স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 Part – 5

0
90

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 5
______________________

স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র আকাশ ভাইয়া আজকে আমাকে প্রপোজ করেছে। ছেলেটা সম্পূর্ণ বখাটে, রাস্তা ঘাট মানুষ শিক্ষক মানে না যেখানে সেখানে সিগারেট মদ খাওয়া শুরু করে! বড়দের সম্মান তো কখনোই না। আর মেয়েদের সাথে ফ্লাট করা তো নিত্য দিনের ব্যাপার। প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফিরছিলাম। আমি রাত্রি, শিলা , বৈশাখী একই কোচিং এ পড়ি। রাত্রি আর বৈশাখীর বাসা অন্য গলির মোড়ে।
আর শিলা আর আমার বাসার প্রথম গলিটা একই ।
আর এই প্রথম গলির মোড়ের চায়ের দোকানের পাশে ক্যারাম স্টলেই বখাটে আকাশ ভাইয়াদের প্রধান আড্ডা মহল। রোজ হানিফ কাকার চায়ের দোকানটা খোলা থাকে কিন্তু আজ নেই। আর শিলার জ্বর হওয়ায় শিলা ও নেই খানিকটা ভয় হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই এই গলি দিয়েই বাসায় ফিরতে হবে। কারণ অন্য দিক দিয়ে ফিরতে গেলে আমায় আরো তিনটে গলি টপকাতে হবে, কেউ কি চায় সহজ পথ থাকতে অধিক পরিশ্রম করতে? আমি ও তেমনি সহজ পথ টাই বেছে নিলাম আর নিরুপায় হয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে খানিকটা সাহস জোগালাম।

মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছিলাম আকাশ ভাইয়াদের আড্ডা মহল থেকে পেরোতে না পেরোতো পেছন থেকে বখাটে আকাশ ভাইয়ার চেলা নিহাবের ডাক, “এই পিচ্ছি।”

কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।ভয়ে ঢোক গিললাম। ডাকটা শুনতে পেয়ে ও আমি না শোনার ভান ধরলাম। আমি কিছু না ভেবে আর ও তাড়াতাড়ি হাঁটা শুরু করলাম। জনশূন্য রাস্তা, ভয়ে পা কাঁপছে মনে হচ্ছে কেউ পা টেনে ধরে আছে। রাস্তা যেন ফুরুচ্ছেই না , তবুও আমি চেষ্টার শীর্ষে নিজেকে আগাতে লাগলাম।

কিন্তু এ চেষ্টার সুফল পেলাম না আর। দৌড়ে এসে আকাশ ভাইয়া আমার সামনে দাড়ালো। আমি পাশ কাটিয়ে চলে আসার সময় খপ করে আমার হাত ধরে ফেলল। ভয়ে আমি কিছু বলতে ও পারছিলাম না। হঠাৎ আকাশ ভাইয়া তার চেলা নিহাব কে বলল, ‘মেয়েটা জোস তাই না রে। তোর ভাবি বানালে কেমন হয়?’

নিহাব ভাইয়া এক বিশ্রী হাসি দিয়ে বলল, ” মামা মেয়ে তো জোস , কিন্তু পিচ্ছি।”

আকাশ ভাইয়া এক বিশ্রী শব্দ করে বলল, “আরে পিচ্ছি হলে কি হবে এখনই দেখ কত জোস।”

আরও কিছু ভাষার অপব্যবহারের মাধ্যমে নোংরা মানুষিকতার পরিচয় দিল আর বলল, “এটাকেই লাগবে আমার।”

দুজনে অট্টহাসির সাথে পৈশাচিক চাহনিতে মেতে উঠল।আমার চোখ ছলছল করছে নিজেকে খুব দূর্বল মনে হচ্ছে। আমি হাতটা ঝটকা মে রে ছাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম তখনই আকাশ ভাইয়া আমার পথ আটকে বলল, “আরে বেবি যাচ্ছ কোথায়? এখনই চলে যাবে?”

