#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব_১৮
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম
লজ্জরাঙা মুখ নিয়ে ঘুরে বসলো প্রান্তি।হাত বাড়িয়ে নিঃশব্দে টেবিলের উপর থেকে টুকটুক করেই বইগুলো গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালো।প্রহানের সাথে যদিও কথা বলতে বেশ লজ্জা আর দ্বিধাবোধ হলো। তবু-ও মানুষটাকে উপেক্ষাকরে চলে যাওয়া বা ইদানীং মানুষটাকে এড়িয়ে চলা অসম্ভব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে যে লজ্জাজনক কথাগুলাে মানুষটা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেছে।কন্ঠস্বর তো সেই কখনই অবরুদ্ধ হয়ে গেছে তার।প্রান্তির নিজের ধারণার বাহিরে ছিলো,এই শান্ত প্রকৃতির মানুষটা এরকম নির্লজ্জতাজনক কথা-ও বলতে পারে?
—আমি আজ আর পড়তে চাই না।
মাথা নিচু রেখেই নিঃশব্দে হাসলো প্রহান।ঠোঁটের সাথে সাথে ভাসমান চোখজোড়াতেও তার হাসির প্রতিফলন মিললো।মেয়েটা যতোই ছটফটি আর চঞ্চল্যময় হোক না কেনো নির্লজ্জ কোনো মতে-ও নয়!চঞ্চল্যময় লতাঙ্গ নারী শরীরে লজ্জাবতীর ন্যায় একটু ছোঁয়া পেলেই সর্বাঙ্গ তার নুইয়ে পড়ে।মেয়েটার প্রথম নারীস্পর্শে সেটা সে অনুভব করেছে।বুকে জড়িয়ে দু’হাতের বাহুবন্ধনীতে নিয়েই অনুভব করেছে,পুরুষালি স্পর্শে মেয়েটা লজ্জায় কতোটা কুঁকড়ে গিয়েছিলো।তবে এতোসময় তার কথাগুলো হজম করার কারন হয়তো এই প্রহান নামক মানুষটার উপরে ভরসা আর বিশ্বাসের।আর সেই ভরসা আর বিশ্বাস ছুটে যেতেই মেয়েটার হুঁশ ফিরেছে।যার কারনে লজ্জায় আর এঘরে দাঁড়াতে চাইছেনা।আবার সদ্য একটু একটু প্রেমে পড়া অপছন্দনীয় মানুষটাকে উপেক্ষা করে চলে-ও যেতে পারছে-না।মাথা উঁচু করে তাকালো প্রহান।আর প্রহানকে মাথা উঁচু করে তাকাতে দেখেই দ্রুত পা চালিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেল প্রান্তি।সেটা দেখেই রমণীর দ্রুত প্রস্থানের দিকে নিভৃত যতনে তাকিয়ে আবারও নিঃশব্দে মৃদু হেসে দিলো প্রহান।নজরটা টানা কিছু-সময় সেই প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে আওড়ালো।
—তোকে একটু ভালোবাসাবো কবে আমার সুখ,আমার শান্তি?ওই আদূরে মায়ামায়া মায়াবীনি আদলখানা কবে একটু মনপ্রাণজুড়িয়ে নজর ডুবিয়ে দেখবো?কবে একটু ওই হরিনী আদূরীআদূরী চাহুনিতে সুখ সুখ ভালোবাসায় নিজেকে বিলিয়ে দেবো?নিজেকে ভাসিয়ে নেব তুই নামক চঞ্চল প্রানবন্ত হরিনী প্রানোনাশীনিতে ? কবে?বল-না ?
