#রাঙিয়ে_দাও
#পর্ব_১৬
#লেখনীতে_শারমীন_ইসলাম
ভরা দিঘীর গভীর জলের মতো হিমানির ঘনপল্লবময় আঁখিদ্বয় টলমলে নোনাজলে ভরপুর।শ্যামবর্ণের মেয়েটির মায়াময় চোখজোড়া বড়োই আকর্ষণীয়।হৃদয় ছলকানো।তবে সেই হৃদয় পিছলানো নজরজোড়ায় হাবিবের নজর অবরুদ্ধ হয়ে থাকলে-ও আকর্ষিত হলো-না হাবিব।তবে মেয়েটার ব্যথিত ভারাক্রান্ত নজর আর হৃদয়বিদারক কথাগুলো তাকে বেশ ব্যথিত করলো।বুকের কোথা-ও একটা জেনো কথাগুলো গিয়ে সুচালো তীরের মতো বিঁধলো।খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কাটা ফোটানোর মতো ব্যথার অনুভবও অনুভাবিত করালো।
বয়সের তফাৎ থাকা সত্ত্বেও নাবার সাথে সম্পর্কটা তার গড়েছিলো।সম্পর্কের শুরু নাবার দিক থেকে থাকলে-ও
নাবার প্রতি আকর্ষিত হয়ে তার দেওয়া ভালোবাসার প্রপোজাল সে-ও সদরে গ্রহন করেছিলো।তবে ছন্নছাড়া জীবনে বন্ধুবান্ধব আর ঘুরেফিরে বেগড়ানোই জেনো সেই সম্পর্কের থেকে আর-ও আকর্ষিত আর গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।বিধায় নাবার সাথে ভালোবাসাময় সম্পর্কটাতে বিশেষভ গুরুত্ব ছিলো না।আলগোছ সম্পর্ক যারে বলে।চলছে চলুক এরকম টাইপের।বিধায় বিভিন্ন প্রতিঘাতে তাদের সম্পর্কটা ছিন্ন হয়ে গেছে।সত্যি বলতে সেই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পিছনে পুরো দ্বায়বোধটা তারই।নিজের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার জন্য আজ সম্পর্কটা ছিন্ন।সেটা সে মানে,যে সম্পর্কটাতে বেখেয়ালি না-হয়ে পুরো খেয়ালি হয়ে দ্বায়িত্ববান পুরুষের মতো গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিলো।তবে সে দেয়নি,দিতে পারেনি।হয়তো সেই আফসোস এখনো তাকে আওড়ে যেতে হচ্ছে ।ওই নিস্পাপ মেয়েটার ভালোবাসা উপেক্ষা করার জন্য তার অভিশপ্ত দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে।তবে মেয়েটার মুখের একটা কথার জন্য পড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজন পরিবারের সবার এতো চাপ,কথা সহ্য করেও সে নিজের জীবনে অন্য কাওকে জড়ায়নি।মূলত আর কারও সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায়নি সে।যদি না তার অভিশপ্ত জীববের সাথে সেই অন্যকেউ জড়িয়ে গিয়ে সুখি না।নাবার কথা মতো,–হাবিব তুমি জীবনে কখনোই সুখি হবে না।শান্তিতে থাকতে পারবে না।আর যদি কখনো বিয়ে করো সেই মেয়েটাও কখনো তোমার মতো মানুষের কাছে, সাথে ভালো থাকবে না।ভালো কখনোই রাখতে পারবেনা তুমি তাকে।তুমি সেই মেয়েটার জীবনের সুখ শান্তির অভিশাপ হবে।যেমনটা আমার জীবনে ছিলে।
সেদিন রাগান্বিত হয়ে নাবা কথাগুলো বললেও সেই কথার ভয়ে আজ-ও ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত সে কাওকেই নিজের জীবনে জড়াইনি।বারংবার জড়াতে ভয় পেয়েছে।পরিবারেরসহ নিজের পরিচিত অপরিচিত সবার কাছে ছন্নছাড়া উপাধি পেয়েছে।আরও ভালো- মন্দ নানাকথা।তবু-ও নাবার কথা অনুযায়ী নিজেকে অভিশপ্ত ভেবে সেই অভিশপ্ত জীবনে আর অন্যকাওকে জড়াইনি।জড়িয়ে নাবার মতো সেই নারীর জীবনটাকে অভিশপ্ত করতে চায়নি।কিন্তু না চাইতেও আরেক মায়াবতী নারীর জীবন অভিশপ্ত করে ফেলেছে সে…..
