রাঙিয়ে_দাও পর্ব(১৭) #লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

0
143

#রাঙিয়ে_দাও
পর্ব(১৭)
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম

মানুষের জীবনচক্র বড়োই অদ্ভুত।সেই অদ্ভুত জীবনচক্রে রোজ অদ্ভুত অদ্ভুত সব ঘটনা আবৃত্তি হয়ে চলেছে।কোন মানুষটা কখন কার সান্নিধ্যে পেয়ে পাল্টে যাবে।সৃষ্টিকর্তা তার জীবন পাল্টে দেবেন এটা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারেন না।সেরকই জন্মের পর থেকে দেখে আসা ,জীবনের প্রয়োজনীয় দিক নিয়ে গুরুত্ব না দেওয়া ছন্নছাড়া মানুষটার হঠাৎই পরিবর্তন। বাড়ির প্রতিটি মানুষকে বেশ আশ্চর্য করলো এমনকি প্রহানকেও আশ্চার্যিত করলো।যে মানুষটাকে,বাড়ির প্রতিটি মানুষ এমনকি নিজের জীবনের বিশেষ মানুষ হিসাবে প্রেমিকা নামক মেয়েটা,সংসারের প্রতি উদাসীন ছন্নছাড়া মানুষটার এলোমেলো জীবনকে শত চেয়েও পরিবর্তন করতে পারলো-না।সেই মানুষটার হঠাৎই পরিবর্তন বিশেষভাবে সবারই নজরে পড়লো।তবে সেই হঠাৎই পরিবর্তনের কারন হিসাবে হিমানীকেই সবাই সাধুবাদ জানালো।সবার মুখেমুখে না হলে-ও মনেমনে একটাই জ্ঞাপন,মেয়েটা হাবিবের জীবনে আসতে না আসতেই ছেলেটার সংসারের প্রতি উদাসীনতা কমেছে।
বাহিরের টানটা কমে একটু সংসারের উপর টান হয়েছে ।আর সবচেয়ে যে পরিবর্তনটা সবার নজরে পড়েছে। সেটা হলো,ছেলেটা চল্লিশের কাছাকাছি বয়সে এসে চাকরির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।যখন এ-যুগে বয়স থাকতে চাকরি পাওয়াটা সোনার হরিন পাওয়ার মতো।সেখানে বয়সের সময়সীমা পার হয়ে গেলে তো কথাই নেই।তবুও তার চাকরি খোজাখুজির ব্যপারটা সবাইকে বেশ আনন্দিত করলো।

সেই ছন্নছাড়া মানুষটাকে আজ একসপ্তাহ যাবৎ অবাক হয়ে খেয়াল করে চলেছে প্রহান।ছন্নছাড়া মানুষটার জীবনে অর্ধাঙ্গীনি বলে নারীটা পদার্পণ করতে না করতেই সেই বাঁধনহারা মানুষটা পরিবর্তিত হতে শুরু করল।কত নেয়ামত সেই স্ত্রী নামক রমনীটিতে।যেখানে প্রহান কতো বুঝিয়েছে, কতো বলেছে অথচ মানুষটার ছন্নছাড়া ভাব সে কিছুতেই কাটাতে পারিনি।একটা সময় হাল ছেড়ে দিয়েছিল।চলুক না মানুষটা তার মতো করে।যেখানে বাড়ির বড়রা অর্থাৎ বাবা, চাচা কার-ও ছোটো চাচ্চুর এই ছন্নছাড়া জীবন নিয়ে অভিযোগ নেই।নেই বললে ভুল হবে।ছোটো ভাই হিসাবে তাকে সংসারী হওয়ার জন্য,তার সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ দেখার জন্য যে অভিযোগগুলো করা দরকার ছিলো।সেগুলো সময় মতো না হওয়াতে বরাবরই অভিযোগ জানিয়েছে।তবে সেটাতে ছোটো চাচ্চুকে বারংবার বেখেয়ালিপনা করতে দেখে হতাশ হয়ে নিজেরাও হাল ছেড়ে না দিলেও,ধরেও রাখেননি।তা-বাদে আর কোনো অভিযোগ নেই।যেখানে বাবা চাচা সবকিছু বুঝে-শুনে নিশ্চুপ রয়েছেন সেখানে ছোটো চাচ্চুর বয়সের ছোটো হয়ে তার এতো অভিযোগ জ্ঞান দেওয়া তাকে মানায় না।আর প্রহান এটাও মানে সংসারে সব মানুষ একই রকম হয়না।আচার-আচরণ ব্যবহারে, স্বভাবে সবাই ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে।সবাই সমান ধাচের মানুষ হলে পৃথিবী একাধারে একই নিয়ম কানুনে চলে যেতো।

—মনে হচ্ছে হাবিব সাহেব ইদানীং খুবই ব্যস্ত?