ল্যাপটপের কিবোর্ডে পুরুষালী লম্বা মোটামোটা আঙুলগুলো তো সেই কখনই থেমে গেছে প্রহানের।কথা গুলো মৃদুস্বরে আওড়াতেই ভাসমান নজরজোড়াও বন্ধ করে নিলো তার দুয়ার।সশব্দে আলস্যভঙ্গিতে পুরুষালী চওড়া পিঠ ঠেকিয়ে দিলো বেডসাইডের হেড সাইডে। মাথাটার আস্তরণও ঠেকিয়ে দিলো সেখানে।বন্ধ দুয়ারে ও সেই রমনী।যার টানাটানা হরিনী চঞ্চল্যময় নয়ন।আকর্ষণীয় একজোড়া লালরঙা ওষ্ঠ।কোমর পর্যন্ত লম্বা দীঘল কালো কেশ।নজর থেকে হৃদয় প্রশান্তি করার মতো মায়াবিনী একখানা গোলগাল মুখশ্রী।সদ্য ফোঁটা স্নিগ্ধ বেলি ফুলের মতো কোমল একটা বউ তার।সেই শুভ্র বেলীফুলের ফর্সা শরীরে সাদা কালো যে রঙেরই পোশাক জড়াক না কেনো নজর ধাঁধিয়ে যায়।কি সুন্দর নিদারুণ মানায়।তবে বেলি ফুলের ন্যায় ফর্সা স্নিগ্ধ আকর্ষণীয় শরীরে লাল রঙটা জেন একটু বেশিই চড়াও হয়।না হলে বিয়ের রাতে সামন্য এক লাল জামদানীতে চঞ্চল্যময় রমনীকে এত মনোমুগ্ধকর আর সৌন্দর্যময়ী দেখায়।এক পলকের একটু দেখায় সেই নজর ধাঁধানো রূপের দৃশ্যাবলী হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় করে দেওয়ার মতো আসক্তিতে বিঁধে গিয়েছিলো।নজরের লালসায় ডুবিয়ে মারছে এখনোও।যে দৃশ্যপট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনো ভোলার নয়।
.
নিজের রুমে না গিয়ে ছোটো ছোটো কদমে ড্রয়িংরুমের দিকে এগোলো প্রান্তি।ডাইনিং টেবিলে খাবার রেডি করছেন মামনীরা।সেদিকে এগোলো প্রান্তি।ডাইনিং টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই মাহবুবা বেগম বললেন।
—এসেছিস।বোস,খেয়ে নে।প্রহান আসেনি?ও এখনো কি করছে?
একটা কথাও উত্তর দিলোনা প্রান্তি।তবে বসলোও না।রোজার সময়টাতে সন্ধ্যারাতে তার কখনোই খেতে ভালো লাগে না।এটা সে রোজ বলে-ও বড়-আম্মাকে বোঝাতে পারে না।
—কি হলো?বসছিস না কেনো?রোজ রোজ এরকম না খেয়ে অনিয়ম করলে কিন্তু চলে-না।শরীরে হাড় চামড়া ছাড়া এক-ফোঁটা গোশও তো মনেহয় নেই।তারউপর একবেলা করে খাওয়া।এভাবে কি শরীর চলে?
তবু-ও প্রান্তি কথা বললো না।নিশ্চুপ হয়ে চেয়ার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইলো।তার মাথায় এখন অন্য ভাবনা চলছে।প্রান্তির খাবার বিষয়ে আগ্রহ না দেখে মাহবুবা বেগমও নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।রোজার মাস এলেই মেয়েটা খাবার বিষয়ে এরকমই করে।ইফতারির সময়ে মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত শুধু পানি খাবে।তারপর এরাতে খাওয়া দাওয়া বন্ধ।আর ওরাতে কোনোমতে দু একগাল খেতে পারলে ব্যস।তার নির্দ্বিধায় দিন পার হয়ে যাবে।
—কি হলো আমার সোনাআম্মা এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেনো? এখনো খায়নি?