ভাবনা ছেড়ে মায়ামায়া চোখে নিস্প্রভ হয়ে তাকিয়ে থাকা মেয়েটার দিকে কয়েক পা এগোলো হাবিব।ফের বললো –তুমি জেনেশুনে ছন্নছাড়া এক মানুষের জীবনে জড়িয়েছো।সাথে বলতে পারো ভুল মানুষের জীবনে জড়িয়ে গেছো।সেখানে সত্য হোক মিথ্যা ভালোবাসা পাওয়াটা কিছুটা মরিচীকার পিছনে ছুটে চলা।আর আমি হাবিব সম্পর্কে সিরিয়াস হতে না পারলেও,মিথ্যা অভিনয় করতে পারি না বলতে।এটা হয়তো কিছুটা হলেও আমার সম্পর্কে তোমার জানা।
কারও মুখের উপরে কখনো কথা বলতে পারিনি হিমানি বলতে গেলে ভালো হোক বা মন্দ বড়দের কথার জবাব দেওয়াটা বেয়াদবি ভেবেছে বরাবর।বেয়াদবী না ভাবলে ও সত্যি বলতে কেউ কিছু বললে জবাব সরূপ কথা কখনোই তার গলা দিয়ে বের হতে চায়নি।যার কারনেই আজ তার এই অবস্থা।নিজের বাড়িতেও তাকে কাজের মেয়ের মতো থাকতে হয়েছে।তবে আজ কেনো জানি নিশ্চুপ হয়ে থাকতে পারলো-না হিমানি।কোনো কারনে সামনে দাড়িয়ে থাকা পুরুষটার উপরে তার স্ত্রী হওয়ার হক ফলাতে ইচ্ছে করল।তাই হাবীবের কথাগুলো শুনে খুব শান্তস্বরে সে বললো।
—পবিত্র রমজান মাস চলছে।অন্যন্য মাসের তুলনায় বেশ ফজিলতপূর্ন মাস,দোয়া কবুলের মাস।আর স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দোয়া সবসময়ের জন্য বেশ কার্যকরী হয়।আপনি মন থেকে প্রত্যেকটা নামাজের শেষে প্রার্থনা করুন।এই অভিশপ্ত অভাগী জেনো আপনার জীবন থেকে ধুয়েমুছে অভিশপ্তমুক্ত হয়ে যায়। সবার জীবনের অভিশপ্ত আমিটা জেনো মরে যায়।
কথাগুলো বলে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো হিমানী।জীবনটা আর ভালো লাগছেনা তার।এ কেমন অভিশপ্ত জীবন।সে যার জীবনে পদার্পণ করে শুধু দুঃখ হয়েই গড়ায়।কেনো একটু সুখ তার কপালে লিখন হলোনা।আশ্চর্য হয়ে হিমানীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো হাবিব।তার কথার প্রেক্ষিতে মেয়েটা এমন ধারার কথা বলবে এটা সে কখনো ভাবিনি।যদিও হিমানীর জীবনযাপন সম্পর্কে তার জানা।হাবিবকে আরও আশ্চর্য করে দিয়ে ফের হিমানী বললো।
—আত্মহত্যা মহাপাপ না হলে আমি কবেই মরে যেতাম।এই অভিশাপ কাওকেই বইতে দিতাম না তবে এজীবনের এই দুঃখ কষ্ট তাই এতো অসহ্য হয়ে উঠেছে পরকালে এরথেকে শতগুণ সহ্য করবো কিকরে?তাই নিজেকে শান্ত করে রেখেছি,পারছিনা নিজের জীবনটা নিজের হাতে হরন করতে।তবে এই অভিশপ্ত জীবন আর বয়ে বেড়াতে ইচ্ছে করছেনা।ভালো লাগছে না এজীবন আর।তাই নিজেতো পারছি-না মুক্ত হতে, আপনজন হয়ে আপনি দোয়া করুন।এই অভাগী জেন মরে…
—হেমা!