সকালবেলা রেডি হয়ে একটা ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলো হাবিব।প্রহানের কথা শুনে পিছে ফিরে তাকালো।তাকেও ফর্মাল ড্রেসআপে দেখে দাঁড়ালো না সে।বুঝতে পারলো প্রহানও ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে।সামনে এগোতেই সে বললো।

—আমার এই মুক্ত পাখির মতো বাঁধনহারা জীবনটাকে খাঁচায় বন্ধি করার জন্য তুই দ্বায়ী।আর সেই তুই আমাকে পিঞ্চ করে কথা বলেছিস।

প্রহানও হাবিবের পায়ের তালে পা মিলিয়ে সামনে এগোলো।হাবিব কথাগুলা বলতেই মুখে মৃদুমন্দ হাসিও ফুটলো তার।ছোটো চাচ্চু কথাটা কেনো বলেছে এটাও বেশ বুঝলো।তবে না বোঝার ভান করে সে-ও বললো।

—বিয়ে করলে মা আর বাবা চাচার কথায়।আর দোষ দিচ্ছো আমাকে।এখানে আমার দোষটা কোথায়?

—তুই বিয়ে করার পর থেকে পাড়াপ্রতিবেশি আত্মীয় স্বজনেরা বাড়ির সবাইকে আর-ও মাথা খারাপ করে দিয়েছে।কেনো আমাকে তারা বিয়ে দিচ্ছে না?বুড়ো
চাচাকে বাদে চাচার বয়সের অধিক ছোটো ভাইপোর ও বিয়ে হয়ে গেলো।অথচ চাচা এখনো ছন্নছাড়া জীবন ঘেঁটে বেড়াচ্ছে।তোর বিয়ের বিষয়টাতে বাড়ির মানুষের মাথা খারাপ নাহলেও পাড়াপড়শির মাথা খারাপ হয়ে গেছে।আর আমার লাইফ নিয়ে আমার চিন্তাধারী পাড়াপ্রতিবেশি আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কখনোই তো চর্চার অভাব ছিলোনা।তুই বিয়েটা করে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিস।আর সুযোগ আসতেই আমার পাড়াপ্রতিবেশি আত্মীয় স্বজনকে চিন্তামুক্ত করতে আমার বাড়ির সবাই ও সেই সুযোগটা লুফে নিয়েছে।

হাবিবের রহস্য করে বলা কথাগুলো শুনে প্রহানের মুখের মৃদুস্বরে হাসিটা বেশ প্রসারিত হলো-না।তাকেও যে এবিষয়ে কম কথা শুনতে হয়না এমনটা নয়।তবে মানুষের চর্চামুলক কথাতে সে কখনোই গুরুত্ব দেইনি।
যে যা বলছে বলুক না একটা সময় তারা নিজেরাই চুপ হয়ে যাবে।প্রহানের মুখের হাসিটা বজায় রেখেই বললো

—এখানে আমার দোষটা কোথায় খুজে পেলে?দোষতো তোমার পাড়াপ্রতিবেশি আর আত্মীয় স্বজনের?তবে আমাকে দোষারোপ করছো কেনো?

—তুই বিয়েতে রাজি না হলে এসব কথাতো শুনতে হতো না।আর আমার বিয়ে নিয়ে সবাই এতটা উতলাও হতো না।আর সুযোগ বুঝে আমার মুক্ত লাইফটাকেও খাঁচায় বদ্ধ করে দিতো না।

—তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমিও তোমার মতো বিয়ে না করে এরকম সন্ন্যাসী জীবনযাপন করি?তাই তো?কিন্তু তা কিকরে হয়?তুমি তো খুব ভালো করেই জানো,তোমার ভাগ্নী জন্মানোর পর থেকে তাকে দেখে আমার বিয়ে করার কি ইচ্ছে পোষণ হয়েছিলো।এখন সেই সুযোগটা সমাদরে যদি আমার দুয়ারে আসে, আমি হাতছাড়া করি কিকরে?