ভারী পুরুষালী গলার স্বরটা কানে যেতেই মিসেস আশা ডাইনিং টেবিল থেকে সরে একটু আড়াল হয়ে দাঁড়ালেন।হিমানিও তাকে অনুসরণ করলো।মিসেস আশার পিছুপিছু গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালো।বাড়ির এই বড়কর্তা নামক বটগাছটাকে সবাই প্রচন্ড সম্মানের নজরে দেখে।চলাচল আর কথাবার্তা-ও উনার সামনে সবাই সম্মান আর আদবের সহিত করে।তবে উনার রাশভারী ব্যক্তিত্বের গম্ভীর্যতাকে ভয় পেয়ে সবাই সম্মান করে এমনটা নয়।উনার কথা-কাজ বিবেচনাবোধ আর ব্যবহার সবাইকে বাধ্য করে উনাকে সম্মানীয় নজরে দেখতে।সন্মান দিতে।
—ইদানীং খাওয়া দাওয়ায় আপনার সোনাআম্মার বড়ই অনিয়ম চলছে।কথাতো শুনতেই চায় না।
ডাইনিংটেবিলের মাথার চেয়ারখানা টেনে বসে পড়লেন ষাটোর্ধ বয়স্ক মাহমুদ আফরোজ।উনার পাশাপাশি এপাশওপাশ চেয়ারে বসলেন প্রান্তির মেজোমামা মাসুদ আফরোজ আর ছোটো মামা হাবিব আফরোজ।দু’জনে একপলক প্রান্তির দিকে তাকিয়ে খাবারে মনোযোগ দিলেন।উনাদেরকে পরিবেশেনের কাজে ব্যস্ত হতে হতে মাহবুব বেগম কথাটা বললেন।কথাটা কানে যেতেই বেশ আদূরে গলায় মাহমুদ সাহেব বললেন।
—এটা কিন্তু একদম ঠিক কথা নয় সোনাআম্মা।কেনো বোঝো না এরকম অনিয়ম করলে শরীর দূর্বল হয়ে পড়বে।অসুস্থ হয়ে যাবে তুমি।
বড় মামাকে ভয় পায় এমনটা নয়।তবে উনার সামনে গলা উঁচিয়ে কখনো কথা বলেনা প্রান্তি।তাই মিনমিনিয়ে
বললো।
—আমার খেতে ভালো না লাগলে আমি কি করবো?
—তবু-ও একটু হলে-ও তো খেতে হবে নাহলে এভাবে না খেয়ে থাকতে থাকতে তো দূর্বল হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে।আর আমার সোনা আম্মা তো মোটেই অবুঝ মেয়ে নয়।খেতে বসো।
বাধ্য হয়ে বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ খেতে বসলো প্রান্তি।প্রান্তির আর মাহমুদ সাহেবের কথার ফাঁকে প্রহান এসে শান্ত আর ভদ্র ছেলের মতো মাথা নিচুকরে খাবার টেবিলে বসে পড়লো।মায়ের দিকে একপলক তাকিয়ে বললো — দাদিআম্মা খেয়েছেন?আর আদ্রনিদ্র কোথায়?ওদের দেখছি না তো?
—তোর দাদিআম্মার কি এতো রাত করে কখনো খায়। নাকি খেয়েছেন কখনো?তিনি আজানের সাথেসাথে নামাজ পড়ে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।আর আদ্রনিদ্রও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।রাত কি কম হয়েছে? প্রায় এগারোটা বাজতে চললো।বাচ্চা মানুষ তোদের মতো এতো ধৈয্যসহ্য নেই।
মায়ের কথায় স্পষ্ট বিরক্তবোধ।তাই আর কথা বাড়ালো না প্রহান।কথাটা তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হলেও।মুলত মা কথাটা বাবাকে উদ্দেশ্যে করে শুনিয়েছেন।বাবার সবকাজ সঠিক সময়ে হলেও রাতের খাবারটা সবসময় খেতে একটু দেরী করেন উনি।আর বাবাকে খেতে না বসতে দেখলে চাচারা-ও খেতে বসতে পারেন না।মুলত উনারা চান না খেতে।আর তার আম্মাজান বাবার এই বিষয়টাতে প্রচুর বিরক্ত হোন।
—কি হলো সোনা আম্মা খাচ্ছো না কেনো?
খেতে-তো এমনিতেই ইচ্ছে করছিলো-না।তারউপর সেই অসভ্য অসভ্য কথা বলা মানুষটাকে নিজের পাশের চেয়ারে এসে বসে পড়তে দেখে খাওয়া আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেলো প্রান্তির।রুমের মধ্যে বলা নির্লজ্জতাময় কথাগুলো মনে পড়তেই খাবার ছাড়া হঠাৎই বিষম খেলো সে।মুলত গালে অল্পস্বল্প ভাত ছিলো,যা গিলতে পারছিলো না সে।আর সেসব কথাগুলো মনে পড়তেই কান মাথা ফের তপ্ত হয়ে আনমনে কিভাবে কি করে জেনো বিষম লেগে গেছে।
টেবিলের অন্যপাশ থেকে মাহবুবা বেগম ছুটে আসার আগেই পানির গ্লাস নিয়ে উঠে দাঁড়াল প্রহান।ভাতে হাত দিয়েছিলো কেবল সে।মাখানোর আগেই প্রান্তির বিষমে ভাত আর মাখানো হলো-না তার।ডানহাতে প্রান্তির মুখের কাছে গ্লাসটা ধরে বাম হাতটা দিয়ে অনবরত পিঠে হাত বুলাতে থাকলো সে।সবাই সেদিকে একপলক নজর বুলিয়ে যে যার মতো পুনরায় খেতে মনোযোগ দিলো।মাহবুবা বেগম-ও ধীর পায়ে প্রান্তির পাশে এসে দাঁড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।
—খাবার সময় মনোযোগ কোথায় থাকে?নিয়েছিস দুই লোকমা ভাত।এই চারটে ভাত খেতে বিষম লাগে?