কিছু অশ্লীল উক্তি করল যার ফলে আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম। দৌড় দিতে যাব তখনই আমার ওড়না ধরে টান দিল।

নিজেকে আড়াল করতে দ্রুত নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলাম। হঠাৎ ধাক্কা খাওয়ার কারণে আকাশ ভাইয়া খানিকটা পিছিয়ে গেল। সেই সুযোগে নিজের বেস্ট দিয়ে দৌড়াতে থাকলাম। আমি যেন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছি। বাসায় ফিরে ব্যাগ কাঁধে নিয়েই ছাঁদে চলে আসলাম। পেছন থেকে রিফাত ভাইয়াকে দেখে চোখের পানি অবাধ্য হয়ে গেল। চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছিল, চোখের পানি লাগামহীন হয়ে গেছে। দুঃখ কষ্ট রাগ দূর্বলতা সব চোখের পানি হয়ে ঝরছিল যেন।

[ রিফাত ভাইয়া আমার চাচাতো ভাই হলে ও কোনো মতেই আপন ভাইয়ের থেকে কম নয়। রিফাত ভাইয়া আর আমি একে অপরের জন্য জান। ছোট থেকেই ভাইয়ার কাছে এটা ঐটা আবদার করতাম, ভাইয়া বলত সে নাকি এনে দেবে না। তাই আমি গোমড়া মুখ করে বসে থাকতাম আর বলতাম ভাইয়ার সাথে কথাই বলব না। পরক্ষণেই দেখতাম ভাইয়া সেটা দ্বিগুণ এনে দিয়েছে। আর আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে জড়িয়ে ধরে ভাইয়াকে বলতাম আমার বেস্ট ভাইয়া।আমাদের ভাই বোনের সম্পর্ক অসাধারণ। কখনো মনে হয় নি আমরা চাচাতো ভাই বোন। আর আমাকে যখন স্কুলে বা আশে পাশের কেউ জিজ্ঞাসা করত ,তোমরা কয় ভাই বোন আমি বলতাম আমরা দুই ভাই বোন। আমি আর আমার রিফাত ভাইয়া। রিফাত ভাইয়া আর আমি দুজনেই একা হলে ও কখনো আমরা নিজেদের একা ভাবি নি , আব্বু আম্মু বড় মা আর বড় আব্বু ও তেমনি ,তাদের দুই সন্তান বলেই ভাবে। তাই তো আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন বিশেষ কারণে আব্বুর ট্রান্সফার হয় ঢাকা টু সিলেট। আর আমরা পুরো পরিবার সিলেটে দুই বছরের জন্য শিফট হই।
সিলেটে ও আমাদের নিজস্ব বাড়ি আছে। আমার দাদু করেছিলেন সেই সুবাদে আমাদের এই খানে কোনো এক্সটা অসুবিধা হলো না। দাদু প্রচন্ড ভ্রমন পিপাসু ছিলেন মানে পাহাড়ি অঞ্চল বলতেই অজ্ঞান। আর সেই কারণেই এখানে একটি বাড়ি করে ছিলেন। যাতে অবসরে পাহাড়ের ঠান্ডা হাওয়ার স্বাদ নিতে পারেন। কিন্তু আমাদের জন্মস্থান ঢাকা, ঢাকাতেই বসবাস আত্মীয় স্বজন ।]

ভাইয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। আমার সাথে কখনো কেউ এই ধরনের বাজে বিহেব করে নি কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেল।

আমার কান্নার শব্দ শুনে রিফাত ভাইয়া পেছন ফিরে তাকায়। আমি ভাইয়াকে ধরে কেঁদেই যাচ্ছি আমার কোনো হুস জ্ঞান নেই। কারো শান্ত মৃদু কন্ঠস্বরে আমার হুস ফিরল।
“ফারাবি কি হয়েছে। এভাবে কাঁদছিস কেন?”

তাকাতেই দেখলাম আমি রিফাত ভাইয়া কে নয় ফারহান ভাইয়াকে জড়িয়ে আছি। একই ডিজাইনের টি শার্ট হওয়ায় পেছন থেকে বুঝতে পারি নি ।

[ গল্পটি কেমন হচ্ছে জানাবেন। আমার গল্পটি আদৌ আপনাদের ভালো লাগছে কিনা বা আপনারা পড়ছেন কিনা সেটা আমি বুঝবো কি করে। অন্তত দুই চারটি লেটার লিখে কমেন্ট করবেন। আপনাদের একটি কমেন্ট আমাকে গল্প লিখতে আরো বেশি অনুপ্রেরণা জোগায়। আমার লিখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকবেন ।]

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here