প্রহানের মজার ছলে বলা কথাটা শুনেই কপাল কুঁচকে তারদিকে একপলক তাকিয়ে ফের নজর ফিরিয়ে নিল হাবিব।দুষ্টমী ধরা পড়ে যাওয়ায় সেটা দেখে একগাল হেসে দিলো প্রহান।বাড়ির সামনে রাস্তার পাশটাতে রিক্সা অথবা সিএনজির অপেক্ষায় দাড়ালো দুজনেই ।
প্রহানের বাইক থাকা সত্ত্বেও সে আজ বাইক নিলো-না।
ছোটো চাচ্চুকে অনুসরণ করলো।মানুষটার সাথে বেশ অনেকদিন প্রানখুলে কথা বলা হয়না।সেটারই জন্য। আরও বিশেষ কিছুকথা বলার জন্য।আর ছোটো চাচ্চুর বাইক নেই এমনটা নয়।একটা বড় বাইক এক্সিডেন্টের পর থেকে নিজের ইচ্ছেতে নিজেই বাইক চালানো ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

—তুই আজ বাইক নিলি না কেনো?বাহিরে যা কাঠফাটা রোদ,রিকশা বা সিএনজির জন্য অপেক্ষা করা আর-ও কষ্টদায়ক।বাইক থাকতে এই কাঠফাটা রোদে এরকম খালি বেরিয়েছিস কেনো?

মানুষটা যেমনই হোক,সহৃদবান।হয়তো এই চাকরি খোঁজাটা,নিজের জীবনে জোর করে জড়িয়ে ফেলা ওই মেয়েটার দায়িত্বের খাতিরে জোগাড় করছে।নিজের ভালোটা কখনো না বুঝলে-ও পরের ভালোটা ঠিকই বোঝে।হাবিবের বলা কথাগুলো সম্পুর্ন উপেক্ষা করে প্রসঙ্গ পাল্টে প্রহান বললো।

—বিয়েটা নিজ ইচ্ছেতে না করলেও,মেয়েটা তোমার জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে।পিছনে যা কিছু ছিলো, হয়েছে সবকিছু ভুলে গিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে জীবনটা এগিয়ে নিয়ে যাও।মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে,নিজের জীবনের অতিতের জন্য মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও-না।পারলে তাঁকে ভালো রাখার চেষ্টা করো।ভাগ্যে যেটাই ছিলো সেটাই হয়েছে।আর ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট থাকা সবার জন্য উত্তম।সেটা নিয়েই ভালো থাকাই ভালো।

প্রহানের কথাগুলো কানে গেলেও তারদিকে ফিরলো না হাবিব।নাবার জন্য প্রহান একসময় তার প্রতি ভিষণ ক্ষিপ্ত ছিলো।সেই থেকে ছেলেটার নজরে নজর রেখে কথার বলার সাহস হয়না তার।নিজেকে অপরাধী মনে হয়।রাস্তার চলা যানবাহনের দিকে অবিচল নজর রেখে হাবিব বললো।

—সামনে এগিয়ে যাওয়ারই তো চেষ্টা করছি।আর ওই মেয়েটাকে ভালো রাখারও।যার ফলস্বরূপ আমার মুক্ত ছন্নছাড়া জীবনটাকে বদ্ধ করে নিয়েছি।দ্বিতীয়বার আমার দ্বারা জেনো আর কার-ও প্রতি অন্যায় না হয়।আর কোনো মেয়ে কষ্ট না পায়।সেই চেষ্টাই করছি।

হাবিবের মতো প্রহানের নজর-ও ব্যস্ত রাস্তাতে।সেদিকে নজর স্থির রেখে সে-ও বললো।-সেই চেষ্টায় কি আমিও কি একটু ভাগিদার হতে পারি?সাহায্য করতে পারি কি আমার প্রিয় মানুষটাকে?