প্রহানের মৃদু ধমকে বলা কথাগুলো ঠিক কি কি শব্দ উচ্চারণ করলো প্রান্তি বুঝে উঠতে পারলো না।সে-তো থমকে আশ্চর্য হয়ে বসে আছে।বিষম তো সেই কখনই থেমে গেছে তার।পুরুষালী শক্ত হাতটা কোমল পিঠে স্পর্শ করতেই শরীর শিরশিরানী দিয়ে বিষম থেমে গেছে প্রান্তির।কি আশ্চর্য, মানুষটা সবার সামনে তার সাথে এরূপ লজ্জাময় আচারন কেনো করছে?এখানে বাড়ির বড়রা সবাই আছে এটা কি মানুষটা বুঝতে পারছেনা নাকি দেখতে পাচ্ছে না।বিশেষকরে বড় মামা আছেন এখানে।তবুও মানুষটা উনাকে লক্ষ্য করে উঠে এলো?এতোটা নির্লজ্জ হয়ে গেলো মানুষটা কবে থেকে?আশ্চর্য হয়ে গোলগোল নজরে আশেপাশে নজর বুলালো সে।যে যার মতো সাবলীল আর সহজ ভঙ্গিতে খেয়ে যাচ্ছে। তাদের দিকে কারোর নজর,খেয়াল কিছুই নেই।অথচ তার বিষম লাগতেই সবাই ব্যস্ত ভঙ্গিতে তারদিকে তাকিয়ে কথা বলে উঠে দাঁড়িয়েছিলো।মানে বিষয়টা সবাই খেয়াল করে নিজদের কাজে ব্যস্ত হয়েছে।না-হলে তো এতোসময় তার উপরে হুড়মুড়িয়ে পড়ার কথা সবার।
সবার সামনে প্রহানের একরকম সহজ আচারন প্রান্তি কে লজ্জায় ফেললো। বিশেষকরে বড়মামার সামনে মানুষটার এহেন কান্ড তাকে বিব্রত করলো।যদিও এরকম ঘটনা এর আগেও বহুত ঘটেছে তারসাথে।শুধু মানুষটার তাকে গায়ে হাত দেওয়াটা বাদে।তখন বিষয়টাতে লজ্জা আর অস্বস্তিতে না ফেললেও এখনের বিষয়টাতে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেললো প্রান্তিকে।ভাবনার মাঝেই পানি খেয়ে নিলো প্রান্তি।প্রান্তির পানি খাওয়া শেষ হতেই আগের ন্যায় চুপচাপ গিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো প্রহান।ফের খাবারে মনোযোগ দিলো।লজ্জায় প্রান্তিও আর মাথা উঁচু করে আশােপাশে ভুলেও তাকালো না।নিশ্চুপ কোনোমতে দুগাল খেয়ে উঠে পড়লো।
.
খাবার শেষে কোনো দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো প্রান্তি।রুমে গিয়ে নিজের বেডের উপর কিছুসময় বেশ থমকে বসে রইলো।শক্ত পুরুষালী হাতের স্পর্শটার কথাটা মনে পড়তেই বারংবার শরীর কেঁপে কেঁপে ঝাড়া দিয়ে উঠছে তার। সবার সামনে কি নির্লজ্জতামী ঘটনা ঘটলো।ভেবেই কান মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ।
—প্রান্তি আসবো?
হিমানীর ডাকলেও সাড়া দিলো না প্রান্তি।কথাটা জেনো তার কান পর্যন্ত পৌঁছালোই না এমনটা মনে হলো হিমানির।ফের দুবার ডেকেও যখন সাড়া পেলো-না।কিছুটা অবাক হয়ে ভিতরে পা বাড়ালো হিমানী।থমকে বসে আছে মেয়েটা।কিন্তু কেনো?