থেমে গেলো হিমানী।সামনের মানুষটার জোর গলার ধমকে থেমে গেলো তার বলতি।কেঁপে উঠল সমস্ত নারী শরীর।আগের তুলনায় ফুপিয়ে কান্নার জোর-ও বাড়লো তার।বলার সীমাবদ্ধতা পার হয়ে গিয়েছে তার, এটা সে বলার মধ্যে বুঝতে পেরেছে।তবুও কেনো জানিনা আজ নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারছিলো-না বিধায় কথার সীমাবদ্ধ সে পার করে ফেলেছে।কপাল কুঁচকে রাগান্বিত নজরে হিমানীর দিকে তাকিয়ে আছে হাবিব।মেয়েটা বরাবরই শান্ত।সেই মেয়েটার মুখ দিয়ে এসব কথা বের হবে।এটা সে কল্পনাও করেনি। বলতে বলতে মেয়েটা কিসব আবোল তাবোল বকে চলেছে। হুঁশ নেই কি মেয়েটার।আশ্চর্য!
ধমকে হিমানীকে আরও কিছু বলতে যাবে হাবিব।তার আগেই মেয়েটা তাকে অবাক করে গিয়ে আরও এক পাগলামি করে বসলো।কান্নারত অবস্থায় দৌড়ে এসে হাবিবকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো।শক্তহাতে খামচে ধরলো তার পিঠের সাদা পাঞ্জাবিটার অংশবিশেষ।নারী স্পর্শ পেয়ে সমস্ত শরীর শিহরিত হলেও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো হাবিব।ভুলেও নিজের সাথে জড়ালো না হিমানিকে।দরজার সামনে থেকে কয়েকটা মানুষ সেটা দেখে নজর নামিয়ে চলে গেলো।হাবিবের গলার ধমক শুনে কি হয়েছে?জানতে এসেছিলো।কিন্তু দুজনকে ওই অবস্থায় দেখে আর এগোলোনা।কিছু ব্যাপার স্বামী স্ত্রী নিজেদেরকে বুঝে নিতে হয়।বিষয়টা সেরকমই ভেবে উনার দাড়ালেন না।
—আমি যার জীবনে পদার্পণ করি সেই জীবনটা কেনো দুঃখ হয়ে ধরা দেয়।কেনো একটু সুখ আমার কপালে হলো-না?কেনো আমাকে কেউ ভালোবাসতে চায়-না? সুখ আমার জন্য নয় কেনো?কেনো বলুন না?মা কেনো ভালো না বেসে সেই ছোট্টোটি রেখে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো?বাবা কেনো ভালোবেসে আমাকে একটু-ও বুঝলো-না?বুঝতে চাইলোও না।আপনিও কেনো….
অনবরত হিচকি উঠার কথা শেষ করতে পারলো-না হিমানি।শুধু হিচকি তুলে ফুপিয়ে কেঁদে চলছে।শরীর না চাইলে-ও হাবিবের মন চাইলো-না মেয়েটাকে দূরে সরাতে।মনটা কোথাও আবার একটু চাইলো মেয়েটা বুকে জড়াতে তবে কোনো কারনে সেটাও করলোনা। আগের ন্যায় স্থির হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
—আমি কেনো এতোটা পোড়াকপালি অভাগি হলাম? কেউ কেনো আমাকে ভালোবাসতে চায় না?কেনো চায় না বলুন না?
হিমানীর আকুলিত হয়ে বলা কথাগুলো হাবিবের পুরুষালি মনকে নাড়িয়ে দিলো।নিজের মুঠোবন্দি করে রাখা ডান হাতটা উঠিয়ে হিমানির মাথায় রাখলো।ফের সৌহার্দপূর্ণ গলায় বললো।
—আমি-তো বললাম আমি তোমার দায়িত্বে কখনোই অবহেলা করবো না।আমাকে একটু সময় দাও।
—আমার কারও দায়িত্ব চাইনা।সবাই শুধু দায়িত্ব পালনের খাতিরে আমাকে বাধ্য হয়ে তাদের জীবনে রেখেছে।আমি আর কার-ও দায়িত্ব হতে চাইনা।আমার৷ শুধু একটুখানি ভালোবাসা চাই।আর কিচ্ছু চাই না।এই যে আমি আপনাকে বেহায়ার মতো জড়িয়ে ধরেছি।আপনি বাধ্য হয়ে আমাকে সরাতে পারছেন না।বিশ্বাস করুন এই বাধ্য হয়ে লোক দেখানো ভালোবাসা হলে-ও আমার চলবে।শুধু এটুকু চাই আমার।আমার নিজের স্ত্রীর অধিকার-ও চাই-না আপনার কাছ থেকে।আর না কোনো বিলাসিতা চাই।
—কেনো জেনেশুনে আমার অভিশপ্ত জীবনে জড়ালে হিমানী?তুমি-তো কিছুটা হলেও নাবার বিষয়ে জানতে?তবুও কেনো নিজের কষ্টটা বাড়ালে?