এবার ঘাড় ঘুরিয়ে প্রহানের মুখের দিকে তাকালো হাবিব।বুঝতে অসুবিধা হলোনা ছেলেটার কথার ইঙ্গিত।শান্ত নজরে কিছুক্ষণ প্রহানের মুখের দিকে তাকিয়ে মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে ফের ব্যস্ত রাস্তায় মনোযোগ দিল।সময় নিয়ে বললো।

—আমি চেষ্টা করতে চাই।আমার চেষ্টায় বিফলতা হলে অবশ্যই আমি আমার প্রিয়জনদের সাহায্য নেবো।আর নেওয়ার চেষ্টাও করবো।

আর কথা বাড়ালো না দু’জনের একজনেও।সি-এন-জি আসতেই, দুজনের গন্তব্য একই রাস্তায় হওয়ার উঠে পড়লো দুজনে।সারাপথ দুজনে আর কেউ একটা টুঁশব্দ ও করলোনা।প্রহানের গন্তব্যের রাস্তা আগেই শেষ হতেই সে নেমে পড়লো।নিজের মা’কে বরাবর দেখে এসেছে ছোটো চাচ্চুকে বুঝানোর সময় বা দোয়া দেওয়ার সময় চাচ্চুর ঝাকড়া চুলের উপর মমতার হাত রাখতে।মায়ের ছেলে হওয়া সত্ত্বে বিষয়টা তারসাথে কখনো মা করেন নি।তাতে সে অসন্তুষ্ট এমনটা নয়।তাঁকে দোয়া দেওয়ার সময় মা বরাবরই তার মাথায় কপালে ঘনোঘনো মায়ের ঠোঁটের স্পর্শ আঁকেন।এটাতে সে মনপ্রাণ জুড়ে সন্তুষ্ট।

প্রহানের গন্তব্যের রাস্তায় সিএনজি থামতেই মায়ের মতো অনুসরণ করে ছোটো চাচ্চুর ঝাঁকড়া চুলের উপর দৃঢ় হাত রাখলো প্রহান।ফের মুখে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে বললো — তোমার আগামী পথচলা খুবই সহজ হোক। বেস্ট অফ লাক মা’ই ফ্রেন্ড।

সম্পর্কে চাচা ভাইপো হলেও একসময় বন্ধুর মতোনে আচারন ছিলো দু’জনের মধ্যে।কথাও তেমনই হতো।হঠাৎই সবকিছু পাল্টে গেলো।পুনরায় প্রহানের মুখে সেই পুরানো সম্বোধনটা শুনতেই আবেগপ্রবণ হলো হাবিব।ফ্রেন্ড সম্বোধনটা সে করলেও প্রহান কখনোই করতোনা।বরং বিরক্ত হতো।আজ সেই ছেলেটা তাকে ভরসা জােগানোর জন্য তার বিরক্ত হওয়া শব্দটা আওড়াচ্ছে।সত্যিই ভাগ্য করে সে কিছু আপনজন আর প্রিয় মানুষ পেয়েছে।যারা সবসময় তাকে তার ভালোর সাথে সাথে মন্দটাকেও মেনে নিয়ে ভালোবেসেছে।

.

প্রহানের রুমের গোলাকার স্টাডি চেয়ার টেবিলটায় বসে পড়ছে প্রান্তি।পড়ছে তো না সে, গভীর চিন্তায় ডুবে আছে।সেটা ক্ষনে ক্ষনে পলক ঝাপটিয়ে দেখছে প্রহান।প্রান্তি চেয়ার টেবিলে বসলেও প্রহান বসে আছে নিজের বেডে।সারাদিন রোজার ক্লান্তির পরে,তারাবির নামাজ শেষে আজ কয়েকদিন যাবত প্রান্তিকে পড়তে বসায় সে।মেয়েটা মেধাবী হওয়ায় পড়া নিয়ে কখনো বাহানাবাজি করেনা।সহজ আর সুন্দরভাবে রোজ পড়ে উঠে যায়।তবে আজ মেয়েটা পড়ায় বেশ অন্যমনস্ক।কেনো বুঝতে পারলোনা প্রহান।পড়ছে আর ক্ষনে ক্ষনে গালে হাত দিয়ে গভীরভাবে কিছু ভেবে চলেছে।গলা ঝেড়ে প্রান্তিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো প্রহান।গলার শব্দ পেতেই বইয়ে নজর দিলো প্রান্তি।সেটা দেখে প্রহান বললো।

—তো ম্যাডাম আজ পড়াশোনা বাদ দিয়ে কি নিয়ে এত গভীর চিন্তা ভাবনায় ডুবে আছেন।আমি কি জানতে পারি?