—মন খারাপ তোমার?
প্রান্তির কাছে গিয়ে কথা বলতেই হুঁশ ফিরলো প্রান্তির।হিমানী মুখের দিকে তাকিয়ে কথার উত্তর সরূপ মাথা এদিকে ওদিকে নাড়িয়ে না জানালো অর্থাৎ তার মন খারাপ নয়!মুখে উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়াতে দেখে
কপাল কুঁচকে এলো হিমানির।যে মেয়ে কথা ছাড়া মুখ বন্ধ রাখতে পারেনা।সে মেয়ে তার কথার উত্তর সরূপ মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছে?আর তার সুন্দর মুখখানাও কেমন থমথমে দেখাচ্ছে,ব্যাপার কি?
—কি হয়েছে প্রান্তি?
—বিয়ের পর বউ জাতিদের স্পেশালস্পেশাল বশীকরণ মন্ত্র কেমন হয় নতুন আম্মা?যার কারনে স্বামী জাতিরা বিয়ে হতে না হতেই পাল্টে যায়।আমি যেমনটা ভাবছি তেমনটাই কি?
প্রান্তির অদ্ভুত সব কথায় থতমত খেয়ে তার মুখের দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো হিমানি।ভেবে পেলো না মেয়েটা এসব আজগুবি অদ্ভুত কথা বলছে কেনো?
আর বউদের স্পেশাল স্পেশাল বশীকরণ মন্ত্র মানেটা কি?কিসব কথাবার্তা!প্রান্তি নিজেও কথাটা বলে মুখ ছোটো করে করুন চাহুনিতে হিমানীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।ওই মানুষটার বলা কথার অর্থটা তো
সে কিছুটা হলেও বুঝেছে।তবু-ও নির্লজ্জের মতো মুখ ফসকে কি করে জিজ্ঞেস করে বসলো সে? মানুষটার ছোঁয়া লেগেছে নিশ্চয় তার। নাহলে সে-ও কি-করে ওই মানুষটার মতো নির্দ্বিধায় নির্লজ্জের মতো কথাগুলো বললো।প্রান্তির করুন চাহুনি দেখে হিমানী কিছু বলতে যাবে তার আগে উচ্ছল নারী কন্ঠে দুজনেই সেদিকে ফিরলো।
—হিমানী আর কি বশীকরণ মন্ত্র বলবে তোকে।আমিই বলে দিচ্ছি,বিয়ের পর বউদের স্পেশাল স্পেশাল বশীকরণ মন্ত্র কেমন আর কিরকম হয়ে থাকে।
কথাটা বলে একগাল হেসে রুমের মধ্যে ঢুকলো প্রজ্ঞা।ফের প্রান্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো — তুই তো এখনো তোর বরের ঘরই দখল করতে পারলি না।স্পেশাল স্পেশাল বশীকরণ মন্ত্র শিখে কি করবি?
লজ্জা পেলেও সেটা মুখাবয়বে প্রকাশ করলোনা প্রান্তি।ভাইয়ের থেকে দ্বিগুণ নির্লজ্জ বোন।এদের মুখে লাগাম বলতে কিচ্ছু নেই।প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য প্রান্তি বললো।
—আরেহ বুবুমনি তুমি কখন এলে?আরও এতো রাতে।সবাই এসেছে নাকি তুমি আর পুতুল?