কথাগুলো গলা পর্যন্ত এসেও আঁটকে গেল।বলতে চেয়ে বলতে পারলো না হাবিব।এই দুঃখী মেয়েটাকে নিজের পুরানো ভালোবাসার কথা মনে করিয়ে আরও দুঃখ দিতে চাইলো-না।তবে মেয়েটা যখন জেনেশুনে তার জীবনে জড়িয়েছে।সে-ও না-হয় একটু জড়ালো।দেখা যাক ভাগ্য কি হয়?
.
প্রহানের রুমের আরামদায়ক বিছানায় বসে পা দুলিয়ে চলেছে প্রান্তি।ড্রয়িংরুমে বসে ছিলো সে।মানুষটা বাহির থেকে এসে তাকে ড্রয়িংরুমে দেখে নিজের রুমে আসতে বলে উপরে চলে এল।কেনো ডেকেছে?প্রান্তির হয়তো জানা।তাই বাধ্য মেয়ের মতো সেও চলে এসেছে।রুমে এসে দেখলো,রুম ফাঁকা।মানুষটা কোথায় বুঝতে অসুবিধা হলোনা।তাই নিজের পছন্দের কাজে মনোবেশিত করে অপেক্ষা করে চলেছে।হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজার শব্দে নজর সেদিকে চলে গেলো প্রান্তির।সঙ্গে সঙ্গেই নজর নামিয়ে নিলো।ইদানীং তো মানুষটার প্রেমে নির্লজ্জ হয়ে গেছে এখন ওই উন্মুক্ত শরীরের মানুষটার দিকে তাকালে নিশ্চিত সে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসবে।কিছু করে না বসলেও নির্লজ্জ মুখ কিছু বলে বসবে।তার থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখাই ভালো।যদিও মন নিয়ন্ত্রণে থাকতেই চায়না।তবে তার মস্তিষ্ক-ও কম নাকি।বকে ধমকিয়ে নিয়ন্ত্রণে কি করে রাখতে হয় এটাও তার জানা আছে।
—কি বলছি কানে ঢুকছে না তোর?
নিজের ভাবনায় এতো মশগুল ছিলো সামনের মানুষটা কি বলছে খেয়াল হয়নি প্রান্তির।আর ফাজিল লোকটা বকে ছাড়া কথা বলতে পারে-না।বউ,একটু ভালোবেসে কথা বলতেও তো পারে।একটু আদর ভালোবেসে কথা বললে কি যে হয়?আল্লাহ জানে।
—কি বলেছেন আমি শুনিনি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল প্রহান।শান্ত নজরে কিছুসময় প্রান্তিকে পর্যবেক্ষণ করে ফের বললো।–তুই ব্যাচে যাওয়া কেনো ছেড়ে দিয়েছিস?যাচ্ছিস না কেনো?
প্রান্তির জানা কথা।এই কথাটা জানতেই যে মানুষটার আহ্বান সেটা কি আর জানতো না প্রান্তি।নাহলে কি আর মানুষটা সহজে তাকে ডাকে।আর না তারদিকে ফিরে তাকায়।শুরু মাঝে-মাঝে একটু করে মেয়ে জ্বীনে কাঁধে চাপে তখন তাকে একটু একটু ভালোবাসে।
—সবাই বলে আমার বর লেকচারার।আমি কেনো অন্য টিচারের কাছে পড়বো?সবার কথা আমার আর শুনতে ভালো লাগে-না।তাই ব্যাচে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।আর বর যখন আমার টিচার সেই-ই না-হয় আমাকে পড়াবে।না হলে তো সবাই মধ্যে কনফিউশান তৈরী হবে আসলে সে ভালো টিচার কি-না?আর কোনো স্ত্রী কি চায় তার বরের বিরুদ্ধে বাহিরের মানুষের কনফিউশান তৈরী হোক?আমি তো ভাই ভালো বউ,আমি তো চাইনা।
সামন্য একটা কথায় কতোখানি কথা জড়িয়ে প্যাচিয়ে শোনালো।তবে প্রান্তির দ্বারা এটা সম্ভব বিধায় মাথা ঘামালো না প্রহান।সেও নিজের কাজে মনোবেশিত হয়ে বললো–তা বরের ভালো বউ।বরের প্রতি এতো খেয়াল তো আগে ছিলো না।ব্যাপার কি?