চেয়ার ঘুরিয়ে প্রহানের দিকে বসলো প্রান্তি। মানুষটার নজর ফাঁকি দেওয়া সহজ কথা নয়।এটাতো মনেই ছিল না তার।তবে ইদানীং মানুষটার সাথে এতো সহজ হয়ে গিয়েছে সে নিজেরও ভাবনার বাহিরে।কোথায়,কি আর কেনো হচ্ছে।যেকোনো ঘটনা মানুষটা-কে শেয়ার করতে তার দ্বিধা হয়না বরং বেশ ভালোই লাগে।অদ্ভুত এক সুখানুভূতি অনুভব হয়।আদূরে আদূরে চাহুনি আর সহজ ভঙ্গিতে প্রান্তি বললো।

—হঠাৎ করে আমার ছন্নছাড়া ছোটো মামাটা কতোটা পাল্টে গেছে,সবদিক থেকে কত পরিবর্তন হয়েছে তার। সেটা নিয়েই ভাবছি।আগে বাড়িতে খুব বেশি থাকতো না।বললে চলে দেখাই যেতোনা তাকে বাড়িতে।এখন বাড়ির প্রতি টান হয়েছে।সবসময় নাহলেও ঘনোঘনো বাড়িতে দেখা যায় তাকে।চাকরী বাকরী খুঁজছে।সবাই কতো খুশী,কতো ভালো বলছে মামার পরিবর্তনটা দেখে।

কপাল কুঁচকে প্রান্তির কথাগুলো শুনে গেল প্রহান।এটা কোনো গভীর ভাবনার বিষয় হলো?পড়ায় মনোযোগ না দিয়ে এটা নিয়েই ভেবে চলেছে মেয়েটা আশ্চর্য!ফের কিছু একটা ভেবে কপালের ভাজগুলো মিলিয়ে ফেলল প্রহান।হয়তো খুব কাছের মানুষটার পরিবর্তনটা সবার নজর কেড়েছে।আকর্ষণ করেছে।যে মানুষটাকে ওই মেয়েটা বিগত সতেরো বছরের অধিক সময় ধরে একই রকম ভাবে চলতে ফিরতে দেখে আসছে।বিধায় সেই মানুষটার হঠাৎ পরিবর্তনও নজরকল্পিত ভাবছে।সেটাই চিন্তার আর ভাবনার বিষয় করে নিয়েছে মেয়েটা।তবুও মজার ছলে প্রহান বললো।

—বিয়ের পরে সব পুরুষেরাই ওইরকম পরিবর্তন হয়ে যায়।পাল্টে যায়।সে যতোই ছন্নছাড়া পুরুষ হোক-না কেনো।

টানাটানা চোখের আকার পাল্টে গেলো প্রান্তির।চোখের আকার ছোটোছোটো করে বেশ আশ্চর্যিত গলায় প্রান্তি
বলে।—তবে আপনি হয়েছেন কোথায়?

ল্যাপটপে ভার্সিটির অফিসিয়াল কিছু কাজ করছিলো প্রহান।প্রান্তির প্রশ্নবোধক কথাটা কানে যেতেই মুখ মৃদু হাসি ফুটলো তার।তবে নজর ল্যাপটপ থেকে সরালো না।ভয়ংকর প্রশ্ন করা রমণীর দিকে যতো কম নজর দেওয়া যায় ততোই তারজন্য মঙ্গল।ইদানীং মেয়েটার কাছে আসাতে মন উল্টো পাল্টা কতো কিছু চেয়ে বসে।শুধু নিজেকে সংবরণ করেরাখা।মেয়েটাকে সে খুবকরে কাছে চায়।তবে এই অপরিপক্ক বয়সে নয়।ভাবনা স্থির রেখে প্রহান বললো।

—কেনো আমার পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিলো নাকি?