—তোর ভাইয়া অফিসের কাজে রাতের গাড়িতে সিলেট গেছে।তাই ভাবলাম চলে আসি।আর পূর্ণ আর পুতুল-ও এসেছে।ড্রয়িংরুমে নানুদের সাথে গল্প করছে।
কথা শেষ করে হিমানীর দিকে তাকালো প্রজ্ঞা। কোমল গলায় শুধালো। —কেমন আছো হিমানী?হিমানী উত্তর দেওয়ার আগে ফের বললো — তোমাকে তো এখন আমার হিমানী বলে ডাকা উচিত নয়।যতোই হোক ছোট চাচার বউ তুমি।
লজ্জাময় সৌজন্যে হাসলো হিমানী।প্রজ্ঞার আলাপের উত্তর দিয়ে স্বভাবসুলভ শান্ত কন্ঠে বললো — আপনি আমার বয়সের অনেক বড়ো।যতোই আপনার ছোটো চাচার বউ হই না কেনো?আপনি আমাকে হিমানী বলেই ডাকবেন।আপনার ছোটো চাচা সম্পর্কিত সম্বোধনে ডাকলে আমারই লজ্জা লাগবে।আর বয়সে তিনিও তো আপনার ছোটো।সুতরাং আপনি অনায়াসে আমাকে হিমানী বলে ডাকতে পারেন।
তিনজনের কথার একপর্যায়ে হিমানীর ডাক পড়তেই হিমানী উঠে চলে গেলো।হাবিব আর হিমানীর সম্পর্ক বদ্ধ চার দেয়ালের ঠিক মধ্যে কেমন চলছে এটা কারও জানা নেই।তবে তাদের মধ্যে সম্পর্ক যে সহজ হয়ে এসেছে।এটা সবাই তাদের কথাবার্তায় আর চাল-চলনে বুঝতে পারে।
.
হিমানী চলে যেতেই ধপাৎ করে প্রজ্ঞার কোলের মধ্যে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো প্রান্তি।প্রজ্ঞা সেটা দেখে স্নেহের হাত রাখলো প্রান্তির মাথায়।ফের মজার ছলে বললো।
—বিবাহিত লাইফ।আদর ভালোবাসা খাবি বরের।তা না এখনও তাের বুবুমনির, বড়আম্মার নতুনআম্মার আদর ভালোবাসা চাই।তাদের আদর ভালোবাসায় জড়িয়ে আছিস।এটা কোনো কথা হলো?
কথার লজ্জায় কোমর জড়িয়ে ধরে প্রজ্ঞার পেটে মুখ লুকালো প্রান্তি।ফের নিভুনিভু গলায় বললো—তুমি- ও কিন্তু তোমার ভাইয়ের মতো খারাপ হয়ে যাচ্ছ বুবুমনি। কিসব বলে চলেছো।
—কেনো? আমার ভাই তোর অপছন্দনীয় মানুষ ছিলো এটা জানতাম কিন্তু তাকে খারাপ বলতে তো কখনো শুনিনি তোর মুখে।তবে কি খারাপ খারাপ কিছু করেছে আমার ভাইটা তার বাচ্চা বউয়ের সাথে?নাহলে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ কেনো?নাকি হিমানী কাছে জিজ্ঞেস করা,স্ত্রী জাতিদের স্পেশাল স্পেশাল বশীকরণ মন্ত্র জানার ইচ্ছেটা আমার ভাইয়ের সেই খারাপ কথাটা?ব্যাপার-তো ঠিক সুবিধার ঠেকছে না?ব্যাপার স্যাপার কি ভাইয়ের বউ?
—বুবুমনি…
প্রান্তির লজ্জায় নিভু নিভু গলার আওয়াজে শব্দ করে হেসে ফেললো প্রজ্ঞা।প্রান্তিও হাসলো। তবে সেই হাসি নজরে পড়লোনা প্রজ্ঞার।তবে কথা বন্ধ করলো না সে।বললো —বশীকরণ মন্ত্র শেখা লাগবেনারে পাগলী।শুধু বরের ঘরটা দখলে নে,দেখবি ঘরের মালিকসহ ঘরের সবকিছু তোর বশীভূত হয়ে গেছে।
প্রান্তি কথা বললো না।নাহলে যতো কথা বাড়বে ততো বুবুমনি তাকে ক্ষেপাবে।আর নিজের ইচ্ছেতে ওই ঘরের দখল।তার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়।যদিও ওই ঘরটা তাকে এখন চম্বুকের মতো আকর্ষণ করে।খুব টানে….
.
গরমে অতিষ্ঠ মানুষের জীবন।তারউপর হঠাৎই ফ্যানটা শব্দ করেই বন্ধ হয়ে গেলো প্রান্তির রুমের।ঘুমের জ্বালায় চোখ জুড়িয়ে আসছে তার।সন্ধ্যারাতে ঘুমাতে পারিনি।বুবুমনির সাথে গল্প করতে করতে কখন যে গভীর রাত হয়ে গিয়েছিল খেয়ালই হয়নি ।কোনোমতে ঘন্টা খানেক ঘুমিয়ে আবার সাহরি খেতে উঠেছে।ফজরের নামাজ পড়ে শুতে গিয়ে ফ্যানটা ছাড়তেই কিছুক্ষণ চলে জোরে একটা খট করেই শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেলো।ব্যাস… শান্তির জীবন ওষ্ঠাগত!
