বেডের উপর শুয়ে পরলো । তৃপ্তি কপাল কুচকে তাকলো নিদ্রর দিকে । এরপর রাগি কন্ঠে বলে উঠলো ।
:+এতো দুর যার্নি করে আসছো । শরীরে জীবানু থাকতে পারে । আর তুমি সোজা বেডের উপর শুয়ে গেলে । বেবির ইনফেকশন হলে তখন দেখাবো মজা ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কথা শুনে নিদ্র তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বেড’টা হাত দিয়ে ঝারতে লাগলো । দারোয়ান আর বজলুর এসে তাদের রুমে লাগেজ গুলো দিয়ে গেল । তৃপ্তি আস্তে করে বেবিকে বেডের মাঝ খানে শুয়িয়ে দিলো । ঘুমন্ত বেবি’টা নড়ে চড়ে এক পাস হয়ে ঘুমিয়ে পরলো । তৃপ্তি দুই’টা বালিশ বেবির দুই পাসে দিয়ে দিলো । এরপর লাগেজ থেকে ড্রেস বের করে ওয়াসরুমের দিকে চলে গেল । কিন্তু দরজা লাগতে পারলো না তৃপ্তি । তার আগেই নিদ্র দরজা ঠেলে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল । তৃপ্তি ভেবাচেকা খেয়ে বলে উঠলো ।
:+কি হলো । তুমি এখন ওয়াসরুমে এলে কেন ।(তৃপ্তি)
নিদ্র আস্তে আস্তে তৃপ্তির দিকে এগিয়ে গেল । তৃপ্তি শুকনো ঢোক গিলে নিদ্রর দিকে তাকালো । নিদ্র তৃপ্তিকে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে বললো ।
:+বেবির মাম্মামকে আদর করতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু বেবির মাম্মাম আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেরাচ্ছে । হাতের কাছে বার বার এসেও ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে ।(নিদ্র)
তৃপ্তি পর পর শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো । নিদ্র তৃপ্তির দু’গালে হাত রেখে মুখ’টা নিজের দিকে তুললো । গোলাপি ঠোঁট দু’টো চকচক করছে । তৃপ্তি চোখ দু’টো খিঁচে বুঝে নিলো । দুই হাত শক্ত করে মুঠি বদ্ধ করে, উষ্ণ ঠোঁটের পরস পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো । এই কয়দিন অনেক পালিয়ে বেরিয়েছে সে । কিন্তু আজ আর পারছে না । নিদ্র আস্তে করে নিজের অধর জোরা তৃপ্তির অধরে চেপে ধরলো । তৃপ্তি থমথমি খেয়ে নিদ্রর মাথা দুই হাত দিকে আঁকড়ে পৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলো । মিলিত হলো তারা আরো এক বার মধুর মিলনে ৷
———————————————–
:+এখান থেকে তৃপ্তি আর নিদ্রর নতুন জীবন শুরু । তাদের সংসারে একজন তেজি হয়ে উঠলে । আরেক জন চুপ করে থাকে । এভাবেই চলছে তাদের দিন ।(আরিয়ান)
:+আর আপনি এখানে বসে বসে কোন দিন গুনছেন । রাত কয়’টা বাজে । সেদিকে খেয়াল আছে ।(জান্নাত)
হঠাৎ জান্নাতের গলার আওয়াজ শুনে কেপে উঠে আরিয়ান । রনি জান্নাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে দৌড় দিলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্য । আরিয়ান হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জিভ কাটলো । ৮টার আগে তার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু এখন ১০টা বাজে । রনিকে গল্প শুনাতে শুনাতে সে টাইমের দিকে খেয়ালই করেনি । জান্নাত যে এখানে চলে আসবে সে ভাবতেও পারেনি । জান্নাত দাঁত কটকট করে বলে উঠলো ।