—ব্যাপার হলো, সে আগে আমার বর ছিলো-না তাই।
প্রহানের মুখে মৃদু হাসি ফুটলো।তবে সেটা খুবই ক্ষীন ।প্রান্তিকে বুঝতে দিলনা।শরীরে টিশার্টা জড়িয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ফের বললো।
—-তা আপনি জানেন না আপনার বর কীরূপ কড়া টিচার।তবু-ও তার কাছে পড়ার জন্য মানুষের সামান্য কথায় রাজি হয়ে গেলেন।
—আমি মানুষের কথায় রাজি হয়-নি।নিজ ইচ্ছেতেই রাজি হয়েছি।প্রত্যেক মাসে কত-গুলো করে টাকা দিতে হয় ব্যাচে।সেটারই সুব্যবস্থা।
কেমন সুব্যবস্থা প্রহানের জানা আছে।বিগত সতেরো বছরের মধ্যে একদিনও যাকে হাজার বলেকয়ে-ও তার কাছে কেউ পড়াতে বসাতে পারলো-না।সে নিজেই শোনাচ্ছে সেই বানী।এটা কখনোই বিশ্বাস যোগ্য নয়। তবুও বউটার যখন সুমতি হয়েছে সে-ও নাহয় একটু আদর ভালোবাসে বউটাকে পড়ালো।যেটা তার বউটা চাইছে।পাখি নিজেই ধরা দিতে চাইছে সেখানে উড়িয়ে দিয়েও তো কাজ নেই।তবুও মজার ছলে প্রহান বললো।
—কেনো তোর মামাদের টাকার পয়সার অভাব পড়েছে নাকি?যে তাদের টাকা বাঁচাতে চাইছিস।তবে তোর কথামতো তোর মামাদের টাকার অভাব পড়লেও তোর বরের এখনো টাকার অভাব পড়েনি।তার কাছ থেকে নিয়েও তো ব্যাচে পড়া যেতো।
ঘাড় ঘুরিয়ে কপাল কুঁচকে প্রহানের দিকে তাকালো প্রান্তি।আইছেন আমার টাকাওয়ালা।আরেহ তার মামাদের অভাব হবে কেন?সে যে কারনে ব্যাচে পড়তে চাইছে না,সেটাতো মানুষটাকে খোলাখুলি বলতে পারছেনা।তবে মানুষটা যে তার কথার ছল বুঝতে পারিনি।এমনটা অবুঝও মানুষটাকে সে কখনোই ভাবে না।এমনটা অবুঝ মানুষটা কখনো নয়ও।শুধু শুধু তাকে পচানো আর তার পেট থেকে কথা বের করার ছল।
—আপনি পড়াবেন কি-না সেটা বলুন?আপনি না বললে আমি জোর করছিনা।
হাত দিয়ে মাথার ভেজা চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করছিলো প্রহান।প্রান্তির কথা শুনতেই হাত থেমে গেলো।আয়নার মধ্যে সরাসরি প্রান্তির হরিণী নজরে নজর রাখলো।ফের পিছে মুড়লো সে।ধীর কদমে পা চালালো প্রিয় নারীর সংস্পর্শে।প্রান্তির নজরও অবিচল।সদ্য গোসল করে আসা মানুষটাকে এতো সুন্দর আর স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।নজর আঁটকে পড়াছে।এতোসময় যে নজর শত চেষ্টার ফলে নিয়ন্ত্রণ রেখেছিলো সেই বেহায়া নজর আর সংযাত রাখা গেল না।অবিচল নজর আঁটকে গেলো,সদ্য গোসল করে আসা মানুষটার হলুদ হলুদ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ লম্বাটে মুখে।লাল রঙা পুরো ঠোঁটে।সেই অবিচল নজরে নজর রেখে মোহনীয় গলায় প্রহান বললো।
—অধিকার থাকতে একচুলও অধিকার ও ছড়তে নেই।বিশেষ করে স্বামী জাতির উপর স্ত্রীর অধিকার।সেখানে স্বামীর উপর স্ত্রীর জোর করা চলে,বাধ্যতা স্বীকার চলে এমনকি দোষ না করা সত্ত্বে-ও স্বামীকে স্ত্রী’র কাছে নত হওয়া ও চলে।সেখানে আমিতো সেই কবেই নত স্বীকার করে বসে আছি।
প্রান্তির অবিচল নজরের পানে আরও একটু ঝুকলো প্রহান।ফের নিষ্পলক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে টুপকরে প্রান্তির নাকের উপর চুমো বসালো।মূহুর্তেই প্রান্তির হরিণী নজরজোড়া অবরুদ্ধ হয়ে গেলো।সেই বন্ধ নজর জোড়ার দিকে শান্ত নজরে তাকিয়ে বেশ নমনীয় গলায় প্রহান বললো।
—সেখানে আমার বউটা জোর করলেও সেই বউ নামক রমনীতে বাধ্য আমি।আর জোর না করলেও বাধ্য আমি।
চলবে….