—কি হয়েছে,ওরকম মুখ করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
প্রজ্ঞার কথায় মুখ অসহায় করে বললো–ফ্যানে মনেহয় কোনো সমস্যা হয়েছে।চলছে-না আর।বারবার সুইচ অন-অফ করে দেখেছি ঘুরছে না।এতো গরমে ঘুমাবো কিকরে?ঘুমে আমার চোখ ধরে আসছে বুবুমনি ।
—তাতে সমস্যা কোথায়?ভাইয়ের ঘরে চলে যা।
চোখে ডুবুডুবু ঘুম।কথাটা ঠিকঠাক বুঝতে না পারলেও প্রান্তি উল্টো প্রশ্ন করে বসলো।—তুমি ঘুমাবে কোথায়?
—আমি নাহয় আপতত দাদিআম্মার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বো।পুতুল ওর নানুআপার কাছে শুয়ে পড়ছে।আমি একা দাদিআম্মার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লে খুব একটা অসুবিধা হবেনা উনার।
—তবে আমি কোথায় ঘুমাবো?
আশ্চর্য হলো প্রজ্ঞা।ফের আশ্চর্য কন্ঠেই বললো-তোকে না বললাম ভাইয়ের ঘরে গিয়ে শুতে।
—ওহ।
ওহ শব্দটা উচ্চারণ করেই চোখ বড়বড় করে ফেললো প্রান্তি।তার আগেই কেটে পড়ল প্রজ্ঞা।বাড়ির পুরুষেরা সবাই ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেছে।বাড়ির মহিলারা সবাই নামাজ পড়ে শুয়েছে।প্রহানের রুমে গিয়ে শোয়া ছাড়া মেয়েটার আর কোনো উপায় নেই।আর যদি প্রজ্ঞা এখানে দাঁড়িয়ে থাকে তবে উপায়টা তাকেই বের করে দিতে হবে।মেয়েটার আর তার ভাইয়ের জন্য আপতত এরথেকে ভালো উপায় প্রজ্ঞার জানা নেই।তাই কেটে পড়েছে সে।
নিঃশ্বাস আঁটকে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তি। বুবুমনি এটা কি সমাধান দিয়ে গেলো।যে মানুষটা বলতে এখন সে অর্ধ পাগল হয়ে গেছে তার ঘরে থাকার সমাধা দিয়ে গেলো তাকে!যদিও তার ইদানীং খুব লোভ হয় মানুষটার সংস্পর্শ পেতে, আশেপাশে থাকতে।তবুও লাজলজ্জা বলে তো একটা কথা আছে।সেসব বিসর্জন দিয়ে কখনো ওই মানুষটার কাছে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।মনেমনে কথাগুলো আওড়ে ফের মৃদুস্বরে মুখে আওড়ালো।
—যে মানুষটা আশেপাশে থাকলে যার শরীরের সুগন্ধে নিজেকে স্থির রাখা যায়না।পাগল পাগল মনেহয়।তার কাছে,তার বেডে গিয়ে ঘুমাবে কিকরে সে?যদিও মানুষটার উপর অধিকার আছে তার।
চলবে…
আমি প্রচন্ড অসুস্থ। তারউপরে অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছি।মায়েরা কেমন হয় সেটাতো সবার জানা।আবার বাড়িতে মেহমানে ভরপুর।কাজিন মহল তো আছেই।আজ প্রায় একসপ্তাহ যাবৎ সেভাবে ফোনটা ধরারও সময় পাচ্ছিনা।বিধায় কি একটা অবস্থা কি বলবো।যাই হোক দেরী করার জন্য ক্ষমা করবেন।
আর সত্যি বলতে এতো ঝামেলার পরও লেখার ট্রায় করি।অথচ আপনারা গল্প পড়ে কেমন হয়েছে উৎসাহ জানান না।বিশ্বাস করেন আমারও লিখতে ইচ্ছে করে না।লেখার আগ্রহ জাগে পাঠক পাঠিকার দুকলম উৎসাহ মুলুক কমেন্ট। অথচ…..যাই হোক ভুল কিছু বললে মাফ করবেন।