:+আজ আপনি বাড়িতে আসেন । দেখাবো মজা । আমি একা একা বাড়ির মধ্যে, আর উনি এখানে বসে বন্ধুর সাথে গল্প করছে ।(জান্নাত)
মুখ’টা কাদো কাদো করে পিছনে ঘুরে বাড়ির দিকে হাটা ধলো জান্নাত । আরিয়ান বসে না থেকে তাড়াতাড়ি জান্নাতের কাছে গেল ।
:+সরি বউ পাখি । আমি বুঝতে পারিনি । কখন যে এতো সময় হয়ে গেলো ।(আরিয়ান)
কিন্তু কে শুনে কার কথা । জান্নাত গদগদ পায়ে বাড়ির দিকে হেটে যাচ্ছে । আরিয়ান উপায় না পেয়ে জান্নাতকে কোলে তুলে নিলো । জান্নাত চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে উঠলো ।
:+রাস্তার মধ্যে এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি করছেন । আমাকে নামিয়ে দিন তাড়াতাড়ি । আমি হেটে আসতে পেরেছি । হেটেই যেতে পারবো । লোকজন দেখলে কি বলবে ।(জান্নাত)
:+যা ইচ্ছে বলুক । আমি আমার বউ পাখিকে কোলে নিয়েছি । আর তার জন্য আমি যদি অসভ্য হই । তাহলে আমি অসভ্য ।(আরিয়ান)
এই বলে আরিয়ান সামনের দিকে হাটা ধরলো । চৌরাস্তার মোর থেকে খানিক’টা সামনেই তাদের বাসা । জান্নাত যানতো যে আরিয়ান এখানেই থাকবে । তাই সে শাশুড়ীকে খাবার খায়িয়ে দিয়ে রুমে গিয়ে তাকে ঘুমিয়ে যেতে বলেছে । আর নিজে আরিয়ানের খোজে চৌরাস্তায় এসেছে । জান্নাত নাক টেনে বলে উঠলো ।
:+এখন ভালোবাসা উতলে পড়ছে । কিছুখন আগ প্রর্যন্ত আপনি আমাকে ভুলে ছিলেন । আমি ডাক দেওয়াতে আপনার হুস আসে । এমনি ভাবে অন্য কোনো মেয়েকে পেলে আপনি আমাকে ভুলে যাবেন ।(জান্নাত)
আরিয়ান দাড়িয়ে গেল । এরপর আসে পাসে তাকালো । না এই যায়গা’টায় কাওকে দেখা যাচ্ছে না । চট করে জান্নাতের ঠোঁট জোরা নিজের ঠোঁট দ্বারা চেপে ধরলো আরিয়ান । এবার যদি মেয়ে’টার বকবকানি কমে । জান্নাত দুই হাত দিয়ে নিজের অধর জোরা ছোটালো আরিয়ানের থেকে । এরপর লজ্জায় ফিসফিসে জান্নাত বলে উঠলো ।
:+লাজ লজ্জার মাথা খেয়েছেন নাকি । রাস্তার মধ্যে এসব কি করছেন । নিলজ্জ কোথা’কার ।(জান্নাত)
বলতে বলতে আরিয়ানের বুকে মুখ লুকালো জান্নাত । আরিয়ান মুচকি হেসে বলে উঠলো ।
:+এখানে একটু ট্রাই করে নিলাম । বউয়ের তেজ কমালাম । বাসায় গিয়ে আসল খেলা হবে ।(আরিয়ান)
:+অসভ্য, মুখে লাগাম নেই । এখন কি হাটবেন । নাহলে আমাকে নামিয়ে দিন । আমি হেটে যেতে পারবো ।(জান্নাত)
আরিয়ান মুচকি হেসে সামনের দিকে পা বারালো । নতুন দম্পতি, নতুন জীবন শুরু ।
#সমাপ্তী,,,,,,,,,,,,,,,,
[।কপি করা নিষেধ।]
[।বি.দ্র: জানি না পুরো গল্প’টা কেমন হয়েছে । যারা শুরু থেকে শেষ প্রর্যন্ত পুরো গল্প’টা পড়েছেন । গল্প লিখতে সাপোর্ট দিয়েছেন । তাদের জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো । শেষে শুধু একটা কথা বলবো । ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, প্রিয় মানুষ গুলোর খেয়াল রাখবেন । মনে রাখবেন, কাওকে কষ্ট দিয়ে কেও সুখি হতে পারে না । উপরে একজন আছেন । তিনি নিশ্চয় বিচার করবেন । আশীর্বাদ/দোয়া করবেন আমার জন্য । যাতে এর থেকেও ভালো কোনো গল্প লিখে আপনাদের আনন্দিত করতে পারি । ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]