—কেনো নয়?তবে কি বলতে চাইছেন আপনি পুরুষ নন?

হঠাৎ কথার তালে কথাটা বলে লজ্জায় পড়লো প্রান্তি।কথার ছলে মুখ থেকে বেরিয়ে গেছে কথাটা।প্রান্তির লজ্জাটা বাড়িয়ে দিয়ে প্রহান ফের বললো-তোর সন্দেহ হচ্ছে নাকি আমি পুরুষ কি-না?

মুখ ঘুরিয়ে নিলো প্রান্তি।নজর এদিক ওদিক পানে বিচলিত রেখে বললো।-ছিঃ!কথাটা কিন্তু আমি সেভাবে বলিনি।আপনি যতোসব উল্টো পাল্টা মিনিং বের করছেন।

প্রহানের হাসি চওড়া হলো।তবে নজর সেই লজ্জাময়ী নারীরপানে দিলোনা।যদিও তার লজ্জা মাখা মুখখানা দেখতে প্রহানের ভিষণ ইচ্ছে করলো।তবু-ও নিজেকে সংযাত রাখার অভিপ্রায়স চালিয়ে, নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিটা ল্যাপটপে আবদ্ধ রেখে বললো।

—তবে কি জানিস?বিয়ের পরে স্বামী জাতিদের পাল্টানোর বা পরিবর্তনের জন্য বউদের স্পেশাল স্পেশাল বশীকরণ মন্ত্র জানতে হয়।সেই মন্ত্রের বশীভুত হয়ে স্বামী জাতিরা পাল্টে যায়।কিন্তু আমার বউতো সেই স্পেশাল স্পেশাল বশীকরণ মন্ত্রতো জানেই না।তবে আমি প্রহান পাল্টে যাই কি-করে?পরিবর্তনের কারনতো একটা অবশ্যই থাকা উচিত।আর আমার পুরুষত্বে আমার কোনো সন্দেহ নেই।স্বামী হিসাবে তোকেও আশ্বাস দিচ্ছি তুইও সন্দেহ রাখিস না।

একটু থামলো প্রহান।বউটাকে লজ্জা দিতে কি দারুন সুখ।আর প্রান্তির দিকে না তাকিয়ে-ও বুঝতে পারছে মেয়েটা আশ্চর্য হয়েই তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তার মুখ থেকে এরকম লজ্জাজনক কথা মেয়েটা শুনবে হয়তো কখনো ভাবিইনি।হয়তো সেই কারনেই এখনো হতভম্ব হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।নাহলে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মেয়েটার অস্তিত্ব এ ঘর থেকে কখনই বিলিন হয়ে যেতো।মুখে দুষ্ট হাসির রেখা বজায় রেখে৷ প্রহান ফের বললো।

—বাড়িতে তো অনেক বিবাহিত নারী আছে।এমনকি তোর নতুন আম্মা।যার স্পেশাল মন্ত্রের বশীকরণ হয়ে তোর ছন্নছাড়া ছোটো মামা টা পর্যন্ত পরিবর্তন হয়ে গেলো।তাদের কাছ থেকে সেই স্ত্রী জাতীয় স্পেশাল স্পেশাল বশীকরণ মন্ত্র শিখে আমার উপর এপ্লাই কর।
দেখবি আমি তোর আগের অপছন্দসই প্রহান পরিবর্তন হয়ে প্রান্তির পছন্দসই প্রহান হয়ে গেছি।শুধুমাত্র আমার প্রানের প্রহান হয়ে গেছি।

থেমে গিয়ে মুখ উঁচু করলো প্রহান।নিজের নেশাময় শান্ত নজরটা ফেললো প্রান্তির গোলগোল করে রাখা আশ্চর্যময় নজরের পানে।মেয়েটা সটান স্থির হয়ে বসে আছে।সামন্যতমও নড়নচড়ন নেই।সেই বরফের মতো জমে থাকা রমণীর নজরে নিজের নজরটা দৃঢ় রেখে প্রহান বললো।

—তরপর বুঝিয়ে দেবো আমি পুরুষ নাকি অপৌরুষ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here