বার্তা___একজন লেখিকার ও ফ্যামিলি থাকে।তারও মা বাবা ভাই বোন আছে।প্রয়োজনে সবাইকে সময় দিয়ে তারপর তাকে লেখার সময়টুকু বের করতে হয়।তেমন আমিও শুধু একজন লেখিকা নই।আমারও ফ্যামিলি আছে।মা বাবা ভাই বোন সবই আছে।সবাইকে সময় দিয়ে তারপর আমার লেখার সময়টুকু বের করতে হয়।সেখানে আরও আমি ফ্যামিলির থেকে দূরে থাকি।সাথে নিজের পড়োশানাও আছে।তাতে আবার রোজার মাস চলছে আপনারা সবাই জানেন।আরও শেষের দশটা রোজায় পাঁচটা কদরের রাত থাকে।লিখার জন্যও সময় প্রয়োজন।যেন-তেন লিখলে তো আর হয়ে যায়না।
আপনারা গল্পের জন্য অপেক্ষা করেন এটা আমি জানি।আমিও ট্রায় করি জেনো আপনাদের অপেক্ষা করতে না হয়।তবে আপনারা গল্প পড়তে যে সময়টুকু ব্যয় করেন।তার তিনগুণের অধিক সময় লাগে লিখতে।
আপনারা এমনভাবে মেসেজ করেন জেনো লেখাটা আমার বাধ্যতামূলক।আমি একজন মুসলমান ঘরের মেয়ে রোজার মাস চলে যাচ্ছে অথচ নামাজ রোজার দিকে খেয়াল ধ্যান না দিয়ে আমি সারাদিন লেখায় মনোযোগ রাখি।রোজার মাস সেটা কি আদৌও সম্ভব? একটু তো বুঝতে চেষ্টা করবেন?
কি গরম তারউপর রোজা শেষের দিকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য আম্মু প্রেশার দিচ্ছে। বিশেষ করে আমি অসুস্থ এজন্য আরও বেশি।আজ দুদিন শপিংয়ে ক্লান্ত।অসুস্থ শরীর নিয়েও শপিং করছি।তার উপর কাল রাত দশটা -থেকে জার্নি শুরু করছি।বাড়িতে পৌঁছাতে আমার দুপুর বারোটা বাজবে….এরমধ্যেও আমি সময় পেলে একটু একটু করে লেখার ট্রায় করছি।
আমি এতো এক্সকিউজ দিতাম না বাট আপনারা যা মেসেজ করেন সত্যি বলতে হার্ট হই, ভালো লাগেনা।রোজার সময়। আরও রোজা শেষের দিকে এলে প্রতিটি মানুষের কতো ব্যস্ততা থাকে সেটাতো জানেনই।তবুও বুঝতে চেষ্টা করেন না এটাই খারাপ লাগে।
আমার কথাগুলো রূড হয়ে গেলে মাফ করবেন।সত্যি বলতে আমি কাওকে আঘাত করে কথাগুলো বলতে চাইনি।প্লিজ ঈদ পর্যন্ত আমার সাথে একটু সমোঝোতা করুন।